Friday, August 26, 2016

একটি অনন্য কবিতাপাঠ

তোর মা'কে বলিস-- আমি আর ফিরবো না কখনো।
.
নলিনী খুড়োর দেনাগুলো শোধ করে গেলাম; সুবোধের নামে লিখে দিলাম উত্তরপাড়ার দু'বিঘে। আজই দফারফা হয়ে গেলো বিজয়ার সাথে; সে আর আঁচল পেঁচিয়ে হবে না এ-মুখো; কড়ায়-গণ্ডায় তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি বজরা দু'খানা।
.
আমি আর ফিরবো না, নিখিল; আমি আর কখনোই ফিরবো না---
.
তোর মা'কে বলিস-- বসতভিটে, বর্গাজমি, বাবলা'র পুকুর আর ঐ দক্ষিণপাড়ার পাঁচ বিঘে তার নামেই দলিল করেছি কাল;
-- বালিশের তলায় রাখা আছে সব। তোর মায়ের অবর্তমানে সব যেন 'বুড়ির'ই হয়-- এও বলিস মা'কে। আরেকটু বড় হ'লে, কান্তাকে বুঝিয়ে বলিস: 'যেখানে সুর নেই, নেই তাল-- সেখানে আগুনও জ্বালাতে নেই'।
ঝুম বৃষ্টির রাতে, নিশিন্ধা' ঘাটে-- সে যেন আর 'মা গঙ্গা', 'মা গঙ্গা'-ব'লে ডুব না-দেয়, দেখিস।
.
--- তোর হরি জেঠু এ'লে, তাঁকে দু'বেলা খেতে দিস, বাপ। আর কেউ না-জানুক, তুই তো জানিস-- কতোটা দেবতা তিনি, কতোটা মানুষ! তাঁকে বলিস-- গৌরাক্ষ ফিরেছিলো, আমি আর ফিরবো না কখনো...
.
উঠোনের ঝোপগুলো আলগোছে কেটে নিস; গতরাতে, ওখানে 'শঙ্খিনী'র মতো কী-একটা চোখে ঠেকলো-- খুব সাবধান! পুবের নিমগাছটা আরো বাড়ুক; বাড়তে বাড়তে তার ছায়া যেন উঠোন ছাড়িয়ে যায়; তোর মা যতই চেঁচাক-- কাটিস না বাপ, গাছটা কাটিস না কখনো।
.
তোর মা'কে বলিস-- আমার অতল আঁধার জুড়ে সে-ই ছিলো ধ্রুব-পূর্ণিমা। নাইবা হলো হাঁটা মৃত্যুলগ্ন অবধি একসাথে-- মায়াপ্রেম ধ'রে। এ জন্মে নাইবা হলাম সংসারী; পরজন্মে, তারেই- শুধু তারেই যেন পাই সুখ-সংসারে; যদি থাকে কিছু ক্ষমা তার অবশিষ্ট-- যদি বাসে ভালো...!
.
আমি আর ফিরবো না, নিখিল; আমি আর কখনোই ফিরবো না।
.
তোর মুখে মুখে ফেরা গীতগুলো আর ঐ দোতারাটা ছাড়া, তোর জন্য কী-এক পিছুটানে রেখে গেলাম না কিছুই...! পারিস তো, ঐ ছোট মুখেই অভিশাপের দণ্ড দিস আমায়...।
.
কেনো নিরুদ্দেশ হলাম, কেনোই বা ছেড়ে গেলাম এই ভরা-সংসার-- অজানাই থাক তোর। শুধু মন কাঁদলে, দোতরায় পরম বিরহে দিস দু'টো টোকা; গলা ছেড়ে দু'কলি গাইতে গাইতে আমারই মতো ভিজিয়ে দিস 'কালিন্দী' পাড়...


নিখিলকে লেখা চিঠি...
রুবেল সরকার
...............................................................................................

ফেসবুকের 'বিস্তার' গ্রুপে এই কবিতাটি পড়ে চমকে গেলাম। বুকের খুব গভীরে এমন একটা চিনচিনে ব্যথা মোচড় দিয়ে উঠলো! এমন করেও আজকাল কেউ লিখতে পারে? আমি নিখিলকে চিনি না, রুবেল সরকারের সাথেও পরিচয় হয়নি। কিন্তু পাঠ পরবর্তী সীমাহীন মুগ্ধতা আমাকে বাধ্য করেছে কবিতাটি শেয়ার করতে। এটি কেবল একটি কবিতা নয়, জীবনের গূঢ় গভীর একটা বার্তা- যে বার্তাটি খুব গোপনে বাজে আরো অনেকের প্রাণে। যেদিন অন্য জগতে পাড়ি জমাবো সেদিন এমন একটি বার্তা লিখে বিদায় নিতে চাই আমিও।

No comments: