Sunday, August 30, 2009

জামাত শিবিরের সম্প্রসারন পদ্ধতি ও আমাদের হঠাৎ মুসলমানগন

'হঠাৎ মুসলমান' বলে একটা কথা ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদাকে বিতর্কিত করেছিল সংসদে। জামাত শিবির নিয়ে লিখতে গিয়ে এই শব্দটা মাথায় এলো। আমি কঠিনভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশে জামাতের প্রসারের অন্যতম কারন এই 'হঠাৎ মুসলমান'গন। নীচে দুটো সাধারন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরন দিলাম-

এক.
আমার প্রতিবেশী একটি পরিবার। জীবনে কোনদিন ধর্মের ধার দিয়েও ছিল না। আমোদ ফুর্তিতে দিনযাপন করতো। নারীপুরুষ নির্বিশেষে হৈ হুল্লোড়ে থৈ থৈ করতো যে কোন উৎসব পার্বনে। একদিন ওই বাসায় এক লজিং মাষ্টার প্রবেশ করলো। তার কদিন পর লজিং মাষ্টারের সুত্র ধরে এক বোরকাওয়ালীর প্রবেশ ঘটলো। এর কয়েকদিন পর ওই বাসা থেকে দুজন তিনজন করে বোরকাওয়ালী বের হতে লাগলো। একদিন পুরো বাসাটাই ঢেকে গেল বোরকায়। কারন কি? কারন ওই বাসায় যে লজিং মাস্টারের আগমন ঘটেছিল তিনি মওদুদীর ভাবশিষ্য। লজিং মাষ্টার ছাত্রছাত্রীদের মাথা খাবার পর বোরকাওয়ালীকে দিয়ে বাচ্চাদের মার মাথাও খেয়ে নিয়েছে অবলীলায়। ধর্মহীন ওই পরিবারে সেই মাষ্টারমশাই প্রথম ধর্মের বাতি জালিয়েছিলেন। এবং মওদুদীর জ্বালানীতেই সেই বাতি জ্বলেছিল। প্রতিবেশী পরিবার শীঘ্রই ইসলামের নামে মওদুদীবাদের ভক্ত হয়ে অতীত উচ্ছৃংখলতার পাপমোচনের চেষ্টা করে। কঠিন জামাতী পরিবারে পরিনত হয় শীঘ্রি। এই পরিবার থেকে জামাত শিবির বাদে অন্য কিছু বের হবার সম্ভাবনা কি আছে?

দুই.

আরেক ঘনিষ্ট এক বন্ধুর পরিবার। বন্ধু জামাত পছন্দ করে না। কিন্তু জিয়ার আদর্শের প্রতি দুর্বলতা আছে। তবে সরাসরি রাজনীতি করে না। পরিবারে রাজনীতির কোন ব্যাপার নেই। ভাইবোন সব আধুনিক। কিন্তু ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্ধুর বাসায় এক বোরকাওয়ালী প্রতিবেশিনীর আগমন ঘটে। বন্ধুকে আমি সাবধান করি। বোরকাওয়ালী জামাতী মহিলা। কিন্তু বন্ধু হাসে, বলে মহিলা রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে না। মাকে ধর্ম নিয়ে পাঠ দেয়। কোরান শেখায়। আমি তবু আস্বস্ত হতে পারি না। কিছুদিন পর বন্ধুর আধুনিকা মাকে কালো বোরকায় চক্ষুকর্ন আচ্ছাদিত দেখে বুঝলাম রক্ষা হলো না। বন্ধু তরল কন্ঠে বললো 'বাসায় এখন ধর্মকর্ম ভালোই হয়। ওই খালাম্মা সবাইকে ট্রেনিং দিয়েছে। ভালো হয়ে যেতে পয়সা লাগে না। তোর বাসায়ও যাবে।'

আমি বন্ধুর কথা শুনে হিম হয়ে গেলাম। আমার বাসায়ও গিয়েছিল দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে। কিন্তু আমার বাসায় আগেই দ্বীনের বাপ বসা ছিল বলে সুবিধা করতে পারেনি। তবে আমার বাসায় না পারলে কি হবে। আর তিন বন্ধুর বাসায় সাফল্যের মুখ দেখলো জামাতি মহিলা। তবে ওই তিন বাসায় জামাতি মহিলা নিজে যায় নি। প্রথম বন্ধুর মাকে ট্রেনিং দিয়ে পাঠিয়ে কাজটা আরো সহজে করেছে। একটা লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো ওই তিন বন্ধুর পরিবারও জিয়ার আদর্শে দুর্বল ছিল। ভোট দেয় ধানের শীষে। তখন জোট সরকার ক্ষমতায় বলে ওরা জামাতকে বাইরের মনে করতো না। এভাবেই দাড়িপাল্লা ধানের শীষের জায়গায় বসে গেল।

এরকম আরো অনেক উদাহরন আছে। বাংলাদেশে জামাত শিবিরের সম্প্রসারন হবার বহুল প্রচলিত পদ্ধতির অন্যতম এগুলো। জামাত বাংলাদেশে নানা রূপে নানা কায়দায় ছড়াচ্ছে। রাজনীতির ময়দানে জামাতের উচ্চকন্ঠ তেমন শোনা না গেলেও ঘরে ঘরে এই কাজগুলো করে যাচ্ছে নিরুপদ্রপভাবে। ওই তথাকথিত ধর্মভীরু(আসলে অধার্মিক/বকধার্মিক) মানুষগুলোর প্রশ্রয়ে গোকুলে বেড়ে উঠেছে ভাইরাস জামায়াত ও শিবির।

বাংলাদেশে আইন করে জামাতের মতো দলগুলোর সম্প্রসারন রোধ করা যাবে না। কারন এরা পরজীবি ও সংক্রামক। এদের প্রবৃদ্ধি রোধ করতে হলে, এদের নির্মূল করতে হলে মানুষকেই সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশের সাধারন পরিবারগুলো যদি সচেতন হতো এই ভাইরাসগুলোর স্পর্শ বাচিয়ে চলতে পারতো। যদি বুঝতো জামাত ও ধর্ম দুটো জিনিস ভিন্ন। তাহলে বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের শেকড় উপড়ে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া কোন ব্যাপার হতো না।

No comments: