Wednesday, November 25, 2009

আমাদের হারানো গল্পের বাগান

তুমি যাবার পর থেকে আমার গল্পগুলো থেমে গেছে। যদ্দিন তুমি ছিলে আমি ছিলাম এক নিটোল গল্পকার। একেকটা গল্পের একেকটা জীবন্ত চরিত্র নিয়ে তোমার আগ্রহ আমার গল্প বানাবার উৎসাহকে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত করতো। আমার সকল গল্পের একমাত্র পাঠিকা ছিলে তুমি। আমার কোন গল্প কখনো কোথাও পাঠাইনি। তুমি জানতে আমার গল্পে কখনো বানোয়াট চরিত্র থাকে না। চারপাশের মানুষগুলো নিয়েই আমার যত গল্প। তাই আমার গল্প নিয়ে তোমার বিপুল আগ্রহ। গল্পের মাঝে কখনো কখনো সংলাপ তৈরীতে মেকাপ দিতে হলেও চরিত্র চিত্রনে কোন আলগা প্রয়াস ছিল না। গল্পগুলো লিখতে লিখতে আমি কখন তোমাকেও গল্পের একটা চরিত্র ভাবতে শুরু করেছিলাম নিজেই জানি না। তোমার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তাই তোমাকেও গল্পে সম্পৃক্ত করলাম আজ। তুমি আমার গল্প মানুষ? তোমার আমার গল্পের সুচনা হয়েছিল কিভাবে? আমাদের গল্পের প্রথম সংলাপটি ছিল তোমার। তোমার প্রথম সংলাপটি যখন আমার প্রাঙ্গনে এসে পৌছল তখন আমি ভীষন একা। সেই একাকী সময়ে গল্প করার মতো কাউকে বড় প্রয়োজন ছিল। তোমারও হয়তো। তবে আমার দ্বিতীয় সংলাপ নিক্ষেপে খানিক বিলম্ব হওয়াকে তুমি হতাশার সাথে প্রকাশ না করলে আমাদের দুজনের গল্পকার হওয়া হতো না। তোমার সেই হতাশার মধ্যে একটা সুপ্ত আকুলতা ছিল যাতে আমি সবুজের প্রতিশ্রুতি দেখেছিলাম। তৃতীয় সংলাপের পর সেই সবুজের কুড়িটি পাতা মেলতে শুরু করলো। তারপর একদিন পত্রপল্লব বেড়ে গিয়ে আমাদের বিশাল গল্পের বাগান গড়ে উঠলো। নিয়মিত পরিচর্যায় আমাদের গল্প বাগানে হরেক রকমের ফুল ফুটলো, পাখপাখালীর আগমন ঘটলো, গান হলো, কবিতা হলো। ধীরে ধীরে গল্প যেন উপন্যাসে রূপ নিল। বিস্ময়ের ঘোর কেটে উপন্যাসের যাত্রাপথে একদিন তোমার ডাক এসে গেল আচমকা। নিরুপায় তুমি আমাকে ছেড়ে উড়াল দিলে নতুন গন্তব্যে........ চিরতরে। তোমাকে গল্প বলার, তোমার গল্প শোনার আর কোন সুযোগ রইল না আমার। আজ তোমার আকাশে নতুন ভোর, নতুন সূর্যোদয়, নিত্য নতুন প্রতিশ্রুতি। আমাদের সেই গল্প বাগান এখনো সেই খানেই আছে, তবে নিঝুম নিস্তব্ধতায় নিথর পড়ে আছে। বহুদিন কোন নতুন ফুল ফোটেনি, পাখপাখালি আসে না। সাপখোপ আর ইঁদুরের বসতি আগাছায় ভরা সেই বাগানে আমি আর হাঁটাহাঁটি করি না আজকাল। আমাদের গল্পগুলো কি আর কখনো প্রান ফিরে পাবে না? স্মৃতি কি প্রানহীন নিস্তরঙ্গ জলের আধার? তবু স্মৃতিতে নিমজ্জিত হয়ে এত সুখ পাই কেন!

No comments: