Monday, July 25, 2022

আমাদের অনৈক্য বিভক্তি আর সংকীর্ণতার ঐতিহ্য

আমরা বাঙালীরা নানান সময় ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গৌরবের কথা বলি। যতটা সম্ভব আমাদের গৌরবকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করি। এই বাড়াবাড়িটা সন্তানের প্রতি পিতার যে স্নেহের আতিশয্য তার সাথে তুলনীয়। বাস্তবে আমাদের গৌরবের অনেক কিছু থাকলেও সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হলো আমরা অগৌরবের বিষয়ে অগ্রগামী। আমাদের চরিত্রের ঐতিহ্য হলো বিভক্তি, সংকীর্ণতা আর স্বার্থপরতা। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তার নজির ছড়িয়ে আছে। মোগলরা আমাদের পূর্বপুরুষ নয়, কিন্তু মোগলদের অনৈক্যের উত্তরাধিকার আমরা নিয়েছি। প্রতিটা পরিবারে সংসারে অনৈক্য, বিবাদ, হানাহানি। আমাদের রক্তে মিশে গেছে সেই সংকীর্ণতা। আমাদের মুক্তি নেই।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল সবসময় বিভক্ত ছিল। বিএনপি আওয়ামী লীগ দুই দলের সমর্থক দেশের প্রধান দুটি ভাগ ছিল। ইতিহাস নিয়ে বিভক্তিটা সীমাবদ্ধ ছিল মুজিব জিয়ার মধ্যে। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মধ্যেও নানান বিভক্তি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে অপ্রীতিকর হলো শেখ মুজিব আর তাজউদ্দিনকে নিয়ে দুটো আলাদা শিবির হয়ে গেছে। দশ বছর পর দেখা যাবে এমনসব গবেষণা হয়েছে যাতে মনে হবে একাত্তরে এরা দুজন দুটো বিপরীতমুখী দলের নেতা ছিলেন। অথচ বাস্তবে এরা দুজন বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বেঁচে থাকার সময় তাঁরা পরস্পরকে বন্ধুর মতো জানতেন। এখন তার সমর্থকগণ দুজনের মধ্যে মরনোত্তর বিবাদ ঘটিয়ে দেশের রাজনৈতিক চরিত্রের মহা উন্নতি ঘটাতে চাইছেন। কট্টর তাজ সমর্থকগণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেটা বলতে চান, সেটা হলো ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ শেখ মুজিব আসলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চাননি। শেখ মুজিব সমর্থকগণ বলতে চান, তাজউদ্দিন কৌশলে মুজিবনগর সরকারের প্রধান হয়ে বসেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবের কথামতো কাজ করেননি। আমরা যারা ইতিহাস নিয়ে সামান্য কাজ করি, তারা জানি দুই দলের মতই অতি সংকীর্ণ মানসিকতায় ভরপুর। ভরসা হলো এই সংখ্যা এখনো খুব বেশি না। এই মতবাদগুলো টিকবে না। শেখ মুজিব বা তাজউদ্দিন কেউ কারো প্রতিযোগী ছিলেন না। ঘুণাক্ষরেও সেটা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। দুজনই আমাদের ইতিহাসের সম্পদ। দুজন দুজনের পরিপুরক। তাঁদের দুজনকে সমান করতে গেলে যেমন অবিচার হবে, তেমনি দূরত্ব সৃষ্টি করতে গেলেও অন্যায় হবে। অংকের ভাষায় মানুষের তুলনা করা যায় না।