মানুষের জীবনটা অনেকগুলো মেলার সমষ্টি। আমরা জীবনের একেকটা পর্বে একেক রকমের মেলায় নিজেদের খুঁজে পাই। সেই শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে এই প্রৌঢ়ত্বের(যদিও এখনো নিজেকে প্রৌঢ়দের দলে ভাবতে ইচ্ছে করে না)
দ্বারপ্রান্তে এসে পেছনে ফিরলে দেখতে পাই কতগুলো মেলা ছিল, কতগুলো মেলা ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যা্ওয়া মেলাগুলো আর জোড়া লাগে না।
২০০৮ থেকে শুরু হওয়া ব্লগ জীবনেও সেরকম একটা মেলা ছিল। ব্লগে লেখালেখির যাত্রাটা শুরু হয় মূলত ভার্চুয়াল আড্ডার নেশা থেকেই। ভার্চুয়াল জগতের অচেনা কতগুলো মানুষের সাথে কী চমৎকার নিঃস্বার্থ একটা বন্ধন তৈরী হয়ে গিয়েছিল। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে চিনতামও না তখন। কতগুলো নিক বা নাম দিয়ে পরিচিত ছিলাম পরস্পরের কাছে। অসম্ভব সুন্দর কিছু সময় কেটেছে সেই সময়টাতে। বেলা বাড়তে বাড়তে একদিন সেই মেলাতেও ভাটা পড়ে, একদিন ভেঙ্গেও যায়। সবাই যার যার জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ এখনো ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে যুক্ত আছে কিন্তু সেই প্রাণবন্ত ভার্চুয়াল মেলাটা আর নেই।
হারিয়ে যাওয়া মেলার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোন লাভক্ষতি নেই, কিন্তু এও এক আনন্দ সময় যেটা আমাকে নস্টালজিক করে। স্মৃতিচারণে আনমনা এক ভালো লাগা জেগে থাকে। সেই সুন্দর সময়টার একটা উদাহরণ হিসেবে মাত্র কয়েকটি ব্লগ এখানে কপি করে রাখলাম স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। বলা বাহুল্য, এটা শুধু আমরাবন্ধু ব্লগের আড্ডার একাংশ।
গল্প হয়ে যাওয়া সেই দিনগুলোকে এখন খুব মিস করি।
ভয়ানক গরম পড়ছে আজ। জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা দুপুর। ক্লাস শেষে কোনমতে ষ্টেশানগামী শেষ বাসটা ধরে ঝুলে পড়লাম। ষ্টেশানে এসে দেখি ট্রেনে ঠাসাঠাসি ভীড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুপুর দেড়টার ফিরতি ট্রেনের যাত্রাটা মোটেও সুখকর নয়, বিশেষ করে এই দাবদাহে। কোন বগিতেই সুঁচ ঢোকার জায়গা নেই। বগির পাদানি গুলো পর্যন্ত দুজন করে বসে দখল করে রেখেছে। হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে যাবার আশাও মাঠে মারা গেল।
বিকল্প পথে নাজিরহাটের বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু পকেটে আছে সাড়ে সাতটাকার মতো। আড়াই টাকা বাসভাড়া তিনটাকা রিকশা ভাড়া চলে গেলে দুই টাকা দিয়ে বিকেলটা পার করা যাবে না। একটা গোল্ডলীফেই দুইটাকা চলে যাবে। নাহ এই মাগনা ট্রেনই ভালো। আবার ট্রাই দেই।
পেছনের দিকে একটা মালগাড়ীর বগি দেখা গেল, ঢোকা যাবে ওখানে। বাছাবাছি না করে ওখানেই উঠে গেলাম। ওটাও ভরে গেল পাঁচমিনিটে। মালগাড়ীর বগিতে কোন আসন থাকে না। পুরোটা একটা লোহার বদ্ধ খাঁচা বিশেষ। দুপাশে পাঁচফুটের মতো খোলা মালামাল ওঠানামা করার জন্য।(ওরকম মালবাহী বগি ভার্সিটির ট্রেনে যুক্ত করার কোন যুক্তি আমি আজো পাইনি)
মালগাড়ীতে ধরার মতো কিছুই নেই। দুই পায়ের ব্যালেন্সই একমাত্র ভরসা। সেই ভরসায় মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পুরোনো লোহার জং ধরা বগি। বয়স একশো বছরের কম না। আগাগোড়া মরচে দিয়ে ঢাকা। মাথার উপরে.... পায়ের নীচে... ডানে..... বামে... শুধুই লোহা আর লোহার মরচে। এই গরমে লোহাগুলো যেন ফুটছে, আর আমাদের ফোটাচ্ছে। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাবাব হয়ে যাই কিনা।
ট্রেন ছাড়তেই একটু হাওয়ার পরশ মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ওই হাওয়াটাও বাইরের উত্তাপে তেতে আছে। মালগাড়ীতেও প্রচন্ড ভীড়। একজন আরেকজনের গায়ে ঠেকা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইছোট্ট জায়গায় ছাত্রছাত্রী পঞ্চাশজনের কম হবে না। সবাই ঘামছে আর হাঁসফাস করছে। আমার অবস্থা একটু বেশীই কাহিল সেদিন। কারন আমি এমনিতেই বাকীদের তুলনায় ছোটখাট আর দাঁড়িয়েছি মাঝখানে। ওখানে বাতাস প্রবেশ করছে না। পুরো শরীর ভিজে চুপচুপে। ঘামে মাথার চুল ভিজে পানি ঝরছে।
তখনো ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ট্রেনের সেই গরমে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারিনি। মালগাড়ীতে আগেও দুয়েকবার উঠেছি। কিন্তু আজকের মতো জঘন্য অবস্থা আর হয়নি। জান বেরিয়ে যায় অবস্থা। ইচ্ছে হচ্ছে ভীড় ঠেলে লাফ দিয়ে নেমে জীবন জ্বালা জুড়াই এই লোহার নরক থেকে। ট্রেন কতক্ষন চলেছে জানি না। হঠাৎ ঘাড়ে একটা বাতাসের পরশ লাগলো। মোলায়েম এবং অপেক্ষাকৃত শীতল। ভাবলাম বাহ্ দারুন তো। এত মানুষের ভীড় সরিয়ে কোন ফাঁকে এই সুমতির বাতাস আমার কাছে পৌঁছে গেছে।
একটু পর পেছনে তাকাতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, ওটা মোটেও প্রকৃতির হাওয়া নয়। আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ানো পেছনের একটা মেয়ের হাত পাখার বাতাস। মেয়েটার অজান্তেই তার বাতাসের কিছুটা আমার ভাগে চলে আসছে তার কাঁধ পার হয়ে। আমি চুপচাপ ওই অপ্রত্যাশিত বাতাস উপভোগ করে যেতে লাগলাম। সেই দোজখে ওই অচেনা মেয়েটার হাতপাখাটা আমাকে এয়ারকন্ডিশনের মতো স্বস্তি দিল।
ধড়ে যেন প্রান ফিরে এল। ভীষন ভীষন কৃতজ্ঞ বোধ করলাম মেয়েটার প্রতি। পেছনে না তাকানোর ভান করলাম। যেন অনিচ্ছায় বাতাস খাচ্ছি। কিন্তু আরো কিছু সময় পর খেয়াল করলাম বাতাসটা আগের চেয়ে একটু যেন বেশীই লাগছে। পেছন ফিরে আমি তো তাজ্জব!! মেয়েটার হাতপাখা আরো পেছনে এসে আমার ঘাড় বরাবর বাতাস দেয়া শুরু করেছে। সচেতন ভাবে সীমানা লংঘন করেছে হাতপাখাটা। শুধু তাই নয় এবারের বাতাসের প্রায় পুরোটা আমাকেই দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমি বাতাসের জন্য কিরকম কাঙ্গাল হয়ে আছি। আহ কি মায়া রে। আমি চুপচাপ ওই জায়গায় দাড়িয়ে বাতাসটা দিয়ে প্রান জুড়াচ্ছি আর ভাবছি নামার আগে মেয়েটাকে অবশ্যই একটা বিশেষ ধন্যবাদ দেবো। এরকম একজন মায়াবতীর সাথে পরিচয়ের লোভও হলো।
কিন্তু না। বিধাতার ইচ্ছা ছিল না।
ট্রেনটা ষোলশহর আসতেই মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে নেমে গেল বগি থেকে। আমার কিছু বলা হলো না, ধন্যবাদ রয়ে গেল পকেটে। "চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে............." কি এক আক্ষেপ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে। এই চল্লিশ মিনিটের যাত্রাপথে এমন মায়াবী হাওয়া দিয়ে যে আমার প্রানটা তাজা রাখলো, তাকে কিছুই বলা হলো না, এমনকি তার চেহারাও দেখলাম না আমি।
হে অচেনা মায়াবতী, আপনার সেই হাত পাখার বাতাসকে আমি এখনো কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করি আজ একুশ বছর পরেও।
ভ্রমণ ছিল কঠিন নেশা জীবদ্দশায়।
বিশ্বজুড়ে ঘুরবো এবার, উল্টেপাল্টে দেখবো এবার জগতটাকে - 'কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্নিপাকে'। এলেবেলে পথের বাঁকে অনেকটা পথ হাঁটা হলেও, দীর্ঘ জীবন ৬০টি বছর বেঁচে থেকেও, বিশ্বজুড়ে হয়নি আমার দাপিয়ে বেড়ানো। সাধ-সাধ্যের দেখাদেখি হয়েছে কখনো, দীর্ঘ মোলাকাতের সুযোগ হয়নি একটি বারও।
যখন আমি সদ্য তরুণ…... তখন আমর অঢেল সময়, অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্য। সমস্যাটা টাকা-কড়ির, নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা বহুদুরের স্বপ্ন তখন, দেশ ভ্রমণে যাই কি করে। আরো একটু বড় হও, অপেক্ষাতে রইলাম আমি।
যখন আমি মধ্যযুবা…... শক্তি তখন অফুরন্ত, অর্থেরও নেই সমস্যা। কিন্তু আমি ভীষণ ব্যস্ত প্রচুর প্রাচুর্যে। সময় কোথায় বিশ্ব ঘোরার? ওইবেলাতেও হয়নি যাওয়া।
সময় যখন প্রৌঢ়ত্বে ...... তখন আমার প্রচুর সময়, ছিল অঢেল অর্থও। কিন্তু আমি ততদিনে বিত্ত দৌড়ে রিক্ত মানুষ, রোগ-ব্যাধিতে বিধ্বস্ত। দেশ-বিদেশে ভ্রমণ হলো হাসপাতাল টু হাসপাতালে। বিশ্ব দেখা দুরেই থাক, এমনকি সেই হাসপাতালের বারান্দাতে, খেয়াল করে হয়নি দেখা, ম্যাগনোলিয়ার কুঁড়িটিও। বিশ্ব আমার শেষবেলাতেও থেকেই যে যায় অদেখাতেই।
এই পারেতে আসার পরে শখটা যেন পুরন হলো। আত্মা আমার হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় সারা পৃথিবীতে। নাই টিকেটে- নাই ভিসাতে- নাই পাসপোর্টে। বিশ্বজুড়ে অবারিত সীমান্ত তার, অবাধ যাতায়াত । তবু যেন আত্মা আমার অতৃপ্ত যে বড়ো। অসময়ে ভ্রমণ করার বিড়ম্বনা যার, মানব জনম কেটে গেছে দ্বিধায় দ্বিধায় দ্বিধায়.....।
[কপচিত দর্শন - প্রত্যেক মানুষের শখ-সাধ-আহ্লাদ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল -- সময়, অর্থ, শক্তি। মানুষের জীবনে এই তিনটি জিনিস একই সময়ে এক সাথে থাকার ঘটনা অতি বিরল। দৈবাৎ যাদের একসাথে তিনটাই থাকে তারা অতি অসাধারণ অদ্ভুত ভাগ্যবান মানুষ]
তুমি নির্জন ছিলে না, আবার জনারণ্যেও ছিলে না। চুপকথার এক বিষন্ন নগরীতে ছিল বসবাস। আমি গলি পথে সেই নগরীতে হাঁটতে গিয়ে মুখোমুখি হই তোমার। বিষন্ন নগরীতে বসবাস করলেও আমি কোন বিষন্নতা দেখিনি তোমার চোখে মুখে। তুমি ছিলে উচ্ছল ফুলেল তারুণ্যে ভরপুর অপূর্ব এক সত্তা।
তোমার সংস্পর্শে আমি পবিত্র হলাম, আমি আকাশে চোখ মেললাম, মেঘেদের আনাগোনা দেখলাম, আর ভেসে গেলাম অবাক আনন্দে। আমি ভাসলাম, বাসলাম এবং তোমাকেও ভাসালাম। আমাদের আনন্দমেলায় কোন ছেদ ছিল না।
রাত্রির আকাশ যখন অজস্র নক্ষত্র মাথায় নিয়ে পুব থেকে পশ্চিম ছুটে যায়, আমি সেই আঁধারে মিশে যাই। যখন রাতের শেষ তারাটা নিভে ভোরের আভা ফুটে ওঠে, আমি নতুন দিনের আশ্বাস পাই। তবু সেই বিমুগ্ধ ভোরে বসেও আমি রাতের নক্ষত্রদের কথা ভুলি না। তাই আমার সকল অপ্রকাশিত আনন্দ বেদনার গল্পগুলো স্বচ্ছন্দে বেরিয়ে চলে যায় তোমার কাছে। তুমি তাদের আগলে রাখো পরম মমতায়।
একদিন আমি তোমার মমতার মধ্যে প্রেমের সন্ধান পাই এবং অবধারিতভাবে সিক্ত হই অনুপম এক ভালোবাসায়।
অতঃপর .....অতঃপর....... একদিন সবকিছুই স্মৃতির অস্পষ্টতায় তলিয়ে যায়।
