১৯৯৭ সালের কথা। ইন্টারনেট তখনো নতুন ধারনা বাংলাদেশে । পুরো অফিসে একজনের পিসিতেই ইন্টারনেট কানেকশান ছিল। ভাগ্যবানটা আমি। তখনো ইন্টারনেটে কোন কাজ নেই আমাদের। ডায়াল-আপ কানেকশানটা নেয়া হয়েছিল মুলতঃ মেইল করার জন্যই। মিনিট হিসেবে বিল আসতো। খুব ব্যয়বহুল। শুধু কানেকশান নিতেই লেগেছিল দশ হাজার টাকা। মডেমটাও আলাদা কিনতে হয়েছিল। মেইল চেকের ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইন্টারনেটে বিশ্ব ঘুরে দেখার চান্স নিতাম।
প্রথম প্রথম এড্রেস বারে এটা সেটা লিখে নতুন নতুন ওয়েব সাইটে ঢুকে রীতিমতো শিহরিত প্রতিদিন। ইয়াহুতেই বেশী যাওয়া হতো সার্চ করার জন্য। সেকেন্ডেই লক্ষ লক্ষ তথ্য চলে আসতো আর বিস্মিত প্রতিদিন। সেদিন হঠাৎ ইচ্ছে হলো হোয়াইট হাউসে ঢুকে দেখি কেমন লাগে। আমার টেবিলের পাশ দিয়ে তখন বাংলাদেশ সফরে আসা কোম্পানীর বড়কর্তা যাচ্ছিলেন, উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী করছো? বিজ্ঞের মতো বললাম হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে আমেরিকার অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থাটা জানার চেষ্টা করছি। সাথে সাথে দাড়িয়ে পড়লেন তিনি। কারন আমেরিকার সাথে ওনার বিশাল বানিজ্য। বললেন, বেশ মজা তো? ইন্টারনেট থাকাতে দুনিয়ার তাবৎ খবর নিমেষেই পেয়ে যাচ্ছ। দেখো লেটেস্ট কী পাওয়া যায়।
আমি টাইপ করলাম www.whitehouse.com তারপর দিলাম ক্লিক। লাইন খুব ধীর। আস্তে আস্তে আসছে। পেইজ লোডিং.....। আমরা দুজন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে। ইন্টারনেটের সুবাদে কোম্পানীর সবচেয়ে বড় কর্তার কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি রীতিমতো পুলকিত তখন।
প্রথমে হেডিংটা আসলো, দেখলাম Welcome to White House, তারপর আস্তে আস্তে দেখলাম ক্লিনটনের মাথার ছবি। তারপর দেখি হিলারীর মতো এক মহিলা। ওমা, হিলারী স্নানের পোষাকে কেন? হটাৎ কান গরম হতে লাগল যখন দেখলাম হিলারীর উন্মুক্ত বুকের বিশেষ দুটি জায়গায় দুটি বাটন দিয়ে বলা আছে click here to enter আর click here to exit । নীচের অংশের কথা নাইবা বললাম। তাছাড়া পুরো মনিটর জুড়ে আরো বিবস্ত্র সুন্দরীদের পসরা। আড়চোখে বড়কর্তার দিকে তাকিয়ে আরো ঘেমে উঠলাম সেই মধ্য মাঘেও। তীব্র দুটি চোখ একবার আমার দিকে আর স্ক্রীনের দিকে তাকাচ্ছে। আমি বিভ্রান্ত। কি বলবো বুঝতে পারছি না। নিশ্চয় ভুল ক্লিক করে ক্লিনটনের হেরেমে ঢুকে গেছি। কিন্তু কর্তাকে তো একটা বুঝ দিতে হয়। তাড়াতাড়ি বললাম, "সরি স্যার মে বি আই এন্টারড দ্য প্রাইভেট প্লেস অব মি.ক্লিনটন বাই মিসটেক। লেট মি চেক উইথ দেয়ার প্রটোকল অফিস প্লিজ।" কাঁপা কাঁপা হাতে তাড়াতাড়ি লগআউট করে মুক্তি পেলাম। বড়কর্তা বিশ্বাস করলো কি না জানিনা, তক্ষুনি গট গট করে উঠে চলে গেল। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম - সর্বনাশ ঠেকানো গেল না বোধহয়। আমেরিকার অর্থনীতির খবর লাগাতে গিয়ে আমার চাকরীর গেরো ফসকে গেল আজ।
পরে জেনেছি তখন হোয়াইট হাউসের নামে ওটা ছিল একটা স্যাটায়ার ধরনের পর্ন ওয়েব সাইট। হোয়াইট হাউসের মুল ওয়েবসাইটের সাথে পার্থক্য ছিল gov আর com এর। এই সাইটের উদ্যোক্তা ছিলেন Ransom Scott নামে এক ভদ্রলোক। বিল ক্লিনটন তাকে এক পত্রে জানান "... we do not challenge your right to pursue it or to exercise your First Amendment rights, but we do challenge your right to use the White House, the President, and the First Lady as a marketing device. For adult internet users, that device is, at the least, part of a deceptive scheme. For younger Internet users, it has more disturbing consequences." কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনেকদিন পর্যন্ত ছিল সেই আদিম রূপেই।
পরবর্তীতে অবশ্য সেই ওয়েবসাইটের বিবর্তন হয়েছে অনেকবার। সাইটটির বিস্তারিত এবং বর্তমান অবস্থাটা জানার জন্য ক্লিক করুন http://en.wikipedia.org/wiki/Whitehouse.com
হোয়াইট হাউস ভ্রমনের সেই ঘটনা মনে পড়লে এখনো একা একা হাসি।
No comments:
Post a Comment