জগদীশ চন্দ্র বসু যে নিউটন ও গ্যালিলিওর সমতূল্য বিজ্ঞানী ছিলেন তাঁর জীবদ্দশাতেই বলেছিল লণ্ডনের ডেইলি মেইল ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন নিজের মুখেই বলেছেন - 'জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনোটির জন্যই বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।'
কিন্তু শুরুর পথটা খুবই জটিল বাধাবিঘ্নে পরিপূর্ণ ছিল। স্বদেশে পাত্তা পাননি, বিদেশেও পেয়েছেন অঢেল অবজ্ঞা। তবু তিনি থামেননি। শিক্ষাজীবনটাও ছিল অনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবমান। বিএ পাশ করার পর তিনি চেয়েছিলেন আইসিএস পাশ করে জজ ম্যাজিস্ট্রেট হবেন বাপের মত। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। কিন্তু পিতা চাইলেন তিনি কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়ে দেশ সেবা করবেন। পরে ডাক্তারে পড়ার উদ্দেশ্যেই ইংল্যাণ্ডে গিয়ে অসুস্থতার জন্য ডাক্তারিবিদ্যায় ইস্তফা দিয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন এবং লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন ১৮৮৫ সালে।
শিক্ষকতা করলেও তাঁর লক্ষ্য ছিল অনেক দূরের দিগন্তে। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণাকর্ম শুরু করেন অভিনব কিছু বিষয়ে যা ইতিপূর্বে কোন ভারতীয় করতে সাহস করেনি। বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিষয়ে তাঁর গবেষণাকর্মের হাতিয়ার ছিল নিজের বেতনের টাকায় নিয়োজিত দেশীয় মিস্ত্রিদের হাতে গড়া যন্ত্রপাতি। সেই গবেষণার ফলাফল যখন ইংল্যাণ্ড পর্যন্ত পৌঁছায় তখন প্রথমদিকে তা কিছু বাধার সম্মুখীন হলেও পরবর্তীতে খোদ রয়েল সোসাইটি তাঁকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। তাঁর বক্তৃতা শুনতে লাঠিতে ভর দিয়ে চলে এসেছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড ক্যালভিন। এই একশো বছর পরও সারা দুনিয়াতে টেলিকমিউনিকেশনের যেসব অভিনব সুযোগ সুবিধায় বিস্তৃতি দেখতে পাই, তার ভিত্তি তৈরী করে দিয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু। আমি নিশ্চিত অধিকাংশ বাঙালী তাঁর এই কৃতিত্ব সম্পর্কে জানে না। তাঁর নামটা 'গাছের প্রাণ আবিষ্কারক' ধরণের ভাসা ভাসা ধারণায় সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি কিন্তু গাছের প্রাণ আবিষ্কার করেননি, ওটা বহু শত বছর আগ থেকেই মানুষ জানতো। তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা মূলত গাছের অনুভূতি জগতের বিষয় আশয় সম্পর্কিত ব্যাপার। গাছের বৃদ্ধি পরিমাপ করার একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন এই অনুভূতিগুলো প্রমাণ করার জন্য। যন্ত্রটির নাম ক্রেসকোগ্রাফ (Crescograph) । এটা দিয়ে উদ্ভিদের অতি সুক্ষ্ণ পরিবর্তন/ বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায়। এক ইঞ্চির এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ পরিবর্তনও এই যন্ত্রে দৃশ্যমান হয়।
তিনি একবার একটা গাছ পরীক্ষা করার সময় দেখতে পেলেন যে গাছটি মিনিটে এক ইঞ্চির লক্ষ ভাগের ৪২ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি গাছটিকে একটা বেত দিয়ে আঘাত করলেন। সাথে সাথে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। এবং সেই আঘাত ভুলে আবার বৃদ্ধি শুরু হতে আধ ঘন্টা সময় লেগেছিল। আরেকবার একটা গাছকে সুঁই দিয়ে গুঁতো দিয়ে দেখলেন গাছটার বৃদ্ধি এক চতুর্থাংশে নেমে গেছে। এক ঘন্টা পরও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। একইভাবে ছুরি দিয়ে চিরে দেখলেন গাছের বৃদ্ধি আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এইসব বিচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা ওই ক্রেসকোগ্রাফ দিয়েই করতেন তিনি। এই যন্ত্র ছাড়াও আরো উদ্ভিদের নানান বিষয় পরীক্ষা করার জন্য অনেক বিচিত্র যন্ত্রপাতি তৈরী করেন দেশীয় কারিগর দিয়েই।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি কিন্তু গাছের প্রাণ আবিষ্কার করেননি, ওটা বহু শত বছর আগ থেকেই মানুষ জানতো। তিনি যা আবিষ্কার করেছিলেন তা মূলত গাছের অনুভূতি জগতের বিষয় আশয় সম্পর্কিত ব্যাপার। গাছের বৃদ্ধি পরিমাপ করার একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন এই অনুভূতিগুলো প্রমাণ করার জন্য। যন্ত্রটির নাম ক্রেসকোগ্রাফ (Crescograph) । এটা দিয়ে উদ্ভিদের অতি সুক্ষ্ণ পরিবর্তন/ বৃদ্ধি পরিমাপ করা যায়। এক ইঞ্চির এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ পরিবর্তনও এই যন্ত্রে দৃশ্যমান হয়।
তিনি একবার একটা গাছ পরীক্ষা করার সময় দেখতে পেলেন যে গাছটি মিনিটে এক ইঞ্চির লক্ষ ভাগের ৪২ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি গাছটিকে একটা বেত দিয়ে আঘাত করলেন। সাথে সাথে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায়। এবং সেই আঘাত ভুলে আবার বৃদ্ধি শুরু হতে আধ ঘন্টা সময় লেগেছিল। আরেকবার একটা গাছকে সুঁই দিয়ে গুঁতো দিয়ে দেখলেন গাছটার বৃদ্ধি এক চতুর্থাংশে নেমে গেছে। এক ঘন্টা পরও সে স্বাভাবিক হতে পারেনি। একইভাবে ছুরি দিয়ে চিরে দেখলেন গাছের বৃদ্ধি আরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এইসব বিচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা ওই ক্রেসকোগ্রাফ দিয়েই করতেন তিনি। এই যন্ত্র ছাড়াও আরো উদ্ভিদের নানান বিষয় পরীক্ষা করার জন্য অনেক বিচিত্র যন্ত্রপাতি তৈরী করেন দেশীয় কারিগর দিয়েই।
আমার বিশ্বাস জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কার ইত্যাদি নিয়ে উপরে উল্লেখ্য বিষয়ে অনেকেরই আরো ভালো জানাশোনা আছে। আমি তাই আবিষ্কার বিষয়ে না বলে তাঁর লেখা একমাত্র বাংলা বইটি নিয়ে কিছু আলোচনা করবো। এই বই জগদীশচন্দ্র বসুর জীবন, দর্শন, চরিত্র, দেশভাবনা ইত্যাদি সম্পর্কে আরো নতুন কিছু বিষয় আমাদের অবগত করে।
'অব্যক্ত' - নামের বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২১ সালে। বাংলাদেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পুনর্মুদ্রনের সুবাদে বইটি পড়ার সুযোগ হলো সম্প্রতি। বইটি কিনেছিলাম কিছু না জেনেই। ভেবেছিলাম একজন বিজ্ঞানীর কিছু কাটখোট্টা প্রবন্ধের সংকলন।
কিন্তু পড়তে শুরু করার পর টের পেলাম, বইটি না কিনলে অনন্য সুন্দর কিছু অনুভূতি থেকে বঞ্চিত থাকতাম। তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, একজন সুলেখক, সুরসিক সাহিত্যিক, দার্শনিক মানবও বটে। সহজ গদ্যে বিজ্ঞানের বিচিত্র প্রবন্ধ যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন 'পলাতক তুফান' নামক চমকপ্রদ স্যাটায়ারও। তাঁর যৌবনে ভাগীরথির উৎস সন্ধানে তিনি যে পর্বতারোহনের চেষ্টাও করেছেন সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনাও অভিনব।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি 'অগ্নিপরীক্ষা' রচনাটি পড়ে। 'বলভদ্র' নামে এক নেপালী সেনানায়ক ১৮১৪ সালে মাত্র তিনশোজন অনাহারী সৈন্য দিয়ে কিভাবে একটি দুর্গ এক মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন কয়েক হাজার কামান সজ্জিত বৃটিশ সৈন্যের মোকাবেলা করে সেই বর্ণনা শিউরে ওঠার মতো। এই বিষয়ে আলাদা একটি লেখা দেয়া হবে পরবর্তীতে। বলভদ্রের এই ঘটনা কোনদিন জানা হতো না আমার, যদি জগদীশ চন্দ্র বসু না লিখতেন, কিংবা এই বইটি না পড়তাম।
'অব্যক্ত' - নামের বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২১ সালে। বাংলাদেশে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পুনর্মুদ্রনের সুবাদে বইটি পড়ার সুযোগ হলো সম্প্রতি। বইটি কিনেছিলাম কিছু না জেনেই। ভেবেছিলাম একজন বিজ্ঞানীর কিছু কাটখোট্টা প্রবন্ধের সংকলন।
কিন্তু পড়তে শুরু করার পর টের পেলাম, বইটি না কিনলে অনন্য সুন্দর কিছু অনুভূতি থেকে বঞ্চিত থাকতাম। তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, একজন সুলেখক, সুরসিক সাহিত্যিক, দার্শনিক মানবও বটে। সহজ গদ্যে বিজ্ঞানের বিচিত্র প্রবন্ধ যেমন লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন 'পলাতক তুফান' নামক চমকপ্রদ স্যাটায়ারও। তাঁর যৌবনে ভাগীরথির উৎস সন্ধানে তিনি যে পর্বতারোহনের চেষ্টাও করেছেন সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনাও অভিনব।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি 'অগ্নিপরীক্ষা' রচনাটি পড়ে। 'বলভদ্র' নামে এক নেপালী সেনানায়ক ১৮১৪ সালে মাত্র তিনশোজন অনাহারী সৈন্য দিয়ে কিভাবে একটি দুর্গ এক মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন কয়েক হাজার কামান সজ্জিত বৃটিশ সৈন্যের মোকাবেলা করে সেই বর্ণনা শিউরে ওঠার মতো। এই বিষয়ে আলাদা একটি লেখা দেয়া হবে পরবর্তীতে। বলভদ্রের এই ঘটনা কোনদিন জানা হতো না আমার, যদি জগদীশ চন্দ্র বসু না লিখতেন, কিংবা এই বইটি না পড়তাম।
তাঁর বইটিতে আরো বিচিত্র বিষয়ে অনেক লেখা আছে স্বল্প পরিসরেই। সবটুকু আলোচনা করা সম্ভব না। শুধু বিজ্ঞানের গবেষণা বিষয়ক একটি অংশ এখানে উদ্ধৃত করছি পাঠকের জন্য-
'সর্বদা শুনিতে পাওয়া যায় যে, আমাদের দেশে যথোচিত উপকরণবিশিষ্ট পরীক্ষাগারের অভাবে অনুসন্ধান অসম্ভব।........পরীক্ষাসাধনে পরীক্ষাগারের অভাব ব্যতীত আরো বিঘ্ন আছে। আমরা অনেক সময়ই ভুলিয়া যাই যে, প্রকৃত পরীক্ষাগার আমাদের অন্তরে। সেই অন্তরতম দেশে অনেক পরীক্ষাই পরীক্ষিত হইতেছে.......নিরাসক্ত একাগ্রতা যেখানে নাই সেখানে বাহিরের আয়োজনও কোন কাজে লাগে না। কেবল বাহিরের দিকে যাহাদের মন ছুটিয়া যায়, সত্যকে লাভ করার চেয়ে দশজনের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যাহারা লালায়িত হইয়া উঠে, তাহারা সত্যের দর্শন পায় না।....দ্রুতবেগে খ্যাতিলাভ করিবার লালসায় তাহারা লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়া যায়।'
তাঁর এই পর্যবেক্ষণ বাঙালীর চরিত্রের জন্য এখনো শতভাগ প্রযোজ্য। বাঙালী এই মহান চরিত্রের সত্যতা বুকে ধারণ করিয়া শত শত বছর ধরিয়া অপরিবর্তনীয় রূপে বিরাজ করিতেছে।
No comments:
Post a Comment