সেদিন দুপুরে অফিসের ক্যান্টিনে লাঞ্চটা শেষ করে সিগারেটে আগুন দিতেই যে ফোনটা এলো সেটা এক প্রত্যাশিত সুখবর। আমাদের প্রিয় ব্লগার ও হবু ব্যারিষ্টার জাবীর জানালো ভিসাটা হয়ে গেছে। সুখবরটা সেলিব্রেট করার কোন উপায় নেই চাটগা থেকে। তবু জেনে ভালো লাগছে ঢাকার ব্লগারগন শুক্রবারে একটা অনুষ্ঠান করছেন। খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও থাকতে পারছি না বলে জাবীরের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
গত কিছুদিন ধরে আক্ষরিক অর্থেই দৌড়ের উপরে ছিলাম, এখনো কিছুটা। তাই ব্লগেও আসা হয় না ঠিকমতো। লেখার সময় নেই, পড়ার সময় নেই, আড্ডা দেবার সময় তো নেই নেই হয়ে গেছেই। আসলে ঈদের বন্ধের পর থেকে আগের সব রুটিন বদলে গেছে যেন। খেই হারিয়ে ঘুরে মরছি এলোপাথাড়ি যেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত কখনো কখনো অফিসে কাটাই।
জাবীরের সাথে মাত্র একবারই আড্ডা দেবার সুযোগ পেয়েছিলাম। গতমাসে জাবীর চট্টগ্রাম এলো কাজে, ফোনে ঠিক করা হলো আমি অফিস শেষে ওকে নিয়ে ইফতার আড্ডায় বসবো। পাওয়া গেল আরেক চাটগাইয়া ব্লগার স্বপ্নবাজকে। আমার সাথে সেই প্রথম দেখা স্বপ্নবাজের সাথেও। যে ঠিকানায় জাবীরকে থাকতে বললাম সেটি ইস্পাহানী মোড়ে পিটস্টপ রেষ্টুরেন্ট। আমার অফিস থেকে ওখানে যেতে বড়জোর আধঘন্টা লাগে। কিন্তু ইফতারপূর্ব জ্যামের কারনে লেগে গেল দুইঘন্টা। যখন রেষ্টুরেন্টে পৌছালাম তখন মসজিদে ফু দেয়া শুরু হয়ে গেছে। আজান দেয় দেয় অবস্থা। আমি পুরো রেষ্টুরেন্টে হেটে বেরিয়ে কোথাও জাবীরকে পেলাম না। আজব।
পাঁচ মিনিট আগেও কথা হলো ওর সাথে গেল কই। বলেছিলাম ইফতারীর টেবিলের দখল নিয়ে বসে যেতে, নইলে পরে জায়গা পাওয়া যাবে না। সবগুলা মানুষের চেহারা দিয়ে ঘুরে এলাম, না জাবীর নয় একটাও। আমি ভুল করছি না তো দেখতে? আগে তো দেখিনি? ছবির সাথে আসল মানুষের মিল থাকে না। কি করি দিলাম ফোন আবার। তারপর নজর রাখলাম কার ফোন বাজে আর কার ঠোট নড়ে, গোয়েন্দা নজরে অনেকের ঠোট নড়তে দেখছি, কানে চোঙা লাগিয়ে অনেকেই কথা বলছে। জাবীরের সাথে আমিও বলছি। জিগাইলাম, কই তুমি। সে কয়, দাদা আমি তো এইখানে। আমি কই, আমিও তো এইখানে। কি মুশকিল। এত মানুষ মোবাইলে কথা বলে, কে কার কথা শোনে। ব্যাটারা ইফতারের আগে ইকটু চুপটি কর, আমি খুজে বের করি পদ্মলোচন জাবীরকে, ইফতারীর সময় যে পেরিয়ে যায়!!!
হঠাৎ নজরে পড়লো এক হুজুরের দিকে। জোব্বাজাব্বা পাগড়ী পড়া এক হুজুর মনে হলো আমার ফোনের তালে মাথা নেড়ে কথা বলছে, কি জানি সন্দেহ করে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম। কাছাকাছি গিয়ে শুনি আমার ফোনে সেই শব্দ, এই হুজুরও সেই কথা বলে। খাইছে, এই হুজুরই তো জাবীর........ব্যাটা করছে কি? এই বেশভুষা লাগাইছে ক্যান? আমি দুইবার ওর পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি, ভেবেছি কোন মওলানা ইফতার খেতে এসেছে এখানে। জাবীর ততক্ষনে চিনে ফেলেছে আমাকে। উঠে এলে জড়িয়ে ধরলাম হেসে। ওর সাথে এক বন্ধুও আছে। যাক ইফতার করা যাবে তাহলে। হাপ ছাড়লাম। কিন্তু তখনো স্বপ্নবাজ আসেনি। রাস্তার জ্যাম পেরিয়ে আজানের সাথে সাথে স্বপ্নবাজও হাজির। এরপর ইফতার, গপসপ, আড্ডা, চায়ের তেষ্টা। চায়ের অনুরোধ করতে দেরী হয়ে গেছে বলে সিরিয়ালে পেছনে পড়ে গেলাম। আমাদের ভাগ্যে চা জুটলো না, বলা হলো আরো বসতে হবে চা খেতে হলে। দুচ্ছাই অতক্ষন চা খেতে কে বসে থাকে, তারচে আমার বাসায় গিয়েই খাই চা। বাসায় গিয়ে চা খাওয়া হলো, আরেক দফা আড্ডা হলো।
তারপর ফেরার পালা এলো। জাবীর শরীর ঠিক রাখতে রাতে খায় না, এটা নিয়ে স্বপ্নবাজের সুন্দর কিছু মন্তব্য ছিল, দিলাম না এখানে। যাইহোক ডিনার বাদে ষ্টেশানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল ওরা। জাবীর কথা দিল লন্ডন যাবার আগে আরেকবার হবে আসা। আরো একটা আড্ডা সময়। কিন্তু হলো না আর। জাবীর তার আগেই চলে যাচ্ছে। এরপর আড্ডাটা হবে পরিপূর্ন ব্যারিষ্টারের সাথে। সেই দিনের প্রতি চোখ মেলে থাকলাম। জাবীরের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
No comments:
Post a Comment