সারা পৃথিবীর সভ্য মানুষের উদাহরণগুলো ধারণ করে না উপমহাদেশের অসভ্য নির্বোধ মূর্খ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো। সাধারণ শিক্ষিত মানুষের ভেতরেও সফলতার সাথে এইসব মূর্খতার সফল অনুপ্রবেশ ঘটাতে পেরেছে এরা। একশো বছর আগে উপমহাদেশে যেসব শিক্ষা সভ্যতা আলো প্রবেশ করেছিল, এই সময়ে সেই জায়গাগুলো কালিমালিপ্ত হয়ে গেছে। অন্তত কিছু মানুষের চোখে এইসব অন্ধতা গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। এদের হাস্যকর অন্ধযুক্তিগুলো নিয়ে এরা ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকবে বাকী পৃথিবী থেকে। মূর্খতার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
Sunday, December 22, 2024
Friday, December 13, 2024
এমনি কাঁদিয়ে পোহাইবে যামিনী
পাপিয়া সারোয়ারের কন্ঠে এই গানটা আমার কানে স্থির হয়ে আছে । তাঁকে কখনো মুখোমুখি দেখিনি। কিন্তু কৈশোর থেকে রেডিওতে বহুবার শুনেছি গানটা। গানটা আর কারো কন্ঠেই এত ভালো লাগেনি। ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে তিনি চলে গেলেন। একই দিনে আমার আরেকজন প্রিয় মানুষের প্রস্থান ঘটলো। সেও অনেক বাসনা পুরণ না করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল।
পাপিয়া সারোয়ার চলে যাবার খবরটা পেয়েছি লেখক ইমতিয়ার শামীমের পোস্ট থেকে। সেটাই তুলে রাখলাম এখানে।
সেই কৈশোরেই আমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল, ‘জনমেও এ পোড়া ভালে, কোনো আশা মিটিল না’; জানা হয়ে গিয়েছিল, ‘এমনি কাঁদিয়ে পোহাইবে যামিনী, বাসনা তবু পুরিবে না’; জানা হয়ে গিয়েছিল— কেননা এমন কোনও দিন ছিল না, যেদিন একজন পাপিয়া সরোয়ারের কণ্ঠ বেতারে শোনা যেত না, ইথারে ভেসে ভেসে ধরা দিত না আমাদের শ্রুতিজগতে।
গাঁয়ে আমার মা-বাবা বাড়ির পূবদুয়ারি যে ঘরটির দক্ষিণদুয়ারি একটি কোঠায় একদা আমি বাস করতাম, যে ঘর কিংবা কোঠার কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই, সেখানে কখনো লালরঙা রেডিওটায় ‘ হোল না লো হোল না লো সই ‘ বেজে উঠলেই বাড়ির ভেতরের উঠান থেকে ভেসে আসত কাজের মেয়ে কোমেলার তীব্র হাসি; কিন্তু কখনো সেই একই কণ্ঠ ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিওন নাই রে টেলিগ্রাম’ গেয়ে উঠলে তাকে আর হাসতে দেখা যেত না।
তখন খুব বেশি মানুষজন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন না, গাইতেন তো একেবারেই হাতেগোণা কয়েকজন। কিন্তু আমাদের অজ পাড়া গ্রামটিতে অদ্ভূত এক কারণে সবাই রবীন্দ্র সঙ্গীতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। গাঁয়ের রাখালদেরও যখন-তখন দেখা যেত গরু চড়াতে চড়াতে গাইছে, ‘ওগো নদী আপন বেগে পাগলপারা...’, গাইছে ‘ ভেঙে মোর ঘরের চাবী, নিয়ে যাবি কে আমারে...’। ছায়ানটের একেবারে প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আমাদের এক ফুফাতো ভাই, যাকে আমরা ডাকতাম ঢাকার খোকন ভাই নামে। কী যে তাঁর হয়েছিল, লেখাপড়া বাদ দিয়ে গাঁয়ে গিয়ে থেকেছিলেন তিনি বছরের পর বছর। কামরুল হাসানের ব্রতচারী বিদ্যায় দীক্ষিত সেই ভাই সকাল বিকাল শুধু ব্যায়াম করতেন আর হারমোনিয়ামে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতেন। আরও একটা কাজ ছিল তাঁর, গাঁয়ের পুকুর আর জলাভূমিতে ছিপ ফেলে ধৈর্য ধরে বসে থাকতেন পারে। অমন গভীর মনযোগ দিয়ে মাছ ধরতে আমরা আর কাউকেই দেখিনি। কী অদ্ভূত, গোপীবাগের সেই খোকন ভাইয়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়াকে ভ্যাঙচাতে ভ্যাঙচাতেই আমরা গাঁয়ের আপামর জনগণ বেসুরো কিন্তু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়লাম রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে।
ওই বয়সে, খোকন ভাই যখন বলতেন, একেবারে মুখোমুখি বসে গান শুনেছেন পাপিয়া সারোয়ারের, তখন খুব অবাক হয়ে যেতাম—সত্যি বলছে তো?!
যেভাবে হুট করে এসেছিলেন, কয়েক বছর বাদে তেমনি হুট করে আবারও গোপীবাগমুখো হলেন খোকন ভাই। আমি বলি, সেদিন থেকে আমাদের গাঁয়ের মানুষজন হারাতে শুরু করল মাছ ধরার অপরিসীম ধৈর্য্য, হারাতে বসল জীবনের সুর ও রবির প্রাণশক্তি। তবু বেতারে পাপিয়া সারোয়ার কিংবা কাদেরী কিবরিয়ার কণ্ঠ ভেসে আসত, আর আমরা উপলব্ধি করতাম, ‘বাসনা তবু পুরিবে না।’
তারপর বয়স বেড়েছে, আরও কতজনের রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেছি, কবে যে প্রিয় শিল্পীর গান বেছে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, শুনতে শুনতে কবে যে পাপিয়া সারোয়ারের কথা ভুলে গেছি, তা আর বলতে পারব না। কিন্তু এখন দেখছি, না, তাকে ভুলে যাইনি, হারিয়েও ফেলিনি; মনে করিয়ে দিলেন অন্তরতর তিনি; মনে করিয়ে দিলেন ‘বড় আশা করে শেষে পুরিবে না কামনা।’
পাপিয়া সারোয়ার
(২১ নভেম্বর ১৯৫২—১২ ডিসেম্বর ২০২৪)
Tuesday, October 22, 2024
শেয়াল ও শকুনের রাজত্বে
এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান দুর্বলতা হলো মানুষকে মানবিক, যৌক্তিক এবং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারা। আদিকাল থেকে জেনেটিক কারণে এই অঞ্চলের মানুষেরা দুই রকম। একদল খুব সরল, আরেকদল খুব গরল। সরলদের একাংশ প্রায়ই গরলদের পাল্লায় পড়ে বলদে পরিণত হয়। সেই বলদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এদেরকে নানান হাটে বিক্রি করা যায়। কেউ বিক্রি হয় ধর্মের হাটে, কেউ বিক্রি হয় রাজনীতির হাটে, কেউবা প্রতারণার হাটে। মতলববাজরা এখানে সবসময় সফল হয়। একসময় অশিক্ষিত বলদের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন শিক্ষিত বলদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দেশে এমনসব উচ্চশিক্ষিত বলদ আছে, তাদের শিক্ষার পেছনে রাষ্ট্র যে ব্যয় করেছে সেটা পুরোপুরি অপচয়। শিক্ষিত বলদ চেনার জন্য ফেসবুক সবচেয়ে উপযুক্ত হাট। ফেসবুকের হাটে পালে পালে বলদের দেখা মেলে, যারা নিজ নিজ খোয়াড়ের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে নানান হাস্যকর যুক্তি উপস্থাপন করে।
সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নির্মোহ যুক্তিসঙ্গত মানুষের সংখ্যা এতই কম যে, এদেরকে খালি চোখে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনুবীক্ষণিক জীব হয়ে অদৃশ্য জীবনযাপন করে। তাদের যুক্তির কথা কোনো বলদের কানে পৌঁছায় না। ফলে কোনো না কোনো মতলবাজ এদেশে ফটকাবাজী করে যায় সারা বছর। গত অর্ধ শতাব্দী এমনই চলছে। এই বলদদের নেতা হয় শেয়াল শকুনের দল। তাদের পেছনে নিয়ে কেউ কেউ রাষ্ট্রক্ষমতা পর্যন্ত দখল করে। তাই আমরা দেখি এক শেয়াল যাবার পর আরেক শকুন আসে। শেয়ালপর্বের বলদেরা শকুনের বিরুদ্ধে, শকুনপর্বের বলদেরা শেয়ালের বিরুদ্ধে লড়তে থাকে। বাংলাদেশ এই সব বলদের কারণেই কখনো শেয়াল ও শকুনমুক্ত হতে পারলো না। আগামীতেও পারার কোনো লক্ষণ এখনো দেখছি না। যে ছেলেটা কিশোর বয়সে দারুন যুক্তিবাদী স্মার্ট হিসেবে বড় হচ্ছিল, সে তারুণ্য পেরোবার আগে শকুন বা শেয়ালের পাল্লায় পড়ে বলদে পরিণত হয়। তাদের ইশারায় সকল তৎপরতা চালায়। তার নিজস্বতা বলে কিছু দেখা যায় না।
আমরা জানি আবার নতুন কিছু ঘটবে। এই বলদেরাই আবার ঢুশাঢুশি করবে। এখন কিছু অবসরপ্রাপ্ত বলদও দেখা যাচ্ছে, যারা শেয়াল ও শকুনের হাতিয়ার হিসেবে জোয়াল টেনে যাচ্ছে। যে শেয়াল এতদিন গর্তে ছিল, তারা বেশিয়ে এসেছে, যে শকুন এতদিন লাশের সন্ধানে ছিল, তারা অনেকগুলো লাশ পেয়েছে। শেয়াল-ও শকুনের রাজত্বে মানুষেরা গৃহবন্দী হয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের প্রজন্ম মানুষের শাসন দেখেছে খুব অল্প সময়ের জন্য। আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো পুরোটাই শকুন রাজত্ব দেখবে। তাদের জন্য সমবেদনা।
Thursday, October 17, 2024
ইতিহাস=অতীত
ইতিহাস=অতীত। যাহাই অতীত, তাহাই ইতিহাস।
অতীতকালের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এটা পৃথিবীর যে কোনো শক্তির ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আপনি ভবিষ্যতকে বদলাবার চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু অতীতকে এক বিন্দুও বদলাতে পারবেন না। কিছুতেই না। অতীতকে কেউ জোর করে তৈরি করতে পারে না, কেউ জোর করে মুছতেও পারে না। মিথ্যে ইতিহাসকে জোর করে গেলানোও অসম্ভব সেটাও বারবার প্রমাণিত।
অধিকাংশ তৃতীয় বিশ্বের ক্ষমতাবানরা ইতিহাসকে নিজেদের মতো লিখতে চেষ্টা করে। এটা একটা মূর্খতা কিংবা হাস্যকর মানবিক দুর্বলতা।
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধান স্তম্ভ। সেই স্তম্ভে কার কী ভূমিকা ছিল, সেটা লেখা হয়ে গেছে। মিথ্যে শব্দে কাগজের ইতিহাস নয়, সময়ের খাতায় লেখা ইতিহাস।
ইতিহাস আজকে যে সত্য বলবে, একশো বছর পরও সেই সত্য বলবে, পাঁচশো বছর পরেও তাই বলবে। মানুষ সংকীর্ণ দৃষ্টির কারণে বেশি দূরের জিনিস দেখতে পায় না।
সভ্যতার নিরিখে ১০০ বছর কোনো সময়ই না। এক হাজার বছর পর বাংলাদেশের গত ১০০ বছরের সকল ঘটনার মধ্যে হয়তো মাত্র একটা টিকে থাকবে। যদি একটি মাত্র ঘটনাপর্ব টিকে থাকে তাহলে সেটি হবে ১৯৭১ সাল। একাত্তরে কার কী ভূমিকা ছিল সেটা কোনো রিসেট বাটনে টিপ দিয়ে বদলানো যাবে না। ইতিহাস নিজের শক্তিতেই টিকে থাকবে। কোনো ক্ষমতাবানের শক্তি নেই তাকে বদলানোর। যুগ যুগ ধরে যারা নিজস্ব ন্যারেটিভ তৈরি করে বদলানোর চেষ্টা করেছে তারাই ইতিহাসের নর্দমাতে ঠাঁই পেয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি অন্তত ৭৫-৮০টি দেশের ইতিহাস পড়েছি। তাতে যা দেখেছি ইতিহাস কীর্তিকেই ধারণ করে। সুকীর্তির কারনে ব্যক্তিকে মনে রাখে। ক্ষমতাবানদের বুদ্ধি থাকলে তারা ইতিহাস বদলানোর চেষ্টা না করে সুকীর্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করতো। তাই ইতিহাস বদলানোর সংকট নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত থাকি না।
Monday, September 30, 2024
লেভান্টের দানব
Wednesday, September 25, 2024
পাহাড় বিক্রির বিজ্ঞাপন
পাহাড় বিক্রির বিজ্ঞাপন: চিঙ ওয়েঙ
যারা পাহাড়ে জমি কিনতে চান আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। একটা পাহাড় কিনে দিব। তবে বউ বাচ্চা নিয়ে বাড়ি বানিয়ে থাকতে হবে। আপনার বউ সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে পাহাড়ের নিচে ছড়া তে পানি আনতে যাবে। সেই পানি মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে আসবে আপনার বউ। আর হে, শীতকালে কিন্তু ছড়ার পানি শুকিয়ে যাবে!আপনি জুম চাষ করবেন পাহাড়ে।( তবে এই জুম চাষ শুধুমাত্র বর্ষাকালে করা যাবে। বাকি মাস ৪০০ টাকার মজুরি তে জংগলে কাজ করতে হবে)। দূপুর বেলা আপনার বউ তেল ছাড়া খাবার নিয়ে আসবে জুম ঘরে! নতুবা জুমের সবজি, ছড়ার কাঁকড়া ধরে বাঁশের চুঙ্গাই ভরে রান্না করে খাবেন তেল আর মসলা ছাড়া। মাঝে মাঝে আমরাও গেলাম আপনার অতিথি হতে। এক দুই দিন আপনার পাহাড়ের ভিলাতে থেকে আসলাম। আর হে আপনার বাচ্চাদের কিন্তু ইস্কুলে পাঠাতে হবে। ইস্কুলে যেতে দুই তিন কিলো হাটা লাগবে কিন্তু!!!
কেউ চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন। দেখলাম আমার পরিচিত অনেকেই পাহাড় কিনতে চাচ্ছেন ।
জমির দাম একরে ১০ হাজার টাকা মাত্র!!!
----------------------------------
বন্ধুতালিকার একজনের শেয়ার করা বিজ্ঞাপন পোস্টটি পড়ে আমার কয়েক বছর আগের সাজেকের একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ল। সাজেকের প্রাইমারী স্কুলটার পেছনদিকে একটা রাস্তা নেমে গেছে খাড়া নীচের দিকে। মনে হলো সেদিকে একটা পাড়া আছে। একদিন ভোরবেলা নাস্তা করার আগে হোটেল থেকে বেরিয়ে আমি কৌতূহলী হয়ে সেই পথ দিয়ে পাহাড়ের নীচের দিকে নেমে গেলাম। অনেকটা পথ নামার পর দেখলাম মাথায় দুটো কলসী(একটার ওপর আরেকটা) বসিয়ে একটা বাচ্চা ছেলে উঠে আসছে। ওকে একটু থামিয়ে আলাপ করলাম। জানতে চাইলাম কোথা থেকে পানি আনছে। সে জানালো নীচের দিকে একটা ঝরনা আছে সেখান থেকে ঘরের জন্য পানি আনছে। সেই ঝরনার খোঁজে আরো নীচে নেমে যেখানে গেলাম, সেখান থেকে উঠে আসতে খালি হাতেই আমার দম বেরিয়ে যাবার দশা। আমি তখন ভাবছিলাম ওই ৯/১০ বছরের বাচ্চাটার মাথায় রাখা কলসীগুলোর কথা।
Sunday, September 22, 2024
আদিবাসী বনাম অভিবাসী
বসতির নিরিখে পৃথিবীর মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। আদিবাসী এবং অভিবাসী। যারা যুগ যুগ ধরে নিজেদের আদি বাসভূমে নিজেদের প্রাচীন সংস্কৃতি ধারণ করে বসবাস করে তারা আদিবাসী। আবার যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে বসতি গড়ে এবং নিজেদের সংস্কৃতি সভ্যতাকে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর চাপিয়ে দেয় তারা হলো অভিবাসী। হাজার বছর আগে আদিবাসীরা ছিল শক্তিশালী। কিন্তু সময়ের সাথে আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ব করার কারণে অভিবাসীরা আদিবাসীদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গত পাঁচশো বছর ধরে পৃথিবীটা অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় যায় পুরোপুরি। আধুনিক মানচিত্রে গত পাঁচশো বছরে যেসব অঞ্চল ‘আবিষ্কার’ করা হয়েছে তার সবটুকু অভিবাসীদের দখলে। তিন মহাদেশ এবং তিন মহাসমুদ্রে অভিবাসীদের হাতে কয়েক কোটি মানুষ নিহত হবার পর আদিবাসীরা নিজেদের বাসভূমি হারানোর বিষয়টা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীটা অভিবাসীদের রাজত্বে চলে গেছে পুরোপুরি।
আদিবাসীর সংজ্ঞা কী আসলে? এটা কি ভূমির অধিকার বিষয়ক ব্যাপার নাকি জাতি ও সংস্কৃতির ব্যাপার? খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে আদিবাসী হলো তারা যারা এখনো নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠির আদিম সংস্কৃতিগুলো ধারণ করেছে। যাদের জীবনযাত্রার মধ্যে ইউরোপের সংজ্ঞায় নির্মিত সভ্যতা প্রবেশ করেনি অথবা প্রবেশ করলেও সেটা সীমিত আকারে আছে। কিন্তু আদিবাসীর সংজ্ঞা নিয়ে প্রায়ই যে বিতর্কটা ওঠে সেটা হলো ভূমির অধিকার বিষয়ক। এই ভূমিতে কে প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। কারা আগে এসেছিল। কাদের প্রভাব বেশি ছিল ইত্যাদি। কিন্তু আদিম জনগোষ্ঠী মূলত যাযাবর ছিল যাদের নির্দিষ্ট এলাকায় বেশিদিন বসবাস করতো না। নানান কারণে বাসস্থান স্থানান্তর হতো। পৃথিবীর অধিকাংশ আদিবাসী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে। এটার মূল কারণ সমভূমির দখল নিয়েছে ভদ্রলোকের সভ্যতা। যারা প্রযুক্তির শক্তি নিয়ে পৃথিবী দখল করেছে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন আদিবাসীদের বসতি ছিল তাইওয়ানে। গত দশ হাজার বছর ধরে তাইওয়ান থেকেই ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া মালয়েশিয়া সহ পুরো প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আদিবাসীরা ছড়িয়ে পড়েছে। তাইওয়ানে সেই আদিবাসীরা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। জনসংখ্যার মাত্র ২% আদিবাসী। বাকী সবাই অভিবাসী। অভিবাসীদের ৯২ ভাগ হলো চীনের হান জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নৃতাত্তিক জাতি গোষ্ঠী হলো চীনের হান জনগোষ্ঠী। এরাই চীনের ৯৫ ভাগ জনসংখ্যা। একই কথা প্রযোজ্য দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরো জাতির ক্ষেত্রে। পুরো উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিম জাতিগোষ্ঠিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আন্দেজ পর্বতমালার পাদদেশে যেসব জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে, একসময় এদের পূর্বপুরুষ পুরো দক্ষিণ আমেরিকা দাপিয়ে বেড়াতো।
বাংলাদেশে যেসব পার্বত্য জাতিগোষ্ঠি আছে তারা এদেশের আদিবাসী কিনা এটা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়। তারা কত বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছে, তাদের আগেও এখানে আদিম জনগোষ্ঠী ছিল কিনা ইত্যাদি নিয়ে। এই কথাগুলো বলা হয় শুধু ভূমির অধিকার নিয়ে। একটু বৃহত্তর পরিসরে ভাবলে দেখা যাবে ভূমিটা এখানে মূখ্য বিষয় নয়। ভারতের মিজোরাম, বার্মার চিন, কিংবা পূর্বাঞ্চলে কুকি বা লুসাই নামে সাধারণভাবে পরিচিত যে জনগোষ্ঠি, তাদের মধ্যে শত শত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি রয়েছে। বিবর্তিত বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তেমন জাতিগোষ্ঠিও কম নয়। তারা সবাই দেড় থেকে দুহাজার বছর আগে চীনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এই অঞ্চলে এসেছিল। তারও আগে এখানে যেসব জনগোষ্ঠি ছিল, তাদের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। যেমন আমাদের দেশে পার্বত্য জাতিগোষ্ঠির মধ্যে চাকমারা সবচেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ, আবার বম জনগোষ্ঠি সংখ্যায় অনেক কম। কিন্তু এই অঞ্চলে বমদের বসতি চাকমাদের চেয়ে অনেক প্রাচীন। সুতরাং কাকে আপনি এখানকার আদিবাসী বলবেন? সবক্ষেত্রেই দেখা যাবে আগে কোনো না কোনো জাতিগোষ্ঠীর বসতি ছিল ওই এলাকায়। একহাজার, দুহাজার, তিন হাজার, দশ হাজার? তাদের কোনো ইতিহাস কিংবা চিহ্ন নেই কোথাও।
আমাদের সমভূমির বাঙালিদেরও নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। কিন্তু সেটার সাথে পার্বত্যবাসীদের তুলনা করা উচিত হবে না। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের পরিচয় কিছুটা তুলনা করা যাবে আমেরিকানদের সাথে। ইউরোপ থেকে দলে দলে নানা জাতিগোষ্ঠি আমেরিকা গিয়ে যে একটা নতুন জনগোষ্ঠি এবং সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে তারাই আমেরিকান। বাঙালিরা আমেরিকানদের চেয়ে হাজার বছর পুরোনো জাতি, কিন্তু এখানেও দুনিয়ার নানা প্রান্ত থেকে আসা নানান জাতিগোষ্ঠির মিশ্রিত একটা জাতির জন্ম হয়েছে। এখানে আমাদের বিশুদ্ধ আদিম সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। এই বিশুদ্ধতার অভাবেই সমভূমির জাতিগুলোর মধ্যে সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি সবকিছুতে অস্থিরতা, বিশৃংখলা, নৈরাজ্য বেশি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব এখানে প্রবল। কারণ ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠি থেকে আসা লোকেরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চায় নানা ভাবে। কেউ বংশগৌরবে, কেউ অর্থ সম্পদে। কেউবা স্রেফ হাস্যকর ইগোর জোরে।
Friday, September 20, 2024
Waiting books
Maybe you will not finish reading all these books. But they are waiting for you for months. Your waiting list is getting bigger, but your time is getting shorter. Make your time for waiting books.
Friday, September 13, 2024
নীরবতাপর্ব....ক্রমশ...
Wednesday, September 11, 2024
'অসভ্য' দেশের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক
এই জাতিগত দাঙ্গাগুলো আধুনিক সভ্যতার দান। বিষয়টা অনেক দীর্ঘ বিস্তারিত আলাপের বিষয়। সংক্ষেপে বলতে গেলেও ধৈর্যে কুলাবে না অনেকের। তবু যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বলছি।
পৃথিবীতে বিদ্যমান রাষ্ট্রগুলোর মানচিত্র সৃষ্টির অনেক গল্প আছে। একেকটি মানচিত্র কিভাবে তৈরি হয়েছে সেই গল্পগুলোর বড় অংশ জুড়ে আছে মর্মান্তিক সব উপাখ্যান। অধিকাংশ সীমান্ত বিভাজন ভয়ানক যুদ্ধের পরিণতি। মানুষ যতই নিজেকে সুসভ্য বলে ঘোষণা করুক, সীমান্তের এই গল্পগুলোর মধ্যে মানবজাতির সবচেয়ে বড় অসভ্যতাগুলো লুকিয়ে আছে। অস্ত্রশক্তি আর রাজনৈতিক কুটকৌশলের খেলার মাধ্যমে জন্ম হওয়া স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর ভেতরেও অনেক অমানবিক ব্যাপার রয়ে গেছে। পৃথিবীর অল্প কিছু রাষ্ট্র বাদে বৃহৎ সব রাষ্ট্রের মানচিত্রের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নানা ধরণের অসভ্যতার ইতিবৃত্ত। এসব অসভ্য মানচিত্র ছিঁড়ে কিছু দেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও এখনো অসংখ্য পরাধীন জাতি এসব রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পিষ্ট হচ্ছে সভ্যতার ছাদের নীচে। একেকটা দেশে একেক রকমের বঞ্চনার গল্প।
কাছের দেশ হিসেবে সবার আগে ভারতের উদাহরণ দেই। পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে অনেকগুলো জাতির বসবাস। তাদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। সরলভাবে চিন্তা করলে ভারতের ভেতরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারতো সেরকম রাজ্যের সংখ্যা কয়টি? মোটা দাগে বলতে গেলেও সংখ্যাটা দশের বেশি হবে। অনেক জায়গাতেই ভারতের মূলধারার সংস্কৃতি ধারণ করে না তেমন কিছু জাতিকেও জোর করে ভারতের ভেতরে বেঁধে রাখা হয়েছে। বেঁধে রাখা হয়েছে বলতে হচ্ছে কারণ সে রাজ্যগুলো নিজ থেকে ভারতের সাথে যুক্ত হয়নি। বৃটিশ শাসনের সময় থেকে তাদের জোর করে ভারতভুক্তি করা হয়েছে। যেমনভাবে সোভিয়েত আমলে মধ্য এশিয়ার অনেক রাজ্যকে সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবে বন্দী করা হয়েছিল।
পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই কথা আরো বেশি সত্য। এই ২০২৪ সালে মনিপুরে যে আগুন চলছে, বার্মায় আরাকান রাজ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছে অথবা কুকিচিনের প্রধান ঘাঁটি চিনল্যান্ড যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সবগুলো ওই একই কারণে। গত দেড়শো দুশো বছর ধরে ওইসব অঞ্চল যারা শাসন করছে তারা সবাই বহিরাগত। জোর করে ওইসব রাজ্য দখল না করলে সেগুলো হয়তো এখন স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই থাকতো। অস্বীকার করা যাবে না কোনো কোনো এলাকায় বাংলাদেশও তাদের ছোট ভাই। একই কথা প্রযোজ্য হিমালয় অঞ্চলের রাজ্য গুলোর ক্ষেত্রেও।
হিমালয় অধ্যুষিত এলাকার একটা জাতিও ভারতীয় নয়। বৃটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে মালিকানা না পেলে সেই রাজ্যগুলো কখনোই ভারতের অংশ হতো না। নেপাল ভূটান যে কারণে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, একই কারণে ভারতের ভেতরের সেই রাজ্যগুলোর অধিকার ছিল স্বাধীন সত্ত্বা নিয়ে বেঁচে থাকা। কিন্তু অসভ্য রাজনীতির কুটনৈতিক চালের কারণে তা হয়নি। এই অঞ্চলের সবগুলো সরকার পৈত্রিক উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পদের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলোকে ভোগ দখল করছে। রাজ্যগুলোকে যদি জনমত যাচাই করা হয় তবে নিশ্চয়ই তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে থাকতে চাইবে। অরুনাচল থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সমগ্র উত্তরাঞ্চলে একই চিত্র। পূর্ব দিকে মনিপুর মেগালয় মিজোরাম নাগাল্যাণ্ডের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। ভারতের সঙ্গে এই রাজ্যগুলো নিতান্ত বাধ্য হয়ে যুক্ত আছে।
আগামী একশো বছরের মধ্যে হয়তো এখানে অনেকগুলো আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হবে। দুশো বছর আগে পৃথিবীর যেসব জাতি পরাধীন ছিল, তাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য ছিল। একইভাবে তিব্বত কিছুতেই চীনের অংশ হতে পারে না। পারে না জিনজিয়াং নামের উইঘুরদের দেশটাও। চীনের ভেতরে লুকিয়ে আছে এরকম অন্ততঃ আরো ডজনখানেক আলাদা জাতি। সোভিয়েত রাশিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া রাষ্ট্রগুলো আজ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। আরো অনেক পরাধীন জাতি আছে তার ভেতরেই। সারা পৃথিবীতে স্বাধীন রাষ্ট্র হবার যোগ্যতা সম্পন্ন জাতির সংখ্যা নেহাত কম নয়। দেশে দেশে তাদের অস্তিত্ব ছড়িয়ে আছে। সবগুলো জাতি যদি যদি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতো পৃথিবীতে স্বাধীন দেশের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যেতো।
ষোড়শ শতকের আবিষ্কারের যুগ থেকে শুরু করে জগতের শক্তিমানেরা পৃথিবীর একশোভাগ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। এক ইঞ্চি মুক্ত জায়গা নেই কোথাও। আপনি শুনে অবাক হতে পারেন ভারত মহাসাগরে কয়েকশো ফুট প্রস্থের এমন কিছু ক্ষুদে দ্বীপ আছে যেগুলো এখনো ইউরোপীয়ানদের দখলে।
মোদ্দাকথা পৃথিবীর সব মানুষকে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনস্থ করা হয়েছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। পৃথিবীতে এমন অনেক আদিবাসী আছে তারা জানেও না কে তাদেরকে শাসন করছে। হয়তো শাসন করছে এমন কেউ যাদের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই। হয়তো সেই জাতি উপজাতিগুলোর রাষ্ট্র, স্বাধীনতা, পতাকা, মানচিত্র এসবের কোন প্রয়োজন নেই। তবু সভ্যতার দোহাই দিয়ে তাদেরকে কোন না কোন রাষ্ট্র খোপে প্রবেশ করানো হয়েছে। মানুষ আধুনিক বলে বিবেচিত হবার পর থেকে এসব রাষ্ট্র সীমানার জন্ম। অথচ এসব সীমানার প্রশ্ন যখন ছিল না তখনও তাদের অস্তিত্ব ছিল। সীমান্ত থাকা না থাকায় তাদের কিছু এসে যায় না। মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর সীমান্ত নেই। আদিযুগে হাজার হাজার বছর ধরে মানবজাতি এসব ছাড়াই পৃথিবীতে বেঁচে ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। কিন্তু এখন ইচ্ছে থাকলেও কোনও জাতি রাষ্ট্রবিহীন থাকতে পারবে না। তাদেরকে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনে থাকতেই হবে। কেউ না কেউ তাকে দখল করে নেবেই। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের দূর দূরান্তের হাজার হাজার ক্ষুদে ক্ষুদে দ্বীপের জাতিগোষ্ঠীগুলোও রক্ষা পায়নি এই সভ্যতার থাবা থেকে।
কিন্তু সব মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোন না কোন রাষ্ট্রের অধীনে থাকতে হবে কেন? এই যে আধুনিক সভ্য রাষ্ট্রের যে ফরমূলা, পতাকা মানচিত্র জাতীয়সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয় পৃথিবীর আদিম জনগোষ্ঠিদের মধ্যে ছিল না, এখনো নেই। আশ্চর্য ব্যাপার হলো এই প্রশ্নটা সাধারণভাবে আমাদের মানে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের মনে জাগে না। আমরা মেনেই নিয়েছি মানুষের জীবনে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী এই আইনের আওতায় নেই। একটা পিঁপড়া কিংবা কাক কিংবা কুকুর বেড়ালকে নাগরিকত্ব নিয়ে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। অথচ মানুষকে নিরন্তর এই যন্ত্রনা পোহাতে হয়।
হঠাৎ করে কেন এই প্রশ্ন তুললাম? আমার মনে হয়েছে মানুষের জন্য পৃথিবীতে কিছু মুক্ত দেশ মুক্ত অঞ্চল থাকা দরকার। যেখানে আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামো থাকবে না, রাজনীতি থাকবে না, পাসপোর্ট থাকবে না, মানচিত্র থাকবে না, পতাকা থাকবে না। শুধু মানুষ থাকবে। আদিম স্বাধীন মানুষ। যে মানুষেরা স্বাধীনভাবে তাদের আদিম জীবনযাত্রা বজায় রাখতে পারবে। যে মানুষকে জোর করে আধুনিক সভ্যতার দীক্ষা গ্রহন করতে হবে না। যে মানুষকে অন্যের বানানো স্বর্গে সুখী হবার ভাণ করতে হবে না। যে মানুষ নিজস্ব আলয়ে একটি স্বাধীন বন্য প্রাণীর জীবন যাপন করবে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোন দেশ কোথাও নেই। পৃথিবীতে আর কোন জঙ্গল, পর্বতমালা কিংবা দ্বীপ নেই যেখানে সভ্যতার কদর্য পদক্ষেপ পড়েনি।
আধুনিক মানুষের বানানো সভ্যতার সংজ্ঞায় মানুষদের জন্য প্রকৃতির দেয়া স্বাধীনতা নিয়ে বসবাস করার স্বাধীন কোন অঞ্চল নেই। এই না থাকাটা একটা বড় রকমের মানবাধিকার লংঘন। এই মানবাধিকার লংঘনের কথা কেউ বলে না। অথচ প্রকৃত স্বাধীনতা হলো প্রকৃতির সন্তান হিসেবে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার অধিকার। পৃথিবীতে অন্য প্রাণীদের জন্য ছোটখাট অভয়ারণ্য থাকলেও মানুষের জন্য কোনও অভয়ারণ্য নেই।
আধুনিক মানুষের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এই সভ্যতার যাত্রা শুরু মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে। ইউরোপীয়ান ফরমূলার রাষ্ট্রকাঠামোর বয়স মাত্র কয়েকশো বছর। মহাকালের তুলনায় এটা কিছুই না। এটা হয়তো আর এক হাজার বছরও টিকবে না। টিকলে কী হবে কল্পনায় আসে না। তিনশো বছর আগে মানুষ প্রযুক্তির যে পর্যায়ে ছিল তাতে করে মানবজাতি আরো দশ হাজার বছর টিকতে পারতো। কিন্তু গত একশো বছরে মানুষ যেসব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে তাতে স্বজাতিকে ধ্বংস করার মতো যথেষ্ট অস্ত্র মজুদ হয়ে গেছে, স্বজাতিকে চরম ঘেন্না করার নানান বিভক্তিও তৈরী হয়ে গেছে। এই মানসিকতার বহুধাবিভক্ত মানব জাতি আর এক হাজার বছর দূরে থাক দুশো বছর টিকবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে।
মাঝে মাঝে তাই মানুষের জন্য একটা অভয়ারণ্যের খুব প্রয়োজন অনুভব করি। পৃথিবীতে কিছু আদিম অসভ্য জাতিগোষ্ঠির জন্য এমন কিছু ভূখণ্ড থাকা দরকার ছিল যেখানে ওরা নিজেদের মতো জীবন কাটাবে। আদিম স্বাধীন মানুষেরাই পৃথিবীর প্রকৃত নাগরিক। পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখার জন্য এমন কিছু এলাকা থাকা উচিত।
কেন উচিত সে বিষয়ে একটা বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি। অনেকে থাংলিয়ানা বইতে পড়েছেন ঘটনাটা। উনিশ শতকে লুসাই যুদ্ধের পর একদল পার্বত্য আদিবাসীকে আধুনিক উন্নত সভ্যতা দেখিয়ে মুগ্ধ করার জন্য জাহাজে করে কলকাতা শহরে নেয়া হলো। কিন্তু দেখা গেল মুগ্ধ হওয়া দূরে থাক, দুদিন বাদেই ওরা কলকাতার ওপর মহা বিরক্ত হয়ে বলছে, তোমাদের এই সভ্যতা আমাদের দরকার নাই। আমাদের সেই পাহাড়ের চুড়ায় রেখে আসো যেখান থেকে নিয়ে এসেছো। ওখানেই আমাদের শান্তি। ওটাই আমাদের দুনিয়া।
Saturday, September 7, 2024
ফ্যাসিবাদী শব্দপ্রয়োগ সংক্রান্ত
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর থেকে একটা শব্দ খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ। গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে বোঝাতে এই শব্দটা ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু সপ্তাহখানেক বা তার বেশিসময় ধরে খেয়াল করছি শব্দটা অপব্যবহার শুরু হয়েছে। যারা শব্দটার অর্থ বোঝে না, প্রয়োগ বোঝে না তারাও মুখস্থ শব্দটা ব্যবহার করছে। নিজের মতামতের বাইরে কিছু পেলেই তাকেই ফ্যাসিবাদ বলা হচ্ছে। যার ফলে এই শব্দটার আসল অর্থটা হারিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে রাজাকার শব্দটা যত্রতত্র ব্যবহার করা হতো এখন ফ্যাসিবাদ শব্দটিও সেই পথে যাত্রা শুরু করেছে।
আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল এই বিপ্লবের স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু উপহার দেবে। পুরোনো ভুল পন্থাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন ভাষায় কথা বলবে, নতুন প্রজন্ম বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে, সেজন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক হলেও সরকারের শীর্ষপদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিদের। তারা কোনো রাজনৈতিক পথ ও মতের অনুসারী হবার কথা নয়। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
যা ঘটছে তাতে মনে হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতারণার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে এখানে। এই নাটকের মঞ্চ হিসেবে বাংলাদেশের এই রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারবে মনে হয় না। দুই মাস আগে কেউ কল্পনাও করেনি মুক্তিযুদ্ধ শব্দটাকে ফ্যাসিবাদ শব্দার্থে রূপান্তরিত করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে চারদিকে। সাধারণ মানুষকে এত বোকা মনে করা ঠিক না।
ত্রিদেশীয় সীমান্তের রহস্য: চিনল্যান্ড
অধ্যয়ন-১
বাংলাদেশ-বার্মা-ভারত সীমান্তের দূর্গ অরণ্যের জাতিগোষ্ঠি সম্পর্কিত অনুসন্ধান। ১৮৮২ সালে ক্যাপ্টেন লুইনের লেখা ফ্লাই অন দ্য হুইলের হারিয়ে যাওয়া জাতিগোষ্ঠির খোঁজ করার চেষ্টার প্রথম পর্ব। লুসাই বলে কথিত তিনটি গোত্রের মধ্যে ছিল হাওলং, সাইলু এবং শেন্দু। এদের মধ্যে মাত্র একটির সন্ধান মিলেছে বলে মনে হয়। বার্মার চিন প্রদেশ যাদের নিয়ন্ত্রণে সম্ভবত তারাই হাওলং। সাইলু এবং শেন্দুজদের বিষয়ে আরো খোঁজ করতে হবে। বিশেষ করে শেন্দুজ গোত্রকে কখনোই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
সাম্প্রতিক সময়ের একটি ঘটনা। যেটা পৃথিবীর প্রধান পত্রপত্রিকায় তেমন ঠাঁই করতে পারেনি। ফলে আমাদের অগোচরেই থেকে গেছে ঘটনাটা। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের জন্য খবরটা গুরুত্বপূর্ণ।
বার্মার চিন প্রদেশ চিনল্যান্ড নামে একটা দেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, এই স্বাধীনতা অবশ্য কোনো দেশ থেকে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের ভাষায় চিনল্যান্ড এর আক্ষরিক অর্থ হলো 'আমারদেশ'। মূলত চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের বিদ্রোহী গ্রুপ এই স্বাধীন দেশের মালিকানা দাবী করেছে। তাদের নিজস্ব সরকার কাঠামো প্রকাশ করেছে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পু পা থাং। নতুন দেশের জনসংখ্যা পনের লাখের মতো। তাদের সরকারী ভাষা বার্মিজ, কুকিচিন,ইংরেজির পাশাপাশি মিজো ভাষাও ব্যাপক প্রচলিত। জাতীয় প্রতাকায় লাল সাদা নীলের মধ্যে দুটো ধনেশ পাখি। চিনল্যান্ডকে লুসাই ভাষায় চিনরামও বলা হয়। মূলত প্রাচীন লুসাই জাতির একাংশ দিয়েই এই রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছে। এই সরকার গঠনের পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্রোহী গ্রুপ CNF, এই দলের প্রতিষ্ঠা ছিলেন পু তিয়াল খাল এবং পু লিয়ান নো থাং। তারা ভারতে এই দলটি গঠন করেছিলেন। ওই দলের সামরিক শাখার নাম CNA বা চিন ন্যাশনাল আর্মি।
এদের মূল গোত্রটি হলো উনিশ শতকে হাওলং নামে যে গোত্রটা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিল সেই গোত্র। হারবার্ট লুইন তাদেরকে হাওলং বলে অভিহিত করেছিলেন তার বইতে। তবে তাদের আসল নামটা সম্ভবত Khlong বা Khlaung, যেটার অর্থ মানুষ। বার্মিজরা তাদেরকে আশো চিন বা আশো খালং নামে ডাকে। বর্তমানে বার্মিজ সরকারের প্রবল নিপীড়নের মধ্যে আছে ওই জাতিগোষ্ঠি। পালিয়ে গেছে অনেকে ভারতের মিজোরামে। হয়তো বাংলাদেশেও কিছু আশ্রয় নিয়েছে গোপনে।
এদের উপভাষাগুলোর মধ্যে আছে:
Zomi Tedim Chin with an estimated 344,000 speakers
Thadou Kuki Chin estimated 300,000
Asho Chin 200,000-300,000
Falam Chin with an estimated 50,300 speakers
Haka Chin (Hakha) with an estimated 125,000 speakers
Matu Chin 25,000 speakers
Khumi Chin 90,000
Mara Chin with an estimated 50,000 speakers
Cho Chin 60,000
Zotung Chin 35,000
এদেরই একটা অংশ বান্দরবানে বাংলাদেশের সীমানায় বসবাস করছে যারা কুকি চিন নামে পরিচিত। এরা বাংলাদেশেও বিদ্রোহের চেষ্টা করে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এদের অধিকাংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। কিছুদিন ধরে একটা মতবাদ চালু হয়েছে এরা বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের একাংশ নিয়ে একটা খ্রিস্টান দেশ গড়তে চায়। সে কারণেই কুকি চিন বিদ্রোহীরা বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতা চালাচ্ছে।
প্রাচীন লুসাই জাতির একাংশ নিয়ে গঠিত এই দেশ বা প্রদেশটা এখনো আরাকান আর্মির মতো তেমন শক্তিশালী নয়। কিন্তু ভবিষ্যতে বাইরের শক্তির প্রশ্রয় পেলে এরা আঞ্চলিক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এদিকে।
অধ্যয়ন-২
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভারতের দুটি রাজ্য ত্রিপুরা এবং মিজোরাম। বার্মার দুটি রাজ্য চিন ও আরাকান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পূর্বদিকে মনিপুর। বর্তমান মানচিত্রে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের অধীনস্থ হলেও এই রাজ্যগুলোর মধ্যে একটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐক্য আছে। সেই ঐক্য হাজার বছর প্রাচীন। ঐক্যের সূত্র বুঝতে হলে রাজ্যগুলোর ইতিহাস জানতে হবে। রাজ্যগুলোতে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠিগুলোকে বুঝতে হবে। পত্রিকার পাতায় মনিপুর প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। মনিপুরের যে সমস্যা সেটা ভাল করে বুঝতে হলে মনিপুর মিজোরাম এবং চিন এই তিনটা রাজ্যের ইতিহাস একসাথে পড়তে হবে। কারণ গত একশো বছরে রাজনৈতিক সীমান্ত বদলে গেলেও এই রাজ্যে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠিগুলোর সাংস্কৃতিক ঐক্য বদলায়নি। এরা একদিকের ধাওয়া খেয়ে আরেক রাজ্যে বসতি গড়েছে ঠিক, কিন্তু এদের মধ্যে প্রাচীন জাতীয়তাবোধ ভালোভাবেই অক্ষুন্ন আছে। ভারত কিংবা বার্মার আগ্রাসন এদেরকে যে গত অর্ধশতাব্দী সময় দরে দমন করতে পারেনি সেটা এখন ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে।
বার্মায় চিন রাজ্যের অভিযানে অংশ নেয়া ব্রিটিশ কর্মকর্তা Lt. Betram ১৮৮৮ থেকে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে The Chin Hills লিখেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অস্থিরতার আদ্যপান্ত বোঝার জন্য এই গ্রন্থটি জরুরী। কারণ সীমান্তের ধোঁয়া এই পারেও কিছু কিছু উড়ে আসতে শুরু করেছে। মনিপুরে যাদের সাথে যুদ্ধ চলছে, তাদেরই অন্য অংশ বার্মার চিন প্রদেশ স্বাধীন করতে চাইছে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের কুকি-চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠিও বান্দরবানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যদিও সংখ্যায় তেমন বেশি নয়। চিন, মিজোরাম, মনিপুরে সব মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি জাতিগোষ্ঠি আছে যাদের অধিকাংশ বাস্তবতা মেনে যে যার দেশের সরকারের সাথে আপোষ করে নিয়েছে। কিন্তু অল্প কয়েকটা গ্রুপ এখনো বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব পুরুষদের মতো। বলাবাহুল্য এই বিদ্রোহগুলোর পেছনে ন্যায্য কারণও আছে। প্রতিটা দেশে সরকারী শক্তি কোনো না কোনো ভাবে তাদের ওপর অবিচার চালিয়েছে। দেশভেদে সেই অবিচারের কারণগুলো আলাদা। কিন্তু অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো তাদের রক্তের ভেতরে লুকিয়ে আছে। যেটা শত শত বছর পরও লুপ্ত হয়নি।
আ ফ্লাই অন দ্য হুইল গ্রন্থে তার কিছু অংশ পড়েছিলাম। এখন পড়ছি দ্য চিন হিলসের বিবরণ। দুটো গ্রন্থই সমসাময়িক। পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার কারণের পাশাপাশি সেই জাতিগুলোকে চিনতে সাহায্য করে। বলাবাহুল্য, এসব বই শাসকদের দিক থেকে যে বাস্তবতার চিত্র দেখায় আমরা সেটাই দেখতে পাই। পার্বত্যজাতিগোষ্ঠির দিক থেকে সেটা এক নাও হতে পারে। তাদের কারো লেখা বই পড়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত হবে না। জো কিংবা চিন গোষ্ঠির কেউ কি তাদের ইতিহাস লিখেছেন?
Tuesday, August 27, 2024
সময়রেখা : জুলাই-আগষ্ট ২০২৪
Tuesday, August 20, 2024
চোরকাঁটা
একেকটা সরকারের পতন ঘটলে দেখা যায়,
এতদিন ধরে নীতিবাক্যের রেকর্ড বাজানো লোকগুলো একেকজন কত বড় বড় চোর!
পুরো দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই লোকগুলো চোরকাঁটার মতো বিঁধে ছিল।
গত চল্লিশ বছর ধরে দেখে যাচ্ছি এক ব্যাচ চোর যায়, আরেক ব্যাচ চোর আসে। মহারাজ চোর, মহারানী চোর, আগা চোর, বাঘা চোর, পুটি চোর, বোয়াল চোর, পুকুর চোর, সমুদ্র চোর, আদিগন্ত চোরে চোরাকার!
চোরকাঁটার আয়ু অফুরান!
Monday, August 19, 2024
৯ নম্বর মাঠ
নয় নম্বর মাঠে আমাদের যেসব বন্ধুদের সাথে দীর্ঘ সময় কেটেছে, শৈশব থেকে তার যাত্রা শুরু। যেটুকু মনে আছে সেখান থেকে নোট করে রাখা যায়।
আমার জন্ম এই কলোনীতে। তবু নানা কারণে জীবনের প্রথম পাঁচ বছর গ্রামেই কেটেছে। কখনো দাদাবাড়ি, কখনো নানাবাড়ি। পটিয়া এবং বোয়ালখালীতে। তখনো আমার বন্ধুবান্ধবের জগত সৃষ্টি হয়নি। শহরে এসে স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রথম বন্ধুতার যাত্রা শুরু হয় মিলনকে দিয়ে। অবশ্য বাদলকে প্রথম বন্ধু বলা উচিত হলেও বলছি না, কারণ বাদলের ভূমিকা ছিল প্রধানত ভাই। মামাতো ভাই হিসেবে সে আমার প্রথম শহরগুরু। আমি গ্রাম থেকে আসা বালক, আমাকে শহরের নানা বিষয়ে প্রথম জ্ঞানদান শুরু করেছিল। শহরের নানান বিস্ময়কর ব্যাপারের সাথে আমার পরিচয় ঘটাতে শুরু করে। তাকে আমি বিশিষ্ট জ্ঞানী বলে জানতাম কারণ সে ইতোমধ্যে ক্লাস টুতে উঠে গেছে। আমি মাত্র ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছি। কথা ছিল আমরা দুজন একই ক্লাসে ভর্তি হবো। ঘরে বসে আমার ক্লাস টু পর্যন্ত পড়া শেষ। কিন্তু ভর্তি হবার সময় স্কুলে গিয়ে পাঠশালা বানান করতে না পারার অপরাধে আমাকে নীচের ক্লাসে ভর্তি হতে হয়েছিল। কিন্তু আমি কিছুতে ক্লাস ওয়ানে বসবো না। আমি খুব ভীতু ছিলাম। স্কুলে মানুষখেকো ধরণের কিছু আছে, তাদের কবল থেকে বাঁচতে হলে বাদলের সাথেই বসতে হবে। সে এখানকার পথঘাট সব জানে। নিরুপায় হয়ে সহৃদয় শিক্ষকেরা তা মেনে নিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও আমি প্রথম দুবছর ক্লাস করেছি উপরের ক্লাসে। তৃতীয় শ্রেণী থেকে নিজের ক্লাসে বসার সাহস অর্জন করেছিলাম। আমার নিজস্ব বন্ধুবান্ধবের জগত শুরু হয় তখন থেকেই। তবে বাদলের সঙ্গপ্রিয়তা থেকে আমি যে আরো অনেক কিছু অর্জন করেছিলাম, সে কথা আরেক পর্বে বলা হবে। বাদল যে অনেক বড় কিছু হবে আমি যেন শৈশব থেকেই জানতাম। আজকের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বাদল সৈয়দের দিকে তাকিয়ে সেটার প্রমাণ পাই।
শৈশবের সেই প্রথম পর্বে আমার নিজস্ব বন্ধু জগতের সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা বেশিদিন টেকেনি। ভাগ্যিস টেকেনি, নইলে আজকে আমি অন্য জগতের বাসিন্দা হতাম। তবে সেটা খুব বৈচিত্র্যময় একটা অভিজ্ঞতা ছিল। আমাদের বাসা কলোনীর যে অঞ্চলে ছিল সেখানে সব দুরন্ত ছেলেপেলের বসবাস। আমাদের খেলাধুলার জগত ছিল মার্বেল, ডাংগুলি, লাঠিম, সাতচাড়া, বোম্বেটে, দাঁড়িয়াবান্দা, হাডুডু, ঘুড়ি উড়ানো এবং আরো কত হাবিজাবি সব মনে নেই। মাঝে মাঝে ফুটবল ক্রিকেটও খেলেছি, কিন্তু উপকরণের অভাবে সেগুলো তেমন জমেনি। আমার প্রথম বন্ধু মিলন অতি ভদ্র ছেলে ছিল, ওর সাথে আমার পোষায় না। আমার আগ্রহ বখাটে বেয়াড়া ধরণের ছেলেপেলের দিকে। তুহীনের সাথেও তখন বন্ধুতা হয়, টুটুল, পুটুল, মামুন, সাইদ, মারুফ, এরা সবাই স্কুলের বন্ধু, কিন্তু স্কুলের বাইরে খেলাধুলার সম্পর্ক তাদের সাথে ছিল না। আমার খেলার বন্ধুগুলো ছিল আলাদা।
আমার শৈশবের এই বন্ধুগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল বাকী জীবনের বন্ধুদের চেয়ে আলাদা। এরা প্রত্যেকে নিজস্ব ক্ষেত্রে বিশেষ পারদর্শী। এদের ভেতরে ওই বয়সে যে পরিমাণ অকালপক্কতা ছিল সেটা ভেবে বুড়ো বয়সেও আমি রীতিমত বিস্মিত। আমাকে বিশেষজ্ঞানে বিশেষায়িত করার ব্যাপারে ওই বন্ধুগুলোর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। পৃথিবীর অনেক অজানা রহস্য তাদের মাধ্যমে উদঘাটিত হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ স্কুলে পড়তো, কেউ কেউ স্কুলের ছায়াও মাড়ায়নি। তবে কে কোন স্কুলে পড়তো সেটা আমি জানতাম না। স্কুল বা পড়াশোনা বিষয়ে তাদের সাথে কোনদিন কথা হতো না। তাদের সাথে আমার বন্ধুতার ভিত্তি হলো ডাংগুলি, লাঠিম, মার্বেল, ঘুড়ি ওড়ানো, বাজি ফোটানো, তিল্ল এসপ্রেস( এই নামের রহস্য আমি জানি না তবে এটা এক জাতের লুকোচুরি), সহ নানান বখাটেপনা। এসব করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ধাওয়া খেতাম নানান গুরুজনের কাছ থেকে। ধাওয়া খেয়ে খিকখিক করে হেসে গড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক দৃশ্য। কেউ বেদম পিটুনি খাচ্ছে সেটাও ছিল আমাদের বিনোদনের অংশ। স্কুল থেকে আসার পর ওরাই ছিল আমার খেলার সঙ্গী। বার্ষিক পরীক্ষার পর দীর্ঘ ছুটিতে গ্রামে যেতাম, তখন মনটা হু হু করতো ওদের সাথে খেলাধুলার জন্য। ওদের মধ্যে কেউ ছিল লাঠিম এক্সপার্ট, কেউ মার্বেল এক্সপার্ট, কেউ তাস খেলার ডাগ্গি ছোড়ার এক্সপার্ট, কেউ ঘুড়িতে মাঞ্জা দেবার এক্সপার্ট। লাঠিমে এক্সপার্ট যারা তারা লাঠিম খেলার পারদর্শীতার পাশাপাশি আরেকটা বিষয়েও পারঙ্গম ছিল। লাঠিম খেলায় জিতলে হেরে যাওয়া লাঠিমটা তাকে দিয়ে দিতে হতো। সে বাজির শর্তানুসারে তার লাঠিম দিয়ে ওটাকে গেজ মারবে। এই গেজ মারার বিষয়টা ছিল অদ্ভুত নৃশংস। লাঠিমের যে পেরেকটা আছে সেটা দিয়ে অন্য লাঠিমে আঘাত করা। যারা এক্সপার্ট ছিল তারা গেজ মেরে অন্য লাঠিমকে ফাটিয়ে দুভাগ করে দিতে পারতো। সে কারণে বাজিতে রাখার জন্য আমরা একটু সস্তা লাঠিম ব্যবহার করতাম। চকচকে রঙিন লাঠিম বাজিতে রাখা হতো না সাধারণত। নতুন পাংখি ধরণের লাঠিমকে গেজ থেকে বাঁচানোর জন্য একটা কায়দা করা হতো। লাঠিমের মধ্যখানে একটা বুটপিন ঢুকিয়ে দেয়া হতো। তাহলে ওই গেজের আঘাতে লাঠিম ফাটতো না সহজে। ওই বুটপিন সংগ্রহ করার কায়দাটাও বিচিত্র ছিল। দোকানে ওই জিনিস বিক্রি হতো না। ওটা চুরি করতে হতো রিকশা বা টেক্সির সিট থেকে। নতুন চকচকে রিকশা বা টেক্সির সিটগুলো বুটপিন দিয়ে সাজানো থাকতো। যখন বাবা মার সাথে কোথাও বেড়াতে যেতাম, তখন খেয়াল করতাম রিকশা বা টেক্সিটা বুটপিনঅলা কিনা। বুটপিনওয়ালা রিক্সা টেক্সিতে উঠতে পারা একটা ভাগ্যের ব্যাপার মনে করতাম। সিটে বসেই বড়দের অলক্ষ্যে হাতের নখ দিয়ে আস্তে আস্তে একটু বুটপিন খুলে নিতে হবে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে। দীর্ঘ গন্তব্য হলে দুটো বুটপিন তোলার সুযোগ হতো। একটা বুটপিন খুলে পকেটে নিতে পারলেও মনে হতো একটা বড় কাজ সেরেছি। যেসব টেক্সিতে বুটপিন নেই, সেগুলোতে আমি উঠতে চাইতাম না। রিকশা টেক্সি থেকে বুটপিন খুলে লাঠিমের মাথায় বসানোর এই কায়দাটা শৈশবের ওই বেয়াড়া বন্ধুদের কাছ থেকেই শেখা।
শৈশবের বেয়াড়া বন্ধুদের ওই পর্বে আরো অনেক কিছু শেখা হতো এবং আমার জীবন অন্য দিকে প্রবাহিত হয়ে যেতো। কিন্তু সেটা হয়নি বাসা বদল হয়ে নতুন বন্ধুদের সাথে জুটে যাবার কারণে। আমার শৈশবের সেই বন্ধুগুলোর কেউ কেউ পরবর্তী জীবনে নামকরা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী হয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ একাধিক খুনের মামলার আসামী হয়ে জেল খেটেছে, কেউবা ফেরারি হয়েছে। তাদের নাম উচ্চারণ করতেও ভয় পেতো এলাকার লোক। হাই স্কুলে ওঠার পর ওদের সাথে আমার আর খেলাধুলা কিংবা কথাবার্তাও হয়নি তেমন। আমি সচেতনভাবে এড়িয়ে চলতাম। কখনো কখনো পথে দেখা সাক্ষাত হলে আমি আশঙ্কায় থাকতাম, তাদের সাথে যোগ দিতে বলে কিনা। কিন্তু না, সেরকম কিছু হয়নি। তাদের সঙ্গ ছেড়েছি বলে তারা আমাকে বিরূপ চোখে দেখেছে বলেও মনে হয়নি। দুয়েকবার পথে দেখা হয়েছে, আমি চোখ সরিয়ে নেবার চেষ্টা করেছি। একবার একজন আমাকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেছে। তখন আমি রীতিমত ভদ্রলোক হয়ে উঠেছি। অস্বস্তির সাথে আশপাশে তাকাচ্ছি কেউ দেখছে কিনা এক দাগী সন্ত্রাসী আমাকে জড়িয়ে ধরেছে এভাবে।
হাইস্কুলে ওঠার পর আমাদের বাসা বদল হয়। একই কলোনীতে আরেকটু বড় বাসা। নতুন সজ্জন প্রতিবেশি। পুরোনো ডাংগুলি দোস্তদের বাদ দিয়ে আরেকটু উজ্জ্বল বন্ধুর সাথে যুক্ত হতে শুরু করি। ডাংগুলি, সাতচাড়া খেলা বাদ দিয়ে ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয়। এই পর্ব থেকে আমার বইপড়া যাত্রা হয় বন্ধু মিজানের হাত ধরে। এই পর্বে মিজানের সাথে আমার ঘনিষ্টতা হয় বেশি। পরে তার সাথে যুক্ত হয় মামুন, বেনু, কবির, টুটুল, পুটুল, সাইদ, বাবুলসহ আরো অনেকে। আমরা দস্যু বনহুর থেকে শুরু করে, কুয়াশা পেরিয়ে মাসুদরানার দিকে হাত বাড়াই সন্তর্পনে। স্কুল লাইব্রেরি থেকে কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো, থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ইত্যাদি। সিজিএস কলোনীর মসজিদ মার্কেটে মহিউদ্দিন স্যারের একটা বইয়ের দোকান ছিল। সেখানে নতুন বই আসলে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকতাম। সেবা প্রকাশনীর সাথে পরিচয় হয় এই পর্বে। মিজানদের চারতলায় হামিদ নামের এক বন্ধু ছিল আমার। ওর এক ভাই ছিল আজাদ নামে। শুনেছিলাম ওরা চাঁদ সুরুজ একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিল। আমাদের কাছে ওদের পরিবারটা একটা বিশেষ বিস্ময় ছিল। ওদের বাসায় টিভি ছিল। আমরা মাঝে মাঝে টিভি দেখার নিমন্ত্রণ পেতাম। তখন যাদের বাসায় টিভি থাকতো তাদের বাসায় কলোনীর যে কেউ গিয়ে টিভি দেখার সুযোগ পেতো। সেটা চেনা বা অচেনা যাই হোক। ওটা ছিল সাধারণ একটা মানবাধিকার। আজকে এই চিত্র কল্পনাও করা যায় না।
সিজিএস কলোনী হলো আমার গ্রামের মতো। আমার সবচেয়ে বেশি বন্ধু এই কলোনীতে। পুরো স্কুল এবং কলেজ জীবন কেটেছে ওই কলোনীতে। আমার পুরো জীবনের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল ওখানেই। তাই বাকী জীবনে ঘুরে ফিরে বছরে অন্তত দুয়েকবার ওই কলোনীতে গিয়ে ঘুরে আসি। এখন ওখানে তেমন বন্ধু নাই। অল্প কয়েকজন সরকারী চাকরিসূত্রে বাসা পেয়েছে শুধু তারাই আছে। তাদের সান্নিধ্য পেয়ে আমার মনে হয় আমি পুরোনো জীবনে ফিরে গেছি। কলোনির নয় নম্বর মাঠ ছিল আমাদের বন্ধুদের আড্ডার প্রধান জায়গা। হাসপাতালের সিড়ি, পাওয়ার হাউসের বারান্দা এই দুটো জায়গাও ছিল আমাদের স্থায়ী আড্ডাখানা। বেনু, মামুন, মিজান, জয়নাল, মোমিন, জাহেদ, জিয়া, টুটুল, পুটুল, বাবুল, সাইদ, ফন্টু, মোশারফ, রিপন, মিরাজ, আরো অনেকে।
৯ নম্বর মাঠের আড্ডা ছাড়াও আমাদের আরেকটি জায়গা ছিল তার পাশেই। ওটার নাম পাওয়ার হাউস। আমাদের সেই পাওয়ার হাউসের আড্ডাটা কফি হাউসের আড্ডার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না। এখন সবকিছু গল্প হয়ে গেছে।
Saturday, August 17, 2024
তুলনার অপপ্রয়োগ
যেন ভুলে না যাই, এই ছাত্র আন্দোলন সফল হয়েছিল প্রাজ্ঞ শিক্ষিত প্রগতিশীল মননশীল মানুষেরা সমর্থন দিয়েছিল বলে। যেসব ছাত্র শ্লোগান দিয়ে মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছিল তারা কেউ এই অবান্তর তুলনাকারী নির্বোধ জনগোষ্ঠির অংশ নয়। এই ছাত্রগুলো ৫২, ৬৯, ৭১ সালের ইতিহাসের পথ ধরে তাদের আন্দোলনকে সফল করেছিল। আন্দোলনের সফলতার পর হঠাৎ করে রাজপথ দখল করে যেসব নির্বোধ এমন অবান্তর তুলনা করতে শুরু করেছে, তাদের মতো কেউ আন্দোলনের ডাক দিলে সাধারণ মানুষ নামতো না। এই বাস্তবতাও যেন ভুলে না যাই।
Tuesday, August 13, 2024
মুখ ও মুখোশ
অতীতের ছাত্র আন্দোলনের সাথে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের একটা মৌলিক পার্থক্য হলো, খোলস। এই আন্দোলনটা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে হয়নি। কিন্তু পেছনে একটা সক্রিয় শক্তি ছিল, সেটা কে আমরা এখনো জানি না। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবার পর কিছু কিছু তৎপরতা দেখে স্পষ্ট হচ্ছে চিত্রটা। খোলসটা ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে। সরকারে ১৬ জন উপদেষ্টা। আন্দোলনকারীদের দেওয়া তালিকা থেকেই তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে। তালিকাটা নিয়ে প্রথম দুদিন কারো আপত্তি শোনা যায়নি। কিন্তু তৃতীয় দিন থেকে মৃদুস্বরে আপত্তি শোনা যাচ্ছে কারো কারো ব্যাপারে। অচিরেই আপত্তিটা জোরদার হবে। এখান থেকে কাউকে কাউকে বাদ দেবার জন্য দাবী জানানো হবে। ঘেরাও হবে নানান দফতর। তখন মুখোশটা আরেকটু উন্মোচিত হবে।
বাংলাদেশ আরো কিছুদিন এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো একটা পক্ষ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করছে না ততক্ষণ এই অস্থিরতা থাকবে। এই আন্দোলন আওয়ামী বিরোধী শক্তির হাত ধরে হয়েছে, আগামীতে তাদের হাতেই ক্ষমতা থাকবে। ২০০৭ এর পরিবর্তন আওয়ামী লীগের অনুকূলে হয়েছিল, তারাই বেনেফিশিয়ারী হয়েছিল। এদেশে নিরপেক্ষতা বলে কোনো জিনিস নাই রাজনীতি কিংবা রাষ্ট্রপরিচালনায়। এই সত্যটা স্বীকার করতেই হবে।
এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও সুবিবেচক নিরপেক্ষ লোকের সংখ্যা খুব কম। অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনোভাবে দলকানা, মতলবাজ, সুবিধাবাদী। একটু চোখ খুলে তাকালে আপনি আপনার নিজের পরিবারের মধ্যেই দেখতে পাবেন তাদের।
Saturday, August 10, 2024
বিভক্তির আশঙ্কা
Tuesday, July 30, 2024
নির্বোধ দম্ভ
কোনো মানুষই অমর অজেয় নয়। সব শক্তিমানই ক্ষয়ে যায় একসময়। তবু হাস্যকরভাবে কোনো কোনো শক্তিমান এমন দম্ভ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যেন গোটা সৌরজগত তার অধীন।ক্ষমতা বলয়ে অন্ধ হয়ে থাকা এই মূর্খদের বড় অংশই বাঙালি। আমি অর্থের দম্ভ দেখেছি, আমি রাজনৈতিক দম্ভ দেখেছি, আমি অস্ত্রবাজের দম্ভ দেখেছি। সব শক্তিমান যুবকই একসময় বয়সের কাছে হার মেনে, অসুস্থতায় ন্যুজ্ব নিজের ভার নিজেই বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। আমি ত্রিশ বছর আগে যেসব দাম্ভিককে শক্তি প্রদর্শন করতে দেখেছি, বর্তমানে তাদের অনেকের করুণ পরিণতিও দেখছি। যারা ছিল অতি বিপ্লবী, তাদের অনেকেই এখন ভয়াবহ আপোষকামী, মেরুদণ্ডহীন। যত ক্ষমতাই থাকুক, যত ধন সম্পদ থাকুক পৃথিবীতে কোনো মানুষ তো ১০০০ বছর বাঁচে না। এ কথা একটা শিশুও জানে যে ৩০-৪০ বছরের বেশি শক্তি থাকে না গায়ে। তবু দাম্ভিক মূর্খগুলো অনর্থক ক্ষমতা প্রদর্শন করে জগতে ঘৃণা উপার্জন করে যায়। পতনের সময়ে সহানুভূতিরও দেখা পায় না এরা। মর্মান্তিক সত্য।
Wednesday, July 17, 2024
অধিকারবোধ
এই গ্রহের ওপর প্রতিটা প্রাণীর সমান অধিকার আছে। মানুষ শক্তি বুদ্ধি দিয়ে এই গ্রহটিকে জয় করলেও একমাত্র মালিক হয়ে যায়নি। ভূমি জয় করা যায়, আলো আকাশ বাতাস জয় করা যায় না। অধিকারবোধ একটি ভ্রান্ত ধারণা।
Monday, July 15, 2024
বিপন্নতা
আপনি যখন ভুল করতে থাকবেন, একের পর এক ভুল করে যাবেন অথচ আপনার ভুল দেখিয়ে দেওয়ার লোক আপনার পাশে থাকবে না, বরং যারা চারপাশে আছে তারা আপনাকে বলতে থাকবে আপনি ঠিক আছেন, ঠিক করছেন, তখনই আপনি সত্যিকারের বিপন্ন।
আপনার ভুলের কারণে আমি বিপদগ্রস্থ হচ্ছি, আক্রান্ত হচ্ছি, কিন্তু আপনার কাছে গিয়ে বলার সুযোগ নেই আপনি ভুল পথে আছেন, তখন আমিও বিপন্ন।
আপনি চরম নির্বোধের মতো একটা কাজ করবেন, জনসমর্থন হারাবেন এবং আপনার কোটি কোটি ভক্তও আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বর্জন করবে, ২৪ ঘন্টা পূর্বেও কেউ ভাবেনি।
আপনি যতই ভালো কাজ করুন না কেন যখন আপনার আত্মবিশ্বাস অহংবোধে উন্নীত হয়, তখন আপনার পতন সময়ের ব্যাপার।
চারপাশে অসংখ্য চোর-ডাকাতকে নিয়ে আপনি একজন সামান্য পকেটমারার অপরাধীর বিরুদ্ধে রাহাজানির অভিযোগ আনবেন, তখন আপনি নিজেকে হাস্যকর করে তুলছেন।
আপনি লঘুপাপে গুরুদণ্ড দিয়েছিলেন সেই ছেলেটাকে। তার জীবনকে, তার গোটা পরিবারকে অন্ধকারের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন, নিজের দায় অস্বীকার করে একতরফা ক্ষমতার প্রয়োগ করেছিলেন, জীবন আপনাকে ক্ষমা করেনি। কখনো করে না।
আপনার প্রতি আমার বিশেষ সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও আপনার সব সিদ্ধান্ত আমি পছন্দ করি না। শুধু তাই না মাঝে মাঝে আপনি আমার ঘেন্নার কারণ হয়ে ওঠেন। আপনার নির্বুদ্ধিতা এবং লোভ আমাকে আহত করে।
আপনি যাদের পতন চেয়েছিলেন, তারা উঠে দাঁড়িয়েছে। আপনি যাদের উপরে তুলতে চেয়েছিলেন, তারা নীচে নেমে গেছে। আপনার নিজের লোকেরা বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। আপনার চলে যাবার এক দশকের মধ্যে সবকিছু ধ্বসে পড়েছে। আপনি যাদের সুখের জন্য সম্পদগুলো রেখে গিয়েছিলেন, সেগুলোই এখন বিষাক্ত সাপে পরিণত হয়েছে।
আপনি সময়কে চিনতে পারেননি। আপনাকে সৎ পরামর্শ দেবার লোক ছিল না। অথবা আপনি তাদের কথায় কান দেননি। ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত সবাইকে দিতে হয়। সময় কখনো কাউকে ক্ষমা করেনি। আপনাকেও করবে বলে মনে হয় না। কিন্তু আপনার ভুলের কারণে পুরো জাতিকে যখন মূল্য দিতে হবে, সেটা হবে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করবো সময় থাকতে আপনি ভুলের ফাঁদ পেরিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।
Tuesday, June 4, 2024
ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কামান : কালু জমজম
Provisions of all sorts are exceeding cheap and plentiful in Dacca: the fertility of its soil, and the advantages of its situation have, long since, made it the centre of an extensive commerce; it has still the remains of a very strong fortress, in which, a few years back, was planted a cannon of such extraordinary weight and dimensions, that it fell into the river, with the entire bank on which it rested; the length of the tube was fourteen feet, ten and a half inches, and the diameter of the bore one foot, three and one eighth inches: it contained two hundred and thirty-four thousand four hundred and thirteen cubic inches of wrought iron, weighed sixty-four thousand four hundred and eighteen pounds avoirdupoise, and carried a shot of four hundred and sixty-five pounds weight.
[The Travels, 1794]
Tuesday, May 7, 2024
R and R
You may own billions or trillions, but you can consume only what is allocated for you as of your final day. The only benefit of your ownership is a bunch of numbers and your imagination as an owner.
The world should seriously consider whether so-called economic or industrial development should be continued. If development means destroying the environment on this planet, they should stop now. Right NOW!
হাতের কাছে প্রিয় কলম
লেখার কাজ না থাকলেও যে কোন একটি কলম হাতে রাখার পুরোনো অভ্যেস আমার। কী বোর্ডে কাজ করার সময়ও যে কোন একটা কলম আমার পাশে থাকা চাই। কলমের নিঃশব্দ একটা ভাষা আছে। যেটা হাতে নিলেই বলতে থাকে, সময় কম, লিখতে থাকো।
এছাড়া না লিখতে না লিখতে আমার অনেক দামী কলমের কালি শুকিয়ে গেছে, সেগুলো ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় তুলে রেখেছি। সেই কলমগুলো নিয়ে একটা আক্ষেপ থেকে গেছে। শেফার, পার্কার, ওয়াটারম্যান জাতীয় দামী দামী যে কলমগুলো স্কুল বয়সে উপহার পেয়েছিলাম বাবার কাছ থেকে, সেগুলো দিয়ে ঠিকমত একটা পাতাও লিখিনি, ফুরিয়ে যাবার ভয়ে। তখন বুঝিনি, না লিখে রেখে দিলেও যে কোন কলম এমনিতেই ফুরিয়ে যায়।
প্রতিটি কলমের আলাদা গল্প আছে। প্রতিটি কলমের একটা করে ইতিহাস আছে।
Saturday, May 4, 2024
বিশ শতকের সৌভাগ্যবান লাজার সিলবারিস
বাঁশ থেকে চাল
রাজু ও মীনার গল্প বনাম বাংলাদেশের আইসিটি শিক্ষার ভুল প্রয়োগ