বাংলাদেশে ১০০% বিশুদ্ধ খাবার খেতে পারেন কত শতাংশ মানুষ? তাদের বিশুদ্ধ
খাবারের উৎস কী? তারা কোথা থেকে বাজার করে? সেই বাজার রান্না হবার আগে এবং
পরে বিশুদ্ধতা যাচাই করে কে? যাচাই করার পদ্ধতি কি?
হতে পারে কিছু শীর্ষ ক্ষমতাবান মানুষ, সংখ্যানুপাতে যারা ০.১% অথবা ০.০১% এর মতো ক্ষুদ্রাংশ, নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ খাবার খায়। তাদের মধ্যে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ মন্ত্রী আমলা শীর্ষ ধনকুবেরগন রয়েছেন। নিশ্চয়ই ভেজালমুক্ত রান্নাঘর তৈরীর ক্ষমতা তাদের আছে। সাধারণ মানুষের সে ক্ষমতা নেই, এমনকি ভেজালমুক্ত মানুষেরা কী পদ্ধতিতে ভেজাল থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখেন তাও জানার উপায় নেই।
ভেজাল দিয়ে যদি ভাগ করি, তাহলে দেশটা দুই ভাগে বিভক্ত। বিশাল অংশের ভাগটা ভেজাল খাবার খায়, আরেকটা ছোট্ট অংশ ভেজালমুক্ত খাবার খান।
যারা ভেজালমুক্ত আছেন, তারা কি ভেজালযুক্ত মানুষের কথা ভাবেন? মনে হয় না। দেশের ৯৯.৯% মানুষের বাজার, খাবার, রান্নাঘর ইত্যাদি পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা জানতেও পারি না প্রতিদিন আমরা কি পরিমান ফরমালিন খেলাম, কি পরিমান কার্বাইড গিললাম, কি পরিমান ক্রোমিয়াম পাকস্থলীতে জমা করলাম। যদি জানতাম তাহলে হয়তো আমরা আমাদের আয়ু সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারতাম। বুঝতে পারতাম, আমি মরবো কিডনী রোগে, তুমি মরবে যকৃতধ্বংস হয়ে অথবা সে মরবে পাকস্থলীর কোলন ক্যান্সারে।
একটা লঞ্চ ট্রেন কিংবা বাস দুর্ঘটনায় ৫০ জন মানুষ মারা গেলে সারাদেশ ব্যাপী তোলপাড় ঘটে যায়। কিন্তু ভেজাল খেয়ে বছরের পর পর হাজার হাজার মানুষ নীরবে মারা যাচ্ছে সেটা খুব বেশী গুরুত্ব পায় না। এই মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এদেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ছুটছে চিকিৎসা পেতে। বাজার খরচের টাকা না থাকলে আধপেটা থাকা যায়। কিন্তু চিকিৎসা খরচ না থাকলে ডাক্তার চোখ তুলেও দেখবে না, ডায়গনস্টিক সেন্টারও বলে তফাত যাও। তাই সর্বস্বান্ত হয়ে, ঋনগ্রস্থ হয়েও চিকিৎসার খরচ যোগাতে হয়। আমার চারপাশের চেনাজানা আত্মীয়বন্ধুর গড়পড়তা ৫০টি পরিবারের খোঁজ নিলে দেখবো, সম্পূর্ণ সুস্থ আছে তেমন পরিবার একটিও নেই। প্রতি পরিবারে একজন না একজন অসুস্থ রোগীর দেখা মিলবেই।
বিশ পচিশ বা পঞ্চাশ একশো বছর আগেও অসুস্থ হতো মানুষ। কিন্তু সেটার ধরণ ছিল ভিন্ন। ওটা ঘটতো বছরে দুয়েকবার মাত্র। জ্বরজারি সর্দি কাশি আমাশা ডায়রিয়া ছাড়া তেমন গুরুতর কোন সমস্যা থাকতো না। এখন তো প্রতিমাসে, কখনো কখনো প্রতি সপ্তাহেও আমাকে ডাক্তারের কাছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে পরিবারের কোন না কোন সদস্য নিয়ে। একজন সুস্থ হতে না হতেই আরেকজন অসুস্থ হয়। গুরুতর সব রোগের নাম। কারো কিডনী চলে গেছে, কারো লিভার নষ্ট, কারো পাকস্থলী, কারো খাদ্যনালী। সামাজিক বা বন্ধুবান্ধবের যে কোন আড্ডায় বসলে অবধারিতভাবে চলে আসবে ডাক্তার হাসপাতাল রোগ বালাই ইত্যাদির কথা।
দেশব্যাপী এই বিরামহীন অসুস্থতার পেছনে প্রধান অবদান খাবারের। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যে খাবার সংগ্রহ করছে দিনরাত পরিশ্রম করে, সেই খাবার খেয়েই মানুষ মরতে বসছে। শরীরের যেসব অংশ দিয়ে খাবারদাবার আসা যাওয়া করে সেই পথগুলো ভয়াবহ সব সমস্যায় আক্রান্ত।
সামর্থ্য থাকলে আমি হয়তো ভালোমন্দ বাজার করে রান্নাঘর ভর্তি করে ফেলতে পারি কিন্তু বিষমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করা আমার জন্য অসম্ভব। ফলমূল, শাকসবজী, মাছ, মাংস, তেল মশলা কিসে নেই বিষ? আমার কাছে বিষাক্ততার মাত্রা যাচাই করার যন্ত্রপাতি নেই। তবু আমি জানি প্রতিদিন যা কিছু খাবার কিনছি তার বিরাট অংশেই ছড়িয়ে আছে নিঃশব্দ ঘাতক। আমি বাজারের থলেভর্তি করে বিষমুক্ত খাবার কিনে বাসায় যাই। পরিবারের পুষ্টি, আমিষ-প্রোটিন বাড়াতে গিয়ে রক্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেই বিষের ভিটামিন।
আমাদের কথা বাদ দিলাম। বলি যারা দেশ পরিচালনা করেন, যারা দেশের আইন কানুন, পরিবেশ, বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের সবার খাবার কি ১০০% বিষমুক্ত? তারা কি নিশ্চিত হয়ে প্রতিদিন বাজার করেন, রান্না করেন? যদি না হয় তাহলে তারাও কী ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে হাঁটছেন না? তাহলে সমগ্র জাতিই দীর্ঘমেয়াদী আত্মহননের পথে যাচ্ছে? কী ভয়াবহ ব্যাপার!!
এই জাতির ভবিষ্যত কী? নিকষ কালো আঁধার? নাকি একটু আলো আছে। শেষমেষ বাংলাদেশকে কেউ বিষমুক্ত করতে না পারলে আমরা কি এমন অসম্ভব কোন আশা করতে পারি বিষের সঙ্গে বসবাস করতে করতে মানুষের শরীর কোন একদিন এই সকল বিষ হজম করার মতো শক্তি অর্জন করে ফেলবে অভিযোজন প্রক্রিয়ায়? উটপাখির পাকস্থলী নাকি লোহা পাথর ইত্যাদি কঠিন জিনিস হজম করার মতো শক্তি রাখে। আমাদের পাকস্থলীও কি একদিন সেরকম শক্তিমান হয়ে উঠবে?
সবশেষে একটা সংবাদ পড়ে মনটা আরো দমে গেল। এতদিন ভাবতাম অন্য ফলে যাই ঘটুক, মোটা চামড়ার কাঁঠাল নিশ্চয়ই ফরমালিন মুক্ত। পছন্দের ফল না হলেও এতে একটু ভরসা রাখার জায়গা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই কাঁঠালেও ফরমালিন। হারাধনের আর একটি ছেলেও অবশিষ্ট রইলো না।
হতে পারে কিছু শীর্ষ ক্ষমতাবান মানুষ, সংখ্যানুপাতে যারা ০.১% অথবা ০.০১% এর মতো ক্ষুদ্রাংশ, নিশ্চয়ই বিশুদ্ধ খাবার খায়। তাদের মধ্যে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ মন্ত্রী আমলা শীর্ষ ধনকুবেরগন রয়েছেন। নিশ্চয়ই ভেজালমুক্ত রান্নাঘর তৈরীর ক্ষমতা তাদের আছে। সাধারণ মানুষের সে ক্ষমতা নেই, এমনকি ভেজালমুক্ত মানুষেরা কী পদ্ধতিতে ভেজাল থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখেন তাও জানার উপায় নেই।
ভেজাল দিয়ে যদি ভাগ করি, তাহলে দেশটা দুই ভাগে বিভক্ত। বিশাল অংশের ভাগটা ভেজাল খাবার খায়, আরেকটা ছোট্ট অংশ ভেজালমুক্ত খাবার খান।
যারা ভেজালমুক্ত আছেন, তারা কি ভেজালযুক্ত মানুষের কথা ভাবেন? মনে হয় না। দেশের ৯৯.৯% মানুষের বাজার, খাবার, রান্নাঘর ইত্যাদি পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা জানতেও পারি না প্রতিদিন আমরা কি পরিমান ফরমালিন খেলাম, কি পরিমান কার্বাইড গিললাম, কি পরিমান ক্রোমিয়াম পাকস্থলীতে জমা করলাম। যদি জানতাম তাহলে হয়তো আমরা আমাদের আয়ু সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারতাম। বুঝতে পারতাম, আমি মরবো কিডনী রোগে, তুমি মরবে যকৃতধ্বংস হয়ে অথবা সে মরবে পাকস্থলীর কোলন ক্যান্সারে।
একটা লঞ্চ ট্রেন কিংবা বাস দুর্ঘটনায় ৫০ জন মানুষ মারা গেলে সারাদেশ ব্যাপী তোলপাড় ঘটে যায়। কিন্তু ভেজাল খেয়ে বছরের পর পর হাজার হাজার মানুষ নীরবে মারা যাচ্ছে সেটা খুব বেশী গুরুত্ব পায় না। এই মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এদেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ছুটছে চিকিৎসা পেতে। বাজার খরচের টাকা না থাকলে আধপেটা থাকা যায়। কিন্তু চিকিৎসা খরচ না থাকলে ডাক্তার চোখ তুলেও দেখবে না, ডায়গনস্টিক সেন্টারও বলে তফাত যাও। তাই সর্বস্বান্ত হয়ে, ঋনগ্রস্থ হয়েও চিকিৎসার খরচ যোগাতে হয়। আমার চারপাশের চেনাজানা আত্মীয়বন্ধুর গড়পড়তা ৫০টি পরিবারের খোঁজ নিলে দেখবো, সম্পূর্ণ সুস্থ আছে তেমন পরিবার একটিও নেই। প্রতি পরিবারে একজন না একজন অসুস্থ রোগীর দেখা মিলবেই।
বিশ পচিশ বা পঞ্চাশ একশো বছর আগেও অসুস্থ হতো মানুষ। কিন্তু সেটার ধরণ ছিল ভিন্ন। ওটা ঘটতো বছরে দুয়েকবার মাত্র। জ্বরজারি সর্দি কাশি আমাশা ডায়রিয়া ছাড়া তেমন গুরুতর কোন সমস্যা থাকতো না। এখন তো প্রতিমাসে, কখনো কখনো প্রতি সপ্তাহেও আমাকে ডাক্তারের কাছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে, হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে পরিবারের কোন না কোন সদস্য নিয়ে। একজন সুস্থ হতে না হতেই আরেকজন অসুস্থ হয়। গুরুতর সব রোগের নাম। কারো কিডনী চলে গেছে, কারো লিভার নষ্ট, কারো পাকস্থলী, কারো খাদ্যনালী। সামাজিক বা বন্ধুবান্ধবের যে কোন আড্ডায় বসলে অবধারিতভাবে চলে আসবে ডাক্তার হাসপাতাল রোগ বালাই ইত্যাদির কথা।
দেশব্যাপী এই বিরামহীন অসুস্থতার পেছনে প্রধান অবদান খাবারের। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যে খাবার সংগ্রহ করছে দিনরাত পরিশ্রম করে, সেই খাবার খেয়েই মানুষ মরতে বসছে। শরীরের যেসব অংশ দিয়ে খাবারদাবার আসা যাওয়া করে সেই পথগুলো ভয়াবহ সব সমস্যায় আক্রান্ত।
সামর্থ্য থাকলে আমি হয়তো ভালোমন্দ বাজার করে রান্নাঘর ভর্তি করে ফেলতে পারি কিন্তু বিষমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করা আমার জন্য অসম্ভব। ফলমূল, শাকসবজী, মাছ, মাংস, তেল মশলা কিসে নেই বিষ? আমার কাছে বিষাক্ততার মাত্রা যাচাই করার যন্ত্রপাতি নেই। তবু আমি জানি প্রতিদিন যা কিছু খাবার কিনছি তার বিরাট অংশেই ছড়িয়ে আছে নিঃশব্দ ঘাতক। আমি বাজারের থলেভর্তি করে বিষমুক্ত খাবার কিনে বাসায় যাই। পরিবারের পুষ্টি, আমিষ-প্রোটিন বাড়াতে গিয়ে রক্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দেই বিষের ভিটামিন।
আমাদের কথা বাদ দিলাম। বলি যারা দেশ পরিচালনা করেন, যারা দেশের আইন কানুন, পরিবেশ, বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের সবার খাবার কি ১০০% বিষমুক্ত? তারা কি নিশ্চিত হয়ে প্রতিদিন বাজার করেন, রান্না করেন? যদি না হয় তাহলে তারাও কী ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে হাঁটছেন না? তাহলে সমগ্র জাতিই দীর্ঘমেয়াদী আত্মহননের পথে যাচ্ছে? কী ভয়াবহ ব্যাপার!!
এই জাতির ভবিষ্যত কী? নিকষ কালো আঁধার? নাকি একটু আলো আছে। শেষমেষ বাংলাদেশকে কেউ বিষমুক্ত করতে না পারলে আমরা কি এমন অসম্ভব কোন আশা করতে পারি বিষের সঙ্গে বসবাস করতে করতে মানুষের শরীর কোন একদিন এই সকল বিষ হজম করার মতো শক্তি অর্জন করে ফেলবে অভিযোজন প্রক্রিয়ায়? উটপাখির পাকস্থলী নাকি লোহা পাথর ইত্যাদি কঠিন জিনিস হজম করার মতো শক্তি রাখে। আমাদের পাকস্থলীও কি একদিন সেরকম শক্তিমান হয়ে উঠবে?
সবশেষে একটা সংবাদ পড়ে মনটা আরো দমে গেল। এতদিন ভাবতাম অন্য ফলে যাই ঘটুক, মোটা চামড়ার কাঁঠাল নিশ্চয়ই ফরমালিন মুক্ত। পছন্দের ফল না হলেও এতে একটু ভরসা রাখার জায়গা পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই কাঁঠালেও ফরমালিন। হারাধনের আর একটি ছেলেও অবশিষ্ট রইলো না।
1 comment:
এই সুরটি শোনা যাক
https://www.youtube.com/watch?v=9EU8UXtu-4k
Post a Comment