Wednesday, November 25, 2009

ইসলামী ব্যাংকের হালাল হারাম ( যদি সুদ না বলে ভুষি বলি!!)

সুদ হারাম... সুদ হারাম.... সুদ হারাম।
লাভ হালাল.... লাভ হালাল... লাভ হালাল।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশী মুসলমানদের বিরাট অংশকে কাবু করে দিয়েছে এই বানীতে। ইসলাম বিষয়ে তরলপ্রান মানুষ তা বিশ্বাসও করেছে। বিশ্বাস করছে, ভালো করছে। ইসলামী ব্যাংকের ব্যাবসা রমরমা হইছে!! দেশে ইসলামী ব্যাংকের বিরাট জোয়ার বইতেছে। বিদেশী ব্যাংকগুলিও ইসলামী ট্যাগ লাগিয়ে ব্যাংকিং করতে আগ্রহী হচ্ছে। কারন বাজার বলে কথা। সুতরাং ইসলামের উপকার হোক বা না হোক। ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রতিযোগীতা বাড়ছে।

আমার কিছু আলগা কথা আছে এই প্রসঙ্গে। যৎসামান্য ব্যাংকিং জ্ঞানের প্রভাবে এগুলো বেরিয়ে যায় মাঝে মাঝে।

আচ্ছা সুদ কি? সুদের সংজ্ঞা কি? সুদ শব্দটা কেন আসলো। interest শব্দটার বাংলা সুদ। তো.....এই অনুবাদ কি কোন হুজুর করে দিয়েছে? কোন সে মওলানা?

ইসলাম যখন কায়েম হয়, তখন কি ব্যাংক ছিল? ব্যাংক প্রথা চালু হয়েছে কোথা থেকে, কখন থেকে?

ইসলামী ব্যাংক সুদ আর লাভের মধ্যে হালাল হারামের মাজেজা দেখিয়ে ব্যাবসা চাঙ্গা করেছে বছরে পর বছর, আম জনতা বেহেশতের লোভে আকাম কুকামে টাকা কামিয়েও ইসলামী ব্যাংকে জমিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক হারাম বলে সুদ দেয় না লাভ দেয়, তো যারা ওই ব্যাংকে টাকা জমা রাখে তাদের কামাইগুলা কি হারাম না হালাল তা কি কখনো যাচাই করে রাখা হয়? নাকি হারাম টাকা ইসলামী ব্যাংকে রাখলে ইসলামী ফিল্টারে হালাল হয়ে বেরিয়ে আসে?

ইসলামী ব্যাংক বৈদেশিক বানিজ্যে আছে কি না। বিদেশে যখন কোন লেনদেন করে, তখন সুদ বাদে লেনদেন করে, নাকি ইসলামী ফিল্টার করে? সারা বিশ্বে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকিং সুদের হার নির্ধারন করে LIBOR কিংবা SIBOR নামে দুটো পথে। ইসলামী ব্যাংকের কী নিজস্ব কোন চ্যানেল আছে বৈদেশিক লেনদেনে? যদি না থাকে তাহলে দেশী টাকা জমা রাখার বেলায় হালাল শ্লোগান, আর বিদেশী লেনদেনে হারাম কারবার। একই ব্যাংকের এই দুইরকম লেনদেন কি মোনাফেকীর লক্ষন নয়?

যদি তথাকথিত সুদ আর লভ্যাংশ হাদিস মেনে ব্যাংকিং করতে হয়, ইসলামী ব্যাংকের কোন অধিকারই নেই ব্যবসা চালানোর। বান্দারে সাত-পাচ চৌদ্দ বুঝিয়ে পার পাওয়া যাবে, কিন্তু আল্লাহর কাছে কি জবাব দেবে। তাইলে কি ইসলামী ব্যাংকওয়ালারা আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস করে না? নইলে এখনো গলা ফুলিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে কি করে?

এখন একটু গিয়ানী কতা কই। ইসলাম যখন কায়েম হচ্ছিল তখন দুনিয়াতে ব্যাংকিং প্রথা ছিল না। প্রথম ব্যাংকিং ব্যবস্থার উদ্ভব হয় ইউরোপে। নাসারাদের দেশে। নাসারাদের অন্যতম ভাষা ইংরেজী। ভারতবর্ষে ওদের শাসন নাজিল হয় দুশো বছরের জন্য। সেই সুবাদে এই দেশেও আমদানী হয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় লেনদেনের হার নির্ধারিত হয় ইন্টারেষ্ট নামক উপাদন দিয়ে। ইংরেজী 'ইন্টারেষ্ট' শব্দটাকে কোন এক বঙ্গসন্তান অনুবাদ করেন 'সুদ' বলে। সেই থেকে চলে আসছে ব্যাংক ও সুদ। সেই আদম সন্তান যদি অনুবাদ করার সময় সুদ না বলে 'ভুষি' করতো তাহলে সেটা হারাম হতো না বলে মনে হয় না।

আপনার বলেন, ভুষি হারাম এই কথা কোন মুসলমান মওলানা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে?? সুতরাং সুদ ব্যাপারটা যতটা হালাল হারাম সমস্যা তার চেয়ে বেশী শব্দানুবাদের সমস্যা।

No comments: