Friday, May 2, 2014

নেহায়েত অপ্রয়োজনীয় গদ্য

ব্যাপারটা আমাকে অযাচিতভাবে ভোগায়। ডাক্তারে উপর মাস্টারি করাটা আমার বরাবরই অপছন্দ ছিল। কিন্তু আজকাল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে আমি নিজেও সেই দলে ভিড়ে গেলাম নিঃশব্দে। ভুল ডায়াগনসিস, ভুল চিকিৎসাকে ডেকে আনে। প্রচুর অর্থ, সময়, শ্রম নষ্ট করেও মানুষ শেষমেষ বাঁচতে পারে না। নিন্মবিত্ত মানুষের দুর্ভোগের সীমানা সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় শুধু মধ্যবিত্তদের কথাই বলছি। প্রত্যেক চাকুরে বেতনের একটা অংশ পেয়ে থাকে চিকিৎসা ভাতা শিরোনামে। ওটা একসময় শুধু শিরোনামই ছিল। আসলে টাকাটা খরচ হয়ে যেতো বাজারেই। ধরা যাক একজন মানুষ পচিশ হাজার টাকা বেতন পায়, তার ভগ্নাংশগুলো বেসিক, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা ইত্যাদি নামে বরাদ্দ থাকে। ধরা যাক চিকিৎসা খাতে ৩০০০ টাকা বরাদ্দ আছে। একসময় লোকে ডাক্তারের কাছে যেতো বছরে দুচারবার মাত্র। চিকিৎসা ভাতার পুরোটা খরচ করতো বাজার খাতে কিংবা অন্য কোন বিনোদনের খাতে। সেই সময় বেতনের সিংহভাগ যেতো বাজারে, দ্বিতীয় বড় খাত হলো বাড়ি ভাড়া।

এখন বদলে গেছে দিন। বেতনের সিংহভাগ গ্রাস করছে চিকিৎসা খরচ। বাড়িভাড়া কমানোর কোন উপায় তো নেই। তাই বাজার কম করে, খাবার পরিমান কমিয়ে মানুষ চিকিৎসার খরচ যোগাচ্ছে। এখন সব পরিবারেই প্রায় মাসে কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। একেকবার ডাক্তার দেখালে তিনটা খরচ। ডাক্তারের ভিজিট, ল্যাবটেস্ট, ওষুধ। একবার ডাক্তারের চেম্বার ঘুরে আসার খরচ কমপক্ষে তিন হাজার টাকা। এটা হলো যাদের বড় কোন অসুখ নেই তাদের জন্য। যাদের একটু ঝামেলা আছে তাদের যাবে পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা। একাধিক সদস্য যদি অসুস্থ হয় তখন তো উপোস থাকার দশা হয়। বাজার খরচ শূন্য অথবা ধার(ভিক্ষা) করা ছাড়া উপায় থাকে না।

মধ্যবিত্তদের যখন এই অবস্থা, নিন্মবিত্তদের কী দশা ভাবা যায়? এদেশে বেঁচে থাকাটা ক্রমশঃ ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কোথাও অভিযোগ করার উপায় আছে? এদেশে জন্মেছো, সুতরাং ভুগতে ভুগতে মরো তুমি। অসুস্থ হবার কারণ জানতে চেয়ো না। অসুস্থ হওয়া মানে তোমার কারাদণ্ড হওয়া। হয় যাবজ্জীবন নয় তো মৃত্যুদণ্ড। যারা মৃত্যুদণ্ড পায় তারা যাবার আগে বাকী পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে যায়। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে লক্ষপতিও পথের ফকির হয়ে যেতে পারে।

অনিয়ম যেখানে সর্বগ্রাসী সেখানে অভিযোগ করে কোন ফলাফল আসে না। আমরা বড়জোর অপেক্ষা করি কখন আমার সিরিয়াল আসে। দণ্ডিত নাগরিক হিসেবে আমি ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত। কেবল ডাক পড়ার বাকী।

খাবারে ভেজাল, খাবারে বিষ, খাবারে ফরমালিন, কম খাও অপুষ্টিতে মরো, বেশী খাও ফরমালিন, কার্বাইড, সহ নাম না জানা বিষে আক্রান্ত হয়ে মরো। কোন উপায় নেই তোমার। পালাতে চাও? বড়জোর একা পালাতে পারো, পরিবারকে ঘাতকের হাতে তুলে দিয়ে যাও। তুমি পৃথিবীতে এসেছো অন্যের ইচ্ছায়, তোমাকে মরতে হবে অন্যের খেয়ালেই। তুমি প্রকৃতির সবচেয়ে নিরানন্দ অংশ। অপ্রয়োজনীয় অংশ। এদেশের সব মানুষই অপ্রয়োজনীয় খেয়ালী সৃষ্টি। এখানে তাই মুক্তির কোন রাস্তা খুঁজে লাভ নেই। বরং সহজে ধ্বংসের পথ বার করো।

আমি তাই সুযোগ পেলেই ডাক্তারকে অমান্য করি, চিকিৎসা অস্বীকার করি, ডায়াগনসিস অবিশ্বাস করি, নিজস্ব ধারণায় নিজেকে চালিত করি। অপচিকিৎসায় মরার চেয়ে সস্তায় মৃত্যুর রাস্তার সন্ধান করি।

[একটি অপ্রয়োজনীয় বিমবিষামূলক আত্মহননমনস্ক গদ্য। নিতান্ত প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী ছাড়া তৃতীয়পক্ষের বোধগম্যতার সম্ভাবনা ক্ষীণ।]

No comments: