Sunday, September 11, 2016

সিলেট ২০১৬

বাংলাদেশের চতুষ্কোণ মানচিত্রের চারটি প্রান্তের সীমানা ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছেপূরণ শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। দক্ষিণ কোণ সেন্টমার্টিন ছুঁয়ে আসি ১৯৯৪ সালে। পরের বছর উত্তর কোণ বুড়িমারী হয়ে তিনবিঘা করিডোর। তারপরের তালিকায় ছিল সিলেট ও সুন্দরবন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বের পরপরই এমন কঠিন এক জীবিকার জালে আটকে পড়ি প্রায় বিশ বছর এইসব ভ্রমণ থেকে একেবারেই বঞ্চিত। দুই দশক পর জীবিকা শৃংখল থেকে মুক্তি পেয়ে আবারো সুযোগ এসে গেল। প্রথম সুযোগটি সিলেট।


এ এমন একটি জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে আমি একটি ভালো ক্যামেরার অভাব বোধ করেছি। দূরকে নিকটে আনার মতো একটি যন্ত্রও যদি সঙ্গে থাকতো তাহলে দিগন্তকে আরেকটু কাছে, আরেকটু স্বচ্ছতার সাথে দেখতে পেতাম। দূরের নীল পাহাড়টি আমাদের নয়। ওটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য যেখানে আমি এখনো যাইনি। বাংলাদেশের সীমানা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘালয় পাহাড়ে জল বয়ে নিয়ে যায়  বঙ্গোপসাগরের মেঘগুলো। আমার শহরের উপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে কয়েকশো মাইল পর এসে এখানে ঝরায় অবিরাম বৃষ্টির ঝর্ণা। সেই বৃষ্টিগুলো নদী খাল পেরিয়ে গড়িয়ে এসে থমকে দাঁড়ায় এই হাওড়ে। এই প্রথম আমি বাংলাদেশের হাওড় দেখেছি মুগ্ধতার সাগরে ডুবে গিয়ে। এই প্রথম আমার সিলেট ভ্রমণ। রাতারগুল রিজার্ভ ফরেস্টের দ্বারপ্রান্তে এসেও ভেতরে যাইনি যথাযথ সঙ্গীর অভাবে, সেটা বলা ঠিক নয়। কিন্তু মাথার উপর গনগনে সূর্য যে আগুন ঢেলে দিচ্ছিল তাকে নিয়ে ঠিক কতোটা আনন্দ উপভোগ করা যেতো সেই বিষয়ে সন্দিহান ছিলাম বলেই মোবাইল ক্যামেরার অক্ষম কয়েকটি ক্লিক করে ফিরে এসেছি এবারের মতো। আরেকটু শীতল দিনে, আবার যখন ফিরবো তখন নিশ্চয়ই সঙ্গীহীন থাকবো না। উত্তপ্ত ভ্রমণ আমার দেহরুচিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করলে মনের অবস্থাও সুখকর থাকবে না। এমন ভ্রমণ শেষে সুখময় স্মৃতির অভিজ্ঞতাই শ্রেয়। তাই আপাততঃ বলি -এ দেখাই শেষ দেখা নয়।




ফিরে আসার পথে যাত্রার বাহন পথ নির্দেশকের অনুসরণে একটি গ্রাম পেরিয়ে প্রবেশ করলো অপরূপ এক চা বাগানে। বরজান চা বাগানের আয়তন নেহাত কম নয়। সিলেট শহরের কাছাকাছি এই বাগানটিই হলো আমার প্রথম দর্শন এবং ভালো লাগা। ক্যামেরায় ছোট ছোট কয়েকটি ক্লিক। তারপর চা বাগান পেরিয়ে রিজার্ভ ফরেস্ট। দুপাশে ঘন জঙ্গলের মাঝে গা ছমছমে নির্জনতায় পায়ে চলার পথ। পথের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ জলের পাহাড়ি ছড়া। গাছে গাছে লাফালাফি করছে দুয়েকটি হনুমান। মুগ্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকা। আবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্যামেরায় ক্লিক করা হয় না।  যাত্রার বাহনটিরও থামার উপায় নেই অপ্রচলিত এই পথে। অতএব মাথার ভেতরে স্মৃতিপ্রকোষ্ঠেই ঠাঁই করে নেয় সেই সুন্দর। আবারো ফিরতে হবে এই পথে, তখন এই বন পরিভ্রমণ হবে পায়ে হেঁটে।

No comments: