এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান দুর্বলতা হলো মানুষকে মানবিক, যৌক্তিক এবং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারা। আদিকাল থেকে জেনেটিক কারণে এই অঞ্চলের মানুষেরা দুই রকম। একদল খুব সরল, আরেকদল খুব গরল। সরলদের একাংশ প্রায়ই গরলদের পাল্লায় পড়ে বলদে পরিণত হয়। সেই বলদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এদেরকে নানান হাটে বিক্রি করা যায়। কেউ বিক্রি হয় ধর্মের হাটে, কেউ বিক্রি হয় রাজনীতির হাটে, কেউবা প্রতারণার হাটে। মতলববাজরা এখানে সবসময় সফল হয়। একসময় অশিক্ষিত বলদের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন শিক্ষিত বলদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দেশে এমনসব উচ্চশিক্ষিত বলদ আছে, তাদের শিক্ষার পেছনে রাষ্ট্র যে ব্যয় করেছে সেটা পুরোপুরি অপচয়। শিক্ষিত বলদ চেনার জন্য ফেসবুক সবচেয়ে উপযুক্ত হাট। ফেসবুকের হাটে পালে পালে বলদের দেখা মেলে, যারা নিজ নিজ খোয়াড়ের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে নানান হাস্যকর যুক্তি উপস্থাপন করে।
সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র নির্মোহ যুক্তিসঙ্গত মানুষের সংখ্যা এতই কম যে, এদেরকে খালি চোখে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনুবীক্ষণিক জীব হয়ে অদৃশ্য জীবনযাপন করে। তাদের যুক্তির কথা কোনো বলদের কানে পৌঁছায় না। ফলে কোনো না কোনো মতলবাজ এদেশে ফটকাবাজী করে যায় সারা বছর। গত অর্ধ শতাব্দী এমনই চলছে। এই বলদদের নেতা হয় শেয়াল শকুনের দল। তাদের পেছনে নিয়ে কেউ কেউ রাষ্ট্রক্ষমতা পর্যন্ত দখল করে। তাই আমরা দেখি এক শেয়াল যাবার পর আরেক শকুন আসে। শেয়ালপর্বের বলদেরা শকুনের বিরুদ্ধে, শকুনপর্বের বলদেরা শেয়ালের বিরুদ্ধে লড়তে থাকে। বাংলাদেশ এই সব বলদের কারণেই কখনো শেয়াল ও শকুনমুক্ত হতে পারলো না। আগামীতেও পারার কোনো লক্ষণ এখনো দেখছি না। যে ছেলেটা কিশোর বয়সে দারুন যুক্তিবাদী স্মার্ট হিসেবে বড় হচ্ছিল, সে তারুণ্য পেরোবার আগে শকুন বা শেয়ালের পাল্লায় পড়ে বলদে পরিণত হয়। তাদের ইশারায় সকল তৎপরতা চালায়। তার নিজস্বতা বলে কিছু দেখা যায় না।
আমরা জানি আবার নতুন কিছু ঘটবে। এই বলদেরাই আবার ঢুশাঢুশি করবে। এখন কিছু অবসরপ্রাপ্ত বলদও দেখা যাচ্ছে, যারা শেয়াল ও শকুনের হাতিয়ার হিসেবে জোয়াল টেনে যাচ্ছে। যে শেয়াল এতদিন গর্তে ছিল, তারা বেশিয়ে এসেছে, যে শকুন এতদিন লাশের সন্ধানে ছিল, তারা অনেকগুলো লাশ পেয়েছে। শেয়াল-ও শকুনের রাজত্বে মানুষেরা গৃহবন্দী হয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের প্রজন্ম মানুষের শাসন দেখেছে খুব অল্প সময়ের জন্য। আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো পুরোটাই শকুন রাজত্ব দেখবে। তাদের জন্য সমবেদনা।
No comments:
Post a Comment