Saturday, March 30, 2024

পাঠ প্রতিক্রিয়া- নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি

 



লিখেছেন - জালাল আহমেদ
২৯ মার্চ ২০২৪

সাধারন জ্ঞানের মুখস্ত বিদ্যায় একটি প্রশ্ন ছিল অবশ্যম্ভাবী, নিষিদ্ধ নগরী কোনটি? কখনো নিষিদ্ধ দেশ কোনটি? উত্তর প্রায় সবারই জানা ছিল, লাসা, তিব্বতের রাজধানী আর দেশ ছিল তিব্বত। তিব্বত চীনের অংশ আবার চীনের অংশ নয় এই নিয়ে বিতর্কও দীর্ঘদিনের। তবে স্মরণাতীত কাল থেকেই তিব্বত ছিল স্বতন্ত্র এক দেশ। আর চতুর্দশ শতক থেকে তিব্বত শাসন করতো তাঁদের ধর্মগুরু দালাই লামা। পঞ্চম দালাই লামা, দ্য গ্রেট ফিফথ লবসাং গিয়াতসো সপ্তদশ শতকের শুরুতে এক ভবিষ্যৎবানী করেন যে বিদেশীদের হাতে তিব্বত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মূলতঃ তারপর থেকেই তিব্বত বিদেশীদের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা হয়ে যায়।

ঔপনিবেশিক যুগের শুরুতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চেষ্টা ছিল ভারতবর্ষ, বিশেষ করে বাংলার বিভিন্ন জেলা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ। ১৭৭২ সালে জেলাসমূহে প্রথম দফা কালেক্টর নিয়োগের সময় তাদের দায়িত্ব ছিল তাদের অধীনস্থ এলাকা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা ও কলকাতায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করা। বাংলার সংগে তিব্বতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্ম যেমন প্রবর্তন করেছেন পদ্মসম্ভব বা রিনপোচে তেমনই তার সমন্বিত রূপ দিয়েছেন বাংগালী পন্ডিত অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান। তিব্বতীয় সাধুদের গুরু ছিলেন ভারতীয় সিদ্ধাচার্যগন। একইসংগে ছিল গিরিপথ বেয়ে বানিজ্যক সম্পর্ক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী চাইলো এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে তাই গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৪ সালে তিব্বতে প্রথম দূত প্রেরন করেন জর্জ বোগলেকে। এরপরেও একাধিক বানিজ্যিক বা তথ্যানুসন্ধানী মিশন তিব্বতে যায়। এমন কি ১৮১৫ সালের দিকে রংপুরে কালেক্টরেটে দেওয়ান পদে কাজ করার সময় রাজা রামমোহন রায়ও একটি মিশনের অংশ হিসেবে তিব্বতে গিয়েছিলেন।

কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অবস্থা পালটে যায়। মধ্য এশিয়া জুড়ে শুরু হয় গ্রেট বৃটেন-রাশিয়ার মধ্যে দ্য গ্রেট গেম। ফলে তিব্বতের উপর দিয়ে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ বৃটিশ সরকারের অগ্রাধিকারে পরিনত হয়। লাদাখ দিয়ে যেমন একের পর এক অভিযান পরিচালিত হয় তেমনই বাংলা থেকেও তথ্য সংগ্রহ অভিযান চলতে থাকে। দার্জিলিং এর এক দরজি কিন্টুপকে পাঠানো হয় এলাকা জরিপ ও ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ অনুসন্ধানে। একইসংগে আমাদের চট্টগ্রামের সন্তান, দার্জিলিং এর ভুটিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক শরৎচন্দ্র দাসকেও পাঠানো হয় তিব্বতে। ১৮৭৯ সালে ছয়মাসের জন্য ও ১৮৮১ সালে চৌদ্দমাসের জন্য শরৎচন্দ্র দাসের তিব্বতবাসের মাধ্যমে ইংরেজ সরকার প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে এবং কলকাতার সরকারি প্রেস থেকে ‘গোপনীয়’ লেবেল দিয়ে এই বিবরনীর নির্বাচিত অংশ প্রকাশ করে। ১৮৭৯ সালের ভ্রমনের বিবরণ পঁচিশ কপি “ন্যারেটিভ অফ এ জার্নি টু তাশিলহুনপো ইন ১৮৭৯” নামে ১৮৮১ সালে ছাপা হয়। ১৮৮১ সালের দ্বিতীয় ভ্রমনের বিবরণ ১৮৮৫ সালে “ন্যারেটিভ অফ এ জার্নি টু লাসা ইন ১৮৮১-৮২” ছাপা হয় ১৮৮৫ সালে ১০০ কপি। তবে আমার ধারনা তাঁর এই দুই অভিযানের বিস্তারিত মূল বিবরন এখনো ভারতীয় জাতীয় আর্কাইভ বা ব্রিটিশ লাইব্রেরীর কোন বাকসে পরে আছে। প্রকাশিত এই দুটি ভ্রমন বিবরনী র অনুবাদ ইতোপূর্বে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আমি পড়েছিও কিন্তু যখন মূল ইংরেজির সংগে মিলিয়ে পড়তে গিয়েছি তখনই হোঁচট খেয়েছি। মূল থেকে বিচ্যুতি ও সংক্ষেপিত করার কারনে মূল লেখার রস অনুবাদে পাইনি। আমার অন্যতম প্রিয় লেখক Parimal Bhattacharya তাঁর “শাংগ্রিলার খোঁজে” বইতে শরৎচন্দ্র দাসের ভ্রমনের যে সরস বর্ণনা দিয়েছেন তাতেও সাধ মিটছিলো না।

এইক্ষেত্রে চমকে দিলেন "উপনিবেশ চট্টগ্রাম: ৫০০ বছরের ধারাবাহিক ইতিহাস" এর লেখক, শক্তিশালী অনুবাদক Haroon Rashid । মূল লেখার স্বাদ অক্ষুন্ন রেখে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ অনুবাদ করেছেন শরৎচন্দ্র দাসের এই দুই ভ্রমন বিবরনী। অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এই বিবরণ যেন প্রান পেয়েছে হারুন রশীদ এর দক্ষ অনুবাদে। শরৎচন্দ্র দাস এক বিশাল স্থায়ী অবদান রেখে গিয়েছিলেন টিবেটান-ইংলিশ ডিকশনারীর প্রনেতা হিসেবে। আর অন্যদিকে তাঁর দুই ভ্রমনে প্রাপ্ত তথ্য ইংরেজ সরকার ব্যবহার করেছিলো ১৯০৪ সালে কর্নেল ইয়ংহাজব্যান্ড এর সশস্ত্র তিব্বত অভিযানে। লেখক হারুন রশীদকে ধন্যবাদ এই মূল্যবান বই দুটো দুই মলাটের ভেতর স্বাদু গদ্যে মূলানুগ অনুবাদে আমাদের সামনে হাজির করার জন্য। টি এইচ লিউইন এর “এ ফ্লাই অন দ্য হুইল” এর অনুবাদের পর বাংলাদেশের অনুবাদ সাহিত্যে এটি আরেকটি মূল্যবান সংযোজন। তিনি যে বিষয়ে আগ্রহী সে বিষয়ে আরও অনেক মূল্যবান রচনা অনুবাদের অপেক্ষায়। আমরাও অপেক্ষায় থাকবো পরবর্তী চমকের জন্য।

***** ****** ******

লিখেছেন - মনিরুল ইসলাম
১০ মার্চ ২০২৪
শরৎচন্দ্র দাস তবে ঠিক কী? পণ্ডিত? রোমাঞ্চকর দুর্গম পথের অভিযাত্রী? না কি ব্রিটিশের বেতনভুক গুপ্তচর? প্রশ্ন গুলো তুলেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার পর্জন্য সেন। এগুলো হয়তো গভীর গবেষণার বিষয়।কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে সে আমার কাছে দুর্গম পথের অভিযাত্রী। শরৎ চন্দ্র দাসের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে পরিমল ভট্রাচার্যের ‘শাংগ্রিলার খোঁজে’ বইয়ের মাধ্যমে। বিস্ময়ের শুরু তখন থেকেই !এরপর যখন জানতে পাড়ি এই পণ্ডিত অভিযাত্রী আসলে চট্টগ্রামের আলমপুর গ্রামের লোক। তখন আগ্রহের জোয়ার এসে চিন্তার দুকূল ভাসিয়ে দিলো।শরৎচন্দ্র দাশ দুবার তিব্বত অভিযান করেছিলেন। প্রথমবার ১৮৭৯ সালে ছ'মাসের জন্য এবং দ্বিতীয়বার ১৮৮১ সালে। কেবল অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান অর্জন নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভূরাজনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে শরৎচন্দ্রের দুই দফা তিব্বত অভিযান বিশেষ গুরুত্ববাহী। ১৮৭৯ সালের ১৭ জুন উগ্যেন গিয়াৎসুর সঙ্গে শুরু হয় তিব্বতের দুর্গম পথে অভিযান। সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন একজন গাইড ও একজন কুলি। সঙ্গে নিয়েছিলেন জরিপকাজ চালানোর জন্য সেক্সট্যান্ট ক্যামেরা, প্রিজম্যাটিক কম্পাস, হিপসোমিটার, থার্মোমিটার ও ফিল্ড গ্লাস। দিনলিপির আকারে লেখা সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা পড়তে পড়তে মনের অজান্তে নিজেও সেই অভিযাত্রায় সামিল হয়ে যাই।
‘ আ জার্নি টু লাসা এন্ড সেন্ট্রাল টিবেট’ থেকে অনুবাদ করে দেবাংশু দাশগুপ্ত লিখেন ‘তিব্বতে দু’বার’।যদিও নাম ‘তিব্বতে দু’বার’ হলেও বইটি মূলত ১৮৮১ অভিযাত্রার উপরে রচিত।সে হিসেবে হারুন রশিদ রচিত ‘ শরচ্চন্দ্র দাস-নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি’ দুটি অভিযান নিয়ে লেখা প্রথম বাংলা বই’।যদিও বইটি শুধু শরৎ চন্দ্র দাসের দুইটি বিবরণই নয়, আলোচনা করা হয়েছে তার জীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিয়েও।শরৎ চন্দ্র ও তার অভিযান এবং তিব্বত ও তার ইতিহাস জানার জন্য এর চেয়ে ভালো বই আর হতে পারে না।

পাঠ প্রতিক্রিয়া - থাংলিয়ানা

 



লিখেছেন- হারুন আহমেদ
৪ এপ্রিল ২০২৪

ব্রিটিশ কর্মকর্তা থমাস হারবার্ট লুইন ১৮৬৫ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। বইয়ের বিজ্ঞাপনে যদিও লুইনের অভিযানকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, বাস্তবে তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও কম জরুরি নয়। লুইন পাহাড়িদের সম্বন্ধে উচ্চ ধারণা পোষণ করলেও বাঙালিদের একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। এর কারণ তিনি মোক্তার বা মোড়ল জাতীয় বাঙালিদের সাথে পেশাগত সূত্রে মিশেছেন এবং দেখেছেন এদের সীমাহীন দুর্নীতি।
মনে রাখতে হবে, "থাংলিয়ানা " একজন ব্রিটিশের লেখা। তিনি সরাসরি সিপাহি বিদ্রোহে অংশ নিয়েছেন এবং দায়িত্বরত অবস্থায় পাহাড়ের তথাকথিত অসভ্য বর্বর নৃ-গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করেছেন। এদিকে প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, চা বাগানের জন্য পাহাড় দখলের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ের বাসিন্দারা ক্রমশ গৃহহারা হয়ে যায় এবং এর ফলস্বরূপ ঘনঘন বাঙালি বা ব্রিটিশদের ওপর আক্রমণ করে। তারপরও নিজের কাজে লুইনের সততা স্পষ্ট বোঝা যায়। নতুন ও ভালো যে কোনো কিছু তিনি উদারচিত্তে গ্রহণ করতেন। একটা ঘটনা আছে এমন-
"রতন পুইয়ার গ্রামের একটা ঘটনার কথা মনে আছে। একবার আমি তাদের গ্রামে রতন পুইয়ার সাথে কথা বলছিলাম, তখন কোথা থেকে এক হদ্দ মাতাল এসে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। কিন্তু রতন পুইয়া তাকে তিরস্কার করা দূরে থাকুক, একটা কথাও বলল না। যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে পাগড়িটা মাটি থেকে কুড়িয়ে ধুলো ঝেড়ে মাথায় বসিয়ে দিল।
আমি বললাম, 'এটা কেমন ব্যাপার হলো? তুমি তোমার অনুসারীদের বেয়াদবির জন্য শাস্তি দাও না?'
সে রীতিমতো আঁতকে উঠে বলল, 'বেয়াদবি? কী বলছেন সাহেব? সে একটা বদ্ধ মাতাল। তার কোনো হুঁশ নাই। সে কী করেছে নিজেই জানে না। ওটার কথা বাদ দিলে গ্রামে আমরা সবাই সমান। কিন্তু যখন যুদ্ধে যাই তখন সে যদি আমার কথা অমান্য করে সেটার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আছে। এখানে সে নিজের বাড়িতে আছে। ওসবের কোনো বালাই নাই। যে কোনো লোক চিফের বাড়িতে ঢুকে যে কোনো জিনিস নিয়ে আসতে পারে। তাদের কথা হলো-তিনি হলেন আমাদের চিফ। তিনি আরো অনেক উপহার পাবেন। আমাদের কাছে যা আছে সেগুলোও তাঁরই। অতএব তাঁর যা আছে সেগুলোও আমাদের। চিফ যদি আমাদের না দেয় তা হলে আর কে দেবে?' অকাট্য যুক্তি-কোনো সন্দেহ নেই।"
তিনি নিসর্গ পছন্দ করতেন এবং প্রায়ই দুঃসাহসিক বিভিন্ন অভিযানে জড়িয়ে পড়তেন। মাসের পর মাস ঘুরেফিরে একই পোশাক পরে, চড়াই উৎরাই পার হয়ে, খাদ্য স্বল্পতায় ভুগে, দৃঢ় মনোবল নিয়ে লুইন লুসাইসহ বিভিন্ন উপজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। কিন্তু একবার সন্ধি স্থাপিত হওয়ার পর তাদের সাথে লুইনের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারাই তার নাম রাখে "থাংলিয়ানা।" লুইন বিভিন্ন বিরূপ পরিস্থিতি তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দ্বারা সমাধান করতেন। বৃটিশদের মধ্যেও কতো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পেশাগত ঈর্ষা কাজ করতো তার বর্ণনা পড়ে অবাক হতে হয়।
সব মিলিয়ে, "থাংলিয়ানা " দারুণ একটি কাজ। হারুন রশীদের অনুবাদ ও ভূমিকা দুটোই প্রথম শ্রেণির।



লিখেছেন - মুহিবুল ইসলাম
২ এপ্রিল ২০২৪
প্রায় দেড়শো বছর আগের কথা। ভয় আর রহস্যে ভরা গভীর অরণ্যের পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান চালাতে চান বৃটিশ পুলিশের চৌকস কর্মকর্তা থমাস লুইন। সেজন্য তার দরকার ছিল এখানকার আদিবাসীদের সহায়তা। বান্দরবান এলাকার অরণ্যবাসী মুরং সম্প্রদায়ের এক দুর্দর্শ মোড়লকে বাগে এনে কাজে লাাগাতে চান। যার নাম ছিল তোয়েকাম তংলুইন। তাকে কাছে এনে পরিচয়পর্বে মোড়লের নাম শুনেই নিজের নামটা বিকৃত করে পাহাড়িদের মতো উচ্চারণ করে থমাস লুইন বলে ওঠলেন, “আপনি তো আমার পূর্বপুরুষের দিক থেকে আত্মীয় হন। আমার নাম আরবাট তংলুইন।” এই কৌশলে দারুণ কাজ হয়েছিল। এবং এর জের ধরেই বহু ঘটনা প্রবাহের পর শেষপর্যন্ত তংলুইন নামটা পাহাড়ি সংস্কৃতিতে কিছুটা বিকৃত হয়ে তংলুইন্যা এবং সবশেষে থাংলিয়ানা‘য় রূপান্তর হয়। এভাবেই থমাস হার্বার্ট লুইন হয়ে যান পাহাড়িদের থাংলিয়ানা।
...
১৭৬১ সালে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসন জারি হলেও দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না। সময়টা ছিল অবিশ্বাস্য অতিলৌকিক গুজবে ঠাসা। জনশ্রুতি ছিল ভারত বার্মার সীমান্তঘেরা বিস্তীর্ণ পার্বত্যভূমিতে বসবাসরত নানান উপজাতির বাসিন্দারা অসভ্য ও হিংস্র এবং ওরা সাপ ব্যাঙ শেয়াল কুকুর আর পতঙ্গই শুধু নয় মানুষকে পেলেও খেয়ে সাবাড় করতে কসুর করে না! ভয়-আতংকে সমতলের কেউ ভুলেও ওই অঞ্চলে পা রাখার দুঃসাহস দেখাতো না। কিন্তু সেই ভয়কে জয় করেছিলেন এক ব্রিটিশ তরুণ। ব্রিটিশ ভারতে ১৮৬৫ সালে হারবার্ট লুইন নামের এক তরুণ বৃটিশ অফিসার চট্টগ্রামের পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নিলাভ সবুজের হাতছানি আর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়তার কারণে অনেক ঝুকি আর ঝঞ্জার ভেতরে স্বেচ্ছায় প্রবিষ্ট হয়েছিলেন এই তরুণ আফিসার। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ, অভিযান ইত্যাদি কোন কিছুই বাদ যায়নি তার কর্মজীবনে। সেই সুবাদে গুজব এবং ভয়ের এ রাজ্যের সত্যচিত্র সভ্যদুনিয়ার সামনে উন্মোচিত হয়। দিনশেষে শত্রুর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ইংরেজি নাম থমাস হার্টবার্ট লুইন রূপান্তরিত হয় পাহাড়ি নাম থাংলিয়ানায়!
বইটিতে রহস্যঘেরা বিশৃংখল অরণ্যবাসী মানুষের জীবন পরিক্রমার নানান স্তরের বা নানান বাকেঁর কথা উপকথাসহ নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রসুত বর্ণনা স্থান পেয়েছে, অরণ্য ও অরণ্যবাসীকে বুঝতে যার সুগভীর তাৎপর্য অনস্বীকার্য। লেখক ব্রিটিশ উপনিবেশ স্বার্থের রক্ষক হলেও তার বর্ণনায় অরণ্যবাসীদের হিংস্রতার তেমন কোন লোমহর্ষক বর্ণনা বইটিতে মূল ফোকাস বা উপজীব্য হয়ে ওঠেনি। দস্যুতা এবং অসভ্যতাই পাহাড়ীদের শুধুমাত্র বৈশিষ্ট্য এমনটা লেখক বলতে চাননি। তার অনেক কথায় পাহাড়িদের সততা এবং সরলতার কথাও উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন ‘ওরা ওদের নিজস্ব আলয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করে। তারা এ চেনা সভ্য জগতের বাইরে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের মানুষ হলেও নিজেদের জীবন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।’
...
চাকরিকালীন (১৮৬৫-১৮৭২) সময়ে নিজের ঝুলিতে সঞ্চিত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরল সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিজের কুশলী কলমে লিপিবদ্ধ করেছিলেন থমাস হার্বার্ট লুইন। লন্ডন থেকে ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তার স্মৃতিকথা ’A fly on the wheel' নামক বইটি। সেই বইয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত অধ্যায়গুলোর বাংলা অনুবাদ নিয়েই থাংলিয়ানা। অনুবাদক জনাব হারুন রশিদ অনুবাদের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকতা এড়িয়ে দারুণ মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। সাবলীল অনুবাদের কারণে আমার কাছে বইটি সুখপাঠ্য মনে হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত দুশো পৃষ্ঠার বইটির প্রচ্ছদ, ছাপা সবই সুন্দর। প্রচ্ছদ একেছেন সব্যসাচী হাজরা, বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার কথাপ্রকাশ।

লিখেছেন - রাশেদ স্বপ্ন
২৯ মার্চ ২০২৪


একটু খাঁড়ান, ফর্মালিটি কইরা লই:

আঠারোশ পঁচাশি সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল A Fly On The Wheel নামের একটি স্মৃতিকথা। লেখকের নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস হারবার্ট লুইন। এডভেঞ্চারপ্রিয় এই ব্রিটিশ ভদ্রলোক তার স্মৃতিকথাটি প্রকাশের কুড়ি বছর আগে চট্টগ্রাম শহরের পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আজ থেকে দেড়শো বছরেরও কিছু অধিক সময় আগেকার সেই দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল বেশ কিছু দারুণ এডভেঞ্চারের। সেই সকল রোমাঞ্চকর অভিযানের এক লিখিত উপাখ্যান এই ‘থাংলিয়ানা’। ‘এ ফ্লাই অন দি হুইল’ মূলত একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে লুইন সাহেবের সমস্ত কর্মজীবনের স্মৃতিকথা। ‘থাংলিয়ানা’ সেই বইয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে উল্লিখিত অংশগুলোর বাংলা অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন হারুন রশীদ।

ফর্মালিটি শ্যাষ। এখন আসেন বইয়ের আলাপ করি।

থাংলিয়ানা কী:

‘থাংলিয়ানা’ মূলত লুইন সাহেবের পাহাড়ি ডাকনাম। এই নামকরণের পেছনে একটি চমৎকার ইতিহাস আছে। সেটি লিখে ফেলে বইয়ের আনন্দ নষ্ট না করাই ভালো। তবে থাংলিয়ানার জীবনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়েই যেহেতু এই বই, অতএব নামকরণ অতি অবশ্যই নজরকাড়া এবং প্রাসঙ্গিক।

বই কেমন:

এগারো বছর বয়সে আমি জীবনে প্রথমবারের মতো রবিনসন ক্রুশোকে চিনেছিলাম। ড্যানিয়েল ডিফো আমাকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন এক উপকূল থেকে অন্য উপকূল, এক অন্তরীপ থেকে অন্য অন্তরীপ। তারপর গৃহত্যাগী রবিনসন ক্রুশোর সাথে বন্দী করে ফেলেছিলেন জনমানবহীন এক দ্বীপে। অবশ্য রবিনসন ক্রুশোকে নিয়ে আলোচনা এই অব্দিই হতে দেখেছি আমি। কোন এক অদ্ভুত কারণে সেই জনমানবহীন দ্বীপ ও পার্শ্ববর্তী দ্বীপের মানুষখেকোদের থেকে মুক্তি লাভের পর ক্রুশোর জীবনে ঘটে যাওয়া বাকি এডভেঞ্চারগুলো নিয়ে কেন জানি খুব বেশি একটা কথা হয় না। সে কথা না হলে না হোক। মূল কথা ড্যানিয়েল ডিফো সদ্য কৈশরে পা দেওয়া আমিকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন তাঁর চমৎকার বর্ণনারমূলক লেখা দিয়ে।

আরেকটু বড়ো হলে এলেন বিভূতিভূষণ। আমাকে ধরিয়ে দিলেন ‘আরণ্যক’। তারপর আবারো সেই অদ্ভুত লেখা। সত্যচরণের সাথে নাঢ়া-লবটুলিয়ার সেই ঘন জঙ্গলের মায়ায় আমি বুঁদ হয়ে রইলাম পুরোটা সময়। সেই ঘোর আজও কেটেছে কি না সন্দেহ।

এবার পেলাম ‘থাংলিয়ানা’। সাহিত্যিক মান বিচারে থাংলিয়ানা আরণ্যক কিংবা রবিনসন ক্রুশোর ধারেকাছে যেতে পারে কি না, সেটা বিতর্কের বিষয়। তবে হারবার্ট লুইনের লেখা হোক বা হারুন রশীদের অনুবাদের মুন্সিয়ানা, থাংলিয়ানা আমাকে সেই রবিনসন ক্রুশো আর সত্যচরণের মতো করেই ঘুরিয়ে দেখালো দেড়শ বছর আগেকার পার্বত্য চট্টগ্রাম। যখন রাঙামাটি-বান্দরবানও বিবেচিত হতো অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হিসেবে। জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকেই এদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রতি একটা প্রবল টান অনুভব করেছি সবসময়। কিন্তু সময়-সুযোগ-অর্থ ও ইচ্ছাশক্তির অভাবের সম্মিলিত আক্রমণে ঘুরে দেখা হয়েছে খুব কম। তবুও যতটুকু দেখেছি, যতটুকু জেনেছি, তা আমার অন্তরে তৃপ্তি আনেনি। আমার বারবার মনে হয়েছে, নিরুদ্দেশ হয়ে মাসখানিক বান্দরবানের গহীনে গিয়ে থেকে আসতে পারলে ভালো হতো। এই দু-পাঁচদিনের অবসরে ওই মায়াবী ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ের কতটা কাছে যাওয়া যায়?

সাধ আছে, সাধ্যি নেই, সাধ্যি আছে, সাধ নেই–এর চক্করে পড়ে জীবনে কোনোদিন পাহাড়ের অতটা কাছে যাওয়া হবে কি না, আমি তা জানি না। এমনিতেও অস্থিতিশীল পাহাড়কে তো আমরা স্থিতিশীল রাখতে পারিনি। তাই পাহাড়ে গিয়ে কোনোদিন নিজের দেশে ঘুরতে এলাম বলে মনেও হয়নি। ওখানে বাঙালি আগ্রাসন দেখে নিজেই নিজের বিবেকের কাছে লজ্জিত হয়েছি বারবার।

থাংলিয়ানা আমাকে এই পাহাড়ের গল্প শোনার একটা ছোট্ট সুযোগ করে দিল বলেই তার প্রতি মুগ্ধতার রেশ কাটছে না। লুইন সাহেবের সাথে আমিও ঘুরে বেড়িয়েছি চট্টগ্রামের পার্বত্য পথের উত্তর হতে দক্ষিণে, পথ হেঁটেছি পূর্বে। পাহাড়ি ঘন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছি কালাদান নদীর তীরে। আক্রমণাত্মক সেন্দু উপজাতির তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি সেই পার্বত্য বনে গভীর থেকে গভীরে। দেখেছি পাহাড় আর সমতলের কূটনৈতিক সমঝোতা রক্ষার জন্য লুইন সাহেবের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। দেখেছি লুসাই গ্রামে ব্রিটিশ আক্রমণ, শান্তি স্থাপন, লুসাইদের হাতে অপহৃত এক ব্রিটিশ বালিকা উদ্ধার হতে। সমগ্র বইটি পড়ার অভিজ্ঞতাটিই ভীষণ চমৎকার। বিশেষত দূরবর্তী নীলচে পাহাড়গুলোতে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছা যখনই লুইনের কলমে প্রকাশ পেয়েছে, ততবার আমার চোখে সেই নীল পাহাড়সারি আর তাদের ওপরে ভেসে থাকা সাদা মেঘের দৃশ্য ভেসে বেড়িয়েছে। একবিংশ শতকের দেখার চোখ আর ঊনবিংশ শতকের দেখার চোখ এক হবে না জানি। তবুও চেনা দৃশ্যেই পুরোনোকে ধরতে চেষ্টা করে গিয়েছি যতক্ষণ বইটি পড়েছি তার পুরোটা সময়।

‘ন’ তে নগদে নেগেটিভ কিছু:

এত সব ভালোর মাঝেও নেহাত বাঙালি বলেই কিছু খারাপ লাগা কাজ করেছে। যতই লুইন সাহেব পাহাড়ে জনপ্রিয় হন না কেন, তার লেখাতে প্রায়শ ঔপনিবেশিক শাসকের মনোভাব অজান্তেই প্রকাশ পেয়েছে। আমার মনে হয়েছে লুইন সাহেব এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ বলেই তিনি পাহাড়ে গিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে কাজ করতে পেরেছিলেন। তার বর্ণনায় প্রায়ই একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রবলেম সল্ভিং প্রসেসের কিছু না কিছু বিষয় উঠে এসেছে। তার প্রজাবাৎসল্যতার প্রকাশ তখনই দেখেছি। তবুও কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে এমন স্পষ্টবাদী, জনদরদি একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কখনই ঔপনিবেশিক শাসন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বোধ করি এই-ই জাতীয়তাবাদের স্বরূপ। সবকিছুর আগে নিজের দেশ।

বাঙালিদের নিয়ে পর্যাপ্ত বিষোদগার করে গিয়েছেন জনাব লুইন। তা অবশ্য কিছুটা তিক্ত সত্যই বচন করেছেন তিনি। তবে প্রশংসায় ভিজিয়েছেন পাহাড়িদের। সংঘাতের পরেও তাদের প্রতি লুইনের কলমে ঝরেছে শ্রদ্ধা ও সম্মান। একই শাসকের চোখে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রমাণ করে জাতি হিসেবে আমরা কতখানি মেকি আত্মগরিমায় ভুগি।

অনুবাদ নিয়ে দুটি কথা:

অনুবাদের মান নির্ণয়ের ধৃষ্টতা আমার নেই। সাধারণ পাঠক হিসেবে পড়তে গিয়েছি। পড়েছি। আনন্দ পেয়েছি। কল্পনার চোখে ঘুরে বেরিয়েছি বিস্তীর্ণ পর্বতাঞ্চল। আমার কাছে অনুবাদের সার্থকতা এই-ই। হারুন রশীদের প্রতি ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা।


****** **** ****



লিখেছেন - সুচ চাকমা
২৮ মার্চ ২০২৪


থমাস হারবার্ট লুইন ছিলেন ভারতে ইংরেজ সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্যাপ্টেন লুইন নামে বিশেষভাবে পরিচিত। আমার বাল্যকালেই আমি আমার দাদুর মুখে শুনেছিলাম ক্যাপ্টেন লুইনের নাম। অবশ্য আমাদের গ্রামাঞ্চলে চাকমা উচ্চারণে বলা হতো "লুইন সাপ্যা"। সাধারণত সাদা চামড়ার বিদেশী লোকদেরকে চাকমারা বলে "ফারাঙি সাহ্‌ব"। আমার ধারণা ইউরোপিয়ানদের অনেকটা শ্বেতকুষ্ঠরোগীর মতো দেখায় বিধায় তাদেরকে ফারাঙি সাহ্‌ব বলা হয়ে থাকে। কারণ চাকমা ভাষায় কুষ্ঠ রোগকে বলা হয় ফারাঙি। যাহোক, চাকমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে যে, চাকমা সার্কেলের তৎকালীন শাসক কালিন্দী রানির সাথে নাকি বিভিন্ন বিষয়ে ক্যাপ্টেন লুইনের ঝামেলা হয়েছিল। তাই রানি কালিন্দী ক্যাপ্টেন লুইনকে পছন্দ করতেন না। একবার ক্যাপ্টেন লুইন কালিন্দী রানির সাথে দেখা করতে চাইলে রানি নাকি বলেছিলেন—আমি বানরের মুখ দেখতে চাই না। এই কারণে ক্যাপ্টেন লুইন নাকি কালিন্দী রানির ওপর খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। এগুলি লোকমুখে প্রচলিত শোনা কথা।

ক্যাপ্টেন লুইন ১৮৫৭ সালে একজন সামরিক বাহিনীর শিক্ষানবীশ কর্মকর্তা হিসেবে ভারতে যোগ দেন। এরপর ১৮৬৫ সালে তিনি বদলী হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। এবং ১৮৬৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান। সেই সময় লুসাই, কুকি ও সেন্দু উপজাতীরা প্রায়ই পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ব্রিটিশ শাসিত বিভিন্ন অঞ্চলে এসে লুটতরাজ করত। তারা সাধারন লোকজনদের হত্যা করত এবং শিশু ও নারীদের অপহরণ করে নিয়ে যেত। ১৮৭১ সালে লুসাইরা কাছাড়ের চা-বাগানের ম্যানেজার জেমস উইনস্টোনকে হত্যা করে তাঁর ১২ বছর বয়সী শিশুকন্যা মেরি উইনস্টোনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরফলে ১৮৭২ সালে চট্টগ্রাম থেকে জেনারেল ব্রাউনলো এবং কাছাড় থেকে জেনারেল বাউচারের নেতৃত্বে একটা দ্বিমুখী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে ক্যাপ্টেন লুইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন লুইন লে.কর্ণেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করেন।

"A Fly on the Wheel" নামে ক্যাপ্টেন লুইনের একটি বই প্রকাশিত হয়। সেই বইয়ের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক নির্বাচিত অংশগুলি নিয়ে বাংলায় 'থাংলিয়ানা" নামে অনুবাদ করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক হারুন রশিদ। বইটি প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালে। অবশ্য একই বিষয়ে রাঙ্গামাটির বিশিষ্ট আইনজীবি অ্যাডভোকেট জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমাও "পার্বত্য চট্টগ্রাম ও লুসাই পাহাড়" নামে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।
বই দুটিই পাঠকদের ভালো লাগবে আশা করি।

******** ******* ********

লিখেছেন - জালাল আহমেদ
২১ মার্চ ২০২৪



১৯৮৩ সালে যখন খাগড়াছড়ি মহকুমায় আমার পদায়ন হয় তখন অন্তত দু'জন ডেপুটি কমিশনার এর নাম জেনেই যোগদান করতে যাই। তাদের একজন টমাস হারবার্ট লিউইন। টি এইচ লিউইন কে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের কিংবদন্তি জেলা প্রশাসক হিসাবেই জানি যিনি ১৮৬৬ থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মিজোরামে লুসাই পাহাড় এলাকায় কাজ করে চিরস্মরনীয় হয়ে আছেন।
কিন্তু তিনি এর আগে নোয়াখালী জেলায় পুলিশ সুপার হিসাবে কাজ করেছেন তা’ আমরা অনেকেই জানি না। তা'রো আগে তিনি পুলিশ সুপার ছিলেন বিহারের হাজারিবাগ জেলায়। লিউইন এর পিতা ১৮২৩ সালে প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধে অংশ নেন আর লিউইনও অত্যন্ত কম বয়সে প্রথমে সেনাবাহিনীতে এবং পরে একাধিক জেলায় পুলিশ সুপার পদে কাজ করেছেন। ১৮৬৪ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি বিহার এর হাজারীবাগ থেকে কলকাতা-চট্টগ্রাম হয়ে নোয়াখালী আসেন। নোয়াখালীতে কিছুদিন পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের পর তার পদায়ন হয় পুলিশ সুপার চট্টগ্রাম পদে। তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা হয়েছে(১৮৬০) কিন্তু ডেপুটি কমিশনার পদের উপযুক্ত কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছিল না। কথিত মতে এ জন্য আগ্রহী কর্মকর্তা খোজা হলে লিউইন এ জন্য আগ্রহ দেখান ও ক্যাপ্টেন লিউইন কে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ডেপুটি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
 
লিউইন এই আগ্রহ মন থেকেই দেখিয়েছিলেন কারন এতদঞ্চলের উপর তার জানাশোনা ছিলো যে কারো চেয়ে বেশী। পাহাড়ি জনগনকে তিনি মন থেকেই ভালোবেসেছিলেন এবং তারাও তাকে। এর অন্যতম প্রমান আইজল এর সেই লিউইন স্মৃতি স্তম্ভ। “At Tlabung village right next to the Bangladesh border, 98 km to the west of Lunglei, there is a memorial stone erected to the memory of Captain T.H. Lewin, a courageous and adventurous British pioneer whom the Mizos fondly called Thangliana, or “Man of Great Fame”. Lewin was the Deputy Commissioner of Chittagong Hill Tracts when he entered Mizoram from Tlabung in 1865. He signed a peace treaty with one powerful Mizo chief of that time, Rothangpuia of Thangluah clan, following which he shifted his headquarters from Rangamati to Tlabung. He had many interactions with the Mizo chiefs and is remembered as the first white friend of the Mizos. He even wrote some books about the Mizo people. While he was in Tlabung he married a Mizo girl named Darpuii and they had a son who unfortunately died only a year later. Darpuii refused to go to England with Lewin when he retired from service. Lewin died at the age of 77 in 1916 as Honorary Lieutenant Colonel without any decoration for his great pioneering services. The memorial stone was erected in 1920 by arrangement with his English wife, Margaret Lewin.”

লিউইন চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা ও লুসাই এলাকা মিজোরাম নিয়ে অনেকগুলো বই লিখেছিলেন। আমি বহুদিন অনুসন্ধান করে তাঁর আত্মজীবনী "এ ফ্লাই অন দ্য হুইল অর হাও আই হেল্প গভর্ন ইন্ডিয়া" খুঁজে পাই। সেই বই এ লিউইন এর এতদঞ্চলে অবস্থানের সময়কালের অংশটুকু অনুবাদ করেছেন গবেষক-অনুবাদক Haroon Rashid। তাঁর অনুবাদ অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল। এখনকার গুগল ট্রান্সলেটর এর যুগে এই সুলিখিত অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ একটি মহৎ কাজ। এ জন্য লেখক হারুন রশীদ কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। বইটি ইতোমধ্যে পাঠক আনুকূল্য পেয়েছে। সময়ের সংগে সংগে এই আনুকূল্য বৃদ্ধি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

******* ****** *********


লিখেছেন- অঞ্জন কুমার দাশ
১৪ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রামের দক্ষিণ পূর্বদিকের দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, পাহাড়ের মানুষ আর ইতিহাস নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে তাঁরা এই বইটি পড়ে দেখতে পারেন। বইটির লেখক পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন।
 
থমাস হারবার্ট লুইন ভারতবর্ষে আসেন ১৮৫৭ সালে ১৮ বছর বয়সে। নানা ঘাট ঘুরে ১৮৬৫ সালে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। চট্টগ্রাম এসেই পূর্বদিকে দিগন্ত বিস্তৃত নীল পাহাড়ের প্রেমে পড়ে যান। পাহাড়ের ডাক তাঁকে অস্থির করে তুলে।সমতলের বাঙালিদের কাছে খোঁজখবর করতে থাকেন দুর পাহাড়ে কারা থাকে? তারা কেমন মানুষ?
কিন্তু স্থানীয় লোকজন তাঁকে নিরুৎসাহিত করেন। তাঁদের ধারণা ওসব এলাকা সভ্য মানুষের জন্য নয়। ওখানে যাঁরা থাকেন তাঁরা হিংস্র, বর্বর, অসভ্য। মানব জাতির কলঙ্ক। সাপ- ব্যাঙ-কীটপতঙ্গ হতে শুরু করে শেয়াল-কুকুর-হাতি-অজগর হেন কিছু নাই যা ওরা খায় না। কেউ কেউ জ্যান্ত মানুষও কাঁচা খেয়ে ফেলে। তাঁদের কারো কারো এমনকি লেজও নাকি আছে। আবার কারো কারো বাসা বাড়ি বলতে কিছুই নাই বানরের মতো গাছের উপর বসবাস করেন। 

নিঃসন্দেহে ভয়াবহ বর্ণনা। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ যেন অন্য ধাতুতে গড়া। লুইন সে রকমই একজন। এতকিছুর পরও তাঁর মনে হয়—❝আমি চাই একটা অজানা পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া, তারপর যা হয় হবে।❞

একদিন ঠিক ঠিক পাহাড়ে ঢুকে পড়লেন ৭ জন পুলিশ, দুজন ভৃত্য ও দুটি হাতি নিয়ে। খাবার দাবার তেমন কিছু নেননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন—
❝জীবন কিংবা ভ্রমণে সুখী হওয়ার গোপন রহস্য হলো কোনোটাতেই অনর্থক বোঝা না বাড়ানো।❞

অতএব পথে যা পাবেন তাই খাবেন। কিছু উপহার অবশ্য নিলেন পার্বত্যবাসীদের জন্য।

পরবর্তী কাহিনি রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর। আপনারা গল্পের রবিনসন ক্রুসোর কথা জানেন। লুইন যেন পাহাড়ের রবিনসন ক্রুসো। পার্থক্য হলো ক্রুসো নিয়তির ফেরে অজানা ভূখন্ড আর অচেনা মানুষের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। লুইনের জড়িয়ে পড়েছিলেন নিয়তির ফেরে নয় বরং বলা যায় তাঁর ক্ষেত্রে এই জড়িয়ে পড়া ছিলো— বাই চয়েজ।

বলাবাহুল্য পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যে গল্প তিনি শুনেছিলেন এবং এই বর্ণনা যে ভাবমূর্তি তৈরি করে তার সাথে বাস্তবের ফারাক অনেক। অবশ্য খাবারের ব্যাপারে বৈচিত্র্য ছিলো ব্যাপক। কিয়োদের গ্রামে গয়ালের কলিজা কাঁচা খেতে হয়েছে। হুক্কার তলায় জমা হওয়া পানি মুখে নিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। ব্যাঙ, গিরগিটি, সুয়োঁ পোকা ভাজি হাসি মুখে গিলতে হয়েছে। এসবই লুইন করেছেন এই জনপদের মানুষের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করতে। শুধু কুকুরের পেটের ভাত আর কুকুরের মাংসটা খািয়া এড়িয়ে গেছেন। তাঁর মনে হয়েছে সবকিছুরই একটি সীমা থাকে যা অতিক্রম করা যায় না। এই খাবারটি তাঁর সেরকম একটি সীমা।

লুইন পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেকের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করতে পারলেও কোথাও কোথাও প্রবল প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। সেন্দুদের হাতে তো প্রায় মরতে বসেছিলেন। কিভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন সেই রোমাঞ্চকর কাহিনি আগ্রহীরা বই হতে পড়ে নিবেন। ক্ষুদ্র পরিসরে সে বর্ণনা তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব।
আবার একজন ইউরোপীয়ান চা বাগান ম্যানেজারকে হত্যা করে তার ৬ বছরের কন্যাকে যখন লুসাইরা অপহরণ করে তখন আরেকটি সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে। মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায় দারুণ উত্তেজনাপূর্ন একটি অভিযানের ভিতর দিয়ে। সে বর্ণনাও দারুণ উপভোগ্য। এই অভিযানের একটি চরম উত্তেজনাপূর্ন মুহুর্তে দুঃসাহসি লুইন একা গিয়ে যখন লুসাই নেতাদের সাথে আলোচনায় বসে যখন তাঁদের মন জয় করে নেন তখন তারা তাঁর নামটি নিজেদের মতো করে উচ্চারণ করে শ্লোগানের মতো বলে ওঠেনঃ— থাংলিয়ানা....থাংলিয়ানা!!

এখানে উল্লেখ করা যায় রাঙামাটি শহরটি এই লুইনের হাত দিয়ে গড়ে ওঠে। শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক সদর দপ্তর ছিলো চন্দ্রঘোনা।

নিঃসন্দেহে লুইন শাসক উপনিবেশিক শ্রেণির একজন প্রতিনিধি। তাঁর কাজ কর্মের পেছনে অবশ্যই উপনিবেশিক শাসকদের স্বার্থ থাকবে। কিন্তু তার বাইরে গিয়ে বইটিতে এ এলাকার মানুষদের প্রতি তাঁর যে মায়া মমতা ফুটে উঠেছে সেটাও অসাধারণ। প্রায় ১৫০ বছর আগে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা এই বইটি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লেখা প্রথম দিকের একটি মৌলিক বই।

মূল বইটির নাম A fly on the wheel, ❝থাংলিয়ানা❞ নামের এই অনুবাদটি মূল বইয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট অংশগুলোর অনুবাদ। অনুবাদক হারুণ রশিদের অনুবাদ হয়েছে অসাধারণ। এরকম অনুবাদ সচরাচর পাওয়া যায় না।
চট্টগ্রামের পূর্ব অংশে কিভাবে রাষ্ট্র প্রবেশ করল এই ইতিহাস যাঁরা জানতেন চান তাঁদের জন্য এই বই অবশ্য পাঠ্য।

Wednesday, March 27, 2024

মল্লিকা সেন গুপ্তের কবিতা

 কী অসাধারণ একটা কবিতা! মল্লিকা সেনগুপ্ত লিখছিলেন:

ভালবাসা ভালবাসা বাঁচাও আমাকে

আমাকে সারিয়ে দাও ঝলমলে জীবনের স্বাদে
মাথাভর্তি চুল দাও, চোখে দাও কটাক্ষ বিদ্যুৎ
আমার আকাশে দাও মেঘ বৃষ্টি আলো।
...
আমি না থাকলে ছেলে থাকবে কী করে?
বরকে কে খুঁজে দেবে এল আই সি পলিসি
ভাইটা নেশার ঘোরে কোথায় গড়াবে
ভীমরতি পোকাগুলো বুড়ো মার মাথায় চড়বে।
...
চল্লিশ চাঁদের আয়ু, না বুঝে লিখেছি
এখনও অনেক কাজ বাকি আছে,যাবই না আমি
দু'-দশ বছর আরও তোমাদের জ্বালাব পোড়াব
না রে মৃত্যু আজ আর তোর জন্য সময় হবে না।
...
প্রতিদিন ভোর হয়, জীবন স্রোতের মত চলে
কারও কারও ভোরে আর একদিন সূর্য ওঠে না
সূর্যকে আমি তাই ভয়ংকর দিব্যি দিয়ে বলি
আমি না জাগলে তুমি উঠবে না ভোরের আকাশে।
...
শিশির তোমার কেন কোনওদিন অসুখ করে না?
রোদ্দুর কখনও বুঝি মনখারাপ হয় না তোমার?
সারস তোমাকে কেউ প্রতারণা করেনি কখনও?
আমিও শিশির হয়ে, রোদ্দুর, সারস হয়ে
থেকে যেতে চাই পৃথিবীতে।

Sunday, March 24, 2024

তবারুক

তৃতীয়বার ফোন করার সময় মেজ আপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে হুমকির সুরে বললেন, আপনি যদি আধা ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা না করেন তাহলে আমি ডিআইজি সদরুল আনামকে ফোন করতে বাধ্য হবো। তিনি আমার মামাতো ভাই।

আগের দুই ফোনে কাজ না হওয়াতে মেজ আপাকে তৃতীয়বারে ডিআইজি সদরুল আনামকে আনতে হলো।


রাত তখন সাড়ে বারোটা। গত দুই রাতের মতো আজকেও সামনের মাঠে হুজুরের কানে তালা লাগানো ওয়াজ তারস্বরে পাড়া মাতিয়ে যাচ্ছিল। শীতকালে প্রতিদিন এই উৎপাত- যেখানে দর্শকের চেয়ে মাইকের সংখ্যা বেশি থাকে। ওয়াজ শুরু হয় রাত এগারোটায়, শেষ হবার কোন সময়সীমা নাই। আপার মারাত্মক ঘুমের সমস্যা, ওষুধ খেয়েও কাজ হয় না মাঝে মাঝে। তার ওপর মধ্যরাতের মাইকের অত্যাচার। 


আজকে যখন হুজুর ওয়াজের মধ্যে রসিয়ে রসিয়ে মানবজন্মের সকল প্রক্রিয়া হাতে কলমে শিখিয়ে দেবার চেষ্টা শুরু করলেন, তখন আপা আর সহ্য করতে পারলেন না। ক্ষেপে গিয়ে থানায় ফোন করলেন। পর পর দুই অভিযোগে কাজ না হওয়াতে তৃতীয় অস্ত্রের প্রয়োগ।


পনের মিনিট না যেতেই ওয়াজের মাঠে একটা গোলমালের শব্দ শোনা গেল। সম্ভবত তৃতীয় অস্ত্র লক্ষ্যভেদ করেছে। মাইকের শব্দ আচমকা থেমে গেল। শুধু চিৎকার চেঁচামেচি হুড়াহুড়ির শব্দ। কয়েক মিনিট পরেই আপার ফোন বেজে উঠলো। 


ওসি সাহেব।

 

-ম্যাডাম, ফোর্স পাঠিয়ে দিছি। আসর ভেঙ্গে দিয়েছে। ডিআইজি স্যারকে ফোন করতে হবে না।


মেজ আপা শুনে হাসি চাপলেন। ধন্যবাদ দিলেন অকুন্ঠ চিত্তে। কিন্তু যেটা বলতে পারলেন না সেটা হলো ডিআইজি সদরুল আনাম তাঁর মামাতো ভাই না। তবে নিঃসন্দেহে তিনি নিশ্চয়ই কারো না কারো মামাতো ভাই। 


ঘটনা সেখানেই শেষ হবার কথা থাকলেও আরেকটু বাকী ছিল। 


খানিক পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরোজা খুলতেই দেখলো দুটো বিরিয়ানীর প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির দারোয়ান কুদ্দুস।


-আফা, ওয়াজে নাকি গণ্ডগোল লাগছিল, সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে। তারা আফনার তবারুকটা পাঠায় দিছে।


আপা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আয়োজকরা কী টের পেয়ে গেছে পুলিশ ডেকে আনার পেছনে তাঁর হাত ছিল? তবারুক নেবেন নাকি ফিরিয়ে দেবেন সেটা ভাবতে ভাবতে আপা শীতকালেও ঘামতে লাগলেন।


[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]


Thursday, March 21, 2024

ল্যু সালোমে এবং নিৎসে, রিলকে ও ফ্রয়েড

১.

ফুলের বাগানের একমুঠো ফুল মানুষকে ফুলের সৌন্দর্য দেখাতে সক্ষম। কিন্তু আমরা যদি বাগানে প্রবেশ না করি এ কথা ভেবে যে বাগানের সব ফুল আমি মুঠোয় ভরতে পারব না অথবা আমাদের একমুঠো ফুলকেই যদি সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে বলি, এটাই হলো পুরো বাগানের ছবি, তখন এ ফুলের মহিমা আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমাদের কাছে সে মহিমা অচেনা থেকে যায়। আমরা তখন একাকী হয়ে যাই।

২.

ঘনিষ্ঠ যেকোনো সম্পর্ক মানুষের অন্য কাজের সময় খেয়ে ফেলে, সম্পর্কের মহিমা বজায় রাখতে গিয়ে আর অন্য কোনো কিছুর দিকে গভীরভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না।

হয়তো কালজয়ী প্রতিভার প্রশংসা করা এক জিনিস, সেই কঠিন প্রতিভার সঙ্গে ঘর করা আরেক জিনিস।

মানুষের শরীরের অসুস্থতা তার মনের ওপরে ভীষণ ইতিবাচক এক প্রভাব ফেলতে পারে। এবং অসুখ থেকে আরোগ্য লাভের সময় মানুষ নতুন অভিজ্ঞান সঞ্চয় করতে পারে। যেন কষ্টের নির্বাণ ঘটে যাওয়ার পর সেই পুড়ে যাওয়া ছাই থেকে বেরিয়ে আসে নতুন আরেকজন মানুষ।

জীবনের সমস্ত পথ, এমনকি বিভ্রান্ত একটি পথও পরিপূর্ণতা পায় যখন সেটি এমন এক নারীর কাছে গিয়ে শেষ হয় যে নারী হয় বিদগ্ধ ও শান্ত, এবং বিশাল, যেন গ্রীষ্মের রাতের মতো, যে পুরুষের সমস্ত কথা শোনে, সমস্ত কিছু উপলব্ধি করে।
[ল্যু সালোমে]

(২০ মার্চ ২০২৪)
অক্ষাংশ: ১৪.৪২ সেকেন্ড, দ্রাঘিমাংশ ৮: ৩২ -১০:১৪ মিনিট


বিকেল থেকে রোদ নরম হয়ে আসছিল। সন্ধ্যার আহবানে রাতের শীতল হাওয়া বসন্তকে রাঙিয়ে তুলেছিল। সফল রাত্রির মুখরতা।

Sentimientos después de regresar de Manahar

Han pasado cuatro años desde que nos conocimos por primera vez.
Nunca tuvimos la oportunidad de volver a vernos.
Pero ambos queríamos reunirnos de nuevo.
Hiciste un llamamiento varias veces para que tuvieras una oportunidad de reunirse.
Pero no me atreví a hacerlo.
Por fin me llamaste ayer,
Y he decidido conocerte por segunda vez.
Tal vez esta sea la última vez de nuestras vidas.
Nunca olvidaré los momentos que tuvimos juntos.
Mi amor estará ahí para siempre, querido Manahar.






Monday, March 11, 2024

তথ্যসূত্র বিষয়ক আলাপ

আমরা যারা নন-ফিকশন লেখালেখি করি, তারা মূলত নানান বইপত্র থেকে তথ্য টুকলি করে নিজের মতো করে সাজিয়ে পরিবেশন করি। একটা বই পড়তে কখনো একশোটা বইও পড়তে হয়। কাজটা করার সময় কোন তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করেছি সেই সূত্রটা উল্লেখ করার একটা রীতি আছে, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। যারা আত্মরক্ষামূলক কাজ করেন তারা উল্লেখ করে থাকেন। যদি কেউ কোন বিষয় নিজে অনুসন্ধান করে সরেজমিন তদন্ত করে লিখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ করা জরুরী না। কিন্তু অন্যের বইপত্র থেকে টুকে নিলে  সূত্র দেয়া আবশ্যক। যে কোন ভাল লেখক তাই করেন। আমি যেহেতু টুকলির কাজ করি, আমাকে সূত্রগুলো রাখতে হয়। আমি আত্মরক্ষার্থে রাখি। কারণ আমি আদতে খুব বেশি কিছু জানি না। অন্যের কাছ থেকে ধার করা জিনিসপত্র নিয়ে কাজকারবার করি।  এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমাকে নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তার মধ্যে চমকে যাবার মতো কিছু বিষয়ও আছে। আমি যে বিষয়ে কাজ করছিলাম, সে বিষয়ে খুব জনপ্রিয় একজন লেখকের সাথে একবার যোগাযোগ করতে হলো। তিনি প্রথমে পাত্তা দিলেন না, আমি অচেনা ভিনদেশি লেখক বলে। তবু্ আমি লেগে থাকলাম। কারণ তাঁর গ্রন্থে একটা তথ্য নিয়ে আমার সংশয় ছিল। তথ্যটা খুব আকর্ষণীয়। আমি চাইছিলাম আমার গ্রন্থে তথ্যটা রাখবো। সে জন্য সূত্র উল্লেখ করা দরকার। তিনি যে লেখকের বই থেকে পেয়েছেন বলে লিখেছেন, আমি সেই বইগুলো আগাগোড়া পড়ে ফেললাম, তবু নাগাল পেলাম না। শুনতে হাস্যকর মনে হবে, মাত্র ছোট্ট একটা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমি দুই সপ্তাহ পড়াশোনা করেছি। কারণ তিনি বিখ্যাত লোক, আমি তাঁকে বিরক্ত করতে চাইনি। তিনি প্রথমে পাত্তা না দিলেও যখন আমি তথ্যটা উল্লেখ করে বললাম, সূত্র হিসেবে আপনার বইয়ের নামটা উল্লেখ করতে পারি কিনা। এতদিন তিনি পাত্তা না দিলেও তখন তিনি সাড়া দিলেন। বললেন, তিনি আসলে কোন সূত্র থেকে লেখেননি, অনুমান করে লিখেছেন।  তারপর স্বীকার করলেন, তিনি আসলে ডকু-ফিকশন লিখেছেন, ইতিহাস নয়। অথচ পাঠক তাঁর বইটাকে ওই বিষয়ে বাইবেল মনে করে। আমি তাঁর নাম বলছি না সঙ্গত কারণেই। কিন্তু খুব দুঃখিত হয়েছিলেম সেদিন। তাঁকে দুই বাংলার হাজারো পাঠক চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। অথচ তিনি একটা গুরুতর তথ্য লিখে দিয়েছেন অনুমান করে। আমি তখন তাঁর খুব জনপ্রিয় বইটার পেছন দিকে গিয়ে তথ্যসূত্রগুলো দেখতে শুরু করলাম। খেয়াল করলাম, তিনি সূত্র হিসেবে এক ডজন বইয়ের নাম লিখেছেন। শুধু সেই দুটো বইয়ের নাম লেখেননি, যেখান থেকে তিনি বইয়ের আসল তথ্যগুলো নিয়েছেন। আমি একই বিষয়ে কাজ করেছি বলে বিষয়টা ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাধারণ পাঠক হয়তো বুঝতে পারবে না। কথাটা এই প্রসঙ্গে এলো, আজ চট্টগ্রামের এক গবেষক লিখেছেন তিনি যে বিষয়ে কাজ করেছেন সে বিষয়ে আরেক গবেষক তাঁর বই থেকে তথ্য নিয়েছেন অথচ সূত্র উল্লেখ করেননি। 


Saturday, March 9, 2024

রামমোহন রায়ের বিলেত মিশনের সাফল্য সংবাদ

১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায় মোগল বাদশাহ শাহ আলমের দুত হয়ে ইংল্যান্ডের রাজার কাছে গিয়েছিলেন তাঁর ভাতা বাড়ানোর তদবির করতে। তাঁকে রাজা উপাধি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল বাদশাহের পক্ষ থেকে। সে কারণে তিনি রাজা রামমোহন রায় নামে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই কাজে সফল হয়েছিলেন কিনা সেটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। ১৮৩৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তারিখের সমাচার দর্পনে তাঁর সেই কাজের সফলতা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়:

দিল্লীর শ্রীলশ্রীযুত বাদশাহের মুশাহেরা বৃদ্ধি।

উক্ত শ্রীযুক্ত বাদশাহের উকীল হইয়া রামমোহন রায় ইঙ্গলণ্ডে গমন করিয়াছিলেন। তিনি ঐ বাদশাহের মুশাহেরা মাসে ২৫০০০ অর্থাৎ বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধিকরণের চেষ্টা করিয়া তাহাতে কৃতকার্য হইয়াছিলেন। অবগত হওয়া গেল যে উক্ত বাদশাহের মুশাহেরা বৃদ্ধিকরণের এই নিয়ম হইবে যে উত্তরকালে ঐ বাদশাহ বা তদীয় কোন পরিজন ইঙ্গলণ্ডীয় বাদশাহের প্রতি আর কোন দাওয়া না করেন। ইংলণ্ডীয় রাজকর্ম্মকারকেরা ৪ বৎসর অবধি উক্ত প্রকার মুশাহেরা বৃদ্ধি স্থির করিয়াছেন কিন্তু অবগত হওয়া গেল যে কেবল বর্তমান বৎসরের প্রথমেই তাহার দান আরম্ভ হইবে। দিল্লীর শ্রীযুক্ত বাদশাহ রামমোহন রায়ের সঙ্গে এই বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন যে রাজ বংশের নিমিত্ত যত টাকা বৃদ্ধি করিতে পারিবেন তাহার দশমাংশ আপনাকে ও আপনার পুত্র পৌত্রাদিক্রমে পরিবারকে দেওয়া যাইবে। এইক্ষণে রামমোহন রায়ের পুত্র দিল্লীতে এই অঙ্গীকৃত বিষয় সিদ্ধকরণের চেষ্টায় আছেন। ভরসা হয় যে তাহাতে কৃতকার্যও হইবেন।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৮ দিন জ্বরে ভুগে ২৭ সেপ্টেম্বরে মৃত্যবরণ করেন।


কিন্তু কেন?

রামমোহন রায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩ সালে, কলকাতায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয় ১২ ফেব্রুয়ারী ১৮৩৩ সালে। রামমোহন রায়ের মৃত্যুসংবাদ বিলম্বে আসার রহস্য কী? তার বিলেত অবস্থানকালীন প্রতি সপ্তাহের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। কিন্তু মৃত্যুসংবাদ এত দেরীতে আসলো কেন? এখানে সংবাদটাকে বিলম্বিত করার ইচ্ছাকৃত কোন প্রয়াস আছে কিনা সেটার ব্যাপারে আমার একটা সন্দেহ কাজ করে। তিনি যে মিশন নিয়ে বিলেত গিয়েছিলেন সেটা কোম্পানির খুব অপছন্দের কাজ ছিল। পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির সাথে বিরোধ হওয়াতে দিল্লীর বাদশা দ্বিতীয় আকবরের দূত হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডের রাজার কাছে কাছে নালিশ বা আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন। এই দৌত্যকর্মের জন্য তাঁকে ৭০ হাজার রূপীর একটা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু মিশন সমাপ্ত হবার আগেই তিনি আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেন। বিষয়টা একটু অদ্ভুত। এ বিষয়ে আরেকটু খোঁজ নিতে হবে। খোঁজ নেবার জন্য যে সকল সূত্র দরকার সেগুলো সংগ্রহ করতে সময় লাগবে।



The curious past of Chattogram’s coffee cultivation

 



By Haroon Rashid 
January 25, 2024
TBS Illustration.One might be shocked to hear that Chattogram had multiple coffee gardens in the early 19th century.

An ancient map of Chattogram city shows the precise location of one of these coffee gardens – the area where the present-day Chittagong Medical College and War Cemetery stand was once home to the gardens.

The British, the colonial overlords back then, even established a company dedicated to coffee cultivation in 1843.

In 1840, Sconce, Chattogram's commissioner back then, established Bangladesh's first tea garden near Chittagong Club, importing tea seedlings from Assam. After three years of securing government approval, tea plantations began to flourish in Chattogram and its surroundings.

Just recently, I came into possession of the antique map, thanks to Sheikh Shawkat Kamal, an amateur history researcher.

The map, collected from the British Library in London, was drawn by British surveyor Edward Raymond Boileau. During 1835-41, he was engaged as an assistant to Henry Sidon in the land survey of Chattogram.

By going through the map, I found a coffee garden in the current Chittagong Medical College area. Intrigued by this discovery, I attempted to gather additional information about coffee cultivation in Chattogram from various other sources.

In the course of the investigation, I stumbled upon several letters in the archives of Fort William, containing fascinating details about coffee cultivation.

Among them was a proposal seeking approval for the establishment of "The Chittagong Joint Stock Coffee Company" in 1843, which proved to be a surprising yet significant finding.

The documents confirm that the proposal for the coffee company was dispatched in April, three months prior to the tea plantation proposal sent in August 1843.

Who brought coffee in Ctg?

The true origin of coffee in Chattogram, whether indigenous or introduced by European traders, remains uncertain.

However, there is a hint of natural coffee growth in Chattogram in a letter dated 1786, authored by Sir William Jones, a scholar of ancient India. He spent a few months in Chattogram with his wife for leisure, and the letter alludes to the existence of naturally growing coffee in the region.

In a letter to his friend, he wrote, "For the sake of my wife's health and my own, to spend a few weeks in this Indian Montpelier, where the hillocks are covered with pepper vines, and sparkle with the blossoms of the coffee tree; but the description of the place would fill a volume."

While it is unclear if the coffee and pepper were naturally grown or cultivated, evidence suggests the presence of coffee plants in Chattogram before the British arrival, possibly brought by Arab or Portuguese traders.

Additional proof of Chattogram traders engaging in coffee cultivation before the British initiated such activities in the region can be found in the proposal submitted by Sconce.

In the proposal submitted on 7 April 1843, commissioner Sconce referenced a merchant named Sheikh Obaidullah, who achieved favourable outcomes by collecting coffee samples from his garden and submitting them to the Agricultural Society of Kolkata for testing.

Notably, Sheikh Obaidullah was the father of Hamidullah Khan, the author of "Ahadisul Khawanin," a historical book detailing Chattogram in the 19th century.

Commissioner's coffee company

In his proposal, Sconce outlined plans to cultivate six acres of land in the region, anticipating a yield of a minimum of 1,920 coffee trees per acre. 

Despite acknowledging the initial lack of profitability for the first four years, Sconce emphasised the region's potential for high-quality coffee production and urged investors to recognise the long-term gains.

With an estimated net profit of Tk1,300 anticipated in the fifth year, Sconce proposed an initial capital of Tk6,000, divided into shares among 50 individuals, suggesting the commencement of work with half the investment.

Through this proposal, he aimed to encourage investment in Chattogram's coffee cultivation, anticipating support from interested stakeholders.

However, Sconce's proposal faced rejection when one of the company's senior executives, more inclined toward investing in tea gardens, opposed it.

Undeterred, Sconce proceeded with coffee cultivation through a private initiative, unfazed by the company's decision.

Later, a coffee plantation project was undertaken by the company as well. The garden was kept up nicely in the beginning. However, once Sconce was transferred, there was a shortage of manpower, which caused the project to stall.

Nevertheless, the consequences of Sconce's coffee cultivation were known two decades later.

Another commissioner takes interest

Upon his appointment as commissioner in 1862, Gordon Young took an interest in Chattogram's tea and coffee plantations. He sought insights from Bruce, a seasoned resident with involvement in Sconce's coffee plantation project. 

Bruce, in response, detailed the history and challenges of tea and coffee cultivation in Chattogram, highlighting Dr Chapman's initiation of coffee cultivation in 1832.

He also mentioned that the region's coffee, when sent to London, was well-received despite suboptimal packaging.

Commissioner Young compiled data on Chattogram's plantations in 1862 and forwarded it to the Bengal Government in Kolkata, with subsequent dispatch to England for clearance.

Demise of coffee in Ctg

Chattogram and Sylhet soon began to see an increase in the number of tea gardens. At the same time as successful experimental tea cultivation took place in Sylhet.

Initially, small-scale tea growing in Chattogram proceeded smoothly, but tensions escalated among villagers and traders, leading to conflicts and arson over land acquisition for tea plantations. 

Similar opposition arose against converting fertile rice cultivation areas into coffee plantations.

The coffee company also faced challenges including staff shortages and land acquisition issues, resulting in a decline in production until its eventual demise.

Unfortunately, Chattogram's coffee cultivation faded into obscurity, with the British Library in London holding the sole remnants of its existence through old maps and documentation.


https://www.tbsnews.net/features/curious-past-chattograms-coffee-cultivation-781682

Friday, March 1, 2024

গ্রহাধিপতির দর্শন

সৌরজগতের নিন্মবর্গীয় অঞ্চলে পৃথিবী নামের ছোট্ট একটা নীলগ্রহ আছে। সেই গ্রহের ভেতরে আরো কয়েকটা গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে মহাসাগরের বিভাজনে। এশিয়া একটা গ্রহ, ইউরোপ- আমেরিকা একটা গ্রহ, আফ্রিকা আরেকটা গ্রহ। একেকটা গ্রহে একেক নিয়ম। এক গ্রহের নিয়ম অন্য গ্রহে খাটে না। এক গ্রহে যেটা মানবতা, অন্য গ্রহে সেটা মানবঘাতকতা। এক গ্রহে যেটা ক্ষুধা, অন্য গ্রহে সেটা তামাশা। এই গ্রহগুলোতে অনেকগুলো বিচিত্র উপগ্রহ আছে যেমন কঙ্গো, সুদান, ইসরায়েল, বার্মা, আফগানিস্তান, গাজা, মালি ইত্যাদি (আরো অনেক)। সেইসব উপগ্রহের উপগ্রহের নিয়মকানুন বাকী উপগ্রহের সাথে মেলে না। আবার গ্রহ সমাজের মধ্যে বড় বড় কয়েকটা মহাগ্রহ আছে যেমন আমেরিকা, চীন, রাশিয়া। তাদের হাত অনেক লম্বা। অক্টোপাশের মতো অনেকগুলো শূড় আছে। শূড়গুলো এত বিশাল যে তারা যে কোন গ্রহ উপগ্রহ গ্রাস করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তো….. এইসব গ্রহ উপগ্রহে মানুষ নামের কয়েকশো কোটির একটা প্রজাতি রাজত্ব করে, যারা প্রায়ই স্বজাতির ধ্বংস ডেকে আনে। সেটাকে আবার আত্মরক্ষার অধিকার বলে প্রচার করে। সেই নীল গ্রহের ধূসর পর্দায় আজ দেখতে পেলাম, একদল দুর্বল ক্ষুধার্ত অনাহারী শিশু খাদ্য সংগ্রহ করছে, আরেকদল বৈরি পোশাক পরা মানবঘাতি তাদের ওপর ধু(গু)লিবর্ষণ করছে।


বহুদূর এক গ্যালাক্সি থেকে দূরবীনে চোখ রেখে একজন বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। আর তাই এই গ্রহের বিচিত্র নিয়ম বোঝার আশা তিনি দিয়েছেন জলাঞ্জলি।