Thursday, May 1, 2014

ভাগশেষ

যখন একটা গাছের পাতাও নড়ে না, মাথার উপর চাঁদিফাটা রোদ, পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়, দুপাশে খাঁ খাঁ পাহাড় কাটা হয়ে আছে, কাটা পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট গর্তের ছায়ায় বাসা বেঁধে থাকা অচেনা পাখিগুলোর ওড়াওড়ি দেখে তখন মুগ্ধতা জাগে না।

যখন মুগ্ধতার সময়, যখন রোদ নেমে যায় বিকেলের কোলে, তখন ওই পাখিদের ঘরসংসার দেখার একটা অপ্রকাশিত বাসনা বহুদিন ধরে জমে ছিল। আট বছরের মধ্যে একদিনও সেরকম কোন বিকেল পাইনি। যখন বিকেল নামে তখন আমি ক্যাম্পাস থেকে বহুদূরের শহরে থাকতাম। দুপুর ট্রেনেই প্রতিদিন শহরে ফিরে আসতাম। একদিন সময় করে দেখতে আসবো অচিন পাখিদের সংসার, এই স্বপ্নটা কখন যে তামাদি হয়ে গেছে টেরই পাইনি।

আরো এক যুগ পর একদিন সময় হলো। সেই বিকেলটাও আমার হলো। যাত্রাও হলো। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে দেখি সেই কাটা পাহাড়ের সৌন্দর্য কবেই হারিয়ে গেছে কংক্রিটের আড়ালে, আমি কখনোই জানতাম না। আর পাখিগুলো, বহুবছর আগেই সংসার ভেঙ্গে ভিন্ন গন্তব্যে উড়ে চলে গেছে। সেই অর্ধেক পথ থেকে ফিরে এলাম খালি হাতে।

আমি আমার সকল সত্ত্বা নিয়ে একই আছি, কিন্তু ওই বিকেল আর এক যুগ আগের বিকেলের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য হয়ে গেছে। সেই পার্থক্য ঘোচাবার সাধ্য জগতের আর কারো নেই। এখন আমি পার্থক্যের দেয়ালের এপাশে বসবাস করছি অমোছনীয় স্মৃতির ভাণ্ডার নিয়ে। এ আমার নিজস্ব ভাগশেষ। আনন্দের বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা নেই এখানে।

No comments: