Sunday, November 2, 2008

বালক মাস্তান

ঘটনাটা সম্ভবতঃ ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ে। আমাদের স্কুলে ছেলে-মেয়ে দুই সারিতে পাশাপাশি বসতো। মেয়েদের নীল ড্রেস, আমাদের সাদা। আমি একটু পিচ্চি ছিলাম সাইজে তাই মেয়েগুলোকে আমার চেয়ে বড় মনে হতো। দেখতে বড় হলেও কোন কারনে ধারনা জন্মে গিয়েছিল যে মেয়েরা দুর্বল, ছেলেরা সবল। একদিন আমার এক বন্ধু পুটুল আমার হাতে একটা ভাঁজ করা টুকরা কাগজ দিল। কাগজে লেখা ‘হাসান+লাভলী’। মানে কী, বুঝলাম না। এতদিন যোগ বিয়োগ শিখেছি সংখ্যা দিয়ে, মানুষের নাম দিয়ে কখনো অংক দেখিনি। তবু ব্যাপারটায় মজা পেলাম, বিশেষতঃ নিজের নামের সাথে লাভলীকে দেখে। লাভলী মেয়েদের ফার্স্ট গার্ল, ফর্সা-সুন্দর, আমার চেয়ে ইঞ্চি দুয়েক লম্বা। একটু পরে আমি আরেকটা কাগজে ‘পুটুল+শামীম’ লিখে ওর হাতে দিলাম। শামীম মেয়েদের সেকেন্ড গার্ল, শান্ত-ভদ্র। এরপর দুজনে হাসাহাসি করলাম কতক্ষন এবং কাগজ দুটো বাইরে ফেলে দিলাম। ব্যাপারটা শেষ হতে পারতো এখানেই।

কিন্তু না, ঘন্টাখানেক পরেই হেডস্যারের রুমে দুজনের ডাক পড়লো। স্যার আমাদের নাম ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলো। তারপর পকেট থেকে দুটুকরো কাগজ বের করে দেখালো। সেই দুটি কাগজ! সর্বনাশ!! লাভলীকে একটু আগে দেখেছি বাইরে কী যেন খুঁজছে। সে-ই এটা খুঁজে এনে হেড স্যারের কাছে দিয়েছে । ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল। এতক্ষনে ব্যাপারটার আপেক্ষিক গুরুত্ব বুঝলাম। এরপর স্যারের হাতে থাকা মোটা বেতের ঘনত্ব বুঝবো, তারপর আমাদের চামড়ার পুরুত্ব। ভয়ে পেশাব করে দেবার অবস্থা হওয়ায় দোষ স্বীকার করে ফেললাম আমি। ফলে শাস্তিটা একটু লঘু হলো। স্যার গমগমে স্বরে বললেন, ‘তোরা দুজন স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত দুই হাতে একে অপরের কান ধরে উঠবস কর।’ স্যার গুনতে শুরু করলেন, এক, দুই, তিন…….। হঠাৎ খেয়াল হলো স্যারের রুমের জানালায় কৌতুহলী জনতার খিক খিক হাসি। ক্লাসের সব মেয়ে লাভলীর নেতৃত্বে সিনেমা দেখছে। এতক্ষন শাস্তিটা অত খারাপ লাগেনি, এবার চরম অপমানে আমাদের কানটান লাল হয়ে গেল। শুধু তাই না, স্কুল ছুটির পর লাভলীরা স্কুলের গেট পার হবার সময় আমাদের সব ছেলেকে পা দেখিয়ে দেখিয়ে বাড়ী গেলো।

পরদিন ক্লাসের ছেলেরা ছেলেদের ক্যাপ্টেন তৈয়বের নেতৃত্বে এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবার জন্য গোপন সিদ্ধান্ত নিল। মেয়েদের কাছে এভাবে অপমানিত হবার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। তৈয়ব খুব সাহসী, গায়ে জোরও বেশ। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া নিয়ে লাভলীর সাথে দ্বন্দ্ব ছিল একটা। সে একারনেই এগিয়ে এল পাল্টা আঘাত হানতে। পরদিন স্কুল ছুটির পরপর আমি, তৈয়ব আরো কয়েকজন আগে আগে বেরিয়ে রাস্তার পাশে নির্জন একটা জায়গায় গাছের আড়ালে দাড়িয়ে থাকলাম। লাভলীরা দুবোন এ পথে বাসায় যায়। কিছুক্ষন পর লাভলীকে দেখা গেল। কাছাকাছি আসতেই তৈয়ব আর আমি এক দৌড়ে লাভলীর পেছনে গিয়ে দুজন দুপাশ থেকে পিঠের উপর কয়েক সেকেন্ড দমাদম চড়চাপড় কিলঘুষির ব্ন্যার সাথে বললাম - ‘আর পা দেখাবি, বিচার দিবি?’ তারপর সে ভ্যাঁ করে ওঠার আগেই পগার পার। দুর থেকে দেখলাম লাভলী কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী যাচ্ছে। তৃপ্তি পেলাম।

হেডস্যারের ভয়ে পর পর দুদিন স্কুলে গেলাম না। তৃতীয় দিন দুরু দুরু বক্ষে ক্লাসে ঢুকলাম। লাভলীর দিকে ভুলেও তাকাচ্ছি না। অপেক্ষায় আছি হেড স্যার কখন ডাকবে ! কিন্তু ক্লাস শেষ হলো, ডাক আসলো না আর। অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েষ্টার্ন ফ্রন্ট। লাভলী ভয়ে বিচার দেয়নি স্যারকে। প্রথম মাস্তানীর সফল সমাপ্তি ঘটলো।

No comments: