এক.
আজকাল তোমাকে অনেক বেশী করে খুঁজি। অনুপস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পরেও তোমাকে কোথাও কোথাও দেখতে ইচ্ছে করে। কোথাও কোথাও পেতে ইচ্ছে করে। মনে পড়ে সেই সন্ধ্যাগুলো। যেখানে অনেক গান ছিল, অনেক গীত ছিল, আনন্দ ছিল অঢেল। জীবনকে তুমি যেভাবে উপভোগ করেছিলে, মাঝে মাঝে আমারো ইচ্ছে করে তোমার মতো উপভোগ করতে। আমাকে তুমি যেমন বইয়ের জগত চিনিয়েছিলে তেমনি চিনিয়েছিলে গানের জগত। গানের জগতটা বোধকরি একটু বেশীই ছিল তোমার জীবনে।
এত বছর পর তোমাকে খুঁজতে গিয়ে আমি তাই গানগুলোতে ফিরে যাই বারবার। বহুবার শোনা গানগুলো বারবার শুনে তোমাকে অনুভব করার চেষ্টা, তোমার অনুভুতি বোঝার চেষ্টা। তোমাকে আমি এভাবে খুঁজিনি আগে কখনো। এখন বয়স বেড়ে যেতে যেতে যখন সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি, তখন মনে হয় আমি তোমাকে আগের চেয়ে বেশী বুঝতে পারছি, তোমার নৈকট্য অনুভব করছি।
আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় তোমার গানের সময়গুলো। তোমার মতো এত গান পাগল মানুষ আমি খুব বেশী দেখিনি। অলস অবসরের প্রায় সবটুকু সময় গানের সাথেই কাটতো তোমার। বোঝার বয়স হবার আগ থেকেই তাই তোমার গানের জগত আমাকেও স্পর্শ করেছিল।
একটু বড় হবার পর আমার নিজের পছন্দের গানের জগত সৃষ্টি হয়। তখন তোমার গান, আমার গান এরকম একটা বিভক্তিতে আমরা নিজস্ব পছন্দের জগতে আলাদা হতে শুরু করি। আমি একটু আধুনিকে, তুমি একটু পুরোনো দিনে। আঠারো ছোঁবার পর আমি প্রথমবারের মতো নিজের পছন্দের গান কিনতে শুরু করি। তখন ছিল ক্যাসেট যুগ। তোমার শত শত ক্যাসেটের সংগ্রহ ছিল দেশ বিদেশের। সবচেয়ে
বেশী ছিল Thomsun Electronics নামে একটা ব্র্যাণ্ডের Sony কিংবা TDK ক্যাসেট।
আজকাল তোমাকে অনেক বেশী করে খুঁজি। অনুপস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পরেও তোমাকে কোথাও কোথাও দেখতে ইচ্ছে করে। কোথাও কোথাও পেতে ইচ্ছে করে। মনে পড়ে সেই সন্ধ্যাগুলো। যেখানে অনেক গান ছিল, অনেক গীত ছিল, আনন্দ ছিল অঢেল। জীবনকে তুমি যেভাবে উপভোগ করেছিলে, মাঝে মাঝে আমারো ইচ্ছে করে তোমার মতো উপভোগ করতে। আমাকে তুমি যেমন বইয়ের জগত চিনিয়েছিলে তেমনি চিনিয়েছিলে গানের জগত। গানের জগতটা বোধকরি একটু বেশীই ছিল তোমার জীবনে।
এত বছর পর তোমাকে খুঁজতে গিয়ে আমি তাই গানগুলোতে ফিরে যাই বারবার। বহুবার শোনা গানগুলো বারবার শুনে তোমাকে অনুভব করার চেষ্টা, তোমার অনুভুতি বোঝার চেষ্টা। তোমাকে আমি এভাবে খুঁজিনি আগে কখনো। এখন বয়স বেড়ে যেতে যেতে যখন সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি, তখন মনে হয় আমি তোমাকে আগের চেয়ে বেশী বুঝতে পারছি, তোমার নৈকট্য অনুভব করছি।
আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় তোমার গানের সময়গুলো। তোমার মতো এত গান পাগল মানুষ আমি খুব বেশী দেখিনি। অলস অবসরের প্রায় সবটুকু সময় গানের সাথেই কাটতো তোমার। বোঝার বয়স হবার আগ থেকেই তাই তোমার গানের জগত আমাকেও স্পর্শ করেছিল।
একটু বড় হবার পর আমার নিজের পছন্দের গানের জগত সৃষ্টি হয়। তখন তোমার গান, আমার গান এরকম একটা বিভক্তিতে আমরা নিজস্ব পছন্দের জগতে আলাদা হতে শুরু করি। আমি একটু আধুনিকে, তুমি একটু পুরোনো দিনে। আঠারো ছোঁবার পর আমি প্রথমবারের মতো নিজের পছন্দের গান কিনতে শুরু করি। তখন ছিল ক্যাসেট যুগ। তোমার শত শত ক্যাসেটের সংগ্রহ ছিল দেশ বিদেশের। সবচেয়ে
বেশী ছিল Thomsun Electronics নামে একটা ব্র্যাণ্ডের Sony কিংবা TDK ক্যাসেট।
[এই ছবিগুলো ইন্টারনেট থেকে নেয়া। তোমার ক্যাসেটের ছবি তোলা হয়নি কোনদিন। তবু সেগুলো এরকমই ছিল বলেই ছবিগুলো দেয়া]
আমি কখনো অত দামী ক্যাসেট কিনিনি। আমার জগত সীমাবদ্ধ ছিল ৩৫ টাকার সস্তা দেশীয় ক্যাসেটে। কয়েক মাস পরেই ফিতা আটকে কিংবা ঘড়ঘড় শব্দ করে যার জীবনাবসান ঘটতো। তবু আমি তোমার কাছ থেকে আলাদা অবস্থান নিয়ে আধুনিক ক্যাসেটের সংগ্রহ বাড়িয়ে চলছিলাম। শেষ পর্যন্ত তোমার এক চতুর্থাংশেও পৌঁছাতে পারিনি।
তুমিই জিতে গিয়েছিলে। আবার, আমি হেরে গিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হইনি। কেননা আমি তোমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে যাইনি, আমি কেবল চেয়েছিলাম নিজের জগতে একটু স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকতে। তারুণ্যের সেটা স্বাভাবিক ধর্ম। সেই স্বাতন্ত্র্য অবস্থানের কিছুটা যে পেরেছিলাম, সে তোমার ছায়াটা ছিল বলেই। তুমি যেদিন সব আমার জন্য রেখে চিরতরে চলে গেলে সেদিন আমি তোমার আমার দুই পছন্দের যোগফলের মালিক হয়েও বিষন্নতার সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিলাম।
সে যাক। যে কথা তুমি জানো না। তোমার-আমার আমাদের এত বছরের আগলে রাখা সমস্ত ক্যাসেটের সংগ্রহ একদিনের আকস্মিক কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গিয়েছিল। তবু ভেজা সেই নষ্ট ক্যাসেট আরো বহুদিন বয়ে বেরিয়েছিলাম।
তোমার সাথে বসে আর কখনো গান শোনা হবে না, বড় হবার পর, আলাদা পছন্দের জগত হবার পর কখনো শুনিনি। কবে শেষবার শুনেছি ভুলেই গেছি। তবে তখন যে গানগুলো বুঝিনি, ভালোবাসিনি, এখন পরিণত বয়সে এসে সেই গানগুলো আমার কানে সুরের বেদনা জাগায়, বুকের ভেতরটা তোমার অভাবের কষ্টের আগুনে পোড়ায়। সেই গানগুলো আমি খুঁজে পেয়েছি অন্য এক মাধ্যমে। যে প্রযুক্তির কথা তুমি জানার আগেই চলে গেছো, সেই প্রযুক্তির নাম ইন্টারনেট। সেই মাধ্যমটা ইউটিউব।
দুই.
তোমার প্রধান পছন্দ ছিল হিন্দি গান। তারপর বাংলা। তারপর ইংরেজী। আমাদের ইংরেজি গানের সংগ্রহ ছিল খুবই কম। শুধু মনে আছে ABBA আর Boney M নামের দুটো ব্যান্ডের কথা। হিন্দি গানের কথাই বলবো আজ। ছেলেবেলায় এই গানগুলো শুনতে শুনতে কান পচে গেছে বলতাম। সেই গানগুলো এত বছর পর ইউটিউবে আবিষ্কার করার পর মনে হলো একটা হীরার খনি আবিষ্কার করেছি। যে গানগুলোর শুধু অডিও শুনে বড় হয়েছি, সেই গানগুলো জলজ্যান্ত ভিডিও হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠা কী যে আনন্দের ব্যাপার তা বোঝানো মুশকিল। হ্যাঁ, আমার সবগুলো গানের কথা মনে নেই। যে কটা মনে আছে সে কটা গান আমি এখন প্রাণভরে শুনছি, ডাউনলোড করছি। আমার পাগলামি দেখে পরিবার বলছে আমি হঠাৎ করে বুড়ো হয়ে গেলাম কেন? হিসেব করে দেখলাম আমি সত্যি সত্যি তোমার সেই বয়সের কাছাকাছি চলে এসেছি। যে বয়সে তুমি এইসব গান শুনতে ভালোবাসতে, আমিও সেই বয়সে এসে ওই গানগুলোর প্রেমে পড়ে গেছি। যারা বলছে আমি বুড়ো হয়ে গেছি, তারা বোঝে না আমি আসলে আমার কৈশোরে ফিরে গেছি। আমার কৈশোরের স্মৃতিমগ্নতাই আমার এই গান প্রিয়তার অন্যতম কারণ।
সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে এই গান দুটোর কথা। এই গান দুটো তুমি সবচেয়ে বেশীবার বাজিয়েছো। এখনো আমার কানে বাজছে।
এই গানটা ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'মালহার' সিনেমার
https://www.youtube.com/watch? v=shjfQSqswDU
এই গানটা ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'তাজমহল' সিনেমার
https://www.youtube.com/watch? v=PEUtLHYM35s
এই গানটা ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'মালহার' সিনেমার
https://www.youtube.com/watch?
এই গানটা ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'তাজমহল' সিনেমার
https://www.youtube.com/watch?
আরো অসংখ্য গান ছিল, গজল ছিল। তবে বেশীরভাগই সিনেমার গান। গজলের মধ্যে ছিল জগজিত সিং, চিত্রা সিং, অনুপ ঘোষাল, অনুপ জলোটা, গোলাম আলী, মেহেদী হাসান ইত্যাদি। আমার খোঁজাখুঁজি আপাততঃ সীমাবদ্ধ আছে হিন্দি গানে যার কিছু গান মাত্র খুঁজে পেয়েছি।
কাভি কাভি
তুমহি মেরে মন্দির
মেরে স্বপ্নকি রানী
হাম ভুল গেয়ি
মেরা জীবন কোরা কাগজ
ইয়ে কাঁহা আগেয়ি
নীলা আসমান
লাগ যা গলে
বেছে এই কয়টি গান নির্বাচিত করলাম এই কারণে যে গানগুলো আমার নিজেরও খুব পছন্দের। আরো গান খুঁজে পেলে যোগ করা হবে পরবর্তীতে।
[অসমাপ্ত ....]
No comments:
Post a Comment