কবি অলোক সরকার চলে গেলেন। তাঁর সাথে আমার পরিচিতি ছিল না তেমন। কিন্তু তাঁর একটি লেখা পড়ে বেশ ভালো লেগেছিল। নিজের কবিতা বিষয়ক লেখাটিতে একটি মৌলিক দর্শনের কথা প্রকাশ করেছিলেন যেটি অনেক জীবনযাপনের গল্পের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ -
আমার বরাবরের বিশ্বাস প্রায় প্রতিটি কবির সাথে একজন নিমগ্ন দার্শনিকও বাস করেন। জীবনানন্দ স্পর্শ করা এই কবির ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য বলে মনে হয়। যা আছে তা থাকার সঙ্গে আছে, স্মৃতির সঙ্গে থাকা, স্বপ্নের সঙ্গে থাকা। থাকা অর্থাৎ নির্বাচিত থাকা, যে নির্বাচন জীবনের, জীবনযাপনের প্রশ্নে সদর্থক, অভীপ্সা, স্বতঃস্ফূর্ত, তার দিকেই আমার সমর্থন, আমার পক্ষপাত--- জীবনযাপন অর্থাৎ নানাবিধ অভিজ্ঞতা, তার এক অংশ বিরুদ্ধ শক্তি। তার দিকে আমার আগ্রহ অক্রিয় হয়, আমার টান তার দিকেই যা আমার জীবনকে রচনা করেছে, লালন করেছে। তা এমন একটা অনতিক্রম যাকে অতিক্রম করলেই আমার ভ্রমণ লক্ষ্যহীন অনাশ্রয়, ধুলোর সঙ্গে ধুলো, সাদার সঙ্গে সাদা। আমার চরাচর আমার থাকার অনিবার্যতার আনুকূল্যে নিশ্চিত হয়, ভাষা রচনা করে, ভাষা অর্থাৎ শব্দ-সঞ্চয়ন, ভাষা, ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ব্যক্তির সর্বস্ব, একটা শব্দের পাশে আর একটা শব্দের সচেতন সংস্থাপন--- সঙ্গে সঙ্গে ধুলো অবারিত হলো, নদী নৃত্যবিহ্বল। কালবৈশাখী, পূর্ণিমা নিশি। যা আছে তাকে অতিক্রম করে, সেই অস্পর্শ, অবধারিত এখন, এখন আরো বিশুদ্ধ, সেই মাতৃভূমি যা দিন রচনা করেছে, লালন করেছে।
No comments:
Post a Comment