Wednesday, November 19, 2008

রহিম গুন্ডার চোখ মারা

রহিম গুন্ডার কথা মনে পড়লো আজ। সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে রহিম আমাদের এলাকায় দাপুটে গুন্ডা। সবাই ভয় করে। শহরে তখন রংবাজ সিনেমার জোশ। রহিমের প্রানপন চেষ্টা রংবাজের রাজ্জাক হবার। রহিমের এক ছোট ভাই ছিল আমার ডাংগুলি বন্ধু। সে কারনে রহিমকে আমি তেমন ভয় পেতাম না। রহিমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল চোখ মারা। যে কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার বাম চোখটা দুবার ক্লিক করতো। মেয়ে দেখলে চোখ মারার ব্যাপারটা কেন করতে হয় আমি ঠিক বুঝতাম না। খালি ভাবতাম ওটা বড়দের কাজ এবং নিষিদ্ধ জিনিষ। নিষিদ্ধ হবার কারনে মাঝে মাঝে আমরা বন্ধুরা নিজেরা নিজেরা চোখ মারা প্র্যাকটিস করতাম।

রহিম সবচেয়ে বেশী চোখ মারতো রুমা আপাকে। রুমা আপার বাসা ছিল আমাদের ঠিক দোতলায়, উনি খুব সুন্দরী ছিলেন। রুমা আপারা আমাদের বিল্ডিংএর সবচেয়ে বড়লোক। আশেপাশের বিল্ডিংএর মধ্যে একমাত্র ওনাদের বাসায়ই টিভি ছিল যা দেখার জন্য আমরা পিচ্চিরা সব ভিড় করতাম। কলোনীতে তখন যে বাসায় টিভি আছে, বাইরের যে কারোর অলিখিত অধিকার ছিল সে বাসায় গিয়ে টিভি দেখার।

রুমা আপা আর রহিমের মধ্যে প্রেম-ট্রেম জাতীয় কিছু কিনা জানি না। কিন্তু উনি যতক্ষন বারান্দায় বসে থাকতেন রহিম নীচের ইলেকট্রিকের পোলে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। বামচোখ মেরে যাচ্ছে একটু পর পর। এটা আমাদের নিত্যদিনের দৃশ্য। মাঝে মাঝে চোখ মেরে বাঁ চোখটা বন্ধই করে রাখতো অনেকক্ষন। এরকম ম্যারাথন চোখ মারতে মারতে রহিমের বামচোখটা ছোট এবং কালশিটে হয়ে গিয়েছিল।

একদিন আমার কাজিন রানু আপা বেড়াতে এসেছে বাসায়। রুমা আপাদের কাছাকাছি বয়সী হবেন, এসএসসি দেবেন। সেদিন রানু আপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল আমার সাথে। রহিমের চোখের ফোকাস দোতলা থেকে নীচে নেমে আসলো। রানু আপার সাথে চোখাচোখি হবার সাথে সাথে ক্লিক করলো দুবার। রানু আপা প্রথমে ব্যাপারটা বুঝলো না। কিন্তু আবার তাকাতেই একই ঘটনা ঘটলো। রানু আপা ছুটে ভেতরে গিয়ে মাকে বললো ঘটনাটা।

বিকেলে বাবা অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথে মা জানালো রহিমের কান্ডের কথা। বাবা রাগী মানুষ। কাপড়চোপড় না বদলেই দৌড়ে বেরুলেন। আমি পিছু পিছু। রহিম তখন সামনের বিল্ডিংয়ের কোনায় দাঁড়িয়ে কী যেন করছিল। বাবা সোজা গিয়ে ঠাশ ঠাশ করে দুগালে দুটো রাম থাপ্পড় বসিয়ে বললো- “হারামজাদা!! তোর এত সাহস আমার বাসার দিকে নজর দেস?? আর যদি কোনদিন তোকে আমার বাসার সামনে দেখি তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো।”

রহিম পুরা হতভম্ব। এর আগে তাকে কেউ এভাবে মারে নাই। ভড়কে গেছে তাই। তাছাড়া আমরা চাটগাঁইয়া, লোকাল একটা ব্যাপারও ছিল বোধহয়। রহিম মাফ চেয়ে বললো, “ভুল হয়ে গেছে চাচা, মাফ কইরা দেন। আমি বুঝি নাই” ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর থেকে বাবা বাসায় থাকলে রহিমগুন্ডা আশেপাশেও ভিড়তো না। রুমা আপার সাথে টাংকিটা ছিল আরো অনেকদিন, কিন্তু সতর্কভাবে।

No comments: