Saturday, May 31, 2014

এক বৃষ্টি দিনের চড়ুইভাতি

সকালের বৃষ্টির ঝাঁঝালো শব্দ ছাপিয়ে টিঁউটিঁউ করে একটা কোলাহলময় মিষ্টি শব্দ কানে এলো। শব্দটা তেমন জোরালো না। একটু খেয়াল করে শুনলেই বোঝা যাচ্ছে। শব্দের উৎস খুঁজতে জানালার দিকে চোখ গেলে দেখলাম একজোড়া চড়ুই কার্নিশের আড়ালে বসে পালকের পানি ঝাড়ছে তিরতির করে। আমি জানালার এপাশে। ওরা নীলচে কাঁচের আড়ালে আমাকে দেখতে না পেলেও আমি ওদের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পাখির জগত প্রায় সবসময় জুটিময়। তবে হলিউডের অ্যাকশান মুভিতে যেমন পুরুষের পাশে জোর করে একটা নারী চরিত্রকে বসিয়ে দেয়া হয় সেরকম আরোপিত কিছু না। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ওরা পাশাপাশি থাকে।

পাশাপাশি থাকলেও ওরা কি একই জুটি কিনা সেটা নিশ্চিত হতে পারি না। মানুষের চোখে সব চড়ুই একই চেহারার। কোনটি কার জুটি তা বোঝা মুশকিল। ওরা কি নিজেদের জুটি চিনতে পারে? পারে নিশ্চয়ই। নইলে অনাচার দুরাচারে ভরে যেতো পক্ষী সমাজ। পাখি সমাজে বিয়ের প্রচলন নেই। মানুষ ছাড়া আর কারো বিয়েশাদীর ঝামেলাও নেই। যে যার মতো জুটি পছন্দ করে। তবু কোথাও অনাচার অজাচার নেই। পশুপাখি সমাজ মানব সমাজের চেয়ে অনেক বেশী গোছানো আর নিয়ন্ত্রিত। বলা হয়, মানুষকে সভ্য নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন যাপনে বাধ্য করার জন্য বিবাহ প্রথার প্রচলন হয়েছিল আদিযুগে। আসলেই কি তাই? মানুষকে তাহলে সৃষ্টি সেরা জীব বলা যায় কিসের যুক্তিতে। যে মানুষ বিয়ের শৃংখলে না থাকলে অসভ্য হয়ে যায়, সেই মানুষ কি করে সেরা প্রাণী হলো? কেন হলো? জ্ঞান বুদ্ধি বিবেকের পাল্লা ভারী বলে? সব জ্ঞানবুদ্ধি কি মঙ্গলময় কাজে লাগানো হয়? নাহ, মানুষকে আমি ঠিক শ্রেষ্ঠত্বের পাল্লায় ফেলতে পারি না।

কিচির মিচির শব্দের ধাক্কায় আমি ভাবুক জগত থেকে বাস্তবে এলাম। পাখি দুটোর মধ্যে কি একটা বিষয়ে যেন তর্ক চলছে। পুরুষ পাখিটা কিছু একটা বোঝাতে চাইছে, কিন্তু নারী পাখিটা মাথা নেড়ে আপত্তি জানাচ্ছে। পুরুষটা আবার একটু পেছনে ফিরে জানালার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ভেতরে। সে মনে হয় বলতে চাইছে, ওই ফোকরে ঢুকে বসি, ওদিকে বৃষ্টি লাগবে না গায়ে। কিন্তু নারী পাখিটা অধিক সতর্ক। সে বলে-
-মানুষগুলারে একটা খুদের বিশ্বাসও নাই।
-ক্যান? বিশ্বাস নাই ক্যান? কোনদিন দেখছো কোন মানুষ চড়ুই শিকার করছে?
-ঐ তুই আমাত্তে বেশী বুঝস? দুনিয়ার হালচাল কি বুঝস তুই, অ্যাঁ, কি বুঝস? আছিস তো খালি ঘুরে ঘুরে এ-ডাল ও-ডাল টাংকি মারার তালে
-ঐ চুপ কর!! একদম ফালতু বাত করবি না। তোর বাসার জন্য সেদিন খড়ের টুকরা, ঘাসের ডগা, গাছের ডাল, একটা আম পাতা, দুইটা নিমপাতা, তিনটা ম্যাচের টুকরা এসব কে যোগাড় করলো অ্যাঁ?
-যা ব্যাটা ওগুলা কোন কাজের কাজ হইলো নিকি? ঘর বানাই আমি, ডিম পাড়ি আমি, বাচ্চা ফুটাই আমি, দুনিয়ার সব কাজ আমারে করতে হয়, দেখা তো দেখি একটা ডিম পেড়ে একদিন!!

এখানে এসে পুরুষ পাখিটা হার মেনে যায়। ভালো করেই জানে হাজার পরিশ্রম করলেও সে কোনদিন ডিম পেরে দেখাতে পারবে না। ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে সামনের গাছের মগডালে গিয়ে বসে। পেছন পেছন গরবিনী মেয়ে চড়ুইটিও উড়ে গিয়ে বসে। এবার মনে হয় একটু আপোষ হয়েছে। দুজনে কিছু শলা পরামর্শ করছে ফিসফিসিয়ে। কথা শোনা যাচ্ছে না কিন্তু ঠোঁট নড়ছে সমানে।

আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালা থেকে ঘরের ভেতরে চোখ ফেরালাম। টেবিলের উপর একটা খাম রাখা। খামের ভিতর একটা চিঠি। খানিক আগে চিঠিটা পড়ে মন উদাস হয়ে আছে।
আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য একটি আন্তর্জাতিক চড়ুইভাতি থেকে আমার নামটা বাদ যাবার জন্য দুঃখিত পত্র। অথচ এই ভ্রমণের জন্য আমি গত তিন মাস যাবত প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কত কি কেনাকাটাও করলাম। আমার নামটা ছিল ২১ নাম্বারে। আমি বাদে বাকী ২০ জন সুযোগ পেল। বলা হয়েছে সর্বশেষজনকে বাদ দিতে হলো বাজেট সংকোচনের কারণে।

আসল ঘটনা অন্য। এই চিঠি তেমন সমস্যা না, কিন্তু আসল সমস্যার চিঠি এখনো আসেনি। আসবে আগামী সপ্তাহে। আমার চাকরীর আয়ু বড়জোর আর এক মাস। পত্রিকায় খুব গোপনে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে অসদাচরণের অভিযোগে আমাকে অব্যাহতি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অপ্রকাশিত অসদাচরণটি হলো পরিচালক-যোগাযোগ মহোদয় এক শিক্ষানবীশ তরুণীকে তার কক্ষে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেবার পর আমার কাছে খবর আসলে আমি তার দরোজায় গিয়ে প্রচণ্ড এক লাথিতে লকটা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। আমার লাথির প্রমাণ দরোজায় জ্বলজ্বল করলেও তার অনৈতিক প্রস্তাবটির কোন বাস্তব স্বাক্ষী প্রমাণ নেই। তাই শাস্তির ব্যবস্থাটি আমার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিল।
তরুণীটি আমার পরিচিত কেউ না। আমার সাথে কখনো তার কথাও হয়নি।

কয়েক মিনিট ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। সর্বশেষ পত্রটি হাতে আসার আগে আমি নিজেই একটি বিচ্ছেদ পত্র লিখে জানালার পাশে দাঁড়ালাম। চড়ুইদুটোকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। বৃষ্টির জোর কমে গেছে। দূরে নদী মোহনা পাড়ি দিচ্ছে একটা জাহাজ। পাঁচ বছরের একটা বন্ধন এই একটি পত্র দিয়েই ছিন্ন হয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর পত্রটি যথাস্থানে জমা দিয়ে জমাট একটা ব্যথা বুকে বয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম নীচে। অফিসের পাশে একটা টং দোকানের ঝাঁপির নীচে গিয়ে দাঁড়ালাম। সামনের রাস্তায় জল জমে গেছে আধঘন্টার বৃষ্টিতেই। কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। বৃষ্টিটা কমে গেলে কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটবো। যখন কোন গন্তব্য থাকে না, তখন এলোমেলো হাঁটাই একমাত্র উপায়।

বৃষ্টি থামতে সময় লাগবে। ঘুরে দাঁড়িয়ে একটা চায়ের অর্ডার দিতে যাচ্ছিলাম, তখন পেছন থেকে একটা নারীকন্ঠ বলে উঠলো, দু'কাপ প্লীজ।

অবাক হয়ে দেখি নবনীতা। অফিসের সেই অপমানিত তরুণীটি। হাসিমুখে আমার হাতে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
-আপনি চলে যাচ্ছেন, এরপর আমার মাথায় ছাতা ধরবে কে? রিলিজ নিয়ে এলাম আমিও।

আশ্চর্য হবো কিনা ভাবতে ভাবতেই আমিও পাল্টা হেসে দিলাম। কোন কোন ঘটনায় খুব অপরিচিত মানুষও আপন হয়ে যেতে পারে। এবার নিজেকে আর একেবারে গন্তব্যহীন মনে হচ্ছে না।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আড়চোখে নবনীতার দিকে তাকালাম। আবারো হাসলো সে। এবারের হাসিটায় পরিষ্কার বন্ধুতার স্নিগ্ধতা। এত সুন্দর হাসি মেয়েটার, আগে কখনো খেয়াল করিনি। হঠাৎ মনে হলো, অন্ততঃ আজ দুপুরের জন্য দুজনের একটা চড়ুইভাতি করা যায় না? বংশালের শমসের আলীর ভূনা খিচুড়ী খাই না অনেক দিন।

চা শেষ করে নবনীতা বললো, বৃষ্টি থেমে গেছে, চলুন হাঁটতে শুরু করি।
নবনীতা কোথায় যাবে জানি না। কিন্তু আমি মনে মনে বংশালের পথে হাঁটতে থাকি। ভাবছি সামনের মোড়ে গিয়ে ওকে বলবো কথাটা।

মোড়ে পৌঁছে নবনীতা থমকে দাঁড়ালো। একটা খালি রিকশা দাঁড়ানো ওখানে। আমি কিছু বলার আগেই সে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো-
-এরকম দিনে খিচুড়ি হলে মন্দ হয় না। কী বলেন?
-হ্যাঁ আমিও তাই ভাবছিলাম। রিকশা নিলে দশ মিনিটে শমসের আলীর খিচুড়ির দোকানে পৌঁছে যেতে পারি কিন্তু।
-খুবই ভালো আইডিয়া। যান খেয়ে আসুন। এরকম দিনে খিচুড়ি মিস করা ঠিক হবে না। আমিও বাড়ি গিয়ে মাকে বলবো খিচুড়ি রাঁধতে। রিকশাটা আপনি নেবেন নাকি আমি?

আমি অপ্রত্যাশিত একটা ধাক্কার বুকভাঙ্গা স্বরে বললাম, রিকশাটা আপনিই নিয়ে যান।


৩১ মে ২০১৪, শনিবার

Sunday, May 25, 2014

ফেরারী দিন, ফিরে দেখা

হাজীপাড়ায় সেই বাড়িটার নাম ছিল সিরাজী মহল। বাসার এক তলায় আমাদের সদাশয় বাড়িওয়ালা বাস করতেন। তিনি নিতান্তই ভদ্রলোক। একসময় সিনেমায় অভিনয়ও করেছিলেন। নবাব সিরাজদৌলার যে সিনেমায় আনোয়ার হোসেন অভিনয় করে বাংলাদেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, সেই সিনেমায় তিনি গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ভদ্রলোকের নাম ছিল শাহ গোলাম আহমেদ। গেট দিয়ে  ঢুকতেই ওনার সদর দরজা। সেই দরজার পাশে একটা সাইনবোর্ড সর্বদা টাঙ্গানো। সাইনবোর্ডে লেখা - শাহ সাহেব বাড়িতে নেই

এরকম বিচিত্র সাইনবোর্ড আমরা আগে কখনো দেখিনি। আমাদের বাড়িতে আগত অতিথিরাও কখনো দেখেনি। তাই সবাই আসা যাওয়ার পথে সাইনবোর্ড পড়ে হাসতে  থাকে, কেউ কেউ সশব্দে উচ্চারণও করতো- শাহ সাহেব বাড়িতে নেই। ভদ্রলোকের পাওনাদারের সংখ্যা বেশী ছিল কিনা জানি না, কিন্তু তাঁর পাঁচ কন্যা আর এক পুত্রের কাণ্ড কিন্তু কম ছিল না।

দোতলা বাড়ির ছাদ আমাদের মাথার উপরই। একটা সুবিধা হলো, জামাকাপড় শুকানো যাবে ইচ্ছেমতো। কিন্তু বাড়িতে ওঠার একদিন পর বাসার এক অতিথি গোসল সেরে শাড়ি শুকাতে দেবার এক ঘন্টা পর তিনি কাপড় আনতে গেলে দেখেন তাঁর শাড়িটা নীচে লুটাচ্ছে। পাশে দাড়ানো বাড়িওয়ালার কন্যাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, এটা ওদের ছাদ, তাই এখানে অন্য কারো জামা কাপড় শুকাতে দেয়া নিষেধ। তখনো ওদের পরিবারের কারো সাথে পরিচয়ই ঘটেনি। শুধু বাড়িওয়ালাকে দেখেছি আমরা। বাকীদের সাথে পরিচয় হবার আগেই শুরু হলো ছাদ কাহিনী।

তখনো জানার অনেক কিছু বাকী ছিল। সন্ধ্যার সময় সামনের দোকানে চাল কিনতে গেলে দেখা হলো আমাদের স্কুলের হেডস্যারের সাথে। স্যার আমাকে দেখে অবাক। বললেন,তুমি এখানে কি করো? বললাম, আমি তো ওই বাসায় উঠেছি। সাথে সাথে স্যারের চোখ কপালে। তুমি? ওই বাড়িতে? কেমনে উঠলা? কখন উঠলা? কালকেও তো খালি দেখলাম।

আমি স্যারের কথার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারছিলাম না। এই বাসায় উঠলে সমস্যা কি?

স্যার তখন বললেন, পাশের একতলা টিনশেড বাড়িটায় উনি ভাড়া থাকেন। ওটাও সেই শাহ সাহেবের বাড়ি। কিন্তু ওটা তো পাগলের কারখানা। তোমরা খোঁজ খবর না নিয়েই উঠে গেছো? দোতলার বাসাটায় তো কোন ভাড়াটে তিন মাসও টেকে না।

আমি বললাম, খোঁজ নেবার সুযোগ ছিল না। বিপদে পড়ে উঠে গেছি। স্যার বললেন, উঠেছো যখন কি আর করা। দেখে শুনে চলবে।

চিন্তায় পড়ে গেলাম। দুপুরে বিনা বাক্য ব্যয়ে খালাম্মার শাড়িটা যেভাবে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, ভবিষ্যতে আরো কি কাণ্ড দেখায় কে জানে!

ওদের ছোট মেয়েটা অবশ্য খুব ভালো। দেখতে খুব মিষ্টি, পাকা পাকা কথা বলে। বয়স চার বছরের মতো। একমাত্র ওই পিচ্চিটার সাথেই আমাদের যোগাযোগ হয়। মেয়েটাকে আমরা সবাই খুব আদর করতাম বলে মেয়েটাও আমাদের বাসায় নিশ্চিন্তে খেলতো শোকেসের জিনিসপত্র নিয়ে। ছোটবোনের জন্মদিনে সে আমাদের সাথে বসে বসে সারাদিন বেলুন ফোলালো, ঘর সাজালো। সব কাজ শেষে অনুষ্ঠান শুরুর আগে ওকে বললাম, যাও নতুন জামা পরে আসো, ছবি তুলবো।

বাড়িওয়ালার বাসার সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় দেখা গেল ওরা তো আসেইনি, ছোট মেয়েটাকেও আসতে দেয়নি। বেচারী কেঁদেকেটে ঘরে আটকে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল আমাদের। এ কেমন মানসিকতা?

ওর বড় আরো চারবোন ছিল। ওরা আট থেকে বারো ক্লাস পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাসে পড়তো। কি পড়াশোনা করতো জানি না তবে দিনের বেলার অধিকাংশ সময় ওরা ছাদে কাটাতো। ওদের ছাদ বিহার ওই পাড়ার তরুণদের অন্যতম বিনোদন। ওরা যখন ছাদে থাকতো তখন আশেপাশের নানান ছাদে ভিড় করতো উঠতি বয়সের তরুণেরা।

আমি কখনো ছাদে উঠতাম না। একদিন কিছু বন্ধুবান্ধব বেড়াতে আসলে ওদের নিয়ে একটা  বিকেল ছাদে কাটালাম। বাড়িওয়ালীর কন্যাদের নিত্যদিনের কর্মসূচী সেদিন বাধার সম্মুখীন হলো। ওরা ছাদে উঠে আমাদের দেখে নেমে গেল। নেমে গিয়ে কি করেছে সেটা টের পেলাম সন্ধ্যার সময়।

বন্ধুদের বিদায় দিতে আমি বের হলাম ঘর থেকে। গলিপথে কিছুদূর যাবার পর একদল ছেলে আমাদের পথ আটকালো। বললো, আমরা কোন সাহসে ওই ছাদে উঠেছি।
আমি বললাম, ওটা আমার বাসা। আমার ছাদে উঠতে সাহস লাগবে কেন?
ওরা বললো, আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে তোমরা ওই মেয়েদের উত্যক্ত করেছো। তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি। আর যদি কোনদিন ছাদে উঠো, তাহলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ঝুলায় দেবো।

মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ওই পাড়ায় আমি নতুন হলেও আমার কিছু দশাসই বন্ধুবান্ধবও ছিল যার মধ্যে দুয়েকজনের বেপরোয়া মাস্তানির খ্যাতি ছিল। ঘটনাটা তাদের কানে গেলে সেই পাতি মাস্তানদের ডেকে উল্টো হুমকি দিল। পাল্টাপাল্টি হুমকির ঘটনায় আমাদের জিত হওয়ায় ছাদের উপর আমাদের আপাতঃ রাজত্ব কায়েম হলো।

রাজত্ব কায়েম হলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ছাদে না উঠে বাসার সামনের খোলা বারান্দায় বসে আড্ডা দেবো। ওরা ওদের ছাদ নিয়ে থাকুক। ভেজালের দরকার নাই।

কিন্তু বারান্দার সামনে বসা নিয়েও ঝামেলা লাগলো আবার। এবারের ঝামেলা একটা পেয়ারা গাছ। নীচতলার ঘরের সামনে বাড়ীওয়ালার একটা পেয়ারা গাছ ছিল। পেয়ারা গাছটা হঠাৎ সেবছর বড় হয়ে গেল লকলক করে এবং সুন্দর সুন্দর পেয়ারা ধরে আমাদের বারান্দার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। গাছটা হাত বাড়িয়ে দিলেও আমরা পেয়ারা গাছে নজর দেয়া ছাড়া আর কিছু করলাম না, কেননা গাছটা আমাদের না। তাছাড়া পেয়ারাগুলো এখনো অনেক ছোট। খাবার যোগ্য হলে তখন দেখা যাবে।

আমরা ধৈর্য ধরলেও বাড়িওয়ালার মেয়েরা ধৈর্য ধরতে পারলো না। ওরা একদিন আমাদের বারান্দায় ঢুকে কাঁচা কাঁচা সব পেয়ারা পেড়ে নিয়ে কিছু দাঁতে কাটলো আর অধিকাংশ নর্দমায় ফেলে দিল। আশংকা এই যে পেয়ারা যদি কোনদিন বড় হয় তাহলে আমরা যে কোন সুযোগে তা হাপিস করে দেবো। আমাদের কোনরকম সুযোগ না দেবার জন্য অকালে সবগুলো পেয়ারাকে নর্দমায় আশ্রয় নিতে হলো।

তখনকার দিনে পাড়ায় কে কার সাথে 'লাইন' করে সেটা কিভাবে যেন সবাই জেনে যেতো। বিশেষ করে আমাদের ছাদবিলাসী কন্যাগুলো লাইনের ব্যাপার পাড়ায় রসের অন্যতম যোগানদার। বিভিন্ন ছেলের সাথে চোখাচোখি, কানাকানি, চিঠিপত্র, ফোনাফুনি সবকিছুই একসময় প্রকাশ পেয়ে যেতো। সেই সুত্রে তিন মাসের মধ্যে জেনে গেছি কোন মেয়ের সাথে কার কার 'লাইন' আছে। আমাদের হুমকিদাতারাও ছিল সেই লাইনের দলে।

বাড়িওয়ালার মেয়েদের সাথে আমার সাথে সাপে নেউলে সম্পর্ক হওয়াতে আমাদের পরিবার নিশ্চিন্ত ছিল যে ওদের কারো সাথে আমার অন্ততঃ 'লাইন-টাইন' হবে না। ওই মেয়েরা স্কুল কলেজের সময় বাদে ছাদেই থাকতো দিনের অধিকাংশ সময়।

একদিন আমার দুপুরের ভাতঘুমটা ভেঙ্গে গেল ছাদের উপর থেকে আসা একটা শব্দে। আমি প্রথমে ভাবলাম উপরে কেউ দরকারি কোন কাজ করছে। কিন্তু না। শব্দটা যেন কেউ একজন পা দিয়ে একটা ইঠ নাড়াচ্ছে। নাড়াচ্ছে তো নাড়াচ্ছে। একটু বিরতি দিয়ে আবারো। গরমে অস্থির এমনিতে, তার উপর ওই শব্দটা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিল। আমি গায়ে শার্ট গলিয়ে ছাদে উঠে দেখলাম বাড়িওয়ালার ক্লাস নাইনে পড়ুয়া মেয়েটা পা দিয়ে  একটা ইঠ এদিক সেদিক নাড়াচ্ছে। আমাকে দেখামাত্র সে নিপাট ভদ্রলোক। আমি কিছু না বলে বিরক্ত চাউনি দিয়ে নীচে নেমে এলাম।

এসে শোবার সাথে সাথে আবারো সেই শব্দ। প্রতিদিন এই যন্ত্রণা দিতে থাকলো মেয়েটা। আন্দাজ করতে পারছিলাম এই শব্দ করে সে আমাকে ছাদে আহ্বান করছে, কিন্তু কেন আহ্বান করছে সেটা বোঝার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না অথবা মেজাজটা তার অনুকুল ছিল না। তাই সাড়া দেবার বদলে একদিন আমি একটা পাথর এনে আমার ফ্লোরে ঘষাঘষি শুরু করলাম। সেই শব্দে থামাতে নীচতলা থেকে ছুটে এলো বাড়িওয়ালার জ্যৈষ্ঠ কন্যার অভিযোগের আঙুল। আমি তখন পাল্টা আঙুল দিয়ে ছাদের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, ওটা বন্ধ হলে এটাও বন্ধ হবে। দুপুরের যন্ত্রণা লাঘব হলো সেদিন থেকে।

কবেকার ঘটনা ওটা? ২৮ বছর পার হয়ে গেছে? আশ্চর্য!  সময় কত দ্রুত চলে যায়।

এই সেদিন ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্টের দিন সকালে বন্ধুরা সবাই মিলে কাপ্তাই গেলাম বেড়াতে। নদীর ওই পাড়ের জঙ্গলগুলো টানছিল খুব। সাম্পান ভাড়া করে ওই পাড়ে গেলাম। ওপারের সীতার ঘাটে সাম্পান থেকে নেমে পাহাড়ে উঠলাম। পাহাড়ে ঘুরে হৈ হল্লা করে ফেরার পথে  সাম্পানে ওঠার সময় পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেলাম লেকের পানিতে। আমি সাঁতার জানতাম না। সেদিন সেই অচিন মাঝি ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে উদ্ধার না করলে আজকে এই গল্প লেখার সুযোগ হতো না। আচ্ছা সেদিন যদি আমি ডুবে যেতাম, এত বছরে আমাকে কেউ মনে রাখতো? মা ছাড়া আর কেউ মনে রাখতো না আমি নিশ্চিত। আমাদের পরিবারের মোড়টাই ঘুরে যেতো না তখন? বর্তমান অবস্থায় থাকার কোন সম্ভাবনাই থাকতো না। কারণ এর দশ বছর পর আবার বাবা মারা যেতো। কন্যাদের নিয়ে অসহায় মা দুর্বিষহ জীবন কাটাতো।

ভাগ্যিস যাইনি সেদিন। আমার এক বন্ধু কিন্তু চলে গিয়েছিল। আরো আগে সেই ক্লাস সেভেনেই। তুখোড় স্মার্ট একটা ছেলে। সেই প্রথম একটা বন্ধু হারিয়ে কষ্ট পেয়েছিলাম। এটা আরো আগের কথা। তখন আমরা সরকারী কলোনীতে থাকতাম, সেই ৩৪ বছর আগে।  যত পেছনে তাকাই, আরো পেছনে চলে যাই। এ বুঝি পেছনে যাবার নেশা। মাঝে মাঝে এই পেছনের দিনগুলো এমন করে টানে,  তখন আর বর্তমানে থাকা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। নাহ এবার লাগাম টেনে ধরতে হয়। আর পেছনে গেলে ধাক্কা খাবার সম্ভাবনা আছে।

তার চেয়ে পেছনের একটা গান শোনা যাক। আমার হারিয়ে যাওয়া দিনের প্রিয় একটা গান। গুড্ডি ছবিটা টিভিতেই দেখেছিলাম বহুবছর আগে। আবার দেখতে চেয়েছিলাম। এখানে অনেক খুঁজেছি, পাইনি। অতএব গানটাই শোনা যাক।


যাদু বাস্তবতায় মধ্যরাতের শিশু এবং মার্কেজের সম্পর্ক যাপনের গল্পটি

১.
অবশেষে মার্কেজের সিনেমাটা দেখা হলো মার্কেজ চলে যাবার পরই। Love in the time of Cholera দেখার আগে আমার কয়েকটি বদ্ধমূল ভুল ধারণার উপর ঐতিহাসিক কুঠারাঘাত চলছিল। ছবিটা দেখার পর সেই ভুল ধারণাগুলোর ভিত একেবারেই নড়ে গেল। এখন আমি জানি ঐতিহাসিক মিথ্যাগুলো জীবনের কোন একটা সময়ে এসে শোধরানোর সুযোগ কিছু কিছু মানুষের হয়। মার্কেজ খুব মুষ্টিমেয় লেখকদের একজন যিনি সেই সত্যটার মর্ম উপলব্ধি করেছেন। কোন কোন বিরল জাতের সম্পর্ক আছে যা শুকিয়ে মরে কাঠ হয়ে যায়। সেই কাঠ দিয়ে আসবাব পর্যন্ত তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু তার শিকড়ের কোন একটা গভীরতম অংশ তাকে আবারো জীবন দান করতে পারে। মার্কেজ ৫৪ বছরের উদাহরন উপস্থাপন করেও তাই করে ছেড়েছেন। এই ছবিটা  ১০০% সম্পর্কের ছবি, ১০০% সম্পূর্ণতার ছবি, অসমাপ্ত সমীকরণ জোড়া লাগাবার ছবি। ফ্লোরেন্টিনো এবং ফারমিনাকে আমার সেইসব চেনামুখের মতো মনে হয়েছে একদিন যাদের স্বপ্নে আমি বসবাস করে এসেছি। ছবিটাকে স্বচ্ছন্দে আমি দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ খুঁজবো।  ক্লাসিক কালেকশানে রেখে দেবার মতো আরো একটা ছবি।



২.
Midnights Children ছবিটা নামিয়েছিলাম বেশ কিছুকাল আগে। আড়াই ঘন্টার মুভি দেখার সময় বের করা কঠিন কাজ। অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে গতরাতেই ছবিটা দেখার সময় করতে পারলাম। সালমান রুশদীর উপন্যাস অবলম্বনে দীপা মেহতার এই ছবিটার পটভূমি অর্ধশতাব্দীর মতো। ভারতের স্বাধীনতার আগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ছুঁয়ে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার পরে এসে শেষ হয়েছে।

আমি সিনেমাখোর মানুষ হলেও বোদ্ধা শ্রেণীর না। তাই যে কোন ছবি দেখে রিভিউ লেখা হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা বলতেই ভালো লাগে। এই ছবিটার বেশ কিছু অংশে অপার্থিবতার রাজত্ব। যাকে ম্যাজিক রিয়েলিজম বলেছে কেউ কেউ। তাই একদম বাস্তবমূখীনতা খুঁজতে গেলে হতাশ হবার সম্ভাবনা। যদি ম্যাজিকে আস্থা থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো লাগবে।

আমার একটা জায়গায় প্রত্যাশিতভাবেই ভালো লেগেছে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্বটি আসে। পাকিস্তানীরা অস্ত্র সমর্পন করার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে, জয় বাংলা বলে শ্লোগান দিচ্ছে আমজনতা এই দৃশ্যগুলি ভালো লাগার।

আবার একজন স্মৃতিভ্রষ্ট পাকিসৈন্য(এই ছবির মূল চরিত্র) ওই ভিড়ের মধ্যে তার ভারতীয় দয়িতাকে নাচতে দেখে স্মৃতি ফিরে পেয়েছে, এই দৃশ্যটা অস্বাভাবিক লেগেছে। ম্যাজিক রিয়েলিজমের ভেতর এটাকে সিনেমাটিক ড্রামা মনে হয়েছে। সেই মুহুর্তের দৃশ্যটা দর্শকের মনে মেহেরজানের স্মৃতিটা একটু উস্কে দিতে পারে।

আবার সেই ভারতীয় সাপুড়েকন্যা পার্বতী যখন ম্যাজিক দিয়ে তার পাকিস্তানী দয়িতকে ঝুড়িতে লুকিয়ে ফেলে হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যায় তখন খুব সঙ্গত প্রশ্নগুলো মাথাচাড়া দেবে। একজন ভারতীয় সাপুড়ে কন্যা বাংলাদেশে কী উৎসবে যোগ দিতে এসেছিল যাকে হেলিকপ্টারে করে দেশে ফেরত নেয়া হয়। এরকম অসঙ্গতিগুলো পার পেয়ে যায় ম্যাজিক রিয়েলিজমের কারসাজিতে। প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যখন ছবিটাতে সম্মান দেখানো হয়, তখন সেই স্বাধীনতার অন্যতম কঠোর সমর্থক ইন্দিরাগান্ধীর উপর অতটা কঠোর কেন ছবির পরিচালক এবং লেখক। আড়াই ঘন্টার ওই ছবিটায় সবচেয়ে দৃষ্টিকটু লেগেছিল সেই অংশটুকু। ওটা ম্যাজিক রিয়েলিজমের সিড়ি বেয়ে উৎরে যেতে পারেনি। ওখানে এসে জড়ো হয়েছে অনিশ্চিত কোন রাজনৈতিক অপছন্দ।

বাংলাদেশ পর্বের কয়েক মিনিটে সংলাপগুলো বাংলাতে দেয়াটা বাস্তবসম্মত লেগেছে। ভালো লেগেছে সালীমের প্রেমের পর্বে মির্জা গালিবের(জগজিত সিং এর কন্ঠে) সেই গজলটিও।

Saturday, May 24, 2014

বৈদেশিক

গত সপ্তাহে হঠাৎ করে বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে ইইউ এবং ডিএফআইডির কয়েকজন সিনিয়র স্পেশালিস্ট আমার অফিসে এসেছিলেন কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করতে। প্রথমে ভেবেছিলাম সৌজন্য সাক্ষাতকার। কিন্তু কনফারেন্স রুমে এই বাঘা লোকগুলোর ধারাবাহিক জেরার মুখে টের পেলাম ব্যাপারটার সাথে জাতীয় স্বার্থ কত গভীরভাবে জড়িত। অতএব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সতর্ক হয়ে যেতে হলো। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেয়া যাবে না। অতএব, পেশাদার মিথ্যেবাদীর মতো বাংলাদেশের প্রশংসায় ভরিয়ে দিলাম কনফারেন্স রুম।

ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলাগন প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন, তারপর রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল পরিদর্শন করতে গিয়ে দুটো এন্টারপ্রাইজকে বেছে নিয়েছিলেন, যার প্রথমটিতে আমি। যখন আমাকে প্রশ্ন করা হলো যদি সমজাত সুযোগ সুবিধা প্রতিবেশী দেশেও থাকে, তাহলে আমরা বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে গিয়ে সেই দেশকে বেছে নেবো কিনা, তখনই আমি সতর্কতার প্রথম পদক্ষেপটি নিলাম। আমার উত্তর ছিল সুযোগসুবিধা সমপর্যায়ের হলেও বাংলাদেশের যে শ্রমশক্তি সেটাকে অতিক্রমের কোন শক্তি আপাততঃ কোন প্রতিবেশী দেশের নেই। এখানে আমরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশের কোন বিকল্প নেই গার্মেন্টস সেক্টরে। আমার উত্তর তাদের চোখের উজ্জলতা কমিয়ে দিয়েছিল কিনা খেয়াল করিনি, কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছি যে বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে কোন একটা দেশকে খাড়া করানোর একটা ইঙ্গিত তাতে আছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমি বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রতিবন্ধকতাগুলোকে যতই আড়াল করার চেষ্টা করি, একজন বিদেশী কখনোই সেটা করবে না। এখানে ভাগ্যকে একটা ধন্যবাদ দিতে হয় ওই লোকগুলোর মুখোমুখি হবার জন্য কোন বিদেশীর বদলে আমাকেই নির্বাচিত করা হয়েছিল। নইলে বাংলাদেশের ইমেজের উপর একটা কষে চড় পড়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ এই রপ্তানী প্রক্রিয়া অঞ্চলেও আমরা সদাশয় কাস্টমস কতৃপক্ষের কাছ থেকে যেরকম অসহযোগিতা এবং দুর্বিষহ মনোভাব দেখতে পাই তাতে কোন বিনিয়োগকারীই সন্তুষ্ট নয়। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবসা করার জন্য আমাদেরকে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকারও হতে হয়। এই যন্ত্রণা নিয়ে এখানে সুস্থ বিনিয়োগ আশা করা যায় না। দশ বছর আগে ভিয়েতনামকে আমাদের সাথে তুলনা করা গেলেও এখন সেটা অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছে। এখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি কেবল শ্লোগানেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে যদি এসব সরকারী দুর্বৃত্তপনা বন্ধ না হয়।

আমি নিন্মোক্ত ভদ্রলোকদের সঠিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও তারা বিদায় নেবার সময় আমার বক্তব্য এবং তাদের পর্যবেক্ষণের ফলকে যে 'ইমপ্রেসিভ' সার্টিফায়েড করে গেছে, সেটা বাংলাদেশের জন্য তৃপ্তিকর ছিল।

Dr Duncan Overfield
Senior Regional Economic Adviser
Asia Regional Team, DFID
Current office New Delhi, India

Mr Thom Adcock
Economist, DFID
Current office Rangoon, Burma

Mr Alan Whiteworth
Senior Economist
Economic Growth Group
Current office Islamabad, Pakistan

Martha Lawrence
Senior Railway Specialist
Sustainable Development Network, Transport
World Bank
Current office Washington DC, USA

Piers Devenport
Political, Trade and Press Section
European Union
Current office Dhaka, Bangladesh

Friday, May 23, 2014

ফেলে আসা সুর

বহুকাল আগে শোনা সুরটায় কথা ফুটলো মাত্র সেদিন। লিরিকস বিহীন সুরটা এত যুগেও ভুলিনি কেন সেটা বুঝতে আমার ভেতর নতুন একটা উপলব্ধি সৃষ্টি হলো। অনেক মানুষই বুকের ভেতর প্রিয় কিছু সুর লালন করে। কেউ সজ্ঞানে কেউ অবচেতনে। আমার সেই সুরটা সজ্ঞানে যতটা ছিল অবচেতনে ছিল বহুগুন বেশী। আমি সময়ের কাছে কৃতজ্ঞ সেই সুরটাকে এতকাল বুকের ভেতর ধরে রাখার জন্য। সুর এমন একটা ব্যাপার যা জীবনের অনেকগুলো না দেখা রঙের উজ্জ্বলতাকে চোখের সামনে স্পষ্ট করে তোলে। আমরা সবাই যার যার নিজস্ব ব্যস্ততায় ডুবে গেলেও সেই সুরটা কোন কোন সময় আমাদের ভেতর স্মৃতির অনুরণন জাগায়। অনেক অপ্রাপ্তির ভেতরেও সেই সুরটা আমাদের জানান দেয় সব অন্ধকারেই একটা আলোর ইশারা থাকে। সেটাই জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি। আমরা অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেও বেঁচে থাকার মধ্যে সুখ খুঁজি সেই আলোর ইশারাতে। এ যেন অচ্ছ্যুত এক স্বপ্ন যে স্বপ্নটা হাতের ফাঁক গলে পড়ে গিয়েছিল কোন আকালের দিনে। আমরা আকালের দিনগুলো ভুলে গেলেও স্বপ্নের স্মৃতিটা ভুলিনি, ভুলিনি সেই সুরের প্রতিটা ছন্দ।

কাল রাতের বেলা

Wednesday, May 21, 2014

এক চাঁদ কলংক

ব্যাপারটা তুচ্ছ। আবার ফেলে দেবার মতোও নয়। একটা উঠোন, দুটো বাড়ি, এক ফালি জ্যোৎস্না এবং চাঁদের কলংক পাহাড়।

মেঝ নানার বাড়িতে গেলেই আমাকে টানতো উঠোনটা। উঠোনের চারপাশে গাছের শাখাপ্রশাখাগুলো বাতাসের ছন্দে নাচতে নাচতে জ্যোৎস্নার বান ডাকতো। আমার তেমনই মনে হতো। অথচ চাঁদ উঠলে জ্যোৎস্না খেলবে এতো নতুন কোন কথা না। তবু আমার মনে হতো এই উঠোনে জ্যোৎস্নাগুলো একটু বেশীই যেন উজ্জ্বল। বড় হবার পর অমন কোজাগরী রাত আর কখনো দেখিনি। সেই উঠোন নেই, সেই গাছ নেই, চাঁদখানা শুধু যথাস্থানে আছে, তার জ্যোৎস্নায় চোখ রাখার যত্নটা আর নেই।

উঠোনটা নিয়ে আমি মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি রকমের আহ্লাদ করতাম। যতটা করার দরকার তারো চেয়ে বেশী। কিন্তু কি করবো। ওখানে গেলেই যে আমি অন্যরকম হয়ে যেতাম। ওই বাড়ি, ওই উঠোন, ওই গাছের নকশাকাটা ছায়া সব যেন আমার। কখনো কখনো মামী মুড়ি মাখিয়ে বাটি ভর্তি করে দিয়ে যেতেন। শুধু মুড়ি না, মুড়ির সাথে থাকতো চানাচুর, ছোলাভাজা, চিড়েভাজা, পেয়াজ মরিচ, শসার সালাদ। মধ্যখানে চার পাঁচটা মুচমুচে পিঁয়াজু। উঠোনে পিড়ি বা মাদুর পেতে আমি ছোলামুড়ির মিলিত স্বাদ নিতে নিতে জ্যোৎস্নায় স্নান করতাম আর বলতাম- বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।

কিন্তু বাংলার রূপ খোঁজার এই উৎসবে আনন্দ খুঁজে পেত না তেমন একজনও ছিল মুখোমুখি বাড়িটাতে। এই উঠোনে তাদেরও অংশ আছে, ওই গাছের শাখায় তার জন্যও বাতাস দুলতো, ধবল জ্যোৎস্নাগুলো তার জন্যও আলো বিলাতো। তবু সে কখনো উঠোনে নামতো না। বড়জোর দরোজায় দাড়িয়ে উঠোনের দিকে মাথা বাড়িয়ে আমাদের আনন্দগুলো উপলব্ধি করার চেষ্টা করতো। আমরা খুব করে ডাকতাম ওকে, কিন্তু সে কিছুতেই উঠোনে খেলতে নামতো না। আমি অবাক হতাম। এত এত সুন্দর, কিছুই কী টানে না তাকে? কেমন বিষাদময় চোখে তাকিয়ে থাকতো জ্যোৎস্নার দিকে। আমি যতবার ওই উঠোনে খেলতে যেতাম, অবধারিতভাবে আমার চোখ খুঁজে বেড়াতো সেই বিষন্ন চোখ দুটো। সেই চোখ আমাকে এতটা মুগ্ধতা নিয়ে দেখতো, তবু কাছে আসতো না, একদিন বেশী ডাকাডাকি করাতে দরজাটাই বন্ধ করে দিল।

খুব অপমান লাগলো। রাগে দুঃখে প্রতিজ্ঞা করলাম ওকে আর কোনদিন ডাকবো না। আমার কি দায়, আমার কি দায়? আমার কোন দায় নেই। ওর যা খুশী করুক। অভিমানে চোখ ফেটে জল আসে প্রায়।

আরো কিছুকাল পর, যখন পৃথিবীর বয়স আরো কয়েক বছর বেড়ে গেছে, যখন আমি জীবনকে আরো একটু গভীরভাবে জানতে শিখেছি, সেরকম এক সময়ে বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে জানলাম কেন ওর জ্যোৎস্না ভালো লাগতো না, কেন উঠোনের আনন্দে যোগ দিত না, কেন আমাদের ডাকে সাড়া দিত না। দুই বাড়ি এক উঠোনের মালিক হলেও ওদের রান্না ভিন্ন হাড়িতে। ওদের হাড়িতে সবসময় ভাত থাকতো না, ভাত থাকলেও তরকারী থাকতো না। ওর বাবা ছিল না। মা প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে আধপেটা খেয়ে সংসার চালাতো। ওর বাইরে যাবার মতো একটাও জামা ছিল না। উৎসবে যোগ দেয়া তো অনেক পরের কথা। এসব কিছু যখন আমি জানতে পারলাম, তখন অতীতের একটা ক্ষত যেন মুহুর্তেই সেরে গেল। যেন শোধ হয়ে গেল কৈশোরের একটা কলংক দেনা।

যদিও তখনো সুকান্তের কবিতাটা পড়িনি, তবু আমি বুঝে গেলাম খালি পেটে সৌন্দর্যের বন্দনা একেবারেই অসম্ভব। চাঁদের সৌন্দর্যের চেয়ে কলংকের দিকেই নজর বেশী থাকে তখন।

গল্প হয়ে যাওয়া দিনগুলো - আমরাবন্ধু

মানুষের জীবনটা অনেকগুলো মেলার সমষ্টি। আমরা জীবনের একেকটা পর্বে একেক রকমের মেলায় নিজেদের খুঁজে পাই। সেই শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে এই প্রৌঢ়ত্বের(যদিও এখনো নিজেকে প্রৌঢ়দের দলে ভাবতে ইচ্ছে করে না)
দ্বারপ্রান্তে এসে পেছনে ফিরলে দেখতে পাই কতগুলো মেলা ছিল, কতগুলো মেলা ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যা্‌ওয়া মেলাগুলো আর জোড়া লাগে না। 

২০০৮ থেকে শুরু হওয়া ব্লগ জীবনেও সেরকম একটা মেলা ছিল। ব্লগে লেখালেখির যাত্রাটা শুরু হয় মূলত ভার্চুয়াল আড্ডার নেশা থেকেই। ভার্চুয়াল জগতের অচেনা কতগুলো মানুষের সাথে কী চমৎকার নিঃস্বার্থ একটা বন্ধন তৈরী হয়ে গিয়েছিল। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে চিনতামও না তখন। কতগুলো নিক বা নাম দিয়ে পরিচিত ছিলাম পরস্পরের কাছে। অসম্ভব সুন্দর কিছু সময় কেটেছে সেই সময়টাতে। বেলা বাড়তে বাড়তে একদিন সেই মেলাতেও ভাটা পড়ে, একদিন ভেঙ্গেও যায়। সবাই যার যার জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ এখনো ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে যুক্ত আছে কিন্তু সেই প্রাণবন্ত ভার্চুয়াল মেলাটা আর নেই। 

হারিয়ে যাওয়া মেলার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোন লাভক্ষতি নেই, কিন্তু এও এক আনন্দ সময় যেটা আমাকে নস্টালজিক করে। স্মৃতিচারণে আনমনা এক ভালো লাগা জেগে থাকে। সেই সুন্দর সময়টার একটা উদাহরণ হিসেবে মাত্র কয়েকটি ব্লগ এখানে কপি করে রাখলাম স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। বলা বাহুল্য, এটা শুধু আমরাবন্ধু ব্লগের আড্ডার একাংশ। 

গল্প হয়ে যাওয়া সেই দিনগুলোকে এখন খুব মিস করি।



******************************************

 একজন দীপা এবং ভুলে যাওয়া একটা প্রেম

১.
জাকের মাষ্টারের অর্ধপ্রকাশিত ইতিহাসটা অনেক রহস্য অমীমাংসিত রেখে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরেই। ঘটনাটা তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর আমার কানে আসার পর উত্তরপুরুষ হিসেবে কৌতুহল দমিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। কারন জাকের মাষ্টার যে সময়ের মানুষ সেই সময়ে ওরকম একটা ঘটনা উপমহাদেশে বিরল। তবে জাকের মাষ্টারের চেয়েও যাঁর কারনে কৌতুহলটা চিড়বিড় জেগে উঠলো তিনি হলেন দীপালী চক্রবর্তী বা দীপা আহমেদ।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে সুপুরুষ তরুন বোয়ালখালীস্থ সৈয়দবাড়ীর মওলানা সৈয়দ জাকের আহমেদ মাদ্রাসায় উচ্চতর ডিগ্রী নেবার জন্য কোলকাতা গমন করেন। তখনকার দিনে মাদ্রাসার ডিগ্রীর সাথে পাগড়ী বাঁধার একটা সম্মানজনক ব্যাপার ছিল। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে মাথায় মওলানা পাগড়ী বেধে জাকের আহমেদ যখন গ্রামে ফিরে আসেন তখন মাথায় টাইটেল পাগড়ী দেখে যতটা বিস্মিত হয় তার তিনগুন বেশী বিস্মিত হয় সঙ্গের ছিপছিপে তরুনীকে দেখে। এ কাকে নিয়ে এসেছে জাকের মওলানা?
প্রাথমিক আলাপ সম্ভাষন শেষে জানা যায় এর নাম দীপালী চক্রবর্তী, কোলকাতা শহরে তার বসবাস। বিবাহিতা এবং দুসন্তানের জননী। কিন্তু কোন ভরা পূর্নিমায় জাকের মাষ্টারের সাথে তার দেখা হয়ে যায় সে কথা জানা যায় না। তবে সেই দেখাতে এমন গভীর প্রেমের জন্ম হয় দুজনের মধ্যে যে স্বামী-সন্তান-বিত্ত-বৈভব-পরিবার-ধর্ম-সংস্কৃতি সবকিছু ছেড়ে জাকের মওলানার হাত ধরে কোলকাতা শহর ছেড়ে পালিয়ে চট্টগ্রামের এই অজপাড়া গাঁয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে একজন মাদ্রাসা পাশ মওলানা হয়েও জাকের মাষ্টার কিভাবে হিন্দু ব্রাম্মন রমনীকে ধর্মান্তরিত করিয়ে নিজের ঘরনী করার জন্য কোলকাতা থেকে মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে সেটাও বোধগম্য হয় না কারো। এমনকি এই একুশ শতকেও ওরকম ঘটনা কতটুকু সহনীয়?
ছি ছি পড়ে যায় সমস্ত গ্রামে। এ কি অনাচার! সৈয়দবাড়ীর মান ইজ্জত সব গেল। এত দুঃসাহস কি করে হয় তার? জাকের মাষ্টারকে বংশমর্যাদার কারনে একঘরে করা সম্ভব না হলেও তার নবপরিনীতা বধুকে পাড়ায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়। জাকের মাষ্টার কোন মতে তাকে ঘরে তুলতে পারলো না। শেষে পাড়ার বাইরে একটা ঘর বেঁধে আলাদা সংসার পাতে দুজনে। প্রেমের সংসারে বাজার হয়, রান্না হয়, খুনসুটি হয়। হয় প্রতিদিনের নিত্যনতুন রোমাঞ্চ।
২.
কিন্তু শীঘ্রই রোমাঞ্চে বাগড়া দেয় দীপার প্রাক্তন স্বামী।
এক বিকেলে বৃটিশরাজের পুলিশ এসে সমস্ত পাড়া ঘিরে ফেলে। দারোগাবাবুকে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে কোলকাতা থেকে আগত দীপালীর স্বামী। পুলিশ দেখে দীপালীকে পেছনের জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে দীপালীর বড় জা হালিমা খাতুন। গোপনে একমাত্র এই একটা মানুষেরই স্নেহ পেত দীপা। পুলিশ তন্ন তন্ন করে পাড়া তল্লাশি করে। দীপালীর স্বামী চিৎকার করে ডাকতে থাকে "দীপা দীপা" বলে। না পেলে বাড়ী জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ।
রাজকীয় পুলিশবাহিনীকে যমের চেয়ে বেশী ভয় পায় মানুষ। কিন্তু সেই ভীতির মুখে ঝামা দিয়ে একটা সাহসী নারী কন্ঠ ভেসে আসে পাশের জঙ্গল থেকে। গ্রামের সমস্ত মানুষ হতবাক হয়ে শোনে মিতবাক তরুনী দীপা উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করছে, "আমি স্বেচ্ছায় স্বামী সন্তান পরিবার সব ত্যাগ করে এসেছি। আমি আর কখনো ফিরবো না ওই ঘরে। আমাকে কেউ জীবিত নিতে পারবে না ওই সংসারে।"
উপস্থিত গ্রামবাসী নারী পুরুষ ছেলে বুড়ো পুলিশ দারোগাবাবু সবাই ওই দুঃসাহসী ঘোষনায় স্তব্ধ হয়ে যায়। দীপালীর ওই দৃঢ়তার কাছে হার মেনে ফিরে যায় পুলিশ, পেছন পেছন দীপালীর স্বামীও।
ওই ঘটনার পর দীপাকে ঘরে তোলার অনুমতি পায় জাকের মাষ্টার। দীপা প্রথমবারের মতো মূল বাড়ীতে প্রবেশাধিকার পায়। শুরু হয় নতুন জীবন।
কিন্তু বছর পেরোতেই জাকের এবং দীপার মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে অজ্ঞাত কারনে। কেন যেন জাকের মাষ্টার দীপাকে অবহেলা শুরু করে। প্রাথমিক রোমাঞ্চ কেটে গিয়েছিল বলেই কী? দুরত্ব বাড়তে বাড়তে দৈনিক খিটিমিটি ও চুড়ান্ত বিরক্তিতে পৌঁছে যায় সেটা। তাদের প্রায় ছাড়াছাড়ি হয় হয় অবস্থা। জাকের কেন যেন সহ্য করতে পারছে না আর দীপাকে। অস্বস্তিকর পরিস্তিতি। তখনো দীপা চাইলে ফিরে যেতে পারতো কোলকাতা। বড় জা হালিমা সেরকম প্রস্তাবও করেছিল স্নেহের বশে। কিন্তু দীপা অনড়। সে ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে। এই দেশেই থাকবে সে। যদি জাকের তাকে রাখতে না চায়, তাহলে বিদেয় করে এখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে রেখে আসুক। একলাই থাকবে দীপা। কিন্তু কোলকাতা যাবে না কিছুতেই।
একদিন তাই হলো। জাকের মাষ্টার দীপাকে তালাক দিল এবং শহরে রেখে আসলো। রেখে আসা বলা ঠিক না। বলা ভালো শহরের রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসলো চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে। আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসা। এখানে জাকের মাষ্টারকে একটা অমানুষ বলে মনে হয়। কিন্তু সমাজে জাকের মাষ্টার খুবই ভদ্রলোক ছিলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি ওনার অনেক ভালোমানুষিকতা। কিন্তু ওই মানুষটা দীপার সাথে তখন কেন যে ওরকম করলো সেটা এই যুগে বসে বোঝা মুশকিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা বাদে বোঝা অসম্ভবও। সমস্যা হলো অত আগের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ বেঁচে নেই। প্রায় একশো বছর আগের কথা।
দীপার কথা ভুলে যায় সবাই।
৩.
আরো পঞ্চাশ বছর পর শহরে দীপার সন্ধান পায় তার জা হালিমার এক সন্তান তালেব। খুঁজে বের করে তার হারিয়ে যাওয়া প্রাক্তন চাচী দীপাকে। খুঁজে পেয়ে মাকে আর বোনকে নিয়ে দীপার ঘরে যায়। চটগ্রামের আসকার দীঘির পাড়ে ছোট এক কক্ষের ঘরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছে দীপা। ঘরের একপাশে জায়নামাজ বিছানো, তসবি ঝোলানো দেয়ালে। অন্যপাশে তক্তোপশে পাটির বিছানা। মাথার উপর বেড়ার ছাউনি। তার উপরে টিন। অন্ধকার চার দেয়ালের ভেতর স্বেচ্ছাবন্দী জীবন। বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুজ। সুতার কারখানায় কাজ করেছে বহুবছর। এখন ঘরে বসে নামাজ পড়ে আর সেলাইকর্ম করে দিনযাপন করে। হালিমাকে এত বছর পরে দেখতে পেয়ে চিনতে ভুল করে না একমুহুর্তও। ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে দীপা। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বর্ষা নামে দুজনের। হালিমার মুখ দিয়ে কথা সরে না। কোন মতে বলে-
-আমি তো ভেবেছি তুমি চলে গেছ। কেন তুমি কোলকাতা গেলে না?
-কেন যাবো দিদি, আমি তো যাবার জন্য আসিনি
-জাকের তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে, তুমি কেন রয়ে যাবে?
-জাকের ছেড়েছে আমাকে। কিন্তু আমি তো ছাড়িনি তাকে, তার দেশকে, তার ধর্মকে। আমি সবকিছু ছেড়ে এসেছি তাকে আজীবন জড়িয়ে রাখবো বলে। আমার তো আর কিছু নাই।
এটুকু শুনেই হালিমা বাকরূদ্ধ। তার চোখ ফেটে আবারো জল আসে। সে অশ্রু লুকিয়ে সাথে আনা পিঠে, মিঠাই, নারিকেল, চালভাজা ইত্যাদি দীপার হাতে দেয়। আর বিস্ময়ে চেয়ে থাকে অই মুখটার দিকে। বয়সের বলিরেখা মুখে। কিন্তু কী নিদারুন বিশ্বাস এই নারীর ভেতর। বিশ্বাসের কি শক্তি!! তুলনা করার মতো কোন বস্তু বা মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে পায় না হালিমা।
৪.
মায়ের মুখে শোনা ঘটনা। হালিমা খাতুন আমার নানী। দীপাও আমার নানী ছিল। নানার ভাইয়ের স্ত্রী। সেদিন হালিমার বাসায় আমার মাও গিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের কথা।
নিঃসঙ্গ দীপাকে দেখতে জাকের মাষ্টার কখনো গিয়েছিল কি না কেউ জানে না। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের আসল কারনও কেউ জানে না। দীপাও কাউকে বলেনি। জীবনের অনেক অমীমাংসীত রহস্যের মতো এটিও চির অমীমাংসিত থেকে যাবে।
দীপা আহমদেরও মৃত্যু হয়েছে বেশ কবছর আগে। জাকের মাষ্টারের আগে আগে। তারা দুজনেই চলে গেছে এক মহান প্রেমের ও বিচ্ছেদের রহস্য অমীমাংসিত রেখে।
ঘটনার এটুকু জেনে মনে হয় জাকের মাষ্টার খুব স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছিল। কারন সে নিজে আবার বিয়ে করে সংসার নিয়ে সুখে দিন পার করেছে। সমাজে জাকের মাষ্টার ঘৃনিত মানুষ না হলেও পাঠক তাকে নিশ্চিত ঘৃনা করবে এই ঘটনা জেনে। আমিও করেছি যখন দীপার ঘটনাটা জেনেছি।
তবু ঘেন্নাকে ছাপিয়ে বিস্ময়টাই জেগে থাকে বেশী। রহস্যটা জানার অদম্য ইচ্ছেটা জেগেই থাকে। কি এমন প্রেম ছিল তাদের? একটা মানুষ প্রেমের জন্য কতটা ত্যাগ করতে পারে? দেশকালসময়ভেদে প্রেমের প্রকৃতি কি বদলায়? ভিন্নধর্মের দুটি মানুষের সাহসী প্রেম এই শতকেও পরম বিস্ময় জাগিয়ে রাখে আমার চোখে।
পোস্টটি ১৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নুশেরা's picture


ফ্যাক্ট ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন-- আর কিছু বলতে পারছি না।
নানীর কবর হয়েছিলো কোথায়?

নীড় সন্ধানী's picture


কবর কোথায় হয়েছিল জানতে পারিনি....শহরের কোন অজানা গোরস্থানে শুয়ে আছে হয়তো নামহীনা।

হাসান রায়হান's picture


অদ্ভূত। মানুষের জীবন বড় জটিল। লেখাটা ও জটিল হইছে।

হাসান রায়হান's picture


তবে আপনার নানা বইলা প্রেমটারে মহান দেখাইতে চাইছেন একজন অসহায় নারীকে চরম অনিশ্চয়তা ও বিপদে ফালাইয়া ছুইড়া দেওনের বর্বরতারে ছাপাইয়া।

নীড় সন্ধানী's picture


নানার প্রেমরে মহান দেখাইতে চাই নাই, দীপাই হচ্ছে লেখাটির মূল আগ্রহ

হাসান রায়হান's picture


আমার বলাটা রূঢ় হয়ে গেছে মনে হয়। আসলে লেখাটা পড়লে সব কিছু ছাপিয়ে দীপার উপর অবিচারের কথাটা মাথায় ঢুকে গেছে। ঘটনা সত্য বলেই অনুভূতি অন্যরকম।
ওহ,  পোস্ট কিন্তু প্রিয়তে।

নীড় সন্ধানী's picture


আরে ব্যাপার না, জাকের মাষ্টার আসলেই অন্যায় করছে। কিন্তু কেন করলো সেই রহস্যটা বের করার উপায় নাই। কেউ বেঁচে নেই সেই কালের।

ভাস্কর's picture


লেখা ভালো লাগছে। আর নুশেরা আসল কথাটা কইয়া দিছে...ফ্যাক্ট ইজ স্ট্রেঞ্জার দেন ফিকশন...

নীড় সন্ধানী's picture


সত্যিই তাই, ধন্যবাদ

১০

মুকুল's picture


হাসান রায়হান ভাইয়ের মত আমারও বর্বর মনে হচ্ছে আপনার নানারে। হোক ত্বালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী, কিন্তু কিভাবে তাকে স্রেফ রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে একজন মানুষ!

১১

নীড় সন্ধানী's picture


নানারে আমিও মাইনাস দিছি। থুক্কু নানার ভাই জাকের নানারে.......

১২

রায়েহাত শুভ's picture


আমি ডিলেমায় পরে গেলাম...
এটা কি কোনো গল্প না সত্যি ঘটনা???
ডিলেমা ডিলেমা...

১৩

নীড় সন্ধানী's picture


গল্প না, সত্যি ঘটনা

১৪

মেহরাব শাহরিয়ার's picture


জীবন জড়িয়ে থাকা  রহস্যগুলো সবচেয়ে দুর্ভেদ্য । দীপার জন্য মন খারাপ হল অনেক

১৫

নীড় সন্ধানী's picture


রহস্যের শেষ নাই মানুষের.........

১৬

শাওন৩৫০৪'s picture


ভুতুড়ে কাহিনী.......কিছু বলার খুঁইজা পাইতাছি না ভাই....

১৭

নীড় সন্ধানী's picture


ভুতুড়ে না, অদ্ভুতরে Smile

১৮

শাওন৩৫০৪'s picture


আমরা বন্ধুর প্রথম প্রিয় পোষ্ট....Smile

১৯

টুটুল's picture


কিছু বলার নাই...
প্রিয়তে

২০

নীড় সন্ধানী's picture


.........ধন্যবাদ টুটুল ভাই।

২১

শওকত মাসুম's picture


সত্য ঘটনা বলেই হয়তো পড়ে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হল।

২২

নীড় সন্ধানী's picture


পড়ার জন্য ধন্যবাদ মাসুম ভাই। ঘটনাটা অদ্ভুত বলেই লেখার জন্য উসখুশ করছিলাম অনেকদিন ধরে। কালকে ভ্যালেন্টাইন দিবসে মনে পড়ে গেল ওদের কথা।

২৩

মাহবুব সুমন's picture


বিচিত্র জীবন মানুষের

২৪

নীড় সন্ধানী's picture


সত্যি বিচিত্র!!

২৫

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


বুঝি না এইসব Puzzled

২৬

নীড় সন্ধানী's picture


আরো বড় হলে বুঝবেন Smile

২৭

জেবীন's picture


কত অদ্ভুত মানুষের জীবন, কি করে যে এতো টান আসে যাতে সবটা জীবন তার জন্য পার করে দেয়, আবার তারে ছাড়াই...  বুঝে আসে না, ...তবে এইক্ষেত্রে পড়তে পড়তে লাগছিল, দীপা'র ফিরে যাবার পথ ছিলো না হয়তো, কিন্তু শেষে পড়ে আবার গুলিয়ে গেলো......
ভাল লাগলো লেখাটা...

২৮

নীড় সন্ধানী's picture


ফিরে যাবার পথ ছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ফিরে যাবার ইচ্ছে ছিল না সেটা জেনেছি।

২৯

কাঁকন's picture


দীপার জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু খুব বেশি রহস্যময় মনে হচ্ছে না; জাকের মাস্টারের মোহ ভঙ্গ; স্বাভাবিক সামাজিক জীবনের স্বপ্ন ইত্যাদিই ছিলো বোধয়

৩০

নীড় সন্ধানী's picture


এই সময়ের কথা হলে রহস্যময় হতো না। কিন্তু একশো বছর আগের কথা ভাবলে......

৩১

সোহেল কাজী's picture


যাস্ট তব্ধা গেলাম।
সে সময়ে এমন প্রেম সত্যিই বিরল।
তারচেয়ে কঠিন একজন মহিলার একাকী বসবাস।
আপনার কৌটুহল কাটাতে একটা স্ট্রাকচার দাড়া করালামঃ
জাকের মাষ্টারের মোহভঙ্গ হয়েছিলো বলেই বোধ করি।
দ্বীপার স্বামী ও পুলিশ আসার আগে সবই ঠিক ঠাক চলছিলো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে সেদিনের ঘটনার পরই।
কারো স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী বাসায় এলে সেটা অবশ্যই তিক্ততার জন্ম দেয়ার কথা। অন্তত সমাজে চলতে গেলে অনেকের কঠাক্ষযে শুনতে হয়নি তেমনটা বলব না, যেহেতু সেই সময়ের সমাজটা চিলো অনেক রক্ষনশীল। আর এখানটাতেই জাকের মাষ্টার মানষিক পীড়ায় ভুগত। মানে তাদের বিয়ের আগে তার স্ত্রী ও তার প্রাক্তন স্বামীকে কল্পনা করতে পারছিলোনা হয়তো। তার উপর ঘরের বাইরে বেরুলেই একটা হীনমন্যতায় ভুগত। কেউ তার দিকে তাকালেই উনি ভাবতেন এ বেটা নিশ্চই তার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর পুলিশ নিয়ে তৈরী নাটক নিয়ে ভাবছে আর মনে মনে হাসছে। এই জিনিষটাই হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
ততকালীন সময়ে দুই সন্তানের জননীর প্রেমে পড়েছিলেন অর্থাৎ দীপা অত্যন্ত রূপবতী ছিলো। আর সাংসারীক জীবনেও হয়তো দ্বীপা চরম অসুখি ছিলো। মিলিত রসায়নই জন্ম দিয়েছে এমন বাঁধভাঙ্গা প্রেমের আর মোহভঙ্গে এমন অমানবিক বিচ্ছেদের।
যাইহোক লেখনি ভালো লেগেছে। লাইক্করলাম। Smile

৩২

নীড় সন্ধানী's picture


বিশ্লেষন জটিলতম হয়েছে.........এরকম হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে.......বিশ্লেষনে ডাবল প্লাস++

৩৩

বাউল's picture


চমকিত হলাম কাহিনী পড়ে। আমার কাছে দীপার প্রেমটাকেই বড় মনে হচ্ছে। আর বিচ্ছেদের কারন যা-ই থাকুক, তালাকের পর দীপারে শহরে রাস্তায় একা ফেলে যাওয়াটা চরম অমানবিক লাগলো। মাওলানা সমাজ, সংস্কারকে ঠেলতে পেরেছিলেন কারন তার তখন পারিপার্শ্বিক ছিলো কোলকাতা, তার চারপাশে ছিলোনা পরিচিত পরিবেশ, নিজ সমাজ, ভ্রুকুটির তোয়াক্কা তাই তখন করেন নি। পরবর্তীতে নিজ ঘরে ফেরার পর, মোহ ভঙ্গ ঘটেছিলো, একে একে দৃশ্যমান হয়েছিলো হয়ত সমাজের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য সব। হয়ত সেজন্য তিনি দায়ী করতেন দীপাকে। সেখান থেকে জন্ম নেয় তিক্ততা। কিংবা এমনও হতে পারে মাওলানা হয়ত ফের বিয়ে করতে চাইছিলেন, সে কারনে হয়ত তালাক। কি জানি!

৩৪

নীড় সন্ধানী's picture


দিনশেষের হিসেবে দীপার প্রেম অনেক উপরে স্থান পায়। মোহভঙ্গের ব্যাপারটা ওরকমও হতে পারে। মানুষ মাত্রেই বদলায়।

৩৫

তানবীরা's picture


নীড়দা, দীপা এতো শক্তি কোথায় পেলো কে জানে? মনটা খারাপ হয়ে গেলো লেখাটা পড়ে।

৩৬

নীড় সন্ধানী's picture


দীপার মনোবলের উৎস আপনারাই ভালো বলতে পারবেন কিন্তু। পুরুষ অতটা ত্যাগ পারে না।

৩৭

মীর's picture


এই লেখাটা আমার আজকের দিনের প্রথম ধাক্কা।

৩৮

নীড় সন্ধানী's picture


আমি প্রথম যেদিন শুনেছিলাম আমার জন্যও ছিল ধাক্কা! Stare

***************************************

 পহেলা ফাল্গুনে জ্যৈষ্ঠের স্মৃতিচর্বন


ভয়ানক গরম পড়ছে আজ। জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা দুপুর। ক্লাস শেষে কোনমতে ষ্টেশানগামী শেষ বাসটা ধরে ঝুলে পড়লাম। ষ্টেশানে এসে দেখি ট্রেনে ঠাসাঠাসি ভীড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুপুর দেড়টার ফিরতি ট্রেনের যাত্রাটা মোটেও সুখকর নয়, বিশেষ করে এই দাবদাহে। কোন বগিতেই সুঁচ ঢোকার জায়গা নেই। বগির পাদানি গুলো পর্যন্ত দুজন করে বসে দখল করে রেখেছে। হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে যাবার আশাও মাঠে মারা গেল।

বিকল্প পথে নাজিরহাটের বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু পকেটে আছে সাড়ে সাতটাকার মতো। আড়াই টাকা বাসভাড়া তিনটাকা রিকশা ভাড়া চলে গেলে দুই টাকা দিয়ে বিকেলটা পার করা যাবে না। একটা গোল্ডলীফেই দুইটাকা চলে যাবে। নাহ এই মাগনা ট্রেনই ভালো। আবার ট্রাই দেই।

পেছনের দিকে একটা মালগাড়ীর বগি দেখা গেল, ঢোকা যাবে ওখানে। বাছাবাছি না করে ওখানেই উঠে গেলাম। ওটাও ভরে গেল পাঁচমিনিটে। মালগাড়ীর বগিতে কোন আসন থাকে না। পুরোটা একটা লোহার বদ্ধ খাঁচা বিশেষ। দুপাশে পাঁচফুটের মতো খোলা মালামাল ওঠানামা করার জন্য।(ওরকম মালবাহী বগি ভার্সিটির ট্রেনে যুক্ত করার কোন যুক্তি আমি আজো পাইনি)

মালগাড়ীতে ধরার মতো কিছুই নেই। দুই পায়ের ব্যালেন্সই একমাত্র ভরসা। সেই ভরসায় মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পুরোনো লোহার জং ধরা বগি। বয়স একশো বছরের কম না। আগাগোড়া মরচে দিয়ে ঢাকা। মাথার উপরে.... পায়ের নীচে... ডানে..... বামে... শুধুই লোহা আর লোহার মরচে। এই গরমে লোহাগুলো যেন ফুটছে, আর আমাদের ফোটাচ্ছে। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাবাব হয়ে যাই কিনা।

ট্রেন ছাড়তেই একটু হাওয়ার পরশ মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ওই হাওয়াটাও বাইরের উত্তাপে তেতে আছে। মালগাড়ীতেও প্রচন্ড ভীড়। একজন আরেকজনের গায়ে ঠেকা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইছোট্ট জায়গায় ছাত্রছাত্রী পঞ্চাশজনের কম হবে না। সবাই ঘামছে আর হাঁসফাস করছে। আমার অবস্থা একটু বেশীই কাহিল সেদিন। কারন আমি এমনিতেই বাকীদের তুলনায় ছোটখাট আর দাঁড়িয়েছি মাঝখানে। ওখানে বাতাস প্রবেশ করছে না। পুরো শরীর ভিজে চুপচুপে। ঘামে মাথার চুল ভিজে পানি ঝরছে।

তখনো ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ট্রেনের সেই গরমে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারিনি। মালগাড়ীতে আগেও দুয়েকবার উঠেছি। কিন্তু আজকের মতো জঘন্য অবস্থা আর হয়নি। জান বেরিয়ে যায় অবস্থা। ইচ্ছে হচ্ছে ভীড় ঠেলে লাফ দিয়ে নেমে জীবন জ্বালা জুড়াই এই লোহার নরক থেকে। ট্রেন কতক্ষন চলেছে জানি না। হঠাৎ ঘাড়ে একটা বাতাসের পরশ লাগলো। মোলায়েম এবং অপেক্ষাকৃত শীতল। ভাবলাম বাহ্ দারুন তো। এত মানুষের ভীড় সরিয়ে কোন ফাঁকে এই সুমতির বাতাস আমার কাছে পৌঁছে গেছে।

একটু পর পেছনে তাকাতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, ওটা মোটেও প্রকৃতির হাওয়া নয়। আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ানো পেছনের একটা মেয়ের হাত পাখার বাতাস। মেয়েটার অজান্তেই তার বাতাসের কিছুটা আমার ভাগে চলে আসছে তার কাঁধ পার হয়ে। আমি চুপচাপ ওই অপ্রত্যাশিত বাতাস উপভোগ করে যেতে লাগলাম। সেই দোজখে ওই অচেনা মেয়েটার হাতপাখাটা আমাকে এয়ারকন্ডিশনের মতো স্বস্তি দিল।

ধড়ে যেন প্রান ফিরে এল। ভীষন ভীষন কৃতজ্ঞ বোধ করলাম মেয়েটার প্রতি। পেছনে না তাকানোর ভান করলাম। যেন অনিচ্ছায় বাতাস খাচ্ছি। কিন্তু আরো কিছু সময় পর খেয়াল করলাম বাতাসটা আগের চেয়ে একটু যেন বেশীই লাগছে। পেছন ফিরে আমি তো তাজ্জব!! মেয়েটার হাতপাখা আরো পেছনে এসে আমার ঘাড় বরাবর বাতাস দেয়া শুরু করেছে। সচেতন ভাবে সীমানা লংঘন করেছে হাতপাখাটা। শুধু তাই নয় এবারের বাতাসের প্রায় পুরোটা আমাকেই দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমি বাতাসের জন্য কিরকম কাঙ্গাল হয়ে আছি। আহ কি মায়া রে। আমি চুপচাপ ওই জায়গায় দাড়িয়ে বাতাসটা দিয়ে প্রান জুড়াচ্ছি আর ভাবছি নামার আগে মেয়েটাকে অবশ্যই একটা বিশেষ ধন্যবাদ দেবো। এরকম একজন মায়াবতীর সাথে পরিচয়ের লোভও হলো।

কিন্তু না। বিধাতার ইচ্ছা ছিল না।

ট্রেনটা ষোলশহর আসতেই মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে নেমে গেল বগি থেকে। আমার কিছু বলা হলো না, ধন্যবাদ রয়ে গেল পকেটে। "চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে............." কি এক আক্ষেপ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে। এই চল্লিশ মিনিটের যাত্রাপথে এমন মায়াবী হাওয়া দিয়ে যে আমার প্রানটা তাজা রাখলো, তাকে কিছুই বলা হলো না, এমনকি তার চেহারাও দেখলাম না আমি।

হে অচেনা মায়াবতী, আপনার সেই হাত পাখার বাতাসকে আমি এখনো কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করি আজ একুশ বছর পরেও।

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


কোন মায়াবতীর জন্য এটাই কি প্রথম? Wink

নীড় সন্ধানী's picture


অচেনা মায়াবতীর জন্য পরথম Smile

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


আমারে কেউ বাতাস করলো না আইজ পর্যন্ত Sad

নীড় সন্ধানী's picture


তাহলে তো আপনার সম্ভাবনা উজ্জ্বল Smile

সোহেল কাজী's picture


আহাহা জৈষ্ট মাসের গরমের মায়াবতীর হাত পাখার বাতাস Wink
শুভ বসন্ত
Dhaka

নীড় সন্ধানী's picture


কার ছবি দিলেন? আপনার একান্ত কেউ? Wink

সাঈদ's picture


জৈষ্ঠ্যে বসন্তের বাতাস !!!

নীড় সন্ধানী's picture


হা হা.....খুব অসময়ে হয়ে গেল নাকি? Smile

নড়বড়ে's picture


চমৎকার লাগলো! আমার এক কাজিন পড়ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ওর থেকে শাটল ট্রেনের কাহিনী শুনেছি। Innocent

১০

নীড় সন্ধানী's picture


শাটল ট্রেনের প্রতিটি যাত্রায়ই একেকটা কাহিনী থাকে Smile

১১

নুশেরা's picture


আহা শাটল ট্রেন... ভীড়ের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় আমি দুইবার ফেইন্ট হইছিলাম, ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই... ফেইন্ট হওয়ার মজা আছে। সাথে সাথে পুরা একটা লম্বা সিট খালি করে ছেলেমেয়েরা সরে যায়... একবার জ্ঞান আসার পরও আধঘন্টা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম...
পরে খোলামেলা চেয়ার কোচ ধরণের বগি আসলো, আর কাউকে পড়ে যেতে দেখিনাই

১২

নীড় সন্ধানী's picture


ফেইন্ট হবার দারুন উপাকারিতা আমিও একবার পাইছিলাম, পোষ্টে লেখার জন্য জমা রাখলাম আপাতত Smile

১৩

নুশেরা's picture


ভালো কথা, ইঞ্জিনে উঠেন নাই কখনো? আমার এক বান্ধবী ষোলশহর স্টেশন থেকে ইঞ্জিনের নিয়মিত যাত্রী ছিলো। ট্রেনের লোকোমাস্টার আব্বাসভাইকে মনে আছে নিশ্চয়ই। উনি একদিন বলছিলেন "দীপাআপা ট্রেন চালায় নিতে পারবো "

১৪

নীড় সন্ধানী's picture


আপনার বান্ধবী এখন কোথায় আছে? ওনারে লাল সেলাম। ট্রেনের ছাদের যাত্রী হইছি কয়েকবার, কিন্তু ইঞ্জিনের যাত্রী হইবার দুঃসাহস করি নাই কখনো Smile

১৫

নুশেরা's picture


বান্ধবী আছে মুরাদপুরে। তারে লাল সালাম পৌঁছায় দিবো।
আপনি নির্ঘাত বটতলীর যাত্রী ছিলেন। আমি ঝাউতলার। ষোলশহরের একটা গ্রুপ বগিতে বগিতে চান্স না খুঁজে সোজা ইঞ্জিনে চড়ে বসতো। আব্বাস ভাই মিনমিন করে বলতেন অন্তত সামনের একটা কাঁচ যেন ভীড়ের চাপে আড়াল না হয়... সেই ওনাকেও কয়েক বছর আগে ছুরি মারে কিছু ছাত্র...

১৬

নীড় সন্ধানী's picture


হ আমি বটতলীর যাত্রী ছিলাম। সেই অচেনাও কিন্তু ঝাউতলার নামছিল। আপ্নাদের কোন প্রতিবেশী আপা হইতারে Smile
কিন্তু ড্রাইভার আব্বাস ভাইরে চিনলাম না। তবে একবার মোটা করে এক ড্রাইভাররে জেট বিমানের বেগে ট্রেন চালানোর দায়ে ফতেয়াবাদ নামিয়ে কিলাইতেছিল পোলাপান, উনি না তো? Sad

১৭

নুশেরা's picture


আরে কাহিনী কোন্ সালের কন তো! দেখি চিনতে পারি কিনা Smile
না, মোটাতাজা উনি আব্বাস না। দুবলা কিছিমের ছিলেন।

১৮

নীড় সন্ধানী's picture


কাহিনী ৯২-৯৩ সালের হবে। আমরা তখন থার্ড ইয়ারে বোধহয়। আপনারা ঢোকার আগে।

১৯

নুশেরা's picture


আহারে, অল্পের জন্য মিস করছি।

২০

রেজওয়ান শুভ's picture


ম্যাক্সিম গোর্কি একটা ছোটোগল্প পড়সিলাম , সেও আপনার মতো লাস্টের প্যাড়ায় ফাটায়া দিয়া গেসিলো , গল্পটা আমার এখনো মনে আছে , আজীবন থাকবে। আপনারটা আজীবন থাকবে গ্যারান্টি দিতে পারতেসি না , তবে খুব ভালো যেহেতু লিখসেন , অনেকদিন পর্যন্ত রাখা উচিত।
আহারে  প্রেম , এই জীবনে আর হইলো না .......

২১

নীড় সন্ধানী's picture


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত বড় সার্টিফিকেট দেবার জন্য। ভাল থাকবেন Smile

২২

মুক্ত বয়ান's picture


সিরাম সিরাম সিরাম।
আপনেও তো দেখি আমাগো দেশাইত্তা ভাই!! চাঁটগাইয়া। Smile
আমি ভার্সিটিতে ৩/৪ বারই গেছি। ২ বার শাটল ট্রেনে আসছি। পোলাপাইনের কখনো অভাব হয় নাই। Sad সিট সবসময়ই ম্যানেজ হইয়া যায়।
ইস। কখনো কারো বাতাস খাওয়া হইল না। Sad

২৩

হাসান রায়হান's picture


কপাল ভাই আপনের!

২৪

নীড় সন্ধানী's picture


কপালের দোষ নাই, সব গরমের দোষ Smile

২৫

বিষাক্ত মানুষ's picture


আহা !

২৬

শাওন৩৫০৪'s picture


..এইসব ছোটোখাটো মায়া খুব ভালো লাগে....

২৭

তানবীরা's picture


বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে বন্ধু বসন্ত বাতাসে।

২৮

নীড় সন্ধানী's picture


******************************************

 একটি ভেলা, একটি ঝরনা এবং একটি ভ্রমনের সারসংক্ষেপ

লোকটা কাঠুরে। পাহাড়ী বৃক্ষ থেকে জ্বালানী সংগ্রহ করার জন্য ভেলা বানিয়ে উজানে গিয়েছিল। হিমালয়ের বরফ গলা খরস্রোতা নদী। নদীতীরে বসে ভেলাটা দড়ি দিয়ে ধরে রেখে কাঠুরে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল খানিক। দিবানিদ্রার ঝিমানিতে দড়িটা কখন ফসকে গেল হাত থেকে কাঠুরে টেরই পেল না।

সেইক্ষন থেকে ভেলাটার অনিশ্চিত ভাসন্ত জীবন শুরু। দিন যায়, মাস যায়। ভেলাটি নানান আঁক বাঁক ঘুরতে ঘুরতে কোথাও স্থির হতে পারে না নির্জন পর্বত সংকুল অরন্যে। ভাসতে ভাসতে ছোট্ট একটা উচ্ছল ঝর্নাধারার সাথে মিলিত হলো একদিন। যেখান থেকে হিমালয় প্রবাহের নদীগুলোর জন্ম হয় ঠিক সেইখানে ভেলাটি আটকে ছিল একটা ঝোপের লতায়। ঝরনার আনন্দধারা স্পর্শ করলো ভেলাটিকে। তাই প্রথম সুযোগেই ভেলাটি নিজেকে নিশ্চিন্তে ভাসিয়ে দিল পাহাড়ী ঝরনার একাকীত্বে।

ভাসতে ভাসতে ঝর্নাকে সঙ্গী করে প্রকৃতির বিপুল সাম্রাজ্যকে নতুন চোখে দেখতে পেল সে। ঝর্নাধারা তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বুনো অর্কিডের সাথে, পাথরে লেগে থাকা প্রায় অদৃশ্য সবুজ শেওলার সাথে, অচেনা ডাকের পাখীদের সাথে, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে।

দক্ষিন সাগর থেকে উড়ে আসা মেঘেরা যেখানে বাধা পেয়ে বৃষ্টি ঝরায় একদিন ওরা থামলো সেই খানে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল উপত্যকা জুড়ে। ধোঁয়াশা সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঝর্নাধারা একটা অচেনা অথচ খুব পরিচিত সুরের গান গেয়ে শোনালো তাকে। বৃষ্টি বিষন্ন ভেলাটিকে সেই গান যেন স্পর্শ করলো কোথাও। সেই সাথে বুঝতে পারলো এই আপাতঃ উচ্ছল ঝরনাটির কোথাও লুকোনো ক্ষত আছে একটা।

বৃষ্টি থামার পর আবারো পথ চলা শুরু হলে দেখলো ঝরনার বিষন্ন সুর কেটে গিয়ে তখন উজ্জল রোদ্দুর চিকমিক করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে এই ঝরনাটিই করুন সুরে কি গান গেয়েছিল। দিনের পর দিন কলকল করে ঝরনা বয়ে চলে, ঝরনার গান শুনতে শুনতে বয়ে যায় ভেলাও।

পর্বতের উদ্দাম পথ চলা যখন সমতল সন্নিকটে একটু স্থিরতায় এসেছে তখন ভেলাটি ঝরনার কাছে মুখ খুললো, নিজের বহু পুরোনো লুকোনো এক ক্ষতকে উন্মুক্ত করলো ঝরনার কাছে। বেড়ে ওঠার কালে কোন এক আঘাতে তার প্রান বিলুপ্ত হবার পূর্বে সেও ছিল একটা পত্র পল্লবিত সবুজ বৃক্ষ। সেটাই তার আসল পরিচয়। ভেলাটির বর্তমানের পরিচয়হীনতার বেদনা, স্থানচ্যুত হবার বেদনা ঝরনাকে প্রবলভাবে স্পর্শ করলো।

ঝরনা পরম আদরে আশ্রয় দিল ভেলা এবং তার সকল বেদনাকে। একদিন ঝরনারও মুখ খুললো, জানা গেল তারও আছে অজানা বেদনার ইতিহাস। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভেলাটি আবিষ্কার করলো ঝরনার বেদনা যেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। ঝরনাটি যেই ফল্গু ধারার সাথে বয়ে যাচ্ছিল, এক আকস্মিক ভুমি ধ্বস এসে রূদ্ধ করে দিয়েছিল তার অগ্রযাত্রা। প্রানবন্ত ধারাটিকে মাঝ পথে হারিয়ে ফেলে দিশেহারা মুমূর্ষু হয়ে পড়ে ছিল ঝরনাটি। ঠিক সেই সময়ে ভেলাটিও এসে আটকে গিয়েছিল ঝরনার কাছাকাছি লতাঝোপে।

নতুন মেঘের বৃষ্টিতে যখন ঝরনার বুকে স্রোতের জন্ম হলো, তখন ঝরনাটি প্রান পেল, প্রান পেয়ে প্রথম চোখ মেলে দেখলো ভেলাটিকে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ভেলাকেই তার সব গান শুনিয়ে যায় ঝরনা। ভেলাটিও এতদিন পর পথ চলার আনন্দ পেল। দুজনের একসাথে পথ চলা সেই থেকে শুরু। গন্তব্য অনিশ্চিত জেনেও পথ চলা থামে না। কারন এ ভ্রমন কেবলই ভ্রমন। এ ভ্রমনের কোন গন্তব্য নেই, আছে কেবল আনন্দ।
পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আবদুর রাজ্জাক শিপন's picture


এভাবেই আমরা একেকটা গন্তব্যহীন ভেলা হয়ে ভেসে যাই..
সুন্দর !

নুশেরা's picture


ইয়ে মানে নীড়দা, আজ কি আপনার বিবাহবার্ষিকী? সেরকম একটা ফ্লেভার পাওয়া গেলো Smile
চমৎকার লাগলো।

নীড় সন্ধানী's picture


খাইছে..... আমার বিবাহ বার্ষিকী ২৫ ডিসেম্বর
আজকে হলো সুবর্নার বিয়ে বার্ষিকী Wink

নুশেরা's picture


আমি কিন্তু সুবর্ণার পোস্ট আসার আগেই আপনার লেখায় কমেন্ট করে গেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি ওনার লেখায় বিবাহবার্ষিকীর কথা! মুহূর্তের জন্য বেকুব হয়ে গেছিলাম। আবার ভাবলাম, ইয়ে মানে উনারা... Tongue

শাওন৩৫০৪'s picture


চমৎকার আইডিয়া...সুন্দর হৈছে.......(কিন্তু, কাঠুরে বাড়ি ফিরলো ক্যাম্নে?Tongue out)

টুটুল's picture


জট্টিলস বস Smile
ভালো লাগলো অনেক

সুবর্ণা's picture


আপনার লেখা পড়ার পর আবার পড়তে হয়..বার বার পড়তে হয়। আরো কয়েকবার পড়ে তারপর কমেন্টস করবো।

নীড় সন্ধানী's picture


লেখার অবস্থা এত খ্রাপ হইছে পাঠককে কয়েকবার পড়ে বুঝতে হয় Sad

শওকত মাসুম's picture


জট্টিলস

১০

নীড় সন্ধানী's picture


থ্যাংকু Smile

১১

হাসান রায়হান's picture


কীভাবে যে এরম লেখেন!

১২

নীড় সন্ধানী's picture


কইলজা দিয়া Wink

১৩

সাঈদ's picture


সকালে পড়লাম , অফি থেকে এসে আবার পড়লাম।
নিজেকে ভেলার মতই মনে হয় দাদা , কিন্তু ঝরনার গান শোনানর কেউ নাই।

১৪

নীড় সন্ধানী's picture


গান ঠিকই শুনাইতেছে হয়তো, কিন্তু সাউন্ড মিউট করা আছে বোধহয় Smile

১৫

জমিদার's picture


বারো ঘন্টা বাসভ্রমনের বিনিময়ে তিন ঘন্টার বইমেলা দর্শনএই লেখাটা কি আপনার ??

১৬

নীড় সন্ধানী's picture


জী ভ্রাতা Smile
ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭

তানবীরা's picture


কারন এ ভ্রমন কেবলই ভ্রমন। এ ভ্রমনের কোন গন্তব্য নেই, আছে কেবল আনন্দ।

১৮

নীড় সন্ধানী's picture


ধন্যবাদ আপনাকে Smile

১৯

কাঁকন's picture


এইটা কি প্রতিকী গল্প Innocent

২০

নীড় সন্ধানী's picture


এটি একটি কাল্পনিক গদ্য Smile

২১

আশরাফ মাহমুদ's picture


ভালো লেখা।

২২

নীড় সন্ধানী's picture


ধন্যাপাতা......Smile

২৩

জ্যোতি's picture


অনেকবার পড়লাম।মুগ্ধিত, হিংসিত হইলাম।

২৪

নীড় সন্ধানী's picture


হিংসিত হইবার কারনডা কি Smile

২৫

জ্যোতি's picture


এত ভালো লিখলে হিংসিত না হয়ে কি করব?

২৬

সোহেল কাজী's picture


আচ্ছা নীড়'দা পোষ্টটাকে যতবার পড়লাম ততোবারই এইতো আপন লাগছে কেন? মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমারই কথাগুলো শিল্পীর তুলিতে টেনে দিয়েছে।
সবাই শুধু ভেলায় করেই ভেষেই আনন্দ পাই, কেউ বুঝেনা সেই গাছের কি কষ্ট যে এখন নাম বদলে ভেলা হয়ে গেলো
পোষ্টে হাজার তারাগো

২৭

নীড় সন্ধানী's picture


শুনে ভালো লাগলো এই কথাগুলো আপনারও জেনে। গাছের কষ্ট কেউ মনে রাখে না রে ভাই Sad


********************************************************

 কপিতা: মিস কল


হে অচেনা, আমি তোমাকে একটুও মিস করি না।
তবু অচেনা কোন নম্বর থেকে মিস কল এলে
ব্যাকুল হয়ে দেখি এটা সেই অজানা নাম্বার কিনা।
নেটের কসম আমি তোমাকে কখনোই মিস করি না।
পোস্টটি ৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


এই কপিতার জন্য আপনারে সাহিত্যে অস্কার দেয়া উচিত।

নীড় সন্ধানী's picture


সালাদ সহ নমিনেশান পাঠায়া দেন Smile

সোহেল কাজী's picture


হাঃহাঃহাঃ জুস

নীড় সন্ধানী's picture


কিয়ের জুস দিলেন, মাথা ঘুরায় না তো?

সোহেল কাজী's picture


বেদেনার জুস Smile

নীড় সন্ধানী's picture


তাই বলেন!
ভুটানী রূহ আফজার রঙ এইরকম তো, ভাবছিলাম........... Wink

পুতুল's picture


বেশি মিস করা ভালুনা।।

নুশেরা's picture


জটিল! সুযোগের অভাবেই মিস করেন না বোঝা গেলো  ।

নীড় সন্ধানী's picture


একদম মিস করি নাহ Smile

১০

কাঁকন's picture


আম্রাবন্ধুর পর্থম কপিতা

১১

নীড় সন্ধানী's picture


টাটকা শীতের কপিতা Smile

১২

জেবীন's picture


বাহ! বাহ!......Smile
তা এটা কি শীতের ফুলকপিতা নাকি বাধাঁকপিতা!?
জানলে বুঝতাম, তরকারি নাকি ভাজি হিসাবে হজম করবো! Laughing out loud

১৩

নীড় সন্ধানী's picture


মাছ থাকলে ফুলকপিতার ঝোল, মাছ না থাকলে বাঁধাকপিতা ভাজি Smile

১৪

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


নেটের লাইন ঠিকাছে তো? Wink

১৫

জমিদার's picture


 আমপের কবতে পড়ে যা বুঝলাম
আমপেরা মিসকল মিসকল খেলিতেচেন  Wink Wink

১৬

টুটুল's picture


মিস চ্রম খ্রাপ... কষ্ট বাড়ায়

১৭

মানুষ's picture


পছন্দ করেছি

১৮

তানবীরা's picture


নেটের কসম আমি তোমাকে কখনোই মিস করি না।
হ হ হ

১৯

অদিতি's picture


ভালই হইছে

২০

সুবর্ণা's picture


পোস্টটা মিস করছিলাম। কসম নেটের আমিও কাউরে মিস করি না।


****************************************

 অতৃপ্ত আত্মার বিশ্বভ্রমন (ইহা একটি আঁতেলীয় পোষ্ট, ভুত-পেত্নী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশ নিষেধ)


ভ্রমণ ছিল কঠিন নেশা জীবদ্দশায়।

বিশ্বজুড়ে ঘুরবো এবার, উল্টেপাল্টে দেখবো এবার জগতটাকে - 'কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্নিপাকে'। এলেবেলে পথের বাঁকে অনেকটা পথ হাঁটা হলেও, দীর্ঘ জীবন ৬০টি বছর বেঁচে থেকেও, বিশ্বজুড়ে হয়নি আমার দাপিয়ে বেড়ানো। সাধ-সাধ্যের দেখাদেখি হয়েছে কখনো, দীর্ঘ মোলাকাতের সুযোগ হয়নি একটি বারও।

যখন আমি সদ্য তরুণ…... তখন আমর অঢেল সময়, অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্য। সমস্যাটা টাকা-কড়ির, নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা বহুদুরের স্বপ্ন তখন, দেশ ভ্রমণে যাই কি করে। আরো একটু বড় হও, অপেক্ষাতে রইলাম আমি।
যখন আমি মধ্যযুবা…... শক্তি তখন অফুরন্ত, অর্থেরও নেই সমস্যা। কিন্তু আমি ভীষণ ব্যস্ত প্রচুর প্রাচুর্যে। সময় কোথায় বিশ্ব ঘোরার? ওইবেলাতেও হয়নি যাওয়া।

সময় যখন প্রৌঢ়ত্বে ...... তখন আমার প্রচুর সময়, ছিল অঢেল অর্থও। কিন্তু আমি ততদিনে বিত্ত দৌড়ে রিক্ত মানুষ, রোগ-ব্যাধিতে বিধ্বস্ত। দেশ-বিদেশে ভ্রমণ হলো হাসপাতাল টু হাসপাতালে। বিশ্ব দেখা দুরেই থাক, এমনকি সেই হাসপাতালের বারান্দাতে, খেয়াল করে হয়নি দেখা, ম্যাগনোলিয়ার কুঁড়িটিও। বিশ্ব আমার শেষবেলাতেও থেকেই যে যায় অদেখাতেই।

এই পারেতে আসার পরে শখটা যেন পুরন হলো। আত্মা আমার হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় সারা পৃথিবীতে। নাই টিকেটে- নাই ভিসাতে- নাই পাসপোর্টে। বিশ্বজুড়ে অবারিত সীমান্ত তার, অবাধ যাতায়াত । তবু যেন আত্মা আমার অতৃপ্ত যে বড়ো। অসময়ে ভ্রমণ করার বিড়ম্বনা যার, মানব জনম কেটে গেছে দ্বিধায় দ্বিধায় দ্বিধায়.....।

[কপচিত দর্শন - প্রত্যেক মানুষের শখ-সাধ-আহ্লাদ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল -- সময়, অর্থ, শক্তি। মানুষের জীবনে এই তিনটি জিনিস একই সময়ে এক সাথে থাকার ঘটনা অতি বিরল। দৈবাৎ যাদের একসাথে তিনটাই থাকে তারা অতি অসাধারণ অদ্ভুত ভাগ্যবান মানুষ]
পোস্টটি ১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নজরুল ইসলাম's picture


আপনার মতোই আমার দশা। গোটা পৃথিবী ঘুরে দেখার সাধ নিয়ে বসে থাকি ঢাকার এক চিপায়। যখন অঢেল সময় ছিলো, তখন টাকা ছিলো না। বাসভাড়ার অভাবে মাইলের পর মাইল হাঁটছি।
এখন যদিও অঢেল নাই, তবে মোটামুটি কিছু আছে, টেনেটুনে কম পয়সায় ঘুরে আসতে পারবো আশেপাশে কোথাও থেকে। কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব।
এখন অপেক্ষায় বসে থাকি, একদিন টাকাও হবে, সময়ও জুটবে কপালে। কী জানি, হয়তো আমারও তখন আপনার প্রৌঢ়ত্বের মতোই দশা হবে...
কী আর করা...

নীড় সন্ধানী's picture


সেই যে একটা গান আছে না সত্তর দশকের, খান জয়নুল গেয়েছিল বোধহয় কোন সিনেমায় - 'টাকা তুমি সময়মত আইলা না' :(

লোকেন বোস's picture


সত্যিই, যদি গোটা জীবনটাই কাটিয়ে দেওয়া যেতো দেশ বিদেশ ঘুরে ঘুরে

নীড় সন্ধানী's picture


শেখ শাদী বা ইবনে বতুতার যুগ হলে সম্ভব ছিল, তখন প্লেন ছিল না, ভিসা-পাসপোর্টও ছিল না। এখন প্লেন আছে ভিসা পাসপোর্টের কেরামতিও আছে।

সোহেল কাজী's picture


পরজনম বলে কিছু নাই যদিও তবু ভাবতে ইচ্ছে করে পরজনম আছে। আর এই জনমের কোন ভালো কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাকে চুজ করতে বলছে এই তুই কি হয়ে আবার জন্ম নিতে চাস। আমি পাখি হয়ে জন্মাবো। কাউয়া বা শকুন টাইপ পাখি যেই খাওয়া হারাম
তারপর ডানা মেলে দিবো আকাশে, মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুরব দেশ থেকে দেশান্তরে। শকুনী থাকলেতো কথাই নাই। (চিন্তার বিষয় কাউয়ার ফিমেনিন জেন্ডার কি? মহিলা কাউয়া হওয়ার কোন সম্ভাবিলিটিতো দেখিনা)

নীড় সন্ধানী's picture


কাকের স্ত্রীলিংগ কাকা বা কাকী হতে পারতো, কিন্তু দুটোই বুকড্। :(

আত্তদ্বিপ's picture


তাইতো বলি আন্নের স্টাটাস "মানুষ আমি, আমার কেন পাখির মত মন" এইটা কেন?

হাসান রায়হান's picture


পরজনমে আমি ইউরিপিয়ান হবো। আমার পরিচিত এক ডাচ ভুটান পর‌যন্ত ঘুইরা লাইছে।

নীড় সন্ধানী's picture


বৃটিশ অপছন্দ হলে স্পেনিশ বা পূর্তগীজ হওয়ার চেষ্টা কইরেন, তাইলে ইসাবেলের আশীর্বাদে কলম্বাস বা ভাস্কো দা গামা হওয়া সম্ভব হবে। :)

১০

শওকত মাসুম's picture


ঠিক। তিনটা মেলে না। তবে আমি মনে হয় একটু ভাগ্যবান। ফ্রি ফ্রি কয়টা দেশ ঘুরতে পারছি। নিজের টাকায় তো আর সম্ভব না।

১১

নীড় সন্ধানী's picture


এই ভাগ্যের জন্য সাংবাদিকদের আমি আজন্ম হিংসা করে যাবো। পরজনমে সাংবাদিক হইয়া জন্ম নিতে চাই :)

১২

অতিথি পাখি's picture


এই দিক থেকে প্রভু মনে হয় আমাকে দয়া করেছেন ।।
ক্লাশ থ্রী এর পর থেকেই বাহিরে বাহিরে বাদাইম্মার মত বড় হইছি ।।
কইতে পারেন ষ্ট্রীট বয় !!
দেখেছি অনেক , বুঝেছি কম , শিখেছি আরো কম !!! এই আর কি !!

১৩

নীড় সন্ধানী's picture


বাদাইম্মাকে সভ্য ইংরেজীতে ভ্যাগাবন্ড টুরিষ্ট বলে, ষ্ট্রীট বয় বলে না!! :)

১৪

নুশেরা's picture


কী আচানক ব্যাপার, এই প্রথম একটা আঁতেলীয় পোস্ট দর্শনসহ বুঝতে পারলাম। থ্যাংকস নীড়দা।

১৫

নীড় সন্ধানী's picture


যেহেতু আপনি মানবকুলের অন্তর্ভুক্ত, আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন আঁতেল দর্শন :)
ভুতপেত্নীদের ঢুকতে বারন করছি সেই কারনে, নানান অব্যাখ্যাজাত আপত্তি তুলতো তারা :)

১৬

আত্তদ্বিপ's picture



১৭

নীড় সন্ধানী's picture


কাইন্দেন না, আবার আসিব ফিরে এই লাল সবুজের বাংলায়.........

১৮

আত্তদ্বিপ's picture


তাইলে তো আরো হাজার বার মরতেও সমস্যা নাই

১৯

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


সময়-অর্থ-শক্তির উপ্রে মনে হয় ইচ্ছাশক্তির কথাটা বলা দরকার। শখ হলেই হয় না, যথেষ্ঠ পরিমাণে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হয়।
সামান্য অর্থ জমলেই চিপাচুপা দিয়া সময় বের করে আমি বেরিয়ে পড়ি। মনমতো ভ্রমণসঙ্গী আমার কাছে সময়-অর্থ-শক্তির চাইতে বেশি ইম্পোর্টেন্ট!

২০

নীড় সন্ধানী's picture


অবশ্যই ইচ্ছাশক্তি প্রধানতম। ইচ্ছা ও সামর্থ্য দুটোই। তবে এখানে ইচ্ছার ব্যাপারটাকে বেসিক ধরে সামর্থ্যহীনতার আক্ষেপটা এনেছি। যাদের ইচ্ছে নেই, তাদের আক্ষেপও নেই। :)

২১

তানবীরা's picture


যখন টাকা ছিল না তখন ছুটি ছিল আর এখন ছুটিও নাই - টাকাও নাই
আমি ভূতনী হইয়া প্রবেশ করেছি, কোন সমস্যা হয় নাইক্কা ঃ)

২২

নীড় সন্ধানী's picture


আপনি ভুতনি কোন গ্রহের? তাবিজের স্ক্যান পার হলেন কি করে? :)

২৩

কাওছার আহমেদ's picture


নীড়দা, খুব মন খারাপ করা একটা বিষয় টেনে আনলেন। আমিও কোথাও যাই না, আমার কোনটা নেই বুঝতে পারছি না। :)

২৪

নীড় সন্ধানী's picture


দুটো ব্যাপার লাগে। ইচ্ছা এবং সামর্থ্য। আপনার সামর্থ্য আছে ইচ্ছা নাই। :)

********************************************************অতঃপর একদিন


তুমি নির্জন ছিলে না, আবার জনারণ্যেও ছিলে না। চুপকথার এক বিষন্ন নগরীতে ছিল বসবাস। আমি গলি পথে সেই নগরীতে হাঁটতে গিয়ে মুখোমুখি হই তোমার। বিষন্ন নগরীতে বসবাস করলেও আমি কোন বিষন্নতা দেখিনি তোমার চোখে মুখে। তুমি ছিলে উচ্ছল ফুলেল তারুণ্যে ভরপুর অপূর্ব এক সত্তা।

তোমার সংস্পর্শে আমি পবিত্র হলাম, আমি আকাশে চোখ মেললাম, মেঘেদের আনাগোনা দেখলাম, আর ভেসে গেলাম অবাক আনন্দে। আমি ভাসলাম, বাসলাম এবং তোমাকেও ভাসালাম। আমাদের আনন্দমেলায় কোন ছেদ ছিল না।
রাত্রির আকাশ যখন অজস্র নক্ষত্র মাথায় নিয়ে পুব থেকে পশ্চিম ছুটে যায়, আমি সেই আঁধারে মিশে যাই। যখন রাতের শেষ তারাটা নিভে ভোরের আভা ফুটে ওঠে, আমি নতুন দিনের আশ্বাস পাই। তবু সেই বিমুগ্ধ ভোরে বসেও আমি রাতের নক্ষত্রদের কথা ভুলি না। তাই আমার সকল অপ্রকাশিত আনন্দ বেদনার গল্পগুলো স্বচ্ছন্দে বেরিয়ে চলে যায় তোমার কাছে। তুমি তাদের আগলে রাখো পরম মমতায়।

একদিন আমি তোমার মমতার মধ্যে প্রেমের সন্ধান পাই এবং অবধারিতভাবে সিক্ত হই অনুপম এক ভালোবাসায়।
অতঃপর .....অতঃপর....... একদিন সবকিছুই স্মৃতির অস্পষ্টতায় তলিয়ে যায়।
পোস্টটি ২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


কি লিখলেন দাদা। ৫ বার পড়ার পরেও মনে হচ্ছে কিছুই পড়া হয়নি , আরো পড়ি । আহ !!!
মনটা ভরে গেল ।

নীড় সন্ধানী's picture


লজ্জা পেলাম এত ভালো মন্তব্য, ধন্যাপাতা!!

নুশেরা's picture


বাহ্!
রাতের সব তারারা আছে দিনের আলোর গভীরে-- মনে করিয়ে দিলেন। [বিষণ্ণ আর তারুণ্যে মূর্ধণ্য ণ হবে বোধহয়... একটু দেখবেন?]

নীড় সন্ধানী's picture


ন ণ ু ূ - এই চারটা জিনিস নিয়ে বিপদে আছি। তাই কমেন্টে কারেকশান পেলে বিগলিত হই :)

নুশেরা's picture


আহা, বড়ই প্রীত হলাম! ভালো লেখায়, পুনরুক্তি করি; ভালো লেখায়, বানানের গড়বড় চোখে সূঁই ফোটায়। (আগ বাড়িয়ে বানান ধরার যন্ত্রণা আছে। কে হায় পিঠ পাতিয়া বাড়ি খাইতে ভালোবাসে!)
অরণ্য তথা জনারণ্যেও মূর্ধণ্য ণ।

টুটুল's picture


বস... আমার পুস্ট কৈলাম চোখ বুইজা পর্বেন :( (রিকুশ)

নীড় সন্ধানী's picture


আবারো ধন্যবাদ।
ভাবতেছি ওই চার জিনিসে ভুল পাইলে মাফ করিবেন এই মর্মে একটা ডিসক্লেইমার রাখতে হবে আমার প্রতি লেখায়। Laughing

টুটুল's picture


এত দ্রুত কোন পোস্ট শেষ হইয়া যায় বুঝতার্লাম্না :(
চমৎকৃত বস :)

নীড় সন্ধানী's picture


বড় লেখনীর মুরোদ হয়নি যে.......... :(

১০

সোহেল কাজী's picture


রাতের জনাকীর্ণ আঁধারে বসে নৈশব্দ স্মৃতিচারণ করলাম যেন।

আহা! চেটে পুটে গিললাম Smile

১১

নীড় সন্ধানী's picture


Innocent আপনার বাংলা কিন্তু কঠিনতর হচ্ছে ইদানীং........Laughing

১২

সোহেল কাজী's picture


কনকি y

১৩

রন's picture


আরেকবার পইড়া নেই, খুব ভাল লাগলো লেখাটা

১৪

পদ্মলোচন's picture


এমন জটিল লেকা ক্যাম্বায় লিকেন?

১৫

নজরুল ইসলাম's picture


ভাল্লাগলো

১৬

ফয়সাল আকরাম's picture


ভাল্লাগসে...ফিল করতে পারসি :)

১৭

আত্তদ্বিপ's picture


জটীল বোললেও কম বলা হয়

১৮

শওকত মাসুম's picture


। আহ !!!
মনটা ভরে গেল ।

১৯

সুবর্ণা's picture


আজ অফিসে বসে এই একটা লেখাই পড়েছি। সময় থাকলে আরো কয়েকবার পড়তাম। হাজার তারা দিয়া গেলাম।

২০

তানবীরা's picture


নীড়দা, আপনার এ ধরনের লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম না। খুব ভালো লাগলো। আমি কখনোই কেনো যেনো এধরনের কিছু লিখতে পারি না।

*******************************************

পড়া-লেখা-জোকা-ব্লগা বিষয়ক আড্ডাফাইয়িং পোষ্ট


লেখার চাইতে পড়তেই বেশী ভালো লাগে আমার। যা পাই তা-ই গিলি। মজা পেলেই পড়ি। সে চটি হোক আর চেখভ হোক। খুব ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে যখন নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারতাম, তখন থেকেই এই ঝোঁকটা তৈরী হয়েছে।

অনেক বছর আগে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে 'বইঘর' নামে একটা দোকান ছিল। ওটার শান্ত নীরব পবিত্র ভাবটা আমার ভীষন ভালো লাগতো। এখন বোধহয় ওটা স্বর্নের দোকান হয়ে গেছে। নিউমার্কেটে গেলেই বাবা আমাকে ওখানে নিয়ে যেতেন। খুব যে বই কিনতাম তা নয়। তবু ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দটা ছিল দারুন। দোকানদার বাবার পরিচিত ছিল। বাবা ওনার সাথে গল্পে মাতলে আমি সারাটা দোকান ঘুরে ঘুরে বইয়ের ঘ্রান নিতাম। এখনো মনে পড়ে অন্য সব বইয়ের দোকান থেকে ওটা ছিল সম্পূর্ন আলাদা। অত বড় জায়গা নিয়ে বইগুলো তাকে তাকে সুন্দর সাজানো থাকতো। প্রিয় কয়েকটা বই কিনেছিলাম যা পরে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রিয় দুটো বই "নানান দেশের ছেলেমেয়ে" আর "আবিষ্কারের কাহিনী" এখনও মিস করি। অবাক লাগে সেই ৬/৭ বছর বয়সেই বইয়ের প্রতি একটা লোভ তৈরী করে দিয়েছিল আমার বাবা।

শুরুটা বাবাই করে দিয়েছিলেন, তারপর বয়সের সাথে বন্ধু-বান্ধবের কল্যানে বনহুর, কুয়াশার সাথে পরিচয়। ক্লাস টেনে উঠে মাসুদ রানা এবং সেবা প্রকাশনীর বইতে বুঁদ হয়ে গেলাম। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমার পড়াশোনার ভিত্তিটা বাবার তৈরী আর আমাকে নির্মান করেছে সেবা প্রকাশনী। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার সময় থেকে আগ্রহের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে 'সেবা' ছাড়িয়ে আরো বহুদুরে। যতই পড়তাম ততই বুঝতাম কত কম জানি, কত কম পড়া হয়েছে! জানার কত কী বাকী রয়ে গেছে পৃথিবীতে। তৃঞ্চা আরো বেড়ে যেতো। ভার্সিটিতে পড়ার সময় পাঠ্য বইয়ের দ্বিগুন সময় ব্যয় করেছি অন্য বইয়ে।

তবে এই পড়াটা বিদ্বান হবার জন্য ছিল না মোটেও। এটা ছিল এক ধরনের নেশা। প্রত্যেক মানুষের এক বা একাধিক নেশা থাকে। আমার অনেক নেশার মধ্যে এটি একটা। মজার ব্যাপার হলো, পড়ার নেশা থাকলেও আমি পড়ুয়া বা আঁতেল বন্ধুদের সাথে কখনো আড্ডা দিতাম না। তাই আমার আতেঁল বন্ধু নাই বললেই চলে। যাদের সাথে আড্ডা দিতাম তাদের কারও আগ্রহ ছিল না এইসব আজাইরা বইপত্রের প্রতি। আমার অনেক রকমের বন্ধুর গ্রুপ ছিল। কেউ খেলাধুলা, কেউ তাস বা জুয়া, আর কেউবা ডাইল নাহয় গাঁজায় বুঁদ। তবে ডাইল-গাজা-তাস-জুয়া বাদে যেসব আড্ডা ছিল সেখানে বিবিধ বিষয়ে আড্ডা হলেও দেখা যেতো, যে বিষয়ই আলাপ করি না কেন এক পর্যায়ে সেটা মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে এসে শেষ হতো।

বই পড়ার নেশার সাথে ১৯৯৭ সাল থেকে নতুন একটা সংযোজন হলো। ইন্টারনেট। দেখলাম এটা আরেক নেশার জগত। প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু ঘটছে। নানা আবিষ্কার। হটমেইল, ইয়াহু, স্কাইপে, জিমেইলের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লেগে থাকা। গুগল আর উইকিপিডিয়ার কল্যানে আমার সব পড়াশোনা কম্পিউটারে ঢুকে গেল। আগে কোন তথ্য জানার জন্য বইয়ের রেফারেন্স খুজতাম। এখন গুগল করি। এমনকি শব্দের বানানটা পর্যন্ত গুগলে যাচাই করি। টেকনোলজির উপর এমন নির্ভরশীল হলাম যে ইলেক্টিসিটি চলে গেলে মনে হয় অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। কারন ইন্টারনেট বন্ধ।
পড়াশোনা যতই বেশী হোক লেখালেখিটা ছিল একেবারে কম। একমাত্র ডায়েরী লিখতাম মাঝে মাঝে। ডায়েরী লেখা হতো কেবল মন খারাপ করলেই। ইয়াহুগ্রুপে কিছু লেখালেখি করতাম এক সময় দেশী ফোরামগুলোতে, তবে বাংলা ব্লগ সাইটে খুব কমই লিখা হতো। বাংলা লিখতে না পারা একটা কারন ছিল। এক সময় ইংরেজীতেও লেখালেখি বন্ধ করে দিলাম। বাংলা শিখতে না পারার জন্য বিজয়কে দায়ী করি আমি। কারন এরা জটিল একটা কীবোর্ড তৈরী করেছে। হয়তো বেশীরভাগ মানুষ আমার চেয়ে অনেক বেশী ধৈর্যশীল বলে এটা ব্যবহার করে। একেবারে বাজে মাল বিজয়।
হঠাৎ একদিন 'অভ্র' কীবোর্ডের সন্ধান পেলাম। এত চমৎকৃত হলাম যে সেদিন যেন আমার নবজন্ম হলো। অবাক ব্যাপার, যে আমি মাসের পর মাস চেষ্টা করেও 'বিজয়' শিখতে পারিনি, সেই আমি ৭ দিনের মধ্যে 'অভ্র' দিয়ে লিখতে পারলাম। শিখে উঠলাম ঠিকই কিন্তু লেখার জায়গা কই? আমার যাদের সাথে কাজ করতে হয় ওখানে বাংলা অচল। তাই বাংলা মেইল লেখার সুযোগও নেই। তাছাড়া এমনি এমনি আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। লেখার জন্য একটু ইয়ে মানে চুলকানি লাগে আমার। একদিন ব্লগ নামক বস্তুটার সন্ধান পেলাম। আরে আজীব এখানে তো প্রচুর লোক বাংলায় আড্ডা জমাচ্ছে।

কয়েকদিন চুপচাপ দেখলাম এবং জানলাম এখানে আমজনতাও লিখতে পারে। নানান রকম মজার মজার লেখা পড়ে পুলকিত হলাম। বৈচিত্রে ভরপুর বিষয়। যার যেমন খুশী। বুঝলাম এইটা আম জনতার জায়গা। আঁতেলদের রাজত্ব নেই জেনে স্বস্তি পেলাম। ক'দিন পর আমারও চুলকানি শুরু হলো নানান ইস্যুতে। সরাসরি বললে বলতে হয় কেবল চুলকালেই আমার লেখা আসে, অন্য কোন ভাব বা প্রেরনা নেই আমার লেখার পেছনে। ভালো মন্দ সব রকম লেখার যোগান আসে চুলকানি থেকে। শুরু করলাম ফ্রী-ষ্টাইলে। কোনরকম গুনবিচার ছাড়াই। অনেকটা নিজের জন্যই লেখা। বাংলা টাইপে ভালো স্পীড এসেছে ব্লগ লিখে লিখে।

শুরু হলো আমার কাকস্য ব্লগার জীবন। আমারব্লগ, নির্মানব্লগ, সচলায়তন এই তিন ব্লগে ঘুরতে ঘুরতে ব্লগীয় বন্ধু হয়ে গেল বেশ কয়েকজনের সাথে। আমারব্লগের বন্ধুই বেশী। তাদের ভার্চুয়াল আন্তরিকতার প্রানবন্ত স্পর্শ পেলাম এই ব্লগে এসেও। ভাবতে ভালো লাগে কাকস্য সমাজ ছড়িয়ে আছে নানা ব্লগে।

হেফী ব্লগিং, হেফী আড্ডাফাইয়িং!!

[হাওয়া থেকে সংগৃহীত]
পোস্টটি ১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আপন_আধার's picture


মাইরি......চুলকানি আইলেই লেকতে পারেন? আমার পড়া শুরুর ইতিহাস আপনার মতই ছেম কেছ। বাট কোনোদিন চুলকানি দিয়াও এইরম একটা লেখা লেখতারমু বইলা মনে হয়না। আপ্নেরে অশেষ ধইন্না ......

নীড় সন্ধানী's picture


আপনাকেও ধন্যা.......আপনার লেখা দেন না কেন?

আপন_আধার's picture


লিখতে পারলেনা দিমু ? Laughing

মাসরুর's picture


আপন_আধার | ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯ - ৮:৪৪ অপরাহ্ন
মাইরি......চুলকানি আইলেই লেকতে পারেন? আমার পড়া শুরুর ইতিহাস আপনার মতই ছেম কেছ। বাট কোনোদিন চুলকানি দিয়াও এইরম একটা লেখা লেখতারমু বইলা মনে হয়না। আপ্নেরে অশেষ ধইন্না ......
:-S

নীড় সন্ধানী's picture


আপনারে ধন্যা উইথ পুদিনা :)

আত্তদ্বিপ's picture


আপনার এসব কথার সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেলাম। আমি এখনো ছাত্র, সারদিন ইংরেজীর প্যানপ্যানের অসয্যতা থেকেই আমার ব্লগিং শুরু। অভ্রতে লিখা অনেক আগেই শিখেছিলাম কিন্তু এরকম বাংলাব্লগ সাইট যে আছে তা জানলাম এই তো সেদিন।
অটঃ আমারব্লগে আপনার নিক কি জানতে পারি?

অতিথি পাখি's picture


আত্তদ্বীপভাই, উনার আমার ব্লগের নিক নীড়-সন্ধানী ।
আমার ব্লগের ৫ টা প্রান ব্লগার থাকলে উনি একজন !!
আমার কাছে তা-ই মনে হয় !!

আত্তদ্বিপ's picture


একটা মুভি দেখতে দেখতে কমেন্ট করেছি তাই ভুল হয়ে গেছে। আমি এটা মাসরুর ভাইয়ের লিখা ভেবে কমেন্ট করেছি। আর নীর দার লিখা আমি অল্প হলেও পড়েছি তাই সরি আছি।

অতিথি পাখি's picture


আরে ব্যাপার না ।।
দুই একটা লেখা ছাড়েন পড়ি।

১০

নীড় সন্ধানী's picture


একই নিক :)

১১

অতিথি পাখি's picture


[হাওয়া থেকে সংগৃহীত]
আমার বই পড়ার অভ্যাটা এখনো করতে পারলাম না !! কেনো জানি মোটা মোটা বই দেখলে বিরক্ত লাগে ।
এই পুরা লাইফে হু আর কয়েকটা বই পড়েছি নেটে । ধৈর্য আছে আপনাদের !!

১২

নজরুল ইসলাম's picture


বই পড়া নিয়ে অন্য ব্লগে আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। এখানে একটা সিরিজ করে দিবো...
ভালো লাগলো লেখা

১৩

নীড় সন্ধানী's picture


আপনার লেখা সিরিজের অপেক্ষায় থাকলাম :)

১৪

তানবীরা's picture


নীড়দা, আপনার নামটার সাথে আমার নামটা জুড়ে দিবেন, প্লীজ। আপনার এই পোষ্টের সবগুলো কথাই আমার কথা। আড্ডা কিংবা বিজয় থেকে শুরু করে ব্লগ অব্ধি।

১৫

নীড় সন্ধানী's picture


তাইলে তো চিমটি!!! :)

১৬

পদ্মলোচন's picture


আপনার বইয়ের কালেকশন আমি দেখছি। আমি হিংসিতো

১৭

নীড় সন্ধানী's picture


তুমার হিংসায় আমি আতংকিত !!!

১৮

সাঈদ's picture


ছোট বেলায় বাবাকে খুব বেশী একটা পাইনি , তাঁর বিদেশ থাকার কারনে। যতটুকু সময় তাঁকে কাছে পেতাম , তিনি দুপুরের খাবারের পর আমাকে আর বড় আপু কে দুই পাশে শুইয়ে মাঝে তিনি শুয়ে বই নিয়ে শুরু করতেন গল্প। নানা মনীষি দের জীবনি দিয়েই শুরু। এক প্যারা পড়তেন আবার সেটা গল্পাকারে আমাদের বুঝিয়ে দিতেন। পরে আবার আমাদের পড়তে দিতেন সেই বই। এভাবে হাতে খড়ি।
তারপর একই ইতিহাস - তিন গোয়েন্দা - ওয়েস্টার্ন - হুমায়ুন আহমেদ । এস এস সি পাশ করে ঢুকলাম ভারতীয় লেখক দের ভুবনে। তাদের লেখায় ডুব মেরে থাকতাম দিনের পর দিন। সমরেশ এর কালপুরুষ পড়ে এক সময় নিজেকে অর্ক ভাবতে ভালো লাগতো।
একসময় লেখা লেখি চলতো ডায়েরী তে, আবার কিছু দিন পর পর ডায়েরী পুড়িয়ে বেদনা-উৎসব করতাম।
এখনও পড়ি তবে সেটা এই আন্তর্জাল এই। বই নিয়ে বসি না কারন বইনিয়ে বসলে সেই রাতে ঘুম নষ্ট করে বই শেষ করে তারপর না উঠে পারিনা। এত এনার্জি কই এখন ? বয়স হইছে না !!!!

১৯

নীড় সন্ধানী's picture


এখনও পড়ি তবে সেটা এই আন্তর্জাল...
##########################
আমারও এই অবস্থা এখন :)

২০

বিহঙ্গ's picture


আমার অনেক নেশার মধ্যে এটি একটা। মজার ব্যাপার হলো, পড়ার নেশা থাকলেও আমি পড়ুয়া বা আঁতেল বন্ধুদের সাথে কখনো আড্ডা দিতাম না। তাই আমার আতেঁল বন্ধু নাই বললেই চলে। যাদের সাথে আড্ডা দিতাম তাদের কারও আগ্রহ ছিল না এইসব আজাইরা বইপত্রের প্রতিCool
আমারো সেম কেইস নীড়দা................এখনো প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে চেষ্টা করি একটা কইরা বই পড়তে না:গঞ্জ সুধীজন পাঠাগারের সদস্য গত ৭ বছর যাবত। তবে আমার বই পড়ার নেশাটা দিয়েছে আমার মেজ ভাই_ও বিভিন্ন বই কিনে দিত যখন মাত্র সিক্সে পড়ি_আমার বই পড়া শুরু হইছে শরৎ, রবীন্দ্রনাথ এর বই দিয়ে। শরতের শ্রীকান্ত এখনো আমার লাইফে পড়া শ্রেষ্ঠ বই।

২১

সোহেল কাজী's picture


হাঃহাঃহাঃ অনেক কিছুই কমন পড়লো। আমার আউট!বই পড়া শুরু ঠাকুরমার ঝুলির শাকচুন্নি আর রাজপুত্রদের কাহীনি দিয়ে+গোপালভাড়+কালীদাসের স্লোক দিয়ে।Cool
 ক্লাস ফোরে ৭০০ পৃষ্ঠার আরব্য রজনী পড়ে ফেলেছিলাম s
তারপর সেবা প্রকাশনীর কিশোর থ্রীলার, শিকার কাহীনি, সবশেষে মাসুদ রানা।
দ্রষ্টব্যঃ SSC পরীক্ষার আগেরদিন পর্যন্ত কিশোর থ্রীলার গভীর অরন্য পার্ট ১,২ (প্রায় আটশ পৃষ্ঠার মত) নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। ছোট খালা সেটা দেখে আমাকে দারুন আদর করেন Frown(জ্বর নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম)
তার পর শিকার কাহীনি+ওয়েষ্টার্ন+অনুবাদ+সাইফাই+ শরতচন্দ্র পড়তাম। মিলইন্যা জনপ্রীয় হলেও তার বই ভালো লাগতনা কেন জানি।
সব শেষে পড়েছি সাইকোলজিকাল ষ্টাডি নিয়ে চমতকার কিছু আর্টিকেল আংরেজীতে Tongue out
আর এখন হুমায়ুন ছাড়া আর কারো বই পড়তে ইচ্ছে করেনা। তবে মাঝে মাঝে শীর্ষেন্দু পড়ি। (একটা বাংলা বইয়ের সাইটের কো এডমিন ছিলাম Wink কিছুদিন)
আর আড্ডায় ছিলো বারোপ্রকার বন্ধু, কোটিপতি থেকে রিক্সাওয়ালা। Cool গাঞ্জুটি থেকে হিরুঞ্চি + মাম্মিডেডি টাইপ পোলাপাইন। কয়েকটা কিরিমিনালো বেশ কিছু দিন আড্ডার সঙ্গী ছিলো।Wink
টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ১০০ কমন, যারা বিজয় জানতো তাদের কেঞ্জানি আঁতেল মনে হইতো (আহেম আহেম) Wink
লেখা অতীব উপাদেয় হইছে Laughing

২২

সাঈদ's picture


সেই জন্যই তোমার লেখায় হুঃআঃ এর ছায়া পাওয়া যায়।

২৩

সোহেল কাজী's picture


আরেনাহ, কই আলীবর্দী খাঁন আর কই খিলিপান। Cool

২৪

নীড় সন্ধানী's picture


বিজয় যারা জানেন, তাদের আমার এখনো বিদ্বান মনে হয়। কেমনে যে পারে........তয় টাইপ স্পীডে কমিপিটিশান দিলে আমাদের সাথে পারবে না :)

২৫

হাসান রায়হান's picture


লেখা পইড়া আমিও আমার বই পড়ার কিছু কথা বলব ভাবছিলাম। কিন্তু মনে হইল লেখাটা আগেও পড়ছি। যদি তাই হয় , নো অসুবিধা, বাট নতুন লেখা চাই। ফাঁকি দিলে খাইয়ালামু। ;)

২৬

নীড় সন্ধানী's picture


আপ্নের সিপিউর পাওয়ার দুর্দান্ত!!! :)
তয় নীচে কিন্তুক বইলা দিছি হাওয়া থেকে পাওয়া ;)

২৭

নুশেরা's picture


নীড়কাতর করে দিলেন, নীড় সন্ধানী।
বইঘর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে কার্ড আর শোপিসের জন্য জায়গা বরাদ্দ করলো, কয়েক বছর বাদে স্রেফ নেই হয়ে গেলো। বিপণি বিতান বা নিউমার্কেটেরই দোতলা অথবা তিনতলার বইয়ের দোকান বুকম্যান স্কুলব্যাগ পেন্সিলবক্সে ভরে গেলো। একতলায় বইঘরের কাছেই উজালা বুক সেন্টার ছিলো, এখন আছে কি? উল্টোদিকে জলসা সিনেমা(?)র নীচে কারেন্ট বুক স্টোর চিত্রতারকার পোস্টারে ছেয়ে গেলো। আচ্ছা, নুপূর মার্কেটের অমর বইঘর কি এখনও আছে? অনেক ভালো ভালো পুরনো বইয়ের সংগ্রহ ছিলো ওদের। ডিসিহিলের উল্টোদিকে নন্দনকাননের ডিরোজিও অনেকদিন পর্যন্ত ক্লাসিক ছিলো (আশা করি এখনও আছে)। এ বছরের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে গিয়ে আন্দরকিল্লায় একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে সংগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে (নামটাও সুন্দর; যদিও এখন মনে পড়ছে না )। তবে অভাব বোধ করেছি সেরকম কোন বিক্রয়-সহকারীর যে নিজেই হবে চলমান রেফারেন্সবুক...

২৮

নীড় সন্ধানী's picture


বইয়ের দোকানগুলো শাড়ী ঘড়ি অলংকারের কাছে হেরে গেছে। একটা বইয়ের দোকানকে তিনটা স্বর্নের দোকান করা যায়। নিউমার্কেটে বইঘরের পর গেছে গুলিস্তান বুকষ্টোর। উজালা, মনীষা, বুকম্যান এখন খাতা পেন্সিল স্টেশনারী কার্ড ফ্যাশানের দোকান। কারেন্ট বুক সেন্টার কোন মতে টিকে আছে এখনো শাহীন ভাইয়ের হাতে। এই মানুষটার বইপ্রেম তাঁর বাবার মতো। টাকার দিকে না তাকিয়ে চোখবুঝে বই নিয়ে পড়ে আছে। কারেন্ট বুক সেন্টারের ইতিহাস নিয়ে আস্ত একটা বই লিখে ফেলা যায় অনায়াসে। অমর বই ঘরে যাইনা বহুদিন, শুনেছি ওখানে গাইড বইয়ে ছেয়ে গেছে। আন্দরকিল্লার বইয়ের দোকানগুলো তো অনেক আগেই গাইডবই হয়ে গেছে, কথাকলিটা এখনো আছে। গত বিশ বছরে সব কিছু বেড়েছে চট্টগ্রামে, বাড়েনি কেবল একটাও বইয়ের দোকান। সংকোচনই যেন তার পরিণতি।

২৯

টুটুল's picture


টেকনোলজির উপর এমন নির্ভরশীল হলাম যে ইলেক্টিসিটি চলে গেলে মনে হয় অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। কারন ইন্টারনেট বন্ধ।
এত বেশী ডিপেন্ডবল হইছি ... বইলা শেষ করা যাপে না :( ... দুইদিন পর নিজের জিনিসপত্র খুজতেও গুগুল্রে জিগাইতে হপে :(
আমার আড্ডা শুন্তে ভাল্লাগে :)