Wednesday, November 19, 2008

প্রেম যখন ফাঁস

আমার প্রিয় বন্ধু সাব্বির। যৌবনের শুরুতে সিটি কলেজে ইন্টারে পড়ার সময় সোমা নামের এক মেয়েকে তার খুব ভালো লেগে গেল। মেয়েটা আমাদের ব্যাচে কিন্তু অন্য সেকশানে। তাই কথা বলার অজুহাত পাওয়া যায়না। কিন্তু না পেলে তো চলবে না। এই মেয়ের প্রেম না পেলে জীবন বৃথা, এরকম ধারনা গজিয়ে গেছে ওর মধ্যে।

বলে রাখা ভাল তখন আমাদের মাত্র গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে মুখে। কিন্তু সিটি কলেজ তখন চট্টগ্রামের শেঠ কলেজ। দু্র্ধর্ষ সব ছাত্রনেতা এই কলেজে। এক ডাকে পুরো শহর কাঁপে। রাস্তায় বাস ড্রাইভার-কন্ডাকটর কোন ছাত্রের সাথে বেয়াদবী করলে পুরো লাইনের বাস সহ ধরে কলেজে নিয়ে আসতো। শহরে তখন যত বাস ছিল সবাইকে নিউমার্কেট দিয়ে ঘুরে যেতেই হতো। সুতরাং যে কোন একটা বেয়াদবীতে ধরা পড়লে রক্ষা নাই। তাই সিটি কলেজ বললে সবাই ভয় পায়। স্বাভাবিকভাবে সেই গরবে গর্বিত সদ্য গোঁফ ওঠা আমরাও।

সাব্বির ভাবলো এটাতো সামান্য একটা মেয়ে, প্রেম না দিয়ে কোথায় যাবে? সোমা বেশ সুন্দরী হলেও সাইজে বেশ বড়সড়, সাব্বিরের চেয়েও বড় ছিল। তাছাড়া মেয়েটা হিন্দু, সে মুসলমান। কিন্তু প্রেমের জন্য সাইজ কোন ব্যাপার না আর আধুনিক মানুষের জন্য ধর্ম কোন সমস্যা না। আমরা মানব ধর্মে বিশ্বাসী, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে প্রেম। সব সমস্যা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে সাব্বির সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু চোখাচোখি ছাড়া আর কোন সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর ধারনা সোমাও ওর জন্য খুব আগ্রহী, সেটা তার দৃষ্টি দেখেই বোঝা গেছে। কিন্তু মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। সুতরাং ছেলে হিসেবে তাকেই এগিয়ে যেতে হবে।

একদিন দুপুরবেলা ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখি আর্টস বিল্ডিংয়ের নীচে সোমা একা দাড়িয়ে আছে। ব্যাপার কী, এই ভর দুপুরে বাসায় না গিয়ে মেয়েটা একা একা দাড়িয়ে আছে কার জন্য। সাব্বির বললো, দোস্ত সে নিশ্চয়ই আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য দাড়িয়ে আছে। আজকেই সুযোগ। তুই একটু হেল্প করবি। গিয়ে বলবি আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।

আমি আরো বেশী লাজুক। রাজী হলাম না প্রথমে। কিন্তু সাব্বির আমার পায়ে ধরার অবস্থা। ওকে বাঁচাতে আমাকে এগিয়ে যেতেই হলো। আমি গিয়ে সোমাকে কথাটা বলতেই সোমা হেসে বললো, ঠিক আছে ওকে আসতে বলেন।

সাব্বির এগিয়ে গেলে আমি দুরে সরে এলাম। ওরা নিজেরা নিজেরা ফয়সালা করুক এবার। কিছুক্ষন পর দুর থেকে তাকিয়ে দেখি দুজনে খুব কথা বলছে হেসে হেসে। কি কথা শুনতে পেলাম না। তবে বুঝলাম সাব্বিরের ধারনাই ঠিক। মেয়েটা ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। শালাকে আজকে ধরতে হবে ডায়মন্ডে কাবাব খাওয়াতে।

একটু পর সাব্বির ফিরে এলো উত্তেজিতভাবে। “দোস্ত, মেয়ে তো অনেক ফাস্ট। যা ভেবেছি তারচেয়েও এডভান্স। আমি বলার সাথে সাথে রাজী। কিন্তু সমস্যা হলো সে দেরী করতে চাচ্ছে না। বললো আজকেই সেরে ফেলতে। সে আমাকে এখুনি কোর্টবিল্ডিং-এ নিয়ে যেতে চায় রেজিষ্ট্রি করে বিয়ে করতে। কী করি বলতো এখন?” যুগপৎ খুশী আর দুশ্চিন্তা তার চোখে মুখে।

কোর্ট বিল্ডিং-এর কথায় আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম “তুই গেলে যা, আমাকে বাসায় যেতে হবে এখন, আমি কোর্টবিল্ডিং-এ যেতে পারবো না।” কেটে পড়তে চাইলাম তখুনি। ওদিকে সোমা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে সিদ্ধান্তের। ততক্ষনে সাব্বির বুঝে ফেলেছে ব্যাপারটার গুরুত্ব। পালাতে হবে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কিন্তু এভাবে পালালে ইজ্জত থাকবে না। ওকে বললাম, তুই গিয়ে বল- আজকে অনেক দেরী হয়ে গেছে, টাকা পয়সা, সাক্ষী-টাক্ষী যোগাড় করে আগামীকাল সকালে যাবি। সাব্বির কোনমতে কথাটা বলে আসতেই তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে পালালাম ওখান থেকে।

পাদটিকাঃ
ইন্টার পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাব্বিরকে আর্টস বিল্ডিং-এর ধারে কাছেও দেখা যায় নি কখনো।

No comments: