আমরা যারা নন-ফিকশন লেখালেখি করি, তারা মূলত নানান বইপত্র থেকে তথ্য টুকলি করে নিজের মতো করে সাজিয়ে পরিবেশন করি। একটা বই পড়তে কখনো একশোটা বইও পড়তে হয়। কাজটা করার সময় কোন তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করেছি সেই সূত্রটা উল্লেখ করার একটা রীতি আছে, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়। যারা আত্মরক্ষামূলক কাজ করেন তারা উল্লেখ করে থাকেন। যদি কেউ কোন বিষয় নিজে অনুসন্ধান করে সরেজমিন তদন্ত করে লিখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সূত্র উল্লেখ করা জরুরী না। কিন্তু অন্যের বইপত্র থেকে টুকে নিলে সূত্র দেয়া আবশ্যক। যে কোন ভাল লেখক তাই করেন। আমি যেহেতু টুকলির কাজ করি, আমাকে সূত্রগুলো রাখতে হয়। আমি আত্মরক্ষার্থে রাখি। কারণ আমি আদতে খুব বেশি কিছু জানি না। অন্যের কাছ থেকে ধার করা জিনিসপত্র নিয়ে কাজকারবার করি। এই কাজগুলো করতে গিয়ে আমাকে নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তার মধ্যে চমকে যাবার মতো কিছু বিষয়ও আছে। আমি যে বিষয়ে কাজ করছিলাম, সে বিষয়ে খুব জনপ্রিয় একজন লেখকের সাথে একবার যোগাযোগ করতে হলো। তিনি প্রথমে পাত্তা দিলেন না, আমি অচেনা ভিনদেশি লেখক বলে। তবু্ আমি লেগে থাকলাম। কারণ তাঁর গ্রন্থে একটা তথ্য নিয়ে আমার সংশয় ছিল। তথ্যটা খুব আকর্ষণীয়। আমি চাইছিলাম আমার গ্রন্থে তথ্যটা রাখবো। সে জন্য সূত্র উল্লেখ করা দরকার। তিনি যে লেখকের বই থেকে পেয়েছেন বলে লিখেছেন, আমি সেই বইগুলো আগাগোড়া পড়ে ফেললাম, তবু নাগাল পেলাম না। শুনতে হাস্যকর মনে হবে, মাত্র ছোট্ট একটা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমি দুই সপ্তাহ পড়াশোনা করেছি। কারণ তিনি বিখ্যাত লোক, আমি তাঁকে বিরক্ত করতে চাইনি। তিনি প্রথমে পাত্তা না দিলেও যখন আমি তথ্যটা উল্লেখ করে বললাম, সূত্র হিসেবে আপনার বইয়ের নামটা উল্লেখ করতে পারি কিনা। এতদিন তিনি পাত্তা না দিলেও তখন তিনি সাড়া দিলেন। বললেন, তিনি আসলে কোন সূত্র থেকে লেখেননি, অনুমান করে লিখেছেন। তারপর স্বীকার করলেন, তিনি আসলে ডকু-ফিকশন লিখেছেন, ইতিহাস নয়। অথচ পাঠক তাঁর বইটাকে ওই বিষয়ে বাইবেল মনে করে। আমি তাঁর নাম বলছি না সঙ্গত কারণেই। কিন্তু খুব দুঃখিত হয়েছিলেম সেদিন। তাঁকে দুই বাংলার হাজারো পাঠক চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। অথচ তিনি একটা গুরুতর তথ্য লিখে দিয়েছেন অনুমান করে। আমি তখন তাঁর খুব জনপ্রিয় বইটার পেছন দিকে গিয়ে তথ্যসূত্রগুলো দেখতে শুরু করলাম। খেয়াল করলাম, তিনি সূত্র হিসেবে এক ডজন বইয়ের নাম লিখেছেন। শুধু সেই দুটো বইয়ের নাম লেখেননি, যেখান থেকে তিনি বইয়ের আসল তথ্যগুলো নিয়েছেন। আমি একই বিষয়ে কাজ করেছি বলে বিষয়টা ধরতে পেরেছিলাম। কিন্তু সাধারণ পাঠক হয়তো বুঝতে পারবে না। কথাটা এই প্রসঙ্গে এলো, আজ চট্টগ্রামের এক গবেষক লিখেছেন তিনি যে বিষয়ে কাজ করেছেন সে বিষয়ে আরেক গবেষক তাঁর বই থেকে তথ্য নিয়েছেন অথচ সূত্র উল্লেখ করেননি।
No comments:
Post a Comment