আমার এক প্রতিবেশী গিয়াস সাহেব। দুর সম্পর্কের আত্মীয়ও হন। সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন রাজস্ব বিভাগে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন মর্মে সার্টিফিকেটও আছে। আমি তাকে যথেষ্ট ভক্তিশ্রদ্ধা করতাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। এলাকায় সন্ধ্যার পর প্রায়ই বিদ্যুত চলে যায়। এটা একটা নিয়মিত চিত্র চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের। মজার ব্যাপার হলো গিয়াস সাহেব এই ঘটনার মধ্যে বিরাট ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেতেন। ফিসফিস করে বলতেন, "বুঝলে ভাতিজা। এই সবই হিন্দুদের চক্রান্ত। হিন্দুর ছেলেরা দিনের বেলা পড়াশোনা করে রাখে, রাতে খেলাধুলা করে। তাই রাতে মুসলমানের ছেলেমেয়েরা যাতে পড়তে না পারে সেজন্য কারেন্ট বন্ধ করে দেয়। হিন্দুরা চায়না মুসলমান শিক্ষিত হোক। সব ইন্ডিয়ার চক্রান্ত"। আমি তাজ্জব শুনে।
আর একবার কোরবানীর সময় শেয়ারে গরু কোরবানী দিয়েছিলাম ওনার সাথে। গরু জবাই করার সময় কসাইদের সাথে আমিও ট্যাং ধরলাম একটা। কিন্তু গরুর লাথির চোটে আমি তিন লাফে গরু ছেড়ে পালিয়ে এলাম। এটা দেখে গিয়াস সাহেব রেগে গেলেন। আমার বাবাকে অভিযোগ করে - "কিসের এমএ পড়া ছেলে আপনার, গরুর ট্যাংটাও ঠিকমতো ধরতে পারে না। যতসব অপদার্থ।" এইটা শুনে বাবা লা জওয়াব, আর আমরা আড়ালে গিয়ে হাসি।
এই ভদ্রলোক সবকিছুর মধ্যে ষড়যন্ত্র খুঁজতে ভালোবাসতেন। সহজ বিষয়কেও জটিল করে দেখতে ভালোবাসতেন। দেখতে সুশ্রী হ্যান্ডসাম এই ভদ্রলোক এত নরম স্বরে কথা বলবেন যেন ফেরেশতার বানী নির্গত হচ্ছে। প্রথম দৃষ্টিতে দেবদুত মনে হবার কথা। কিন্তু যেদিন গিয়াস সাহেবের মধ্যে ওই নোংরা সাম্প্রদায়িক মনোভাব দেখলাম, অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনলাম সেদিন থেকে শ্রদ্ধাটা যেন বাষ্পীভুত হয়ে গেল। গিয়াস সাহেবকে সালাম দিতেও কুন্ঠিত হই এখন।
শ্রদ্ধেয় মানুষদের শ্রদ্ধার আসন ধরে রাখার জন্য সতর্ক থাকা উচিত। মানীর মান জুতার বাড়িতেও যায় না, কথাটা ভুল।
[উৎসর্গ: ব্লগের বেইজ্জতাপন্ন মানীগুনীজন]
No comments:
Post a Comment