১.
অবশেষে মার্কেজের সিনেমাটা দেখা হলো মার্কেজ চলে যাবার পরই। Love in the time of Cholera দেখার আগে আমার কয়েকটি বদ্ধমূল ভুল ধারণার উপর ঐতিহাসিক কুঠারাঘাত চলছিল। ছবিটা দেখার পর সেই ভুল ধারণাগুলোর ভিত একেবারেই নড়ে গেল। এখন আমি জানি ঐতিহাসিক মিথ্যাগুলো জীবনের কোন একটা সময়ে এসে শোধরানোর সুযোগ কিছু কিছু মানুষের হয়। মার্কেজ খুব মুষ্টিমেয় লেখকদের একজন যিনি সেই সত্যটার মর্ম উপলব্ধি করেছেন। কোন কোন বিরল জাতের সম্পর্ক আছে যা শুকিয়ে মরে কাঠ হয়ে যায়। সেই কাঠ দিয়ে আসবাব পর্যন্ত তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু তার শিকড়ের কোন একটা গভীরতম অংশ তাকে আবারো জীবন দান করতে পারে। মার্কেজ ৫৪ বছরের উদাহরন উপস্থাপন করেও তাই করে ছেড়েছেন। এই ছবিটা ১০০% সম্পর্কের ছবি, ১০০% সম্পূর্ণতার ছবি, অসমাপ্ত সমীকরণ জোড়া লাগাবার ছবি। ফ্লোরেন্টিনো এবং ফারমিনাকে আমার সেইসব চেনামুখের মতো মনে হয়েছে একদিন যাদের স্বপ্নে আমি বসবাস করে এসেছি। ছবিটাকে স্বচ্ছন্দে আমি দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ খুঁজবো। ক্লাসিক কালেকশানে রেখে দেবার মতো আরো একটা ছবি।
২.
Midnights Children ছবিটা নামিয়েছিলাম বেশ কিছুকাল আগে। আড়াই ঘন্টার মুভি দেখার সময় বের করা কঠিন কাজ। অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে গতরাতেই ছবিটা দেখার সময় করতে পারলাম। সালমান রুশদীর উপন্যাস অবলম্বনে দীপা মেহতার এই ছবিটার পটভূমি অর্ধশতাব্দীর মতো। ভারতের স্বাধীনতার আগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ছুঁয়ে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার পরে এসে শেষ হয়েছে।
আমি সিনেমাখোর মানুষ হলেও বোদ্ধা শ্রেণীর না। তাই যে কোন ছবি দেখে রিভিউ লেখা হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা বলতেই ভালো লাগে। এই ছবিটার বেশ কিছু অংশে অপার্থিবতার রাজত্ব। যাকে ম্যাজিক রিয়েলিজম বলেছে কেউ কেউ। তাই একদম বাস্তবমূখীনতা খুঁজতে গেলে হতাশ হবার সম্ভাবনা। যদি ম্যাজিকে আস্থা থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো লাগবে।
আমার একটা জায়গায় প্রত্যাশিতভাবেই ভালো লেগেছে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্বটি আসে। পাকিস্তানীরা অস্ত্র সমর্পন করার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে, জয় বাংলা বলে শ্লোগান দিচ্ছে আমজনতা এই দৃশ্যগুলি ভালো লাগার।
আবার একজন স্মৃতিভ্রষ্ট পাকিসৈন্য(এই ছবির মূল চরিত্র) ওই ভিড়ের মধ্যে তার ভারতীয় দয়িতাকে নাচতে দেখে স্মৃতি ফিরে পেয়েছে, এই দৃশ্যটা অস্বাভাবিক লেগেছে। ম্যাজিক রিয়েলিজমের ভেতর এটাকে সিনেমাটিক ড্রামা মনে হয়েছে। সেই মুহুর্তের দৃশ্যটা দর্শকের মনে মেহেরজানের স্মৃতিটা একটু উস্কে দিতে পারে।
আবার সেই ভারতীয় সাপুড়েকন্যা পার্বতী যখন ম্যাজিক দিয়ে তার পাকিস্তানী দয়িতকে ঝুড়িতে লুকিয়ে ফেলে হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যায় তখন খুব সঙ্গত প্রশ্নগুলো মাথাচাড়া দেবে। একজন ভারতীয় সাপুড়ে কন্যা বাংলাদেশে কী উৎসবে যোগ দিতে এসেছিল যাকে হেলিকপ্টারে করে দেশে ফেরত নেয়া হয়। এরকম অসঙ্গতিগুলো পার পেয়ে যায় ম্যাজিক রিয়েলিজমের কারসাজিতে। প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যখন ছবিটাতে সম্মান দেখানো হয়, তখন সেই স্বাধীনতার অন্যতম কঠোর সমর্থক ইন্দিরাগান্ধীর উপর অতটা কঠোর কেন ছবির পরিচালক এবং লেখক। আড়াই ঘন্টার ওই ছবিটায় সবচেয়ে দৃষ্টিকটু লেগেছিল সেই অংশটুকু। ওটা ম্যাজিক রিয়েলিজমের সিড়ি বেয়ে উৎরে যেতে পারেনি। ওখানে এসে জড়ো হয়েছে অনিশ্চিত কোন রাজনৈতিক অপছন্দ।
বাংলাদেশ পর্বের কয়েক মিনিটে সংলাপগুলো বাংলাতে দেয়াটা বাস্তবসম্মত লেগেছে। ভালো লেগেছে সালীমের প্রেমের পর্বে মির্জা গালিবের(জগজিত সিং এর কন্ঠে) সেই গজলটিও।
অবশেষে মার্কেজের সিনেমাটা দেখা হলো মার্কেজ চলে যাবার পরই। Love in the time of Cholera দেখার আগে আমার কয়েকটি বদ্ধমূল ভুল ধারণার উপর ঐতিহাসিক কুঠারাঘাত চলছিল। ছবিটা দেখার পর সেই ভুল ধারণাগুলোর ভিত একেবারেই নড়ে গেল। এখন আমি জানি ঐতিহাসিক মিথ্যাগুলো জীবনের কোন একটা সময়ে এসে শোধরানোর সুযোগ কিছু কিছু মানুষের হয়। মার্কেজ খুব মুষ্টিমেয় লেখকদের একজন যিনি সেই সত্যটার মর্ম উপলব্ধি করেছেন। কোন কোন বিরল জাতের সম্পর্ক আছে যা শুকিয়ে মরে কাঠ হয়ে যায়। সেই কাঠ দিয়ে আসবাব পর্যন্ত তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু তার শিকড়ের কোন একটা গভীরতম অংশ তাকে আবারো জীবন দান করতে পারে। মার্কেজ ৫৪ বছরের উদাহরন উপস্থাপন করেও তাই করে ছেড়েছেন। এই ছবিটা ১০০% সম্পর্কের ছবি, ১০০% সম্পূর্ণতার ছবি, অসমাপ্ত সমীকরণ জোড়া লাগাবার ছবি। ফ্লোরেন্টিনো এবং ফারমিনাকে আমার সেইসব চেনামুখের মতো মনে হয়েছে একদিন যাদের স্বপ্নে আমি বসবাস করে এসেছি। ছবিটাকে স্বচ্ছন্দে আমি দ্বিতীয়বার দেখার সুযোগ খুঁজবো। ক্লাসিক কালেকশানে রেখে দেবার মতো আরো একটা ছবি।
২.
Midnights Children ছবিটা নামিয়েছিলাম বেশ কিছুকাল আগে। আড়াই ঘন্টার মুভি দেখার সময় বের করা কঠিন কাজ। অপেক্ষার পর অপেক্ষা করে গতরাতেই ছবিটা দেখার সময় করতে পারলাম। সালমান রুশদীর উপন্যাস অবলম্বনে দীপা মেহতার এই ছবিটার পটভূমি অর্ধশতাব্দীর মতো। ভারতের স্বাধীনতার আগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ছুঁয়ে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার পরে এসে শেষ হয়েছে।
আমি সিনেমাখোর মানুষ হলেও বোদ্ধা শ্রেণীর না। তাই যে কোন ছবি দেখে রিভিউ লেখা হয়ে ওঠে না। তার চেয়ে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা বলতেই ভালো লাগে। এই ছবিটার বেশ কিছু অংশে অপার্থিবতার রাজত্ব। যাকে ম্যাজিক রিয়েলিজম বলেছে কেউ কেউ। তাই একদম বাস্তবমূখীনতা খুঁজতে গেলে হতাশ হবার সম্ভাবনা। যদি ম্যাজিকে আস্থা থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো লাগবে।
আমার একটা জায়গায় প্রত্যাশিতভাবেই ভালো লেগেছে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্বটি আসে। পাকিস্তানীরা অস্ত্র সমর্পন করার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে, জয় বাংলা বলে শ্লোগান দিচ্ছে আমজনতা এই দৃশ্যগুলি ভালো লাগার।
আবার একজন স্মৃতিভ্রষ্ট পাকিসৈন্য(এই ছবির মূল চরিত্র) ওই ভিড়ের মধ্যে তার ভারতীয় দয়িতাকে নাচতে দেখে স্মৃতি ফিরে পেয়েছে, এই দৃশ্যটা অস্বাভাবিক লেগেছে। ম্যাজিক রিয়েলিজমের ভেতর এটাকে সিনেমাটিক ড্রামা মনে হয়েছে। সেই মুহুর্তের দৃশ্যটা দর্শকের মনে মেহেরজানের স্মৃতিটা একটু উস্কে দিতে পারে।
আবার সেই ভারতীয় সাপুড়েকন্যা পার্বতী যখন ম্যাজিক দিয়ে তার পাকিস্তানী দয়িতকে ঝুড়িতে লুকিয়ে ফেলে হেলিকপ্টারের দিকে এগিয়ে যায় তখন খুব সঙ্গত প্রশ্নগুলো মাথাচাড়া দেবে। একজন ভারতীয় সাপুড়ে কন্যা বাংলাদেশে কী উৎসবে যোগ দিতে এসেছিল যাকে হেলিকপ্টারে করে দেশে ফেরত নেয়া হয়। এরকম অসঙ্গতিগুলো পার পেয়ে যায় ম্যাজিক রিয়েলিজমের কারসাজিতে। প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যখন ছবিটাতে সম্মান দেখানো হয়, তখন সেই স্বাধীনতার অন্যতম কঠোর সমর্থক ইন্দিরাগান্ধীর উপর অতটা কঠোর কেন ছবির পরিচালক এবং লেখক। আড়াই ঘন্টার ওই ছবিটায় সবচেয়ে দৃষ্টিকটু লেগেছিল সেই অংশটুকু। ওটা ম্যাজিক রিয়েলিজমের সিড়ি বেয়ে উৎরে যেতে পারেনি। ওখানে এসে জড়ো হয়েছে অনিশ্চিত কোন রাজনৈতিক অপছন্দ।
বাংলাদেশ পর্বের কয়েক মিনিটে সংলাপগুলো বাংলাতে দেয়াটা বাস্তবসম্মত লেগেছে। ভালো লেগেছে সালীমের প্রেমের পর্বে মির্জা গালিবের(জগজিত সিং এর কন্ঠে) সেই গজলটিও।
No comments:
Post a Comment