Thursday, November 6, 2008

জাল ভোটের ভেজালে

একবার জাল ভোট দিয়েছিলাম। কিভাবে, বলছি সেকথা। ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচন ১৯৯৪। ভোটের আগের রাতে ঘনিষ্ট এক বন্ধু বললো, তোকে আমার এলাকায় ভোটার করেছি, রাতে আমার বাসায় থাকবি ভোটটা দিয়ে সকাল সকাল চলে আসবি।

আমি বললাম, জাল ভোট? না বাপু আমি এখানেই ভোটার, আমার আসল ভোটটাই দিতে চাই।

বন্ধু বললো, জাল ভোট না তো। তুই আগে ওই এলাকায় ছিলি না? তোকে তো জেনুইন ভোটার করেছি। তোর দুইটা ভোটই তো জেনুইন।

আমি দোনোমোনো। বললাম, না, তুই যা। ধরা খেলে খামাকা জেল খাটতে হবে আমার।

সে অপমান করার সুরে বললো, তুই শালা একটা *****ই, ভীতুর ডিম। তোর ইয়ে আছে কি না সন্দেহ আছে।

অপমান সহ্য হলো না, বললাম - চল।

পরদিন সকালে ভয়ে ভয়ে নকল ভোটটা সফলভাবে দিয়ে বুড়ো আঙুলে কালি মেখে বেরিয়ে এলাম ভোটকেন্দ্র থেকে। আসল ভোট দিতে যাবো এখন। রিক্সা নিলাম একটা, বুকে সাহস লাগল এতক্ষনে। কিন্তু ফ্যাকড়া লাগলো অমোছনীয় কালি নিয়ে। শালার এমন আঠালো কালি, কিছুতেই মুছে না। সবকিছুতে এত এত ভেজাল, মাগার এই কালিতে ভেজাল দিতে খেয়াল নাই কারো। মনে মনে ক্ষেপে উঠলাম ভেজালকারকের অদক্ষতার উপর। ভালো মুশকিলে পড়লাম তো!। আমার আসল ভোটটাই মারা যায় যায় আর কি। হঠাৎ খেয়াল করলাম ভোটকেন্দ্রের পাশের কচুক্ষেতে খুব ভীড়। গিয়ে দেখি কচুর ডগার রস দিয়ে কালি মোছার মহোৎসব চলছে সেখানে। বাহ্। দারুন তো? বাঙালীর এহেন আবিষ্কারে গর্বিত হলাম আমি। কে বলে বাঙালী পিছিয়ে? ঠেকা এবার আমারে! কচুবনে নেমে পড়লাম তাড়াতাড়ি।

কচু থেরাপীতে আধাঘন্টার মধ্যে কালি ছাফা। চাপকলের পানিতে ধোয়া ফকফকা হাত নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সামনে এখনো জনা পঞ্চাশেক আছে, দেরী আছে অনেক। তবু নিজের এলাকা, জেনুইন ভোট, অতএব মেজাজ খোশ। ঘন্টা দুই পর আমার সিরিয়াল আসলো।

"ভাই, আপনি কি জেনুইন? আপনার ভোট তো দেয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।" দুম করে জানালো নির্বাচন কর্মী।

বাজ পড়লো আমার মাথায় - "কী??"

"হতেই পারে না। আমি এই মাত্র আসলাম। কে দিলো আমার ভোট? এটা কিছুতেই মেনে নেবো না।" উচ্চঃস্বরে বললাম আমি।

"দুঃখিত ভাই, কিন্তু কিছু করার নেই।" সহমর্মীতার সাথে বললো নির্বাচন কর্মী।

দুপুর গড়িয়ে গেছে। খিদা পেটে কয়েক ঘন্টা রোদের মধ্যে দাড়িয়ে আছি আমার জেনুইন ভোটটা দেয়ার জন্য। আর শালারা এখন বলে কিনা ভোট দেয়া হয়ে গেছে। মগের মুল্লুক? সবগুলা বদমাশ। গালাগাল করতে করতে বের হয়ে বেরিয়ে আসছি এমন সময় এক বন্ধু পোলিং এজেন্ট ডাক দিল আড়ালে।

ফিসফিস করে বললো, "তোর ভোটটা তো দিতে দেখেছি তোদের বাড়ীর বশিরকে। আমি ভেবেছিলাম ধরবো। কিন্তু পরে চিন্তা করলাম তুই হয়তো অসুস্থ, নিজে না এসে ওকে পাঠিয়েছিস। তাই সীন ক্রিয়েট না করে চুপচাপ ছিলাম।" পোলিং এজেন্ট বন্ধুর রাজনৈতিক পরিচয় জানা ছিল। পরিষ্কার হয়ে গেল কেন বশীর ধরা পড়লো না।

বশীর আমাদের বাসায় থাকে, আত্মীয় কিন্তু ভোটার না এখানকার। তার পছন্দ ছিল বিএনপি'র প্রার্থী। যখন শুনেছে আমি অন্য এলাকায় ভোট দিতে গেছি, ফাঁকতালে ভোটটা মেরে দিয়েছে নিজের পছন্দের প্রার্থীর জন্য। কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম কেন্দ্র থেকে গজগজ করতে করতে। বশীরকে ভালো একটা ধোলাই দিতে হবে আজ।

ভালো একট শিক্ষা পেলাম আজ। এক ভোটে দুই অনুভুতি। নিজে জালভোট দিলাম, আবার জালভোটের সাজাও পেলাম। জালভোট দিতে গিয়ে নিজের জালেই ধরা পড়লাম।

No comments: