Tuesday, September 20, 2016

হাসান মোরশেদের অনুসন্ধানী উপাখ্যান মুক্তিযুদ্ধের 'দাস পার্টির খোঁজে'

১.
একটি বহুমূখী বিচিত্র অনুভূতি নিয়ে বইটি সমাপ্ত হলো। প্রচণ্ড ক্রোধ, গর্ব, আক্ষেপ, বিষাদের রাজত্ব সেই অনুভূতি জগতজুড়ে। হাসান মোরশেদের প্রত্যক্ষ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে লেখা মুক্তিযুদ্ধের এক পরিশ্রমী উপাখ্যান 'দাস পার্টির খোঁজে'। ছোট্ট একটা মুক্তিযোদ্ধা দল দাস পার্টি। শহীদ জগতজ্যোতি দাস যার নেতা। মাত্র একুশ বছর বয়সের অসমসাহসী এই বীর যোদ্ধা ৩৬ জনের গেরিলা দল নিয়ে হাজার পাকিস্তানী-রাজাকার বাহিনীর বুকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বৃহত্তর সিলেটের হাওড় অঞ্চলে। এবং রাজাকার ও পাকবাহিনীর সাথে এক অসম যুদ্ধে নির্মমভাবে প্রাণ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ বীরত্বের গৌরব বহন করে। যথারীতি বাংলাদেশ সেইসব অনন্য বীরত্বগাঁথা ভুলে এগিয়ে গেছে আরো সাড়ে চার দশক। বেঁচে থাকা গেরিলারা কে কোথায় হারিয়ে গেছে কেউ খোঁজ করে না। সেইসব 'নিখোঁজ' গেরিলার সন্ধানে ছড়িয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী এক তরুণের অনুসন্ধানী অভিযান, জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী এবং গেরিলাদের মর্মস্পর্শী সাক্ষাৎকার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে দাস পার্টির খোঁজে।

২.
জগতজ্যোতি দাস এবং দাস পার্টি বিষয়ে আরো কয়েকটি বই প্রকাশিত হলেও তাদের সাথে এই বইয়ের মৌলিক পার্থক্য হলো দেখার নৈকট্য এবং দূরত্বে। অন্য বইগুলো শুনে শুনে দূরে বসে লেখা হয়েছে। আর হাসান মোরশেদ দাস পার্টির যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে নিজের পায়ে হেঁটে, নৌকায় চড়ে অভিযানের বিবরণ সংগ্রহ করেছেন জ্যোতির সহযোদ্ধাদের মুখ থেকে, সেই বিবরণ ভিডিওবন্দী করেছেন, অক্ষরবন্দী করেছেন। একাত্তরে ক্ষতবিক্ষত হওয়া মানুষগুলোর প্রত্যক্ষ বিবরণ আমাদের থমকে দেয়, অশ্রুসজল করে, আমরা বিক্ষুব্ধ হই।

৩.
বইটি পড়ে আমাদের আরেকটি অভিজ্ঞান হয়। একাত্তরে যাদের বীরত্ব গাঁথা পড়ে আমরা আবেগে আপ্লুত হই, সেই মানুষগুলো এমনকি স্বগোত্রের কাছেও কতটা অনাদৃত অবহেলিত সেটা জেনে আমাদের মাথা নুইয়ে যায় মাটির দিকে। আমরা এক অকৃতজ্ঞ জাতি। হাসান মোর্শেদের সাথে আমাদের ঘুরতে হয় সদরপুর থেকে আজমিরীগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ থেকে মাকালকান্দি, মাকালকান্দি থেকে জলসুখা, জলসুখা থেকে দিরাই। আমরা হাওড় বাওড় নদী নালা কাদা পেরিয়ে একেকজন গেরিলাকে আবিষ্কার করি, একেকজন বীরাঙ্গনার সাক্ষাত পাই, আর থমকে দাঁড়াই। যে সাক্ষাতের সবগুলো বর্ননা আমাদের সুখী করে না, অনেক বর্ণনা আমাদের স্তব্ধ করে, মর্মাহত করে। আমরা আরো আবিষ্কার করি, একাত্তরের অনেক দালাল হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধ শক্তির ক্ষমতার অংশীদার। সময় পাল্টে গেলে রাজাকার হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের দল বলে বিবেচিত আওয়ামীলীগের নেতা। কোথাও কোথাও এখনো প্রবলভাবে বঞ্চিত নিপীড়ত হচ্ছেন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ যাঁর সব কেড়ে নিয়েছে, স্বাধীন দেশেও তিনি সর্বহারাই থেকে যান। জগতজ্যোতির মতো বীর যোদ্ধা নিজ গ্রামেই থেকে যায় প্রায় অপরিচিত।

৪.
আমরা হুজুগে জাতি। মাত্র চার দশকেই এদেশের অনেক সর্বত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার নাম আমরা ভুলতে বসেছি। ভুলতে বসেছি অমানুষিক জান্তব বর্বরতার মুখোমুখি হয়েও বুকের রক্ত দিতে দ্বিধা করেননি এদেশের একেবারে নির্বিবাদী সাধারণ মানুষটি পর্যন্ত। কোন রকম বিনিময় মূল্যের  আশা না করে অকাতরে ধন প্রাণ সব দিয়ে লাল সবুজ পতাকাটি আমাদের দিয়ে গেছে যারা, সেই মহান সর্বত্যাগী হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর নামটি যেন ইতিহাসে ঠাঁই পায় সেই চেষ্টাটা আমাদের উপর অর্পিত একটি দায়িত্ব। 'দাস পার্টির খোঁজে' মাঠে নেমে হাসান মোরশেদ সেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করেছেন।

৫.
জগতজ্যোতি দাস নেই, কিন্তু তাঁর সহযাত্রীদের মধ্যে ইলিয়াসের মতো অনেকে এখনো জীবিত আছেন, বুকের এফোড় ওফোড় হয়ে যাওয়া গুলির আঘাত সয়ে। কেউ বা বুকের মধ্যে চার দশকের বুলেটের সীসার টুকরো বহন করে।  জীবনের প্রবল প্রতিকূলতার স্রোতে মাথা উঁচু করে রেখেছেন তাঁরা। কিন্তু সত্যি কি মাথা উঁচু? এত অবহেলা, এত বঞ্চনা, জীবন যাপনের এত অসঙ্গতি নিয়ে তাঁরা কিভাবে আয়ুষ্কাল অতিক্রম করছেন আমরা অনেকেই জানি না। মুক্তিযুদ্ধের সুফল ভোগ করা ব্যক্তিরা কী একবার তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন না? জগতজ্যোতি স্মৃতির অংশ হয়ে গেলেও তাঁর জীবিত সহযাত্রীদের কাছে আমাদের কিছু ঋণ পরিশোধের সুযোগ আছে। সেই সুযোগ কী নেবো আমরা?

স্মৃতির চিত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৮ বছর পার করেছি দুই যুগ আগে। ১৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খোলা হয়েছে, কেউ আমাকে সেখানে যুক্ত করেছে। নানান জনের স্মৃতিচারণ পোস্ট দেখি। বহু পুরোনো দিনের একেকটা ছবি আসে আর বুকের ভেতর স্মৃতিগুলো নাড়া খেতে থাকে। সবচেয়ে বেশী নাড়া দেয়া ছবি পেয়েছি যার অ্যালবামে তাঁকে আমি চিনি না।  তৌকির আহমেদ মাসুদের তোলা অসাধারণ কিছু ছবি শেয়ারে পাওয়ার সুবাধে নামিয়ে নিলাম মুগ্ধতার সাথে। আমার বিশ্ববিদ্যালয় যুগে একটি ছবিও তুলিনি ভাবলে এই সময় অবাক লাগে। কিন্তু এটাও ঠিক সেই সময়ে ক্যামেরা এত সহজলভ্য কিছু ছিল না। আমার নিজের একটি Ricoh ক্যামেরা ছিল বাবার দেয়া, কিন্তু তা কাপ্তাই লেকে ডুব দিয়ে আর প্রাণ ফিরে পায়নি। এখন বাধ্য হয়ে অন্যের তোলা ছবিতেই ডুব দেই। অতীত কালের চেহারার বিশ্ববিদ্যালয় আর নেই, কিন্তু যে কয়েকটি অংশ এখনো আগের চেহারায় আছে তার কয়েকটি ছবি রাখলাম এখানে।


কাটা পাহাড় - নতুন চেহারায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে ক্যাম্পাসে যাবার এই পথটির নাম কাটা পাহাড়। এই পথের এই সবুজ সজীব চেহারার বয়স বছর দশেকের বেশী  নয়। এই পাহাড়ের আদিরূপ কেমন ছিল তা বোঝার জন্য অন্য একটি ছবি দেখতে হবে। নীচের ছবিটি আমাদের যুগে তোলা। কাটা পাহাড়ে ঢুকলে মনে হতো রাজস্থানের মরু অঞ্চলে ঢুকে পড়েছি। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে অজানা পাখির বাসা। কখনো নাম জানা হয়নি তাদের। নীচের ছবিটি সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ তম ব্যাচের নাহিদা রহমান মালা আপুর কাছ থেকে। 

কাটা পাহাড়-আদি রূপে


বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেনের আনন্দ যাত্রা


বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশান


বাসের রাস্তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথ





বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ের মধ্যেই এই সুন্দর ঝর্ণাটি আছে


ক্যাম্পাসের কোন কোন পাহাড়ে মায়া হরিনেরা বাস করে


Sunday, September 18, 2016

বাঙালীর তৈলপ্রিয়তা

যে যাই বলুক অধিকাংশ বাঙালী তেল জাতীয় পদার্থের ভক্ত। মাছ মাংস শাক সবজি সবকিছুতে তার তেল চাইই। তেল ছাড়া প্রায় কোন খাবারই তৈরী হয় না। বহুকাল যাবত চিকিৎসাবিজ্ঞান তেলের বিরুদ্ধে কথা বলে, তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিলেও তাতে কান দেয়নি বাঙালী। যে খাবারে যত বেশী তেল, সেই খাবার তত বেশী সুস্বাদু। এই তেল নির্ভরতা কোন কোন সময় এত প্রকট হয়ে যায় যে তেলহীন জীবনকে নিরামিষ মনে হয়। অথচ নিরামিষ হলো আমিষের অভাব। তেলের অভাব নয়।

রান্নার মতো ব্যক্তি জীবনেও তেল পছন্দ জাতি আমরা। সমাজে একটু নামডাক হতে শুরু করলে তেলের উপর নির্ভরতা বাড়তে থাকে মানুষের। টাকা পয়সা থাকলে তেলের অভাব হয় না এই সমাজে। যে মানুষ সমাজসেবা করে তার জনপ্রিয়তা নির্ভর করে আর্থিক অবস্থানের উপর। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে তেলের অভাব হয় না। সমাজসেবা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও তার সাথে গভীর সম্পর্ক জনপ্রিয়তার। জনপ্রিয়তা একটি নেশা। জনপ্রিয়তা পাবার লোভেই অধিকাংশ সমাজ সেবার কাজ হয়। আর জনপ্রিয়তা এমন এক নেশা যা একবার পেতে শুরু করলে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। তবে এই জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয় কর্মবর্ধমান তেল প্রবাহের মাধ্যমে। যার তেল প্রবাহ যত বেশী সে তত বেশী জনপ্রিয়। সুতরাং ব্যক্তিজীবনেও তেলের অবস্থান রান্নার চেয়ে কোন অংশে কম না।

ভার্চুয়াল জগতে এই তেল প্রবাহ সবচেয়ে পরিষ্কার ফেসবুক সমাজে। এখানে একটু নাম ডাক হতে থাকা মানুষেরা তেলের সমুদ্রে এত বেশী ডুবে যান যে একসময় আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়ে পড়েন। হঠাৎ কেউকেটা হয়ে পড়া সেই মানুষগুলো আর সাধারণ কাতারে ফিরতে পারে না। তেলসমৃদ্ধ জনপ্রিয়তার স্রোত তাঁকে যেদিকে ভাসিয়ে নেয় সেদিকেই ভেসে যান তিনি। সেলেব্রিটির খাতায় একবার নাম উঠলেই তিনি আর পেছনে ফিরতে পারেন না। সবচেয়ে মজার উদাহরণ হলো নিজের নামে একটা পেজ খুলে ফেলা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেই পেজের প্রথম লাইকটি তাঁর নিজের। পয়সা দিয়ে লাইক কামানোর কথা অবশ্য তৃতীয় কানে শোনা, বাস্তবে তার অস্তিত্ব থাকলে অবাক হওয়া উচিত হবে না।

সুতরাং বাংলাদেশে কোলেস্টোরেলের সমস্যা ক্রমশঃ বাড়তেই থাকবে।


Saturday, September 17, 2016

সন্ধ্যামালতী

এক ঘন্টার জন্য হঠাৎ একা হয়ে গেলাম বিকেল বেলা ৷ তখন হাওয়া এসে ডেকে নিল বারান্দায় ৷ অযত্ন বাগানে সপুষ্পক টবটি হেসে বললো,  তুমি নও শুধু আজ আমিও একা ৷ দুজনে মিলে কি একা হয় কখনো? হেসে জবাব দিলাম ৷

তবে আসো একখানা ছবি তোলো এই সন্ধ্যামালতীর ৷ আমি আরো কদিন থাকবো,  কিন্তু এই ফুলের আয়ু আর কয়েক ঘন্টা মাত্র ৷

ছবি তুলে ভাবলাম সব আনন্দ সময়ই বুঝি এক একটি ফুলের আয়ুর সমান ৷ ফুলটি ছবিতে ঠাঁই নিলো দীর্ঘ সময় রঙ ছড়াবে বলে ৷ আর আমাদের আনন্দ সময় ঠাঁই করে নেয় স্মৃতি প্রকোষ্ঠে ৷ জীবনের বাইরে গিয়ে আলাদা পায়ে দাঁড়ালে আমরা সেই সুখের অতলে ডুব দিতে পারি

Sunday, September 11, 2016

সিলেট ২০১৬

বাংলাদেশের চতুষ্কোণ মানচিত্রের চারটি প্রান্তের সীমানা ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছেপূরণ শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। দক্ষিণ কোণ সেন্টমার্টিন ছুঁয়ে আসি ১৯৯৪ সালে। পরের বছর উত্তর কোণ বুড়িমারী হয়ে তিনবিঘা করিডোর। তারপরের তালিকায় ছিল সিলেট ও সুন্দরবন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের পরপরই এমন কঠিন এক জীবিকার জালে আটকে পড়ি প্রায় বিশ বছর এইসব ভ্রমণ থেকে একেবারেই বঞ্চিত। দুই দশক পর জীবিকা শৃংখল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারো সুযোগ এসে গেল। প্রথম সুযোগটি সিলেট।


এ এমন একটি জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে আমি একটি ভালো ক্যামেরার অভাব বোধ করেছি। দূরকে নিকটে আনার মতো একটি যন্ত্রও যদি সঙ্গে থাকতো তাহলে দিগন্তকে আরেকটু কাছে, আরেকটু স্বচ্ছতার সাথে দেখতে পেতাম। দূরের নীল পাহাড়টি আমাদের নয়। ওটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য যেখানে আমি এখনো যাইনি। বাংলাদেশের সীমানা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘালয় পাহাড়ে জল বয়ে নিয়ে যায়  বঙ্গোপসাগরের মেঘগুলো। আমার শহরের উপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে কয়েকশো মাইল পর এসে এখানে ঝরায় অবিরাম বৃষ্টির ঝর্ণা। সেই বৃষ্টিগুলো নদী খাল পেরিয়ে গড়িয়ে এসে থমকে দাঁড়ায় এই হাওড়ে। এই প্রথম আমি বাংলাদেশের হাওড় দেখেছি মুগ্ধতার সাগরে ডুবে গিয়ে। এই প্রথম আমার সিলেট ভ্রমণ। রাতারগুল রিজার্ভ ফরেস্টের দ্বারপ্রান্তে এসেও ভেতরে যাইনি যথাযথ সঙ্গীর অভাবে, সেটা বলা ঠিক নয়। কিন্তু মাথার উপর গনগনে সূর্য যে আগুন ঢেলে দিচ্ছিল তাকে নিয়ে ঠিক কতোটা আনন্দ উপভোগ করা যেতো সেই বিষয়ে সন্দিহান ছিলাম বলেই মোবাইল ক্যামেরার অক্ষম কয়েকটি ক্লিক করে ফিরে এসেছি এবারের মতো। আরেকটু শীতল দিনে, আবার যখন ফিরবো তখন নিশ্চয়ই সঙ্গীহীন থাকবো না। উত্তপ্ত ভ্রমণ আমার দেহরুচিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করলে মনের অবস্থাও সুখকর থাকবে না। এমন ভ্রমণ শেষে সুখময় স্মৃতির অভিজ্ঞতাই শ্রেয়। তাই আপাততঃ বলি -এ দেখাই শেষ দেখা নয়।




ফিরে আসার পথে যাত্রার বাহন পথ নির্দেশকের অনুসরণে একটি গ্রাম পেরিয়ে প্রবেশ করলো অপরূপ এক চা বাগানে। বরজান চা বাগানের আয়তন নেহাত কম নয়। সিলেট শহরের কাছাকাছি এই বাগানটিই হলো আমার প্রথম দর্শন এবং ভালো লাগা। ক্যামেরায় ছোট ছোট কয়েকটি ক্লিক। তারপর চা বাগান পেরিয়ে রিজার্ভ ফরেস্ট। দুপাশে ঘন জঙ্গলের মাঝে গা ছমছমে নির্জনতায় পায়ে চলার পথ। পথের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জলের পাহাড়ি ছড়া। গাছে গাছে লাফালাফি করছে দুয়েকটি হনুমান। মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকা। আবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্যামেরায় ক্লিক করা হয় না।  যাত্রার বাহনটিরও থামার উপায় নেই অপ্রচলিত এই পথে। অতএব মাথার ভেতরে স্মৃতিপ্রকোষ্ঠেই ঠাঁই করে নেয় সেই সুন্দর। আবারো ফিরতে হবে এই পথে, তখন এই বন পরিভ্রমণ হবে পায়ে হেঁটে।