Sunday, March 24, 2024

তবারুক

তৃতীয়বার ফোন করার সময় মেজ আপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে হুমকির সুরে বললেন, আপনি যদি আধা ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা না করেন তাহলে আমি ডিআইজি সদরুল আনামকে ফোন করতে বাধ্য হবো। তিনি আমার মামাতো ভাই।

আগের দুই ফোনে কাজ না হওয়াতে মেজ আপাকে তৃতীয়বারে ডিআইজি সদরুল আনামকে আনতে হলো।


রাত তখন সাড়ে বারোটা। গত দুই রাতের মতো আজকেও সামনের মাঠে হুজুরের কানে তালা লাগানো ওয়াজ তারস্বরে পাড়া মাতিয়ে যাচ্ছিল। শীতকালে প্রতিদিন এই উৎপাত- যেখানে দর্শকের চেয়ে মাইকের সংখ্যা বেশি থাকে। ওয়াজ শুরু হয় রাত এগারোটায়, শেষ হবার কোন সময়সীমা নাই। আপার মারাত্মক ঘুমের সমস্যা, ওষুধ খেয়েও কাজ হয় না মাঝে মাঝে। তার ওপর মধ্যরাতের মাইকের অত্যাচার। 


আজকে যখন হুজুর ওয়াজের মধ্যে রসিয়ে রসিয়ে মানবজন্মের সকল প্রক্রিয়া হাতে কলমে শিখিয়ে দেবার চেষ্টা শুরু করলেন, তখন আপা আর সহ্য করতে পারলেন না। ক্ষেপে গিয়ে থানায় ফোন করলেন। পর পর দুই অভিযোগে কাজ না হওয়াতে তৃতীয় অস্ত্রের প্রয়োগ।


পনের মিনিট না যেতেই ওয়াজের মাঠে একটা গোলমালের শব্দ শোনা গেল। সম্ভবত তৃতীয় অস্ত্র লক্ষ্যভেদ করেছে। মাইকের শব্দ আচমকা থেমে গেল। শুধু চিৎকার চেঁচামেচি হুড়াহুড়ির শব্দ। কয়েক মিনিট পরেই আপার ফোন বেজে উঠলো। 


ওসি সাহেব।

 

-ম্যাডাম, ফোর্স পাঠিয়ে দিছি। আসর ভেঙ্গে দিয়েছে। ডিআইজি স্যারকে ফোন করতে হবে না।


মেজ আপা শুনে হাসি চাপলেন। ধন্যবাদ দিলেন অকুন্ঠ চিত্তে। কিন্তু যেটা বলতে পারলেন না সেটা হলো ডিআইজি সদরুল আনাম তাঁর মামাতো ভাই না। তবে নিঃসন্দেহে তিনি নিশ্চয়ই কারো না কারো মামাতো ভাই। 


ঘটনা সেখানেই শেষ হবার কথা থাকলেও আরেকটু বাকী ছিল। 


খানিক পরেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরোজা খুলতেই দেখলো দুটো বিরিয়ানীর প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির দারোয়ান কুদ্দুস।


-আফা, ওয়াজে নাকি গণ্ডগোল লাগছিল, সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে। তারা আফনার তবারুকটা পাঠায় দিছে।


আপা কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আয়োজকরা কী টের পেয়ে গেছে পুলিশ ডেকে আনার পেছনে তাঁর হাত ছিল? তবারুক নেবেন নাকি ফিরিয়ে দেবেন সেটা ভাবতে ভাবতে আপা শীতকালেও ঘামতে লাগলেন।


[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]


No comments: