Sunday, November 2, 2008

বিদায় তোমাকে নামিনা!!

তোমাকে আমরা চাইনি। চাইনি বলেই আসার আগেই তোমার বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নাড়ী কেটে মায়ের গর্ভ থেকে বাদ দেয়ার বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছিলাম ডাক্তারের সাথে। আগমনের পুর্বেই তোমাকে কেটে বাদ দিয়েছিলাম মানব সমাজের তালিকা থেকেও। না, ভুল বললাম। তোমাকে তো মানব সমাজের অন্তর্ভুক্তই করিনি আমরা। তুমি কখনোই আমাদের কেউ ছিলে না। আমাদের সমাজে তোমার কোন অস্তিত্ব ছিলনা। তোমাকে দেখেছি কয়েক সেকেন্ড মাত্র, চোখের কয়েক পলক। তারপর তোমাকে দুহাতে নামিয়ে দিয়েছি দুই ফুট বাই আড়াই ফুটের বৃষ্টিভেজা কবরে। আমার দুচোখে সেই দুফোঁটা কী বৃষ্টির জল ছিল? নাকি গোপন অনুশোচনার? তুমি দেখোনি, তুমি তখন কালো ঝাকড়া চুলের আড়ালে মহাঘুমের রাজ্যে চলে গিয়েছিলে।

তোমার কথা আমরা খুব শীঘ্রই ভুলে যাবো। তোমার কোন স্মৃতি থাকবেনা আমাদের ঝুড়িতে। তুমি কখনো যাওনি মায়ের কোলে, তুমি জানোনা মায়ের কোলের উষ্ণতা কী? তুমি কখনো টুক টুক করে হেঁটে বেড়াওনি ঘরের আনাচে কানাচে। দরজার পেছনে গিয়ে ‘কুউক’ বলে লুকাওনি কখনো। গলা জড়িয়ে আধো আধো বোলে বলোনি কখনো,”তা তা মা মা পা পা...” তোমাকে এসব বলার কোনো সুযোগই তো দিতে পারিনি আমরা। তুমি এই পৃথিবীতে একটি শব্দও উচ্চারন না করে চলে গিয়েছো। তোমাকে আমরা মনে রাখবো কী দিয়ে?

তোমার কোন ছবিই তুলিনি আমরা। আমাদের মনেই হয়নি তোমার ছবি তোলার কোন প্রয়োজন থাকতে পারে। অথচ, হাতে হাতে সবার ক্যামেরা মোবাইল। বেঁচে থাকলে তুমিও হতে এমন একটার মালিক। কেউ একবার জিজ্ঞেসও করেনি তোমার চেহারা কার মতো হয়েছিল? এমনকি তোমাকে কী নামে ডাকা হবে তা নিয়েও কারো মাথাব্যাথা ছিলনা। তোমাকে আমাদের পরিবারের কোন অ্যালবামে দেখা যাবেনা।

তুমি চলে যাবার পর হাসি হাসি মুখ সবার। স্বস্তির নিঃশ্বাস সমস্ত বাড়ীতে। তোমার মতো আনন্দময় বিদায় কেউ কী পেয়েছে কখনো? এমন নিরংকুশ শান্তির বিদায় কেউ কী দিয়েছে এর আগে? তুমি চলে গিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছো তোমার মাকে, স্বস্তি দিয়েছো তোমার বাবাকে। আনন্দিত করেছো আমাদের সবাইকে। আমাদের ক্ষমা করো তুমি এই আনন্দের জন্য। করবে কি? তুমি কি জানো ক্ষমা কী?

ধন্যবাদ তোমাকে নামহীনা কিংবা নামিনা। তুমি চলে যাওয়াতে তোমার একমাত্র মামা বেঁচে গেলো আরো একটি নামের ডেটাবেজ ডাউনলোড করা থেকে।

[লেখাটি উৎসর্গ করা হলো পৃথিবীর আলোবাতাসের স্পর্শে আসার আগেই চলে যাওয়া আমার ছোট্ট মিস্টি সেই ভাগ্নীকে যার জন্য এখনো আমার চোখ ভিজে যায়। আমার বোনকে বাঁচাতে যাকে ত্যাগ করতে হয়েছিল আমাদের। নিজ হাতে কবরে নামিয়ে রাখার সময় যার নাম রেখেছি 'নামিনা']

1 comment:

Anonymous said...

পড়ে খুব কষ্ট লাগলো।