১.
দেশের এই বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটার পর থেকে একটা বিষয় চোখে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ বলছে আগের সরকারের আমলে বাক স্বাধীনতা ছিল না, কেউ ভয়ে কথা বলতো না, এখন সবার বাক স্বাধীনতা হয়েছে, ব্যাকস্পেস চাপতে হচ্ছে না ইত্যাদি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হলো একটা বিশাল নীরবতা। আমার বন্ধুতালিকার ৯০ ভাগের বেশি মানুষ অরাজনৈতিক শ্রেণীর। কোনো বিশেষ দলের পক্ষপাতিত্ব নেই। সবাই লেখালেখি জগতের মানুষ। ইতিহাস ঐতিহ্য এবং শিল্প সাহিত্যজগত নিয়ে কাজকারবার। বলা চলে দেশের প্রধান সারির মননশীল জগতের মানুষ। আমি প্রায়ই দেখতাম এরা সবাই আওয়ামী লীগের আমলে যতটুকু সম্ভব সরকারের নানা অনিয়মের সমালোচনা করেছে, সুপরামর্শ দিয়েছে। এসব করতে গিয়ে কেউ কেউ হুমকি ধামকিও খেয়েছে সরকার সমর্থকদের কাছ থেকে। মামলার হুমকিও দিয়েছে কখনো। সেইসব ধমকের ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে খুব সাবধানে শব্দচয়ন করে লিখেছে। কিন্তু লেখা থামায়নি কখনো। এখন আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি একটা বিশাল নীরবতা। সবাই একদম চুপ হয়ে গেছে। কেউ কেউ ফেসবুক অফ করে দিয়েছে। যারা আছে তারা একটা মন্তব্যও করে না। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ালো? আমরা আরো ভয়ের রাজত্বে চলে এলাম? এমন তো হবার কথা ছিল না। ইউনুস সরকারের প্যানেল দেখে আমি আশাবাদী হই। কিন্তু এত মানুষের নীরবতায় আমি আশঙ্কায় ভুগি। বন্ধুতালিকার সবাইকে আমি আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। কিন্তু তাদের লেখালেখির ওপর আমার আস্থা আছে। সে কারণে মনে হচ্ছে কোথাও কিছু গোলমাল আছে। এমন কিছু যা আমরা হয়তো জানি না। এই নীরবতাপর্ব কাটার পরেই বোঝা যাবে দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। তার আগে নয়। [১৩.৯.২০২৪]২.
সামাজিক মাধ্যমে তেমন সক্রিয় না থেকেও দর্শক হিসেবে প্রতিনিয়ত যা দেখতে হয়, সেটা মোটেও সুখকর নয়। এখন যারা পথে পথে অনাচার অজাচার করছে, সেই কাঠমোল্লারা কেউ আন্দোলনের প্রথম দ্বিতীয় কোনো সারিতে ছিল না। এরা ঘাপটি মেরে ছিল অন্ধকারে। ৫ আগষ্টের পর এরা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে এখানে সেখানে তাণ্ডব চালাচ্ছে নানান খেয়াল খুশীর ইস্যুতে। এটাকে মবের মুল্লুক বলা হচ্ছে। এরা যেন প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আগের যুগই ভালো ছিল। যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এরা কথা বলছে তার কয়েকগুন বেশি ফ্যাসিবাদী মানসিকতা নিয়ে দেশকে কোন অন্ধকারে ঠেলে দেয় সেটা দুশ্চিন্তার বিষয়। এই শক্তি যদি বাংলাদেশে কখনো ক্ষমতায় বসে, দেশকে নির্ঘাত আফগানিস্তান বানিয়ে ছাড়বে।
৩.
ভয়েস অব আমেরিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনুস বলেছেন এই অভ্যুত্থান দেশকে রিসেট বাটন পুশ করে নতুন যুগে নিয়ে এসেছে। এতে তিনি নিজেও বাতিল হয়ে পড়বেন বিষয়টা বুঝতে পারছেন না। তার ওপর যেটুকু ভক্তিশ্রদ্ধা ছিল ওই সাক্ষাতকারের অংশ পড়ে সব উবে গেল। এটা কী বয়সকালীন মতিভ্রম নাকি নিয়োগকর্তাদের খুশী করার চেষ্টা বোঝা যাচ্ছে না। ক্ষমতার চশমা দিয়ে দেশের আসল চেহারা দেখা যায় না মনে হয়।[২.১০.২০২৪]
No comments:
Post a Comment