Thursday, November 10, 2016

সময় বিরূপতা এবং কবিতা মলম

স্বল্পায়ু জীবনে মানবসৃষ্ট দুর্যোগে কতখানি ক্ষত বয়ে বেড়াই, কতগুলো অমূল্য দিনকে হারিয়ে ফেলি অন্ধকারে, তার হিসেব না রেখে ভুলে যেতে পারলেই সবচেয়ে মঙ্গলময় হতো। কিন্তু সমস্যাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিতে চাইলেও লাল প্ল্যাকার্ড নিয়ে যখন চোখের সামনে দাঁড়ায় বিরূপ সময়, তখন উটপাখির মতো বালিতে মুখ গোঁজার সুযোগ না পেয়ে মানসিক আশ্রয়ের সন্ধানে কবিতায় মুখ গোঁজা যায়। কবিরা কঠিন কথাকে শব্দে সহনীয় করে যে নিঃশব্দ সুর তৈরী করে, সেই শব্দসুর এসে অযাচিত ক্ষতের প্রলম্বিত বেদনাগুলো অনায়াসে হালকা করে দেয়..........



কোমল বাতাস এলে ভাবি, কাছেই সমুদ্র! তুই তোর জরার হাতে কঠিন বাঁধন দিস। অর্থ হয়, আমার যা-কিছু আছে তার অন্ধকার নিয়ে নাইতে নামলে সমুদ্র স'রে যাবে শীতল স'রে যাবে মৃত্যু স'রে যাবে। তবে হয়তো মৃত্যু প্রসব করেছিস জীবনের ভুলে। অন্ধকার আছি, অন্ধকার থাকবো, বা অন্ধকার হবো।

আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।
[জরাসন্ধ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়]

নির্বোধের আলস্যে কেবল ম্লান হাস্যে জানিয়েছি
মনোরম অস্তরাগে শুধু আমার গোধূলি-ভাষ্য
মূল্যবোধের আর যা কিছু সত্য তাই হতাশার
পরম, বিশ্বস্ত অনুগামী, প্ররোচক বুঝি স্বেচ্ছামরণের,

এইমতো জীবনের সাথে চলে কানামাছি খেলা
এবং আমাকে নিষ্কপর্দক, নিষ্ক্রিয়, নঞর্থক
ক'রে রাখে; পৃথিবীতে নিঃশব্দে ঘনায় কালবেলা!
আর আমি শুধু আঁধারে নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটে রক্তাক্ত জবার মতো
বিপদ-সংকেত জ্বেলে একজোড়া মূল্যহীন চোখে
পড়ে আছি মাঝরাতে কম্পমান কম্পাসের মতো
                                    অনিদ্রায়।

[উত্তরাধিকার, শহীদ কাদরী]


অধঃপতনের ধুম সবদিকে , সভ্যতার সেয়ানা গুন্ডার মতো
মতবাদ; রাজনীতি, শিল্পকলা শ্বাস ফেলছে এদিকে ওদিকে,
শহরের সবদিকে সাজানো রয়েছে শুধু শাণিত  দুর্দিন,
বন্যা অবরোধ, আহত বাতাস !

আমি আর কার কাছে যাবো? কোনদিকে যাবো?
কোন শহরের দিকে যাবো আমি ? যৌবনের জ্বলন্ত শিরায় আজ
এই যে জ্বলছে চাঁদ জ্যোৎস্না, চাঁদ জ্যোৎস্না আর জ্যোৎস্নাফুল,
হৃদয়ের ভিতরে ব্যাকুল,
জ্বলছে এই যে স্বপ্ন, স্মৃতি, শব্দ অলঙ্কার
অভাবের মরীচিকা, এ শহর কার?

[দূরযাত্রা - আবুল হাসান]


No comments: