আমার বাড়ি কোনটি? যেখানে আমি বাস করি বর্তমানে? নাকি যেখানে আমার নাড়িপোতা আছে পূর্বপুরুষের রক্তে? বাড়ি বিষয়ক অনুভুতিসমূহে আমি খুবই আপেক্ষিক আবেগ অনুভুতিতে ভাসি এবং এটা সময় পরিস্থিতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। বাল্যকাল থেকেই আমি আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা ছিলাম, গ্রামের বাড়ির চেয়ে ওই এলাকার প্রতি আমার জানাশোনা বেশী, সঙ্গতকারণে আমার বাড়ির প্রতি টান বলতে আমি আগ্রাবাদের প্রতি টান বুঝতাম। ভাবতাম ওই টানটা চিরন্তন। ওখানেই কাটাবো চিরকাল। ধূ ধূ ধানখেত চিরে তৈরী হওয়া মহাসড়কটি যখন ব্যস্ত হয়ে ওঠেনি, তখনকার সবুজ নির্জনতার মাঝে বাস করে বলতাম, এখানেই আমি গড়ে ফেলেছি আমার ঠাঁই। এটা ছেড়ে নতুন কোন জায়গায় যাবো না কখনোই।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতিতে সেই বাড়িটা ছেড়ে দিতে হয় এক দুপুরে। তারপর থেকে গত ৮ বছর ধরে বাস করছি নতুন এলাকা কাজির দেউড়িতে। নতুন এলাকায় আসার পর থেকে অবাক হয়ে দেখলাম আমার বাড়ি ফেরার টানটা আর আগ্রবাদমুখী নেই। যে বাড়িতে ফেরার জন্য প্রতিদিন হন্যে হয়ে থাকতাম, সেটা এখন কাজির দেউড়ির দিকে ঘুরে গেছে। তার মানে যেখানে আমার পরিবার বাস করে সেটাই আমার বাড়ি। বাড়ি বলতে দালানকোটা নয়, বাড়ি হলো পরিবার।
'বাড়ি ফেরা'র এই ব্যাপারটা একেবারে আপেক্ষিক। আমি যখন ঢাকা যাই তখন ফেরার পথে চট্টগ্রামের সীমানায় প্রবেশ করলেই মনে হয় এই তো আমার বাড়ি চলে এসেছে। বিদেশে গেলে ফেরার পথে প্লেন যখন বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে তখনই মনে হয় এই তো, বাড়ি ফিরে এলাম। আকাশ থেকে বাংলাদেশের নদী নালা মাঠ ঘাট যাই দেখি তাকেই মনে হয় আমার অতি নিকটজন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটেছিল সড়কপথে ভারত যাবার পর। রুট ছিল চট্টগ্রাম-ঢাকা-কোলকাতা-দিল্লী-সিমলা এরকম। সিমলা থেকে ফেরার পথে একটা ঝামেলা হয়ে যায়। যেদিন ফিরবো সেদিনের ট্রেনটা মিস করে ফেলি। হোটেল ছেড়ে রাস্তায় নেমে অচেনা অজানা বন্ধুহীন অবাঙালী জায়গায় রাতের বেলা কেমন অনুভুতি হয় সেটা বোধগম্য নিশ্চয়ই। তারপর অনেক ঘাম ঝরিয়ে, হোটেল ম্যানেজারের সহায়তায় একটা গাড়ি ভাড়া করে ১০০ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে মাঝরাতে এসে যখন কালকা পৌঁছালাম, তখন মনে হলো সত্যিই বাড়ির পথে একটু হলেও এগিয়ে গেলাম। কালকা আসার পর মনটা অনেকখানি হালকা হয়ে গেল। এই তো এখান থেকে ছাড়বে দিল্লীর ট্রেন। দিল্লী আমার দেশ থেকে বহুদূরের একটা শহর। তবু মনে হলো আপাতত দিল্লীটাই আমার কাছের একটা বাড়ি। যে শহর একটুখানি চিনি, একটা গলির একটা হোটেলে আছে আমাদের ঠাঁই। সারারাত যাত্রা করে ভোরবেলা যখন দিল্লীর স্টেশানে নামলাম, মনে হলো নিজের দেশে ফিরলাম। চেনা শহর মনে হলো সুদূর দিল্লীকেও।
আবার দিল্লী থেকে যখন কোলকাতার ট্রেনে উঠলাম, তখন অন্য এক বাড়ি ফেরার আনন্দ। কোলকাতাকে দিল্লীর চেয়ে আপন লাগে। নিজের ভাষায় ইচ্ছেমতো কথা বলার স্বাধীনতা। শিয়ালদা নেমে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে যখন টেক্সির দরদাম করছি তখন মনেই হচ্ছে না আমি অন্য দেশে আছি। টেক্সিতে যখন এসে মারকুইস স্ট্রিটে এসে নামলাম, তখন মনে হলো নিজের পাড়া। এখানে মাত্র দুদিন ছিলাম। তবু হোটেল, রাস্তা, টেক্সি, ট্রাম সব যেন আপন করে ডাকলো। ওই তো কস্তুরি হোটেল, যেখানে আমার প্রিয় খাবারের আয়োজন করা থাকে। সত্যি বলতে কি আমি বাংলাদেশেও এতখানি আনন্দ পাইনি রেস্তোরায় খেয়ে। কস্তুরির খাবার ছিল অমৃতসমান। সে যেন আমার পাড়ারই হোটেল।
শুধু কী তাই। ট্রামে চড়ে দিব্যি পৌঁছে গেলাম কলেজ স্ট্রিট। প্রেসিডেন্সি কলেজ, কফি হাউস, যেন অনেক কালের চেনা। কী অসাধারণ আনন্দ বাংলায় হাসতে মাততে। তারপর কোলকাতা থেকে বাসে চেপে যখন বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছালাম তখন তো একেবারেই নিজের দেশ। বেনাপোল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গেলাম এক রাতের ভ্রমণেই।
এবার সত্যি সত্যি বাড়ি ফেরা হলো। এবং এই বাড়িটা হলো পরিবার। যেখানে পরিবার থাকে, সেটাকেই বাড়ি বলে ভাবি আমরা। পূর্বপুরুষের গ্রামকে আমরা বাড়ি বললেও পরিবারের কেউ সেখানে থাকে না বলে তাকে আমরা ঠিক 'বাড়ি'র মর্যাদা দিতে পারি না। ওখানে আমরা স্বল্প সময়ের অতিথি মাত্র। আমাদের শেকড় গেঁথে আছে পরিবারের বন্ধনেই। ওটাই আমাদের বাড়ি। ওখানেই আমরা ফিরি। বাড়ি ফেরাকে তাই পরিবারের কাছে ফেরা বলেই মনে করি।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতিতে সেই বাড়িটা ছেড়ে দিতে হয় এক দুপুরে। তারপর থেকে গত ৮ বছর ধরে বাস করছি নতুন এলাকা কাজির দেউড়িতে। নতুন এলাকায় আসার পর থেকে অবাক হয়ে দেখলাম আমার বাড়ি ফেরার টানটা আর আগ্রবাদমুখী নেই। যে বাড়িতে ফেরার জন্য প্রতিদিন হন্যে হয়ে থাকতাম, সেটা এখন কাজির দেউড়ির দিকে ঘুরে গেছে। তার মানে যেখানে আমার পরিবার বাস করে সেটাই আমার বাড়ি। বাড়ি বলতে দালানকোটা নয়, বাড়ি হলো পরিবার।
'বাড়ি ফেরা'র এই ব্যাপারটা একেবারে আপেক্ষিক। আমি যখন ঢাকা যাই তখন ফেরার পথে চট্টগ্রামের সীমানায় প্রবেশ করলেই মনে হয় এই তো আমার বাড়ি চলে এসেছে। বিদেশে গেলে ফেরার পথে প্লেন যখন বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করে তখনই মনে হয় এই তো, বাড়ি ফিরে এলাম। আকাশ থেকে বাংলাদেশের নদী নালা মাঠ ঘাট যাই দেখি তাকেই মনে হয় আমার অতি নিকটজন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটেছিল সড়কপথে ভারত যাবার পর। রুট ছিল চট্টগ্রাম-ঢাকা-কোলকাতা-দিল্লী-
আবার দিল্লী থেকে যখন কোলকাতার ট্রেনে উঠলাম, তখন অন্য এক বাড়ি ফেরার আনন্দ। কোলকাতাকে দিল্লীর চেয়ে আপন লাগে। নিজের ভাষায় ইচ্ছেমতো কথা বলার স্বাধীনতা। শিয়ালদা নেমে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে যখন টেক্সির দরদাম করছি তখন মনেই হচ্ছে না আমি অন্য দেশে আছি। টেক্সিতে যখন এসে মারকুইস স্ট্রিটে এসে নামলাম, তখন মনে হলো নিজের পাড়া। এখানে মাত্র দুদিন ছিলাম। তবু হোটেল, রাস্তা, টেক্সি, ট্রাম সব যেন আপন করে ডাকলো। ওই তো কস্তুরি হোটেল, যেখানে আমার প্রিয় খাবারের আয়োজন করা থাকে। সত্যি বলতে কি আমি বাংলাদেশেও এতখানি আনন্দ পাইনি রেস্তোরায় খেয়ে। কস্তুরির খাবার ছিল অমৃতসমান। সে যেন আমার পাড়ারই হোটেল।
শুধু কী তাই। ট্রামে চড়ে দিব্যি পৌঁছে গেলাম কলেজ স্ট্রিট। প্রেসিডেন্সি কলেজ, কফি হাউস, যেন অনেক কালের চেনা। কী অসাধারণ আনন্দ বাংলায় হাসতে মাততে। তারপর কোলকাতা থেকে বাসে চেপে যখন বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছালাম তখন তো একেবারেই নিজের দেশ। বেনাপোল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গেলাম এক রাতের ভ্রমণেই।
এবার সত্যি সত্যি বাড়ি ফেরা হলো। এবং এই বাড়িটা হলো পরিবার। যেখানে পরিবার থাকে, সেটাকেই বাড়ি বলে ভাবি আমরা। পূর্বপুরুষের গ্রামকে আমরা বাড়ি বললেও পরিবারের কেউ সেখানে থাকে না বলে তাকে আমরা ঠিক 'বাড়ি'র মর্যাদা দিতে পারি না। ওখানে আমরা স্বল্প সময়ের অতিথি মাত্র। আমাদের শেকড় গেঁথে আছে পরিবারের বন্ধনেই। ওটাই আমাদের বাড়ি। ওখানেই আমরা ফিরি। বাড়ি ফেরাকে তাই পরিবারের কাছে ফেরা বলেই মনে করি।
No comments:
Post a Comment