আমি একজন সুবিধাবাদী মুসলমান। ব্লগে একজনের লেখা পড়লাম, বলেছেন মডারেট মুসলিম মানে সুবিধাবাদী মুসলমান। আরেকটা সংজ্ঞা হলো আমেরিকা যে মুসলিম দেশকে তার মাপকাটিতে নিরাপদ মনে করে তাকেই মডারেট মুসলিম দেশের উপাধিতে ভুষিত করে। আবার স্বার্থে আঘাত লাগলে উপাধি কেড়ে নিতে দ্বিধা করে না। মডারেট মুসলিম দেশের সংজ্ঞাটা আমার পছন্দ হয়েছে।
তবে আমি অন্য কারনে সুবিধাবাদী মুসলমান। ধর্ম হলো মানুষের অসহায়ত্বের আশ্রয়। মানুষের জীবনে প্রতি মুহুর্তে অনিশ্চয়তা। মৃত্যুর পর আরো বেশী। কেউ দেখেনি মৃত্যূ পরবর্তী অবস্থা। ধর্মগ্রন্থের বর্ননা ছাড়া কারো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নেই মৃত্যু পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে। যদি মৃত কোন মানুষকে জীবন দিয়ে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যেতো এবং তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বই লেখানো যেতো, তাহলে সব মানুষ হয় আস্তিক নয় নাস্তিক হয়ে যেতো। একটা বিরাট ফ্যাকড়া থেকে মানবজাতি বাঁচতে পারতো। তো, যখন সেরকম কোন ব্যবস্থা হয় নাই, তখন পরকালের মারের রিস্ক থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ অবস্থান বেছে নিয়েছি অর্থাৎ ধর্মে বিশ্বাসী হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা একটা স্বার্থপরতা, তাই আমি সুবিধাবাদী মুসলমান।
উদাহরন দেই একটা। আমার গ্রামের পাশে বিশাল এক জঙ্গল। এত ঘন গাছপালা যে দিনের বেলায়ও সুর্যের আলো ঢোকে না। বাধ্য না হলে কেউ ওই দুর্গম জঙ্গলে ঢোকে না। জঙ্গলের ওপাশে আছে আরেকটা গ্রাম। একদিন সেই গ্রামে যাবার প্রয়োজন পড়লো আমার। সমস্যা হলো, পথ একটাই, তাও জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। আমার গ্রামের মুরব্বীরা বললো, জঙ্গলে সাপ-খোপ আছে শুনেছি, তুমি সাথে একটা টর্চ আর লাঠি রেখো। তাহলে সাপের কামড় থেকে বাঁচতে পারবে। আমি সাহসী মানুষ, তবু অন্ধকারে সাপের কামড়ে মরার মধ্যে কোন বীরত্ব দেখি না, তাই রওনা দেবার আগে টর্চ আর লাঠি নিয়েই বের হলাম। সাপে যদি পায় লাঠিতে মারবো, সাপ না থাকলেও জঙ্গলে ঝোপঝাড় সরিয়ে হাঁটতে এগুলো কাজে লাগবে। বিকেলে গ্রামের পথ ধরে হাটতে হাটতে জঙ্গলের দিকে রওনা দিলাম। পথে আমার কয়েক বন্ধুর সাথে দেখা, তারা আমার হাতের লাঠি আর টর্চ দেখে হাসতে হাসতে খুন। ব্যাটা ভীতুর ডিম, বুইড়া দাদু ইত্যাদি বলে উপহাস করতে লাগলো। তাদের উপহাসের যন্ত্রনায় হাতের লাটি ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হলো। ফেলে দিতামও হয়তো। কিন্তু জঙ্গল পাড়ি দেবো আমি একা, সাথে আর কেউ যাবে না, তাছাড়া ওরা কেউ আগে জঙ্গল পাড়ি দেয়নি। তাদের কথায় টর্চ-লাঠি ফেলে জঙ্গলে ঢোকার ভরসা পেলাম না। জঙ্গলে সাপ আছে বিশ্বাস করাটাই নিরাপদ মনে করলাম। টর্চ-লাঠি নিয়েই ঢুকলাম জঙ্গলে, পেছনে বন্ধুদের উচ্চকিত হাসি।
মহাবিশ্ব কে বানিয়েছে এ প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর নাস্তিকেরা দিতে পারে নাই। বরং কেউ বানায়নি এটা আপনা আপনিই সৃষ্টি হয়েছে এরকম বিশ্বাসেই চলে নাস্তিকেরা। অন্যদিকে আস্তিকেরা নিশ্চিত করে বলেছে, সৃষ্টিকর্তা বলে অদৃশ্য এক শক্তি আছে তাঁর ইঙ্গিতেই চলে মহাবিশ্বের সবকিছু। আমার কাছে আস্তিকের অবস্থানকে অধিক বিজ্ঞানমনস্ক বলে মনে হয়েছে বলে আমি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছি। কাকাতার কথা মনে আছে। কোথাও কেউ বানিয়েছে ইন্টারনেট। সেরকম কোথাও কেউ নিয়ন্ত্রন করছে পুরো মহাবিশ্ব। গ্রহ, নক্ষত্র, নীহারিকা সবকিছু এক নির্দিষ্ট নিয়মের আওতায় কোটি কোটি বছর ধরে চলছে। এই শৃংখলা আপনা আপনিই সৃষ্টি হয়েছে, একথা ভাবার শিশুসম দুঃসাহসের বয়স পেরিয়ে এসেছি অনেক আগেই? বিজ্ঞান কি কারন ছাড়া কিছু ঘটাকে সায় দেয়? তাই বিশ্বাসী হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে আমার। আবার ভাবলাম আমার বিশ্বাস কী কারো ক্ষতি করছে? খুঁজে তেমন কিছু পেলাম না। সবদিক ভেবে তাই সুবিধাবাদী মুসলমান হলাম পুর্ন বিশ্বাসে।
ভুল করলাম ভাইডি?
[পুনশ্চ: লেখাটি সুবিধাবাদী যে কোন আস্তিক মানুষের জন্য প্রযোজ্য। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর সব ধর্ম-উপধর্ম যার যার মতো যে সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করে, সেটা একই শক্তি। আমি নিজে মুসলমান বলে সুবিধাবাদী মুসলমানের কথাই বলেছি এখানে]
No comments:
Post a Comment