ইতিহাস যেখানে নুয়ে আছে পাথরের দেয়ালে, অবসন্ন মৃত্তিকার চিত্রলেখায়, ধুয়ে যাওয়া সরোবরে বিস্ময় অবকাশে ছায়া ভাসে কার? |
The Sixth Panchen Lama Receives George Bogle at Tashilhunpo, oil painting by Tilly Kettle, c. 1775 |
ক্যাপশানেই ছবির তথ্য দেয়া আছে। তবে পেছনের ঘটনাগুলো একটু দীর্ঘ। দীর্ঘ গল্পটিকে সংক্ষেপে বলছি।
ছবিটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শন। ঘটনাটি ১৭৭৪ সালের। তিব্বতের শিগাৎসে শহরের (Shigatse বর্তমানে Xigazê নামে পরিচিত) তাশি লানপো মন্দিরে একটি সাদা রেশমি রুমাল বাড়িয়ে ধরে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, সেই ভদ্রলোকের নাম George Bogle. তিনি জাতিতে স্কটিশ, এসেছেন বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস এর প্রতিনিধি হয়ে। আর যিনি আসনে বসে শ্রদ্ধা গ্রহন করছেন তিনি তিব্বতের ষষ্ঠ 'পানচেন লামা'। পানচেন লামা একটি পদবী, যেমন দালাই লামা। তিব্বতের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মগুরুর পদবী 'পানচেন লামা'। তিব্বতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিগাৎসের প্রধান মন্দির তাশিলানপো । 'পানচেন লামা' সেই মন্দিরের প্রধান। রাজধানী লাসার পোতালা প্রাসাদের প্রধান ধর্মগুরু দালাই লামার পরেই পানচেন লামার স্থান।
আরেকটু পেছনে যাই। সিরাজদৌলাকে হটিয়ে ইংরেজরা তখন বাংলার মসনদে বসেছে। তখনো পুরো ভারতবর্ষ তাদের কব্জায় আসেনি। ১৭৭৩ সাল। ওয়ারেন হেস্টিংস এর কাছে কুচবিহারের রাজা ভুটানের এক সেনাপতির কাছ থেকে আক্রমনের বিরুদ্ধে সাহায্যের আবেদন করলে হেস্টিংস শর্তের বিনিময়ে সাহায্য করতে সম্মত হলেন। ইংরেজ সাহায্য পেয়ে কুচবিহারের রাজা সেই সেনাপতিকে পরাজিত করেন। পরে ভুটানের পরাজিত সেনাপতি নিজেদের গৃহযুদ্ধেও হেরে গিয়ে তিব্বতে পলায়ন করলে তাশিলানপোর পানচেন লামা তাকে আটক করে জেলে পুরেন।
অতঃপর পানচেন লামা হেস্টিংস এর কাছে বন্ধুতাপূর্ণ এক পত্র মারফত জানান ভুটানে এখন মিত্রশক্তি ক্ষমতায় বসেছে সুতরাং এই অঞ্চলে আর যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। হেস্টিংস এই সন্ধিপ্রস্তাবকে তিব্বতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একটু সুযোগ হিসেবে গ্রহন করার জন্য জর্জ বোগলকে পানচেন লামার দরবারে পাঠিয়েছিলেন যথাযথ উপঢৌকন সহকারে। তিব্বতের সাথে ইউরোপীয়দের বন্ধুতার সেই সুত্রটি একুশ শতকে এসেও উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেই অভিযানে জর্জ বোগলের লেখা বইটি (Narratives of the mission of George Bogle to Tibet, and of the journey of Thomas Manning to Lhasa" (1876) by Sir Clements Markham) থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আরো একশো বছর পরে শরতচন্দ্র দাশ তিব্বত অভিযানে গিয়েছিলেন ১৮৭৯ সালে। যখন ৭ম পানচেন লামা ক্ষমতায়, তাঁর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতেও সাহায্য করেছিল জর্জ বোগলের গড়ে দেয়া শতবর্ষ পূর্বের মিত্রতা।
ঐতিহাসিক ঘটনার এই পেইন্টিংটি বর্তমানে বৃটিশ রাজ পরিবারের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়(Royal Collection) রক্ষিত আছে।
No comments:
Post a Comment