Saturday, January 15, 2022

অড্রে হেপবার্নের অপেক্ষা

একটি টেলিফোন বেজে ওঠার মধ্য দিয়ে ঘটনার সুত্রপাত। সকাল সাড়ে সাতটায় টেলিফোনটা বেজে উঠেছিল আমার টেবিলে। খুব অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল, যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসা একটি নারীকন্ঠ। কী আশ্চর্য আমাকে এই সাত সকালে কে টেলিফোন করে? পরিচয় পেয়ে আমি চমকে উঠি। অন্তত আমার কাছে ওর কাছ থেকে ফোন আসার কথা নয়। অফিস কলিগ পরিচয়ের নারীকন্ঠটি বলছে, আমার সাথে জরুরী আলাপ আছে। এখনি দেখা করতে চায়। কোথায়, কেন? প্রশ্ন জেগে ওঠে। দ্বিধা নিয়ে আমি রাজী হলাম। এমন কী ব্যাপার? আমার সাথে কী কথা অড্রে হেপবার্নের? 

.....................................................................................................................

যে কৃষ্ণচুড়া গাছটার নীচে অড্রে হেপবার্ন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, সেটি এখনো আছে। আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। রাস্তা বড় করা হলেও গাছটা কাটা পড়েনি। মাত্র তেইশ বছর আগের কথা। সেবার খুব বন্যা হয়েছিল। ৯৮ সালের বন্যায় ঢাকার রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রামের আকাশও জলভরা মেঘে পরিপূর্ণ ছিল। সে যেখানে দাঁড়িয়েছিল  বৃষ্টি এলে আশ্রয় নেবার কোন জায়গা ছিল না সেখানে। কৃষ্ণচুড়া গাছটি কেবল ছায়া দিতে পারতো, ছাতার আশ্রয় দিতে পারতো না। ভাগ্যিস বৃষ্টি সেদিন বিরতি নিয়েছিল কিছুটা সময়। লোকচক্ষু এড়িয়ে একা একটা মেয়ের পক্ষে রাস্তার পাশে  দীর্ঘ ৯০ মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সহজ কথা ছিল না। বিশেষ করে অড্রে হেপবার্নের জন্য বিষয়টা প্রাণঘাতী ছিল। তবু সে স্থির সিদ্ধান্তে অপেক্ষা করাই স্থির করেছিল। কারণ আমি ওকে বলেছিলাম 'কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি আমি'। কিছুক্ষণ বলতে কতটা সময় কেউ জানে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে আমার কিছুক্ষণের মেয়াদ ৯০ মিনিটের বদলে ৯ মিনিটে নেমে আসতো যদি জানতাম সে কেন আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। প্রথমত অড্রে হেপবার্ন আমার সাথে জরুরী কথা আছে বলে যখন ফোন করেছে, তখন যে বিস্ময়ের ঘোর লেগেছিল সেটা কাটিয়ে ওঠা সহজ ছিল না। আমার সাথে কখনো কেউ এমন জরুরী ডাক দিয়ে দেখা করতে চায়নি। জরুরী ডাকের কারণটা জানার আগে অড্রে হেপবার্নের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

বই আছে, সময় নেই

কত কত বই জমে আছে! এত বই পড়ার সময় কই? সীমিত আয়ুষ্কালে এতসব বই কী পড়া শেষ করা যাবে? পড়তে পড়তে প্রায়ই এই দুশ্চিন্তাটা মাথাচাড়া দেয় পড়ুয়াদের। বিশেষ করে সেই পড়ুয়া যারা 'বেঁচে থাকার জন্য পড়ে' কিংবা 'পড়ার জন্য বেঁচে আছে'। পড়াশোনা ব্যাপারটা তাদের কাছে বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মতো। বইয়ের কাছে না থাকলে এরা রীতিমত হাঁসফাস করে। 


সময় কম, বই বেশী। কম সময়ে বেশী বই পড়ে এগিয়ে থাকার যুদ্ধে চাপটা এসে পড়ে দৃষ্টিশক্তির উপর।  লক্ষ্য যদি হয় বেশীদিন পড়া, তাহলে চোখকে বাঁচাতে হবে। অন্য যেসব কাজে আমাদের চোখ ব্যবহার করতে হয় সেসব কাজ কমিয়ে বইয়ের খাতে বেশী বরাদ্দ রাখতে হবে। সেটা কী আদৌ সম্ভব?  ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের চোখ গড়ে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকে ঘুমের জন্য। কমপক্ষে ৮ ঘন্টা জীবিকার কাজে লাগে। বাকী থাকে ৮ ঘন্টা। এই ৮ ঘন্টার মধ্যে স্নাহাহার, যাতায়াত এসবে ৪ ঘন্টা (ঢাকা শহরে যাতায়াত বাবদ আরো বেশী খরচ হয়)। বাকী থাকলো ৪ ঘন্টা। এই চারঘন্টা ভাগাভাগি করতে হবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অতিথি, আড্ডা, ফেসবুকসহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদির মধ্যে। সবাইকে সময় দিতে গেলে বই পড়ার জন্য দৈনিক আধঘন্টা সময়ও কি মিলবে? গাণিতিক হিসেবে বই পড়ার জন্য কোন সময় খুঁজে পাওয়া যায় না।