Sunday, August 30, 2009

জামাত শিবিরের সম্প্রসারন পদ্ধতি ও আমাদের হঠাৎ মুসলমানগন

'হঠাৎ মুসলমান' বলে একটা কথা ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদাকে বিতর্কিত করেছিল সংসদে। জামাত শিবির নিয়ে লিখতে গিয়ে এই শব্দটা মাথায় এলো। আমি কঠিনভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশে জামাতের প্রসারের অন্যতম কারন এই 'হঠাৎ মুসলমান'গন। নীচে দুটো সাধারন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরন দিলাম-

এক.
আমার প্রতিবেশী একটি পরিবার। জীবনে কোনদিন ধর্মের ধার দিয়েও ছিল না। আমোদ ফুর্তিতে দিনযাপন করতো। নারীপুরুষ নির্বিশেষে হৈ হুল্লোড়ে থৈ থৈ করতো যে কোন উৎসব পার্বনে। একদিন ওই বাসায় এক লজিং মাষ্টার প্রবেশ করলো। তার কদিন পর লজিং মাষ্টারের সুত্র ধরে এক বোরকাওয়ালীর প্রবেশ ঘটলো। এর কয়েকদিন পর ওই বাসা থেকে দুজন তিনজন করে বোরকাওয়ালী বের হতে লাগলো। একদিন পুরো বাসাটাই ঢেকে গেল বোরকায়। কারন কি? কারন ওই বাসায় যে লজিং মাস্টারের আগমন ঘটেছিল তিনি মওদুদীর ভাবশিষ্য। লজিং মাষ্টার ছাত্রছাত্রীদের মাথা খাবার পর বোরকাওয়ালীকে দিয়ে বাচ্চাদের মার মাথাও খেয়ে নিয়েছে অবলীলায়। ধর্মহীন ওই পরিবারে সেই মাষ্টারমশাই প্রথম ধর্মের বাতি জালিয়েছিলেন। এবং মওদুদীর জ্বালানীতেই সেই বাতি জ্বলেছিল। প্রতিবেশী পরিবার শীঘ্রই ইসলামের নামে মওদুদীবাদের ভক্ত হয়ে অতীত উচ্ছৃংখলতার পাপমোচনের চেষ্টা করে। কঠিন জামাতী পরিবারে পরিনত হয় শীঘ্রি। এই পরিবার থেকে জামাত শিবির বাদে অন্য কিছু বের হবার সম্ভাবনা কি আছে?

দুই.

আরেক ঘনিষ্ট এক বন্ধুর পরিবার। বন্ধু জামাত পছন্দ করে না। কিন্তু জিয়ার আদর্শের প্রতি দুর্বলতা আছে। তবে সরাসরি রাজনীতি করে না। পরিবারে রাজনীতির কোন ব্যাপার নেই। ভাইবোন সব আধুনিক। কিন্তু ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্ধুর বাসায় এক বোরকাওয়ালী প্রতিবেশিনীর আগমন ঘটে। বন্ধুকে আমি সাবধান করি। বোরকাওয়ালী জামাতী মহিলা। কিন্তু বন্ধু হাসে, বলে মহিলা রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে না। মাকে ধর্ম নিয়ে পাঠ দেয়। কোরান শেখায়। আমি তবু আস্বস্ত হতে পারি না। কিছুদিন পর বন্ধুর আধুনিকা মাকে কালো বোরকায় চক্ষুকর্ন আচ্ছাদিত দেখে বুঝলাম রক্ষা হলো না। বন্ধু তরল কন্ঠে বললো 'বাসায় এখন ধর্মকর্ম ভালোই হয়। ওই খালাম্মা সবাইকে ট্রেনিং দিয়েছে। ভালো হয়ে যেতে পয়সা লাগে না। তোর বাসায়ও যাবে।'

আমি বন্ধুর কথা শুনে হিম হয়ে গেলাম। আমার বাসায়ও গিয়েছিল দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে। কিন্তু আমার বাসায় আগেই দ্বীনের বাপ বসা ছিল বলে সুবিধা করতে পারেনি। তবে আমার বাসায় না পারলে কি হবে। আর তিন বন্ধুর বাসায় সাফল্যের মুখ দেখলো জামাতি মহিলা। তবে ওই তিন বাসায় জামাতি মহিলা নিজে যায় নি। প্রথম বন্ধুর মাকে ট্রেনিং দিয়ে পাঠিয়ে কাজটা আরো সহজে করেছে। একটা লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো ওই তিন বন্ধুর পরিবারও জিয়ার আদর্শে দুর্বল ছিল। ভোট দেয় ধানের শীষে। তখন জোট সরকার ক্ষমতায় বলে ওরা জামাতকে বাইরের মনে করতো না। এভাবেই দাড়িপাল্লা ধানের শীষের জায়গায় বসে গেল।

এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে। বাংলাদেশে জামাত শিবিরের সম্প্রসারন হবার বহুল প্রচলিত পদ্ধতির অন্যতম এগুলো। জামাত বাংলাদেশে নানা রূপে নানা কায়দায় ছড়াচ্ছে। রাজনীতির ময়দানে জামাতের উচ্চকন্ঠ তেমন শোনা না গেলেও ঘরে ঘরে এই কাজগুলো করে যাচ্ছে নিরুপদ্রপভাবে। ওই তথাকথিত ধর্মভীরু(আসলে অধার্মিক/বকধার্মিক) মানুষগুলোর প্রশ্রয়ে গোকুলে বেড়ে উঠেছে ভাইরাস জামায়াত ও শিবির।

বাংলাদেশে আইন করে জামাতের মতো দলগুলোর সম্প্রসারন রোধ করা যাবে না। কারন এরা পরজীবি ও সংক্রামক। এদের প্রবৃদ্ধি রোধ করতে হলে, এদের নির্মূল করতে হলে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশের সাধারন পরিবারগুলো যদি সচেতন হতো এই ভাইরাসগুলোর স্পর্শ বাচিয়ে চলতে পারতো। যদি বুঝতো জামাত ও ধর্ম দুটো জিনিস ভিন্ন। তাহলে বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের শেকড় উপড়ে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া কোন ব্যাপার হতো না।

আমাদের লুকোনো সম্পদ, আমাদের সমৃদ্ধির আশ্বাস

বলিভিয়ার লবনভুমি সমৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি - এই শিরোনামে বিবিসির গতকালের একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল আজ। পুরোটা পড়ে কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলাম। বলিভিয়া পৃথিবীর অর্ধেক লিথিয়াম খনিজের মালিক। সারা বিশ্বে আগামীতে জ্বালানী শক্তির মস্ত সংকট ধেয়ে আসছে। তেল গ্যাস ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। বিকল্প জ্বালানীর সন্ধানে উন্নত বিশ্ব ব্যস্ত। সেই সংকটে লিথিয়াম হয়ে উঠতে পারে দারুন এক বিকল্প। সারা বিশ্বে ইতিমধ্যে লিথিয়াম ব্যাটারির জোয়ার চলছে। আগামীতে গাড়ীও চলতে পারে রিচার্জেবল ব্যাটারি দিয়ে। বিপুল পরিমান লিথিয়ামের মজুদে বলিভিয়া তখন হয়ে উঠতে পারে বিশ্বশক্তির আধার। কেউ কেউ এরই মধ্যে বলিভিয়াকে লিথিয়ামের সৌদি আরব বলা শুরু করেছে। যদিও বলিভিয়ার খনিজসম্পদ মন্ত্রী Luis Echazu-র তাতে দ্বিমত আছে। তিনি লিথিয়াম রপ্তানীর চেয়ে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে আগ্রহী বেশী।

গায়ানার পরেই বলিভিয়া দক্ষিন আমেরিকার দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ। বাংলাদেশের মতো এটিও হরেক সমস্যায় জর্জরিত। সম্পদের সুষম বন্টন নেই এখানেও। ধনী দরিদ্রের বিশাল ব্যবধান। সুনামের চেয়ে বদনাম বেশী। তবু বলিভিয়া মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়। মাথা তুলে দাঁড়াবার এই স্বপ্নটা বলিভিয়া দেখা শুরু করেছে যখন ২০০৬ সালে আদিবাসী বংশোদ্ভুত নেতা Evo Morales ক্ষমতায় আরোহন করলেন। সেই থেকে বদলে যেতে শুরু করে বলিভিয়ার দারিদ্রের পুরোনো চিত্র। নতুন স্বপ্ন দেখানো শুরু করেছে মোরালেস। দারিদ্রের ক্ষমতায়ন বিষয়টি কেবল কাগজপত্রে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেছে তার নতুন সরকার। স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশের মতো জাতীয়করন করা হচ্ছে তেল গ্যাস সহ দেশের গুরুত্বপূর্ন শিল্পগুলো। মূল্যবান খনিজগুলো যাতে দেশের জনগনের মঙ্গলের কাজে ব্যবহৃত হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে।

এবং সবচেয়ে চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিথিয়াম বিষয়ে। লিথিয়াম রপ্তানী করে তাৎক্ষনিক বড়লোক হবার চেয়ে লিথিয়ামের তৈরী ব্যাটারী রপ্তানী করতে তাদের আগ্রহ বেশী।বলিভিয়ার বর্তমান সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর করালগ্রাস থেকে শিল্প ও সম্পদকে রক্ষা করার আন্তরিক প্রয়াস। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে শিক্ষনীয় বিষয় হতে পারে এটি।

আমাদের কক্সবাজার মহেশখালী সেন্টমার্টিন হাতিয়া সহ উত্তরে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র বেসিনে লক্ষ লক্ষ টন তথাকথিত কালো সোনা স্তুপীকৃত হয়ে পড়ে আছে কয়েকযুগ ধরে। কালোসোনাগুলোর বাহারী নাম হলো ইলেমনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট ইত্যাদি। বিদেশী কোম্পানীগুলো মাঝে মধ্যে গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলে আসে খোঁজ নিতে। তখন সরকার একটু নড়ে চড়ে বসে। তারপর আবার শীত ঘুম। এই করে করে চলছে দেড়যুগ। ও এইচ কবির নামে আধপাগল এক অবসরপ্রাপ্ত পর্যটন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একা একা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এই সম্পদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে, এই সম্পদকে বিদেশী কব্জা থেকে রক্ষা করতে। তিনি নিজে গবেষনা করে চমকপ্রদ কিছু তথ্য আবিষ্কার করেছেন। সেই আবিষ্কারকে তিনি দেশের কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলো তিনি ও তার আবিষ্কার নিদারুনভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। বারবার উপেক্ষিত হতে হতে এই মানুষটি প্রচন্ড অভিমানে তার গবেষনা ধ্বংস করে ফেলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শুভাকাংখীদের জন্য পারেননি। ২০০২ সালের দিকে সাপ্তাহিক ২০০০ এর রিপোর্টে এই কালো সোনার বৃত্তান্ত পড়ে আমি খুব আশাবাদী হয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম সরকারের ঘুম ভাঙানোর কাজে। কয়েক লক্ষ কোটির উপর মূল্য হতে পারে শুধু কক্সবাজার অঞ্চলের খনিজ আহরন করতে পারলে। দেশের বাকী অংশের কথা বাদই দিলাম।

আমাদের সমস্যা হলো সেই খনিজ পরিশোধনের প্রযুক্তি আমাদের নেই। যতটুকু আছে তাতে হয়তো ৮৫-৯০ভাগ পরিশুদ্ধ করা যায়। কিন্তু জানা গেছে ইলেমনাইট যদি ৯৯% পরিশোধন করা না যায় তার দাম আসলের ১ শতাংশও পাওয়া যাবে না। ৯৯% পরিশুদ্ধ হবার জন্য বিদেশী প্রযুক্তি অবশ্যই দরকার। টাকা দিয়ে প্রযুক্তি ভাড়া করে আনা যায়। দেশীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় কমিটি করা যায়। সম্ভাব্যতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

কিন্তু সরকার সেই পথে না হেটে সোজা গোটা সম্পদের পাহাড়ই তুলে দেবার চেষ্টা করেছিল বিদেশী কোম্পানীর কাছে। অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানী ইন্টারন্যাশনাল টাইটানিয়াম কর্পোরেশান সেই সময় বেশ কিছুদিন কাজ করেছিল। ওখানেই আমাদের প্রবল আপত্তি ছিল।

তাই সাপ্তাহিক ২০০০-এ যিনি রিপোর্টটি লিখেছিলেন সেই সাংবাদিক আসাদুর রহমানকে নিয়ে আমার ঢাকাস্থ এক বন্ধুর সহায়তায় ঢাকায় একটা গোলটেবিল বৈঠকে একত্রিত করেছিলাম বুয়েটসহ বাংলাদেশে এই লাইনের সকল দেশীয় বিশেষজ্ঞকে। ও এইচ কবির সাহেবও উপস্থিত ছিলেন অন্যন্য বিশেষজ্ঞের সাথে। আরো আমন্ত্রন করেছিলাম তৎকালীন খনিজসম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ সাহেবকে। ভেবেছিলাম সরকারের ভেতর একটা জোর ধাক্কা দিয়ে জানানো যাবে আমাদের কী সম্পদ-সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে দেশের পেটের ভেতর। কিন্তু অন্য সবার বক্তব্যে আশাবাদী সুর আসলেও মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শুনে আমি প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম এই রকম মন্ত্রী বাংলাদেশে যতদিন থাকবে ততদিন আমি আর কোন কাজে সরকারের ঘুম ভাঙাতে যাবো না।

গোলটেবিল বৈঠকে এরকম জনগুরুত্বপূর্ন বিষয়ে তিনি যা বলেছিলেন, তাতে তার জ্ঞানবুদ্ধি মন্ত্রী হবার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা যায়। সেরকম প্রেসনোটধরনের বক্তৃতা যে কোন সরকারের আমলে রেডিও বা বিটিভির খবরে প্রতিদিন কয়েকবার বলা হয়। তাই সেই সাফল্যগাথার বয়ান দিতে রুচি হচ্ছে না এখানে। সরকারের ঘুম ভাঙাতে দারুনভাবে ব্যর্থ হলাম আমি ও আমার সঙ্গীরা। বিফল মনোরথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম সবাই।

কয়েকমাস আগে সেই নাছোড়বান্দা গবেষক ভদ্রলোক ও এইচ কবির সাহেব আরেকটা লেখা লিখেছেন নিউ নেশানে। এবার জানতে পারলাম এই সরকারও নাকি প্রিমিয়ার মিনারেল কোম্পানী নামে সিঙ্গাপুর-অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক আরেকটা বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করতে যাচ্ছে আমাদের কালো সোনা। সরকারের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টায় আমি হাল ছেড়ে দিলেও ছাড়েন নি ও এইচ কবির। তার নিউ নেশানে ছাপা লেখাটা তাই বলছে।

ভাবছি আবারো যোগাযোগ শুরু করবো কিনা, এই সরকারের ঘুম কি ভাঙাতে পারবো? সরকার কি আসলে ঘুমায়, নাকি জেগে ঘুমায় সেটাও বিরাট একটা প্রশ্ন। বাংলাদেশকে নিজেদের সম্পদ নিজেদের কাজে ব্যবহার করার মতো শক্তি পেতে আর কতযুগ অপেক্ষা করতে হবে? বলিভিয়ার মতো একজন Evo Morales কবে আরোহন করবে বাংলাদেশের সিংহাসনে?

এটি কোন রূপকথা নয়, একটি জ্ঞানী পোষ্ট

ইহা একটি গিয়ানী পোষ্ট। একটি পরীক্ষামূলক রচনা। ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার মান উন্নত করিবার মানসে প্রচলিত প্রশ্ননির্ভর পরীক্ষাপদ্ধতি ভাঙ্গিয়া উত্তর দিয়া প্রশ্ন রচনার প্রয়াস এটি। এতে প্রশ্নপত্রের বদলে উত্তর দেয়া থাকবে। ছাত্রছাত্রীগন পরীক্ষার হলে উত্তর অধ্যয়ন করে প্রশ্ন নির্ধারন করিবে। এতে একে তো বাঁচিবে সময়, অন্যদিকে রোধ হইবে মেধার অপচয়। [উত্তরে সাধু চলিত ভাষার মিশ্রন রহিয়াছে, বানানভুল রহিয়াছে। নিজ দায়িত্বে পড়িয়া নিতে হইবে। উত্তরের প্রতিটা ভুল ধরাইবার জন্য ১ নম্বর করিয়া বোনাস যুক্ত হইবে। ]

উত্তর শুরুঃ
এক বলদ মাঠে ঘাস খাইয়া দিনাতিপাত করিতেছিল। তাহার কোন সঙ্গীসাথী ছিল না। একা একা চরিত আর আর মনের আনন্দে হাম্বা হাম্বা করিত। মাঠের পাশে একটা জঙ্গলে একটা হরিনী বাস করতো। হরিনীটা প্রান্তরের ওপাশের জঙ্গলের এক হরিনকে ভালোবাসতো। কিন্তু অতদুরে একা যাবার সাহস তার নাই। প্রান্তরে ভুতের ভয় আছে। সে দুর থেকে হরিনকে ডাক দিত, হরিনও তাকে প্রত্যুত্তর করিত। কিন্তু হরিনেরও সাহস হয় না বিশাল প্রান্তর পেরিয়ে হরিনীর কাছে যেতে। তবে প্রেম কি এসব মানে?

হরিনী মরিয়া হয়ে একদিন জঙ্গলের প্রান্তে এসে গেল। দেখলো সেখানে চরছে একটা বলদ। মিস্টি সুরে ডাক দিল বলদকে। বলদ এত মিষ্টি সুরে জীবনে কখনো ডাক পায়নি। সুর শুনে গলে গিয়ে মাঠে শুয়ে পড়লো সে। কিন্তু কান খাড়া করে আবার শুনলো ডাক। এত মিষ্টি শুয়েই থাকতে ইচ্ছে হয়। চোখ বুঝে হরিনীর মিষ্টি ডাক উপভোগ করতে থাকে বলদ। দিন যায়। বলদের মুগ্ধতা বাড়ে। একদিন হঠাৎ চোখ মেলে দেখে ফেললো বনের ধারে দাঁড়ানো হরিনীকে। দেখামাত্র প্রেমে পড়ে গেল।

এই হরিনী মিষ্টি সুরে তাকে ডাকছে সেও নিশ্চয়ই তার প্রেমে পড়ে গেছে। আহা, কঠিন প্রেমের সুখে বুক ফেটে যায় যায় বলদের। সে মিষ্টি সুরে ডাকলো হরিনীকে। এভাবে দুজনের ভাব হয়ে গেল। বলদ নিজেকে বলদ সমাজ থেকে উন্নত ভাবতে শুরু করলো। সে চাইল হরিন সমাজে প্রবেশ করতে। হরিন সমাজে বলদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু হরিনী তো আছে। সেই তাকে বলদ সমাজ থেকে হরিন সমাজে নিয়ে যাবে। সে তো বলদকে প্রান দিয়ে ভালবাসে। বলদ আশায় আশায় থাকে।

একদিন হরিনী প্রস্তাব দিল চল আমরা দুজনে একসাথে প্রান্তর পাড়ি দেই। এরকম অপ্রত্যাশিত ডেটিং অফার বলদকে এমন পুলকিত করলো যে সে আকাশের মরা চাঁদের পানে চেয়ে দুলাইন কবিতাই রচনা করে ফেললো তাৎক্ষনিক। ভাবলো মাঠে চরতে চরতে তার প্রিয়তমা হরিনীকে শোনাবে কবিতা খানা।

পরদিন দুজনে একসাথে মাঠে চরতে চরতে দুপুর নাগাদ মাঝমাঠ পেরিয়ে প্রান্তরের ওপাশে পৌছে গেছে। প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে বলদ আরো ডজনখানেক গান গেয়ে শোনালো হরিনীকে। হরিনীও তার হরিনের জন্য সঞ্চিত কবিতা আর গানগুলো গেয়ে শোনালো। দুজনে সুখের সাগরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বিকেলের মধ্যে প্রান্তরের শেষ মাথায় পৌছে গেছে। হরিনী ভাবলো ওইতো দেখা যায় তার প্রিয় হরিনের বাসস্থান। অধীর আগ্রহে যেখানে অপেক্ষায় আছে হরিন। বলদ ভাবলো আজকে আমার স্বপ্নপুরন হলো।

বলদ তার শেষ গানটা সূর্যাস্তের সময় শোনাবার জন্য রেখে দিয়েছে। আজ তার প্রেম পূর্ন হবে। কানায় কানায় পূর্ন হয়ে বলদ জীবন থেকে হরিন জীবনে প্রবেশ করবে। রীতিমতো রোমাঞ্চিত বলদ। ওদিকে প্রান্তরের এইদিকে আসার পর থেকে হরিনীর গান থেমে গেছে। কেমন উদাস হয়ে গেছে। বলদের কথা শুনতেই পাচ্ছে না যেন সে। বলদ ভাবছে অধিক আবেগের কারনে এমন চুপ হয়ে গেছে। বাকরূদ্ধ হওয়ার মতোই তো প্রেম। তার চোখ দিয়েও প্রেমাশ্রু টলটল করছে। আজ তার মহামিলন। আরেকটু মাত্র।

হরিনী প্রান্তরের শেষ প্রান্তে পৌছে বলদকে বললো, "অনেক হাঁটা হয়েছে তুমি একটু রেষ্ট নিয়ে নাও। আমি জঙ্গলের ভেতরটা দেখে আসি কোন শিয়াল টিয়াল আছে কিনা। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। এখুনি ফিরবো।"

বলদ একটু অবাক হলেও বলার কিছু নাই। সে শুয়ে পড়লো ঘাসের উপর। ক্লান্তি লাগছে সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতে। ঘুম ঘুমও লাগছে। একসময় ঘুমিয়েই পড়লো। ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে। বলদ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে খুজলো হরিনীকে। চিৎকার করে ডাকলো। কোন সাড়া নেই। জঙ্গলের ভেতর অন্ধকার, সে ঢুকতে ভয় পেল।

সকালের সোনা রোদ এসে পড়লো তার গায়ে। একটা দোয়েল পাখি তিরিক্ষি সুরে ডেকে উঠলো। বলদের মনে হলো পাখিটা বলছে, বলদিয়া..বলদিয়া...বলদিয়া। মানে বলদ চিরকালই বলদ, বলদ কখনো হরিন হতে পারে না। তার দুচোখ বেয়ে দরদর করে পানি ঝরতে লাগলো। সে বুঝলো হরিনী তাকে ফাঁকি দিয়েছে, মহাফাঁকি। খুব দেরীতে বুঝলো বেচারা বলদ।

[উত্তর শেষ]

এবার সঠিক প্রশ্নে টিক চিহ্ন দিন। এটি নিন্মের কোন ভাব সম্প্রসারনের উত্তর ছিল?:
----------------------------------------------------------------------------------
১. ঘুমিয়ে আছে বলদ গরু সব পুরুষের অন্তরে

২. কোথায় বলদ, কোথায় প্রান্তর কে বলে তা বহুদুর
মানুষের মাঝেই আছে বলদ মানুষেতেই সুরাসুর।

আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে পড়েছে

বিবাহিত মানুষদের রোমান্টিকতা নিয়ে লেখা বিপদজনক। রবীন্দ্রনাথের মতো সাহসী পুরুষ বাংলাদেশে কজনকে পাওয়া যাবে? ৮০ বছর বয়সে লেখা কবিতা পড়ে বোঝার উপায় নেই এটি কোন বয়সে লেখা। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতাগুলোর স্থান ও সময় লিখে রাখতেন। নইলে বয়স বোঝা মুশকিল হয়ে যেতো। আমি বহুদিন কবিতা পড়ি না। আবৃত্তি করিনা আরো অনেক বছর।

কম বয়সে দুজন কবি সবচেয়ে বেশী নাড়া দিত। জীবননান্দ ও রবীন্দ্রনাথ। বেশীরভাগ বাঙালীর কাছে এই দুজনের জনপ্রিয়তা পর্বতসম। যদিও জীবনান্দের চেয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা বেশী পড়া, তবু জীবনানন্দের নামটা আগে আসার কারন তাঁর কবিতার প্রাত্যাহিকতা। প্রতিদিন যেমন সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে, তেমনি জীবনানন্দের কবিতাও ছিল প্রতিদিন। জীবননান্দের কবিতা হাটে মাঠে যেভাবে জোরে আওড়েছি, রবিঠাকুরেরটা তেমন হয়নি শুধু অন্তরেই মাধুরী সঞ্চার করেছে।

আবার কারো কারো কবিতার একটি লাইনের কারনে জীবনের পুরো দর্শন বদলে যেতে পারে। সুধীনদত্ত যখন হাঁক দিয়ে বলেন "সে ভুলে ভুলুক কোটি মন্বন্তরে আমি ভুলিবনা, আমি কভু ভুলিবনা"। ভালবাসা তখন স্তব্ধ পুকুর বুকের ভেতর। তাকে না পেলেও আমার ভালবাসা নিস্ফল হয়ে যায় না।

ছেলেবেলা থেকে রোমান্টিক আবহাওয়ার পরশে থেকে স্বপ্ন ছিল প্রেম করে বিয়ে করবো। বাংলা সিনেমার প্রেমকাহিনীগুলো সেই বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করে তোলে। প্রেম ছাড়া জীবনই বৃথা। হেথায় হোথায় প্রেমের অনেক বাগান দেখি, আমার গোলাপ কই? কেউ তো আমার প্রেমে পড়ে না। আমি অনেকের প্রেমে পড়লেও প্রেম তাই আমার উপর এসে পড়েনি। বহুবছর পর প্রেম নিয়ে মনের মতো একটা গান শুনেছিলাম 'ব্যাচেলর' ছবিতে। "আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে পড়েছে।" ভাগ্য কাহাকে বলে। প্রথম শুনে মনে হয়েছিল আমার প্রেম ভাগ্যকে হিংসে করে লেখা।

৩৩ বছর কেটে গেল কেউ কথা রাখেনি। যে রাখতে পারতো সেও রাখে নি। কেন রাখেনি সে জানে। ২৮ বছর বয়সে পাড়ি জমালো অন্য ঘরে। আমার কেউ রইলো না। এক দিকে ভালোই হলো। প্রেমের জন্য গদ্য পদ্য লিখে সময় নষ্ট করার অবকাশ হয়নি। তারচেয়ে বিরহের কবিতা অনেক রোমান্টিক। হারানোর বেদনাও। পেয়ে গেলে এই বেদনা, এই না পাওয়া প্রেমের জন্য হাহুতাশ কোথায় থাকতো। বিরহকাতরতাই সৃজনশীলতার আতুড়ঘর।

৩৪ বছর বয়সে প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করে নিরুপায় প্রেমহীন বিয়ে করতে হলো অনাঘ্রাত এক গোলাপের সাথে। সরাসরি বিয়ে নয়। বাগদানের পরবর্তী প্রবেশন পিরিয়ড ছিল তিন মাস। ভেবেছি সেই তিনমাস অপূর্ব সুযোগ। মোবাইল ফোনের যুগে রাত কেটে ভোর হয়ে যায় সাশ্রয়ী টকটাইমের বন্যায়। রাত প্রতি দুঘন্টা হলেও কম কি। কিন্তু গোলাপফুল তাতে নিতান্ত অনাগ্রহী। সামনে পরীক্ষা তার। জীবন গড়তে ভালোবাসার চেয়েও ভালো রেজাল্টের জন্য সাধনা করা জরুরী। প্রেমচিন্তা মাঠে মারা যায় যায়। প্রেম দুরে থাক ফোনাফুনির উপরও অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হয় গোলাপের পক্ষ থেকে। বেকার মালী ঘোড়ার ঘাস কেটেই সময় পার করে।

হঠাৎ কোন এক শারদ সন্ধ্যায় পরীক্ষার এক ফাঁকে গোলাপের হঠাৎ সাধ হয় ফোন করে কথা বলার। গোলাপের ফোন মালীকে আগ্রহী করলেও প্রতিশোধমনষ্কতায় নিতান্ত রূঢ়ভাবে লাইনটা কেটে দেয়া হয়। একবার দুইবার তিনবার। এবার গোলাপের নাভিশ্বাস ওঠে। দুশ্চিন্তায় পরীক্ষা লাটে ওঠে। কথা বলতেই হবে। কী কথা? কিছু না। শুধু কথা। গোলাপের আবদার একটি মাত্র ঘন্টার।

নিরস গোলাপের এহেন আবদারে মালী দারুন অবাক। প্রেমহীন বাগানে ফুটলো কি অজানা ফুল? তিন পায়ে দৌড় দিয়ে হাজির হলো গোলাপের আবাসে। প্রথম একা থাকা সেই নিষিদ্ধ একটা ঘন্টা ঘটিয়ে দিল একটা ব্যাপার। জীবনে কোন বিপরীত মানুষের হাতে হাত রাখা হলো। নিরস হবু দম্পতির রোমান্টিকতার প্রথম পর্বের ফুল। সুযোগের অপেক্ষায় প্রেমহীন কেটেছিল যে দুটি মানবজীবনের। তবে প্রায় রেডিমেড প্রেমে না ছিল হারানোর ভয়, না ছিল ধরা পড়ার আতংক। সহজলভ্যতায় কী রোমান্টিকতা পরিপূর্নতা পায়? পায় না।

তবু একসময় ঘর হয়। ঘরোয়া আধো আধো রোমাঞ্চে দিন কাটে। ভালোবাসার খোঁজে অন্য কোথাও যাওয়া হয় না ঠিকই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ প্রেরনা হয়ে যায় সময় সময়। কারো সাথে একটু দুরের দৃষ্টি বিনিময় নিষিদ্ধ অনুভুতির জোয়ার জাগায়। প্রিয় এক তরুন সহব্লগার বলে - পরকীয়া। দুঃসাহসী ব্যাপার। আমার এখন সেসব মানায়? দুচ্ছাই! তারপর?

অনেক বছর পরে আমি খোঁজ পেয়েছি নতুন প্রেমের। নতুন প্রেমের পরশ নিতে প্রতিটি দিন অফিস করে বাসায় ফিরি। ভালোবাসার ঢালি নিয়ে অপেক্ষাতে কান পেতে রয় কলিং বেলের। এতদিনে পুর্ন হলো বহুযুগের অনাহারী একটি জীবন। কন্যা আমার তিন বছরের। দরজা খুলেই বুকের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সদা সবাক মেয়ে আমার কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রয় ছোট্ট দুহাত গলার মালা। এত আদর এতযে প্রেম তিনশো বছর ভালোবেসে শেষ হবে না অশেষ এ টান। প্রতীক্ষাটা শেষ হলো আজ চার দশকের অবসানে। প্রেমে প্রেমে কানায় কানায় পূর্ন হলো আমার জীবন।

আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে পড়েছে! নাকি?

না পদ্য না গদ্য.........

একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়............................

একদিন সবকিছু ফুরিয়ে যায় অনিবার্যভাবেই। সময়ের প্রয়োজনেই। এটা নিয়ে কোন দুঃখ করা সাজে না। কোন আক্ষেপ মানায় না। মানব জীবনেও ঋতুর তারতম্য ঘটে। সেই ঋতুর সুত্র ধরে ধরেই একেকটা বিবর্তন ঘটে যায়। কিছু বিবর্তনে মানুষ টিকে থাকে, কিছু বিবর্তনে হয় নিঃশেষ।

সময় বয়ে গেছে সেই বহুকাল আগে। তবু এখনো অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাকতৃষ্ণা। আমাদের আনন্দ আছে বুকের গভীরে, তৃপ্তি আছে সুখের সাগরে। আমরা সেই আনন্দ সাগরে স্নান করি যখন খুশী। যতদিন আমাদের সুখের আয়ু, ততদিন এই স্রোত বহমান। এক হাসিতে সাত দিন, অধরা মানুষ ঘটনাবিহীন।

সময়েরও আগের কথা। সুবর্ণ রথে চড়ে একদিন ভেসে এসেছিল সুদিনের সংবাদ। যার আসার কথা নয়, তার একটু কথার সুর ফিরে তাকিয়েছিল।
..................................................
যাহা বলো তাহা
তবু তুমি আহা
ফেরাতে পারিনা চোখ
তুমি আমার অনন্ত অসুখ
............................
কিছু কথা ছিল বাকী, কিছু ব্যথা দিল ফাঁকি
কিছু হাসি চুপ করে ছিল লুকিয়ে
সেই চোখ, সেই নাক, সেই ওষ্ঠাধার
চেনা চুলের ভাঁজ
এখনো এখনো ঢেউ তোলে বয়ে যাওয়া ধান খেতে
রাখাল বাজায় বাঁশী, গরুর পাল লয়ে যায় ফিরে
গোধুলী বেলায় এসে শুনতে কী পাও?
....................


বিকেলবেলার বারান্দাটির কথা মনে পড়ে। এক ফালি সেই বারান্দায় কয়েকটি ফুলের টব। সেই টবে সবুজ লতানো গাছগুলো বেড়ে উঠতো, ফুলেরা হেসে উঠতো, পাতাবাহারের ঝোঁপ থেকে ভেসে আসতো মাটির গন্ধ। সেখানে ছিল একটি চেয়ার। একজন আসলে সোজা বারান্দায় চলে যেতো। সেই চেয়ারে বসার কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বারান্দার দরোজায় দাঁড়াতো। তারপর গাছেদের মাঝখানে রেখে কথা বলতো সেই প্রিয়ংবদা। গাছের কথা, পাতার কথা, ফুলের কথা, ফলের কথা, কথার কথা চলতে চলতে সন্ধ্যা হয়ে যেতো। ঘরে বাতি জ্বলে উঠলে ওরাও উঠতো। চায়ের টেবিলে আবারো বসা হতো। চা খেতে খেতে আরো কথা। শুধু কথার কথা। ছিল না কোন অর্থ। তবু সেই অন্য কথার মধ্যে কোন বার্তা আসা যাওয়া করতো কিনা সেটা অন্তর্যামী ছাড়া কারো জানার কথা না। সেই কথার কথা দিনগুলো ফুরিয়ে গেল একদিন। বন্ধ হলো আসা যাওয়া। পথের ধারে ছিল না কোন প্রতীক্ষা। গন্তব্য হয়ে গেল আলাদা পথে। একদিন.....অনেকদিন পর একদিন মহাশূন্যে নীহারিকার কক্ষপথে দেখা হয়ে গেল আবার। তখন আর বারান্দা নেই, ফুলের গাছ নেই, গাছের পাতা নেই, আছে দুই নীহারিকার দুই নক্ষত্র। তখন সব ভয় দূরে সরে গেছে। সব দ্বিধা পিছু হটেছে। তখন ওরা মহাবিশ্বের সাক্ষ্যে নিজেদের উন্মোচিত করে। কথাগুলো এবার অর্থপূর্ণ হয়। স্মৃতির বাগানে ছড়ানো বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলো জোড়া লাগে। বাক্যগুলো সুসংহত হয়। তারপর.....তারপর খুব দেরীতে হলেও একটি অনুপম কবিতার জন্ম হয়।
....................................................................................................................................

   ওই হাসিটা কেবল প্রিয়তমার মুখেই মানায়: ওই একটি হাসিতে পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর প্রেম:  আর কিছু পাওয়া না হলেও কোন ক্ষতি নেই জেনো:  কেবল হাসিটি বেঁচে থাকুক অনন্ত স্মৃতিতে 

.............................

সবই কথার কথা, তবু কথারা বেঁচে আছে, একদিন যেমন দমবন্ধ ঘরে আটকে ছিল, এখন তা খোলা হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়।

[দিন বদলের সাথে শব্দ বাক্য তাল লয় সব বদলে যায়]