লেখার চাইতে পড়তেই বেশী ভালো লাগে আমার। যা পাই তা-ই গিলি। মজা পেলেই পড়ি। সে চটি হোক আর চেখভ হোক। খুব ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে যখন নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারতাম, তখন থেকেই এই ঝোঁকটা তৈরী হয়েছে।
অনেক বছর আগে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে 'বইঘর' নামে একটা দোকান ছিল। ওটার শান্ত নীরব পবিত্র ভাবটা আমার ভীষন ভালো লাগতো। এখন বোধহয় ওটা স্বর্নের দোকান হয়ে গেছে। নিউমার্কেটে গেলেই বাবা আমাকে ওখানে নিয়ে যেতেন। খুব যে বই কিনতাম তা নয়। তবু ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দটা ছিল দারুন। দোকানদার বাবার পরিচিত ছিল। বাবা ওনার সাথে গল্পে মাতলে আমি সারাটা দোকান ঘুরে ঘুরে বইয়ের ঘ্রান নিতাম। এখনো মনে পড়ে অন্য সব বইয়ের দোকান থেকে ওটা ছিল সম্পূর্ন আলাদা। অত বড় জায়গা নিয়ে বইগুলো তাকে তাকে সুন্দর সাজানো থাকতো। প্রিয় কয়েকটা বই কিনেছিলাম যা পরে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রিয় দুটো বই "নানান দেশের ছেলেমেয়ে" আর "আবিষ্কারের কাহিনী" এখনও মিস করি। অবাক লাগে সেই ৬/৭ বছর বয়সেই বইয়ের প্রতি একটা লোভ তৈরী করে দিয়েছিল আমার বাবা।
শুরুটা বাবাই করে দিয়েছিলেন, তারপর বয়সের সাথে বন্ধু-বান্ধবের কল্যানে বনহুর, কুয়াশার সাথে পরিচয়। ক্লাস টেনে উঠে মাসুদ রানা এবং সেবা প্রকাশনীর বইতে বুঁদ হয়ে গেলাম। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমার পড়াশোনার ভিত্তিটা বাবার তৈরী আর আমাকে নির্মান করেছে সেবা প্রকাশনী। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার সময় থেকে আগ্রহের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে 'সেবা' ছাড়িয়ে আরো বহুদুরে। যতই পড়তাম ততই বুঝতাম কত কম জানি, কত কম পড়া হয়েছে! জানার কত কী বাকী রয়ে গেছে পৃথিবীতে। তৃঞ্চা আরো বেড়ে যেতো। ভার্সিটিতে পড়ার সময় পাঠ্য বইয়ের দ্বিগুন সময় ব্যয় করেছি অন্য বইয়ে।
তবে এই পড়াটা বিদ্বান হবার জন্য ছিল না মোটেও। এটা ছিল এক ধরনের নেশা। প্রত্যেক মানুষের এক বা একাধিক নেশা থাকে। আমার অনেক নেশার মধ্যে এটি একটা। মজার ব্যাপার হলো, পড়ার নেশা থাকলেও আমি পড়ুয়া বা আঁতেল বন্ধুদের সাথে কখনো আড্ডা দিতাম না। তাই আমার আতেঁল বন্ধু নাই বললেই চলে। যাদের সাথে আড্ডা দিতাম তাদের কারও আগ্রহ ছিল না এইসব আজাইরা বইপত্রের প্রতি। আমার অনেক রকমের বন্ধুর গ্রুপ ছিল। কেউ খেলাধুলা, কেউ তাস বা জুয়া, আর কেউবা ডাইল নাহয় গাঁজায় বুঁদ। তবে ডাইল-গাজা-তাস-জুয়া বাদে যেসব আড্ডা ছিল সেখানে বিবিধ বিষয়ে আড্ডা হলেও দেখা যেতো, যে বিষয়ই আলাপ করি না কেন এক পর্যায়ে সেটা মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে এসে শেষ হতো।
বই পড়ার নেশার সাথে ১৯৯৭ সাল থেকে নতুন একটা সংযোজন হলো। ইন্টারনেট। দেখলাম এটা আরেক নেশার জগত। প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু ঘটছে। নানা আবিষ্কার। হটমেইল, ইয়াহু, স্কাইপে, জিমেইলের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লেগে থাকা। গুগল আর উইকিপিডিয়ার কল্যানে আমার সব পড়াশোনা কম্পিউটারে ঢুকে গেল। আগে কোন তথ্য জানার জন্য বইয়ের রেফারেন্স খুজতাম। এখন গুগল করি। এমনকি শব্দের বানানটা পর্যন্ত গুগলে যাচাই করি। টেকনোলজির উপর এমন নির্ভরশীল হলাম যে ইলেক্টিসিটি চলে গেলে মনে হয় অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। কারন ইন্টারনেট বন্ধ।
পড়াশোনা যতই বেশী হোক লেখালেখিটা ছিল একেবারে কম। একমাত্র ডায়েরী লিখতাম মাঝে মাঝে। ডায়েরী লেখা হতো কেবল মন খারাপ করলেই। ইয়াহুগ্রুপে কিছু লেখালেখি করতাম এক সময় দেশী ফোরামগুলোতে, তবে বাংলা ব্লগ সাইটে খুব কমই লিখা হতো। বাংলা লিখতে না পারা একটা কারন ছিল। এক সময় ইংরেজীতেও লেখালেখি বন্ধ করে দিলাম। বাংলা শিখতে না পারার জন্য বিজয়কে দায়ী করি আমি। কারন এরা জটিল একটা কীবোর্ড তৈরী করেছে। হয়তো বেশীরভাগ মানুষ আমার চেয়ে অনেক বেশী ধৈর্যশীল বলে এটা ব্যবহার করে। একেবারে বাজে মাল বিজয়।
হঠাৎ একদিন 'অভ্র' কীবোর্ডের সন্ধান পেলাম। এত চমৎকৃত হলাম যে সেদিন যেন আমার নবজন্ম হলো। অবাক ব্যাপার, যে আমি মাসের পর মাস চেষ্টা করেও 'বিজয়' শিখতে পারিনি, সেই আমি ৭ দিনের মধ্যে 'অভ্র' দিয়ে লিখতে পারলাম। শিখে উঠলাম ঠিকই কিন্তু লেখার জায়গা কই? আমার যাদের সাথে কাজ করতে হয় ওখানে বাংলা অচল। তাই বাংলা মেইল লেখার সুযোগও নেই। তাছাড়া এমনি এমনি আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। লেখার জন্য একটু ইয়ে মানে চুলকানি লাগে আমার। একদিন ব্লগ নামক বস্তুটার সন্ধান পেলাম। আরে আজীব এখানে তো প্রচুর লোক বাংলায় আড্ডা জমাচ্ছে।
কয়েকদিন চুপচাপ দেখলাম এবং জানলাম এখানে আমজনতাও লিখতে পারে। নানান রকম মজার মজার লেখা পড়ে পুলকিত হলাম। বৈচিত্রে ভরপুর বিষয়। যার যেমন খুশী। বুঝলাম এইটা আম জনতার জায়গা। আঁতেলদের রাজত্ব নেই জেনে স্বস্তি পেলাম। ক'দিন পর আমারও চুলকানি শুরু হলো নানান ইস্যুতে। সরাসরি বললে বলতে হয় কেবল চুলকালেই আমার লেখা আসে, অন্য কোন ভাব বা প্রেরনা নেই আমার লেখার পেছনে। ভালো মন্দ সব রকম লেখার যোগান আসে চুলকানি থেকে। শুরু করলাম ফ্রী-ষ্টাইলে। কোনরকম গুনবিচার ছাড়াই। অনেকটা নিজের জন্যই লেখা। বাংলা টাইপে ভালো স্পীড এসেছে ব্লগ লিখে লিখে।
শুরু হলো আমার কাকস্য ব্লগার জীবন। আমারব্লগ, নির্মানব্লগ, সচলায়তন এই তিন ব্লগে ঘুরতে ঘুরতে ব্লগীয় বন্ধু হয়ে গেল বেশ কয়েকজনের সাথে। আমারব্লগের বন্ধুই বেশী। তাদের ভার্চুয়াল আন্তরিকতার প্রানবন্ত স্পর্শ পেলাম এই ব্লগে এসেও। ভাবতে ভালো লাগে কাকস্য সমাজ ছড়িয়ে আছে নানা ব্লগে।
হেফী ব্লগিং, হেফী আড্ডাফাইয়িং!!
[হাওয়া থেকে সংগৃহীত]
দ্বারপ্রান্তে এসে পেছনে ফিরলে দেখতে পাই কতগুলো মেলা ছিল, কতগুলো মেলা ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যা্ওয়া মেলাগুলো আর জোড়া লাগে না।
২০০৮ থেকে শুরু হওয়া ব্লগ জীবনেও সেরকম একটা মেলা ছিল। ব্লগে লেখালেখির যাত্রাটা শুরু হয় মূলত ভার্চুয়াল আড্ডার নেশা থেকেই। ভার্চুয়াল জগতের অচেনা কতগুলো মানুষের সাথে কী চমৎকার নিঃস্বার্থ একটা বন্ধন তৈরী হয়ে গিয়েছিল। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে চিনতামও না তখন। কতগুলো নিক বা নাম দিয়ে পরিচিত ছিলাম পরস্পরের কাছে। অসম্ভব সুন্দর কিছু সময় কেটেছে সেই সময়টাতে। বেলা বাড়তে বাড়তে একদিন সেই মেলাতেও ভাটা পড়ে, একদিন ভেঙ্গেও যায়। সবাই যার যার জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ কেউ এখনো ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে যুক্ত আছে কিন্তু সেই প্রাণবন্ত ভার্চুয়াল মেলাটা আর নেই।
হারিয়ে যাওয়া মেলার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে কোন লাভক্ষতি নেই, কিন্তু এও এক আনন্দ সময় যেটা আমাকে নস্টালজিক করে। স্মৃতিচারণে আনমনা এক ভালো লাগা জেগে থাকে। সেই সুন্দর সময়টার একটা উদাহরণ হিসেবে মাত্র কয়েকটি ব্লগ এখানে কপি করে রাখলাম স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে। বলা বাহুল্য, এটা শুধু আমরাবন্ধু ব্লগের আড্ডার একাংশ।
গল্প হয়ে যাওয়া সেই দিনগুলোকে এখন খুব মিস করি।
******************************************
একজন দীপা এবং ভুলে যাওয়া একটা প্রেম
১.
জাকের মাষ্টারের অর্ধপ্রকাশিত ইতিহাসটা অনেক রহস্য অমীমাংসিত রেখে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরেই। ঘটনাটা তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর আমার কানে আসার পর উত্তরপুরুষ হিসেবে কৌতুহল দমিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। কারন জাকের মাষ্টার যে সময়ের মানুষ সেই সময়ে ওরকম একটা ঘটনা উপমহাদেশে বিরল। তবে জাকের মাষ্টারের চেয়েও যাঁর কারনে কৌতুহলটা চিড়বিড় জেগে উঠলো তিনি হলেন দীপালী চক্রবর্তী বা দীপা আহমেদ।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে সুপুরুষ তরুন বোয়ালখালীস্থ সৈয়দবাড়ীর মওলানা সৈয়দ জাকের আহমেদ মাদ্রাসায় উচ্চতর ডিগ্রী নেবার জন্য কোলকাতা গমন করেন। তখনকার দিনে মাদ্রাসার ডিগ্রীর সাথে পাগড়ী বাঁধার একটা সম্মানজনক ব্যাপার ছিল। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে মাথায় মওলানা পাগড়ী বেধে জাকের আহমেদ যখন গ্রামে ফিরে আসেন তখন মাথায় টাইটেল পাগড়ী দেখে যতটা বিস্মিত হয় তার তিনগুন বেশী বিস্মিত হয় সঙ্গের ছিপছিপে তরুনীকে দেখে। এ কাকে নিয়ে এসেছে জাকের মওলানা?
প্রাথমিক আলাপ সম্ভাষন শেষে জানা যায় এর নাম দীপালী চক্রবর্তী, কোলকাতা শহরে তার বসবাস। বিবাহিতা এবং দুসন্তানের জননী। কিন্তু কোন ভরা পূর্নিমায় জাকের মাষ্টারের সাথে তার দেখা হয়ে যায় সে কথা জানা যায় না। তবে সেই দেখাতে এমন গভীর প্রেমের জন্ম হয় দুজনের মধ্যে যে স্বামী-সন্তান-বিত্ত-বৈভব-পরিবার-ধর্ম-সংস্কৃতি সবকিছু ছেড়ে জাকের মওলানার হাত ধরে কোলকাতা শহর ছেড়ে পালিয়ে চট্টগ্রামের এই অজপাড়া গাঁয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে একজন মাদ্রাসা পাশ মওলানা হয়েও জাকের মাষ্টার কিভাবে হিন্দু ব্রাম্মন রমনীকে ধর্মান্তরিত করিয়ে নিজের ঘরনী করার জন্য কোলকাতা থেকে মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে সেটাও বোধগম্য হয় না কারো। এমনকি এই একুশ শতকেও ওরকম ঘটনা কতটুকু সহনীয়?
ছি ছি পড়ে যায় সমস্ত গ্রামে। এ কি অনাচার! সৈয়দবাড়ীর মান ইজ্জত সব গেল। এত দুঃসাহস কি করে হয় তার? জাকের মাষ্টারকে বংশমর্যাদার কারনে একঘরে করা সম্ভব না হলেও তার নবপরিনীতা বধুকে পাড়ায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়। জাকের মাষ্টার কোন মতে তাকে ঘরে তুলতে পারলো না। শেষে পাড়ার বাইরে একটা ঘর বেঁধে আলাদা সংসার পাতে দুজনে। প্রেমের সংসারে বাজার হয়, রান্না হয়, খুনসুটি হয়। হয় প্রতিদিনের নিত্যনতুন রোমাঞ্চ।
২.
কিন্তু শীঘ্রই রোমাঞ্চে বাগড়া দেয় দীপার প্রাক্তন স্বামী।
এক বিকেলে বৃটিশরাজের পুলিশ এসে সমস্ত পাড়া ঘিরে ফেলে। দারোগাবাবুকে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে কোলকাতা থেকে আগত দীপালীর স্বামী। পুলিশ দেখে দীপালীকে পেছনের জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে দীপালীর বড় জা হালিমা খাতুন। গোপনে একমাত্র এই একটা মানুষেরই স্নেহ পেত দীপা। পুলিশ তন্ন তন্ন করে পাড়া তল্লাশি করে। দীপালীর স্বামী চিৎকার করে ডাকতে থাকে "দীপা দীপা" বলে। না পেলে বাড়ী জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ।
রাজকীয় পুলিশবাহিনীকে যমের চেয়ে বেশী ভয় পায় মানুষ। কিন্তু সেই ভীতির মুখে ঝামা দিয়ে একটা সাহসী নারী কন্ঠ ভেসে আসে পাশের জঙ্গল থেকে। গ্রামের সমস্ত মানুষ হতবাক হয়ে শোনে মিতবাক তরুনী দীপা উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করছে, "আমি স্বেচ্ছায় স্বামী সন্তান পরিবার সব ত্যাগ করে এসেছি। আমি আর কখনো ফিরবো না ওই ঘরে। আমাকে কেউ জীবিত নিতে পারবে না ওই সংসারে।"
উপস্থিত গ্রামবাসী নারী পুরুষ ছেলে বুড়ো পুলিশ দারোগাবাবু সবাই ওই দুঃসাহসী ঘোষনায় স্তব্ধ হয়ে যায়। দীপালীর ওই দৃঢ়তার কাছে হার মেনে ফিরে যায় পুলিশ, পেছন পেছন দীপালীর স্বামীও।
ওই ঘটনার পর দীপাকে ঘরে তোলার অনুমতি পায় জাকের মাষ্টার। দীপা প্রথমবারের মতো মূল বাড়ীতে প্রবেশাধিকার পায়। শুরু হয় নতুন জীবন।
কিন্তু বছর পেরোতেই জাকের এবং দীপার মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে অজ্ঞাত কারনে। কেন যেন জাকের মাষ্টার দীপাকে অবহেলা শুরু করে। প্রাথমিক রোমাঞ্চ কেটে গিয়েছিল বলেই কী? দুরত্ব বাড়তে বাড়তে দৈনিক খিটিমিটি ও চুড়ান্ত বিরক্তিতে পৌঁছে যায় সেটা। তাদের প্রায় ছাড়াছাড়ি হয় হয় অবস্থা। জাকের কেন যেন সহ্য করতে পারছে না আর দীপাকে। অস্বস্তিকর পরিস্তিতি। তখনো দীপা চাইলে ফিরে যেতে পারতো কোলকাতা। বড় জা হালিমা সেরকম প্রস্তাবও করেছিল স্নেহের বশে। কিন্তু দীপা অনড়। সে ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে। এই দেশেই থাকবে সে। যদি জাকের তাকে রাখতে না চায়, তাহলে বিদেয় করে এখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে রেখে আসুক। একলাই থাকবে দীপা। কিন্তু কোলকাতা যাবে না কিছুতেই।
একদিন তাই হলো। জাকের মাষ্টার দীপাকে তালাক দিল এবং শহরে রেখে আসলো। রেখে আসা বলা ঠিক না। বলা ভালো শহরের রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসলো চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে। আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসা। এখানে জাকের মাষ্টারকে একটা অমানুষ বলে মনে হয়। কিন্তু সমাজে জাকের মাষ্টার খুবই ভদ্রলোক ছিলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি ওনার অনেক ভালোমানুষিকতা। কিন্তু ওই মানুষটা দীপার সাথে তখন কেন যে ওরকম করলো সেটা এই যুগে বসে বোঝা মুশকিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা বাদে বোঝা অসম্ভবও। সমস্যা হলো অত আগের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ বেঁচে নেই। প্রায় একশো বছর আগের কথা।
দীপার কথা ভুলে যায় সবাই।
৩.
আরো পঞ্চাশ বছর পর শহরে দীপার সন্ধান পায় তার জা হালিমার এক সন্তান তালেব। খুঁজে বের করে তার হারিয়ে যাওয়া প্রাক্তন চাচী দীপাকে। খুঁজে পেয়ে মাকে আর বোনকে নিয়ে দীপার ঘরে যায়। চটগ্রামের আসকার দীঘির পাড়ে ছোট এক কক্ষের ঘরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছে দীপা। ঘরের একপাশে জায়নামাজ বিছানো, তসবি ঝোলানো দেয়ালে। অন্যপাশে তক্তোপশে পাটির বিছানা। মাথার উপর বেড়ার ছাউনি। তার উপরে টিন। অন্ধকার চার দেয়ালের ভেতর স্বেচ্ছাবন্দী জীবন। বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুজ। সুতার কারখানায় কাজ করেছে বহুবছর। এখন ঘরে বসে নামাজ পড়ে আর সেলাইকর্ম করে দিনযাপন করে। হালিমাকে এত বছর পরে দেখতে পেয়ে চিনতে ভুল করে না একমুহুর্তও। ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে দীপা। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বর্ষা নামে দুজনের। হালিমার মুখ দিয়ে কথা সরে না। কোন মতে বলে-
-আমি তো ভেবেছি তুমি চলে গেছ। কেন তুমি কোলকাতা গেলে না?
-কেন যাবো দিদি, আমি তো যাবার জন্য আসিনি
-জাকের তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে, তুমি কেন রয়ে যাবে?
-জাকের ছেড়েছে আমাকে। কিন্তু আমি তো ছাড়িনি তাকে, তার দেশকে, তার ধর্মকে। আমি সবকিছু ছেড়ে এসেছি তাকে আজীবন জড়িয়ে রাখবো বলে। আমার তো আর কিছু নাই।
এটুকু শুনেই হালিমা বাকরূদ্ধ। তার চোখ ফেটে আবারো জল আসে। সে অশ্রু লুকিয়ে সাথে আনা পিঠে, মিঠাই, নারিকেল, চালভাজা ইত্যাদি দীপার হাতে দেয়। আর বিস্ময়ে চেয়ে থাকে অই মুখটার দিকে। বয়সের বলিরেখা মুখে। কিন্তু কী নিদারুন বিশ্বাস এই নারীর ভেতর। বিশ্বাসের কি শক্তি!! তুলনা করার মতো কোন বস্তু বা মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে পায় না হালিমা।
৪.
মায়ের মুখে শোনা ঘটনা। হালিমা খাতুন আমার নানী। দীপাও আমার নানী ছিল। নানার ভাইয়ের স্ত্রী। সেদিন হালিমার বাসায় আমার মাও গিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের কথা।
নিঃসঙ্গ দীপাকে দেখতে জাকের মাষ্টার কখনো গিয়েছিল কি না কেউ জানে না। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের আসল কারনও কেউ জানে না। দীপাও কাউকে বলেনি। জীবনের অনেক অমীমাংসীত রহস্যের মতো এটিও চির অমীমাংসিত থেকে যাবে।
দীপা আহমদেরও মৃত্যু হয়েছে বেশ কবছর আগে। জাকের মাষ্টারের আগে আগে। তারা দুজনেই চলে গেছে এক মহান প্রেমের ও বিচ্ছেদের রহস্য অমীমাংসিত রেখে।
ঘটনার এটুকু জেনে মনে হয় জাকের মাষ্টার খুব স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছিল। কারন সে নিজে আবার বিয়ে করে সংসার নিয়ে সুখে দিন পার করেছে। সমাজে জাকের মাষ্টার ঘৃনিত মানুষ না হলেও পাঠক তাকে নিশ্চিত ঘৃনা করবে এই ঘটনা জেনে। আমিও করেছি যখন দীপার ঘটনাটা জেনেছি।
তবু ঘেন্নাকে ছাপিয়ে বিস্ময়টাই জেগে থাকে বেশী। রহস্যটা জানার অদম্য ইচ্ছেটা জেগেই থাকে। কি এমন প্রেম ছিল তাদের? একটা মানুষ প্রেমের জন্য কতটা ত্যাগ করতে পারে? দেশকালসময়ভেদে প্রেমের প্রকৃতি কি বদলায়? ভিন্নধর্মের দুটি মানুষের সাহসী প্রেম এই শতকেও পরম বিস্ময় জাগিয়ে রাখে আমার চোখে।
জাকের মাষ্টারের অর্ধপ্রকাশিত ইতিহাসটা অনেক রহস্য অমীমাংসিত রেখে চাপা পড়ে গিয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরেই। ঘটনাটা তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর আমার কানে আসার পর উত্তরপুরুষ হিসেবে কৌতুহল দমিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। কারন জাকের মাষ্টার যে সময়ের মানুষ সেই সময়ে ওরকম একটা ঘটনা উপমহাদেশে বিরল। তবে জাকের মাষ্টারের চেয়েও যাঁর কারনে কৌতুহলটা চিড়বিড় জেগে উঠলো তিনি হলেন দীপালী চক্রবর্তী বা দীপা আহমেদ।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে সুপুরুষ তরুন বোয়ালখালীস্থ সৈয়দবাড়ীর মওলানা সৈয়দ জাকের আহমেদ মাদ্রাসায় উচ্চতর ডিগ্রী নেবার জন্য কোলকাতা গমন করেন। তখনকার দিনে মাদ্রাসার ডিগ্রীর সাথে পাগড়ী বাঁধার একটা সম্মানজনক ব্যাপার ছিল। উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে মাথায় মওলানা পাগড়ী বেধে জাকের আহমেদ যখন গ্রামে ফিরে আসেন তখন মাথায় টাইটেল পাগড়ী দেখে যতটা বিস্মিত হয় তার তিনগুন বেশী বিস্মিত হয় সঙ্গের ছিপছিপে তরুনীকে দেখে। এ কাকে নিয়ে এসেছে জাকের মওলানা?
প্রাথমিক আলাপ সম্ভাষন শেষে জানা যায় এর নাম দীপালী চক্রবর্তী, কোলকাতা শহরে তার বসবাস। বিবাহিতা এবং দুসন্তানের জননী। কিন্তু কোন ভরা পূর্নিমায় জাকের মাষ্টারের সাথে তার দেখা হয়ে যায় সে কথা জানা যায় না। তবে সেই দেখাতে এমন গভীর প্রেমের জন্ম হয় দুজনের মধ্যে যে স্বামী-সন্তান-বিত্ত-বৈভব-পরিবার-ধর্ম-সংস্কৃতি সবকিছু ছেড়ে জাকের মওলানার হাত ধরে কোলকাতা শহর ছেড়ে পালিয়ে চট্টগ্রামের এই অজপাড়া গাঁয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে একজন মাদ্রাসা পাশ মওলানা হয়েও জাকের মাষ্টার কিভাবে হিন্দু ব্রাম্মন রমনীকে ধর্মান্তরিত করিয়ে নিজের ঘরনী করার জন্য কোলকাতা থেকে মেইল ট্রেনে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে সেটাও বোধগম্য হয় না কারো। এমনকি এই একুশ শতকেও ওরকম ঘটনা কতটুকু সহনীয়?
ছি ছি পড়ে যায় সমস্ত গ্রামে। এ কি অনাচার! সৈয়দবাড়ীর মান ইজ্জত সব গেল। এত দুঃসাহস কি করে হয় তার? জাকের মাষ্টারকে বংশমর্যাদার কারনে একঘরে করা সম্ভব না হলেও তার নবপরিনীতা বধুকে পাড়ায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়। জাকের মাষ্টার কোন মতে তাকে ঘরে তুলতে পারলো না। শেষে পাড়ার বাইরে একটা ঘর বেঁধে আলাদা সংসার পাতে দুজনে। প্রেমের সংসারে বাজার হয়, রান্না হয়, খুনসুটি হয়। হয় প্রতিদিনের নিত্যনতুন রোমাঞ্চ।
২.
কিন্তু শীঘ্রই রোমাঞ্চে বাগড়া দেয় দীপার প্রাক্তন স্বামী।
এক বিকেলে বৃটিশরাজের পুলিশ এসে সমস্ত পাড়া ঘিরে ফেলে। দারোগাবাবুকে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে কোলকাতা থেকে আগত দীপালীর স্বামী। পুলিশ দেখে দীপালীকে পেছনের জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে দীপালীর বড় জা হালিমা খাতুন। গোপনে একমাত্র এই একটা মানুষেরই স্নেহ পেত দীপা। পুলিশ তন্ন তন্ন করে পাড়া তল্লাশি করে। দীপালীর স্বামী চিৎকার করে ডাকতে থাকে "দীপা দীপা" বলে। না পেলে বাড়ী জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ।
রাজকীয় পুলিশবাহিনীকে যমের চেয়ে বেশী ভয় পায় মানুষ। কিন্তু সেই ভীতির মুখে ঝামা দিয়ে একটা সাহসী নারী কন্ঠ ভেসে আসে পাশের জঙ্গল থেকে। গ্রামের সমস্ত মানুষ হতবাক হয়ে শোনে মিতবাক তরুনী দীপা উচ্চকন্ঠে ঘোষনা করছে, "আমি স্বেচ্ছায় স্বামী সন্তান পরিবার সব ত্যাগ করে এসেছি। আমি আর কখনো ফিরবো না ওই ঘরে। আমাকে কেউ জীবিত নিতে পারবে না ওই সংসারে।"
উপস্থিত গ্রামবাসী নারী পুরুষ ছেলে বুড়ো পুলিশ দারোগাবাবু সবাই ওই দুঃসাহসী ঘোষনায় স্তব্ধ হয়ে যায়। দীপালীর ওই দৃঢ়তার কাছে হার মেনে ফিরে যায় পুলিশ, পেছন পেছন দীপালীর স্বামীও।
ওই ঘটনার পর দীপাকে ঘরে তোলার অনুমতি পায় জাকের মাষ্টার। দীপা প্রথমবারের মতো মূল বাড়ীতে প্রবেশাধিকার পায়। শুরু হয় নতুন জীবন।
কিন্তু বছর পেরোতেই জাকের এবং দীপার মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে অজ্ঞাত কারনে। কেন যেন জাকের মাষ্টার দীপাকে অবহেলা শুরু করে। প্রাথমিক রোমাঞ্চ কেটে গিয়েছিল বলেই কী? দুরত্ব বাড়তে বাড়তে দৈনিক খিটিমিটি ও চুড়ান্ত বিরক্তিতে পৌঁছে যায় সেটা। তাদের প্রায় ছাড়াছাড়ি হয় হয় অবস্থা। জাকের কেন যেন সহ্য করতে পারছে না আর দীপাকে। অস্বস্তিকর পরিস্তিতি। তখনো দীপা চাইলে ফিরে যেতে পারতো কোলকাতা। বড় জা হালিমা সেরকম প্রস্তাবও করেছিল স্নেহের বশে। কিন্তু দীপা অনড়। সে ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে। এই দেশেই থাকবে সে। যদি জাকের তাকে রাখতে না চায়, তাহলে বিদেয় করে এখান থেকে চট্টগ্রাম শহরে রেখে আসুক। একলাই থাকবে দীপা। কিন্তু কোলকাতা যাবে না কিছুতেই।
একদিন তাই হলো। জাকের মাষ্টার দীপাকে তালাক দিল এবং শহরে রেখে আসলো। রেখে আসা বলা ঠিক না। বলা ভালো শহরের রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসলো চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে। আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে আসা। এখানে জাকের মাষ্টারকে একটা অমানুষ বলে মনে হয়। কিন্তু সমাজে জাকের মাষ্টার খুবই ভদ্রলোক ছিলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি ওনার অনেক ভালোমানুষিকতা। কিন্তু ওই মানুষটা দীপার সাথে তখন কেন যে ওরকম করলো সেটা এই যুগে বসে বোঝা মুশকিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা বাদে বোঝা অসম্ভবও। সমস্যা হলো অত আগের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেউ বেঁচে নেই। প্রায় একশো বছর আগের কথা।
দীপার কথা ভুলে যায় সবাই।
৩.
আরো পঞ্চাশ বছর পর শহরে দীপার সন্ধান পায় তার জা হালিমার এক সন্তান তালেব। খুঁজে বের করে তার হারিয়ে যাওয়া প্রাক্তন চাচী দীপাকে। খুঁজে পেয়ে মাকে আর বোনকে নিয়ে দীপার ঘরে যায়। চটগ্রামের আসকার দীঘির পাড়ে ছোট এক কক্ষের ঘরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছে দীপা। ঘরের একপাশে জায়নামাজ বিছানো, তসবি ঝোলানো দেয়ালে। অন্যপাশে তক্তোপশে পাটির বিছানা। মাথার উপর বেড়ার ছাউনি। তার উপরে টিন। অন্ধকার চার দেয়ালের ভেতর স্বেচ্ছাবন্দী জীবন। বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুজ। সুতার কারখানায় কাজ করেছে বহুবছর। এখন ঘরে বসে নামাজ পড়ে আর সেলাইকর্ম করে দিনযাপন করে। হালিমাকে এত বছর পরে দেখতে পেয়ে চিনতে ভুল করে না একমুহুর্তও। ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরে দীপা। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বর্ষা নামে দুজনের। হালিমার মুখ দিয়ে কথা সরে না। কোন মতে বলে-
-আমি তো ভেবেছি তুমি চলে গেছ। কেন তুমি কোলকাতা গেলে না?
-কেন যাবো দিদি, আমি তো যাবার জন্য আসিনি
-জাকের তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে, তুমি কেন রয়ে যাবে?
-জাকের ছেড়েছে আমাকে। কিন্তু আমি তো ছাড়িনি তাকে, তার দেশকে, তার ধর্মকে। আমি সবকিছু ছেড়ে এসেছি তাকে আজীবন জড়িয়ে রাখবো বলে। আমার তো আর কিছু নাই।
এটুকু শুনেই হালিমা বাকরূদ্ধ। তার চোখ ফেটে আবারো জল আসে। সে অশ্রু লুকিয়ে সাথে আনা পিঠে, মিঠাই, নারিকেল, চালভাজা ইত্যাদি দীপার হাতে দেয়। আর বিস্ময়ে চেয়ে থাকে অই মুখটার দিকে। বয়সের বলিরেখা মুখে। কিন্তু কী নিদারুন বিশ্বাস এই নারীর ভেতর। বিশ্বাসের কি শক্তি!! তুলনা করার মতো কোন বস্তু বা মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে পায় না হালিমা।
৪.
মায়ের মুখে শোনা ঘটনা। হালিমা খাতুন আমার নানী। দীপাও আমার নানী ছিল। নানার ভাইয়ের স্ত্রী। সেদিন হালিমার বাসায় আমার মাও গিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের কথা।
নিঃসঙ্গ দীপাকে দেখতে জাকের মাষ্টার কখনো গিয়েছিল কি না কেউ জানে না। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের আসল কারনও কেউ জানে না। দীপাও কাউকে বলেনি। জীবনের অনেক অমীমাংসীত রহস্যের মতো এটিও চির অমীমাংসিত থেকে যাবে।
দীপা আহমদেরও মৃত্যু হয়েছে বেশ কবছর আগে। জাকের মাষ্টারের আগে আগে। তারা দুজনেই চলে গেছে এক মহান প্রেমের ও বিচ্ছেদের রহস্য অমীমাংসিত রেখে।
ঘটনার এটুকু জেনে মনে হয় জাকের মাষ্টার খুব স্বার্থপরতার পরিচয় দিয়েছিল। কারন সে নিজে আবার বিয়ে করে সংসার নিয়ে সুখে দিন পার করেছে। সমাজে জাকের মাষ্টার ঘৃনিত মানুষ না হলেও পাঠক তাকে নিশ্চিত ঘৃনা করবে এই ঘটনা জেনে। আমিও করেছি যখন দীপার ঘটনাটা জেনেছি।
তবু ঘেন্নাকে ছাপিয়ে বিস্ময়টাই জেগে থাকে বেশী। রহস্যটা জানার অদম্য ইচ্ছেটা জেগেই থাকে। কি এমন প্রেম ছিল তাদের? একটা মানুষ প্রেমের জন্য কতটা ত্যাগ করতে পারে? দেশকালসময়ভেদে প্রেমের প্রকৃতি কি বদলায়? ভিন্নধর্মের দুটি মানুষের সাহসী প্রেম এই শতকেও পরম বিস্ময় জাগিয়ে রাখে আমার চোখে।
পহেলা ফাল্গুনে জ্যৈষ্ঠের স্মৃতিচর্বন
ভয়ানক গরম পড়ছে আজ। জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা দুপুর। ক্লাস শেষে কোনমতে ষ্টেশানগামী শেষ বাসটা ধরে ঝুলে পড়লাম। ষ্টেশানে এসে দেখি ট্রেনে ঠাসাঠাসি ভীড়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুপুর দেড়টার ফিরতি ট্রেনের যাত্রাটা মোটেও সুখকর নয়, বিশেষ করে এই দাবদাহে। কোন বগিতেই সুঁচ ঢোকার জায়গা নেই। বগির পাদানি গুলো পর্যন্ত দুজন করে বসে দখল করে রেখেছে। হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে যাবার আশাও মাঠে মারা গেল।
বিকল্প পথে নাজিরহাটের বাসে যাওয়া যায়। কিন্তু পকেটে আছে সাড়ে সাতটাকার মতো। আড়াই টাকা বাসভাড়া তিনটাকা রিকশা ভাড়া চলে গেলে দুই টাকা দিয়ে বিকেলটা পার করা যাবে না। একটা গোল্ডলীফেই দুইটাকা চলে যাবে। নাহ এই মাগনা ট্রেনই ভালো। আবার ট্রাই দেই।
পেছনের দিকে একটা মালগাড়ীর বগি দেখা গেল, ঢোকা যাবে ওখানে। বাছাবাছি না করে ওখানেই উঠে গেলাম। ওটাও ভরে গেল পাঁচমিনিটে। মালগাড়ীর বগিতে কোন আসন থাকে না। পুরোটা একটা লোহার বদ্ধ খাঁচা বিশেষ। দুপাশে পাঁচফুটের মতো খোলা মালামাল ওঠানামা করার জন্য।(ওরকম মালবাহী বগি ভার্সিটির ট্রেনে যুক্ত করার কোন যুক্তি আমি আজো পাইনি)
মালগাড়ীতে ধরার মতো কিছুই নেই। দুই পায়ের ব্যালেন্সই একমাত্র ভরসা। সেই ভরসায় মাঝামাঝি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পুরোনো লোহার জং ধরা বগি। বয়স একশো বছরের কম না। আগাগোড়া মরচে দিয়ে ঢাকা। মাথার উপরে.... পায়ের নীচে... ডানে..... বামে... শুধুই লোহা আর লোহার মরচে। এই গরমে লোহাগুলো যেন ফুটছে, আর আমাদের ফোটাচ্ছে। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাবাব হয়ে যাই কিনা।
ট্রেন ছাড়তেই একটু হাওয়ার পরশ মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু ওই হাওয়াটাও বাইরের উত্তাপে তেতে আছে। মালগাড়ীতেও প্রচন্ড ভীড়। একজন আরেকজনের গায়ে ঠেকা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইছোট্ট জায়গায় ছাত্রছাত্রী পঞ্চাশজনের কম হবে না। সবাই ঘামছে আর হাঁসফাস করছে। আমার অবস্থা একটু বেশীই কাহিল সেদিন। কারন আমি এমনিতেই বাকীদের তুলনায় ছোটখাট আর দাঁড়িয়েছি মাঝখানে। ওখানে বাতাস প্রবেশ করছে না। পুরো শরীর ভিজে চুপচুপে। ঘামে মাথার চুল ভিজে পানি ঝরছে।
তখনো ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ট্রেনের সেই গরমে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারিনি। মালগাড়ীতে আগেও দুয়েকবার উঠেছি। কিন্তু আজকের মতো জঘন্য অবস্থা আর হয়নি। জান বেরিয়ে যায় অবস্থা। ইচ্ছে হচ্ছে ভীড় ঠেলে লাফ দিয়ে নেমে জীবন জ্বালা জুড়াই এই লোহার নরক থেকে। ট্রেন কতক্ষন চলেছে জানি না। হঠাৎ ঘাড়ে একটা বাতাসের পরশ লাগলো। মোলায়েম এবং অপেক্ষাকৃত শীতল। ভাবলাম বাহ্ দারুন তো। এত মানুষের ভীড় সরিয়ে কোন ফাঁকে এই সুমতির বাতাস আমার কাছে পৌঁছে গেছে।
একটু পর পেছনে তাকাতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, ওটা মোটেও প্রকৃতির হাওয়া নয়। আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ানো পেছনের একটা মেয়ের হাত পাখার বাতাস। মেয়েটার অজান্তেই তার বাতাসের কিছুটা আমার ভাগে চলে আসছে তার কাঁধ পার হয়ে। আমি চুপচাপ ওই অপ্রত্যাশিত বাতাস উপভোগ করে যেতে লাগলাম। সেই দোজখে ওই অচেনা মেয়েটার হাতপাখাটা আমাকে এয়ারকন্ডিশনের মতো স্বস্তি দিল।
ধড়ে যেন প্রান ফিরে এল। ভীষন ভীষন কৃতজ্ঞ বোধ করলাম মেয়েটার প্রতি। পেছনে না তাকানোর ভান করলাম। যেন অনিচ্ছায় বাতাস খাচ্ছি। কিন্তু আরো কিছু সময় পর খেয়াল করলাম বাতাসটা আগের চেয়ে একটু যেন বেশীই লাগছে। পেছন ফিরে আমি তো তাজ্জব!! মেয়েটার হাতপাখা আরো পেছনে এসে আমার ঘাড় বরাবর বাতাস দেয়া শুরু করেছে। সচেতন ভাবে সীমানা লংঘন করেছে হাতপাখাটা। শুধু তাই নয় এবারের বাতাসের প্রায় পুরোটা আমাকেই দিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা বোধহয় বুঝতে পেরেছে আমি বাতাসের জন্য কিরকম কাঙ্গাল হয়ে আছি। আহ কি মায়া রে। আমি চুপচাপ ওই জায়গায় দাড়িয়ে বাতাসটা দিয়ে প্রান জুড়াচ্ছি আর ভাবছি নামার আগে মেয়েটাকে অবশ্যই একটা বিশেষ ধন্যবাদ দেবো। এরকম একজন মায়াবতীর সাথে পরিচয়ের লোভও হলো।
কিন্তু না। বিধাতার ইচ্ছা ছিল না।
ট্রেনটা ষোলশহর আসতেই মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে নেমে গেল বগি থেকে। আমার কিছু বলা হলো না, ধন্যবাদ রয়ে গেল পকেটে। "চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে............." কি এক আক্ষেপ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে। এই চল্লিশ মিনিটের যাত্রাপথে এমন মায়াবী হাওয়া দিয়ে যে আমার প্রানটা তাজা রাখলো, তাকে কিছুই বলা হলো না, এমনকি তার চেহারাও দেখলাম না আমি।
হে অচেনা মায়াবতী, আপনার সেই হাত পাখার বাতাসকে আমি এখনো কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করি আজ একুশ বছর পরেও।
৫
সোহেল কাজী | ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১০ - ৫:২৭ অপরাহ্ন
আহাহা জৈষ্ট মাসের গরমের মায়াবতীর হাত পাখার বাতাস
শুভ বসন্ত
শুভ বসন্ত
১০
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৭:৪২ পূর্বাহ্ন
শাটল ট্রেনের প্রতিটি যাত্রায়ই একেকটা কাহিনী থাকে
১১
নুশেরা | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৫:০২ পূর্বাহ্ন
আহা শাটল ট্রেন... ভীড়ের মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় আমি দুইবার
ফেইন্ট হইছিলাম, ফার্স্ট ইয়ারে থাকতেই... ফেইন্ট হওয়ার মজা আছে। সাথে
সাথে পুরা একটা লম্বা সিট খালি করে ছেলেমেয়েরা সরে যায়... একবার জ্ঞান
আসার পরও আধঘন্টা চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম...
পরে খোলামেলা চেয়ার কোচ ধরণের বগি আসলো, আর কাউকে পড়ে যেতে দেখিনাই
পরে খোলামেলা চেয়ার কোচ ধরণের বগি আসলো, আর কাউকে পড়ে যেতে দেখিনাই
১২
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
ফেইন্ট হবার দারুন উপাকারিতা আমিও একবার পাইছিলাম, পোষ্টে লেখার জন্য জমা রাখলাম আপাতত
১৪
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ১২:২৬ অপরাহ্ন
আপনার বান্ধবী এখন কোথায় আছে? ওনারে লাল সেলাম। ট্রেনের ছাদের
যাত্রী হইছি কয়েকবার, কিন্তু ইঞ্জিনের যাত্রী হইবার দুঃসাহস করি নাই কখনো
১৫
নুশেরা | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ১২:৫০ অপরাহ্ন
বান্ধবী আছে মুরাদপুরে। তারে লাল সালাম পৌঁছায় দিবো।
আপনি নির্ঘাত বটতলীর যাত্রী ছিলেন। আমি ঝাউতলার। ষোলশহরের একটা গ্রুপ বগিতে বগিতে চান্স না খুঁজে সোজা ইঞ্জিনে চড়ে বসতো। আব্বাস ভাই মিনমিন করে বলতেন অন্তত সামনের একটা কাঁচ যেন ভীড়ের চাপে আড়াল না হয়... সেই ওনাকেও কয়েক বছর আগে ছুরি মারে কিছু ছাত্র...
আপনি নির্ঘাত বটতলীর যাত্রী ছিলেন। আমি ঝাউতলার। ষোলশহরের একটা গ্রুপ বগিতে বগিতে চান্স না খুঁজে সোজা ইঞ্জিনে চড়ে বসতো। আব্বাস ভাই মিনমিন করে বলতেন অন্তত সামনের একটা কাঁচ যেন ভীড়ের চাপে আড়াল না হয়... সেই ওনাকেও কয়েক বছর আগে ছুরি মারে কিছু ছাত্র...
১৬
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ১:০২ অপরাহ্ন
হ আমি বটতলীর যাত্রী ছিলাম। সেই অচেনাও কিন্তু ঝাউতলার নামছিল। আপ্নাদের কোন প্রতিবেশী আপা হইতারে
কিন্তু ড্রাইভার আব্বাস ভাইরে চিনলাম না। তবে একবার মোটা করে এক ড্রাইভাররে জেট বিমানের বেগে ট্রেন চালানোর দায়ে ফতেয়াবাদ নামিয়ে কিলাইতেছিল পোলাপান, উনি না তো?
কিন্তু ড্রাইভার আব্বাস ভাইরে চিনলাম না। তবে একবার মোটা করে এক ড্রাইভাররে জেট বিমানের বেগে ট্রেন চালানোর দায়ে ফতেয়াবাদ নামিয়ে কিলাইতেছিল পোলাপান, উনি না তো?
১৮
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ১:০৮ অপরাহ্ন
কাহিনী ৯২-৯৩ সালের হবে। আমরা তখন থার্ড ইয়ারে বোধহয়। আপনারা ঢোকার আগে।
২০
রেজওয়ান শুভ | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
ম্যাক্সিম গোর্কি একটা ছোটোগল্প পড়সিলাম , সেও আপনার মতো লাস্টের
প্যাড়ায় ফাটায়া দিয়া গেসিলো , গল্পটা আমার এখনো মনে আছে , আজীবন থাকবে।
আপনারটা আজীবন থাকবে গ্যারান্টি দিতে পারতেসি না , তবে খুব ভালো যেহেতু
লিখসেন , অনেকদিন পর্যন্ত রাখা উচিত।
আহারে প্রেম , এই জীবনে আর হইলো না .......
আহারে প্রেম , এই জীবনে আর হইলো না .......
২১
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৭:৫০ পূর্বাহ্ন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত বড় সার্টিফিকেট দেবার জন্য। ভাল থাকবেন
২২
মুক্ত বয়ান | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ১২:১৭ অপরাহ্ন
সিরাম সিরাম সিরাম।
আপনেও তো দেখি আমাগো দেশাইত্তা ভাই!! চাঁটগাইয়া।
আমি ভার্সিটিতে ৩/৪ বারই গেছি। ২ বার শাটল ট্রেনে আসছি। পোলাপাইনের কখনো অভাব হয় নাই। সিট সবসময়ই ম্যানেজ হইয়া যায়।
ইস। কখনো কারো বাতাস খাওয়া হইল না।
আপনেও তো দেখি আমাগো দেশাইত্তা ভাই!! চাঁটগাইয়া।
আমি ভার্সিটিতে ৩/৪ বারই গেছি। ২ বার শাটল ট্রেনে আসছি। পোলাপাইনের কখনো অভাব হয় নাই। সিট সবসময়ই ম্যানেজ হইয়া যায়।
ইস। কখনো কারো বাতাস খাওয়া হইল না।
******************************************
একটি ভেলা, একটি ঝরনা এবং একটি ভ্রমনের সারসংক্ষেপ
লোকটা কাঠুরে। পাহাড়ী বৃক্ষ থেকে জ্বালানী
সংগ্রহ করার জন্য ভেলা বানিয়ে উজানে গিয়েছিল। হিমালয়ের বরফ গলা খরস্রোতা
নদী। নদীতীরে বসে ভেলাটা দড়ি দিয়ে ধরে রেখে কাঠুরে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল
খানিক। দিবানিদ্রার ঝিমানিতে দড়িটা কখন ফসকে গেল হাত থেকে কাঠুরে টেরই পেল
না।
সেইক্ষন থেকে ভেলাটার অনিশ্চিত ভাসন্ত জীবন শুরু। দিন যায়, মাস যায়। ভেলাটি নানান আঁক বাঁক ঘুরতে ঘুরতে কোথাও স্থির হতে পারে না নির্জন পর্বত সংকুল অরন্যে। ভাসতে ভাসতে ছোট্ট একটা উচ্ছল ঝর্নাধারার সাথে মিলিত হলো একদিন। যেখান থেকে হিমালয় প্রবাহের নদীগুলোর জন্ম হয় ঠিক সেইখানে ভেলাটি আটকে ছিল একটা ঝোপের লতায়। ঝরনার আনন্দধারা স্পর্শ করলো ভেলাটিকে। তাই প্রথম সুযোগেই ভেলাটি নিজেকে নিশ্চিন্তে ভাসিয়ে দিল পাহাড়ী ঝরনার একাকীত্বে।
ভাসতে ভাসতে ঝর্নাকে সঙ্গী করে প্রকৃতির বিপুল সাম্রাজ্যকে নতুন চোখে দেখতে পেল সে। ঝর্নাধারা তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বুনো অর্কিডের সাথে, পাথরে লেগে থাকা প্রায় অদৃশ্য সবুজ শেওলার সাথে, অচেনা ডাকের পাখীদের সাথে, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে।
দক্ষিন সাগর থেকে উড়ে আসা মেঘেরা যেখানে বাধা পেয়ে বৃষ্টি ঝরায় একদিন ওরা থামলো সেই খানে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল উপত্যকা জুড়ে। ধোঁয়াশা সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঝর্নাধারা একটা অচেনা অথচ খুব পরিচিত সুরের গান গেয়ে শোনালো তাকে। বৃষ্টি বিষন্ন ভেলাটিকে সেই গান যেন স্পর্শ করলো কোথাও। সেই সাথে বুঝতে পারলো এই আপাতঃ উচ্ছল ঝরনাটির কোথাও লুকোনো ক্ষত আছে একটা।
বৃষ্টি থামার পর আবারো পথ চলা শুরু হলে দেখলো ঝরনার বিষন্ন সুর কেটে গিয়ে তখন উজ্জল রোদ্দুর চিকমিক করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে এই ঝরনাটিই করুন সুরে কি গান গেয়েছিল। দিনের পর দিন কলকল করে ঝরনা বয়ে চলে, ঝরনার গান শুনতে শুনতে বয়ে যায় ভেলাও।
পর্বতের উদ্দাম পথ চলা যখন সমতল সন্নিকটে একটু স্থিরতায় এসেছে তখন ভেলাটি ঝরনার কাছে মুখ খুললো, নিজের বহু পুরোনো লুকোনো এক ক্ষতকে উন্মুক্ত করলো ঝরনার কাছে। বেড়ে ওঠার কালে কোন এক আঘাতে তার প্রান বিলুপ্ত হবার পূর্বে সেও ছিল একটা পত্র পল্লবিত সবুজ বৃক্ষ। সেটাই তার আসল পরিচয়। ভেলাটির বর্তমানের পরিচয়হীনতার বেদনা, স্থানচ্যুত হবার বেদনা ঝরনাকে প্রবলভাবে স্পর্শ করলো।
ঝরনা পরম আদরে আশ্রয় দিল ভেলা এবং তার সকল বেদনাকে। একদিন ঝরনারও মুখ খুললো, জানা গেল তারও আছে অজানা বেদনার ইতিহাস। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভেলাটি আবিষ্কার করলো ঝরনার বেদনা যেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। ঝরনাটি যেই ফল্গু ধারার সাথে বয়ে যাচ্ছিল, এক আকস্মিক ভুমি ধ্বস এসে রূদ্ধ করে দিয়েছিল তার অগ্রযাত্রা। প্রানবন্ত ধারাটিকে মাঝ পথে হারিয়ে ফেলে দিশেহারা মুমূর্ষু হয়ে পড়ে ছিল ঝরনাটি। ঠিক সেই সময়ে ভেলাটিও এসে আটকে গিয়েছিল ঝরনার কাছাকাছি লতাঝোপে।
নতুন মেঘের বৃষ্টিতে যখন ঝরনার বুকে স্রোতের জন্ম হলো, তখন ঝরনাটি প্রান পেল, প্রান পেয়ে প্রথম চোখ মেলে দেখলো ভেলাটিকে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ভেলাকেই তার সব গান শুনিয়ে যায় ঝরনা। ভেলাটিও এতদিন পর পথ চলার আনন্দ পেল। দুজনের একসাথে পথ চলা সেই থেকে শুরু। গন্তব্য অনিশ্চিত জেনেও পথ চলা থামে না। কারন এ ভ্রমন কেবলই ভ্রমন। এ ভ্রমনের কোন গন্তব্য নেই, আছে কেবল আনন্দ।
সেইক্ষন থেকে ভেলাটার অনিশ্চিত ভাসন্ত জীবন শুরু। দিন যায়, মাস যায়। ভেলাটি নানান আঁক বাঁক ঘুরতে ঘুরতে কোথাও স্থির হতে পারে না নির্জন পর্বত সংকুল অরন্যে। ভাসতে ভাসতে ছোট্ট একটা উচ্ছল ঝর্নাধারার সাথে মিলিত হলো একদিন। যেখান থেকে হিমালয় প্রবাহের নদীগুলোর জন্ম হয় ঠিক সেইখানে ভেলাটি আটকে ছিল একটা ঝোপের লতায়। ঝরনার আনন্দধারা স্পর্শ করলো ভেলাটিকে। তাই প্রথম সুযোগেই ভেলাটি নিজেকে নিশ্চিন্তে ভাসিয়ে দিল পাহাড়ী ঝরনার একাকীত্বে।
ভাসতে ভাসতে ঝর্নাকে সঙ্গী করে প্রকৃতির বিপুল সাম্রাজ্যকে নতুন চোখে দেখতে পেল সে। ঝর্নাধারা তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বুনো অর্কিডের সাথে, পাথরে লেগে থাকা প্রায় অদৃশ্য সবুজ শেওলার সাথে, অচেনা ডাকের পাখীদের সাথে, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে।
দক্ষিন সাগর থেকে উড়ে আসা মেঘেরা যেখানে বাধা পেয়ে বৃষ্টি ঝরায় একদিন ওরা থামলো সেই খানে। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছিল উপত্যকা জুড়ে। ধোঁয়াশা সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঝর্নাধারা একটা অচেনা অথচ খুব পরিচিত সুরের গান গেয়ে শোনালো তাকে। বৃষ্টি বিষন্ন ভেলাটিকে সেই গান যেন স্পর্শ করলো কোথাও। সেই সাথে বুঝতে পারলো এই আপাতঃ উচ্ছল ঝরনাটির কোথাও লুকোনো ক্ষত আছে একটা।
বৃষ্টি থামার পর আবারো পথ চলা শুরু হলে দেখলো ঝরনার বিষন্ন সুর কেটে গিয়ে তখন উজ্জল রোদ্দুর চিকমিক করছে। দেখে বোঝার উপায় নেই একটু আগে এই ঝরনাটিই করুন সুরে কি গান গেয়েছিল। দিনের পর দিন কলকল করে ঝরনা বয়ে চলে, ঝরনার গান শুনতে শুনতে বয়ে যায় ভেলাও।
পর্বতের উদ্দাম পথ চলা যখন সমতল সন্নিকটে একটু স্থিরতায় এসেছে তখন ভেলাটি ঝরনার কাছে মুখ খুললো, নিজের বহু পুরোনো লুকোনো এক ক্ষতকে উন্মুক্ত করলো ঝরনার কাছে। বেড়ে ওঠার কালে কোন এক আঘাতে তার প্রান বিলুপ্ত হবার পূর্বে সেও ছিল একটা পত্র পল্লবিত সবুজ বৃক্ষ। সেটাই তার আসল পরিচয়। ভেলাটির বর্তমানের পরিচয়হীনতার বেদনা, স্থানচ্যুত হবার বেদনা ঝরনাকে প্রবলভাবে স্পর্শ করলো।
ঝরনা পরম আদরে আশ্রয় দিল ভেলা এবং তার সকল বেদনাকে। একদিন ঝরনারও মুখ খুললো, জানা গেল তারও আছে অজানা বেদনার ইতিহাস। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভেলাটি আবিষ্কার করলো ঝরনার বেদনা যেন তার চেয়ে অনেক অনেক গুন বেশী। ঝরনাটি যেই ফল্গু ধারার সাথে বয়ে যাচ্ছিল, এক আকস্মিক ভুমি ধ্বস এসে রূদ্ধ করে দিয়েছিল তার অগ্রযাত্রা। প্রানবন্ত ধারাটিকে মাঝ পথে হারিয়ে ফেলে দিশেহারা মুমূর্ষু হয়ে পড়ে ছিল ঝরনাটি। ঠিক সেই সময়ে ভেলাটিও এসে আটকে গিয়েছিল ঝরনার কাছাকাছি লতাঝোপে।
নতুন মেঘের বৃষ্টিতে যখন ঝরনার বুকে স্রোতের জন্ম হলো, তখন ঝরনাটি প্রান পেল, প্রান পেয়ে প্রথম চোখ মেলে দেখলো ভেলাটিকে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ভেলাকেই তার সব গান শুনিয়ে যায় ঝরনা। ভেলাটিও এতদিন পর পথ চলার আনন্দ পেল। দুজনের একসাথে পথ চলা সেই থেকে শুরু। গন্তব্য অনিশ্চিত জেনেও পথ চলা থামে না। কারন এ ভ্রমন কেবলই ভ্রমন। এ ভ্রমনের কোন গন্তব্য নেই, আছে কেবল আনন্দ।
১
আবদুর রাজ্জাক শিপন | ফেব্রুয়ারী ৯, ২০১০ - ১:১৫ অপরাহ্ন
এভাবেই আমরা একেকটা গন্তব্যহীন ভেলা হয়ে ভেসে যাই..
সুন্দর !
সুন্দর !
৩
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ৯, ২০১০ - ১:২৭ অপরাহ্ন
খাইছে..... আমার বিবাহ বার্ষিকী ২৫ ডিসেম্বর
আজকে হলো সুবর্নার বিয়ে বার্ষিকী
আজকে হলো সুবর্নার বিয়ে বার্ষিকী
৮
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১০ - ৮:৩২ পূর্বাহ্ন
লেখার অবস্থা এত খ্রাপ হইছে পাঠককে কয়েকবার পড়ে বুঝতে হয়
১৪
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১০ - ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
গান ঠিকই শুনাইতেছে হয়তো, কিন্তু সাউন্ড মিউট করা আছে বোধহয়
১৫
জমিদার | ফেব্রুয়ারী ৯, ২০১০ - ১১:০৪ অপরাহ্ন
বারো ঘন্টা বাসভ্রমনের বিনিময়ে তিন ঘন্টার বইমেলা দর্শনএই লেখাটা কি আপনার ??
২৬
সোহেল কাজী | ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১০ - ৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
আচ্ছা নীড়'দা পোষ্টটাকে যতবার পড়লাম ততোবারই এইতো আপন লাগছে কেন? মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমারই কথাগুলো শিল্পীর তুলিতে টেনে দিয়েছে।
সবাই শুধু ভেলায় করেই ভেষেই আনন্দ পাই, কেউ বুঝেনা সেই গাছের কি কষ্ট যে এখন নাম বদলে ভেলা হয়ে গেলো
পোষ্টে হাজার তারাগো
সবাই শুধু ভেলায় করেই ভেষেই আনন্দ পাই, কেউ বুঝেনা সেই গাছের কি কষ্ট যে এখন নাম বদলে ভেলা হয়ে গেলো
পোষ্টে হাজার তারাগো
২৭
নীড় সন্ধানী | ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১০ - ৭:৫৫ পূর্বাহ্ন
শুনে ভালো লাগলো এই কথাগুলো আপনারও জেনে। গাছের কষ্ট কেউ মনে রাখে না রে ভাই
********************************************************
৬
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ২৮, ২০১০ - ৪:৩৬ অপরাহ্ন
তাই বলেন!
ভুটানী রূহ আফজার রঙ এইরকম তো, ভাবছিলাম...........
ভুটানী রূহ আফজার রঙ এইরকম তো, ভাবছিলাম...........
১৩
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ২৮, ২০১০ - ৮:৩৪ অপরাহ্ন
মাছ থাকলে ফুলকপিতার ঝোল, মাছ না থাকলে বাঁধাকপিতা ভাজি
২০
সুবর্ণা | ফেব্রুয়ারী ৯, ২০১০ - ৩:১৪ অপরাহ্ন
পোস্টটা মিস করছিলাম। কসম নেটের আমিও কাউরে মিস করি না।
****************************************
অতৃপ্ত আত্মার বিশ্বভ্রমন (ইহা একটি আঁতেলীয় পোষ্ট, ভুত-পেত্নী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশ নিষেধ)
ভ্রমণ ছিল কঠিন নেশা জীবদ্দশায়।
বিশ্বজুড়ে ঘুরবো এবার, উল্টেপাল্টে দেখবো এবার জগতটাকে - 'কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্নিপাকে'। এলেবেলে পথের বাঁকে অনেকটা পথ হাঁটা হলেও, দীর্ঘ জীবন ৬০টি বছর বেঁচে থেকেও, বিশ্বজুড়ে হয়নি আমার দাপিয়ে বেড়ানো। সাধ-সাধ্যের দেখাদেখি হয়েছে কখনো, দীর্ঘ মোলাকাতের সুযোগ হয়নি একটি বারও।
যখন আমি সদ্য তরুণ…... তখন আমর অঢেল সময়, অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্য। সমস্যাটা টাকা-কড়ির, নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা বহুদুরের স্বপ্ন তখন, দেশ ভ্রমণে যাই কি করে। আরো একটু বড় হও, অপেক্ষাতে রইলাম আমি।
যখন আমি মধ্যযুবা…... শক্তি তখন অফুরন্ত, অর্থেরও নেই সমস্যা। কিন্তু আমি ভীষণ ব্যস্ত প্রচুর প্রাচুর্যে। সময় কোথায় বিশ্ব ঘোরার? ওইবেলাতেও হয়নি যাওয়া।
সময় যখন প্রৌঢ়ত্বে ...... তখন আমার প্রচুর সময়, ছিল অঢেল অর্থও। কিন্তু আমি ততদিনে বিত্ত দৌড়ে রিক্ত মানুষ, রোগ-ব্যাধিতে বিধ্বস্ত। দেশ-বিদেশে ভ্রমণ হলো হাসপাতাল টু হাসপাতালে। বিশ্ব দেখা দুরেই থাক, এমনকি সেই হাসপাতালের বারান্দাতে, খেয়াল করে হয়নি দেখা, ম্যাগনোলিয়ার কুঁড়িটিও। বিশ্ব আমার শেষবেলাতেও থেকেই যে যায় অদেখাতেই।
এই পারেতে আসার পরে শখটা যেন পুরন হলো। আত্মা আমার হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় সারা পৃথিবীতে। নাই টিকেটে- নাই ভিসাতে- নাই পাসপোর্টে। বিশ্বজুড়ে অবারিত সীমান্ত তার, অবাধ যাতায়াত । তবু যেন আত্মা আমার অতৃপ্ত যে বড়ো। অসময়ে ভ্রমণ করার বিড়ম্বনা যার, মানব জনম কেটে গেছে দ্বিধায় দ্বিধায় দ্বিধায়.....।
[কপচিত দর্শন - প্রত্যেক মানুষের শখ-সাধ-আহ্লাদ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল -- সময়, অর্থ, শক্তি। মানুষের জীবনে এই তিনটি জিনিস একই সময়ে এক সাথে থাকার ঘটনা অতি বিরল। দৈবাৎ যাদের একসাথে তিনটাই থাকে তারা অতি অসাধারণ অদ্ভুত ভাগ্যবান মানুষ]
১
নজরুল ইসলাম | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
আপনার মতোই আমার দশা। গোটা পৃথিবী ঘুরে দেখার সাধ নিয়ে বসে থাকি
ঢাকার এক চিপায়। যখন অঢেল সময় ছিলো, তখন টাকা ছিলো না। বাসভাড়ার অভাবে
মাইলের পর মাইল হাঁটছি।
এখন যদিও অঢেল নাই, তবে মোটামুটি কিছু আছে, টেনেটুনে কম পয়সায় ঘুরে আসতে পারবো আশেপাশে কোথাও থেকে। কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব।
এখন অপেক্ষায় বসে থাকি, একদিন টাকাও হবে, সময়ও জুটবে কপালে। কী জানি, হয়তো আমারও তখন আপনার প্রৌঢ়ত্বের মতোই দশা হবে...
কী আর করা...
এখন যদিও অঢেল নাই, তবে মোটামুটি কিছু আছে, টেনেটুনে কম পয়সায় ঘুরে আসতে পারবো আশেপাশে কোথাও থেকে। কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব।
এখন অপেক্ষায় বসে থাকি, একদিন টাকাও হবে, সময়ও জুটবে কপালে। কী জানি, হয়তো আমারও তখন আপনার প্রৌঢ়ত্বের মতোই দশা হবে...
কী আর করা...
২
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:৫১ অপরাহ্ন
সেই যে একটা গান আছে না সত্তর দশকের, খান জয়নুল গেয়েছিল বোধহয় কোন সিনেমায় - 'টাকা তুমি সময়মত আইলা না' :(
৪
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:৫২ অপরাহ্ন
শেখ শাদী বা ইবনে বতুতার যুগ হলে সম্ভব ছিল, তখন প্লেন ছিল না, ভিসা-পাসপোর্টও ছিল না। এখন প্লেন আছে ভিসা পাসপোর্টের কেরামতিও আছে।
৫
সোহেল কাজী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ১২:২২ অপরাহ্ন
পরজনম বলে কিছু নাই যদিও তবু ভাবতে ইচ্ছে করে পরজনম আছে। আর এই
জনমের কোন ভালো কাজের জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাকে চুজ করতে বলছে এই তুই কি হয়ে
আবার জন্ম নিতে চাস। আমি পাখি হয়ে জন্মাবো। কাউয়া বা শকুন টাইপ পাখি যেই
খাওয়া হারাম
তারপর ডানা মেলে দিবো আকাশে, মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুরব দেশ থেকে দেশান্তরে। শকুনী থাকলেতো কথাই নাই। (চিন্তার বিষয় কাউয়ার ফিমেনিন জেন্ডার কি? মহিলা কাউয়া হওয়ার কোন সম্ভাবিলিটিতো দেখিনা)
তারপর ডানা মেলে দিবো আকাশে, মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুরব দেশ থেকে দেশান্তরে। শকুনী থাকলেতো কথাই নাই। (চিন্তার বিষয় কাউয়ার ফিমেনিন জেন্ডার কি? মহিলা কাউয়া হওয়ার কোন সম্ভাবিলিটিতো দেখিনা)
৬
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:৫৪ অপরাহ্ন
কাকের স্ত্রীলিংগ কাকা বা কাকী হতে পারতো, কিন্তু দুটোই বুকড্। :(
৮
হাসান রায়হান | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ১:১৩ অপরাহ্ন
পরজনমে আমি ইউরিপিয়ান হবো। আমার পরিচিত এক ডাচ ভুটান পরযন্ত ঘুইরা লাইছে।
৯
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:৫৫ অপরাহ্ন
বৃটিশ অপছন্দ হলে স্পেনিশ বা পূর্তগীজ হওয়ার চেষ্টা কইরেন, তাইলে ইসাবেলের আশীর্বাদে কলম্বাস বা ভাস্কো দা গামা হওয়া সম্ভব হবে। :)
১০
শওকত মাসুম | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:২৩ অপরাহ্ন
ঠিক। তিনটা মেলে না। তবে আমি মনে হয় একটু ভাগ্যবান। ফ্রি ফ্রি কয়টা দেশ ঘুরতে পারছি। নিজের টাকায় তো আর সম্ভব না।
১১
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:৫৯ অপরাহ্ন
এই ভাগ্যের জন্য সাংবাদিকদের আমি আজন্ম হিংসা করে যাবো। পরজনমে সাংবাদিক হইয়া জন্ম নিতে চাই :)
১২
অতিথি পাখি | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ২:২৫ অপরাহ্ন
এই দিক থেকে প্রভু মনে হয় আমাকে দয়া করেছেন ।।
ক্লাশ থ্রী এর পর থেকেই বাহিরে বাহিরে বাদাইম্মার মত বড় হইছি ।।
কইতে পারেন ষ্ট্রীট বয় !!
দেখেছি অনেক , বুঝেছি কম , শিখেছি আরো কম !!! এই আর কি !!
ক্লাশ থ্রী এর পর থেকেই বাহিরে বাহিরে বাদাইম্মার মত বড় হইছি ।।
কইতে পারেন ষ্ট্রীট বয় !!
দেখেছি অনেক , বুঝেছি কম , শিখেছি আরো কম !!! এই আর কি !!
১৩
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ৩:০০ অপরাহ্ন
বাদাইম্মাকে সভ্য ইংরেজীতে ভ্যাগাবন্ড টুরিষ্ট বলে, ষ্ট্রীট বয় বলে না!! :)
১৫
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ৩:১১ অপরাহ্ন
যেহেতু আপনি মানবকুলের অন্তর্ভুক্ত, আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন আঁতেল দর্শন :)
ভুতপেত্নীদের ঢুকতে বারন করছি সেই কারনে, নানান অব্যাখ্যাজাত আপত্তি তুলতো তারা :)
ভুতপেত্নীদের ঢুকতে বারন করছি সেই কারনে, নানান অব্যাখ্যাজাত আপত্তি তুলতো তারা :)
১৭
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ৩:২৮ অপরাহ্ন
কাইন্দেন না, আবার আসিব ফিরে এই লাল সবুজের বাংলায়.........
১৯
ভাঙ্গা পেন্সিল | জানুয়ারী ৯, ২০১০ - ৯:৪৫ অপরাহ্ন
সময়-অর্থ-শক্তির উপ্রে মনে হয় ইচ্ছাশক্তির কথাটা বলা দরকার। শখ হলেই হয় না, যথেষ্ঠ পরিমাণে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হয়।
সামান্য অর্থ জমলেই চিপাচুপা দিয়া সময় বের করে আমি বেরিয়ে পড়ি। মনমতো ভ্রমণসঙ্গী আমার কাছে সময়-অর্থ-শক্তির চাইতে বেশি ইম্পোর্টেন্ট!
সামান্য অর্থ জমলেই চিপাচুপা দিয়া সময় বের করে আমি বেরিয়ে পড়ি। মনমতো ভ্রমণসঙ্গী আমার কাছে সময়-অর্থ-শক্তির চাইতে বেশি ইম্পোর্টেন্ট!
২০
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ১১, ২০১০ - ৮:৫২ পূর্বাহ্ন
অবশ্যই ইচ্ছাশক্তি প্রধানতম। ইচ্ছা ও সামর্থ্য দুটোই। তবে এখানে
ইচ্ছার ব্যাপারটাকে বেসিক ধরে সামর্থ্যহীনতার আক্ষেপটা এনেছি। যাদের ইচ্ছে
নেই, তাদের আক্ষেপও নেই। :)
২২
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ১১, ২০১০ - ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
আপনি ভুতনি কোন গ্রহের? তাবিজের স্ক্যান পার হলেন কি করে? :)
২৩
কাওছার আহমেদ | জানুয়ারী ১১, ২০১০ - ৬:২৬ পূর্বাহ্ন
নীড়দা, খুব মন খারাপ করা একটা বিষয় টেনে আনলেন। আমিও কোথাও যাই না, আমার কোনটা নেই বুঝতে পারছি না। :)
২৪
নীড় সন্ধানী | জানুয়ারী ১১, ২০১০ - ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
দুটো ব্যাপার লাগে। ইচ্ছা এবং সামর্থ্য। আপনার সামর্থ্য আছে ইচ্ছা নাই। :)
********************************************************অতঃপর একদিন
তুমি নির্জন ছিলে না, আবার জনারণ্যেও ছিলে না। চুপকথার এক বিষন্ন নগরীতে ছিল বসবাস। আমি গলি পথে সেই নগরীতে হাঁটতে গিয়ে মুখোমুখি হই তোমার। বিষন্ন নগরীতে বসবাস করলেও আমি কোন বিষন্নতা দেখিনি তোমার চোখে মুখে। তুমি ছিলে উচ্ছল ফুলেল তারুণ্যে ভরপুর অপূর্ব এক সত্তা।
তোমার সংস্পর্শে আমি পবিত্র হলাম, আমি আকাশে চোখ মেললাম, মেঘেদের আনাগোনা দেখলাম, আর ভেসে গেলাম অবাক আনন্দে। আমি ভাসলাম, বাসলাম এবং তোমাকেও ভাসালাম। আমাদের আনন্দমেলায় কোন ছেদ ছিল না।
রাত্রির আকাশ যখন অজস্র নক্ষত্র মাথায় নিয়ে পুব থেকে পশ্চিম ছুটে যায়, আমি সেই আঁধারে মিশে যাই। যখন রাতের শেষ তারাটা নিভে ভোরের আভা ফুটে ওঠে, আমি নতুন দিনের আশ্বাস পাই। তবু সেই বিমুগ্ধ ভোরে বসেও আমি রাতের নক্ষত্রদের কথা ভুলি না। তাই আমার সকল অপ্রকাশিত আনন্দ বেদনার গল্পগুলো স্বচ্ছন্দে বেরিয়ে চলে যায় তোমার কাছে। তুমি তাদের আগলে রাখো পরম মমতায়।
একদিন আমি তোমার মমতার মধ্যে প্রেমের সন্ধান পাই এবং অবধারিতভাবে সিক্ত হই অনুপম এক ভালোবাসায়।
অতঃপর .....অতঃপর....... একদিন সবকিছুই স্মৃতির অস্পষ্টতায় তলিয়ে যায়।
৪
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯ - ৪:১০ অপরাহ্ন
ন ণ ু ূ - এই চারটা জিনিস নিয়ে বিপদে আছি। তাই কমেন্টে কারেকশান পেলে বিগলিত হই :)
৭
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯ - ৪:৪২ অপরাহ্ন
আবারো ধন্যবাদ।
ভাবতেছি ওই চার জিনিসে ভুল পাইলে মাফ করিবেন এই মর্মে একটা ডিসক্লেইমার রাখতে হবে আমার প্রতি লেখায়।
ভাবতেছি ওই চার জিনিসে ভুল পাইলে মাফ করিবেন এই মর্মে একটা ডিসক্লেইমার রাখতে হবে আমার প্রতি লেখায়।
১০
সোহেল কাজী | ডিসেম্বর ৩০, ২০০৯ - ৪:৩০ অপরাহ্ন
রাতের জনাকীর্ণ আঁধারে বসে নৈশব্দ স্মৃতিচারণ করলাম যেন।
আহা! চেটে পুটে গিললাম
আহা! চেটে পুটে গিললাম
*******************************************
পড়া-লেখা-জোকা-ব্লগা বিষয়ক আড্ডাফাইয়িং পোষ্ট
লেখার চাইতে পড়তেই বেশী ভালো লাগে আমার। যা পাই তা-ই গিলি। মজা পেলেই পড়ি। সে চটি হোক আর চেখভ হোক। খুব ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে যখন নিউ মার্কেটের বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারতাম, তখন থেকেই এই ঝোঁকটা তৈরী হয়েছে।
অনেক বছর আগে চট্টগ্রাম নিউমার্কেটে 'বইঘর' নামে একটা দোকান ছিল। ওটার শান্ত নীরব পবিত্র ভাবটা আমার ভীষন ভালো লাগতো। এখন বোধহয় ওটা স্বর্নের দোকান হয়ে গেছে। নিউমার্কেটে গেলেই বাবা আমাকে ওখানে নিয়ে যেতেন। খুব যে বই কিনতাম তা নয়। তবু ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দটা ছিল দারুন। দোকানদার বাবার পরিচিত ছিল। বাবা ওনার সাথে গল্পে মাতলে আমি সারাটা দোকান ঘুরে ঘুরে বইয়ের ঘ্রান নিতাম। এখনো মনে পড়ে অন্য সব বইয়ের দোকান থেকে ওটা ছিল সম্পূর্ন আলাদা। অত বড় জায়গা নিয়ে বইগুলো তাকে তাকে সুন্দর সাজানো থাকতো। প্রিয় কয়েকটা বই কিনেছিলাম যা পরে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। প্রিয় দুটো বই "নানান দেশের ছেলেমেয়ে" আর "আবিষ্কারের কাহিনী" এখনও মিস করি। অবাক লাগে সেই ৬/৭ বছর বয়সেই বইয়ের প্রতি একটা লোভ তৈরী করে দিয়েছিল আমার বাবা।
শুরুটা বাবাই করে দিয়েছিলেন, তারপর বয়সের সাথে বন্ধু-বান্ধবের কল্যানে বনহুর, কুয়াশার সাথে পরিচয়। ক্লাস টেনে উঠে মাসুদ রানা এবং সেবা প্রকাশনীর বইতে বুঁদ হয়ে গেলাম। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমার পড়াশোনার ভিত্তিটা বাবার তৈরী আর আমাকে নির্মান করেছে সেবা প্রকাশনী। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয়ার সময় থেকে আগ্রহের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে 'সেবা' ছাড়িয়ে আরো বহুদুরে। যতই পড়তাম ততই বুঝতাম কত কম জানি, কত কম পড়া হয়েছে! জানার কত কী বাকী রয়ে গেছে পৃথিবীতে। তৃঞ্চা আরো বেড়ে যেতো। ভার্সিটিতে পড়ার সময় পাঠ্য বইয়ের দ্বিগুন সময় ব্যয় করেছি অন্য বইয়ে।
তবে এই পড়াটা বিদ্বান হবার জন্য ছিল না মোটেও। এটা ছিল এক ধরনের নেশা। প্রত্যেক মানুষের এক বা একাধিক নেশা থাকে। আমার অনেক নেশার মধ্যে এটি একটা। মজার ব্যাপার হলো, পড়ার নেশা থাকলেও আমি পড়ুয়া বা আঁতেল বন্ধুদের সাথে কখনো আড্ডা দিতাম না। তাই আমার আতেঁল বন্ধু নাই বললেই চলে। যাদের সাথে আড্ডা দিতাম তাদের কারও আগ্রহ ছিল না এইসব আজাইরা বইপত্রের প্রতি। আমার অনেক রকমের বন্ধুর গ্রুপ ছিল। কেউ খেলাধুলা, কেউ তাস বা জুয়া, আর কেউবা ডাইল নাহয় গাঁজায় বুঁদ। তবে ডাইল-গাজা-তাস-জুয়া বাদে যেসব আড্ডা ছিল সেখানে বিবিধ বিষয়ে আড্ডা হলেও দেখা যেতো, যে বিষয়ই আলাপ করি না কেন এক পর্যায়ে সেটা মেয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে এসে শেষ হতো।
বই পড়ার নেশার সাথে ১৯৯৭ সাল থেকে নতুন একটা সংযোজন হলো। ইন্টারনেট। দেখলাম এটা আরেক নেশার জগত। প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু ঘটছে। নানা আবিষ্কার। হটমেইল, ইয়াহু, স্কাইপে, জিমেইলের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লেগে থাকা। গুগল আর উইকিপিডিয়ার কল্যানে আমার সব পড়াশোনা কম্পিউটারে ঢুকে গেল। আগে কোন তথ্য জানার জন্য বইয়ের রেফারেন্স খুজতাম। এখন গুগল করি। এমনকি শব্দের বানানটা পর্যন্ত গুগলে যাচাই করি। টেকনোলজির উপর এমন নির্ভরশীল হলাম যে ইলেক্টিসিটি চলে গেলে মনে হয় অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। কারন ইন্টারনেট বন্ধ।
পড়াশোনা যতই বেশী হোক লেখালেখিটা ছিল একেবারে কম। একমাত্র ডায়েরী লিখতাম মাঝে মাঝে। ডায়েরী লেখা হতো কেবল মন খারাপ করলেই। ইয়াহুগ্রুপে কিছু লেখালেখি করতাম এক সময় দেশী ফোরামগুলোতে, তবে বাংলা ব্লগ সাইটে খুব কমই লিখা হতো। বাংলা লিখতে না পারা একটা কারন ছিল। এক সময় ইংরেজীতেও লেখালেখি বন্ধ করে দিলাম। বাংলা শিখতে না পারার জন্য বিজয়কে দায়ী করি আমি। কারন এরা জটিল একটা কীবোর্ড তৈরী করেছে। হয়তো বেশীরভাগ মানুষ আমার চেয়ে অনেক বেশী ধৈর্যশীল বলে এটা ব্যবহার করে। একেবারে বাজে মাল বিজয়।
হঠাৎ একদিন 'অভ্র' কীবোর্ডের সন্ধান পেলাম। এত চমৎকৃত হলাম যে সেদিন যেন আমার নবজন্ম হলো। অবাক ব্যাপার, যে আমি মাসের পর মাস চেষ্টা করেও 'বিজয়' শিখতে পারিনি, সেই আমি ৭ দিনের মধ্যে 'অভ্র' দিয়ে লিখতে পারলাম। শিখে উঠলাম ঠিকই কিন্তু লেখার জায়গা কই? আমার যাদের সাথে কাজ করতে হয় ওখানে বাংলা অচল। তাই বাংলা মেইল লেখার সুযোগও নেই। তাছাড়া এমনি এমনি আমার কিছু লিখতে ইচ্ছে করেনা। লেখার জন্য একটু ইয়ে মানে চুলকানি লাগে আমার। একদিন ব্লগ নামক বস্তুটার সন্ধান পেলাম। আরে আজীব এখানে তো প্রচুর লোক বাংলায় আড্ডা জমাচ্ছে।
কয়েকদিন চুপচাপ দেখলাম এবং জানলাম এখানে আমজনতাও লিখতে পারে। নানান রকম মজার মজার লেখা পড়ে পুলকিত হলাম। বৈচিত্রে ভরপুর বিষয়। যার যেমন খুশী। বুঝলাম এইটা আম জনতার জায়গা। আঁতেলদের রাজত্ব নেই জেনে স্বস্তি পেলাম। ক'দিন পর আমারও চুলকানি শুরু হলো নানান ইস্যুতে। সরাসরি বললে বলতে হয় কেবল চুলকালেই আমার লেখা আসে, অন্য কোন ভাব বা প্রেরনা নেই আমার লেখার পেছনে। ভালো মন্দ সব রকম লেখার যোগান আসে চুলকানি থেকে। শুরু করলাম ফ্রী-ষ্টাইলে। কোনরকম গুনবিচার ছাড়াই। অনেকটা নিজের জন্যই লেখা। বাংলা টাইপে ভালো স্পীড এসেছে ব্লগ লিখে লিখে।
শুরু হলো আমার কাকস্য ব্লগার জীবন। আমারব্লগ, নির্মানব্লগ, সচলায়তন এই তিন ব্লগে ঘুরতে ঘুরতে ব্লগীয় বন্ধু হয়ে গেল বেশ কয়েকজনের সাথে। আমারব্লগের বন্ধুই বেশী। তাদের ভার্চুয়াল আন্তরিকতার প্রানবন্ত স্পর্শ পেলাম এই ব্লগে এসেও। ভাবতে ভালো লাগে কাকস্য সমাজ ছড়িয়ে আছে নানা ব্লগে।
হেফী ব্লগিং, হেফী আড্ডাফাইয়িং!!
[হাওয়া থেকে সংগৃহীত]
৬
আত্তদ্বিপ | ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯ - ১১:১৪ অপরাহ্ন
আপনার এসব কথার সাথে নিজের অনেক মিল খুঁজে পেলাম। আমি এখনো ছাত্র,
সারদিন ইংরেজীর প্যানপ্যানের অসয্যতা থেকেই আমার ব্লগিং শুরু। অভ্রতে লিখা
অনেক আগেই শিখেছিলাম কিন্তু এরকম বাংলাব্লগ সাইট যে আছে তা জানলাম এই তো
সেদিন।
অটঃ আমারব্লগে আপনার নিক কি জানতে পারি?
অটঃ আমারব্লগে আপনার নিক কি জানতে পারি?
৭
অতিথি পাখি | ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯ - ১১:৩৯ অপরাহ্ন
আত্তদ্বীপভাই, উনার আমার ব্লগের নিক নীড়-সন্ধানী ।
আমার ব্লগের ৫ টা প্রান ব্লগার থাকলে উনি একজন !!
আমার কাছে তা-ই মনে হয় !!
আমার ব্লগের ৫ টা প্রান ব্লগার থাকলে উনি একজন !!
আমার কাছে তা-ই মনে হয় !!
১১
অতিথি পাখি | ডিসেম্বর ২৩, ২০০৯ - ১১:৪৪ অপরাহ্ন
[হাওয়া থেকে সংগৃহীত]
আমার বই পড়ার অভ্যাটা এখনো করতে পারলাম না !! কেনো জানি মোটা মোটা বই দেখলে বিরক্ত লাগে ।
এই পুরা লাইফে হু আর কয়েকটা বই পড়েছি নেটে । ধৈর্য আছে আপনাদের !!
আমার বই পড়ার অভ্যাটা এখনো করতে পারলাম না !! কেনো জানি মোটা মোটা বই দেখলে বিরক্ত লাগে ।
এই পুরা লাইফে হু আর কয়েকটা বই পড়েছি নেটে । ধৈর্য আছে আপনাদের !!
১২
নজরুল ইসলাম | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ১:০৩ পূর্বাহ্ন
বই পড়া নিয়ে অন্য ব্লগে আগে একটা লেখা লিখেছিলাম। এখানে একটা সিরিজ করে দিবো...
ভালো লাগলো লেখা
ভালো লাগলো লেখা
১৮
সাঈদ | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
ছোট বেলায় বাবাকে খুব বেশী একটা পাইনি , তাঁর বিদেশ থাকার কারনে।
যতটুকু সময় তাঁকে কাছে পেতাম , তিনি দুপুরের খাবারের পর আমাকে আর বড় আপু কে
দুই পাশে শুইয়ে মাঝে তিনি শুয়ে বই নিয়ে শুরু করতেন গল্প। নানা মনীষি দের
জীবনি দিয়েই শুরু। এক প্যারা পড়তেন আবার সেটা গল্পাকারে আমাদের বুঝিয়ে
দিতেন। পরে আবার আমাদের পড়তে দিতেন সেই বই। এভাবে হাতে খড়ি।
তারপর একই ইতিহাস - তিন গোয়েন্দা - ওয়েস্টার্ন - হুমায়ুন আহমেদ । এস এস সি পাশ করে ঢুকলাম ভারতীয় লেখক দের ভুবনে। তাদের লেখায় ডুব মেরে থাকতাম দিনের পর দিন। সমরেশ এর কালপুরুষ পড়ে এক সময় নিজেকে অর্ক ভাবতে ভালো লাগতো।
একসময় লেখা লেখি চলতো ডায়েরী তে, আবার কিছু দিন পর পর ডায়েরী পুড়িয়ে বেদনা-উৎসব করতাম।
এখনও পড়ি তবে সেটা এই আন্তর্জাল এই। বই নিয়ে বসি না কারন বইনিয়ে বসলে সেই রাতে ঘুম নষ্ট করে বই শেষ করে তারপর না উঠে পারিনা। এত এনার্জি কই এখন ? বয়স হইছে না !!!!
তারপর একই ইতিহাস - তিন গোয়েন্দা - ওয়েস্টার্ন - হুমায়ুন আহমেদ । এস এস সি পাশ করে ঢুকলাম ভারতীয় লেখক দের ভুবনে। তাদের লেখায় ডুব মেরে থাকতাম দিনের পর দিন। সমরেশ এর কালপুরুষ পড়ে এক সময় নিজেকে অর্ক ভাবতে ভালো লাগতো।
একসময় লেখা লেখি চলতো ডায়েরী তে, আবার কিছু দিন পর পর ডায়েরী পুড়িয়ে বেদনা-উৎসব করতাম।
এখনও পড়ি তবে সেটা এই আন্তর্জাল এই। বই নিয়ে বসি না কারন বইনিয়ে বসলে সেই রাতে ঘুম নষ্ট করে বই শেষ করে তারপর না উঠে পারিনা। এত এনার্জি কই এখন ? বয়স হইছে না !!!!
১৯
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ১০:২৬ পূর্বাহ্ন
এখনও পড়ি তবে সেটা এই আন্তর্জাল...
##########################
আমারও এই অবস্থা এখন :)
##########################
আমারও এই অবস্থা এখন :)
২০
বিহঙ্গ | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
আমার অনেক নেশার মধ্যে এটি একটা। মজার ব্যাপার হলো, পড়ার
নেশা থাকলেও আমি পড়ুয়া বা আঁতেল বন্ধুদের সাথে কখনো আড্ডা দিতাম না। তাই
আমার আতেঁল বন্ধু নাই বললেই চলে। যাদের সাথে আড্ডা দিতাম তাদের কারও আগ্রহ
ছিল না এইসব আজাইরা বইপত্রের প্রতি
আমারো সেম কেইস নীড়দা................এখনো প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে চেষ্টা করি একটা কইরা বই পড়তে না:গঞ্জ সুধীজন পাঠাগারের সদস্য গত ৭ বছর যাবত। তবে আমার বই পড়ার নেশাটা দিয়েছে আমার মেজ ভাই_ও বিভিন্ন বই কিনে দিত যখন মাত্র সিক্সে পড়ি_আমার বই পড়া শুরু হইছে শরৎ, রবীন্দ্রনাথ এর বই দিয়ে। শরতের শ্রীকান্ত এখনো আমার লাইফে পড়া শ্রেষ্ঠ বই।
আমারো সেম কেইস নীড়দা................এখনো প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে চেষ্টা করি একটা কইরা বই পড়তে না:গঞ্জ সুধীজন পাঠাগারের সদস্য গত ৭ বছর যাবত। তবে আমার বই পড়ার নেশাটা দিয়েছে আমার মেজ ভাই_ও বিভিন্ন বই কিনে দিত যখন মাত্র সিক্সে পড়ি_আমার বই পড়া শুরু হইছে শরৎ, রবীন্দ্রনাথ এর বই দিয়ে। শরতের শ্রীকান্ত এখনো আমার লাইফে পড়া শ্রেষ্ঠ বই।
২১
সোহেল কাজী | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ১:২৯ অপরাহ্ন
হাঃহাঃহাঃ অনেক কিছুই কমন পড়লো। আমার আউট!বই পড়া শুরু ঠাকুরমার
ঝুলির শাকচুন্নি আর রাজপুত্রদের কাহীনি দিয়ে+গোপালভাড়+কালীদাসের স্লোক
দিয়ে।
ক্লাস ফোরে ৭০০ পৃষ্ঠার আরব্য রজনী পড়ে ফেলেছিলাম
তারপর সেবা প্রকাশনীর কিশোর থ্রীলার, শিকার কাহীনি, সবশেষে মাসুদ রানা।
দ্রষ্টব্যঃ SSC পরীক্ষার আগেরদিন পর্যন্ত কিশোর থ্রীলার গভীর অরন্য পার্ট ১,২ (প্রায় আটশ পৃষ্ঠার মত) নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। ছোট খালা সেটা দেখে আমাকে দারুন আদর করেন (জ্বর নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম)
তার পর শিকার কাহীনি+ওয়েষ্টার্ন+অনুবাদ+সাইফাই+ শরতচন্দ্র পড়তাম। মিলইন্যা জনপ্রীয় হলেও তার বই ভালো লাগতনা কেন জানি।
সব শেষে পড়েছি সাইকোলজিকাল ষ্টাডি নিয়ে চমতকার কিছু আর্টিকেল আংরেজীতে
আর এখন হুমায়ুন ছাড়া আর কারো বই পড়তে ইচ্ছে করেনা। তবে মাঝে মাঝে শীর্ষেন্দু পড়ি। (একটা বাংলা বইয়ের সাইটের কো এডমিন ছিলাম কিছুদিন)
আর আড্ডায় ছিলো বারোপ্রকার বন্ধু, কোটিপতি থেকে রিক্সাওয়ালা। গাঞ্জুটি থেকে হিরুঞ্চি + মাম্মিডেডি টাইপ পোলাপাইন। কয়েকটা কিরিমিনালো বেশ কিছু দিন আড্ডার সঙ্গী ছিলো।
টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ১০০ কমন, যারা বিজয় জানতো তাদের কেঞ্জানি আঁতেল মনে হইতো (আহেম আহেম)
লেখা অতীব উপাদেয় হইছে
ক্লাস ফোরে ৭০০ পৃষ্ঠার আরব্য রজনী পড়ে ফেলেছিলাম
তারপর সেবা প্রকাশনীর কিশোর থ্রীলার, শিকার কাহীনি, সবশেষে মাসুদ রানা।
দ্রষ্টব্যঃ SSC পরীক্ষার আগেরদিন পর্যন্ত কিশোর থ্রীলার গভীর অরন্য পার্ট ১,২ (প্রায় আটশ পৃষ্ঠার মত) নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। ছোট খালা সেটা দেখে আমাকে দারুন আদর করেন (জ্বর নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলাম)
তার পর শিকার কাহীনি+ওয়েষ্টার্ন+অনুবাদ+সাইফাই+ শরতচন্দ্র পড়তাম। মিলইন্যা জনপ্রীয় হলেও তার বই ভালো লাগতনা কেন জানি।
সব শেষে পড়েছি সাইকোলজিকাল ষ্টাডি নিয়ে চমতকার কিছু আর্টিকেল আংরেজীতে
আর এখন হুমায়ুন ছাড়া আর কারো বই পড়তে ইচ্ছে করেনা। তবে মাঝে মাঝে শীর্ষেন্দু পড়ি। (একটা বাংলা বইয়ের সাইটের কো এডমিন ছিলাম কিছুদিন)
আর আড্ডায় ছিলো বারোপ্রকার বন্ধু, কোটিপতি থেকে রিক্সাওয়ালা। গাঞ্জুটি থেকে হিরুঞ্চি + মাম্মিডেডি টাইপ পোলাপাইন। কয়েকটা কিরিমিনালো বেশ কিছু দিন আড্ডার সঙ্গী ছিলো।
টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে ১০০ কমন, যারা বিজয় জানতো তাদের কেঞ্জানি আঁতেল মনে হইতো (আহেম আহেম)
লেখা অতীব উপাদেয় হইছে
২৪
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ২:৫৩ অপরাহ্ন
বিজয় যারা জানেন, তাদের আমার এখনো বিদ্বান মনে হয়। কেমনে যে পারে........তয় টাইপ স্পীডে কমিপিটিশান দিলে আমাদের সাথে পারবে না :)
২৫
হাসান রায়হান | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ৩:৩৭ অপরাহ্ন
লেখা পইড়া আমিও আমার বই পড়ার কিছু কথা বলব ভাবছিলাম। কিন্তু মনে হইল
লেখাটা আগেও পড়ছি। যদি তাই হয় , নো অসুবিধা, বাট নতুন লেখা চাই। ফাঁকি
দিলে খাইয়ালামু। ;)
২৬
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ৬:৩২ অপরাহ্ন
আপ্নের সিপিউর পাওয়ার দুর্দান্ত!!! :)
তয় নীচে কিন্তুক বইলা দিছি হাওয়া থেকে পাওয়া ;)
তয় নীচে কিন্তুক বইলা দিছি হাওয়া থেকে পাওয়া ;)
২৭
নুশেরা | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ৫:৪১ অপরাহ্ন
নীড়কাতর করে দিলেন, নীড় সন্ধানী।
বইঘর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে কার্ড আর শোপিসের জন্য জায়গা বরাদ্দ করলো, কয়েক বছর বাদে স্রেফ নেই হয়ে গেলো। বিপণি বিতান বা নিউমার্কেটেরই দোতলা অথবা তিনতলার বইয়ের দোকান বুকম্যান স্কুলব্যাগ পেন্সিলবক্সে ভরে গেলো। একতলায় বইঘরের কাছেই উজালা বুক সেন্টার ছিলো, এখন আছে কি? উল্টোদিকে জলসা সিনেমা(?)র নীচে কারেন্ট বুক স্টোর চিত্রতারকার পোস্টারে ছেয়ে গেলো। আচ্ছা, নুপূর মার্কেটের অমর বইঘর কি এখনও আছে? অনেক ভালো ভালো পুরনো বইয়ের সংগ্রহ ছিলো ওদের। ডিসিহিলের উল্টোদিকে নন্দনকাননের ডিরোজিও অনেকদিন পর্যন্ত ক্লাসিক ছিলো (আশা করি এখনও আছে)। এ বছরের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে গিয়ে আন্দরকিল্লায় একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে সংগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে (নামটাও সুন্দর; যদিও এখন মনে পড়ছে না )। তবে অভাব বোধ করেছি সেরকম কোন বিক্রয়-সহকারীর যে নিজেই হবে চলমান রেফারেন্সবুক...
বইঘর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে কার্ড আর শোপিসের জন্য জায়গা বরাদ্দ করলো, কয়েক বছর বাদে স্রেফ নেই হয়ে গেলো। বিপণি বিতান বা নিউমার্কেটেরই দোতলা অথবা তিনতলার বইয়ের দোকান বুকম্যান স্কুলব্যাগ পেন্সিলবক্সে ভরে গেলো। একতলায় বইঘরের কাছেই উজালা বুক সেন্টার ছিলো, এখন আছে কি? উল্টোদিকে জলসা সিনেমা(?)র নীচে কারেন্ট বুক স্টোর চিত্রতারকার পোস্টারে ছেয়ে গেলো। আচ্ছা, নুপূর মার্কেটের অমর বইঘর কি এখনও আছে? অনেক ভালো ভালো পুরনো বইয়ের সংগ্রহ ছিলো ওদের। ডিসিহিলের উল্টোদিকে নন্দনকাননের ডিরোজিও অনেকদিন পর্যন্ত ক্লাসিক ছিলো (আশা করি এখনও আছে)। এ বছরের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে গিয়ে আন্দরকিল্লায় একটা বইয়ের দোকানে গিয়ে সংগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে (নামটাও সুন্দর; যদিও এখন মনে পড়ছে না )। তবে অভাব বোধ করেছি সেরকম কোন বিক্রয়-সহকারীর যে নিজেই হবে চলমান রেফারেন্সবুক...
২৮
নীড় সন্ধানী | ডিসেম্বর ২৪, ২০০৯ - ৬:৪৭ অপরাহ্ন
বইয়ের দোকানগুলো শাড়ী ঘড়ি অলংকারের কাছে হেরে গেছে। একটা বইয়ের
দোকানকে তিনটা স্বর্নের দোকান করা যায়। নিউমার্কেটে বইঘরের পর গেছে
গুলিস্তান বুকষ্টোর। উজালা, মনীষা, বুকম্যান এখন খাতা পেন্সিল স্টেশনারী
কার্ড ফ্যাশানের দোকান। কারেন্ট বুক সেন্টার কোন মতে টিকে আছে এখনো শাহীন
ভাইয়ের হাতে। এই মানুষটার বইপ্রেম তাঁর বাবার মতো। টাকার দিকে না তাকিয়ে
চোখবুঝে বই নিয়ে পড়ে আছে। কারেন্ট বুক সেন্টারের ইতিহাস নিয়ে আস্ত একটা বই
লিখে ফেলা যায় অনায়াসে। অমর বই ঘরে যাইনা বহুদিন, শুনেছি ওখানে গাইড বইয়ে
ছেয়ে গেছে। আন্দরকিল্লার বইয়ের দোকানগুলো তো অনেক আগেই গাইডবই হয়ে গেছে,
কথাকলিটা এখনো আছে। গত বিশ বছরে সব কিছু বেড়েছে চট্টগ্রামে, বাড়েনি কেবল
একটাও বইয়ের দোকান। সংকোচনই যেন তার পরিণতি।
২৯
টুটুল | ডিসেম্বর ২৭, ২০০৯ - ৮:৪৪ পূর্বাহ্ন
টেকনোলজির উপর এমন নির্ভরশীল হলাম যে ইলেক্টিসিটি চলে গেলে মনে হয় অক্সিজেনের অভাব পড়েছে। কারন ইন্টারনেট বন্ধ।
এত বেশী ডিপেন্ডবল হইছি ... বইলা শেষ করা যাপে না :( ... দুইদিন পর নিজের জিনিসপত্র খুজতেও গুগুল্রে জিগাইতে হপে :(
আমার আড্ডা শুন্তে ভাল্লাগে :)
এত বেশী ডিপেন্ডবল হইছি ... বইলা শেষ করা যাপে না :( ... দুইদিন পর নিজের জিনিসপত্র খুজতেও গুগুল্রে জিগাইতে হপে :(
আমার আড্ডা শুন্তে ভাল্লাগে :)
নানীর কবর হয়েছিলো কোথায়?
ওহ, পোস্ট কিন্তু প্রিয়তে।
এটা কি কোনো গল্প না সত্যি ঘটনা???
ডিলেমা ডিলেমা...
প্রিয়তে
ভাল লাগলো লেখাটা...
সে সময়ে এমন প্রেম সত্যিই বিরল।
তারচেয়ে কঠিন একজন মহিলার একাকী বসবাস।
আপনার কৌটুহল কাটাতে একটা স্ট্রাকচার দাড়া করালামঃ
জাকের মাষ্টারের মোহভঙ্গ হয়েছিলো বলেই বোধ করি।
দ্বীপার স্বামী ও পুলিশ আসার আগে সবই ঠিক ঠাক চলছিলো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে সেদিনের ঘটনার পরই।
কারো স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী বাসায় এলে সেটা অবশ্যই তিক্ততার জন্ম দেয়ার কথা। অন্তত সমাজে চলতে গেলে অনেকের কঠাক্ষযে শুনতে হয়নি তেমনটা বলব না, যেহেতু সেই সময়ের সমাজটা চিলো অনেক রক্ষনশীল। আর এখানটাতেই জাকের মাষ্টার মানষিক পীড়ায় ভুগত। মানে তাদের বিয়ের আগে তার স্ত্রী ও তার প্রাক্তন স্বামীকে কল্পনা করতে পারছিলোনা হয়তো। তার উপর ঘরের বাইরে বেরুলেই একটা হীনমন্যতায় ভুগত। কেউ তার দিকে তাকালেই উনি ভাবতেন এ বেটা নিশ্চই তার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামীর পুলিশ নিয়ে তৈরী নাটক নিয়ে ভাবছে আর মনে মনে হাসছে। এই জিনিষটাই হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
ততকালীন সময়ে দুই সন্তানের জননীর প্রেমে পড়েছিলেন অর্থাৎ দীপা অত্যন্ত রূপবতী ছিলো। আর সাংসারীক জীবনেও হয়তো দ্বীপা চরম অসুখি ছিলো। মিলিত রসায়নই জন্ম দিয়েছে এমন বাঁধভাঙ্গা প্রেমের আর মোহভঙ্গে এমন অমানবিক বিচ্ছেদের।
যাইহোক লেখনি ভালো লেগেছে। লাইক্করলাম।
***************************************