Wednesday, November 2, 2016

শব্দের অরণ্যে

একেকটি শব্দ, একেকটি অনুভূতির প্রকাশ। একটি অনুভূতিময় শব্দ কতটা দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে? একটি শব্দের যতকাল আয়ু, একশো কিংবা হাজার শব্দেরও ততদিন আয়ু। যদি অক্ষরগুলো মুছে না যায় তাহলে শব্দগুলো দিয়ে একেকটা বাগান তৈরী করা যায় কিংবা বনভূমি অথবা ন্যাশনাল পার্ক।

তা না করা গেলে, একটি দীঘিই বা মন্দ কী? সেই দীঘিতে শাপলা-শালুক কিংবা কলমিলতা অথবা উভয়ই ভেসে ভেসে মাছরাঙাদের ডেকে বলবে, এখানে শুধু গভীর জলের মাছ। মানুষ নেই, মানুষের ভয় নেই। মাছরাঙা আর ফড়িং তিরতির করে পাখা নেড়ে ভেসে থাকে জলের এক ফুট উপরে। প্রতিবিম্বিত আকাশ যেখানে মেঘের ছায়া নিয়ে অনেক গভীরে ঢুকে আছে। মাছের কথা ভুলে আকাশের নকশায় ডুবে থাকে একটি মাছরাঙা ও দুটো ফড়িং।

খুঁজে খুঁজতে অবশেষে শব্দগুলো পাওয়া গেছে। এবার বাগান তৈরীর কাজ। বাগান তৈরীর কথাটা যত সহজ, কাজটি ততটা নয়। ভীষণ ক্লান্তিকর একটি কাজ। কিন্তু শব্দগুলোর সাথে একাত্মতা থাকলে কোন ক্লান্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না বেশিক্ষণ। স্নায়ুচাপ, বায়ুচাপ, উচ্চচাপ, নিন্মচাপ সকল চাপের প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাগানটি দাঁড়িয়ে যায়।

বাগানও তৈরী হয়ে গেল। এবার সেই বাগানে অনন্ত সময় কাটানোর পালা। অনন্ত সময়ের বয়স কতটুকু? বলোতো অনন্ত? অনন্ত বললো, সময় অন্তহীন কিন্তু বাগানের আনন্দ ফুরোবে কী আবারো? ফুরোবে কিনা জানার আগে দেখো কী আছে বাগানে? কী আছে? তার চেয়ে বলা সহজ- কী নেই?  বাগানে সাজানো ফুলের সারিবদ্ধ কুচকাওয়াজ বাদে আর সবই আছে। যা কিছু স্বতঃস্ফূর্ত, যা কিছু প্রকৃতি থেকে উৎসরিত, যা কিছু আকাশ থেকে নেমে আসা, তার সবই এখানে ছড়ানো, ছিটোনো। এমনকি ঝেঁপে আসা বৃষ্টিটুকুও আছে।

আর যা আছে সব পাখিদের, মেঘেদের, ফড়িংএর, দোয়েলের, শালিকের,  ঘাসফুল, বাঁশফুল, বুনোফুল, লতাপাতাঝোপ। আছে আকাশছোঁয়া বৃক্ষ! আকাশছোঁয়া মানে সত্যি আকাশ ছুঁয়ে থাকা বৃক্ষ। অবিশ্বাস্য, অসম্ভব দীর্ঘতম একেকটা বৃক্ষ, আকাশ মাটি দুটোর নাগাল পেয়ে বসে আছে। অবিশ্বাস্য বৃক্ষগুলোর জন্য বাগানটি হয়ে যায় একটি বনভূমি যার শুরু একটি জলাভূমিতে আর সমাপ্তি একটি প্রবহমান নদীতে। নদীটি আপনমনে বয়ে যায় বনভূমি চিরে। নদীতে একটি নৌকা, একজন মাঝি।

এক জীবনে এমন শব্দবনভূমির অধিকারী হওয়ার অনুভূতির তুলনা করার মতো বিষয় মানব জীবনে খুব বেশী থাকে না। জীবন এত ছোট বলে, আয়ু এত নগণ্য হলেও, ওই শব্দসুখের সীমা থেমে যায় না। আকাশ থেকে আকাশে ভেসে বেড়ায় অনন্তকাল, অদৃশ্য ছায়ায়।


No comments: