ইহা একটি গিয়ানী পোষ্ট। একটি পরীক্ষামূলক রচনা। ভবিষ্যত প্রজন্মের শিক্ষার মান উন্নত করিবার মানসে প্রচলিত প্রশ্ননির্ভর পরীক্ষাপদ্ধতি ভাঙ্গিয়া উত্তর দিয়া প্রশ্ন রচনার প্রয়াস এটি। এতে প্রশ্নপত্রের বদলে উত্তর দেয়া থাকবে। ছাত্রছাত্রীগন পরীক্ষার হলে উত্তর অধ্যয়ন করে প্রশ্ন নির্ধারন করিবে। এতে একে তো বাঁচিবে সময়, অন্যদিকে রোধ হইবে মেধার অপচয়। [উত্তরে সাধু চলিত ভাষার মিশ্রন রহিয়াছে, বানানভুল রহিয়াছে। নিজ দায়িত্বে পড়িয়া নিতে হইবে। উত্তরের প্রতিটা ভুল ধরাইবার জন্য ১ নম্বর করিয়া বোনাস যুক্ত হইবে। ]
উত্তর শুরুঃ
এক বলদ মাঠে ঘাস খাইয়া দিনাতিপাত করিতেছিল। তাহার কোন সঙ্গীসাথী ছিল না। একা একা চরিত আর আর মনের আনন্দে হাম্বা হাম্বা করিত। মাঠের পাশে একটা জঙ্গলে একটা হরিনী বাস করতো। হরিনীটা প্রান্তরের ওপাশের জঙ্গলের এক হরিনকে ভালোবাসতো। কিন্তু অতদুরে একা যাবার সাহস তার নাই। প্রান্তরে ভুতের ভয় আছে। সে দুর থেকে হরিনকে ডাক দিত, হরিনও তাকে প্রত্যুত্তর করিত। কিন্তু হরিনেরও সাহস হয় না বিশাল প্রান্তর পেরিয়ে হরিনীর কাছে যেতে। তবে প্রেম কি এসব মানে?
হরিনী মরিয়া হয়ে একদিন জঙ্গলের প্রান্তে এসে গেল। দেখলো সেখানে চরছে একটা বলদ। মিস্টি সুরে ডাক দিল বলদকে। বলদ এত মিষ্টি সুরে জীবনে কখনো ডাক পায়নি। সুর শুনে গলে গিয়ে মাঠে শুয়ে পড়লো সে। কিন্তু কান খাড়া করে আবার শুনলো ডাক। এত মিষ্টি শুয়েই থাকতে ইচ্ছে হয়। চোখ বুঝে হরিনীর মিষ্টি ডাক উপভোগ করতে থাকে বলদ। দিন যায়। বলদের মুগ্ধতা বাড়ে। একদিন হঠাৎ চোখ মেলে দেখে ফেললো বনের ধারে দাঁড়ানো হরিনীকে। দেখামাত্র প্রেমে পড়ে গেল।
এই হরিনী মিষ্টি সুরে তাকে ডাকছে সেও নিশ্চয়ই তার প্রেমে পড়ে গেছে। আহা, কঠিন প্রেমের সুখে বুক ফেটে যায় যায় বলদের। সে মিষ্টি সুরে ডাকলো হরিনীকে। এভাবে দুজনের ভাব হয়ে গেল। বলদ নিজেকে বলদ সমাজ থেকে উন্নত ভাবতে শুরু করলো। সে চাইল হরিন সমাজে প্রবেশ করতে। হরিন সমাজে বলদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু হরিনী তো আছে। সেই তাকে বলদ সমাজ থেকে হরিন সমাজে নিয়ে যাবে। সে তো বলদকে প্রান দিয়ে ভালবাসে। বলদ আশায় আশায় থাকে।
একদিন হরিনী প্রস্তাব দিল চল আমরা দুজনে একসাথে প্রান্তর পাড়ি দেই। এরকম অপ্রত্যাশিত ডেটিং অফার বলদকে এমন পুলকিত করলো যে সে আকাশের মরা চাঁদের পানে চেয়ে দুলাইন কবিতাই রচনা করে ফেললো তাৎক্ষনিক। ভাবলো মাঠে চরতে চরতে তার প্রিয়তমা হরিনীকে শোনাবে কবিতা খানা।
পরদিন দুজনে একসাথে মাঠে চরতে চরতে দুপুর নাগাদ মাঝমাঠ পেরিয়ে প্রান্তরের ওপাশে পৌছে গেছে। প্রান্তরে হাঁটতে হাঁটতে বলদ আরো ডজনখানেক গান গেয়ে শোনালো হরিনীকে। হরিনীও তার হরিনের জন্য সঞ্চিত কবিতা আর গানগুলো গেয়ে শোনালো। দুজনে সুখের সাগরে সাঁতরাতে সাঁতরাতে বিকেলের মধ্যে প্রান্তরের শেষ মাথায় পৌছে গেছে। হরিনী ভাবলো ওইতো দেখা যায় তার প্রিয় হরিনের বাসস্থান। অধীর আগ্রহে যেখানে অপেক্ষায় আছে হরিন। বলদ ভাবলো আজকে আমার স্বপ্নপুরন হলো।
বলদ তার শেষ গানটা সূর্যাস্তের সময় শোনাবার জন্য রেখে দিয়েছে। আজ তার প্রেম পূর্ন হবে। কানায় কানায় পূর্ন হয়ে বলদ জীবন থেকে হরিন জীবনে প্রবেশ করবে। রীতিমতো রোমাঞ্চিত বলদ। ওদিকে প্রান্তরের এইদিকে আসার পর থেকে হরিনীর গান থেমে গেছে। কেমন উদাস হয়ে গেছে। বলদের কথা শুনতেই পাচ্ছে না যেন সে। বলদ ভাবছে অধিক আবেগের কারনে এমন চুপ হয়ে গেছে। বাকরূদ্ধ হওয়ার মতোই তো প্রেম। তার চোখ দিয়েও প্রেমাশ্রু টলটল করছে। আজ তার মহামিলন। আরেকটু মাত্র।
হরিনী প্রান্তরের শেষ প্রান্তে পৌছে বলদকে বললো, "অনেক হাঁটা হয়েছে তুমি একটু রেষ্ট নিয়ে নাও। আমি জঙ্গলের ভেতরটা দেখে আসি কোন শিয়াল টিয়াল আছে কিনা। তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না। এখুনি ফিরবো।"
বলদ একটু অবাক হলেও বলার কিছু নাই। সে শুয়ে পড়লো ঘাসের উপর। ক্লান্তি লাগছে সারাদিনের হাঁটাহাঁটিতে। ঘুম ঘুমও লাগছে। একসময় ঘুমিয়েই পড়লো। ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে। বলদ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে খুজলো হরিনীকে। চিৎকার করে ডাকলো। কোন সাড়া নেই। জঙ্গলের ভেতর অন্ধকার, সে ঢুকতে ভয় পেল।
সকালের সোনা রোদ এসে পড়লো তার গায়ে। একটা দোয়েল পাখি তিরিক্ষি সুরে ডেকে উঠলো। বলদের মনে হলো পাখিটা বলছে, বলদিয়া..বলদিয়া...বলদিয়া। মানে বলদ চিরকালই বলদ, বলদ কখনো হরিন হতে পারে না। তার দুচোখ বেয়ে দরদর করে পানি ঝরতে লাগলো। সে বুঝলো হরিনী তাকে ফাঁকি দিয়েছে, মহাফাঁকি। খুব দেরীতে বুঝলো বেচারা বলদ।
[উত্তর শেষ]
এবার সঠিক প্রশ্নে টিক চিহ্ন দিন। এটি নিন্মের কোন ভাব সম্প্রসারনের উত্তর ছিল?:
----------------------------------------------------------------------------------
১. ঘুমিয়ে আছে বলদ গরু সব পুরুষের অন্তরে
২. কোথায় বলদ, কোথায় প্রান্তর কে বলে তা বহুদুর
মানুষের মাঝেই আছে বলদ মানুষেতেই সুরাসুর।
No comments:
Post a Comment