১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায় মোগল বাদশাহ শাহ আলমের দুত হয়ে ইংল্যান্ডের রাজার কাছে গিয়েছিলেন তাঁর ভাতা বাড়ানোর তদবির করতে। তাঁকে রাজা উপাধি দিয়ে পাঠানো হয়েছিল বাদশাহের পক্ষ থেকে। সে কারণে তিনি রাজা রামমোহন রায় নামে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই কাজে সফল হয়েছিলেন কিনা সেটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। ১৮৩৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তারিখের সমাচার দর্পনে তাঁর সেই কাজের সফলতা নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়:
দিল্লীর শ্রীলশ্রীযুত বাদশাহের মুশাহেরা বৃদ্ধি।
উক্ত শ্রীযুক্ত বাদশাহের উকীল হইয়া রামমোহন রায় ইঙ্গলণ্ডে গমন করিয়াছিলেন। তিনি ঐ বাদশাহের মুশাহেরা মাসে ২৫০০০ অর্থাৎ বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধিকরণের চেষ্টা করিয়া তাহাতে কৃতকার্য হইয়াছিলেন। অবগত হওয়া গেল যে উক্ত বাদশাহের মুশাহেরা বৃদ্ধিকরণের এই নিয়ম হইবে যে উত্তরকালে ঐ বাদশাহ বা তদীয় কোন পরিজন ইঙ্গলণ্ডীয় বাদশাহের প্রতি আর কোন দাওয়া না করেন। ইংলণ্ডীয় রাজকর্ম্মকারকেরা ৪ বৎসর অবধি উক্ত প্রকার মুশাহেরা বৃদ্ধি স্থির করিয়াছেন কিন্তু অবগত হওয়া গেল যে কেবল বর্তমান বৎসরের প্রথমেই তাহার দান আরম্ভ হইবে। দিল্লীর শ্রীযুক্ত বাদশাহ রামমোহন রায়ের সঙ্গে এই বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন যে রাজ বংশের নিমিত্ত যত টাকা বৃদ্ধি করিতে পারিবেন তাহার দশমাংশ আপনাকে ও আপনার পুত্র পৌত্রাদিক্রমে পরিবারকে দেওয়া যাইবে। এইক্ষণে রামমোহন রায়ের পুত্র দিল্লীতে এই অঙ্গীকৃত বিষয় সিদ্ধকরণের চেষ্টায় আছেন। ভরসা হয় যে তাহাতে কৃতকার্যও হইবেন।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৮ দিন জ্বরে ভুগে ২৭ সেপ্টেম্বরে মৃত্যবরণ করেন।
কিন্তু কেন?
রামমোহন রায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩ সালে, কলকাতায় তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয় ১২ ফেব্রুয়ারী ১৮৩৩ সালে। রামমোহন রায়ের মৃত্যুসংবাদ বিলম্বে আসার রহস্য কী? তার বিলেত অবস্থানকালীন প্রতি সপ্তাহের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। কিন্তু মৃত্যুসংবাদ এত দেরীতে আসলো কেন? এখানে সংবাদটাকে বিলম্বিত করার ইচ্ছাকৃত কোন প্রয়াস আছে কিনা সেটার ব্যাপারে আমার একটা সন্দেহ কাজ করে। তিনি যে মিশন নিয়ে বিলেত গিয়েছিলেন সেটা কোম্পানির খুব অপছন্দের কাজ ছিল। পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির সাথে বিরোধ হওয়াতে দিল্লীর বাদশা দ্বিতীয় আকবরের দূত হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডের রাজার কাছে কাছে নালিশ বা আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন। এই দৌত্যকর্মের জন্য তাঁকে ৭০ হাজার রূপীর একটা চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু মিশন সমাপ্ত হবার আগেই তিনি আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেন। বিষয়টা একটু অদ্ভুত। এ বিষয়ে আরেকটু খোঁজ নিতে হবে। খোঁজ নেবার জন্য যে সকল সূত্র দরকার সেগুলো সংগ্রহ করতে সময় লাগবে।
No comments:
Post a Comment