- ভাতিজা নাকি চাকরি বাকরি সব ছেড়ে বেকার? আমার এক বন্ধুর কোম্পানী তোমার মতো একজনকে খুঁজছে। তুমি রাজী থাকলে আমি বলে দেখবো। লাখ দেড়েকের মতো দেবে। সার্বক্ষণিক গাড়ি, ড্রাইভার সব আছে।
- না চাচা, কর্পোরেট চাকরি আর করবো না বলেই তো ছাড়লাম। তবে ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক ছোট্ট একটা কাজ করি অনলাইনে। দৈনিক চার পাঁচ ঘন্টার কাজ। তারপর বাকী সময় পড়াশোনা এবং নিজের অন্য কাজে কাটাই।
- কী সর্বনাশ! চার ঘন্টার কাজ করে জীবন চলবে তোমার? ভার্সিটির পড়াশোনা তো শেষ করছো বিশ বছর আগে। এখন মাঝবয়সে এসে আবার কী পড়াশোনা করে সময় নষ্ট করতেছো খামাকা। আমাদের বয়সে আসলে বুঝবা সময় গেলে সাধন হয় না। এখনই ধরে নিতে হবে যতটা পারো। এই বয়সটাই হলো কামাই করার বয়স। কামাইবা আর জমাইবা, দ্বিতীয় কোন কথা নাই। এখন ঠিকমতো কামাই করতে না পারলে বুড়ো বয়সে কষ্ট পাবা।
গল্পাংশটি আংশিক সত্য। ঠিক বয়সে কামাতে না পারলে বুড়া বয়সে কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু বুড়ো যে হতে পারবো তার নিশ্চয়তা কোথায়। দেশ বিদেশে ঘরে বাইরে শরীরে যে অবস্থা আমার ধারণা আর দশ বছর টিকে থাকাও চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রে কামাই করে গেলেও ভোগ করার সুযোগ নেই। সুতরাং সেই দশ বছর বরং পড়াশোনার সময়টা বাড়িয়ে নেয়া যাক। এখন লেখালেখি বা পড়াশোনার ব্যাপারটা কি কাজের পর্যায়ে পড়ে কিনা। যারা পেশাদার লেখিয়ে তাদের জন্য এটা একটা কাজ। তাদের আয় আছে। আমি লিখে বা পড়ে কোন আয় করি না, সেজন্য আমার ক্ষেত্রে এটা কাজ না। তার মানে কাজের সাথে আয়ের সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর। যা করলে দুপয়সা আয় রোজগার করা যায়, সেটাই কাজ। অধিকাংশ মানুষ তাই ভাবে। অধিকাংশ মানুষ পড়াশোনাকে কোন কাজ মনে করে না।
তাই কি?
মানুষের শরীরের দুটো অংশ। দেহ আর মন। আমরা দেহের খোরাকের জন্য, জৈবিক আনন্দের জন্য টাকা পয়সার সন্ধান করি। এর ফাঁকে ফাঁকে মনের আনন্দ মেটানোর জন্য কেউ কেউ বিনোদনের সঙ্গী হই।
বিনোদন কি?
বিনোদন হলো মনের খোরাক। খাদ্য যেমন পেটের খোরাক। আমাদের শুধু পেটের খোরাক হলেই চলে না। শরীর ঢাকার জন্য যে জামাকাপড় সেটাও দেহের বাহ্যিক খোরাকই। এরপর দেহকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের যে কাজ, সেটার জন্য যানবাহন লাগে, ওটা দেহের প্রয়োজনেই। শরীর অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে ছুটি। ওটাও দেহের প্রয়োজনে।
দেখা যায় আমাদের জীবনের অধিকাংশ কর্মসূচী দেহকে সন্তুষ্ট রাখতেই। মনকে সন্তুষ্ট করা আমরা গুরুত্বপূর্ন মনে করি না। ওটাকে প্রধান কর্মসূচিতে না রেখে ঐচ্ছিক কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করি।
মনের খোরাক কী কী?
আনন্দের যত কাজ সবই মনের খোরাক, হতে পারে সিনেমা দেখা, হতে পারে গান শোনা, হতে পারে ভ্রমণ করা, বই পড়া, বাগান করা কিংবা লেখালেখি করা। মনের খোরাকের কোন সীমা পরিসীমা নেই।
প্রায় সব মানুষই দেহের খোরাক মেটানোকেই জরুরী মনে করে এবং দেহের খোরাক মিটিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মনোযোগী হতে গিয়ে এতখানি ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে মনের খোরাক মেটানোর সামর্থ্য থাকলেও সে পথে হাঁটার কথা মনে থাকে না।
আমি অনেক মানুষ দেখেছি যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে একটা বই কেনে না, দেশ ভ্রমণ করে না, একটা ভালো সিনেমা দেখে না। সারাদিন শুধু ব্যস্ত সময় কাটায় টাকা আর টাকা নিয়ে। অফিসে যায় টাকার গন্ধে, ব্যাংকে যায় টাকার গন্ধে, বাসায় ফিরে টাকার গন্ধে। আলাপ আলোচনা আড্ডা সবখানে শুধু টাকার হিসেব, আরো বেশী কিভাবে কামানো যায়, আরো উপরে কিভাবে ওঠা যায় সেই আলাপ।
মজার ব্যাপার কি, বিনোদন বলতেও শুধু টাকার প্রসঙ্গটাই উঠে আসে এদের মধ্যে। যার এক কোটি আছে সে দশ কোটির স্বপ্ন দেখে, যার দশ কোটি আছে সে একশো কোটির স্বপ্নে বিভোর। এই টাকা-টাকা করতে করতেই একদিন মাটির গর্তে নেমে যায় চিরকালের মতো। পরবর্তী বংশধরের জন্য রেখে যায় আরো টাকার স্বপ্ন।
সে যাকগে। এই লেখাটির ভূমিকাটা একটু বড় হয়ে গেল। লেখাটির মূল উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই বোঝাতে পেরেছি। উদ্দেশ্য হলো একটি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। আর প্রশ্নটি হলো -দেহের খোরাকের যোগানদাতাকে যদি আমরা কাজের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে মনের খোরাকের যোগানদাতাকে কাজের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি না কেন?
প্রশ্নটাও সোজা নয়, উত্তরও সহজ হবার কথা না।
- না চাচা, কর্পোরেট চাকরি আর করবো না বলেই তো ছাড়লাম। তবে ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক ছোট্ট একটা কাজ করি অনলাইনে। দৈনিক চার পাঁচ ঘন্টার কাজ। তারপর বাকী সময় পড়াশোনা এবং নিজের অন্য কাজে কাটাই।
- কী সর্বনাশ! চার ঘন্টার কাজ করে জীবন চলবে তোমার? ভার্সিটির পড়াশোনা তো শেষ করছো বিশ বছর আগে। এখন মাঝবয়সে এসে আবার কী পড়াশোনা করে সময় নষ্ট করতেছো খামাকা। আমাদের বয়সে আসলে বুঝবা সময় গেলে সাধন হয় না। এখনই ধরে নিতে হবে যতটা পারো। এই বয়সটাই হলো কামাই করার বয়স। কামাইবা আর জমাইবা, দ্বিতীয় কোন কথা নাই। এখন ঠিকমতো কামাই করতে না পারলে বুড়ো বয়সে কষ্ট পাবা।
গল্পাংশটি আংশিক সত্য। ঠিক বয়সে কামাতে না পারলে বুড়া বয়সে কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু বুড়ো যে হতে পারবো তার নিশ্চয়তা কোথায়। দেশ বিদেশে ঘরে বাইরে শরীরে যে অবস্থা আমার ধারণা আর দশ বছর টিকে থাকাও চ্যালেঞ্জিং। সেক্ষেত্রে কামাই করে গেলেও ভোগ করার সুযোগ নেই। সুতরাং সেই দশ বছর বরং পড়াশোনার সময়টা বাড়িয়ে নেয়া যাক। এখন লেখালেখি বা পড়াশোনার ব্যাপারটা কি কাজের পর্যায়ে পড়ে কিনা। যারা পেশাদার লেখিয়ে তাদের জন্য এটা একটা কাজ। তাদের আয় আছে। আমি লিখে বা পড়ে কোন আয় করি না, সেজন্য আমার ক্ষেত্রে এটা কাজ না। তার মানে কাজের সাথে আয়ের সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর। যা করলে দুপয়সা আয় রোজগার করা যায়, সেটাই কাজ। অধিকাংশ মানুষ তাই ভাবে। অধিকাংশ মানুষ পড়াশোনাকে কোন কাজ মনে করে না।
তাই কি?
মানুষের শরীরের দুটো অংশ। দেহ আর মন। আমরা দেহের খোরাকের জন্য, জৈবিক আনন্দের জন্য টাকা পয়সার সন্ধান করি। এর ফাঁকে ফাঁকে মনের আনন্দ মেটানোর জন্য কেউ কেউ বিনোদনের সঙ্গী হই।
বিনোদন কি?
বিনোদন হলো মনের খোরাক। খাদ্য যেমন পেটের খোরাক। আমাদের শুধু পেটের খোরাক হলেই চলে না। শরীর ঢাকার জন্য যে জামাকাপড় সেটাও দেহের বাহ্যিক খোরাকই। এরপর দেহকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের যে কাজ, সেটার জন্য যানবাহন লাগে, ওটা দেহের প্রয়োজনেই। শরীর অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে ছুটি। ওটাও দেহের প্রয়োজনে।
দেখা যায় আমাদের জীবনের অধিকাংশ কর্মসূচী দেহকে সন্তুষ্ট রাখতেই। মনকে সন্তুষ্ট করা আমরা গুরুত্বপূর্ন মনে করি না। ওটাকে প্রধান কর্মসূচিতে না রেখে ঐচ্ছিক কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করি।
মনের খোরাক কী কী?
আনন্দের যত কাজ সবই মনের খোরাক, হতে পারে সিনেমা দেখা, হতে পারে গান শোনা, হতে পারে ভ্রমণ করা, বই পড়া, বাগান করা কিংবা লেখালেখি করা। মনের খোরাকের কোন সীমা পরিসীমা নেই।
প্রায় সব মানুষই দেহের খোরাক মেটানোকেই জরুরী মনে করে এবং দেহের খোরাক মিটিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত মনোযোগী হতে গিয়ে এতখানি ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে মনের খোরাক মেটানোর সামর্থ্য থাকলেও সে পথে হাঁটার কথা মনে থাকে না।
আমি অনেক মানুষ দেখেছি যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে একটা বই কেনে না, দেশ ভ্রমণ করে না, একটা ভালো সিনেমা দেখে না। সারাদিন শুধু ব্যস্ত সময় কাটায় টাকা আর টাকা নিয়ে। অফিসে যায় টাকার গন্ধে, ব্যাংকে যায় টাকার গন্ধে, বাসায় ফিরে টাকার গন্ধে। আলাপ আলোচনা আড্ডা সবখানে শুধু টাকার হিসেব, আরো বেশী কিভাবে কামানো যায়, আরো উপরে কিভাবে ওঠা যায় সেই আলাপ।
মজার ব্যাপার কি, বিনোদন বলতেও শুধু টাকার প্রসঙ্গটাই উঠে আসে এদের মধ্যে। যার এক কোটি আছে সে দশ কোটির স্বপ্ন দেখে, যার দশ কোটি আছে সে একশো কোটির স্বপ্নে বিভোর। এই টাকা-টাকা করতে করতেই একদিন মাটির গর্তে নেমে যায় চিরকালের মতো। পরবর্তী বংশধরের জন্য রেখে যায় আরো টাকার স্বপ্ন।
সে যাকগে। এই লেখাটির ভূমিকাটা একটু বড় হয়ে গেল। লেখাটির মূল উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই বোঝাতে পেরেছি। উদ্দেশ্য হলো একটি প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান। আর প্রশ্নটি হলো -দেহের খোরাকের যোগানদাতাকে যদি আমরা কাজের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, তাহলে মনের খোরাকের যোগানদাতাকে কাজের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি না কেন?
প্রশ্নটাও সোজা নয়, উত্তরও সহজ হবার কথা না।
No comments:
Post a Comment