Sunday, November 23, 2008

বন্ধু আমার, ঘুনপোকায় খাচ্ছে তোমার জীবন

মাহমুদের বাবা যখন হঠাৎ মারা যায় মাহমুদ তখন মাত্র বিএ পাশ করেছে। ৪ভাই ৩বোন আর মাকে নিয়ে জীবনের সর্ববিষয়ে অনভিজ্ঞ মাহমুদ সংসার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে খেতে অবশেষে একটা চাকরীর সন্ধান পেল। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর চাকরীটা না পেলে গ্রামে গিয়ে হালচাষ করা ছাড়া উপায় ছিল না। এমনিতে গ্রামে বহুবছর যায়নি, পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো চাচারাই দেখাশোনা ভোগদখল করে। চাকরীটা পাবার পর স্বস্তিকর জীবন শুরু হলো। কিন্তু নতুন জীবন শুরু হতে না হতেই একটা ভাই হঠাৎ মারা গেল দুঃখজনক এক ঘটনায়। বাবার পর ভাইকে হারিয়ে পাথর হয়ে গেল মাহমুদ। ওর চেহারার দিকে তাকানো যেতো না তখন। বোকা বোকা হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন পর আবার নতুন উদ্যমে শুরু। এই দ্বিতীয় যাত্রার প্রাক্কালে আমার সাথে মাহমুদের ঘনিষ্টতা জন্মায়। পড়াশোনার সুত্রে। মাহমুদ রাজনীতির পোকা ছিল। বাম রাজনীতির সক্রিয় কর্মী। ওর পুরো ঘর জুড়ে রাজনৈতিক বই। কালমার্কস, তাজউদ্দিন, মোনাজাতউদ্দিন থেকে শুরু করে রাজনীতি নিয়ে খ্যাত অখ্যাত যত বই দেখে সব কিনে। তবে সব পুরোনো বই। রেয়াজুদ্দিন বাজারে একটা পুরোনো বইয়ের দোকান আছে। অফিস শেষে প্রতিদিন বিকেলে ঘন্টাখানেক ওখানে কাটিয়ে বাসায় ফিরতো। আমারো বইয়ের নেশা ছিল বলে আমরা প্রতি সন্ধ্যায় বসতাম। বন্ধুদের মধ্যে আমরা দুজনই বাবাকে হারিয়েছিলাম সবার আগে। ফলে দুজনের মধ্যে সহমর্মিতা আর বোঝাপড়া ছিল বেশ।

সবকিছু যখন মোটামুটি স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছিল মাহমুদ একটা বোনের বিয়ে দিল ধুমধাম করে আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সাথে। নিজের ভাল চাকরীর অফার পেতে লাগলো। ভাল পোষ্টে অফার পেয়ে নতুন একটা কোম্পানীতে যোগ দিল। তার কদিন পর শোনা গেল মাহমুদ বিয়ে করছে। আমরা অবাক। এমনকি ঘনিষ্ট বন্ধুরাও জানতো না। চাইনিজ হোটেলে বিয়ের চমৎকার অনুষ্ঠান হলো। মেয়েটা বয়স অল্প। ১৮/১৯ হবে। সুন্দরী তরুনী চটপটে বৌ পেয়ে মাহমুদ আমাদের প্রায় ভুলেই যায় আর কি। বিয়ের পরদিন থেকে বেশ কয়েকমাস দেখা নেই ওর সাথে। বেশীরভাগ ছেলে বিয়ের প্রথম দিকে বৌ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে, রোমাঞ্চ, দাওয়াত, সামাজিক আচার। তাই আমিও সন্ধ্যাবেলার বইয়ের আড্ডাটা বন্ধ করে দিয়েছি।

একবার বন্ধুরা সবাই মিলে কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম। যে কজন বিয়ে করেছে সবাই বৌ নিয়ে গেছে একমাত্র মাহমুদ বাদে। কক্সবাজার পৌছে দুপুরে হোটেলে খাওয়া গোসল সেরে ব্যাচেলর আমি ঘোষনা করলাম, মহেশখালী ঘুরে আসতে যাচ্ছি আমি। ব্যাচেলর যে কেউ চাইলে সঙ্গী হতে পারে। আমার ঘোষনা শুনে ব্যাচেলর তো বটেই, বিবাহিত দুতিনজনও বৌকে লুকিয়ে আমার সাথে যোগ দিল। রাতে অবশ্য তাদের এজন্য যথেষ্ট খেসারত দিতে হয়েছিল বৌয়ের কাছে। সে গল্প আরেকদিন। মহেশখালি পৌছে আদিনাথ পাহাড়ে ছবি তোলার সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম মাহমুদ কেমন যেন একলা একলা থাকতে চাইছে। চেহারায় কেমন যেন মলিনতা। কারো সাথে গল্পগুজব করছে না। আড্ডার তোড়ে ব্যাপারটা ভুলে গেলাম শীঘ্রই। ফিরে আসার কয়েকদিন মাহমুদের সমস্যার কথা জানতে পারলাম জাহেদের কাছ থেকে।

মাহমুদের বিয়ে খুব সংকটে। প্রায় ভঙ্গুর আর কি। মাহমুদের বৌয়ের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। মেয়েটা ঘর থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল একটা ছেলেকে। পরে বাবা মা ধরে এনে ডিভোর্স করিয়ে নিয়েছে। এখন আবার বিয়ে দিয়েছে মাহমুদের কাছে। মাহমুদ ব্যাপারটা জেনেছে বিয়ের ঠিক আগে আগে। বিয়ের কথাবার্তা চুড়ান্ত হবার আগে মেয়ের পরিবার মাহমুদকে মেয়েটার সাথে ঘনিষ্টতার সুযোগ করে দেয়। ঘনিষ্টতা চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছানোর পর (পয়েন্ট অব নো রিটার্ন) মাহমুদ জানতে পারে মেয়েটার পুরোনো সম্পর্কের কথা। কিন্তু ততদিনে দেরী হয়ে গেছে, মাহমুদ মেয়েটার সাথে দারুন প্রণয়ে আবদ্ধ, একদম গভীরে ডুবে গেছে। তাছাড়া সে প্রগতিশীল ছেলে। এসব কোন ব্যাপারই না ওর কাছে। মানুষের একাধিক বিয়ে, প্রেম এসব হতেই পারে। আর মেয়েটা যখন পালিয়ে বিয়ে করেছে তখন ওর বয়স মাত্র ১৫ বছর। ওই বয়সে মেয়েরা ভুল করতেই পারে। তাই বর্তমানটাকেই গুরুত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নেয় মাহমুদ। আর কারো সাথে পরামর্শের তোয়াক্কা না করে উদারতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলে মেয়েটাকে। বিয়ের দিনের ছোট্ট একটা ঘটনা মাহমুদ পরে বলেছে আমাকে।

বিয়ের গাড়ী যখন মাহমুদের বাসার সামনে এল, মাহমুদের মা আগেই বাড়ীর দরজায় দাড়ানো, বৌমাকে সাদরে বরন করার জন্য। গাড়ীর দরজা খুলে নামতেই মা ছুটে গিয়ে বৌমার হাতটা ধরলো ঘরে নেবার জন্য। বৌ এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে বললো, "ছাড়েন, এসব ঢং আমার ভালো লাগে না।" কথাটা শুনে মা স্তব্ধ। মাহমুদ চুপ। সে ভাবলো বয়স কম, আর বিয়েবাড়ীর গরমে-ভিড়ে অতিষ্ট হয়ে মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।

ছুটির কয়েকটা দিন টোনাটুনির মতো রুমের মধ্যেই কাটায় দুজনে। কিন্তু আরো কয়েকদিন যাবার পরও দেখা গেল, মেয়েটা রুম থেকে বোরোয় না। মাহমুদ ছাড়া কারো সাথে ভালো করে কথা বলে না। ঘরের কোন কাজকর্মের তো প্রশ্নই ওঠেনা। মাসখানেক পর একদিন বৌ বাপের বাড়ী বেড়াতে গেল। কয়েকদিন পর মাহমুদকে জানালো ওই বাসা তার ভালো লাগে না, আলাদা বাসা না নিলে সে আর ফিরে আসবে না। আরও বললো মা ভাইবোনদেরকে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে। মাহমুদ যেন তার সিদ্ধান্ত জানায়। মাহমুদের মাথায় যেন বাজ পড়লো। যেখানে পুরো পরিবার তার আয়ের উপর নির্ভর, সব আশাভরসা তার উপর, সে ছাড়া পরিবারের আর কোন অবলম্বন নেই। মেয়েটা কীভাবে বলতে পারলো এমন কথা? মাহমুদ বৌয়ের কথায় রাজী হলো না। বৌ আসলো না।

ওদিকে নতুন যে কোম্পানীতে চাকুরী নিয়েছিল, তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না। চাকরীটা প্রায় চলে যাচ্ছিল তবু কোন মতে ঠেকালো বস ভালো ছিল বলে, তবে বেতন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। কোম্পানীর অবস্থা ভালো হলে বেতন দেয়া হবে। সে আশায় মাহমুদ চাকরীটা চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকমাস পর ডিভোর্সের নোটিশ পেল মাহমুদ বৌয়ের কাছ থেকে। সাথে ৩ লাখ টাকা কাবিনের দাবী। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা। অনেক দেন দরবার হলো। কোন লাভ হলো না। টাকা না দিতে পারলে জেল খাটতে হবে। এমনিতে বেতন নেই, সঞ্চয়তো অনেক আগেই শেষ। ধার-কর্জ করে চলছে সংসার। এ অবস্থায় ভাগ্যের এই কষা থাপ্পড় কেমন লাগে? আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম সেই পুঁচকে মেয়ের ক্ষমতা দেখে। এক বছর সময় নিয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে, আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় কোন মতে কাবিনের দাবী মেটানো গেল।

এই সময়ে মাহমুদ নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন্য বেশী বেশী করে রাজনীতির দিকে ঝুঁকলো। চাকরীতে বেতন পাওয়া শুরু হয়েছে, যদিও অর্ধেক। তবু কম কি, বেঁচে থাকতে পারলেই হলো। পায়ের নীচে খানিকটা মাটি পেয়ে দাঁড়াতে চাইল মাহমুদ। একদিন রমজানের সময় গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ইত্যাদির অধিকার নিয়ে আন্দোলনে মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিল মাহমুদ। পুলিশের বেপরোয়া আক্রমন তেড়ে এল তাদের ওপর। গ্রেফতার হয়ে জেলে চলে গেল সে। এ ঘটনার পর পরিবারের উপর বিপর্যয়ের খাড়া নেমে আসলো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পড়ে গেলে যা হয় আর কি। মাহমুদের পরিবারের আর কোন আশ্রয়ই রইল না শহরে। ছোট ভাইবোনদের নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে চলে গেল ওর মা। বিনা বিচারে প্রায় ছয়মাস জেল খেটে, জামিনে ছাড়া পেল।

দেখতে গেলাম আমি। কিন্তু এ কাকে দেখছি ? সে আর আমাদের পুরোনো হাসিখুশী মাহমুদ না। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখ দুটো বসা, মুখের দুই পাশে হাড্ডি বেরিয়ে গেছে, মাথায় চুল পড়ে অর্ধেক। বোঝা যায় জেলখানায় কী দুর্দশা গেছে। আশ্চর্য লাগে যে মানুষটার নিজের অধিকারেরই ঠিক নেই সে অন্য মানুষের জন্য আন্দোলন করে জেলে যায়! চা খাওয়ার পর সিগারেট অফার করলে মৃদু হেসে হাত নেড়ে বললো, সিগারেটে পোষায় না। বিড়ি ধরেছি। জেলে তো বিড়ি ছাড়া উপায় নাই। বিড়ির অভ্যেসটা হয়ে গেছে। আর বিড়ি তো জেলখানার অঘোষিত মুদ্রা। তোষকের নীচ থেকে আকিজ বিড়ির বান্ডিল বের করে ধরালো।

জেল থেকে ছাড়া পেল ঠিকই কিন্তু মামলাটা রয়ে গেল। নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়। খরচ অবশ্য পার্টি থেকে দিচ্ছে। অফিসের বসটা ভালো ছিল বলে, চাকরিটাও ফিরে পেল আবার। বেতন যদিও অর্ধেক এখনও। তবু আবারো উঠে দাড়ানোর চেষ্টা। কিছুদিন পর গ্রামে গেল মাকে নিয়ে আসতে। গিয়ে আরেকটা নতুন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলো, ওদের সব জমি জমা চাচারা বেদখল করে ফেলেছে দীর্ঘ অনুপস্থিতির সুযোগে। ভাগ্যের চতুর্থ কামড়। মাহমুদ নিজেই গ্রামে চলে গেল দীর্ঘ ছুটি নিয়ে। এবারের ছুটি মানে চাকরী শেষ। কোন কোম্পানী এতবার এতদিন ছুটি দেয় না। গ্রামে গিয়ে মামলা মোকদ্দমা হয়রানি অপমান গ্লানি। শেষ হয় না কিছুতেই। ক্লান্ত ক্লান্ত মাহমুদ। তবু পরাজিত হয় না। আজীবন সংগ্রামী মাহমুদ ঘরে বাইরে যুদ্ধ চালিয়েই যায়। এখনও চলছে।

মাহমুদের জীবনটা নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি। এক সময় সব ছিল ওর, সুখের সব উপাদান। তারপর আস্তে আস্তে ঝরে পড়তে লাগলো একেকটা সুখ। ভাগ্য কিছু কিছু মানুষের প্রতি এমন নির্দয় হয় কেন? আরেকটু কম নির্দয় হলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেতো বিশ্বজগতের? যতই সে উঠে দাঁড়াতে চায়, ভাগ্য তাকে আবার আছড়ে ফেলে শক্ত মাটিতে। যেন তাকে উঠতে না দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে ভাগ্যবিধাতা!!

দাওয়াতী কর্মের বিটকেলে সমাপ্তি

বয়েস তখন বিশের কোটায়। আমার এক বন্ধু পারভেজ। কথাবার্তায় খুব দুষ্টু। ওর প্রতিটি বাক্য একেকটা কৌতুক, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে হয়। ওকে কেউ কিছু বলে সারতে পারে না, তাৎক্ষনিক জবাব রেডী, একটা কথাও মাটিতে পড়তে দেয় না। ফলে সবার প্রিয় ছিল আর বন্ধুবান্ধবও ছিল অগনিত।

ওর বাসাটা ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় আড্ডাখানা। ওর বাবা মা ভাই বোন এত আন্তরিক ছিল যে আমরা ওটাকে নিজের ঘরের মতো ব্যবহার করতে পারতাম। ওর রান্নাঘরে ঢুকে ডেকচি উল্টিয়ে মাছ তরকারী নিয়ে খাচ্ছি এটা খুব স্বাভাবিক একটা দৃশ্য ছিল। খাওয়া ঘুম আডডা সব চলতো, কেউ কেউ রাতেও থেকে যেতো বেশী দেরী হয়ে গেলে। পাড়ায় আমাদের ১৬ জনের একটা ম্যারাথন আড্ডা গ্রুপ ছিল। তাছাড়া অতিথি আড্ডাবাজরাও প্রতিদিন আসতো শহরের কোন না কোন অংশ থেকে।

এত বেশী বন্ধুবান্ধব ওর বিয়ের দাওয়াতের সময় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দাওয়াতের লিষ্টে বন্ধুর সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যাওয়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক দুরের বন্ধুকে বাদ দিতে হয়। মজার ব্যাপার হলো বিয়ের দিন বিনা দাওয়াতেই প্রায় অর্ধশত বন্ধু এসে হাজির। এবং দাওয়াত না দেয়াতে কেউ কোন মাইন্ড করে নাই। বরং বলছিল, তুই দাওয়াত দিতে ভুলে গেছিস সেটা আমরা বুঝি, কিন্তু আমাদের তো একটা দায়িত্ব আছে !

পাড়াতে বেশ কয়েকজন কট্টর শিবির কর্মী ছিল। শিবিরের অতি তৎপর একটা দায়িত্ব হলো মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া। একবার দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে এলাকার শীর্ষ শিবির নেতা কামাল ভাই আড্ডায় আসলেন। মোলায়েম ভাষায় ‘আসসালামুআলাইকুম’ বলে বসে গেলেন একপাশে। উনি মাবুর পরিচিতি সুত্রে এসেছেন দাওয়াতী কাজে। কিন্তু এখানে ঢুকেই পড়ে গেলেন পারভেজের পাল্লায়। আম্বো তাম্বো গল্পের ঠেলায় দুদিনের মাথায় দ্বীনের দাওয়াত ভুলিয়ে দিল পারভেজ। এক সপ্তাহ পর দেখা গেল কামাল ভাইও মেয়েদের ‘ঠেকা’ দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে জমিয়ে আলাপ করছে। দ্বীনের দাওয়াতের কোন খবর নেই আর।

আমাদের আড্ডার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল মাঝে মাঝে একেকজনের উপর ভর করে পাড়ার হোটেলে পরোটা, চপ, হালিম ইত্যাদির শ্রাদ্ধ করা। একবার কামাল ভাইয়ের পালা এলো। সহজে রাজী হয় না। শুনেছিলাম হাড় কন্জুস। তবু প্রথমে লজ্জায় ‘হ্যাঁ’ বলে রাজী হলেও রওনা দেয়ার পর যতই হোটেলের কাছাকাছি হচ্ছিলেন ওনার পা যেন ভারী হয়ে উঠছিল। হোটেলের ১০০ গজের মধ্যে পৌছে পুরো শক্ত হয়ে গেল কদমযুগল, আর নড়ে না। ব্যাপার কী? কামাল ভাইকে জিজ্ঞেস করা হলো। কামাল ভাই মিন মিন করে বললেন “একটু বাসায় যেতে হবে যে। মানিব্যাগটা ফেলে এসেছি বোধহয়।”

চেহারা দেখে সন্দেহ করলাম পালানোর ফন্দী করছে। এভাবে ছাড়া যাবে না। আমরা দ্রুত বললাম সাথে যা আছে তাতেই চলবে, ৫০ টাকা এমনকি ২০ টাকা হলেও চলবে, বাকীটা আমরা দেবো, দরকার হলে লোন দেব। কিন্তু তিনি অনড়। আমরা লক্ষন বুঝে দুজন দুহাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু নড়ানো গেলনা। ছাগলের মতো পা দুটি মাটি কামড়ে আটকে রইল। যতই সামনে টানি ছাগলের মতো উনি উল্টা দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। (ওনার পরে আরো দুজন শিবির নেতা আমাদের আড্ডায় যোগ দিয়েছিল, প্রত্যেকটা হাড় কন্জুস এবং প্রত্যেকের সাথে খাওয়ার পর্বে এসে প্রায় একই অভিজ্ঞতা। হোটেলের কাছাকাছি এলেই নড়ানো যেত না, পায়ে খুটা লেগে যেত। যারা জীবনে একবারও ছাগলের দড়ি হাতে নিয়েছে তারা জানে ছাগলের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দড়ি যেদিকে টানবেন তার উল্টা দিকে হাঁটবে সে।)

কামাল ভাইকে ছাগলের মতো খুটা পায়ে আটকে থাকা দেখে তখুনি পারভেজ এগিয়ে এসে বললো, “দুর ব্যাটা, তোরা তো ছাগল ধরাও শিখলি না। কিভাবে নিতে হয় জানিস না। বাবু আয়তো, তুই বাম পাটা ধর আমি ডান পা ধরি। ত্যাড়া ছাগলকে চ্যাংদোলা করে নিতে হয় ” তিন সেকেন্ডের মধ্যেই চার জোড়া হাতের উপর কামাল ভাই ভাসতে লাগলেন।

সেই আট হাতের দোলনায় কামাল ভাই যখন হোটেলের সামনে পৌছালো, লোকজন বুঝে গেছে আজকের হোষ্ট কে। খাওয়া শেষে কামাল ভাই বেজার মুখে অন্তর্বাসের ভেতর থেকে লুকানো ছোট্ট মানিব্যাগ বের করলো। সেদিনের পর থেকে আড্ডায় যাওয়া কমিয়ে দিলেন তিনি। বুঝলেন দুনিয়াতে ফ্রী বলতে কিচ্ছু নাই। এমনকি আড্ডাও না। সেদিন থেকে প্রকাশ্যে দাওয়াতী কাজের সমাপ্তি ঘটলো পাড়ায়।

Wednesday, November 19, 2008

চোরের কবলে একটা প্রেম

বন্ধু মাবু বিশ্বপ্রেমিক ধরনের ছেলে। যেখানেই বাসা নিত তার আশেপাশে কারো না কারো সাথে মন দেয়া নেয়া হয়ে যেতো। নতুন এলাকায় বাড়ী করে সবেমাত্র উঠেছে। পাড়া-প্রতিবেশী অত বেশী নেই। কাছাকাছি একটা মাত্র দোতলা বাড়ী আছে। বাড়ীর মালিক দোতলায় থাকেন সপরিবারে। তাঁর এক পুত্র বাপ্পী এক কন্যা লুনা। মাবুর নজর কাড়লো লুনা। যথারীতি চুপি চুপি মন দেয়া নেয়ার চেষ্টা শুরু হলো। কিন্তু মেয়ের বাবার অতীব কড়াকড়িতে প্রেমটা ঠিকমতো গড়ে উঠতে পারছিল না। ফলে রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে যায় তখন দুজনে ছাদে উঠে চিঠি চালাচালি করে। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য চিঠি বিনিময়টা হতো অভিনব পদ্ধতিতে । দুজনের বাড়ীর ছাদ কাছাকাছি ছিল। ওরা চিঠি লিখে একটা ছোট ইট পাথরের মধ্যে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে মারতো একে অন্যের ছাদে। এ কাজগুলো করা হতো রাত বারোটার পর। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় দুজনের প্রেম মোটামুটি ভিত্তিস্থাপনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।

একদিন ঝামেলা হয়ে গেল। মাবুর চিঠিটা অল্পের জন্য ফসকে গিয়ে ছাদের কার্নিশে বাড়ি খেয়ে নীচে পড়ে গেলো। ওদিকে নীচে তখন এক চোর লুনাদের একতলায় চুরির ফন্দী করছিল জানালার পাশে দাড়িয়ে। পাথরসহ চিঠিটা পড়বি তো পড় চোরের মাথায়। চোরটা ছিল পাড়ার মুখচেনা ছিঁচকে চোরদের একজন। যারা দিনের বেলায় ভালোমানুষের মতো পাড়ার টুকটাক কাজ করতো, নতুন বাড়ী করলে তাদের মালামাল পাহারা দিত আর সুযোগ পেলে মেরে দিত।

মাবু ছাদের কিনারে গিয়ে চিঠি কোথায় পড়েছে খুঁজতে গিয়ে সেই চেনা চোরের সাথে চোখাচোখি। রাস্তার বাতির হালকা আলোয় দুজন দুজনকে দেখে চিনলো এবং চমকে গেল। চোর দুই ছাদের কিনারে মাবু আর লুনা দুজনকে দাড়ানো দেখে বুঝে ফেলল ঘটনা। চোরের হাতে তখন পাথর সহ চিঠিটা।

ঘটনায় চোর আর মাবু পরস্পরের উপর ক্ষিপ্ত। দুজন দুজনের কাজে বাগড়া দিয়েছে। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারছে না। চোর ব্যাথা পেয়েও চুপ। কয়েক সেকেন্ড পর চোর কেটে পড়লো নিঃশব্দে। তবে চিঠিটা মিস হলেও লুনা খুব খুশী হলো মাবু বীরত্বের সাথে চোর তাড়িয়েছে বলে।

পরদিন সকালে চোর ভালমানুষ হয়ে লুনাদের বাসায় গেল। মাবুর চিঠিটা নিয়ে সোজা লুনার বাবার হাতে তুলে দিয়ে বললো, “চাচা বাড়ীর সামনে কাজ করতে গিয়ে পেলাম। দরকারী কাগজ হতে পারে।” লুনার বাপ তো চিঠি পড়ে তেলে বেগুনে জ্বলে আগুন। সোজা মাবুর বাপের কাছে গেল চিঠিটা নিয়ে। মাবুর বাবা চিঠি পড়ে রেগে মেগে মাবুকে ডেকে জানতে চাইল, “হারামজাদা, এটা তোর চিঠি?”

মাবু পুরোপুরি নিশ্চুপ। কি বলবে সে? মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল। একটা শব্দও বেরুলো না তার মুখ দিয়ে। একফাঁকে জানালা দিয়ে বাইরে দাড়ানো রাতের চোর, দিনের ভালোমানুষটাকে দেখলো। বুঝলো ওই বদমাশটা চুরি করতে না পারার প্রতিশোধটা নিল। কিন্তু লুনার বাবাকে একবারও মুখফুটে বলতে পারলো না, “আংকেল, কাল রাতে ওই ব্যাটা আপনাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল, কিন্তু আমি ঢিল মেরে তাকে তাড়িয়েছি।”

বলতে পারেনি কারন সেই ঢিলকে জড়িয়ে ধরা ছিল কড়কড়ে প্রেমের পত্রটি।

স্মৃতি থেকে একটা প্রেমপত্র

২৫ বছর আগের আমাদের স্কুলে একটা আলোচিত ছোট্ট একটা প্রেমপত্র। ক্লাস এইটের একটা ছেলে ক্লাস সিক্সের একটা মেয়েকে দুই লাইনের একটা প্রেমপত্র লিখেছেঃ

প্রিয় নীলা,
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচিব না।
কিন্তু তুমি আমাকে ভালো না বাসিলে আমি ইটা মেরে তোমাদের জানালার সব গ্লাস ভাঙ্গিয়া ফেলিব।

ইতি,
তোমার প্রেমিক মাসুদ

রহিম গুন্ডার চোখ মারা

রহিম গুন্ডার কথা মনে পড়লো আজ। সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে রহিম আমাদের এলাকায় দাপুটে গুন্ডা। সবাই ভয় করে। শহরে তখন রংবাজ সিনেমার জোশ। রহিমের প্রানপন চেষ্টা রংবাজের রাজ্জাক হবার। রহিমের এক ছোট ভাই ছিল আমার ডাংগুলি বন্ধু। সে কারনে রহিমকে আমি তেমন ভয় পেতাম না। রহিমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল চোখ মারা। যে কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তার বাম চোখটা দুবার ক্লিক করতো। মেয়ে দেখলে চোখ মারার ব্যাপারটা কেন করতে হয় আমি ঠিক বুঝতাম না। খালি ভাবতাম ওটা বড়দের কাজ এবং নিষিদ্ধ জিনিষ। নিষিদ্ধ হবার কারনে মাঝে মাঝে আমরা বন্ধুরা নিজেরা নিজেরা চোখ মারা প্র্যাকটিস করতাম।

রহিম সবচেয়ে বেশী চোখ মারতো রুমা আপাকে। রুমা আপার বাসা ছিল আমাদের ঠিক দোতলায়, উনি খুব সুন্দরী ছিলেন। রুমা আপারা আমাদের বিল্ডিংএর সবচেয়ে বড়লোক। আশেপাশের বিল্ডিংএর মধ্যে একমাত্র ওনাদের বাসায়ই টিভি ছিল যা দেখার জন্য আমরা পিচ্চিরা সব ভিড় করতাম। কলোনীতে তখন যে বাসায় টিভি আছে, বাইরের যে কারোর অলিখিত অধিকার ছিল সে বাসায় গিয়ে টিভি দেখার।

রুমা আপা আর রহিমের মধ্যে প্রেম-ট্রেম জাতীয় কিছু কিনা জানি না। কিন্তু উনি যতক্ষন বারান্দায় বসে থাকতেন রহিম নীচের ইলেকট্রিকের পোলে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। বামচোখ মেরে যাচ্ছে একটু পর পর। এটা আমাদের নিত্যদিনের দৃশ্য। মাঝে মাঝে চোখ মেরে বাঁ চোখটা বন্ধই করে রাখতো অনেকক্ষন। এরকম ম্যারাথন চোখ মারতে মারতে রহিমের বামচোখটা ছোট এবং কালশিটে হয়ে গিয়েছিল।

একদিন আমার কাজিন রানু আপা বেড়াতে এসেছে বাসায়। রুমা আপাদের কাছাকাছি বয়সী হবেন, এসএসসি দেবেন। সেদিন রানু আপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল আমার সাথে। রহিমের চোখের ফোকাস দোতলা থেকে নীচে নেমে আসলো। রানু আপার সাথে চোখাচোখি হবার সাথে সাথে ক্লিক করলো দুবার। রানু আপা প্রথমে ব্যাপারটা বুঝলো না। কিন্তু আবার তাকাতেই একই ঘটনা ঘটলো। রানু আপা ছুটে ভেতরে গিয়ে মাকে বললো ঘটনাটা।

বিকেলে বাবা অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথে মা জানালো রহিমের কান্ডের কথা। বাবা রাগী মানুষ। কাপড়চোপড় না বদলেই দৌড়ে বেরুলেন। আমি পিছু পিছু। রহিম তখন সামনের বিল্ডিংয়ের কোনায় দাঁড়িয়ে কী যেন করছিল। বাবা সোজা গিয়ে ঠাশ ঠাশ করে দুগালে দুটো রাম থাপ্পড় বসিয়ে বললো- “হারামজাদা!! তোর এত সাহস আমার বাসার দিকে নজর দেস?? আর যদি কোনদিন তোকে আমার বাসার সামনে দেখি তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো।”

রহিম পুরা হতভম্ব। এর আগে তাকে কেউ এভাবে মারে নাই। ভড়কে গেছে তাই। তাছাড়া আমরা চাটগাঁইয়া, লোকাল একটা ব্যাপারও ছিল বোধহয়। রহিম মাফ চেয়ে বললো, “ভুল হয়ে গেছে চাচা, মাফ কইরা দেন। আমি বুঝি নাই” ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর থেকে বাবা বাসায় থাকলে রহিমগুন্ডা আশেপাশেও ভিড়তো না। রুমা আপার সাথে টাংকিটা ছিল আরো অনেকদিন, কিন্তু সতর্কভাবে।

প্রেম যখন ফাঁস

আমার প্রিয় বন্ধু সাব্বির। যৌবনের শুরুতে সিটি কলেজে ইন্টারে পড়ার সময় সোমা নামের এক মেয়েকে তার খুব ভালো লেগে গেল। মেয়েটা আমাদের ব্যাচে কিন্তু অন্য সেকশানে। তাই কথা বলার অজুহাত পাওয়া যায়না। কিন্তু না পেলে তো চলবে না। এই মেয়ের প্রেম না পেলে জীবন বৃথা, এরকম ধারনা গজিয়ে গেছে ওর মধ্যে।

বলে রাখা ভাল তখন আমাদের মাত্র গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে মুখে। কিন্তু সিটি কলেজ তখন চট্টগ্রামের শেঠ কলেজ। দু্র্ধর্ষ সব ছাত্রনেতা এই কলেজে। এক ডাকে পুরো শহর কাঁপে। রাস্তায় বাস ড্রাইভার-কন্ডাকটর কোন ছাত্রের সাথে বেয়াদবী করলে পুরো লাইনের বাস সহ ধরে কলেজে নিয়ে আসতো। শহরে তখন যত বাস ছিল সবাইকে নিউমার্কেট দিয়ে ঘুরে যেতেই হতো। সুতরাং যে কোন একটা বেয়াদবীতে ধরা পড়লে রক্ষা নাই। তাই সিটি কলেজ বললে সবাই ভয় পায়। স্বাভাবিকভাবে সেই গরবে গর্বিত সদ্য গোঁফ ওঠা আমরাও।

সাব্বির ভাবলো এটাতো সামান্য একটা মেয়ে, প্রেম না দিয়ে কোথায় যাবে? সোমা বেশ সুন্দরী হলেও সাইজে বেশ বড়সড়, সাব্বিরের চেয়েও বড় ছিল। তাছাড়া মেয়েটা হিন্দু, সে মুসলমান। কিন্তু প্রেমের জন্য সাইজ কোন ব্যাপার না আর আধুনিক মানুষের জন্য ধর্ম কোন সমস্যা না। আমরা মানব ধর্মে বিশ্বাসী, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে প্রেম। সব সমস্যা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে সাব্বির সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন প্রেম নিবেদন করবে। কিন্তু চোখাচোখি ছাড়া আর কোন সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওর ধারনা সোমাও ওর জন্য খুব আগ্রহী, সেটা তার দৃষ্টি দেখেই বোঝা গেছে। কিন্তু মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। সুতরাং ছেলে হিসেবে তাকেই এগিয়ে যেতে হবে।

একদিন দুপুরবেলা ক্লাস শেষে বেরিয়ে দেখি আর্টস বিল্ডিংয়ের নীচে সোমা একা দাড়িয়ে আছে। ব্যাপার কী, এই ভর দুপুরে বাসায় না গিয়ে মেয়েটা একা একা দাড়িয়ে আছে কার জন্য। সাব্বির বললো, দোস্ত সে নিশ্চয়ই আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য দাড়িয়ে আছে। আজকেই সুযোগ। তুই একটু হেল্প করবি। গিয়ে বলবি আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।

আমি আরো বেশী লাজুক। রাজী হলাম না প্রথমে। কিন্তু সাব্বির আমার পায়ে ধরার অবস্থা। ওকে বাঁচাতে আমাকে এগিয়ে যেতেই হলো। আমি গিয়ে সোমাকে কথাটা বলতেই সোমা হেসে বললো, ঠিক আছে ওকে আসতে বলেন।

সাব্বির এগিয়ে গেলে আমি দুরে সরে এলাম। ওরা নিজেরা নিজেরা ফয়সালা করুক এবার। কিছুক্ষন পর দুর থেকে তাকিয়ে দেখি দুজনে খুব কথা বলছে হেসে হেসে। কি কথা শুনতে পেলাম না। তবে বুঝলাম সাব্বিরের ধারনাই ঠিক। মেয়েটা ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল। শালাকে আজকে ধরতে হবে ডায়মন্ডে কাবাব খাওয়াতে।

একটু পর সাব্বির ফিরে এলো উত্তেজিতভাবে। “দোস্ত, মেয়ে তো অনেক ফাস্ট। যা ভেবেছি তারচেয়েও এডভান্স। আমি বলার সাথে সাথে রাজী। কিন্তু সমস্যা হলো সে দেরী করতে চাচ্ছে না। বললো আজকেই সেরে ফেলতে। সে আমাকে এখুনি কোর্টবিল্ডিং-এ নিয়ে যেতে চায় রেজিষ্ট্রি করে বিয়ে করতে। কী করি বলতো এখন?” যুগপৎ খুশী আর দুশ্চিন্তা তার চোখে মুখে।

কোর্ট বিল্ডিং-এর কথায় আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম “তুই গেলে যা, আমাকে বাসায় যেতে হবে এখন, আমি কোর্টবিল্ডিং-এ যেতে পারবো না।” কেটে পড়তে চাইলাম তখুনি। ওদিকে সোমা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে সিদ্ধান্তের। ততক্ষনে সাব্বির বুঝে ফেলেছে ব্যাপারটার গুরুত্ব। পালাতে হবে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কিন্তু এভাবে পালালে ইজ্জত থাকবে না। ওকে বললাম, তুই গিয়ে বল- আজকে অনেক দেরী হয়ে গেছে, টাকা পয়সা, সাক্ষী-টাক্ষী যোগাড় করে আগামীকাল সকালে যাবি। সাব্বির কোনমতে কথাটা বলে আসতেই তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে পালালাম ওখান থেকে।

পাদটিকাঃ
ইন্টার পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাব্বিরকে আর্টস বিল্ডিং-এর ধারে কাছেও দেখা যায় নি কখনো।

Thursday, November 13, 2008

একটি মজার সুপারিশ পত্র

চিঠিপত্রের যুগ উঠে গেছে বললেই হয়। দুই আড়াই বছর আগে আমাদের অফিসে একটা চিঠি আসে। একজন অচেনা ভদ্রলোক ব্যবসার সুযোগ এবং আত্মীয় স্বজনের চাকরীর সুযোগ চেয়ে দীর্ঘ একটা পত্র লেখেন। এরকম পত্র আমি আগে কখনো দেখিনি। পত্রটির ভাষা এবং প্রকাশভঙ্গীর ভিন্নতা বেশ মজার, সেকারনে চিঠিটা সংগ্রহে রেখে দেই আমি। আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। ঠিকানা পরিচয় মুছে দিয়েছি সঙ্গত কারনেই।


২২ডিসেম্বর১৯৯০ ছাত্রশিবিরের সেই তান্ডব

২২শে ডিসেম্বর ১৯৯০। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সে পড়ি তখন। ভার্সিটিতে কী একটা পরীক্ষা ছিল সেদিন। কিন্তু হবে না বোধহয়। কারন ইসলামী ছাত্র শিবির অবরোধ ডেকেছে। দাবি ভিসির পদত্যাগ। অথচ যৌক্তিক কোন কারন নেই। ব্যাপার হলো এই ভিসি শিবিরের পছন্দ না। কিন্তু যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নিয়ন্ত্রনে, মসজিদের ইমাম থেকে রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়নটা পর্যন্ত সবকিছু শিবিরের পছন্দের হতে হবে। সবাই বাধ্য শিবিরের কথা শুনতে। সেখানে ভিসি যদি মোটামুটি নিরপেক্ষও হয়, তাকে নিয়ন্ত্রন করাও মহা ঝামেলা। ঝামেলা কে চায়, শক্তি যখন আছে, ঝামেলা কেটে ফেলার চেষ্টা। ডঃ আলমগীর সিরাজের পদত্যাগ চেয়ে তাই অবরোধ।

সঙ্গত কারনেই সাধারন ছাত্রছাত্রীর কোন সমর্থন নেই এ ধরনের আন্দোলনে। তাই সিদ্ধান্ত সবাই নিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো, পরীক্ষা দেবো, শিবিরের মুখোমুখি দাঁড়াবো।

যদিও পরীক্ষা অনিশ্চিত, তবু ঘুরে আসি এরকম মন নিয়ে আমিও সকাল সোয়া আটটায় ট্রেনে উঠলাম। সাথে বন্ধু হোসেন শহীদ আর নওশাদ পারভেজ। হোসেন শহীদ ভালো কবিতা লেখে, চট্টগ্রামের মোটামুটি নামকরা কবি। আড্ডাবাজ, আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। ওকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছি আড্ডা দেয়ার জন্য। কারন আরেক আড্ডাবাজ বন্ধু পারভেজও যাচ্ছে। সে সমাজতত্ত্বে প্রিলিমিনারিতে ভর্তি হয়েছে। আমাদের তিনজনের ভালো আড্ডা জমে। আজকে পরীক্ষা নাও হতে পারে, তাই ঘুরে ফিরে আড্ডা দিয়ে চলে আসবো দুপুরের ট্রেনে।

ট্রেন যখন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশানে পৌঁছালো তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট বন্ধ। কাউকে যেতে দিচ্ছে না ভেতরে। ছেলেমেয়েদের সাথে বাকবিতন্ডা হচ্ছে শিবির নেতাদের। শিবিরের নেতাদের সাথে জামাতী শিক্ষকরাও পাশে দাঁড়িয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। বুঝলাম যৌথ প্রযোজনার অবরোধ। শিক্ষকদের এমন ভুমিকায় দেখে ঘেন্না লাগলেও অবাক হই না। জামাতী শিক্ষকদের চরিত্র বুঝতে বাকী নেই গত তিন বছরে। সদ্যনির্বাচিত চাকসুর কিছু ছাত্রনেতাও ছিল ওখানে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের ধরলো কিছু একটা করার জন্য। একজন নেতা(ভিপি নাজিম বোধহয়) পাশের একটা উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত গরম বক্তৃতা দিল কয়েক মিনিট। ছাত্রছাত্রীরা ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছে - অবরোধ ভাংবো, ভাংতেই হবে। উত্তেজনা বেড়ে গেলে নেতা বক্তৃতা শেষ করে নেমে পড়েন। এরপর মিছিল শুরু হয়। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন তারা জানেন, ছাত্রছাত্রীরা ট্রেনে শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ষ্টেশনে আসে। তারপর এখান থেকে বাসে করে দুই কিলোমিটার দুরের ক্যাম্পাসে যায়।

আজকে অবরোধের কারনে বাস চলছে না। হেঁটেই যেতে হবে। শহীদ আর পারভেজের কাছে গিয়ে বলতেই ওরা বললো, "চল ফিরে যাই। শিবিরের সাথে গ্যান্জাম করে লাভ নেই।" আমার হঠাৎ কেন যেন জিদ চেপে বসলো তখন। পরীক্ষা দেয়ার জোশে না। জিদ চাপলো শিবিরের অনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে। আমরা কী ওদের খেয়ালের চাকর? চাইলেই কি ওরা আমাদের এভাবে আটকে রাখতে পারে? আমি শহীদ আর পারভেজকে বললাম, "শিবিরকে ভয় পেলে তোরা ফিরে যা, আমার কাজ আছে, ভেতরে যেতেই হবে।"

এমন সময় গেটের কাছে হৈ হৈ ধ্বনি শোনা গেল। একদল ছাত্র কীভাবে যেন গেটের তালা ভেঙ্গে ফেলেছে। পঙ্গপালের মতো সবাই হুড়মুড় করে ঢুকছে গেটের ভেতরে। কাটা পাহাড় দিয়ে না গিয়ে মিছিলের মুখ শাহজালাল হলের সামনের রাস্তার দিকে ঘুরে গেল। শহীদ আর পারভেজ আমাকে একা ছাড়তে চাইল না, ওরাও যোগ দিল মিছিলে। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল ব্যাপার। এত বেশী ছাত্রছাত্রী কোন মিছিলে দেখা যায়নি আগে। এমনকি চাকসু নির্বাচনের বিজয় মিছিলও ছিল এর চেয়ে ঢের ছোট। এই বিশাল মিছিল পাহাড়ী রাস্তা ঘুরে ঘুরে যখন ক্যাম্পাসে পৌছালো তখন বেলা সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেছে। কলাভবনের সবগুলো কলাপসিবল গেটের তালা বন্ধ। সামনের বাধানো চত্বরে শিবিরের ক্যাডার বাহিনী দাঁড়ানো। আপাতঃ নিরস্ত্র। তবে অনেকগুলো ইটের আধলা স্তুপ করে রাখা। মিছিলের মুখ মাঝখানের গেটের দিকে এগোচ্ছে। দেখে ভরসা লাগলো যে এত বড় মিছিলের সামনে শিবিরের সামান্য কটা কুত্তা কী করবে। মিছিলের সামনের ভাগে মেয়েরা। হঠাৎ কথাবার্তা ছাড়া ঠাশ ঠুশ শব্দ শুরু হলো হলো। শিবিরের ছেলেরা ইট মারছে। প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। কিন্তু আমাদের এদিকে ইট বলতে কিছু নেই, সব ওরা নিয়ে নিয়েছে। ভেবেছি ছাত্র নেতারা নিশ্চয়ই খালি হাতে আমাদের উজ্জীবিত করেন নাই। লোহা-বিচি, মাল-মুল নিয়ে এসেছে নিশ্চয়ই। পাল্টা জবাব দিবে হোতাইয়া। এদিক ওদিক তাকালাম। কিন্তু না, কোন পাল্টা জবাব দেখা গেল না। এ পক্ষে কারো অস্ত্রশস্ত্র নেই। সাধারন ছেলেপেলেরা বিড়বিড় করে গালি গালাজ করতে শুরু করেছে নেতাদের। শালারা খালি বিচি দুইটা নিয়া যুদ্ধ করতে আসছে, নাজিম্যা কই, ইত্যাদি। হঠাৎ আমরা খেয়াল করলাম নির্মানাধীন নতুন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে অনেকগুলো লম্বা বাঁশ স্তুপ করে রাখা। ওগুলো নিতে পারলে শিবিরের গোয়া ফাটিয়ে দেয়া যাবে এবার। চল নিয়ে আসি। মিছিল ছেড়ে আমরা কজন ছুটলাম বাঁশ নিতে। এটাই বোধহয় বড় ভুল হয়ে গেল। বাঁশের কাছে পৌছাতে না পৌঁছাতেই পেছন থেকে গুলির শব্দ। শিবিরের ক্যাডাররা ইট ছেড়ে বন্দুক ধরেছে। আমাদের পিছু হটার দৃশ্য দেখে ওরা বুঝতে পেরেছে আমাদের বন্দুক টন্দুক নেই। সাথে সাথে মিছিলের বাকী অংশের উপর গুলী করা শুরু করেছে। গুলির শব্দে পুরো ক্যাম্পাসে ছুটোছুটি, মেয়েদের চীৎকার, কান্নার শব্দ, মিছিল ছত্রভঙ্গ। আমরা যারা বাঁশের জন্য এসেছিলাম, তারা ফিরতে গিয়ে পলায়নপর উল্টোস্রোতের মুখোমুখি হলাম। দেখলাম তিনদিক থেকে আক্রমন শুরু হয়েছে। পুরোটা পূর্ব-পরিকল্পিত বোঝা যায়।

বাঁশ হাতে বন্দুকের মুখোমুখি হওয়ার কোন মানে নেই। বাঁশ রেখে পিছু হটলাম। পালানো ছাড়া গতি নেই। ভাবলাম লাইব্রেরীর পেছনের ফোকড় দিয়ে সায়েন্স ফ্যাকাল্টির দিকে চলে যাবো। লাইব্রেরীর পেছনে যেতেই দেখলাম উল্টো দিক থেকে গুলি করতে করতে ছুটে আসছে হামিদ বাহিনীর কয়েকজন। প্রায় ট্র্যাপড হয়ে গেলাম, ঘেরাও তিন দিক থেকে। লাইব্রেরীটা কলাভবনের মুখোমুখি রাস্তার ওপারে। লাইব্রেরীর পেছনে ঝোপজঙ্গলভর্তি খাড়া পাহাড় উঠে গেছে। এমনিতে লাখ টাকা দিলেও ওই জঙ্গলে উঠার কথা ভাবতাম না। একটা পা রাখারও জায়গা নেই, এত ঘন আদিম জঙ্গল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি খারাপ। প্রান বাঁচানো ফরজ। মুহুর্তেই লাফ দিলাম জঙ্গলের ভেতরে। হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে গেলাম বেশ কিছুদুর। আড়াল পেতেই একটু দাঁড়ালাম। দেখি আরো অনেক ছেলে মেয়ে উঠে আসছে জঙ্গল মাড়িয়ে। কারো মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে, কারো হাত দিয়ে। একজন আরেকজনকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে পাহাড়ের খাড়াইতে। কে একজন পানি চাইল। একটা মেয়ে কাঁদছে, তার সহপাঠির মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত পড়ছে। ওকে ধরে উপরের দিকে এগিয়ে দিলাম আমরা। উপরে কোথায় যাচ্ছি জানি না। শুধু গোলাগুলি থেকে যত দুরে যাওয়া যায় সেই চেষ্টা।

কিছুদুর গিয়ে একজনকে দেখলাম, জঙ্গলের মধ্যেই একজন রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে জনে জনে। বলছে, "ভায়েরা আমরা যদি এভাবে পালিয়ে যাই ৭১ এর পরাজিত শক্তির ভয়ে, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। চলুন আমরা ঘুরে দাঁড়াই। ঝাঁপিয়ে পড়ি একাত্তরের চেতনায় ......." কয়েকজন দাঁড়িয়েও পড়েছিলো। কিন্তু পেছনে আবার বুম বুম শব্দ হতেই সবাই হুড়মুড় ছুট। জঙ্গলের লতাপাতা ধরে ধরে টিলার চুড়ায় পৌছালাম কোনমতে, তারপর ওপাশে নামতে শুরু করলাম, নামতে তেমন সময় লাগলো না। ছোট্ট একটা লোকালয়, অচেনা গ্রাম। গ্রামের লোকজন অবাক হয়ে গেছে আমাদের দেখে। হঠাৎ খেয়াল হলো আমার, আরে - ওরা কোথায়? শহীদ আর পারভেজ? ধরা পড়েনি তো? তিক্ততায় মনটা ভরে গেল নিজের স্বার্থপরতায়। আমার গোয়ার্তুমির জন্যই ওরা আজ এই বিপদে পড়েছে। নিজে পালাতে ব্যস্ত ছিলাম বলে ওরা কোথায় গেছে দেখার সুযোগ পাইনি। যাই হোক গ্রামের ভেতর দিয়ে এগিয়ে দেখলাম, সামনে আরেকটা পাহাড়। এটা অনেক পরিস্কার, গ্রামবাসীর কল্যানেই বোধহয়। পলাতক সবাই উঠতে শুরু করলো। অর্ধেক উঠে উপরে কাদেরকে যেন দেখা গেল। সন্দেহ হলো। শিবিরের কেউ না তো? ওরাও সন্দেহজনকভাবে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে। তবে হাতে অস্ত্র দেখলাম না বলে এগিয়ে গেলাম সাহস করে। না, শিবির না, এরাও পলাতক জনতার অংশ। হেসে সন্দেহের কথাটা বললাম তারপর হাত মিলিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। তখনো জানতাম না কোথায় উঠছি। টিলার ওপর উঠে দেখি সুন্দর একটা বাড়ী। সামনে বড় লোহার গেট বন্ধ। ওটা আসলে ভিসি সাহেবের বাড়ী। পাহাড়টা হলো ভিসির পাহাড়। স্বাভাবিক পথে কেউ কখনো আসিনি। আজকে প্রানভয়ে এলোমেলো ছুটতে ছুটতে ঘুরে ভিসির পাহাড়ে উঠে গেছি। অথচ ভেবেছিলাম ক্যাম্পাস ছেড়ে অনেক দুরে চলে গেছি। যাহোক এটা মোটামুটি নিরাপদ জায়গা আপাততঃ। পুলিশও দেখা যাচ্ছে গেটে।

ভিসির বাড়ী ছাড়িয়ে ডানে তাকাতে দেখি ওদিকের পাহাড়ের নীচ থেকে দুটি মাথা উপরে উঠছে। দেখে আমার হাসি দুকান ছাড়িয়ে গেল। শহীদ আর পারভেজ। তিনজনই আলাদা আলাদা পালানোর পরও ছুটতে ছুটতে একই আশ্রয়ে পৌছেছি। 'শালা, বেঁচে আছিস তাহলে' - দুঃসময়েও খুশী লাগলো। পরবর্তী গন্তব্য কোথায় জানি না। ঘন্টাখানেক পর ভিসির পাহাড় থেকে নেমে এলাম শহীদ মিনারের মোড়ে। খিদে পেয়েছে খুব। কিন্তু সব দোকানপাট কলাভবনের পাশে। ওখানে যাওয়া মানে আত্মহত্যা করা। তাছাড়া ক্যাম্পাসের মারামারিতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে বোধহয়। দুর থেকে দেখা যাচ্ছে কাকপক্ষীর আওয়াজও নেই ওখানে। কিন্তু খিদেটা আরো চিড়বিড় করে উঠতেই তিনজনে বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, চল যাই। ভালোমানুষের মতো হাঁটা দিলাম কলাভবনের দিকে । পুরো ক্যাম্পাসে কবরের নিস্তব্ধতা। কে বলবে দুই ঘন্টা আগেও কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের পদচারনা ছিল এখানে। শিরশির করছে গায়ে। একটা ঝুপড়ি দোকানের আংশিক খোলা দেখলাম। দোকানী যে মারাত্মক সাহসী বলার অপেক্ষা রাখে না। এর বাপ নিশ্চয় একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতেও দোকান করেছে। দোকানের ছেলেটা জানালো, শিবিরের পোলাপান ক্যাম্পাস থেকে চলে গেছে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। খাবার তেমন কিছু নেই। শুধু চা মুড়ি খেয়ে ফিরে আসার সময় কলাভবনের কোনায় শিক্ষকদের বিশ্রামাগারের দিকে চোখ গেল। লোকজন দেখা যাচ্ছে ওখানে। এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রতিবাদ সভা চলছে শিক্ষক সমিতির। হামিদা বানুকে দেখলাম। তিনিসহ আরো অনেক প্রগতিশীল শিক্ষক আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবাদ সভা শেষে ফিরে এলাম শহীদ মিনারের দিকে। দেখি সব ছাত্রছাত্রী শামসুন্নাহার হলের দিকে যাচ্ছে। আমরাও গেলাম। আগে কখনো যাইনি মেয়েদের হলে। ছেলেরা ভেতরে যেতে পারেনা, সবাই সামনের মাঠে বসে আছে। গিয়ে নতুন খবর পেলাম একটা। শিবিরকর্মীরা ভার্সিটি থেকে বেরুনোর সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়েছে। শতশত ছেলেমেয়ে আটকে আছে এখানে। শিবিরের ক্যাডাররা তখন হলগুলোতে নির্যাতন চালাচ্ছিল বিপক্ষ দলের উপর। (পরে জেনেছি ছাত্র ফেডারেশানের নির্বিবাদী কর্মী ফারুককে কীভাবে মেরেছে। আমার আরেক নির্দলীয় বন্ধুকে তার শিবিরের রুমমেট দ্বীনের দাওয়াত কবুল না করার প্রতিশোধ নিয়েছিল সে রাতে। শাহ আমানত হলে সারারাত হকিষ্টিক দিয়ে রুমের এ মাথা থেকে মারতে মারতে ও মাথায় পাঠিয়ে খেলেছে শিবির ক্যাডার দিয়ে। নেহায়েত রুমমেট ছিল বলে খাতির করে প্রানে মারেনি, হাতপায়ের হাড়গুলো গুড়ো করে ছেড়ে দিয়েছে।)

শামসুন্নাহার হলের সামনে তখন অভুতপুর্ব এক দৃশ্য। হলের মেয়েরা একেকজন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল হয়ে গেছে। কেউ আহতদের ব্যান্ডেজ করছে, কেউ খাবার দিচ্ছে, কেউ পানির জগ হাতে পানি খাওয়াচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে গেছে তখন। অনেকের খাওয়া হয়নি। আমাদের চা-মুড়ি হেঁটে আসতে আসতেই হজম। এগিয়ে গিয়ে দেখি কিছু মেলে কি না। কিন্তু খবর ভালো না। হলের খাবারতো অনেক আগেই শেষ। এরপর মেয়েদের নিজ নিজ রুমের যত চাল, ডাল, ডিম, কলা, মুড়ি, চিড়া, গুড়, তাও শেষ। একটা ছেলেকে দেখলাম মিনতি করছে, আপা শুধু সাদা ভাত থাকলেও দেন। সেই আপার কাছে অল্প ডাল ছিল, তাই দিল এগিয়ে। আমি ভেবে পেলাম না কার কাছে চাইব। লজ্জাটজ্জা আজ কোথায় যেন চলে গেছে। অন্যরকম এক অনুভুতি। একাত্তরকে একটু হলেও বাস্তব উপলব্ধি করেছিলাম সেদিন।

দয়াবতী চেহারার কাউকে খুঁজলাম। শেষে একজনকে বলেই ফেললাম,"আপা আপনার কাছে কী কিছু আছে?" সেই আপাটা এমন দুঃখিত চোখে তাকালো আমি এখনো দেখতে পাই সেই চোখের মায়া। বললো "ভাই, আরেকটু আগে যদি আসতেন! আমারতো ডাল ডিম সব শেষ"। আমি তাড়াতাড়ি বললাম, "না- ঠিক আছে, আমরা অবশ্য চা-মুড়ি খেয়েছি কিছুক্ষন আগে"। সেই অচেনা আপা তখন বললো, "একটু দাড়ান, রুম থেকে আসি।" পাঁচ মিনিটের মধ্যে হাতে করে নিয়ে এলো আনন্দ বিস্কিটের একটা প্যাকেট। বললো, "নিন, এটা তিনজনে ভাগ করে খান আপাততঃ।"

কোথায় যেন পড়েছিলাম, মানুষের প্রতি কখনোই বিশ্বাস হারাবে না। যে দেশের মানুষে মানুষে এতটা মায়া সে দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাটি হবে না তো কোন দেশের হবে?

বিকেল হয়ে এসেছিল তখন। আমরা শহরে ফেরার কোন উপায় দেখছি না। আজ ফেরা যাবে কি না কে জানে। রাতে কোথায় থাকবে, কী খাবে এসব ভেবে সবাই অস্থির। একজন বললো, সামনের রাস্তা ধরে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে গেলে গ্রামের রাস্তা পাওয়া যাবে। রাতটা হয়ত সে গ্রামে কাটানো নিরাপদ হবে। এখানে হলের সামনে রাতে শিবিরের হামলা হবে শোনা যাচ্ছে। শহীদ বললো, চল পাহাড়ের ভেতরের রাস্তা দিয়েই হাঁটা শুরু করি। কোথাও না কোথাও বেরুনোর রাস্তা নিশ্চয়ই আছে। আরো কয়েকজন মিলে আমরা রওনা দিলাম।

শীতের বিকেল স্বল্পায়ু। আমরা পা চালিয়ে ভার্সিটি এলাকা পেরুতে পেরুতেই সন্ধ্যা নেমে আসলো। এলোপাথাড়ি হাঁটছি। বেশ কিছুদুর হাঁটার পর একট গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলাম। গ্রামের একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম চট্টগ্রাম শহরে যাবার রাস্তা। বড় রাস্তায় উঠে শহরে যাবার বাস পেয়ে গেলাম। আধঘন্টা পরে মধ্যে শহরের আলোতে প্রবেশ করলাম বিধ্বস্ত পরাজিত সৈনিকের মতো।

বাসায় ঢোকার পথে রক্তমাখা সাদা শার্ট দেখে মা চিৎকার করে ওঠে। মাকে আশ্বস্ত করি, ভয় নেই মা, এ আমার রক্ত না, এ রক্ত আরেক সহযোদ্ধার। তোমার ছেলের কিছু হয়নি।

গতকাল শুনলাম সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাঁদের একটি স্মরনিকা থেকে ১৯৯০-এর সেই কুখ্যাত ঘটনা থেকে শিবিরের নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে প্রবল হুমকির মুখে। অবাক হইনি। সম্ভব হলে জামাত-শিবির চক্র ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ১৯৭১ সালটাকেই মুছে দিত।

Monday, November 10, 2008

আমি গনতন্ত্র দেখিনি

আমি কোন তন্ত্র বুঝি না। তন্ত্রের কোন কাজ আমি বাংলাদেশে দেখিনি আমার ৪০ বছর বয়সে। বাংলাদেশের জন্য ঠিক কোন তন্ত্র প্রযোজ্য আমি শিওর না। বাংলাদেশে গত ৩৮ বছরে শাসক বদল হয়েছে ৬ বারের মতো। কিন্তু চরিত্র কি বদলেছে? সামরিক বেসামরিক সব আমলেই কমবেশী অবিচার হয়েছে। প্রকৃত গনতন্ত্র বাংলাদেশে কোনদিনই ছিল না।

স্বাধীনতার পর পর দেশের অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়ে বিভিন্ন আর্থ সামাজিক সমস্যার কারনে। একে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তার উপর সুযোগ সন্ধানীরা যে যেদিকে পারছে লুটপাট করছিল। শেখ মুজিব সেই পরিস্থিতির সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার উপর রাজনৈতিক কোন্দলে ঘর ভাঙ্গলো। জাসদের জন্ম হলো। জাতীয় ঐক্যের বদলে অনৈক্য আর নৈরাজ্যই প্রাধান্য পেতে লাগলো। বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট বাংলাদেশেও এসে লাগলো। সাধারন মানুষ যখন না খেয়ে মরছে, তখন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা মৌজ করছে আর টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। তার উপর রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার মানুষের মধ্যে তীব্র ঘৃনার সুত্রপাত করে এবং নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তার সুচক দ্রুত নেমে যায়। তারপর দেশী-বিদেশী যৌথ ষড়যন্ত্রে সফল হলো ১৫ আগষ্টের শেখ মুজিবের নির্মম হত্যাকান্ড। জাতি নিপতিত হলো এক অন্ধকার যুগে।

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর নানান ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা লাভ করে। দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীতে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে সাধারন মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। তবে শৃংখলা আনতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে প্রায় বধ্যভুমি বানিয়ে ফেলতে হয়। শত শত মুক্তিযোদ্ধা অফিসার নিধন করা হয়। বিদ্রোহ আর ষড়যন্ত্রের খোয়াড় হয়ে উঠে সেনানিবাসগুলো। কিন্তু জনগনের কাছে এসব খবর পৌছায় না। সবাই দেখে জিয়া খাল কাটে ছেড়া গেন্জী গায়ে। মুগ্ধ হয় তারা। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে জিয়ার ক্যারিশমা। তবে জিয়ার দেশ গড়ার একটা স্বপ্ন ছিল। নিজের মতো করে কিছু করতে চেয়েছিল। ক্ষমতার মোহটাও একটা কারন হতে পারে। ক্ষমতাকে নিরংকুশ রাখার জন্য অনেক সেনা অফিসারের প্রান নেয়া হয় আর এরশাদের মতো মেরুদন্ডহীন লম্পটকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যার প্রতিদান অবশ্য এরশাদ দিয়েছিল ১৯৮১ সালের ৩০শে মে। মুক্তিযোদ্ধা-অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারের দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করে এরশাদ।

১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির কালোযুগ। এরশাদ নামক নরকের কীট লম্পট দুরাচারের শাসনকাল।রাজনীতি থেকে 'নীতি' নামক বস্তুটা বিসর্জনের কাল। মহামান্য চামচা আর মহামান্য ভাঁড়েরা হয়ে ওঠে দেশ ও জাতি ভাগ্য নির্ধারক। সেই যুগের অবসান ঘটে যখন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার যৌথভাবে আন্দোলনে সামিল হয়।

১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক যুগের শুরু। কিন্তু কী গনতন্ত্র দেখলাম আমরা ১৫ বছরে? নির্বাচন হয়, একদল জিতে, অন্যদল হারে। যে জিতে সে বলে খুব ভালো নির্বাচন, যে হারে সে বলে কারচুপি হয়েছে। জিতা পার্টি সংসদে যায় নিজেরা নিজেরা আমোদ করে, বিরোধী দল গেলে মাইক কেড়ে নেয়। তারপর বিরোধী দল বলে সংসদে যামু না। ওয়াক আউট দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। তারপর হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। মানি না মানবো না, একদফা একদাবী সরকার তুই কবে যাবি। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে এটাই গনতন্ত্র। শিশু গনতন্ত্র তো, মারামারি করছে তাই।

১৯৯৬ সালে আবার সরকার বদল হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। কিছুদিন পর একই দৃশ্য। পরের চার বছর সংসদ বর্জন, হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। মানিনা মানবো না। একদফা একদাবি। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে গনতন্ত্র এরকমই। বাড়ন্ত বয়স, মারামারি লাগাই স্বাভাবিক।

২০০১ আবার নির্বাচন হয়। সরকার বদল হয়। আবারও একই দৃশ্য। মানিনা মানবো না। সংসদ বর্জন, হরতাল, ভাংচুর, আন্দোলন। ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। বোদ্ধারা বলে এইতো বেড়ে উঠছে গনতন্ত্র। কৈশোর পেরোচ্ছে তো, হাতাহাতি একটু হবেই।

সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য এসবের কথা সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছি। এগুলো সব সরকারের আমলেই জনগনের প্রধান সমস্যা ছিল । কিন্তু একবারও এসবের জন্য একবারও আন্দোলন হয়নি। আন্দোলন, হরতাল সবকিছু হয়েছে ক্ষমতার কাড়াকাড়ি নিয়ে। তথাকথিত গনতন্ত্র নিয়ে।

অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও ক্ষমতার এই অসভ্য কাড়াকাড়িকে বলে গনতন্ত্র। এর জন্য মায়াকান্না করে, প্রবন্ধ রচনা করে, ভাবগম্ভীর আলোচনায় অংশ নেয় টিভিতে।

এইসব কারনেই বাংলাদেশের গনতন্ত্র নামক প্রচলিত অরাজকতার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামাত, জাতীয়পার্টি গনতন্ত্রের পরীক্ষিত শত্রু ।


দুই শুয়োরের যুদ্ধকে যদি গনতন্ত্র বলা হয়, তাহলে আমি সেই গনতন্ত্র চাই না।
দুই শুয়োরের যুদ্ধকে যদি গনতন্ত্র বলা না হয়, তাহলে আমি গনতন্ত্র দেখিনি।

আমি আসলেই গনতন্ত্র দেখিনি। একদিনের জন্যও নয়।

গনতন্ত্রঃ অনাগত এক অতিথি

ভোরে অফিসে যেতে যেতে মানুষের পদচারনা দেখছিলাম। হেমন্তের মিষ্টি সোনালী ভোর, শিশির স্নাত ঘাস, পাখপাখালির কিচিরমিচির। বাঁয়ের পাহাড়ী সবুজে শীতলতার ছোঁয়া। স্কুলের বাচ্চারা মায়ের সাথে রিকশায় চলমান, ফুটপাতের পথশিশু পান্তার জন্য মায়ের আঁচল ধরে দন্ডায়মান। ডিসি হিলের বৃক্ষতলায় নানা বয়সী মানুষের বিলম্বিত ক্যালরি দমন। নিয়মিত দৃশ্য।

রাস্তায় তখনো যানজট শুরু হয়নি। রাইফেল ক্লাব ফেলে আরেকটু সামনে নিউমার্কেটের কাছে ফুটপাত বেদখল করে বসানো চৌকি দোকানগুলো এখনো শূন্য। রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ডে স্তুপ করে রাখা পুঁতিগন্ধময় ময়লার পাহাড়। সরকার বলে কিছু আছে? ডাষ্টবিনের জায়গায় দোকান, আইল্যান্ডের মাঝখানে ডাস্টবিন। তুলনা মিলবে না কোথাও। এটাও নিয়মিত দৃশ্য।

সময়টা গার্মেন্টস শ্রমিকদের। কর্মদিবসের শুরুতে দ্রুতপদে এগিয়ে চলা। ধাবমান পায়ের গতিতে ব্যস্ততা। বাংলাদেশ চলছে তাদের পায়ে পায়ে। ৫০ ডলারের পায়ে পায়ে বিলিয়ন ডলারের যোগফল। শিল্প এলাকার কাছাকাছি গিয়ে বাস-টেম্পুতে ঠাসাঠাসি মানুষ ট্রাফিক জ্যামে আটক। চোখ-মুখে বিলম্বিত কর্মপ্রবেশের উৎকন্ঠা। ইটের আধলা হাতে এক পাগলা রাস্তার এধার থেকে ওধারে ছুটছে আর বলছে "হে সাবধান, হে সাবধান......" এটা নিয়মিত দৃশ্য না।

তবে পাগলের সাবধান সংকেত আঘাত করে অন্য কোনখানে। অজানা উৎকন্ঠার হালকা কাঁপুনি ভেতরে। বাংলাদেশ কী ভালো আছে? স্বার্থপর আত্মমগ্নতার বাইরে এসে বোঝার চেষ্টা - বাংলাদেশের সমস্যা আমার নিজের সমস্যা আমার সমস্যা কিনা, অথবা আমার সমস্যা বাংলাদেশের সমস্যা কি না। সমীকরন মেলে না।

দরিদ্র বাংলাদেশের কতটুকু দারিদ্র দৃশ্যমান? চরম দারিদ্র কাহাকে বলে? বিশ্বব্যাংকের দারিদ্রের সংজ্ঞা আর বাংলাদেশের দারিদ্রের সংজ্ঞা কী এক? দৈনিক ১ ডলারেও অনেক খুশী বাংলাদেশের দরিদ্র। এমনকি সিকি ডলারেও বেঁচে থাকতে পারে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ। সেই সিকি ডলারের নীচে যাদের বসবাস, তাদের সংখ্যাও বাংলাদেশে বহু লক্ষ। বাজেটের বাইরে তাদের বসবাস, কেউ কেউ এমনকি গননারও বাইরে। সেই সব মানুষও বেঁচে আছে। তাহলে ভালো আছে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশের খুব কাছের নিভৃতচারী দেশ ভুটান। দারিদ্রের সংজ্ঞাকে অর্থনীতির মাপকাঠির বাইরে আনতে সক্ষম হয়েছে এই একটিমাত্র দেশ। জাতীয় মোট আয়ের চেয়ে জাতীয় সামগ্রিক সুখকে প্রাধান্য দিয়েছে ভুটান। যার যা আছে তা নিয়ে সুখী হওয়া। বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সাথে তার একটা মিল আছে। এদেশের দরিদ্র মানুষ খুব অল্পেই তুষ্ট। সে তুলনায় উচ্চবিত্তদের অতৃপ্তি লক্ষনীয়। উচ্চবিত্তদের বিত্ত টিকিয়ে রাখার কলা কৌশলের কাছে দরিদ্র মানুষ বারবার পরাজিত। বিত্তশালীদের উত্তরোত্তর সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতায় ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বাড়ছে। চরম দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার তুলনা করলে ভুটানের দরিদ্র বাংলাদেশের দরিদ্রের চেয়ে স্বচ্ছল। কিন্তু ধনবান শ্রেনীর তুলনা করলে দেখা যায় বাংলাদেশের ধনীদের জীবনযাত্রা আমেরিকার ধনীদের সাথে তুল্য।

বাংলাদেশে ধনী দরিদ্রের পার্থক্যের এই বিশাল ব্যবধান আমাদের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি সবখানেই প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের গনতন্ত্রের অন্যতম দুর্বলতা ধনী-দরিদ্রের এই বিশাল ব্যবধান। এই দুর্বলতার কারনে দুষ্ট লোকেরা ভোটের রাজনীতির নিয়ন্ত্রন করছে খুব সহজে। কারন তারা জানে ক্ষুধা যখন প্রবল, নীতিবোধ তখন মৃত।

তাই নির্বাচন যত সুষ্টুই হোক, যত নিরপেক্ষই হোক, বাংলাদেশের সত্যিকারের গনতন্ত্রে উত্তরনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন। গনতন্ত্র বাংলাদেশে এখনো অনাগত এক অতিথি।

Saturday, November 8, 2008

সংবাদে বিভ্রান্তি : মহাকাশ




Hubble Scores a Perfect Ten
The blue ring was most probably formed after the galaxy on the left passed through the galaxy on the right. Just as a pebble thrown into a pond creates an outwardly moving circular wave, a propagating density wave was generated at the point of impact and spread outward. As this density wave collided with material in the target galaxy that was moving inward due to the gravitational pull of the two galaxies, shocks and dense gas were produced, stimulating star formation.

http://www.newswise.com/articles/view/545911/


আজগুবি খবর। পড়ে সবাই বিভ্রান্ত হবে। যাদের মহাকাশ সম্পর্কে ধারনা নাই।

পরে হাবল্ থেকে যাচাই করে পড়লাম নিচেরটা।

The two galaxies happen to be oriented so that they appear to mark the number 10. The left-most galaxy, or the "one" in this image, is relatively undisturbed apart from a smooth ring of starlight. It appears nearly on edge to our line of sight. The right-most galaxy, resembling a zero, exhibits a clumpy, blue ring of intense star formation. The galaxy pair was photographed on October 27-28, 2008. Arp 147 lies in the constellation Cetus, and it is more than 400 million light-years away from Earth.

http://hubblesite.org/newscenter/archive/releases/2008/37/

আমরা পরিবর্তন চাই না

আমরা বদলাবো না। আমাদের অতীত সোনালী।
আমরা বাঁচি অতীতে। আমরা ভবিষ্যত দেখি না।
বর্তমান মানি না। আমরা আপোষহীনা।

না, এইটা কোন কবিতা না।

মনটা ভার ভার গত দুই দিন। কথা ছিল হালকা হওয়ার। জরুরী অবস্থা শিথিল হচ্ছে, নির্বাচনী দামামা বাজছে, শেখ হাসিনা দেশে এসেছে, খালেদা জিয়া লালদিঘীতে প্রথম জনসভা করেছে। গনতন্ত্রপ্রিয় মানুষেরই খুশী হওয়ার কথা। কিন্তু আমি খুশী হতে পারিনি। মুক্তির পর পর দুই নেত্রীর প্রথম জনদর্শন কেন যেন শুভ সূচনা মনে হয়নি।

পৃথিবীজুড়ে বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। বারাক ওবামা বলছে ‘পরিবর্তন’, প্রথম আলো বলছে ‘বদলে যাও’। কিন্তু খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার মধ্যে পরিবর্তনের কোন আভাস দেখা যায়নি এখনও।

দুজনের কেউ বলেনি, আমরা অতীতের ভুলভ্রান্তি ছাপিয়ে বাংলাদেশকে সোনালী ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবো। দেখে মনেই হচ্ছে না জীবনের দীর্ঘতম কারাজীবন শেষে দুজন প্রথম জনসমক্ষে এসেছেন। কী ভুলের কারনে এই কারাবাস ঘটেছিল? আদৌ কোন ভুল ছিল কি? তাঁদের প্রাথমিক আচরনে মনে হচ্ছে না কোন ভুল ছিল দুজনের অতীতে। সব কিছু যেন ‘শুদ্ধ’ই ছিল এবং সেই ‘শুদ্ধতা’র চর্চা অব্যাহত রাখার লক্ষনও মোটামুটি পরিস্কার। কিন্তু অতীতের সেই ‘শুদ্ধতা’ জাতিকে নতুন কোন সংকটের মুখোমুখি করবে না তো?

Thursday, November 6, 2008

একজন রাজাকার ও সাধারন ক্ষমা

একজন রাজাকারের গল্প বলি। তার নাম আবদুল আলীম। বয়স এখন প্রায় ৫৫/৫৬। আমার নিজের গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমান পেশা পাহারাদার। ১৯৭১ সালে আবদুল আলীমের বয়স ১৮ বছরের কাছাকাছি। দারিদ্রপীড়িত পরিবারের সন্তান। পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি। নিয়মিত কোন কাজ নেই। মাঝে মাঝে দিনমজুর খেটে কোনমতে সংসার চালাত। বাবা মারা গেছে অনেক ছোট বয়সে। মা আর ছোট ভাই আমিনকে নিয়ে বাঁশের খুপড়ি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছিল।

যুদ্ধের শুরুতে এলাকার মাতব্বর উকিল আহমেদ হোসেন পাকিস্তান রক্ষায় তৎপর হয়ে পড়েন। এলাকার লোকজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী। আবদুল আলীমকে ডেকে রাজাকার বাহিনীতে চাকরীর অফার দেন। মাসিক বেতন ১৫ টাকা। দ্বিতীয় চিন্তার চেষ্টা না করেই আবদুল আলীম রাজী। খবর পেয়ে খুশীতে ডগমগ আবদুল আলীমের পরিবার। আল্লায় মুখ তুলে চেয়েছে এতদিনে। তিন বেলা পেটপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা হল। কাজও তেমন কঠিন না, রাতের বেলা কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে গ্রামের সামনে মহাসড়কের সেতুটা পাহারা দেয়া। দিনে ঘুম, রাতে পাহারা।

ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হবার পর ভয়ে বেশ কিছুদিন পালিয়ে ছিল আবদুল আলীম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে বাড়ী ফিরে আসে। এবং আবারও সেই পুরোনো কর্মহীন জীবন। অভাব, অনাহার, অর্ধাহার। না, স্বাধীনতা কোন পরিবর্তনই আনতে পারেনি তার জীবনে। বরং যুদ্ধের সময়টাই আরামের ছিল। যুদ্ধটা যদি আরো দীর্ঘায়িত হতো!

রাজাকার বাহিনীতে চাকরী করার কারনে কিনা জানি না, তাকে এলাকায় কোন কাজ কর্ম করতে দেখা যেতো না। মুখচোরা হয়ে থাকতো সবসময়। পরে কে যেন শহরে রিয়াজুদ্দিন বাজারে দারোয়ানের চাকরী যোগাড় করে দিয়েছিল, যা এখনো তার পরিবারের একমাত্র জীবিকা।

আমি গোলাম আজম-নিজামীদের ঘৃনা করি, উকিল আহমদ হোসেনকে ঘৃনা করি, কিন্তু আবদুল আলীমকে কখনো ঘৃনা করতে পারিনি। এমনকি সে যে রাজাকার ছিল সেটা আমার মনেও থাকে না। কারন তাঁর রাজাকার পরিচয়ের চেয়েও তাঁর অভাবী সংসারের পরিচয়টা অনেক বেশী প্রকট। তাছাড়া সে কখনো পাকিস্তান রক্ষার কুযুক্তির বানী শোনায়নি অথবা ইসলামের দোহাই দিয়ে তার রাজাকারী জায়েজ করারও চেষ্টা করেনি। বরং সে যে রাজাকার ছিল তার জন্য অনুতপ্ত হতে দেখেছি।

যদি কেউ বলে শেখ মুজিব রাজাকারদের সাধারন ক্ষমা করে মস্ত ভুল করেছিল, তখন আমার আবদুল আলীমের কথা মনে পড়ে যায়। বুঝতে পারি শেখ মুজিব কাদেরকে ক্ষমা করেছিল, কেন করেছিল। অসহায়, অভাবী মানুষ যারা নিজের দুর্দিন কাটাতে পাকিস্তানীদের চাকরী করতে বাধ্য হয়েছিল, তাদেরকেই ক্ষমা করেছিল শেখ মুজিব। চিহ্নিত ঘাতকদের নয়।

আবদুল আলীমদের ক্ষমার ফোকড় দিয়ে যখন নিজামী-মুজাহিদদের মতো আত্মস্বীকৃত গর্বিত রাজাকারেরা পিছলে বেরিয়ে যেতে চায়, তখন কী করা উচিত?

জাল ভোটের ভেজালে

একবার জাল ভোট দিয়েছিলাম। কিভাবে, বলছি সেকথা। ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচন ১৯৯৪। ভোটের আগের রাতে ঘনিষ্ট এক বন্ধু বললো, তোকে আমার এলাকায় ভোটার করেছি, রাতে আমার বাসায় থাকবি ভোটটা দিয়ে সকাল সকাল চলে আসবি।

আমি বললাম, জাল ভোট? না বাপু আমি এখানেই ভোটার, আমার আসল ভোটটাই দিতে চাই।

বন্ধু বললো, জাল ভোট না তো। তুই আগে ওই এলাকায় ছিলি না? তোকে তো জেনুইন ভোটার করেছি। তোর দুইটা ভোটই তো জেনুইন।

আমি দোনোমোনো। বললাম, না, তুই যা। ধরা খেলে খামাকা জেল খাটতে হবে আমার।

সে অপমান করার সুরে বললো, তুই শালা একটা *****ই, ভীতুর ডিম। তোর ইয়ে আছে কি না সন্দেহ আছে।

অপমান সহ্য হলো না, বললাম - চল।

পরদিন সকালে ভয়ে ভয়ে নকল ভোটটা সফলভাবে দিয়ে বুড়ো আঙুলে কালি মেখে বেরিয়ে এলাম ভোটকেন্দ্র থেকে। আসল ভোট দিতে যাবো এখন। রিক্সা নিলাম একটা, বুকে সাহস লাগল এতক্ষনে। কিন্তু ফ্যাকড়া লাগলো অমোছনীয় কালি নিয়ে। শালার এমন আঠালো কালি, কিছুতেই মুছে না। সবকিছুতে এত এত ভেজাল, মাগার এই কালিতে ভেজাল দিতে খেয়াল নাই কারো। মনে মনে ক্ষেপে উঠলাম ভেজালকারকের অদক্ষতার উপর। ভালো মুশকিলে পড়লাম তো!। আমার আসল ভোটটাই মারা যায় যায় আর কি। হঠাৎ খেয়াল করলাম ভোটকেন্দ্রের পাশের কচুক্ষেতে খুব ভীড়। গিয়ে দেখি কচুর ডগার রস দিয়ে কালি মোছার মহোৎসব চলছে সেখানে। বাহ্। দারুন তো? বাঙালীর এহেন আবিষ্কারে গর্বিত হলাম আমি। কে বলে বাঙালী পিছিয়ে? ঠেকা এবার আমারে! কচুবনে নেমে পড়লাম তাড়াতাড়ি।

কচু থেরাপীতে আধাঘন্টার মধ্যে কালি ছাফা। চাপকলের পানিতে ধোয়া ফকফকা হাত নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সামনে এখনো জনা পঞ্চাশেক আছে, দেরী আছে অনেক। তবু নিজের এলাকা, জেনুইন ভোট, অতএব মেজাজ খোশ। ঘন্টা দুই পর আমার সিরিয়াল আসলো।

"ভাই, আপনি কি জেনুইন? আপনার ভোট তো দেয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।" দুম করে জানালো নির্বাচন কর্মী।

বাজ পড়লো আমার মাথায় - "কী??"

"হতেই পারে না। আমি এই মাত্র আসলাম। কে দিলো আমার ভোট? এটা কিছুতেই মেনে নেবো না।" উচ্চঃস্বরে বললাম আমি।

"দুঃখিত ভাই, কিন্তু কিছু করার নেই।" সহমর্মীতার সাথে বললো নির্বাচন কর্মী।

দুপুর গড়িয়ে গেছে। খিদা পেটে কয়েক ঘন্টা রোদের মধ্যে দাড়িয়ে আছি আমার জেনুইন ভোটটা দেয়ার জন্য। আর শালারা এখন বলে কিনা ভোট দেয়া হয়ে গেছে। মগের মুল্লুক? সবগুলা বদমাশ। গালাগাল করতে করতে বের হয়ে বেরিয়ে আসছি এমন সময় এক বন্ধু পোলিং এজেন্ট ডাক দিল আড়ালে।

ফিসফিস করে বললো, "তোর ভোটটা তো দিতে দেখেছি তোদের বাড়ীর বশিরকে। আমি ভেবেছিলাম ধরবো। কিন্তু পরে চিন্তা করলাম তুই হয়তো অসুস্থ, নিজে না এসে ওকে পাঠিয়েছিস। তাই সীন ক্রিয়েট না করে চুপচাপ ছিলাম।" পোলিং এজেন্ট বন্ধুর রাজনৈতিক পরিচয় জানা ছিল। পরিষ্কার হয়ে গেল কেন বশীর ধরা পড়লো না।

বশীর আমাদের বাসায় থাকে, আত্মীয় কিন্তু ভোটার না এখানকার। তার পছন্দ ছিল বিএনপি'র প্রার্থী। যখন শুনেছে আমি অন্য এলাকায় ভোট দিতে গেছি, ফাঁকতালে ভোটটা মেরে দিয়েছে নিজের পছন্দের প্রার্থীর জন্য। কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম কেন্দ্র থেকে গজগজ করতে করতে। বশীরকে ভালো একটা ধোলাই দিতে হবে আজ।

ভালো একট শিক্ষা পেলাম আজ। এক ভোটে দুই অনুভুতি। নিজে জালভোট দিলাম, আবার জালভোটের সাজাও পেলাম। জালভোট দিতে গিয়ে নিজের জালেই ধরা পড়লাম।

জামায়াতের রাজনীতি ও আমার বিবমিষা

বাঙালীমাত্রেই রাজনীতি প্রিয়। রিকশাওয়ালা থেকে শিল্পপতি পর্যন্ত সবারই নিজস্ব রাজনৈতিক পছন্দ অপছন্দ আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় রাজনীতিতে মাথাটা আরেকটু কম ঘামালে দেশ আরো এগোতে পারতো। তবু খাওয়া-পরা-ঘুমের মতো রাজনীতি আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু সময় অধিকার করে রাখে প্রতিদিন। টিভিতে খবর দেখতে দেখতে কিংবা খাবার টেবিলে সপরিবারে রাজনৈতিক তর্ক খুব স্বাভাবিক দৃশ্য এদেশে।

জামাতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন কমিশন নাটক করলো একটা। তা নিয়ে তোলপাড়। ব্যক্তিগতভাবে জামাতে ইসলামীকে অপছন্দ করি তিনটি কারনে। প্রথমতঃ ১৯৭১, দ্বিতীয়তঃ ইসলামের বিকৃতি, তৃতীয়তঃ ভন্ডামি। তবে আমার চোখে তাদের যেগুলো তাদের দোষ, সমর্থকদের চোখে সেগুলো গুন। আমি 'রাজাকার' বলি গালি অর্থে, কিন্তু জামাতের সমর্থক এটাকে ইসলামের সেবক মনে করে। জামাতের সংসদে আসন সংখ্যা বেশী না হলেও তাদের ভোট ব্যাংক তাদের যোগ্যতার তুলনায় অনেক বেশী। এর প্রধান কারন দলটির সাংগঠনিক দক্ষতা নয় বরং প্রধান কারন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির ধারা। এই দুই দলের কল্যানে জামায়াত মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকে সব সরকারের আমলে।

বিএনপি আদর্শভিত্তিক কোন দল নয়। বরং দলটির মুল ভিত্তি আদর্শহীনতা। তবু দলটি গড়ে উঠেছে কিছুটা আওয়ামী লীগের ব্যর্থ শাসনে বিরক্ত মানুষের বিপরীত সমর্থনে, আর কিছুটা জেনারেল জিয়ার ব্যক্তিগত সামরিক ক্যারিশমার গাল-গল্পে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সকল প্রাক্তন মুসলিম লীগ, আওয়ামী আশীর্বাদ বঞ্চিত হতাশ সামরিক-বেসামরিক আমলা, রাজনৈতিক নেতা, জিয়ার অনুগ্রহভাজন হয়ে আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছিল। সেই প্ল্যাটফর্ম পরবর্তীতে বিএনপি নামে পরিচিত হয়েছে। আদর্শ একটাই, আওয়ামী-বাকশালী ঠেকাও। ৭০-৭১ সালে আওয়ামী লীগের পেছনে সমবেত হওয়া মানুষের সমর্থন ৭৩-৭৫ সালে এসে ব্যপক হারে ধ্বসে পড়ে নিদারুন অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারনে। আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা হারানো সেই বিশাল জনগোষ্টীকে জেনারেল জিয়া সামরিক ক্যারিশমায় নিজ আস্থায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন শীঘ্রই। জিয়ার সময়কালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারনে বিএনপির সমর্থন বাড়তে থাকে সারাদেশে। ঠিক সেই সময় জিয়ার বহুদলীয় রাজনীতির ছাতা মাথায় স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ। পরবর্তীকালে আরেক লম্পট স্বৈরাচার হু.মু.এরশাদের ধর্মীয় ভন্ডামির রাজনীতি জামাতকে হৃষ্টপুষ্ট হবার সুযোগ করে দেয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জামাতের প্রতি আশীর্বাদ প্রসারিত হয় আরো। গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিএনপি আমলের শেষের দিকে ক্ষমতার রাজনীতির নীতিহীন ভাগাভাগিতে জামাত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে অবৈধ প্রেমের ঘটনা ঘটে যায়। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতার স্বাদ পেলে জামাতের সাথে অবৈধ প্রেমের অবসান ঘটে আবার।

১৯৯৬ সালের পর থেকে জামাত নতুন পদ্ধতির রাজনীতির চাষ করা শুরু করে। হরকতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীর, বাংলাভাই, এরকম অগনিত আন্ডারগ্রাউন্ড দল ও পান্ডার জন্ম দেয় জামাত। শুরু হয় বোমা কালচার। লক্ষ্য সব প্রগতিশীল মঞ্চ। কিন্তু ভুলেও একটা বোমা বিষ্ফেরিত হয়না বিএনপি বা তাদের সমমনা কোন সংগঠনের অনুষ্ঠানে। ২০০১ সালে বিএনপির ওয়ার্কিং পার্টনার হিসেবে ক্ষমতার আংশিক স্বাদ পেয়ে বিএনপির কাঁধে পা ঝুলিয়ে বসে জামাত। ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার পরিকল্পনা এগিয়ে চলে। ২০০৬ এর শেষের দিকে যার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যে কারনে ১/১১ কে বিধাতার আশীর্বাদ মনে হয়েছিল।

১/১১ এর পর বিএনপির চেয়ে জামাতের হতাশা ছিল লক্ষনীয় পরিমান বেশী। কারনটা কী? বাড়া ভাতে ছাই? কিন্তু পাতের ভাত কেড়ে নেয়া হলেও হাল ছাড়েনি জামাত। বসে থাকেনি একদিনও। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে এই ত্বত্তাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরী অবস্থার অবসরে ঘরের- বাইরের সব নেটওয়ার্ক মেরামত-সম্প্রসারনে ব্যস্ত থাকে দুই বছর। সেই নেটওয়ার্কের মজেজায় দুর্নীতিবিরোধী সাড়াঁশি অভিযানেও অক্ষত থাকে জামাতের নেতাকুল। গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়েও রাস্ট্রের সর্বোচ্চ কর্নধারদের সাথে হাসিমুখে সভা করে বেরিয়ে আসে তাদের নেতারা। মানুষ টিভিতে সেই মুখ দেখে প্রতি সন্ধ্যায়, অথচ পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না।

হাসিনা-খালেদা-মুজাহিদ এই তিন জনের মধ্যে কে বেশী শক্তিশালী? উত্তরের জন্য বেশী ভাবতে হয় না এখন।

এমন শক্তিমান একটা দলকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেবে না, এধরনের চিন্তা কি বাস্তবসম্মত? জামায়াত নিবন্ধন পাবে এটা নিশ্চয়ই পুর্বনির্ধারিত ব্যাপার। না হলে নির্বাচন কমিশনের শুনানীতে হাজির না থেকেও কিভাবে নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেয়ে যায় জামাত। মাঝখানের প্রহসনগুলো সেই জলিল-মান্নান সংলাপ নাটকের মতো সময়ক্ষেপন। সরকার কি কোথাও অসহায়? কোথায়?

আমার এক উদারপন্থী বন্ধু বলে, ওরা রাজনীতি করলে অসুবিধা কোথায়, নির্বাচন করলে সমস্যা কোথায়, ওরাও তো দেশের নাগরিক।

বন্ধুকে বলি, ওরা এদেশের নাগরিক ঠিক আছে, তাছাড়া জামাত করে তো আমাদেরই কারো কারো মামা-চাচা-খালু-ভাই-বেরাদার। তাদের তো ফেলে দিতে পারবো না।

কিন্তু যে পতাকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে লাল করেছিল এ দেশের মাটি, সে পতাকা ওদের গাড়ীতে উড়বে, এটা আমার সহ্য হয় না। যারা এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের দাওয়াত দিয়ে এনে লাথি মারার মতো দুঃসাহস দেখায় তাদের হাতে এ দেশের সংসদের চাবি কতটা নিরাপদ? যারা এখনো শ্লোগান দেয় 'একাত্তরের রাজাকার গর্জে ওঠো আরবার', তাকে আমি কী করে বুকে নেবো। সে আমার ভাই হোক আর খালুই হোক।

স্বাধীনতার এত বছর পরেও যাদের বিশ্বাসে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি, যাদের আচার আচরনে একটুও অনুশোচনা দেখি না, সেই ঘাতকদের, দালালদের, রাজাকার-আলবদরদের এদেশের রাজনীতিতে, সংসদে হেসে খেলে বেড়াতে দেখলে সত্যিই বিবমিষা হয়।

Monday, November 3, 2008

Development Is A Continious Process [Jan 2002]


DEVELOPMENT IS A CONTINUOUS PROCESS


Introduction:
Geographically Bangladesh is located in a natural disaster zone. A large number of rivers split the country into many low lands and plain lands. To control all these natural obstruction Bangladesh have to spend a big amount every year. Most of the money is from foreign grants and loans. Naturally it added a burden to our economy. Past 30 years we received as many as 36 billion US dollars debt and still we have a balance of debt around 17 billion dollars. A major portion of this money suppose to use for developing the infra structure of our country. But there is an allegation that only 25% of this money was used for the original purpose. Balance 75% money was misused! A recent seminar of an economist forum revealed this information. How a large amount of foreign aid was misused? There is no clear explanation from any source. But lets have a simple look how the interruption of development affects to our total economy and how we can overcome it. For better understanding we can take it in 3(three) parts, now we will look at the 1st phase.


PART-I (Development Criteria & Obstructions)

Development is a Process:


Development is not a destination rather it is a process. All developed country reached the destination of prosperity under a constant active development process for years. There are a lot of hardships involved to continue the process. Except few, all of the European countries had to pass crucial financial crisis until 1950s. Most of the East and South-East Asian country was under poverty level 30 years ago. But they all crossed that line and some of them are become economic giant by end of 20th century.

Where was the magic? The magic is A Continuous Development Process in every sector.

Regardless the democratic or autocratic governmental system development was on its own way in all those countries. Change of political government didn’t affect the development works.

Primarily a total development needs to contemplate following elements:

1. Higher Education Rate
2. Standard Infra-structural Facilities
3. Social and Political Stability
4. Implementation of Rules of Law
5. A Government with Dynamic Bureaucratic System

In the context of Bangladesh we cant find any of above elements in a satisfactory rate. That causes us to remain a backward and poorest nation in the world. What are the reasons that interrupted our development process? Among other factors we can see one of the main reason is the political change of government. Changes in power have a negative impact on our economy always. It becomes a kind of common tradition that whenever power hand over to a new party, he just simply blame to previous ruler for the bad shape of economy and never consider other factors involved.

In past 31 years changes of political government was as follows:

a. 1972-1975 Awami League
b. 1976-1981 BNP
c. 1982-1990 Jatiya Party
d. 1991-1996 BNP
e. 1996-2001 Awami League
f. 2001-2006 BNP

All the government works under some particular agenda for development. Government allocates the money under the program named ADP (Annual Development Program). A big amount of ADP is procured from Foreign Debt and Aid. But many of the projects were remain half done due to the inefficient management and corruption in the working process. Coordination between different wings of government is another quandary that is helped by poor bureaucratic system. Even the decision making for a project takes several years. But the most imperative problem in the development work is political change of a government.

It interrupts the development work severely. Politicize everything including development works is an impractical, but a common trend in Bangladesh. For example, the project taken by BNP government cannot expect sincere follow up by next AL government and BNP will do same way with AL project. Our 31 years experiences have seen this trend for many times. No government praise any project taken by previous government if they are political rival.



Where the 36 billion dollars used


During past 31 years Bangladesh received about 36 billion dollars foreign debt. It’s not a small amount for a country of our size! But where all those money had been utilized?

Food? Education? Public health? Electricity? Roads & Highways? Tele-communication? Housing? Urbanization? Social Security? Disaster protection? Poverty alleviation?

How many of above sector have been developed to a satisfactory level? We only achieved the target of the production of rice. Not any other sector developed to the minimum satisfactory level.

All the development projects can be fallen in the following 4 types groups:

1. Successful project
2. Half-Successful project
3. Failure project &
4. Unfinished or pending project

Government should take a measure how many projects have been fallen in which group and why? Who is the responsible for the failed project and why unfinished projects were not finish in due course? Another remarkable factor must take into account that most of the government project cannot be finished with the budgeted cost. Sometimes the cost increased more than 100%. It happened to Barapukuria coalmine, Madya para shila project, Tista dam, KAFCO and many other projects. To avoid overlapping time and cost government should consider all the related factors carefully before approving any project. During implementation keeping it in mind that we are using lending money and repayment will be done from our own resources including the interest that increases our budget deficit.



PART-II (Development of Other Asian Countries)

How other Asian countries Excelled


Countries of East and South East Asian region are used to pick up as a development model for Bangladesh. But did we do what we supposed to do? How they have developed themselves to a certain level? How they have attracted huge foreign investment? How they managed to use foreign debt to develop the infrastructure that helped them to enhance the foreign investment at a large scale?

They have designed and constructed their country to attract foreign investment. As foreign investment enhanced, their economy had been boosted in a short time. Development reaches to a satisfactory. That's why many of those countries stopped borrowing external debt from IDA etc.

We may take a look at some Asian countries that stopped borrowing from IDA as per mentioned year below:
Indonesia: 1980
Philippines: 1991
Thailand: 1979
China: 1999
Korea: 1974
None of above countries enjoyed better financial stability than Bangladesh even 30 years ago. The have had worst infra structure facilities than Bangladesh. But most of the country achieved financial stability within two decades. From the experience of south East Asia it has been found that political stability is the main pre-requisite to achieve the goal.

Where Bangladesh is
What is the position of Bangladesh? Lets look at some figure for the year 2001-2002
[In million U$]
Export 6476.0
Import (9363.0)
Tread Balance (2887.0)
Current Transfer 2316.0
Foreign Investment 174.0
Foreign debt (1999-2000) 1575.0
Total FC reserve end of 2001 1305.5
[Source: Bangladesh Bank report]

Our trade balance is negative by around 3 billion US dollars. To recover this deficit we need more foreign currency to be added with inbound dollars. Our own major source of foreign currency is just two, Inward remittances & Export earnings. We must enhance these two areas to cover up the deficit.

Increase Inward Remittance

Firstly, inward remittance can be increased in large scale if all the Bangladeshi people living abroad send money to Bangladesh in legal way instead of 'hundee' etc. Government should emphasis Middle East and South East Asian region priority base. Because most of the less educated Bangladeshi workers are employed there and they send a huge amount every year by using illegal channel. One of the reasons for sending money by illegal channel is ignorance and lack of consciousness. For many of them, banking process is really a difficult matter and many of them never maintain a bank account. In that case our foreign missions and embassies can play an important role to motivate them to use legal channel for sending all their money. A co-ordination is needed between embassies and foreign branch of local bank. If this work can be done successfully that may add as much as 1 billion dollars to our economy.

Recently government took some initiative to make it easy to send remittance easy way. Electronic Transfer System quickened the receipt of money. But the best another alternative will be, if government can set a kind of booth in all the foreign embassies in different country who will receive money from the people and send it to Bangladesh. May be Sonali Bank can help in this area. To encourage using banking channel, the traditional formalities of money transfer can be avoided. People will deposit the money to the booth with the address of recipient and rest of the job can be done by embassy. Whatever, there must be a change.

Boost Up Export Sector:

Secondly, we must boost up our export sector. Now only garment sector contributing about 75% of our total export. Yet garments sector is the only better source for foreign currency. Age of garments business is around 20 years. Needless to say that most of the business like banks, insurance companies, forwarding company, Transport business, accessories suppliers etc surviving in Bangladesh depending only on garments sector. If this sector is collapsed the whole economy will be jeopardized. Destruction will be immeasurable. Already Bangladesh started facing the hardship in this garments business and we must find an alternative immediately. To boost up our export we need to attract foreign investment very badly. Government keeps trying to attract investors in different ways. But we should remember that by the Seminar, Workshop and Exhibition in not enough to attract foreign investment. We really have to understand that. An investor considers Investment Environment for investing anywhere. Bangladesh must create the environment if she really wants to have a large amount of foreign investment. Without creating a standard infra structural facilities, inviting foreign investor is just useless. It is simply like inviting a guest to your home without preparing food and accommodation.

Not only foreign investment, if the climate of investment is not good, we can't expect local investment too. If the investment is not safe, if the return from investment is uncertain no one will utilize their money for any business or industry. So, we must ensure the environment before expect mass development in investment.


PART-III (Development and Enhancing the Investment Environment)



"We have to create the right climate for bigger and bigger investments. There are three investment climates that we should keep our eyes fixed on ---- domestic, international, and regional. The domestic investment climate depends heavily on the international climate. The international climate which is going through a lull, will soon start picking up. But when it does, will it come our way? We must prepare ourselves quickly to answer this question positively. If our law and order situation continues to deteriorate, as it is doing now, we can forget about foreign investment. Corruption and violence have become the order of the day. Nothing can work in an environment of limitless corruption and deteriorating law and order. Even the poor borrower of micro credit is not sure if her investment is safe. Restoring law and order and bringing down the corruption level to a level consistent with at least the SAARC countries." Dr. Muhammad Yunus in The Daily Star.

What is the Investment Environment?

The environment of investment can be defined as the composition of various infra-structural facilities that create the environment for investment. As such, there are five very important pre-requisites:

1. Port
2. Tele-communications
3. Electricity
4. Inland road transport etc.
5. Rules of law

To arrive at a certain level of our goal, we must have an "uninterrupted development process and no political interference in the development works." Only then will we be able to reach a satisfactory level in the above five pre-requisites. Singapore ensured it. Taiwan ensured it. Malaysia ensured it. Indonesia ensured it. The Philippines ensured it. Thailand ensured it and recently Vietnam also ensured it. They all understood the importance of the environment of investment and prepared their country to adopt foreign and local investment in the industrial sector. There is no other alternative.


A Brief Comparative Study:

I would like to compare our country with a nearby country, Vietnam, whose economy, size, and many other factors are similar to Bangladesh. A large number of prominent foreign companies have invested over there within a short time. In the last decade, countries such as South Korea and Malaysia were our development models. But they are already far ahead, and we can now see only Vietnam, which is experiencing its highest growth rate in GDP in recent history, as a country that is comparable to Bangladesh, who is also going up within very short time.

Only a few years ago, Vietnam opened her doors to foreign investment and the following companies entered there for investment:

Hi-tech : IBM, Oracle, General Electric, Nokia, Siemens, Philips,
Electrolux, ABB

Automobile : BMW, Ford, Daimler-Chrysler, Toyota, Mercedes-Benz etc.

Aeronautics : Boeing

Why does Bangladesh not have any foreign investors comparable to those listed above? Why have these firms moved to Vietnam? Why not Bangladesh? What is special about Vietnam?

The answer is that Vietnam created the Environment for the Investors before they invited foreign investment. From my recent visit to Vietnam and by a brief study, I have determined the following elements were the basic factors enabling Vietnam to change their economy:

1. An education rate of 94% (about 99% of the population high school enrolled)
2. Well established infra-structural facilities
3. A strong but dynamic bureaucratic system
4. Lowest Crime rate
5. Clean and well organized cities

Bangladesh still has the chance to achieve the above goals successfully if our leaders and policy makers proceed with sincerity, and if they act less Politically and more Economically.



Conclusion: Let's Look at Our Own Resources

The above analysis states the necessity of the existence of a continuous development process in Bangladesh. No political or non-political interruption should be allowed in any development works. This process requires not only the building of infrastructure, but also improvements in education, in law and order, in the bureaucratic system, in all sectors. Bangladesh needs to identify the areas that have huge potential for an affluent future. It must eradicate all of the old complexes, such as poverty, overpopulation, corruption, hunger, and criminal activities. We have to recognize and take advantage of the fact that Bangladesh is the country of highest arable land in the world, with the highest fertility. We can produce our own food and we can use our own energy sources for industrial development.

Having energy resources is a great advantage for any country that is working to be industrialized. Bangladesh has big reserves of natural gas--enough for its own use for 20 to 50 years, depending on the growth rate of development. In addition, there is another valuable resource, largely unexplored in different places of southern Bangladesh.

Locally, it is called "black gold." Black gold is the popular term for the minerals lying in Cox's Bazaar and the surrounding area. The real names are Titanium, Zircon, Rutile etc. All of these are blended in the sand of the beaches in the area.

According to a valuation survey, in 1992-93, the estimated value of those minerals is (USD) $2,620,974,561,403.00!!!

This price is beyond our imagination. To obtain this high price, we need to PURIFY the minerals to a certain level. The purification process is difficult enough and costly, no doubt, but not impossible. Recently, a lease agreement was signed by an Australian company, International Titanium Resources. From a different source it has been found that the deal was not fair and favorable for us. We will not be able to get the price we are supposed to get. The agreement was made by bypassing the local experts who were on the development committee from an earlier stage. We therefore wish for the government to review the deal again and check to see if there is any irregularity and reach a final decision only after consulting with local experts from BUET etc.

The proper utilization of natural resources and human resources can be a powerful tool for substantial changes in Bangladesh within a short time. Bangladesh is a land of great undiscovered potential. Let's unearth the opportunities from our own golden soil.

Teen: Age of Spoil or Blooming [Feb 20, 2002]

3 OF US

……Hanif is in jail now. 7 cases against him including 3 murder case. Not married yet.

……Shahin is a Civil Engineer and working in a large multi-national company. Married
recently. No children yet.

……I (Mahmud) am a teacher of a government college. Married and one daughter.

THREE of us were “manik-jor” in our early age. We lived together, study together, play together in fact our all routine was same during our studying in school. After SSC we admitted different college. This was the turning point of our life, I can feel it now. But that time we didn’t realize that we will be changed dramatically and we will be inhabitant of a separate world. But within 15 years of our SSC exam, that become the reality. We still friend but Hanif is far distant from us.

But how things have been changed? I analyzed it from different point of view.


WE STARTED TO APART

After entering college life our routine was changed. Each of us have found new friends in new campus. We learned to smoke for the first time. We fell in love for the first time. But Hanif was in little advanced than us. He introduced to the dark world. He obtained some ‘ganja’ friend and ‘ganja stick’ became part of their everyday life. Also he started to return home late. It also have been noticed that his parents never complained about his late arrival home. In school we 3 used to meet every day, every hour except sleeping time. But that was extended to a week, a month and then a year. Eventually Hanif become a classified listed criminal of city and a distant friend from two of us. Not that we didn’t try to keep him away from dark world, but that world become so sweet for him suddenly.


HOW PARENTS SPOILED A CHILD

Late teen is very sensitive time for youth, most important turning point of life. Thousands of Hanif is growing in our society every year. Apparently because of political instability, unemployment, social unrest is responsible for that. But from a close observation to few family and Hanif gives us different signal.

A teen boy/girl can be spoiled by mishandling. “Over-care” and “no-care” both are detrimental for upbringing a child. In many cases I found that parents blindly support all activities of his son. In Hanif case what happen is:

1. His parents didn’t mind his late arrival at home regularly.
2. His parents allow him to spend countless money and he used to enjoy absolute freedom in college life.
3. His parents were very much satisfied with his SSC result and admission to a reputed college.
4. His parents didn’t check who were in his friends during his college age.

Above all elements are good enough to spoil a good boy. Placement has an important role to build one’s character. But that’s not all. Person’s wrong choice of freedom can make different result. Hanif had good chance to make his life in correct way in but he came in touch with wrong group and he didn’t face any control from his family. Need to mention one thing here, his parents never had good relation with each other and they rarely care about the kids instead of their conjugal fighting.


A FUTURE HANIF

Hanif couldn’t pass HSC and that is end of his student life, but he turned to a student leader soon and lead a student front of a damn powerful political party. He were from a solvent family, but he himself became rich within 7/8 year of his leadership in the college. We will not surprise if he nominated for MP in next election and he is expected to be out of jail before hand. We were too shocked by his development(!) that we forgot to hate him. Probably we will hail him when he will be a proud member of Sher-e-Bangla Nagar MP club.

Never noticed any survey done on the background of existing urban terrorist in Bangladesh. If there is any, surely many of them will have similar background as Hanif. Surely many will be found that due to the carelessness of family, the teen boys turned to the underworld criminal and a part of them already involved with leadership of country. Politics, social elements are going to be controlled by them. Many can expect upcoming social chaos in near future if we can’t stop this trend.


PARENTS LIABILITY IN NATION BUILDING

Each family may consider to monitor the activity of their teen boy/girl. Not to let them spare the lots of money in early age even if from rich family. Not allow out of home late at night. Talk to their friend time to time. Watch them. This is not so much painful job if you think of a spoiled future of your kids.

Unless a parents supervision and fair education system jointly work, no hope is waiting for the nation so far. Family is the best place to build a nation.

BTTB Disconnects ISPs [Nov 22, 2001]

Date: Thu Nov 22, 2001 3:05 am
Subject: Technology Watch: BTTB Disconnects ISPs : Bravo!


Justice is equal for all.
Law should apply to all equally.

The decision taken by BTTB is appreciatable. But I cant be happy as much I
should be.

Because:
1) I don't know whether BTTB will play same role with its Telephone bill
defaulters (including the unpaid bills of our honorable parliament members)
or not. I think that amount and overdue time is much more bigger than those
defaulter ISPs.

2) The decision of disconnection have been implemented very quickly. Its a
good example for all other government services. But to get a telephone
connection we can't find this speed even after paying speed money. We wait
for a long time, we pay speed money (!), we take recommendation from
ministers of local MPs etc and than we get a connection.

3) BTTB took this action based on the decision from Telecom Ministry. But we
all know that Bangladesh going to loose another opportunity to have fiber
optics connectivity due to the indecisiveness of same ministry.

Communication is most important for any country and it must be handled with
utmost care. The company who is dealing with international business
send/receive all kinds of informations by e-mail. Some company (like ours),
have to communicate with buyer continuously, cant endure even one hour
interruption (fortunately we are not with disconnected ISPs). I don't know
exactly how many company have to have to face big problem for this
disconnection.

Its Ok to disconnect when someone is defaulter. But since the service
related with public interest BTTB had to give a notice in the newspaper in
advance about the disconnection and business users could have time to manage
alternate way for their communication. This courtesey isnt unusual even in
our country. PDB, RAJUK other government agency publish those kinds of
public notice in the newpaper round the year. But BTTB didnt give any notice
in the newspaper.

So, I can't give my point to BTTB for this creditibility as some alochoks
do. Only sufferer knows the pain.

Peace for all,


______________________________________________________________________________

[M:MS] This waa in response to Emanur Rahman's message at:
http://groups.yahoo.com/group/alochona/message/4712

Razakar: A true story [Dec 20, 2001]

Date: Thu Dec 20, 2001 9:43 am
Subject: Razakar: A true story


Dear Alochoks,

Let me tell you a true story. About a razakar in my own village closely
known to me. He is Abdul Aleem. A poor helpless and landless guy. He never
have a chance to go to school. So he dont know even how to sign his name. He
is literally a "shorbo hara". He lived with his mother and a younger brother
in a small bamboo-made house. Basically he was jobless and only sometimes he
works as a daily laborer. He was only 18 during the liberation war of 1971.

Abdul Aleem joined the war as a member of razakar force led by the local
peace commetee chairman. No ideal or philosophy works for this participation
except his appetite. Yes, this an occupation for him during the war and he
could earn Tk.15.00/month. He was happy to get this job, because he was able
to buy food for his family everyday.

The war is over and Abdul Aleem returned home from the war field and again
jobless days. No, the war didnt change his life at all. His life remains as
before. Now he is about 50. Yet he is struggling to buy food for his family.
Before last eid he came to me for some help. I try to do as much I am able
to do. I hate razakars true, but when I met Abdul Aleem, I cant think that
he is a razakar. Because his first identity is a Struggling Human Being. He
always shy about his role in 1971 even though he was forced to be a razakar
to meet his appetite. I can forgive them easily. I think there are thousands
of Abdul Aleem in Bangladesh. Sheikh Mujib declared general amnesty for
these peoples only.

But who still didnt accept the liberation war positively and continuing
their activities against all pro-liberation people, how can we forgive them.
Why should we do? Why they shouldnt be shy for their role in 1971 like
Abdul Aleem? Why they keep trying to spread out the wrong concept of
liberation war among the youths of this age?

Speaking to the young people like Mr Arif Joarder. Brother, can you forgive
a killer who murdered your father or mother or brother with a cool plan? I
am sure you will not forgive. But what do you feel if other people of your
city forgive and forget about the killings? Because other family didnt loose
any member and because you are minority victim among them. Will you accept
that? I am sure NO. So, please think same way for the families who had to
sacrifice their relatives life in 1971 and their feelings.

Or, can you justify the Israeli killings of Palestinian people for the sake
of majority or minority? All western powers are majority in Security Council
who directly or indirectly supporting these killings. Because they are
majority so UN cant take any step against Israel. Is that OK? Do you think
that US and allies attacks are right action in Afghanistan?

No brother, you cant justify everything just by majority. It shouldnt be.
Bangladeshi peoples are basically emotional. So their spirit doesnt survive
for a long time and they can forget anything very easily.

Forgive or forget the razakars doesn't have that much relation with our
development. Yes we must look forward instead look back. But that doesn't
mean to forget our history, our pains. We can forgive a person if he ask for
it. But why should we cry for the forgiveness what is not asked yet? Even
who feel proud to be a razakar? Didn't you hear (or read in the newspaper)
the slogan "amra sobai razakar, mukti joddhara bangla chhar" in last
October? I heard it. So for the honor of those who sacrificed their only
life for the sake of the independence, I cant forgive. I cant forgive him
who still proud to be a razakar or who don't feel shame for his role in
1971.

I am not asking for the punishment, but for the general amnesty they must
apologize to the martyrs for their wrong activities in 1971. Until that
nobody have the ETHICAL RIGHT to FORGIVE them.

Peace for all,

ONE Country, THREE Education [Jan 30, 2003]

Date: Thu Jan 30, 2003 6:03 pm
Sub: [ALOCHONA] ONE Country, THREE Education

Dear Alochoks,

Don’t you think it is time for us to change our education system and
existing curriculum?

Not being an expert in the education sector, one can easily see how
differentiate our education system. The discrimination emerged from the
social class and financial ability. Three basic segregations can be found in
total education system from a quick view:

1. Regular Bangla medium school, college, or university
2. English-medium kindergarten, school, college/foreign affiliation
universities
3. MADRASSAH education

The maximum number of students is in the regular Bangla group, and this is the main stream.
education system of a country. Next to this, the Madrassah group takes second.
position. The English education trend has grown recently, and students are
increasing continuously in the last few years. This is the 3rd group.

If we look carefully, we will find that the three basic groups have three different
social class, and they have obvious discrimination in the quality of
education. Economic conditions play the most vital role here. Bangla school
is for the middle class, English school is for the elite class, and Madrassah
Education is mostly for poor villagers.

What answer I look for in this article is: How did the country adopt three kinds
of the education system without having any government declarations? Government
allocate the highest amount of money for education every year. But where is the
governments control the quality of education? What is the official
declaration of our education system? Ever seen any government comment about
What are the three kinds of general education in Bangladesh? If it is not the government, then
Who has the authority to decide the education system in the country?

Though this is the reality, I feel no good in seeing education as any
other commodities in a free market economy. If the government declares the
Education as a commodity should be done by official declaration. Otherwise
The government should address the matter clearly.

So far, I know, a large number of madrassahs called 'khareji' madrassah even
not controlled by any government body. The government doesn't even know what is
their curriculam. The same thing happened to the English-medium kids at school. The
The school authority decides what they will study. Many of these schools import
books from western countries, and students read western folklore. Meaning of
Some words can't be found even in the dictionary we can buy in Bangladesh. I
I cannot agree that this kind of English education can develop our country.
Instead, it has become fashionable to send the kids to English school.

If there is no alternative but to continue these three education systems, the government
must declare a basic policy for education, and the development should be like
this:

1. Develop the quality of Bangla education. Prohibit 'nokol' culture forever.
2. Monitor and supervise the madrassah education. Add regular Bangla books.
more so that they can live their life as a common citizen instead of just
being a'mullah'.
3. Similar curricula for all English mediums, and the books must be written
by the Bangladeshi people with useful words. Sri Lanka and India can be taken.
as an example)


Peace for all,

Politics: Not for GENTLEMEN [Aug 5, 2003]

Date: Tue Aug 5, 2003 4:16 am
Sub: [ALOCHONA] Politics: Not the business of GENTLEMAN?

Dear Alochoks,

"Politics is no more gentleman's business. It has become a massive tool for
gang leaders to accomplish their evil deeds" - A very common view of most of
the literate Bangladeshi.

Not the regional level, nor the national level, the elites are no where in
politics. If the literate faction do not involve with politics any more,
then how this country will expect a positive and dynamic change? If current
trend is going on, 90% of the parliament seats will be occupied by the gang
leaders by next 15-20 years.

Look at the students leaders of last 20 years. How many of them are leading
the country now? What is the percentage of their contribution to our
national politics? How many student leader we can see among 300 MPs? Whom we
find serving their original duty?

Then who is ruling the country?

This country is obviously running by the bureaucrats under the name of
democratically elected persons.

Because most of the political leaders are less qualified than the
bureaucrats. Bureaucrats are not decision making body, only execute the
decisions taken by the politicians who are elected by the people.

But the reality in Bangladesh is different. Here bureaucrats takes most of
the decision or influence the decision making process. As a result, people
dont see any significant change in any sector though several democratic or
non-democratic regime have passed in last 32 years after independence.

If we (the gentlemen) cant move away the gunman from the political field
now, bad news are waiting for this country. A day will come when these
street gunman will occupy the power and rule the country from first hand. It
can be in 20 years or it can be in 10 years.

After 20 years there will be no Hasina or no Khaleda. As per current trend
their family member will take the lead of party and I can imagine a worst
conflict between them ( much more worst than their moms currently do).

What we the gentlemans will do then? Watch and suffer? That's what we are
waiting for? I dont have any correct answer now.

Media and Information Minister [Oct 21, 2001]

Date: Sun Oct 21, 2001 4:56 am
Subject: Media and Information Minister


It is a common trend for any government in Bangladesh is to keep close their
eyes to the reality. Even genius scholars become deaf and dumb when they
join with any government wings. We have many bitter experiences during last
30 years with all our governments. We hope this new government will not follow
this trend and they will be
directed by the justified way.

Politicians become the part of government due to the public vote. Every
party has thousands of devoted activists, no doubt. But to be elected they
must get public vote. So when elected they must remember that people sent
them to power for acting fairly. Unfortunate truth is, politicians, after
becoming a part of government, forget the people who voted for him. Rather
he act in such a way that increases public wrath against the government. But
before the next election they cant realize that.

Things were like that always. Nobody take lesson from the mistakes of
past government. Information ministry has a big role to maintain the
popularity of a government. Because they control two most powerful media TV
and Radio. But all the government handled these power wrongly and as a
result government loose their popularity quickly.

Government cant meet all the demands of people. There are always reasonably
reasons. It is a crucial duty for a government media to present those reason
in a positive way. But doing that duty our media (especially BTV) try to
show us that everything is so good, so nice, so happy and there is no single
problem in this country whatever the problem created by the opposition etc.
It seems quite ridiculous, isn't it?

New Information minister Dr. Moin Khan is a quite intelligent person who I
hope, will be able to perform a justified role in the sector. Our request to
him to freed the information in the air and let the people justify what is
right and what is wrong. Let people talk freely. Dr Khan, You may not be
appreciated always. But that will not decline your popularity drastically.
At least you can get advance signals about the mistakes you are doing now.
You don't need to wait to get a shocking result after 5 years. You will get
chance to know what you are and what is your weakest point in advance. Then
you will have time to correct yourselves.

Wish a successful start for the new government.

EDUCATION vs KNOWLEDGE

EDUCATION vs KNOWLEDGE

Bangladesh is one of those country who make his annual budged with the highest priority for education and the largest proportionate of amount is kept for educational sector. Except few fiscal years most of the budget can be found with the highest ratio of budget for education.

But education growth rate is less than 2%!!! Surprised? Yes it is. Our literacy rate is still around 50% (mind it, this is just literacy rate not even primary level pass!!). But this achievement is including efforts of the hundreds of the NGO’s who is spending millions of dollar every year in our social and educational development. If we work out the total amount of Gov & Non-Gov is not a small amount for a country like Bangladesh. So, where all the money has gone? What is the output all those efforts? 50% half literate people most who just knows how to sign his name only?

Education in Bangladesh is a very big subject to analysis that can’t be discuss in this small area. I will emphasis here only with to the Basic Concept of Education in Bangladesh. This is related to the quality of education rather than the number of educated person in our country.

A simple question:
What is the main objective of education?
- Get a certificate with a bright result
- Get an excellent job with promising career
- Build the future for a better living
- Etc………etc

Why should one study well? For a bright result
What is use of bright result? A promising career
What is the use of promising career? A better living and stable future

Yes, this is all a man need in his life. This is for a successful man. All the answers are from the brightest students of our country. All are good words, no doubt. But there was no answer with the word ‘Knowledge’. Education system become only career-oriented. Yes, knowledge has no place in our educational system. But that doesn’t mean people are not acquiring knowledge. There are students who studies for their own interest. The inspiration they are getting from outside not from the system. System teaches how to get a result. That’s it.

I am not going to tell this is problem of our education system only. This is the problem of our mind also. Our mind has been grown up years after year and generation after generation with this perception. The best students worried about the result only, not about ‘knowledge’. This is the tragedy of education itself. Not only students but the teachers, parents, policy makers, nobody ever give a thought about the main objective of education. When see the ‘nokoler mohotshob’ during all the central examination like SSC, HSC etc. where most of the students, teachers, guardians are devoted to this sneak activities, the knowledge become totally irrelevant.

Whatever the rate is number of literate person increasing every year. But what is the percentage of real educated person? There is no statistics. There are really some talented persons who can compete the world standard. I am not talking about those very small factions. I am talking about the greater part of society who evolve a nation, build a state of welfare. The maximum number of average students.

How an average student starts his academic life? First he learns some basic from his parents and then admitted to the school at the age of 5. Spend more or less 10 years in the school, 2 year in the intermediate level, 5 years in the university (excluding session jam 4 years). So, when he finish the student life without any major accident in the examination he become (5+10+2+5+4)=26 years old guy. If he is highly graced by go he can get a job within one year after finish the student life. If he is lucky enough to develop his career he may get a chance to marry in next 3 years when he is 30. This is an average life of a successful youth. But everybody are not favored by god by this way.

Lets discuss what knowledge acquired by an average student. School is the place of fundamental learning. But a large number of students are just passing the school without having enough of fundamental knowledge about language, math, history, society, science etc. But a certificate for his 10 years struggle with the syllabus of school book. Then there is next step to the college for intermediate study. This is for 2 years. Get a certificate. This is the stage of preparation of university level study. But knowledge? Not enough time, sir! You must go to the university for acquiring proper knowledge!!

Ok, after having severe fight 10% of student pass through the admission test. One become the proud student of a bright university. Honors and Masters is maximum 5 years course. But wait! You can’t get these two degree within this short period of time. Because you are too young and you must get matured before you obtain the certificates. So lets play around in the university campus for additional 4 years. This provision has been created by the politicians(owner of the country) in the power and out of power. He have to play ‘politics politics’ game in this additional 4 years to serve the nation in the future. Few of them get to ‘Shaheed’ and few of them ‘Gazi’. While ‘Shaheed’s family swear not to send their another children to the university, some of the ‘Gazi’ take preparation to become MP in the future and thus extend their student life for another 10 years or more. But 99.99% of student is neither gazi nor shaheed. The owner of the country don’t care about that. They just need to use all of them (actively use 0.01% of total student)‘to save national interest’, ‘to preserve the sovereignty of state’ etc. You have no other choice but to prefer the national interest and sovereignty of state. If not you can treat as state of enemy.



So what about ‘Knowledge’? Hah………...what the hell is that? Do you live in Socrates age?

Conclusion:

Education is a root of the nation. This is a very popular phrase in Bangladeshi schools. For the students and for the teachers. But did we make any plan to build up the root of the nation? While talking about the student politics, many of us become emotional and nostalgic about the importance of student politics. We put example of 1950s, 1960s, 1980s when students took the major initiative to save the nations interest.

Discover Own Possibilities [Jul 4, 2002]

Date : Thu Jul 4, 2002 6:07 pm
Sub: [ALOCHONA] Independent Economy: Discover Own Possibilities

Dear Alochoks,

This is certainly the high time to find our own power, own resources, own
possibilities to develop our country. Global economy is getting worst day by
day and that affects our national economy in a very large scale, both macro
and micro level. This is not just a talking forum rather its a forum of some
great thinkers from Bangladesh. Please take some moment to think and throw
your idea to discover new potential area for your country.

Despite many negative image of our country, we cant ignore the progress we
achieved in last 31 years in many sector including technology. We are self
dependent in food production, we achieved around 50% literacy rate,
television, mobile phone, computer reached even to the remote villages.
Compare with our poverty level the enhancement in technological development
is really astonishing!

Poverty is reducing, you can find less street beggar than last two decade.
Booming of garments sector provided jobs to the millions of poor people.
NGOs are working more less to alleviate poverty, to ensure education for the
people in the villages. All these efforts driving us to a 'Silent
Revolution'.

But the progress we achieved in last 31 years should not be stopped at this
level. So, we need to find the way to achieve Economic Independent. Good
signs are appearing as we are trying to reduce our dependency on the begging
money. This is not just because our finance minister asked, but we really
need to change our views to the foreign loan and grants.

Alochoks, garments sector may not add enough foreign currency in 2005. How
we will fight with the trade balance? What is our next booming sector? What
is our NEXT potential sector? IT? Mineral resources? Oil? Gas? Titanium?
Zircon? Who will explore our own possibility? Who will explore the Trillion
dollar 'black gold' lying in Cox's Bazar, Maheshkhali & St Martins Island?
How many people are aware about this potentiality?

Your suggestion will be highly appreciated in this regard. Comments please!

____________________________________________
**Note: My article in Alochona

Independent Economy: Black Gold

An independent economy is the most desired destination for any underdeveloped country. Reducing dependency on foreign aid and grants is just an elementary step, and we are already on that track. But if we don't have enough resources, 100% independence will remain just a dream.

"Black Gold": The Area of Highest Possibility

I'm sure many people have heard about the "myth" of black gold hidden in the
southern part of Bangladesh. In Cox's Bazar, Maheshkhali, Saint Martins
On the island, billions of dollars are waiting to be converted from black sand. (titanium, zircon, rutile, etc.) to a prosperous Bangladesh.

According to a valuation survey accomplished by Prof. Lutfor Rahman in
1992-93 The estimated total value of the mineral at the current market price is U$2,620,974,561,403!!!!

Believe it or not!!!!!

Yes, this is almost unbelievable!! But you may have noticed some black mixed elements in the sands of Cox's Bazar beach while you visited there. The
contents of those black elements are ZIRCON, RUTILE, ELEMNITE, LUCOXIN,
KAYENITE, GARNET, MONAZITE, MAGNETITE etc. very precious minerals.

There are a total of 17 big lots of those minerals with an average length of 1 km in the whole southern part of Bangladesh. Cox's Bazar, Maheshkhali, Kutubdia, and Saint Martins Island, Nijhum Deep, Kuakata, etc. are the major sources of
"black gold".

Let us just look at the 3 elements Zircon, Rutile, and Elemnite found in just
Cox's Bazar,

ZIRCON 107602 ton 672,381 crore taka
RUTILE 39140 ton 244,240 crore taka
ELEMNITE 664844 ton 13,144,734 crore taka

The above pricing was accomplished by Prof. Lutfor Rahman, an ex-mechanical engineer.
of the American Geological Survey, who has vast experience in this field,
worked for a long time in the Middle East and African countries about these types
of project.

Needless to say, the most difficult part of this work is the
purification.  Without purifying to a certain level, we can't get that high price.
mentioned above.  The purity level is needed to be 99.8%. It is very
tough work and very expensive, but is it totally impossible? I will say no!!

It looks impossible with the current technological support in place.
Bangladesh. But BUET Professor A.S.O. Kurny purified the electrons up to 92%.
Prof. A.S.M.A. Hasib is working to achieve the highest purification rate of
Zircon. Another researcher, O.H. Kabir, has his own method to purify the
minerals at an affordable cost. If the government lends its hand to these
people, there would be a radical change. They are all very sincere about work.
on this exploration and purification work. They need support from the
government and from the related government agency that is responsible for the
mineral resources.

But unfortunately, the government has taken all the decisions, bypassing all these
local expertise and made an unfair deal with an Australian exploration company.
where the interest of Bangladesh was not taken care of as it was supposed to.

The mineral was discovered for the first time in 1961 by some Pakistanis.
neuclear scientists.  After several attempts were made to start the
purification project.  But due to the 1971 war and frequent political
turmoil, no government took special care. Eventually, the past AL government made
an agreement with Australian International Titanium Resources and current
The BNP government approved the project. The company has already started their
primary works.

According to local expertise, the agreement will not protect the
interest of Bangladesh, and Bangladesh will earn a very small fraction of the
minerals price.  A report published in the Weekly 2000 on February 8, 2002
The reporter, Asadur Rahman, stated the details of the "black gold" exploration.
situation at this time. This matter came to the attention of most of
Bangladeshis after the publication of this report. Both the Bangladesh
The government and an Australian company expressed their annoyance to the reporter.
because of the bold presentation.

At this stage, we all conscious and patriot Bangladeshi people must raise
their voice to protect the interests of our people. We want to see a national
valuation committee with local expertise who will work on finding a way to
Purify the mineral at its highest level.

Why are these issues never disclosed to the public? Who decides to sell the
national interest and national resources with a nominal price? Why there are
always secret and unfair deals? Why are local experts always neglected? When
Bangladesh will be able to make decisions about its own resources. When
Bangladesh will achieve control of herself.

What is my slogan? Use foreign technology with local experts!!!

Please raise your voice to save your own resources from
your own soil. Please do come with your ideas, your suggestions, and your
knowledge and your experiences. Wherever you are doesn't matter; please help.
Bangladesh is in this issue. Your conscious voice can help Bangladesh become
an economic giant in South Asia.

..................................................

[14 July 2002, Alochona Forum Post]

১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কক্সবাজার সৈকত বালি আহরণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছিলেন অধ্যাপক আবুল ফজল: 
[সূত্র দৈনিক ইত্তেফাক ফেব্রুয়ারী ১৯৭৬]