গ্রীনল্যান্ডের দুই এস্কিমো বালক কাকাতা ও পাপাতা। অভিযাত্রীদের গাইড হিসেবে কাজ করে। একবার এক অভিযাত্রী খুশী হয়ে দুজনকে দুটো ল্যাপটপ উপহার দিল। দুটোই তারহীন ইন্টারনেটে যুক্ত। অভিযাত্রী তাদেরকে শিখিয়ে দিল কীভাবে কম্পিউটার আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। ওরা যদিও কখনো স্কুলে যায়নি, কিন্তু টুরিষ্ট গাইড হিসেবে কাজ করার জন্য ইংরেজী বলা ও পড়া শিখেছে। তাই কম্পিউটার চালাতে তেমন কোন সমস্যা হলো না। এক ক্লিকে যখন স্ক্রীনটা বদলে যায় খুব মজা লাগে ওদের। তাই সারাক্ষন এটা সেটার উপর ক্লিক করে দুজন। বিশেষ করে ইন্টারনেট বাটনে ক্লিক করে বেশ মজা পায় কাকাতা ও পাপাতা। কত কিছু যে দেখা যায়!! অল্পদিনের মধ্যে তারা এই জিনিসের প্রেমে মশগুল হয়ে গেল। কয়েক সপ্তাহ পরে পাপাতাকে দুর অভিযানে যেতে হল। কাকাতা একা হয়ে গেল। বসে বসে কী করবে, সারাক্ষন গুগল দিয়ে এটা সেটা খুঁজে বেড়ায় আর পড়াশোনা করে নানান বিষয়ে।
কাকাতা একটু বোকা ধরনের। তবে খুব সাবধানী, অভিযাত্রী যা যা বলেছে তার বাইরে কিছুই করে না সে। নিয়মিত এন্টিভাইরাস আপডেট করে, স্ক্যান করে হার্ডডিস্ক, মুছে ফেলে অপ্রয়োজনীয় ফাইল। তার ল্যাপটপ দারুন সার্ভিস দিচ্ছে।
অন্যদিকে পাপাতা দুর্দান্ত চালাক। নতুন নতুন বিষয়ের প্রতি তার আগ্রহ। অভিযানকালেও সে কম্পিউটারে নিয়মিত বসে। ইন্টারনেটে সুন্দরী মেয়েদের দেখতে তার খুব ভালো লাগে। কিন্তু সব ভিনদেশী মেয়ে। তাদের গ্রামের মতো মেয়ে একটাও নেই। এই সব নিশ্চয়ই সেই অভিযাত্রীর গ্রামের মেয়ে, ভাবলো সে। খুব সুন্দর দেহ ওদের। যদি একবার যেতে পারতো ওখানে, ভাবলো সে। এগুলো নিয়ে মজা করতে করতে সে একসময় ভুলে গেল অভিযাত্রীর কিছু কিছু সাবধানবানী। একদিন রাতে বসে বসে সুন্দরীদের দেহ উপভোগ করছিল। হঠাৎ পর্দায় ভেসে আসলো এক সুন্দরীর কথা, “তুমি কি আমাকে নগ্ন দেখতে চাও? তাহলে ইয়েস বাটনে ক্লিক করো” পাপাতা রীতিমতো উত্তেজিত। বলে কী মেয়েটা। চাই মানে? এখুনি চাই। আরো দেখতে চাই তোমাকে। সে ক্লিক করলো ইয়েস বাটনে। অমনি এক সুন্দরী মেয়ের নগ্ন মুভি চালু হয়ে গেল। কয়েক মিনিট পর ভুশ করে পর্দাটা লাল হয়ে গেল। তারপর নীল। তারপর নিকষ কালো। দপ করে বন্ধ হয়ে গেল। তারপর চালু বাটনে চাপ দিল সে। দেখা গেল বারবার বলছে - “সিস্টেম এরর, ফাইল নট ফাউন্ড”। পাপাতা কিছুই বুঝলো না। মন খারাপ করে বসে রইলো।
কয়েকমাস পর বাড়ি ফেরার পর কাকাতাকে ব্যাপারটা খুলো বললো। কাকাতা বুঝলো, ভাইরাস। সে বললো পাপাতাকে। কিন্তু পাপাতা জানে ভাইরাস হলে জ্বর আসে, কাপুনি দেয়। এটার সেরকম কিছুই হয়নি, কথা নাই বার্তা নাই দুম করে বন্ধ হয়ে গেছে। আর তাছাড়া জ্বরজারি তো মানুষের হবে। যন্ত্রের আবার জ্বর হয় কেমনে। বোগাস কথা সব। কাকাতা যতই বোঝায়, পাপাতা অনড় তার কথায়। কাকাতা হাল ছেড়ে দিল।
কদিন পর পাপাতার সেই সুন্দরী মেয়েদের দেখার ইচ্ছে হলো। সে কাকাতাকে ম্যানেজ করতে গেল। কিন্তু কাকাতা রাজী হলো না। দুজনের তর্ক লেগে গেল। দুজনের সেই বাকযুদ্ধের কিছু অংশ নীচে দেয়া হলো।কাকাতা বলতে চাইল, যারা ইন্টারনেটের সিষ্টেম তৈরী করছে তারা বলেছে কিছু কিছু খারাপ ওয়েবসাইট মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে ভাইরাস ছড়ায়। ওইসব ওয়েবসাইটে না যাওয়াটাই উচিত।
পাপাতা বলল আমার ল্যাপটপটা খারাপ। অভিযাত্রী জেনেশুনে আমাকে খারাপ জিনিস দিল?
কাকাতাঃ আরে না, জিনিস তো দুইটা এক। কিন্তু বাজে ওয়েবসাইটে না গেলেই হলো।
পাপাতাঃ আমি তো তাবুর বাইরে কোথাও যাই নি।
কাকাতাঃ তা যাওনি, কিন্তু তুমি সুন্দরী মেয়েদের দেখতে চেয়েছো
পাপাতাঃ সেটা তো তাবুর ভেতরে থেকেই।
কাকাতাঃ হোক তাবুর ভেতর, কিন্তু ইন্টারনেট তো তাবুর বাইরে থেকে আসে।
পাপাতাঃ কেমনে?
কাকাতাঃ কী কেমনে? আরে ভোদাই নাকি। ইন্টারনেট তো বাইরে থেকে বাতাসে ভেসে আসে।
পাপাতাঃ আরে যা যা, আমারে শিখাস, না? বাতাসে কেমনে আসবে। তাবু বন্ধ ছিল সারাক্ষন। আমিও জেগে ছিলাম।
কাকাতাঃ তুমি বুঝতে পারছো না। তাবু বন্ধ রাখলে কী হবে। ইন্টারনেট কীভাবে আসে দেখা যায় না। সব ছবি, লেখা অদৃশ্য অবস্থায় ভেসে আসে।
পাপাতাঃ তুই বলছিস সেই মেয়েটা অদৃশ্য ভেসে এসেছে? এসে আমার কম্পিউটারে ঢুকে গেছে আর আমি জানলাম না। মেয়েটা কী পরী নাকি? বাজে বকছিস বড্ড।
কাকাতাঃ আরে কী মুশকিল। অভিযাত্রী কি কি বলেছিল ভুলে গেছ?
পাপাতাঃ যা যা, ওই বেটা আমাকে ঠকিয়েছে। খারাপ মাল গছিয়ে গেছে। এখন তার ওকালতি করতে হবে না।
কাকাতাঃ শোন তুমি ঠান্ডা মাথায় মনে করে দেখ। এখানে আমরা যা দেখি তার সবকিছুর নিয়ন্ত্রন অনেক দুরের দেশে। এরকম শত শত ওয়েবসাইট বাতাসে ভেসে আসে কোন তার ছাড়াই। কারন বিজ্ঞান ওখানে অনেক উন্নত। তারা সারা পৃথিবীর তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এইযে আমরা এক ক্লিকে ইন্টারনেটে এটা সেটা দেখি, এই সব তাদের অবদান। তারা এমনভাবে বানিয়েছে যাতে পৃথিবীর যে কোন জায়গায় বসে মানুষ যে কোন তথ্য জানতে পারে। তবে ইন্টারনেট যারা বানিয়েছে তারা কিছু নিয়ম কানুনও বলে দিয়েছে। সে নিয়মমাফিক চললে তোমার কম্পিউটারে কোন সমস্যা হতো না। তুমি নিয়মগুলো মানো নাই বলে ওটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি মেনেছি আমারটা সুন্দর চলছে।
পাপাতাঃ তোর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে সারাক্ষন কম্পিউটার দেখে দেখে। বাবাকে বলে তোকে সাগরে মাছ মারতে পাঠাতে হবে। এই যে আমি ক্লিক করে এটা সেটা দেখি এটা তো কম্পিউটারে ভেতরেই আছে। এটা বাইরে থেকে আসবে কেন। আসলে আমি দেখতাম না? ইন্টারনেটতো কম্পিউটারের ভেতরে দেয়া আছে। এখানে বাইরে থেকে আসবে কেন? গপপো মারার জায়গা পাসনা তাই না? মনে করেছিস বিদ্যার জাহাজ হয়ে গেছিস।
কাকাতাঃ আহা আমি তোমাকে ব্যাপারটা বোঝাতেই পারছি না। এটা হলো বিজ্ঞান…..
পাপাতাঃ হয়েছে তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। আমি কচি খোকা নই। তোর চেয়ে দুনিয়াদারী কম দেখিনি।
কাকাতাঃ কিন্তু ইন্টারনেট সিষ্টেম যে কেউ না কেউ তৈরী করেছে তা তো ঠিক।
পাপাতাঃ পাগল আবার কী বলে। এটা বানাবে কে আবার। এটা তো এমনিতেই আছে। অভিযাত্রী বলেছে না, যুগ যুগ আগে মানুষ ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছে।
কাকাতাঃ হ্যাঁ যারা আবিষ্কার করেছে তাদের কথাই বলছি। তারা যদি এটা এভাবে না বানাতো তাহলে কী আমরা এত সহজে সব কিছু দেখতে পেতাম?
পাপাতাঃ তা ঠিক বলেছিস। তাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিত এটাকে খুজে বের করেছে সেজন্য। তারও আগে যেমন খুজে বের করেছে সেই বড় দ্বীপটা, কিংবা চাদ, সুর্য, তারা, ইত্যাদি।
কাকাতাঃ তুমি গুলিয়ে ফেলছো আবার। এটা তো চাদ তারার মতো আবিষ্কার না। ইন্টারনেট তো মানুষই বানিয়েছে পৃথিবীতে।
পাপাতাঃ কোন মানুষ? অভিযাত্রীর গ্রামের মানুষ?
কাকাতাঃ আমি জানি না।
পাপাতাঃ এই তো হার স্বীকার করলি। তুই কিছুই জানিস না। কোন প্রমান নেই। ফট করে বলে বসলি মানুষ ইন্টারনেট বানিয়েছে। আরে বেকুব মানুষ যদি এত জ্ঞানী আর শক্তিশালী হতো আমাদের তো ঈশ্বরের প্রয়োজন হতো না। মানুষ মাছ মারতে পারে, জাহাজ তৈরী করতে পারে, ভল্লুকের সাথে যুদ্ধ করতে পারে, বন্দুক বানাতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেট? অসম্ভব। আসলে আমার মনে হয় ইন্টারনেট হলো ঈশ্বরের সৃষ্টি। আকাশ আর দুনিয়া সৃষ্টির সময় ইন্টারনেটও বানিয়েছিল। আমদের পূর্বপুরুষেরা এটা খুজে পায়নি, আমরা ভাগ্যবান আমরা খুজে পেয়েছি।
কাকাতাঃ (নিশ্চুপ, কনফিউজড, ভাবছে)
পাপাতাঃ তোকে তো কতবার বলেছি, বেশী বোঝার চেষ্টা করবি না। আমি যা বলি তাই করবি। চল সুন্দরীকে দেখি এখন।
No comments:
Post a Comment