বন্ধু মাবু বিশ্বপ্রেমিক ধরনের ছেলে। যেখানেই বাসা নিত তার আশেপাশে কারো না কারো সাথে মন দেয়া নেয়া হয়ে যেতো। নতুন এলাকায় বাড়ী করে সবেমাত্র উঠেছে। পাড়া-প্রতিবেশী অত বেশী নেই। কাছাকাছি একটা মাত্র দোতলা বাড়ী আছে। বাড়ীর মালিক দোতলায় থাকেন সপরিবারে। তাঁর এক পুত্র বাপ্পী এক কন্যা লুনা। মাবুর নজর কাড়লো লুনা। যথারীতি চুপি চুপি মন দেয়া নেয়ার চেষ্টা শুরু হলো। কিন্তু মেয়ের বাবার অতীব কড়াকড়িতে প্রেমটা ঠিকমতো গড়ে উঠতে পারছিল না। ফলে রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে যায় তখন দুজনে ছাদে উঠে চিঠি চালাচালি করে। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য চিঠি বিনিময়টা হতো অভিনব পদ্ধতিতে । দুজনের বাড়ীর ছাদ কাছাকাছি ছিল। ওরা চিঠি লিখে একটা ছোট ইট পাথরের মধ্যে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে মারতো একে অন্যের ছাদে। এ কাজগুলো করা হতো রাত বারোটার পর। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় দুজনের প্রেম মোটামুটি ভিত্তিস্থাপনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।
একদিন ঝামেলা হয়ে গেল। মাবুর চিঠিটা অল্পের জন্য ফসকে গিয়ে ছাদের কার্নিশে বাড়ি খেয়ে নীচে পড়ে গেলো। ওদিকে নীচে তখন এক চোর লুনাদের একতলায় চুরির ফন্দী করছিল জানালার পাশে দাড়িয়ে। পাথরসহ চিঠিটা পড়বি তো পড় চোরের মাথায়। চোরটা ছিল পাড়ার মুখচেনা ছিঁচকে চোরদের একজন। যারা দিনের বেলায় ভালোমানুষের মতো পাড়ার টুকটাক কাজ করতো, নতুন বাড়ী করলে তাদের মালামাল পাহারা দিত আর সুযোগ পেলে মেরে দিত।
মাবু ছাদের কিনারে গিয়ে চিঠি কোথায় পড়েছে খুঁজতে গিয়ে সেই চেনা চোরের সাথে চোখাচোখি। রাস্তার বাতির হালকা আলোয় দুজন দুজনকে দেখে চিনলো এবং চমকে গেল। চোর দুই ছাদের কিনারে মাবু আর লুনা দুজনকে দাড়ানো দেখে বুঝে ফেলল ঘটনা। চোরের হাতে তখন পাথর সহ চিঠিটা।
ঘটনায় চোর আর মাবু পরস্পরের উপর ক্ষিপ্ত। দুজন দুজনের কাজে বাগড়া দিয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারছে না। চোর ব্যাথা পেয়েও চুপ। কয়েক সেকেন্ড পর চোর কেটে পড়লো নিঃশব্দে। তবে চিঠিটা মিস হলেও লুনা খুব খুশী হলো মাবু বীরত্বের সাথে চোর তাড়িয়েছে বলে।
পরদিন সকালে চোর ভালমানুষ হয়ে লুনাদের বাসায় গেল। মাবুর চিঠিটা নিয়ে সোজা লুনার বাবার হাতে তুলে দিয়ে বললো, “চাচা বাড়ীর সামনে কাজ করতে গিয়ে পেলাম। দরকারী কাগজ হতে পারে।” লুনার বাপ তো চিঠি পড়ে তেলে বেগুনে জ্বলে আগুন। সোজা মাবুর বাপের কাছে গেল চিঠিটা নিয়ে। মাবুর বাবা চিঠি পড়ে রেগে মেগে মাবুকে ডেকে জানতে চাইল, “হারামজাদা, এটা তোর চিঠি?”
মাবু পুরোপুরি নিশ্চুপ। কি বলবে সে? মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। একটা শব্দও বেরুলো না তার মুখ দিয়ে। একফাঁকে জানালা দিয়ে বাইরে দাড়ানো রাতের চোর, দিনের ভালোমানুষটাকে দেখলো। বুঝলো ওই বদমাশটা চুরি করতে না পারার প্রতিশোধটা নিল। কিন্তু লুনার বাবাকে একবারও মুখফুটে বলতে পারলো না, “আংকেল, কাল রাতে ওই ব্যাটা আপনাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল, কিন্তু আমি ঢিল মেরে তাকে তাড়িয়েছি।”
বলতে পারেনি কারন সেই ঢিলকে জড়িয়ে ধরা ছিল কড়কড়ে প্রেমের পত্রটি।
No comments:
Post a Comment