Sunday, October 7, 2018

ফেসবুক বনাম মাস্কবুক


প্রতিটি মানুষের মুখ হলো শরীরের প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ দেখে কোন বিচার করে ফেলা যেমন ঠিক নয়, তেমনি মানুষের মুখ দেখে তার শরীর-মন কেমন আছে বলা যায় না। Facebook হলো তেমনই একটি বই যা দেখে মানুষের কিছু চরিত্র বোঝা যায়। কিন্তু ফেসবুক দিয়ে একজন মানুষের সম্পূর্ণ চরিত্র বিচার করাও ঠিক কাজ নয়। ফেসবুকের মানুষ আর বাস্তবের মানুষে আকাশ পাতাল তফাত থাকতে পারে। যার হাসিখুশী মুখ দেখে আমরা আহ্লাদিত হয়ে লাইক কমেন্টে ভাসিয়ে দেই, হয়তো সে মানুষটি চরম নিঃসঙ্গ এক অসুখী মানুষ।

এসব বলার অর্থ হলো একটি কাহিনী গাওয়া। আমার সঙ্গে ফেসবুকের পরিচয়, প্রণয় এবং ভাঙন।

ফেসবুক মানে মুখ বই। আসলে কী তাই? জাকারবার্গ এই নাম কেন বেছে নিয়েছিলেন জানা নেই। তখন হটমেইল ইয়াহুর যুগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে MySpace ছিল শীর্ষে। আমার আমেরিকাবাসী বন্ধুবান্ধবেরা ওখানেই নিবন্ধিত। আমিও শখ করে একটি নীরব একাউন্ট খুলে ফেলি ২০০৫ সালের দিকে। কিন্তু ২০০৬ সালে Facebook নামের নতুন এক কোম্পানীর আবির্ভাবের কথা শুনে তাতেও নাম লিখিয়ে ফেললাম। ওই নাম লিখিয়েই সারা। পরবর্তী দুবছর ধরে জানা হয়নি এদের নিয়ে আমি কী করবো। আমি হটমেইল ইয়াহু স্কাইপে এই তিন মাধ্যমে সক্রিয় থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপারটা আসলে কী জিনিস তার কোন ব্যাখ্যা আমার জানা ছিল না। কিন্তু ২০০৮ সালে এসে আমার চেনাজানা কয়েকজন এখানে একাউন্ট খোলে। তারাও ফেসবুক ঢুকে প্রথম প্রশ্ন করে, এটা দিয়ে কী কাজ হয়? মজার ব্যাপার হলো - তখন কিছু একটা প্রশ্ন করলে সেটা স্ট্যাটাস হিসেবে থেকে যেতো। কেউ আমার প্রোফাইলে ঢুকলে তার নাম উঠে যেতো। এমন অনেক বিচিত্র ব্যাপার ছিল তখন। বলা বাহুল্য তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস জাতীয় কিছু ছিল না। এমনকি মেসেজ অপশনও ছিল না। কাউকে মেসেজ হিসেবে যাই দেয়া হতো, তাই প্রকাশ্যে স্ট্যাটাস হিসেবে চলে আসতো এবং দেখতে পেতো যে কেউ। সেদিন আমি দশ বছর আগের টাইমলাইনে গিয়ে হেসে দিয়েছি। যাদেরকে যত মেসেজ দিয়েছি, 'কেমন আছেন', 'কী করেন'? 'ভাত খাইছেন?' ইত্যাদি টাইপ প্রশ্নগুলো এখন স্ট্যাটাস হিসেবে শোভা পাচ্ছে। ভাগ্যিস তখন মুখ খারাপ করে কাউকে কিছু বলিনি, নইলে সেই গালিগালাজও থেকে যেতো ইতিহাসের পাতায়।

আমার সেই যুগের ফেসবুক বন্ধুদের প্রায় সবাই ছিল ব্লগ সম্পর্কিত। নির্মল আড্ডাবাজীই ছিল যাদের মূল উদ্দেশ্য। আম জনতা তখনো ফেসবুক চিনতো না। আমার এখনকার ফেসবুক বন্ধুর ৯০ ভাগই ফেসবুক চেনেনি তখনো। তখন আমরা আমরাই রাজা উজির মারতাম। তাদের অনেকেই নেই এখন। দুনিয়াতে আছে, কিন্তু ফেসবুকে সক্রিয় নয়। কে কোথায় ছিটকে গেছে খোঁজ করা হয়নি। কিন্তু তাদের কথা মনে পড়ে খুব। মনে পড়ে ভালো লাগার পরম এক অনুভূতি ছিল বলে। সেই যুগের ফেসবুকের পাতাগুলো থাকতো নির্মল আনন্দ আড্ডায় ভরপুর। এত আঁতেল, এত বুদ্ধিজীবি, এত ধান্ধাবাজ, এতসব উৎকট শেয়ারিং মহামারীর প্রাদুর্ভাব ছিল না ফেসবুকে। এতটা ভণ্ড, মুখোশধারী, স্বার্থতাড়িত মানুষের  বিচরণ ছিল না ফেসবুকে। আজকাল ফেসবুক দেখলে অনেকসময়ই মনে হয় মুখোশবই। মনে হয়...হেথায় তুরে এক্কেবারে মানাইছে না গো......। এই ফেসবুকের সাথে আমার একেবারেই সখ্যতা বনাবনি হয় না। তখন আমি নিজেই নিজেকে বাতিল করে দেই। আমার জন্য বেঁচে আছে- পুরোনো দিনের গান।
Some day, these will be the good old days
All the love you won't forget
And all these reckless nights you won't regret
Someday soon, your whole life's gonna change
You'll miss the magic of these good old days