বর্তমান সরকার ব্যর্থ হতে যাচ্ছে। কিসে ব্যর্থ? লক্ষ্য অর্জনে। কি লক্ষ্য? দুর্নীতি দমন? রাজনীতি দমন? সুস্থ রাজনৈতিক ধারা আনয়ন? সামাজিক নিরাপত্তা বিধান? অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন? নাকি বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন?
বাঙালী বা বাংলাদেশীরা খুব বেশী আবেগপ্রবন জাতি। আমরা খুব তাড়াতাড়ি অভিভুত হই। খুব তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়তে পারি, খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে পারি, আবার খুব তাড়াতাড়ি তালাকও দিতে পারি। মত বদলাতে আমাদের খুব সময় লাগে না। যখন প্রেমে পড়ি বা বিয়ে করি, তখনও যুক্তি থাকে, আবার যখন প্রেমিকার মুখে এসিড মারি কিংবা বউকে তালাক দেই তখনও যুক্তি থাকে। মোট কথা আমরা যুক্তি ছাড়া কোন কাজ করি না। আমরা এক যুক্তিবাজ জাতি।
১৯৭০ সালে ৯৮ ভাগ ভোট দিয়ে শেখ মুজিবকে অবিসংবাদী করে ফেলি। ১৯৭১ সালে তারই দেয়া শ্লোগান নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি, দেশ স্বাধীন করি- শেখ মুজিব হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আবার সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই মানুষই হয়ে যায় ‘জুতার ফিতা মুজিব্যা চোরা। মার শালারে গুষ্টিশুদ্দা মার।’ মেরে শেষ করলাম সব ১৫ আগষ্টে, ৪ নভেম্বরে, ৭ নভেম্বরে। জাতি মুক্তি পেলো অন্ধকার যুগ থেকে। কেন এমন হল? যুক্তি আছে বহু। তবে একটার কথা বলি। মেজর ডালিম সুন্দর একটা ওয়েব সাইট খুলেছে বিদেশে বসে। লক্ষ-কোটি যুক্তি পাবেন কেন শেখ মুজিবকে নিকাশ করতে হলো। কারন মুজিব মোটেও স্বাধীনতা চায়নি। ৭১-যুদ্ধ লাগাইছিল ভারতের হাতে পাকিস্থানের পূর্বাংশকে তুলে দেয়ার জন্য। র’এর হেডকোয়ার্টারে ডালিমের পদচারনা দেখবেন। খন্দকার মুশতাক, মেজর ডালিম ইনডিয়ায় বসে ১৯৭১ সালেই সব জানতো, শুধু ট্রয়ের ঘোড়ার মতো অপেক্ষায় ছিল ১৯৭৫-এর। এমন সুন্দর লেখা, পড়ে আমি নিজেও প্রেমে পড়ে গেলাম ডালিমের। যুক্তি বলে কথা!
এরশাদের লাম্পট্যের কাহিনী সারা দেশ বাসী জানে। কিন্তু রংপুরে যান, দেখবেন লোকে কী বলে। এরশাদের নারীপ্রীতি নিয়ে আলাপ প্রসংগে আমাকে একবার রংপুরের এক রিকসাওয়ালা বলছিল, “আমাগো নবীওতো ১৩টা বিয়া করছে, এরশাদ এমন কি খারাপ করছে। রাজা-বাদশা-রা এমন করতেই পারে।” আমি লা-জওয়াব। কিন্তু যুক্তি বলে কথা। এই রিক্শাওয়ালাতো জনগনেরই অংশ। এরকম খন্ড খন্ড জনতা নিয়েই তো আমাদের বাংলাদেশ। হাজার কোটি টাকা লোপাট করা তারেক রহমান ২০১৪ সালে যদি ৭০% ভোট পেয়ে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয় অবাক হবেন? আমি হবো না। এটা একটা ছেলেমানুষি ভবিষ্যতবানী তবু বলি কিভাবে ঘটনা হতে পারে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারে। জেতার পর পুরোনো স্বভাবের খাই খাই মার মার করে পুরা দেশটাকে আবার অস্থির বানাবে, শেখ মুজিবরে ৩য় বার হত্যা করবে, আর এই ফাঁকে তারেক রহমান আবার মহানায়ক হয়ে যাবে। তার বিরুদ্ধে করা এই সরকারের প্রতিটি মামলা একেকটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার গোলাপ হয়ে গলায় ঝুলবে। এই ইতিহাস এমাজউদ্দিন না লিখলেও শফিক রেহমান নিশ্চয়ই লিখবেন। দেখবেন অনেক মজার মজার যুক্তি।
২০০৬ এর প্রচন্ড অস্থিরতার পর ২০০৭-এ যখন ১/১১ ঘটলো, রাজনীতিতে দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। আ.লীগের শিবিরে বিজয়কেতন, হাসি-খুশী চেহারা নিয়ে তাদের বঙ্গভবনে গমন, আর সুমধুর বচন - এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। অন্যদিকে বিএনপি’র ঘর পোড়া গেল, বাড়া ভাতে দিলো ছাই। গোমড়ামুখে তারা বলে, দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে ২২ জানুয়ারীর সুষ্ঠু নির্বাচন বানচাল হয়ে গেল- তাইতো দেশ আজ রসাতলে গেল। খুবই যুক্তির কথা।
এই সরকার কেন এল, কাকে মারতে- কাকে বাঁচাতে- কাকে জাতে তুলতে এল আমরা জানি না। আমরা আম জনতা। ২০০৬-এর শেষভাগে যখন আমরা ওদেরকে বলছিলাম “দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর….” কিন্তু কিছুতেই কেউ শুনছিল না তখন জোকের মুখে চুন পড়ার মতো ১/১১ ঘটলো। আম জনতা খুশী হলাম। কি এজেন্ডা, কার এজেন্ডা এসব আমার মাথা ব্যথা না। আমরা কেবল প্রিয় পত্রিকায় ভাবগুরুদের তাত্ত্বিক প্রবন্ধে শুঁকে শুঁকে লেখা ভবিষ্যত বানী পড়ি আর সবজান্তার ভাব ধরে বলি - হেন কেন হয়েছে, তেন কেন হয়েছে। আসলে আমরা ঘোড়ার ডিম জানি।
No comments:
Post a Comment