শুক্রবার সকালে পটিয়া যাচ্ছিলাম। শ্বশুর সাহেব গ্রামের বাড়ীতে মেজবান খাওয়াচ্ছেন আত্মীয়-স্বজন সবাইকে। বেরুতে বেরুতে বারোটা বেজে গেল। লালখান বাজারের কাছাকাছি আসতেই ড্রাইভারকে বললাম হাইওয়ে সুইটসে দাঁড়াতে, মিষ্টান্ন নিতে হবে। তবে বউ শর্ত জুড়ে দিল মিষ্টি যেন মেলামাইন ছাড়া হয়। বললাম, নিশ্চয়ই। গিয়ে দেখি লে হালুয়া। মিষ্টির দোকানে রীতিমত মল্লযুদ্ধ। ঢোকার জায়গা নেই। মেলামাইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাঙালী সব ঝাঁপিয়ে পড়ে মিষ্টি কিনছে। ভেতর ঢুকতেই পারছি না। বয় মনে করে একজনকে মিনতি করে বললাম "ভাই আমাকে দু-কেজি........" কথা শেষ করার আগেই দেখি ভদ্রলোক চোখমুখ লাল করে তাকিয়ে আছে। পালিয়ে বাঁচলাম। আধডজন বয়-বেয়ারা ব্যস্ত-বিরক্ত মিষ্টির প্যাকেট ভরতে ভরতে। নতুন অর্ডার নেয়ার ফুরসত নেই কারো। ওদিকে ক্যাশে আরেক অবস্থা। কে কার আগে টাকা দিয়ে বিদেয় হবে, সেই হুড়োহুড়ি। ক্যাশের দিকে উঁকি মেরে ১০-১৫টা পেটমোটা মানিব্যাগহস্তের ফাঁকে মালিকের চেহারা দেখার চেষ্টা করলাম। মালিক গম্ভীর মুখে তৃপ্তি নিয়ে বসে আছে আর ম্যানেজার ক্যাশ মেশিন টাইপ করতে করতে বলছে - ভাংতি নাই, ভাংতি শেষ, ভাংতি দেন ভাইসব।
আমি ভাবলাম দুর যাইগা। মিষ্টি না নিয়েই ফিরে যাই। কিন্তু দুপা গিয়ে গাড়ীতে অপেক্ষমান বউয়ের চেহারা দেখে আবার ফেরত আসলাম। মিষ্টি ছাড়া শ্বশুরবাড়ীতে গিয়ে সংসারে অশান্তি ডাকার চেয়ে বরং ধৈর্যের মেয়াদ বাড়িয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করি। আবার ভয় হচ্ছে ওই পেট মোটা মানিব্যাগগুলো আমার আগেই তো সব মিষ্টি কিনে নেবে। তাই দৌড়ে গিয়ে আবার ঠেলাঠেলিতে যোগ দিলাম। পেছনে দেখলাম আরো লোক আসছে মিষ্টি কিনতে। সবাই চেঁচামেচি করছে -আয়বাবা শুনে যা, দুটো মিষ্টি দিয়ে যা - কে শোনে কার কথা।
হঠাৎ মাথায় আইডিয়া খেললো। কনুইয়ের দুই গুতোই দুজনকে ফাঁক করে ক্যাশের কাছে পৌছালাম। "ভাই ২ কেজি দই হালুয়া আর ২ কেজি লাড্ডুর দাম রাখেন।" টাকাটা দিয়ে রশিদ নেবার পর কট কট মনে মনে বললাম, ঠেকাও তো দেখি বাপু আমারে- প্রিপেইড করে দিয়েছি। কন্ঠে মধু মাখিয়ে মালিকের দিকে তাকিয়ে বললাম, - "দেন ভাই আমার মিষ্টিগুলার ব্যবস্থা করে দেন এখন।"
"মানে?" - মালিকের কন্ঠে বিস্ময়। আমি নীরব। ইশারায় জোর দিলাম- তাড়াতাড়ি করেন।
নিরুপায় মালিক হেড়ে গলায় ডাক দিয়ে বললো - "মোখলেস...এদিকে আয় চার কেজির চারটা প্যাকেট নিয়ে।"
No comments:
Post a Comment