কথায় কথায় অনেক কিছু হয়। কথায় কথায় কিছু হয় না। দুটোই সত্যি। আবার সব কথা প্রকাশ হয় না। কিছু কথা লুকিয়ে থাকে শব্দের আড়ালে আবডালে, বাক্য বিন্যাসের ঝোপেঝাড়ে। কথায় কথায় রাজনীতি, কথায় কথায় কুটনীতি। কথার মারপ্যাচে হেরে যায় রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা বিরোধী নেত্রী। কথারা আঘাত দেয়। শব্দেরা হয় বুলেট। কিছু শব্দের আঘাতে জ্ঞান হারায় মানুষ, কিছু কথায় খুন হয়। খুন খারাবির কথা থাক। কথারা কোথায় আনন্দ পায় সে কথা চলুক।
কথার উপর যদি কোন জীবন বেঁচে থাকে, বাঁচার উপর বাঁচে, সে কথার চেয়ে মহৎ আর কী আছে? 'বাঁচার উপর বাঁচা' মানে কী? বাঁচা হলো দৈনিক বুকভরা অক্সিজেন, পেট ভরে ভাত খেয়ে দেহধারণ করা। আর সেই বাঁচার উপর আরো কিছু বাড়তি উপযোগ বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে। হতে পারে সেটা কোন বিনোদন কিংবা পাঠতৃষ্ণা অথবা বন্ধুসঙ্গ। কোন কোন জীবনে কথা এবং শব্দের উপর নির্ভরতা থাকে। তখন কথা দিয়েই সে বাঁচার উপর বেঁচে থাকে।
কথারা কখনো যুদ্ধকেও দমন করে। দুই বিবাদমান প্রতিবেশী রাষ্ট্রপ্রধান যদি নিজেদের অবস্থান থেকে একটু নমনীয় হয়ে সংলাপে বসে তখন যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব।কথার উপর যদি কোন জীবন বেঁচে থাকে, বাঁচার উপর বাঁচে, সে কথার চেয়ে মহৎ আর কী আছে? 'বাঁচার উপর বাঁচা' মানে কী? বাঁচা হলো দৈনিক বুকভরা অক্সিজেন, পেট ভরে ভাত খেয়ে দেহধারণ করা। আর সেই বাঁচার উপর আরো কিছু বাড়তি উপযোগ বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে। হতে পারে সেটা কোন বিনোদন কিংবা পাঠতৃষ্ণা অথবা বন্ধুসঙ্গ। কোন কোন জীবনে কথা এবং শব্দের উপর নির্ভরতা থাকে। তখন কথা দিয়েই সে বাঁচার উপর বেঁচে থাকে।
অপ্রিয় সত্য কথা বলা বিপদজনক। সর্বক্ষেত্রে বীরত্বটা না দেখানোই ভালো। তবে অপ্রিয় সত্যটা প্রকৃত বন্ধুকেই বলা যায়। সেই অপ্রিয় কথাটি যদি বন্ধুকে নিয়ে হয় তাও। প্রকৃত বন্ধু সেই যে অপ্রিয় সত্য জানার পরও বন্ধুতা খারিজ করে দেবে না।
ধরা যাক, বন্ধু আমার উপর রাগ করেছে। আমি বন্ধুর উপর। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না ঠিক সুরে। দুজন দুই কারণে রেগে আছি। বন্ধু আমার উপর রাগ করেছে আমি বন্ধুর সমস্যাটি বুঝিনি বলে। আমি রাগ করেছি বন্ধু সমস্যাটি আমাকে বলেনি বলে। এখন বন্ধু যদি সমস্যাটি না বলে রাগ অভিমান নিয়ে দূরেই সরে থাকে তাহলে দূরত্বটা বাড়তেই থাকবে। আবার বন্ধু যদি রাগ প্রকাশ করেও যদি অপ্রিয় সত্যটি আমার কাছে বলে দেয়, তাহলে আমি ভুলটি শোধরাবার চেষ্টা করবো। না হলে বলবো, মাফ করে দে পারবো না।
এই বিষয়ে সচলের রন'দা চমৎকার একটি কবিতা লিখেছেন গতকাল ফেসবুকে। সেখান থেকে কপি করে দিচ্ছি-
...
তোমার নিস্পৃহ জিহ্বা ও চোখের চেয়ে
ঢের ভালো অবিশ্রাম বিষবাক্যে ছুঁড়ে দেয়া
ঘৃণার আঘাত ! প্রায়শ্চিত্তের নীল জলে
থাকে কি রক্তের দাগ ! ভেবো না কলঙ্কী হবো,
তোমার শুভ্রতায় পড়বে না আঁচড় কোনো--
এটুকু বলেই যেন বেমালুম গায়েব সে !
যাকে বলে নিরুদ্দেশ !
...
তোমার নিস্পৃহ জিহ্বা ও চোখের চেয়ে
ঢের ভালো অবিশ্রাম বিষবাক্যে ছুঁড়ে দেয়া
ঘৃণার আঘাত ! প্রায়শ্চিত্তের নীল জলে
থাকে কি রক্তের দাগ ! ভেবো না কলঙ্কী হবো,
তোমার শুভ্রতায় পড়বে না আঁচড় কোনো--
এটুকু বলেই যেন বেমালুম গায়েব সে !
যাকে বলে নিরুদ্দেশ !
নিজেকে হারালে কেউ তাকে কি এতিম বলে!
প্রিয় মুখ প্রিয় চোখ কিভাবে হারায় লোকে?
কিংবা হারানো কান্নার চিহ্ন কেউ কি জমিয়ে রাখে?
পাই না উদ্দেশ কোনো ভেবে ভেবে দিনরাত!
তন্ন তন্ন খুঁজে অবশেষে
যেখানে আচমকা এসে সসঙ্কোচে থমকে দাঁড়াই !
কোথাও কোন অন্তরালে এইখানে আছে কি সে?
কিভাবে ঢুকতে হয়-- বুকের গভীরে খুব !
জানি পদচিহ্ন মুছে যায়, মুছে না পায়ের ঘা...
একটুকু নাড়াতেই যদি
অলক্ষ্যে লুকোনো সব গন্ধ ছড়ায় !!
(১৯-১১-২০১৬)
[অন্ধপ্রলাপ- রণদীপম বসু]
তুহীন আমার বহুবছরের ঘনিষ্ট বন্ধু। আমাদের ঘনিষ্টতা এতই গভীর ছিল যে সে আমার সাথে আর কারো বন্ধুতা সহ্য করতো না। অথচ একদিন আমরা দুজনই হারিয়ে গেলাম নিজস্ব ব্যস্ততার জগতে এবং বহু বছর আমরা নিখোঁজ হয়ে ছিলাম দুজনের কাছে। দেখা হবার কোন সুযোগই ছিল না, ঠিকানা, ফোন সব বদলে গেছে। তবু নিয়তি নামক ব্যাপারটার কারণে আবার দেখা ঢাকাতেই। রমনা পার্কের বিকেলটি তখন আমাদের দুজনকে জড়িয়ে নিল। কোন অভিযোগ নেই। ভুল বোঝা নেই। শুধু ফিরে পাবার আনন্দ। লেনদেনহীন সম্পর্কগুলো বোধহয় এমন নিটোল থাকে। বহুবছর পরও মরিচা ধরে না।প্রিয় মুখ প্রিয় চোখ কিভাবে হারায় লোকে?
কিংবা হারানো কান্নার চিহ্ন কেউ কি জমিয়ে রাখে?
পাই না উদ্দেশ কোনো ভেবে ভেবে দিনরাত!
তন্ন তন্ন খুঁজে অবশেষে
যেখানে আচমকা এসে সসঙ্কোচে থমকে দাঁড়াই !
কোথাও কোন অন্তরালে এইখানে আছে কি সে?
কিভাবে ঢুকতে হয়-- বুকের গভীরে খুব !
জানি পদচিহ্ন মুছে যায়, মুছে না পায়ের ঘা...
একটুকু নাড়াতেই যদি
অলক্ষ্যে লুকোনো সব গন্ধ ছড়ায় !!
(১৯-১১-২০১৬)
[অন্ধপ্রলাপ- রণদীপম বসু]
গেল বছরেও তেমন কয়েকটি ফিরে পাবার ঘটনা ঘটেছিল। যারা হারিয়ে গিয়েছে বলে জেনেছিলাম, তারা যখন হারায়নি বলে জানা যায়, তখন তাকে পাওয়ার ঘটনা বলা চলে। আমার খুব প্রিয় কিছু মুখ আবারো ফিরে পেয়েছিলাম। প্রবল আন্তরিকতাপূর্ণ হাসিমুখগুলো দুই দশকের দূরত্ব এক নিমেষে ঘুচিয়ে দিয়েছিল।
হারিয়ে ফেলার হাহাকার মানুষের জীবনে নতুন কিছু নয়। আমার একটু বেশীই। একটি বড় হারানোর ঘটনার কারণেই....। কিন্তু না পাওয়াকে পেয়ে যাওয়ার আনন্দটিও কি কম? সবচেয়ে বড় পাওয়া সেইটিই। পাওয়া হয়ে গেলে 'আর কিছু লাগে না আমার' ধরণের গর্বও চলে আসে। সেই পাওয়াটা কী? সেই পাওয়াও কিছু কথা মাত্র। কিছু শব্দ, কিছু অক্ষর, কিছু খুব প্রিয় বাক্য। দুঃসময়ের সম্বল হতে পারে সেই কথাগুলো। 'বাঁচার উপর বেঁচে' থাকি প্রিয় সংলাপের স্মৃতি নিয়ে। প্রিয় চিঠির মায়াবী গদ্যসম্ভারে।
---------------------------------------------------------------------
শিরোনাম - শ্রীকান্তের গানের লাইনগীতিকার - পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরকার - সুধীন দাশগুপ্ত
---------------------------------------------------------------------
শিরোনাম - শ্রীকান্তের গানের লাইনগীতিকার - পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরকার - সুধীন দাশগুপ্ত
No comments:
Post a Comment