Sunday, November 2, 2008

বিক্ষিপ্ত স্বগোতক্তি (দেশ ও মানুষ)

এরশাদের আমলে আমরা একটা শ্লোগান শিখেছিলাম, এক দফা, এক দাবি - এরশাদ তুই কবে যাবি। এটা ছিল এক লম্পট-বেহায়া স্বৈরাচারের প্রতি গনপদাঘাত। এই পদাঘাতের শব্দে সামরিক বেসামরিক সব বাহিনীর ব্যপক অংশে সমর্থনের ধ্বস নামে। পতিত হয় বেহায়া। আমরা বসাই শুভ্র বসনা খালেদা জিয়াকে, কিন্তু ২ বছর না যেতেই আবারো শোনা যায় - “একদফা এক দাবি……….যাবি”। ১৯৯৬-তে বসাই শেখ হাসিনাকে, কিন্তু আবারো “একদফা এক দাবি……….যাবি”। ২০০১-এ আরো শক্তিশালী খালেদা জিয়াকে বসাই মসনদে। যথারীতি বছর যেতে না যেতেই শুনি “একদফা এক দাবি……….যাবি”। দাবি পুরন হোক বা না হোক, যৌক্তিক হোক বা না হোক, আমরা গনতন্ত্র চর্চা অব্যাহত রেখেছি রাজপথে।

এখন জরুরী অবস্থা। তাই মুখে বলতে পারি না, কিন্তু মনে মনে বলি - “একদফা এক দাবি……….যাবি”। দেখা যাচ্ছে যেই ক্ষমতায় যাবে আমরা প্রথমে হানিমুনের স্বাদ নেবো, তারপর আবার “একদফা এক দাবি……….যাবি”। ঈদ, রোজা, পুজা, নববর্ষের সংস্কৃতির মতো এটাও আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। এরকম চলছে, চলবে।

আগামীতে একটা নির্বাচন হয়তো হবে। আবার কেউ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাবে। আমরা আবারো বলবো “একদফা এক দাবি……….যাবি”।

আমদের অনেকের বয়সের কাছাকাছি এদেশের স্বাধীনতার বয়স। কেউ স্বাধীনতার কিছু আগে জন্মেছি, কেউবা পরে। আমাদের কারো কারো জীবনের ২/৩ অংশ চলে গেছে, কারো কারো বেশী। কিন্তু বাকী জীবনেও হয়তো দেখবো না, বাংলাদেশ কখনো সুস্থ গনতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে। সবকিছু চলে যাচ্ছে নষ্টদের অধিকারে। এক নষ্ট যাবে অন্য নষ্ট আসবে। আমাদের বোঝানো হবে গনতন্ত্র অনেক দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। আমাদের ধৈর্য ধরতে শেখানো হবে। আমেরিকার লেগেছে ২০০ বছর, ফ্রান্সের ৩০০ কিংবা বৃটেনের ১০০০ বছর। আমরা শুনবো আর আমাদের ভবিষ্যত ১৪ পুরুষকে প্রস্তুত থাকতে বলে যাবো দীর্ঘ সহিষ্ণুতার জন্য।

তারপর কোনো এক শামসুর রাহমান অবশেষে লিখবে “তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে গনতন্ত্র…….”

সম্ভবতঃ আমরা সবসময়ই বলবো - যায় দিন ভালো, আর অতীতের সোনালি দিনগুলোর জন্য হাহাকার করবো । লক্ষন সেনের সময় কিংবা তারো আগে থেকেই করে আসছি।

No comments: