Sunday, September 18, 2016

বাঙালীর তৈলপ্রিয়তা

যে যাই বলুক অধিকাংশ বাঙালী তেল জাতীয় পদার্থের ভক্ত। মাছ মাংস শাক সবজি সবকিছুতে তার তেল চাইই। তেল ছাড়া প্রায় কোন খাবারই তৈরী হয় না। বহুকাল যাবত চিকিৎসাবিজ্ঞান তেলের বিরুদ্ধে কথা বলে, তেলের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিলেও তাতে কান দেয়নি বাঙালী। যে খাবারে যত বেশী তেল, সেই খাবার তত বেশী সুস্বাদু। এই তেল নির্ভরতা কোন কোন সময় এত প্রকট হয়ে যায় যে তেলহীন জীবনকে নিরামিষ মনে হয়। অথচ নিরামিষ হলো আমিষের অভাব। তেলের অভাব নয়।

রান্নার মতো ব্যক্তি জীবনেও তেল পছন্দ জাতি আমরা। সমাজে একটু নামডাক হতে শুরু করলে তেলের উপর নির্ভরতা বাড়তে থাকে মানুষের। টাকা পয়সা থাকলে তেলের অভাব হয় না এই সমাজে। যে মানুষ সমাজসেবা করে তার জনপ্রিয়তা নির্ভর করে আর্থিক অবস্থানের উপর। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে তেলের অভাব হয় না। সমাজসেবা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলেও তার সাথে গভীর সম্পর্ক জনপ্রিয়তার। জনপ্রিয়তা একটি নেশা। জনপ্রিয়তা পাবার লোভেই অধিকাংশ সমাজ সেবার কাজ হয়। আর জনপ্রিয়তা এমন এক নেশা যা একবার পেতে শুরু করলে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। তবে এই জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয় কর্মবর্ধমান তেল প্রবাহের মাধ্যমে। যার তেল প্রবাহ যত বেশী সে তত বেশী জনপ্রিয়। সুতরাং ব্যক্তিজীবনেও তেলের অবস্থান রান্নার চেয়ে কোন অংশে কম না।

ভার্চুয়াল জগতে এই তেল প্রবাহ সবচেয়ে পরিষ্কার ফেসবুক সমাজে। এখানে একটু নাম ডাক হতে থাকা মানুষেরা তেলের সমুদ্রে এত বেশী ডুবে যান যে একসময় আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়ে পড়েন। হঠাৎ কেউকেটা হয়ে পড়া সেই মানুষগুলো আর সাধারণ কাতারে ফিরতে পারে না। তেলসমৃদ্ধ জনপ্রিয়তার স্রোত তাঁকে যেদিকে ভাসিয়ে নেয় সেদিকেই ভেসে যান তিনি। সেলেব্রিটির খাতায় একবার নাম উঠলেই তিনি আর পেছনে ফিরতে পারেন না। সবচেয়ে মজার উদাহরণ হলো নিজের নামে একটা পেজ খুলে ফেলা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেই পেজের প্রথম লাইকটি তাঁর নিজের। পয়সা দিয়ে লাইক কামানোর কথা অবশ্য তৃতীয় কানে শোনা, বাস্তবে তার অস্তিত্ব থাকলে অবাক হওয়া উচিত হবে না।

সুতরাং বাংলাদেশে কোলেস্টোরেলের সমস্যা ক্রমশঃ বাড়তেই থাকবে।


No comments: