স্টেশনে বসে আছি অনেকক্ষণ। ট্রেন ঠিকসময়ে ছাড়বে না। চট্টগ্রাম থেকে উর্মি গোধূলী ট্রেনটা আসার পর ঢাকা থেকে তূর্ণা নিশীথা হয়ে ছাড়বে। ভাগ্যক্রমে টিকেট পেয়ে গেছি। নন এসি হলেও অসুবিধে নেই। ঢাকার যানজট থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য একদিন আগেই চলে যাচ্ছি। নইলে আরো দুদিন থাকার কথা।
অনেক বছর পর কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠবো। সেই ছাত্রজীবন ছাড়ার পর এদিকে আসা হয়নি আর। ট্রেনে আসলে বরাবরই এয়ারপোর্ট স্টেশনেই নামতাম। কাজকর্ম সব গুলশান বনানী কেন্দ্রিক ছিল বলেই। এবারই ব্যতিক্রম। বহুদিন পর বলে চিরাচেনা এই স্টেশনটা খুব অচেনা লাগছিল এবার। কেমন পুরোনো হয়ে গেছে টার্মিনালটা। ওয়েটিং হলটা একদম অগোছালো। এর চেয়ে চট্টগ্রামের রেল টার্মিনালটা অনেক বেশী সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক। আকারেও বড় হবে কিছুটা। তবে ঢাকার প্ল্যাটফর্মে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে যেটা চট্টগ্রামের প্ল্যাটফর্মে নেই।
অনেক বছর পর কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠবো। সেই ছাত্রজীবন ছাড়ার পর এদিকে আসা হয়নি আর। ট্রেনে আসলে বরাবরই এয়ারপোর্ট স্টেশনেই নামতাম। কাজকর্ম সব গুলশান বনানী কেন্দ্রিক ছিল বলেই। এবারই ব্যতিক্রম। বহুদিন পর বলে চিরাচেনা এই স্টেশনটা খুব অচেনা লাগছিল এবার। কেমন পুরোনো হয়ে গেছে টার্মিনালটা। ওয়েটিং হলটা একদম অগোছালো। এর চেয়ে চট্টগ্রামের রেল টার্মিনালটা অনেক বেশী সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক। আকারেও বড় হবে কিছুটা। তবে ঢাকার প্ল্যাটফর্মে ফ্যানের ব্যবস্থা আছে যেটা চট্টগ্রামের প্ল্যাটফর্মে নেই।
একটা ফ্যানের নীচে যুত হয়ে বসে মোবাইলে একটা ইবুক পড়ার চেষ্টা করছিলাম। কিছু পড়ে আবার ট্রেন লাইনের দিকে তাকাই। চট্টগ্রামের ট্রেনটা আসলো কিনা। রাত এগারোটা বাজে প্রায়। কতক্ষণ বসে থাকবো এভাবে?
যেখানে বসেছি সেই পিলারের উল্টোদিকে এক্সসারসাইজ খাতার মতো একটা জিনিস চোখে পড়লো। হাত বাড়ালেই ধরা যায়। কার না কার জিনিস কে জানে। ফেলে গেছে কেউ। কৌতুহল হলো, নিশ্চয়ই কোন বাচ্চার স্কুলের খাতা হবে। হাতে নিয়ে দেখলাম কোথাও ঠিকানা আছে কিনা। খাতা ঠিকই আছে, কিন্তু স্কুলের খাতা না। ভেতরে শুধু গোটা গোটা অক্ষরে কিছু লেখা। একটু চোখ বুলিয়ে ডায়েরীর মতো লাগলো। নাকি সাহিত্য কে জানে? কোথাও ঠিকানা দেখা গেল না। রেখে দিলাম খাতাটা।
কিন্তু কিছুক্ষণ ইবুক পড়ার পর খাতাটার দিকে নজর গেল আবার। কী আছে ওতে? কারো গোপন কথা? নিষিদ্ধ কৌতুহল বিজয়ী হলো এবার। আবারো হাতে নিলাম। পড়তে শুরু করলাম নিজের অজান্তেই.........
যেখানে বসেছি সেই পিলারের উল্টোদিকে এক্সসারসাইজ খাতার মতো একটা জিনিস চোখে পড়লো। হাত বাড়ালেই ধরা যায়। কার না কার জিনিস কে জানে। ফেলে গেছে কেউ। কৌতুহল হলো, নিশ্চয়ই কোন বাচ্চার স্কুলের খাতা হবে। হাতে নিয়ে দেখলাম কোথাও ঠিকানা আছে কিনা। খাতা ঠিকই আছে, কিন্তু স্কুলের খাতা না। ভেতরে শুধু গোটা গোটা অক্ষরে কিছু লেখা। একটু চোখ বুলিয়ে ডায়েরীর মতো লাগলো। নাকি সাহিত্য কে জানে? কোথাও ঠিকানা দেখা গেল না। রেখে দিলাম খাতাটা।
কিন্তু কিছুক্ষণ ইবুক পড়ার পর খাতাটার দিকে নজর গেল আবার। কী আছে ওতে? কারো গোপন কথা? নিষিদ্ধ কৌতুহল বিজয়ী হলো এবার। আবারো হাতে নিলাম। পড়তে শুরু করলাম নিজের অজান্তেই.........
কথাগুলো খুব রূঢ় শোনাবে। তবু বলতেই হচ্ছে। আপনাকে শোনাবার ইচ্ছে নেই। নিজেকে শুনিয়েই বলছি। বয়স হলে অনেক মানুষই সময়ের কোপানলে পতিত হয়। আপনিও হয়েছেন। একটু বেশী পরিমানেই হয়েছেন। শুধু সময় না, আপনার কর্মফলের কোপানলেই পতিত হয়েছেন বেশী। শুনতে আপনার খারাপ লাগতে পারে কিন্তু আজকে আপনি যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন সেটার জন্য প্রায় সর্বাংশে আপনিই দায়ী। আপনার বয়স অনধিক আশি বছর। এই বয়সে আপনার যা আছে তা নিয়ে আরো ভালো থাকার কথা ছিল। আপনার বয়স পর্যন্ত আমার টিকে থাকা হবে না। থাকলে সেটা দুর্ভাগ্য বলতে হবে। কেননা আমরা জানি না ভবিতব্য আমাদের জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছে। আপনার জন্য ভবিতব্য যা রেখেছে তার জন্য আমি দুঃখিত, কিন্তু তবু বলবো এটা আমার কাছে খুব অপ্রত্যাশিত ছিল না। আপনার অতীতের কর্মকাণ্ডগুলো আজকের এই পরিণতির জন্য দায়ী। আপনি জানেন আপনি কী করেছেন, কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন আপনি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ভুল পথে চলছিলেন? আপনাকে যারা সুবুদ্ধি দিয়েছিল, সৎ পরামর্শ দিয়ে সঠিক পথে থাকতে বলেছিল আপনি তাদের কথায় কান দেননি।
আপনি আজীবন চালাক মানুষ হিসেবেই জীবনযাপন করেছেন। বয়স হলেও আপনার চালাকির মাত্রা এতটুকু কমেনি। আপনি বৈষয়িক ব্যাপারে অতিমাত্রায় চালাকির চেষ্টা করে পরের সম্পদ হরণে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। আপনি নিজে করেছেন, সন্তানদেরও সেই পথে প্রশিক্ষিত করেছেন। আপনি পরিবারকে একটা দুষ্টচক্র বানিয়ে তুলেছেন মাত্রাহীন লোভ আর স্বার্থপরতা দিয়ে। আপনি নিজের পরিবার ছাড়া বাকী সবার সাথে চরম অবিচার করেছেন। নিজের পরিবারকে অতিমাত্রায় ভোগ করাবার জন্য বঞ্চিত করেছেন আপনার পৈত্রিক পরিবারকেও। আপনি গ্রাস করেছেন আপনার পাওনার কয়েকগুন বেশী। আপনার কুসন্তানদের আপনি কর্মকাণ্ডের সহযোগী বানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি বোঝেননি অপ্রাপ্য সম্পদের যোগফলের হিসেব করতে করতে জীবনচক্রের একটা অন্ধকুপে পতিত হচ্ছেন। এখন সেই অন্ধকূপ থেকে আপনাকে টেনে তোলার কেউ নেই। আপনার সেই কুসন্তান সমূহ এখন আপনার দিকেও ফিরে তাকাচ্ছে না।
আপনার সম্পদগ্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি জানতাম, কিন্তু আপনার অন্ধকূপে পতিত হবার কাহিনীটা আমি জেনেছি আপনার নিজের মুখেই। আমি আপনার কোন উপকার করতে পারবো না জেনেও আপনি আমাকে দুঃখের কাহিনীগুলো শুনিয়েছেন সময় নিয়ে। আমি আপনার জন্য শান্ত্বনার বাক্য উচ্চারণ করিনি। কেননা আমি ধরে নিয়েছি এটা সময়ের একটা শাস্তি। আপনার কাহিনী শুনে আমি দুঃখিতবোধ করলেও করার কিছু নেই আমার। আপনার পরিবার বা কুসন্তানদের সাথে আমার কোন লেনাদেনা নেই। ওরা সব আপনারই সৃষ্ট ফ্রাংকেনস্টাইন। অবশেষে আজ আপনাকেই গ্রাস করেছে। আপনি একা নন, পৃথিবীতে এমন দুর্ভাগা আরো আছে। আপনি তাদের সংখ্যা আরেকটি বাড়ালেন মাত্র। স্বার্থপরতার শাস্তিগুলো সময়ই দিয়ে দেয়।
আপনি এখন বলছেন আপনার পরিবার চরম কুৎসিত একটা ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আমিও জানি সেটা। আপনার পরিবার থেকে আমি নিজেকে বিচ্ছিন্ন ঘোষণা করেছি বহুবছর আগেই। আপনার যে কর্মকাণ্ডগুলোকে আমি ঘৃণিত বলছি আপনার স্ত্রী এবং কুসন্তানদের কর্মকাণ্ড তার চেয়ে দশগুন বেশী ঘৃণ্য। যথাসময়ে তারাও শাস্তির আওতায় আসবে বলে আমার বিশ্বাস। ওরা কতগুলো নারীকে কিভাবে অবমাননার চুড়ান্তে নিয়ে গেছে, সেটা লিখতে গেলে কয়েকটি ট্র্যাজিক উপন্যাস লিখতে হবে। লেখার ক্ষমতা থাকলে আমি লিখতাম। কিন্তু ঘটনাক্রমের স্মৃতিচারণার ক্রোধে ঘৃণায় আমি এত বেশী প্রজ্জ্বলিত যে আমার হাত দিয়ে কোন লেখাই আসে না।
আপনি কী এখন স্বীকার করবেন, প্রাথমিক পর্বে আপনারও প্রশ্রয় ছিল স্ত্রী সন্তানদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে? হয়তো করবেন না। প্রতিটি মানুষই কিছুটা এরকম। নিজের ভুলগুলো কিছুতে চোখে পড়ে না। কেননা প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই নিজের অনেক মারাত্মক ভুল নিজেরই কাছে অন্ধকারে থেকে যায় চিরকাল। কিন্তু আপনি স্বার্থান্ধ না হয়ে একটু খোলা মনে যদি ভাবতেন তাহলে খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পেতেন। প্রতিটি মানুষের একটি করে বিচার করার বিবেক থাকে সেখানে চাইলে সে নিজেকে যাচাই করতে পারে একটা আয়নায়। আপনি সেটা কখনো করেননি হয়তো। তাই এই শেষ সময়ে এসেও আপনি ভুলগুলো দেখতে পান না।
আপনি কী এখন স্বীকার করবেন, প্রাথমিক পর্বে আপনারও প্রশ্রয় ছিল স্ত্রী সন্তানদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে? হয়তো করবেন না। প্রতিটি মানুষই কিছুটা এরকম। নিজের ভুলগুলো কিছুতে চোখে পড়ে না। কেননা প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই নিজের অনেক মারাত্মক ভুল নিজেরই কাছে অন্ধকারে থেকে যায় চিরকাল। কিন্তু আপনি স্বার্থান্ধ না হয়ে একটু খোলা মনে যদি ভাবতেন তাহলে খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পেতেন। প্রতিটি মানুষের একটি করে বিচার করার বিবেক থাকে সেখানে চাইলে সে নিজেকে যাচাই করতে পারে একটা আয়নায়। আপনি সেটা কখনো করেননি হয়তো। তাই এই শেষ সময়ে এসেও আপনি ভুলগুলো দেখতে পান না।
একটা মানুষের দুঃসময়ের কথা শুনে এমন কথা কেন লিখছি? লিখছি কেননা আপনি এখনো অনুতপ্ত নন। আপনি এখনো বলছেন না আপনার ভুলের কারণেই এই পরিণতি। আপনি এখনো শুধু ফ্রাংকেনস্টাইনের দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ফ্রাংকেনস্টাইনের স্রষ্টাকে আপনি এখনো খুঁজছেন না। সেই কারণে আপনাকে প্রতি সহমর্মী হতে পারলাম না। আপনি অনুতপ্ত না হলে আমিও সহানুভুতিশীল হতে পারি না। শুধুমাত্র বয়সের কারণে কারো অন্যায় ক্ষমার চোখে দেখা আমার চরিত্রে নেই।
খাতার লেখা এখানেই শেষ। কোন নাম ধাম তারিখ কিছু নেই। সম্ভবতঃ অসমাপ্ত কোন চিঠি। খাতাটা আবারো জায়গামতো রেখে দিলাম। ট্রেনের বাঁশী শোনা যাচ্ছে। এসে পড়েছে উর্মি গোধূলী। রাত বারোটা বেজে গেছে। উঠে পড়লাম। বসতে বসতে ঝিঁঝি ধরে গেছে পায়ে। আড়মোড়া ভেঙ্গে ব্যাগটা কাঁধে ফেলে হাঁটতে শুরু করলাম ট্রেনের দিকে। জীবনে অনেক বৈচিত্র্যময় অনুভুতির অধিকারী হয় মানুষ, তার কটিই বা প্রকাশ পায়, কটিই বা আমাদের জানা হয়। আজকে তার একখানা চোখে পড়ে গেল দুর্ঘটনাবশতঃ।
No comments:
Post a Comment